Friday, May 14, 2021

ফোনে বা অনলাইনে রুকইয়াহ করে দেয়া

 

নতুন একটা ট্রেন্ড হচ্ছে, ফোনে বা অনলাইনে রুকইয়াহ করে দেয়া।
 
প্রথম কথা হল, এভাবে পুরোপুরি রুকইয়ার হক্ব আদায় করা সম্ভব না। এতে অনেক ধরনের সিচুয়েশন তৈরি হতে পারে, যেখানে রোগীর পরিবারের কিছু করার থাকবে না। উপরন্তু যদি এভাবে রুকইয়া করাটাকেই পেশা বানিয়ে নেয়া হয়, তবে বিষয়টা অনেক খারাপের দিকে মোড় নিতে পারে। বিশেষতঃ অনলাইনের প্রতারকরা এথেকে ফায়দা লুটতে পারে। আর ইতিমধ্যে লুটেছেও...।
 
দ্বিতীয়তঃ সালাফি আলেমদের মতে এভাবে রুকইয়াহ করা বিদআত। দেশ ও বিদেশের একাধিক আলেমকে আমি এমন ফাতওয়া দিতে শুনেছি। অথচ এখানে সালাফি/আহলে হাদিস রাক্বিরাই অহরহ ফোনে রুকইয়াহ করছে, ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন করছে। ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনে হঠাৎ একটু তিলাওয়াত করেছে এমন না, বরং ফোনে/অনলাইনেই প্রফেশনালি ঝাড়ফুঁক করছে!!
 
কামাই-রোজগারের জন্য নিজের আদর্শের সাথেই সৎ না থাকলে কিভাবে হবে ভাই?
....
শেষ কথাঃ আমি মোটাদাগে বিদআত না বললেও এমন বলব, এতে স্পষ্টতই বেশ কিছু খারাপি আছে, অনেক ফিতনা আর বিপদের সম্ভাবনাও আছে, তাই এথেকে দূরে থাকতে পারলেই সবচেয়ে ভাল হয়। 
 
একটা কথা মনে রাখবেন ভাই, আপনি জায়েজের সীমার মধ্যে যতই থাকেন না কেন, সুন্নাহ থেকে যতই দূরে সরবেন, ততই নতুন নতুন সমস্যা বের হবে। আপনি হয়তো ভাববেন এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু না! এটা সুন্নাহ থেকে দূরে সরার নগদ প্রতিক্রিয়া। কিন্তু আপনি টের পাচ্ছেন না।
 
* এর নিরাপদ বিকল্প কি হতে পারে?
- রোগীর পরিবারের কেউ রোগীর কাছে বসে কোরআন বা দোয়া পড়বে, অথবা রুকইয়ার রেকর্ড শোনাবে। আর রাক্বি ফোনে বা অনলাইনে থেকে তাকে গাইড করবে।
وما علينا الا البلاغ
 
-----------
- Abdullah Almahmud

রুকইয়ার সমস্যা সমগ্র সব একসাথে


 

 

রুকইয়ার সমস্যা সমগ্র সব একসাথে

 
 
অন্যের জন্য রুকইয়াহ করা
------------------
[ক]
বিসমিল্লাহ, এই সিরিজে আমরা রুকইয়াহ শারইয়াহ’র মধ্যে যেসব ভুল, আপত্তিকর কিংবা পরিহার্য বিষয় মিশ্রিত হয়, সেসব নিয়ে আলোচনা করবো। আল্লাহ চায় তো এতে আমাদের দেশে প্রায় বিস্মৃত যে সুন্নাহটির পুনর্জাগরণ হচ্ছে, এটি অনেক ভুল-ভ্রান্তি এবং নোংরামির হাত থেকে রক্ষা পাবে। আর যারা সাধারণ দ্বীনি ভাই-বোন যারা সচরাচর রুকইয়াহ নিয়ে খুব একটা ঘাটাঘাটি করেন না, শুধু প্রয়োজনের তাগিদেই রুকইয়াহ করেন, তারা এধরনের বিষয় কারও মাঝে দেখলে সতর্ক করে দিতে বা ওই রাক্বি থেকে পরহেজ করতে পারবেন।
.
[খ]
 
দ্বিতীয়ত: যেহেতু অনেকদিন পর আমরা একটা নতুন ধারাবাহিক শুরু করতে যাচ্ছি, এর ওপর আবার রমাযান বিভিন্ন ব্যস্ততা আছে, তাই হয়তো খুব দ্রুত একের পর এক সিরিজের লেখা আসবে না। তবে আমার চেষ্টা থাকবে দ্রুত করার, যাতে আগ্রহের রেশ বাকি থাকে। আর সাবলীল ও সংক্ষিপ্ত করার, আর অতিরিক্ত রেফারেন্স চর্চা থেকে বিরত থাকার, যাতে লেখক-পাঠক উভয়েই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
আল্লাহ যদি আগামীতে এটাকে দুই মলাটের মাঝে আনার তাওফিক দেন, তাহলে ইনশাআল্লাহ রুকইয়াহ বইয়ের মত এখানেও পর্যাপ্ত রেফারেন্স এবং তাহকিক যুক্ত করে দেয়া হবে।
তৃতীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যেহেতু ভুলভ্রান্তি নিয়েই আলোচনা। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই এটা অনেকের মনকষ্টের কারণ হবে। হয়তো এই ভুলটা উনার নিজের মধ্যেই আছে অথবা উনি যার দ্বারা প্রভাবিত, তার মধ্যে আছে..।
এটাকে ব্যক্তিগতভাবে না নিয়ে, যদি সবার দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের দিকে তাকিয়ে একটু সবর করা যায়, সন্দেহজনক কিংবা আপত্তিকর বিষয় এড়িয়ে যাওয়া যায়, তাহলে এটা আমাদের সবার জন্যই ভাল। এরপরেও বলবো, আমার দায়িত্ব শুধু সতর্ক করা, উম্মতের স্বার্থ খেয়াল রেখে কাজ করে যাওয়া, এরপর যার যার কর্মফল সে সে ভোগ করবে।
চতুর্থ কথা হল, আমাদের এটা স্বীকার করতে হবে ‘আমরা মানুষ’ আমাদের ভুলত্রুটি হতেই পারে। অমুক ব্যক্তি অনেক ফেমাস শাইখ বলে, তার ভুল হবে না, অথবা তার সবকিছুই মেনে নিতে হবে; বাস্তবতা কিন্তু মোটেই এরকম না। সুতরাং এই সিরিজে আমরা ‘উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থে অনেক ব্যক্তির দিকে আঙ্গুল তুলবো’। যেহেতু এখানে আমার আর্থিক বা দুনিয়াবি কোন স্বার্থ জড়িত নাই, শুধুমাত্র সুন্নাহ এবং উম্মাহর হিফাজতই উদ্দেশ্য। অতএব এর দ্বারা কেউ কষ্ট পেলে কিংবা আমাকে শত্রু মনে করলে এজন্য আমি আল্লাহর সাহায্য চাইছি, আর আল্লাহকেই সাহায্যের জন্য যথেষ্ট মনে করছি।
পঞ্চম কথা, আমরা এখানে এমন কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো না, যেটা কারও ব্যক্তিগত সমস্যা। যার সাথে উম্মাহর স্বার্থ জড়িত নয়, কিংবা যে বিষয় পাবলিকলি প্রচার করা হয়নি। সুতরাং আলোচ্য বিষয় যেহেতু উম্মাহর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, অতএব আমার জন্য অনুমতি রয়েছে এটা নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করার। সমস্যা যেহেতু পাবলিক প্লেসে এসেছে, অতএব প্রতিকারও পাবলিকলি হওয়াই উত্তম। যাতে উম্মাহর সামনে এটা দৃষ্টান্ত হিসেবে বিদ্যমান থাকে।
ষষ্ট বিষয়, যেহেতু গত দুই বছরে আমরা রুকইয়াহ শারইয়াহ এবং এতসংক্রান্ত অনেক বই পুস্তক এবং ব্যক্তির সাথে পরিচিত হয়েছি। এজন্য আমরা অনেক বই এবং ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে কথা বলব, যাদের/যেসব কন্টেন্ট অনলাইনে যথেষ্ট এভেইলেবল। তাই একান্ত অপারগতা না থাকলে, আলাদাভাবে এসবের পরিচয় বর্ণনা করব না।
সপ্তম এবং শেষ কথা হল, একটা ভয় থাকেই, এতসব সমস্যা নিয়ে আলোচনা করলে মানুষ রুকইয়াহ শারইয়াহ থেকে নিরুৎসাহিত হতে পারে। আমি বলব, ভাই! পিওর কাজ সামান্য হওয়া উলটাপালটা অনেক বেশি কাজ হওয়ার চেয়ে উত্তম। একটু রয়েসয়েই মানুষ রুকইয়াহ করুক, কম করুক, কিন্তু যেটাই করুক নির্ভেজাল হোক।
.
[গ]
আমরা আলোচনায় প্রবেশ করি...
আজ আমরা ছোট্ট তবে দিনদিন ছড়িয়ে যাচ্ছে, এমন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করব, তা হল "একজনের জন্য অন্যজন রুকইয়াহ করা।" সম্ভবত এই জিনিসটা বেশি প্রচার হয়েছে মুফতি জুনাইদ সাহেবের লেকচার থেকে, উনি পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন, অথচ ঝুঁকির ব্যপারে সতর্ক করেননি।
যদিও উনার লেকচারগুলো অনুবাদ করেই এবিষয়ে আমার রুকইয়াহ বিষয়ে লেখালেখি শুরু…। পুরাতন ভাইব্রাদার-রা জানেন এটা।
কিন্তু আমি শুরু থেকেই চেষ্টা করেছি, এটা যথাসম্ভব চেপে রাখতে। সব সমস্যাগুলো আমার সামনে আসেনি, তবুও কেন যেন পছন্দ হত না বিষয়টা। আলোচনার প্রয়োজনে এই প্রসঙ্গ এসে গেলেও খুব একটা হাইলাইট না করে, অল্প কথায় পার করে দিতাম। আমাদের রুকইয়াহ সাপোর্ট গ্রুপের সহকর্মী ভাইদেরও বলেছিলাম, যেহেতু এটায় বেশ কিছু সমস্যা আছে, তাই একান্ত অপারগতা না থাকলে অনুগ্রহ করে পাবলিকলি বলবেন না।
.
শুরুতে সমস্যাগুলোর দিকে নজর দেই,
১. উপকার খুবই কম হয়। নিজে নিজে রুকইয়াহ করলে আল্লাহ চায়তো যে সমস্যা ৫-৭দিনে ভাল হয়ে যেত। সেটা ভালো হতে দুই তিন মাস লাগে।
.
২. যেহেতু সরাসরি সুন্নাহ থেকে মানকুল না, অতএব এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি।
যেমন: যে অন্যের নিয়াতে রুকইয়াহ করে, অধিকাংশ সময়েই সে ওই সমস্যাগুলোতে আক্রান্ত হয়ে যায়, যা রোগীর মধ্যে ছিল।
এটার প্রতিকার হল, একান্ত যদি করতেই হয়, তাহলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকার জন্য নিয়মিত রুকইয়ার গোসল করা।
.
৩. এছাড়াও যে অন্যের জন্য রুকইয়াহ করছে, তার নিজের যদি জিন বা জাদু সংক্রান্ত সমস্যা থাকে। তাহলে অনেক সময় রোগীর মাঝে যে রুকইয়াহ করছে তার সমস্যাগুলোর প্রভাব দেখা যায়।
এর সমাধান হল, যার একটু বেশি সমস্যা আছে, সে পারতপক্ষে অন্য রোগীর জন্য রুকইয়াহ করবে না। এটা সরাসরিও না, দূর থেকেও না। বিশেষ ক্ষেত্রে অপারগতা হেতু যদি করতেই হয়, (যেমন স্বামীস্ত্রীর বিচ্ছেদের যাদু করা হয়েছে, দু’জন দুই যায়গায় অবস্থান করছে) তাহলে আগে নিজের জন্য রুকইয়াহ করে নিজের সমস্যা ভাল হওয়ার পর অন্যের জন্য রুকইয়াহ করবে।
আর অবস্থার কিছু উন্নতি হওয়া মাত্রই নিজে রুকইয়াহ বন্ধ করে, আসলে সমস্যা আছে যার; তাকে রুকইয়ার জন্য কনভিন্স করবে।
.
৪. যদি নিজের এবং অন্যের নিয়াতে একসাথে রুকইয়াহ করে। আর দুজনেরই বিভিন্ন রকমের সমস্যা থাকে। তাহলে মোটামুটি একটা জগাখিচুড়ি পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়। অতএব, ভাইজান এই পাগলামি ভুলেও কইরেন না! একশ গজ দূরে থাকেন।
 
তবে স্বামীস্ত্রীর বিষয়টা ভিন্ন, যদি দুজনের বিচ্ছেদের জন্য একসাথেই যাদু করা হয়, তখন যেহেতু সমস্যা মূলত একটাই। তাই এভাবে রুকইয়াহ করলে ফায়দা হয়, কিন্তু অগ্রগতি খুবই স্লো…। অতএব পারতপক্ষে ঝামেলায় না যেতে পারলেই সবচেয়ে ভাল।
.
৫. একান্ত অপারগতা হেতু অন্যের জন্য রুকইয়াহ করতে হলে পারতপক্ষে অডিও তিলাওয়াত না শুনে, নিজেই তিলাওয়াত করা, আর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া / সমস্যা থেকে মুক্ত থাকার জন্য নিয়মিত রুকইয়ার গোসল করা গতানুগতিক রুকইয়ার চেয়ে তুলনামূলক ভাল।
.
[ঘ]
 
মাস কয়েক আগে, ইয়েমেনের এক শাইখের সাথে কথা হচ্ছিল, উনি নাকি মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন রহ. এর থেকে কিছুদিন ইস্তিফাদা করেছেন। আল্লাহু আলাম! উনি অন্যের জন্য রুকইয়াহ করার বিষয়টা শোনার পর এটাকে বিদআত বলে দিয়েছেন পুরা!
 
আমি কিছুক্ষণ হ্যাং হয়ে থাকলাম উনার কথা শোনার পর।
পরে বুঝতে পারলাম যে, উনি রুকইয়াহ-কে চিকিৎসা হিসেবে না গণ্য করে, নামাজ-রোজা, হজ্জ ইত্যাদির মত ইবাদাতে মাখসুসাহ ক্যাটাগরিতে ফেলে বিধান বর্ণনা করেছেন। এটা আবার আরেক ভুল! কি বিপদ…
ইনশাআল্লাহ এটা নিয়ে আমরা আরেকদিন আলোচনা করব।
 
 
কয়েকজনের জন্য একসাথে রুকইয়াহ করা
--------
[ক]
অনেক সময় রাকি একসাথে কয়েকজনকে রুকইয়াহ একসাথে করেন। কেউ কেউ এটাকে মাস এক্সোর্সিজম (mass exorcism) বা মাস রুকইয়া বলে। ইউটিউবের কোন কোন ভিডিওতে দেখা যায়, একটা রুম অথবা মসজিদ ভর্তি মানুষ বসে আছে, সামনে একজন রাকি দাঁড়িয়ে রুকইয়ার আয়াত পড়ছে। রোগীদের কেউ কেউ ঘুমাচ্ছে, কারও জিনের সমস্যা আছে সে লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে (চর্মোনাইয়ের জিকিরের মত!) কেউ শুয়ে তড়পাচ্ছে… ইত্যাদি ইত্যাদি। কেমন যেন এক বিভীষিকাময় অবস্থা।
খ্রিষ্টানদের চার্চগুলোতেও ওদের প্রিস্ট / পাদ্রি / ধর্মগুরুরা মাস এক্সোরসিজম করে, এক্ষেত্রে বিশপের থেকে স্পেশাল পারমিশন নিয়ে আসতে হয়।
 
[খ]
আমরা প্রথমে দেখি এমনটা কেন করে?
প্রথমতঃ অনেক রোগীর চাপ থাকলে, সেটা সামাল দিতে। অর্থাৎ একে একে রুকইয়াহ করার মত পর্যাপ্ত সময় রাকির হাতে নেই, কিংবা এই পরিমাণ রাকি নেই যে এতগুলো রোগীর রুকইয়াহ করবে। তাই…
 
দ্বিতীয়তঃ এমনিতেই ভাল্লাগতেসে না, মানে অবহেলা করে। কয়েকজনকে একসাথে বসিয়ে রুকইয়া করে বিদায় করে দিল। এরপর টাকা যা নেয়ার নিয়ে নিল…
 
তৃতীয়তঃ অজ্ঞতাপ্রসূত। (বিভিন্ন কিসিমের জাহালতের কারণে করতে পারে। জ্ঞানের সীমা আছে, জাহালতের তো কোন সীমা-পরিসীমা নাই…) 
যেমন: রুকইয়াহ তো করতেইসি, অমুককেও এখানে বসিয়ে দেই।
 
এছাড়াও এভাবে রুকইয়াহ করার আরেকটা কারন হতে পারে, অহংকার! মানুষকে দেখানো যে "আই অ্যাম বিরাট কুছ!"
 
[গ]
যে সমস্যাগুলো হয় বলি-
 
১. রুকইয়ার ক্ষেত্রে মনযোগ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি একাধিক রোগীকে রুকইয়াহ করতে গেলে একজনের যদি উল্টাপাল্ট ইফেক্ট হতে লেগে, তখন আরেকজন থেকে মনযোগ ছুটে যাবে। কয়েকজনের একসাথে প্রবলেম শুরু হলে বাজে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে যায়।
 
দুজনের ঘটনা এমন শুনেছিলাম, দুজনেই জ্বিন+জাদুর রোগী ছিল, একসাথে রুকইয়া করা হত, তো কখনও কখনও একসাথে দুইজনের ওপর জিন চলে এসে ঝগড়াঝাঁটি গালিগালাজ শুরু করে দিত। আমি যখন এই দুইজনের রুকইয়াহ করেছি, যথেষ্ট ভোগান্তি হয়েছে। দুইজন একসাথে আমাকে আক্রমণ করতে উঠে চলে আসতো। পরে মনে হচ্ছিল এই সময়টা দুজনের আলাদা আলাদা করে রুকইয়া করলেই ভাল ছিল। 
 
২. নিয়াত- এটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ চাবি। নির্দিষ্ট নিয়াতে রুকইয়াহ করলে ফায়দা বেশি হয়। এজন্য একাধিক নিয়াত ঢুকে গেলে ঝামেলা হয়। ফায়দা কমে যায়।
 
৩. অনেক সময় একজনের সমস্যা আরেকজনের মধ্যে ঢুকে যায়। বিশেষতঃ দুজনের কেউ যদি বদনজর কিংবা ওয়াসওয়াসা রোগী হয়ে থাকে।
 
একবার আমার এক রিলেটিভের জন্য রুকইয়াহ করছিলাম, তিলাওয়াতের মধ্যে মনে হল কি? আমারও তো একটু প্রবলেম হচ্ছে, একসাথে দুইজনের নিয়াত করি। একটু পর দেখি আমার সমস্যা উনার শুরু হয়েছে। অথচ আমারটা শারীরিক অসুস্থতা ছিল…
 
কোন ভাই যেন বললেন, এক বাচ্চার রুকইয়ার সময় উনার বাচ্চাও সাথে ছিল, উনি ভাবলেন একসাথে দুইজনের নিয়তে তিলাওয়াত করি। পরে উনার বাচ্চা অসুস্থ হয়ে গেছে…
 
[ঘ]
তাহলে আমাদের করণীয় কি?
 
একান্তই অপারগতা না থাকলে একাধিক রোগীর রুকইয়াহ একসাথে করবেন না।
আর তবুও পরিস্থিতি চলে আসে, তাহলে এই বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন:
.
- যদি ছোটখাটো সমস্যা হয়, আর রোগীরা একই ফ্যামিলির হয়। তাহলে করতে পারেন।
যেমন, রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার দুই নাতির জন্য একসাথে রুকইয়াহ করেছিলেন বলে কয়েকটা হাদিসে পেয়েছি। (সহিহ-যয়িফ সবরকম সনদেই আছে)
 
- ফ্যামিলির সবার সমস্যা একসাথে ডায়াগনোসিস করতে চাচ্ছেন। কিংবা সমস্যা একটাই, সেটাতে পুরা ফ্যামিলি ভুগছে (যেমনঃ সুখ-স্বচ্ছলতায় নজর লেগেছে, কিংবা সবাইকে একসাথে যাদু করেছে, স্বামীস্ত্রী দুজনকে বিচ্ছেদের জন্য যাদু করেছে) এসব ক্ষেত্রে করতে পারেন।পরিবারের বিষয়গুলো আসলেই অন্যরকম…
 
- যদি কারও সেন্সিটিভিটি বেশি থাকে। বিশেষত যারা অনেক পুরাতন কিংবা বাজে ধরনের জাদুতে আক্রান্ত, তাদের ক্ষেত্রে ভুলেও অন্য কারও সাথে রুকইয়াহ করা উচিত না।
- ওয়াসওয়াসা আর নজরের সমস্যা বেশি থাকলে কি হয় বললামই তো। এরকম ক্ষেত্রেও পারতপক্ষে না করা।
 
- আর নুরুদ্দিন ইন্দুনিসির মত ওইরকম সব মানুষরে একসাথে বসাইয়া মাইক দিয়ে …। ভাই!! এগুলা পাগলামি কইরেন না প্লিজ..।
ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ!
ইনশাআল্লাহ ক্রমশঃ
- Abdullah Almahmud
 
 
 
 
আয়াত কাস্টমাইজেশনের ধোঁকায় পড়া
-----------
[ক]
রুকইয়াহ চলাকালীন অনেকে বিষয় ভিত্তিক আয়াতের ইফেক্ট দেখে ধোঁকায় পড়েন।
যেমন, জ্বিনের আয়াতগুলো পড়লে কষ্ট বেশি হচ্ছে, আর সিহরের আয়াত পড়লে কম হচ্ছে। অথবা জিনের আয়াতে কষ্ট হয়নি শুধু জাদুর আয়াতগুলোতে সমস্যা হচ্ছে, তখন অনেক রাকি খুব দ্রুত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে বসেন যে, রোগীর জাদু-টোনার সমস্যা আছে।
বাস্তবতা হল, এটা এমন কোন ধ্রুব সত্য না যে, জাদুর রোগির সিহরের আয়াতেই ইফেক্ট বেশি হবে, নজরের রোগির আইন-হাসাদের আয়াতেই ইফেক্ট বেশি হবে। বরং এরকম আয়াত বিভাজনের ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব দিলে, শয়তান আপনাকে নিয়ে খেলতে পারে!
.
[খ]
এবিষয়ে উস্তায তিম হাম্বল এক ওয়ার্কশপে বলেছিলেন, "আপনার রুকইয়ার প্ল্যান আগেই ঠিক করে নেন এবং সে অনুযায়ীই শেষ করেন। প্রয়োজনে আবার রুকইয়া করেন। আপনার রুকইয়া সেশন জিনকে পরিচালনা করতে দিয়েন না!! অর্থাৎ জিনের লাফালাফি দেখে আপনি সে অনুযায়ী আয়াত পাঠ করছেন, এখানে-ওখানে আয়াত চেঞ্জ করছেন, পড়া বন্ধ করে দিচ্ছেন... এভাবে আপনি খুব সহজেই শয়তানের ধোঁকায় পড়বেন।
ধোকার অনেক কারণ আছে, তার মধ্যে বড় একটা কারণ হল, আপনি তো জিনকে সরাসরি দেখতে পাচ্ছেন না, হয়তোবা যে আয়াতগুলোতে কষ্ট হয়েছে সেখানে দাঁতে দাঁত চেপে বসে ছিল, আর যেখানে কষ্ট কম হচ্ছে সেখানে ব্যথা পাওয়ার মিথ্যা নাটক করছে। এরকম হতেই পারে, অস্বাভাবিক কিছু না।"
.
[গ]
দুদিন আগের কথাই বলি, যে জ্বিনের রুকইয়ার কথা শেয়ার করেছিলাম, (অনেক কষ্ট হয়েছে বের হতে, ওইটা..) উনার রুকইয়ার সময় খুব বেশি প্রভাব দেখা গেল বদনজরের আয়াতগুলো পড়ার সময়ে! কিন্তু আমরা তো খুব ভালো ভাবেই জানি যে, উনার জিনের সমস্যা আছে।
তাহলে এমন কেন হল?
- এই রোগীর ক্ষেত্রে যেটা ঘটেছে, প্রথমে শুরু করার পর থেকেই জিনের কষ্ট হয়েছে, কিন্তু সে কষ্ট সহ্য করেছে। সহ্য করতে করতে একদম শেষে যখন বদ নজরের আয়াতগুলো পড়ছিলাম তখন তার সহ্যক্ষমতা শেষ হয়ে গেছে, এরপর চিল্লাচিল্লি শুরু করেছে।
সত্য কথা হলো, যে আয়াতই পড়েন না কেন আপনি, শয়তান কমবেশি কষ্ট পাবেই, কিন্তু কতক্ষণ সহ্য করতে পারছে সেটাই বিষয়।
.
মজার ব্যাপার হলো সূরা নাস পর্যন্ত পর যখন আবার শুরুর দিকের আয়াতগুলো পড়েছি, তখন কিন্তু ঠিকই কষ্ট হয়েছে। যে আয়াতগুলোতে প্রথমবার একদম চুপ করে ছিল, পরেরবার সেই একই আয়াতে কান্নাকাটি করেছে, হাতজোড় করে মাফ চেয়েছে।
এরকম অনেকবার দেখেছি যে, সিহরের আয়াত পড়লে জিনের কষ্ট হচ্ছে। আর জিন সংক্রান্ত আয়াত পড়লে সিহরের রোগির মাঝে ইফেক্ট দেখা যাওয়া তো খুবই স্বাভাবিক। কারন অনেক জাদুর সাথে জিন জড়িত থাকে।
.
[ঘ]
অতিরিক্ত কাস্টমাইজ করলে আরও কিছু সমস্যা আছে, ভবিষ্যতে এটা নিয়ে বিস্তারিত কথা হবে ইনশাআল্লাহ। আজ সংক্ষেপে কয়েকটা পয়েন্ট বলি-
১. এর দ্বারা মাসনুন রুকিয়ার উপর আপনাকে ভরসা কমে যায়।
২. এরকম বিভিন্ন যায়গার ভাঙ্গা ভাঙ্গা ভাঙ্গা আয়াত পাঠ করলে, রোগীর ওপর সাইড ইফেক্ট অনেক বেশি হয়।
এজন্য খেয়াল করে দেখবেন, দীর্ঘদিনের জন্য রুকইয়া প্ল্যান দেয়া হলে অভিজ্ঞ শাইখরা সূরা বাকারা, ৮ সুরার রুকইয়াহ, আয়াতুল কুরসি, ৩কুল- এরকম সলিড তিলাওয়াত শুনতে বলেন। আমার মনে হয়, এগুলোতে তাৎক্ষণিক ইফেক্ট কম হলেও, দীর্ঘমেয়াদে ফায়দা অনেক বেশি হয়। আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানেন!
৩. আপনার মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়, তিলাওয়াতের ধারাবাহিকতায় বিঘ্ন ঘটে, যখন আপনি বিভিন্ন জায়গা থেকে ছড়ানো-ছিটানো আয়াত তিলাওয়াত করেন।
শাইখ লুহাইদানের সাধারণ তিলাওয়াত আর রুকইয়ার তিলাওয়াতের তুলনা করলে এব্যাপারে কিছুটা ধারনা পাবেন।
৪. যেটা পূর্বে বললাম, ইফেক্টের ব্যাপারে জিন আপনাকে ধোঁকা দিতে পারে।
৫. আপনি ডায়াগনোসিসের ভুল করতে পারেন।
অর্থাৎ জিনের রোগিকে নজরের পেশেন্ট মনে করে, জাদুর রোগিকে কিংবা মানসিকভাবে অসুস্থ রোগিকে জীনের রোগি ভেবে ধোকা খেতে পারেন। চিকিৎসায় ভুল করতে পারেন।
.
[ঙ]
রুকইয়াহ শারইয়াহ দুইভাবে ফায়দা দেয়,
১. দোয়া বা রহমত প্রার্থনা
২. স্পেল ইফেক্ট
মাসনুন রুকইয়ার মাঝে সাধারণত ওপরের দুইটাই থাকে। আর বিষয়ভিত্তিক আয়াতে সাধারণত দ্বিতীয়টার প্রাধান্য থাকে।
আমাদের উচিত রুকইয়ার দোয়া ফর্মের দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া।
---
পরিশেষে বলব, আমার খেয়াল হল, বিষয়ভিত্তিক আয়াত পড়েন, এর দ্বারা উপকৃত হোন সমস্যা নাই। কিন্তু এর ওপর অতিরিক্ত নির্ভর কইরেন না। বিশেষত চিকিৎসার প্রাথমিক লেভেলে এটা আপনাকে বাজে ধরনের বিভ্রান্তিতে ফেলতে পারে..।
.
আল্লাহ্‌ আমাদের সব ভুলভ্রান্তি এবং শয়তানের ধোঁকাথেকে হিফাজত করুন। আমিন।
ওয়ামা আলাইনা ইল্লাল বালাগ!
 
 
 
 
আয়াত কাস্টমাইজেশন প্রসঙ্গে আরও কিছু কথা..
-------
[ক]
কিছুদিন আগে আমরা "রুকইয়ার মাঝে অতিরিক্ত কাস্টমাইজেশন করার সমস্যা" নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। কেউ কেউ ভালোভাবে নিয়েছেন, কেউ আবার পাত্তা দেননি।
কদিন আগে নামের পূর্বে রাকি যুক্তকারী এক ভাই তো বেন হালিমার মত আয়াতের লিস্ট দিয়ে দিয়েছে, 'পাখি জিন হইলে এই আয়াত, হাতি জিন হলে এই আয়াত, ঘোড়া জিন হলে এই আয়াত।'
এগুলো নিঃসন্দেহে বাড়াবাড়ি ভাই। এই বাড়াবাড়ির কারণে কোরআনের রূহানিয়্যাত, রুকইয়ার সুরতে দোয়ার আকুলতা কিংবা রহমানের কাছে নিজেকে তুচ্ছ করে উপস্থাপনের অভ্যাস; এই সবকিছুতেই ভাটা পড়ে। এরপর আবার অদৃশ্যের ব্যাপারে এভাবে মন্তব্য করা, এসবের ফলে রাক্বি এবং তার ওপর আস্থা রাখা রোগীরা পতিত হন সুদুর ভ্রান্তিতে।
আপনি এধরনের রাক্বিদের দেখবেন জ্বিন অথবা জ্বিন প্রভাবিত রোগীর বক্তব্যকে খুব গুরত্ব দিতে। এমনকি কিছু রাক্বি জিন-শয়তানের কাছে কিয়ামতের আলামত বিষয়ে প্রশ্ন করে, এরপর সেসব ভিডিও করে ইউটিউব - ফেসবুকে আপলোড দেয় : "ইলুমিনাতি সম্পর্কে কী বলল ইবলিসের নাতি! দেখুন ভিডিওসহ!!"
[খ]
দ্বিতীয়তঃ এটা দোয়ার মাঝে বাড়াবাড়ির অনুরূপ কাজ। যে ব্যাপারে অনেক সাহাবায়ে কিরাম থেকে ধমকি বর্ণিত আছে।
‘আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্‌ফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি তাঁর পুত্রকে দু’আ করতে শুনলেনঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করি, আমি যখন জান্নাতে প্রবেশ করলে জান্নাতের ডান দিকে যেন সাদা অট্টালিকা থাকে। (একথা শুনে) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, হে বৎস! আল্লাহ্‌র নিকট জান্নাত প্রার্থনা কর এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় চাও। কারণ আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ শীঘ্রই এ উম্মাতের মধ্যে এমন একদল লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা পবিত্রতা অর্জন ও দু’আর ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করবে।
- সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৯৬
.
সা’দ (রা) তাঁর এক ছেলেকে এই বলে দোয়া করতে শুনলেন যে, হে আল্লাহ,
নিংসন্দেহে আমি আপনার কাছে জান্নাত ও তার সুখ-শান্তি কামনা করি, এবং জান্নাতের মূল্যবান রেশমি বস্ত্র ও অনুরূপ (মূল্যবান জিনিস) কামনা করি, আর আপনার কাছে পানাহ চাই জাহান্নাম থেকে এবং তার শিকল ও তীব্র পিপাসা থেকে।
সা’দ রা. বলেন, হে বৎস! আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে বলতে শুনেছি: এমন সম্প্রদায় আসবে যারা তাদের দোয়ায় সীমা-লঙ্ঘন করবে। সাবধান তুমি তাদের দলভুক্ত হবে না। তোমাকে যদি জান্নাত দেয়া হয় তাহলে এর মধ্যে যা কিছু আছে সবকিছু সমেত দেয়া হবে। আর যদি জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয় তাহলে জাহান্নাম ও তার মধ্যে যতো খারাপি আছে তার থেকে মুক্তি দেয়া হবে।
- মুসনাদে আহমাদ : ১/১৭২
[গ]
উপসংহারে পুরান কথাই নতুন করে বলি: রুকইয়ার সাথে সাথে উদ্ভট পদ্ধতি ফলো করা রাক্বিদের রুকইয়া এবং ম্যালপ্র্যাকটিসের তাৎক্ষণিক প্রভাব, সাইড ইফেক্ট এবং অস্বাভাবিক মুভমেন্ট থেকে রাক্বি এবং দর্শকরা ভেবে থাকে 'এটা হয়তো মাসনুন রুকইয়া কিংবা সালাফে সালেহীনদের অনুসৃত রুকইয়ার চেয়ে বেশি কাজে দিচ্ছে।
কিন্তু বাস্তবে তাদের দীর্ঘদিনের রুকইয়ার চিত্র একসাথে করলে আসল করুণ চিত্র বেরিয়ে আসে।
.
এক্ষেত্রে রোগীর ভাগ্য ভালো থাকলে তো ওই রাক্বির কবল থেকে বেচে যায়, নইলে দিন শেষে চট্টগ্রামের সেই ৬ লাখ জিন মারা ভাইয়ের মত রুকইয়া করাতে গিয়ে মানসিক অসুস্থ হয়ে ফিরে।
এজন্য ভাই! আমরা চোখ ধাঁধানো তেলেসমাতি কারবারের ব্যাপারে সাবধান হব। সাধারণ রুকইয়াহ শারইয়ার ওপর স্ট্রিক্ট থাকব। সবর করব আর দোয়া করব।
আল্লাহ তাওফিক দিক।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সবসময় হিদায়াতের ওপর অবিচল রাখুক। আমিন।
 
 
সোশ্যাল মিডিয়ায় অবিরত জিনের রুকইয়ার ঘটনা শেয়ার করা প্রসঙ্গে উন্মুক্ত চিঠি...
-----------
(এই স্ট্যাটাসের লেখাগুলো এক ভাইকে ব্যক্তিগতভাবে নসিহতের জন্য বলেছিলাম। এই প্রসঙ্গে আলাদা প্রবন্ধ লেখার চেয়ে সামান্য এডিট করে সবার জন্য প্রকাশ করছি। আশা করছি লেখক - পাঠক সবার জন্য এটা আখিরাতের পাথেয় হবে।)
-------
কেন রুকইয়ার ঘটনা খুব সতর্কতার সঙ্গে শেয়ার করা উচিত? কারণ -
 
১. এসব লেখাকে ভায়োলেন্সের প্রমাণ হিসেবে দেখিয়ে হিন্দু বা সেক্যুলাররা কাজে বাধা দেয়ার সুযোগ পাবে। তখন অন্যদের কাজের ক্ষেত্র নষ্ট হবে।
তান্ত্রিকরা ওদের পরিচিত এলিটদের দিয়ে ঝামেলা পাকাতে পারে। যেহেতু ওদের ইমারত ধ্বংস করতেসি আমরা।
 
২. এভাবে জ্বিনের ঘটনা শেয়ার করার কারনে রুকইয়ার ব্যাপারে মানুষের অতিপ্রাকৃত বিশ্বাস বাড়ছে, আমাদের তো উচিত বিষয়টা সহজ ও স্বাভাবিক বানানোর চেষ্টা করা।
নইলে সুস্থতা পেতে দেরি হলে বা কোন কারনে তাৎক্ষণিক উপকার কম পেলে মানুষ বিষয়টার ওপরেই আস্থা হারিয়ে ফেলবে।
(এরকম ঘটনা ইদানীং ঘটছেও। ফেসবুকের গল্প পড়ে গিয়ে বিভিন্ন রাক্বিদের সাথে রোগীরা তর্ক করছে - "অমুক অমুক ভাই তো এত এত জিন হাজির করে ওয়াদা নিয়ে বিদায় করে, আপনি আমার বেলায় করছেন না কেন? কত টাকা দিলে করবেন?!!"
আগে যে কথা মানুষ কবিরাজদের রেফারেন্স টেনে বলত, আজ রাক্বিদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলছে। এটা আমাদের জন্য কষ্টের।)
 
৩. আপনি অনেক রোগীর রুকইয়া মাসের পর মাস করছেন, যেগুলোর আলোচনা পাবলিক প্লেসে আসেনি। কিন্তু মানুষ তো আপনাদের এসব স্ট্রাগল বুঝবে না।
আর আপনি শেয়ার করছেন ১০০ জন মানুষের ১০০টা কেস। এদিকে পাঠক কিন্তু ঘুরে ফিরে একই। এদের ওপর এতগুলা ঘটনার বিরাট ইফেক্ট পড়তেসে।
এজন্য আমি অনেককেই বলতাম দরকার না থাকলে রুকইয়াহ গ্রুপ আনফলো করে রাখেন, এত জনের অস্বাভাবিক ঘটনার পোস্ট যখন আপনি একা মানুষ পড়বেন। তখন খুব সহজেই আপনার ওপর এর মন্দ প্রভাব দেখা যাবে।
কারণ, চিকিৎসক হিসেবে একশ জনকে দেখা, আর এমনি পাঠক দর্শক হিসেবে দেখার কিন্তু পার্থক্য আছে।
 
৪. সার্বিকভাবে চিন্তা করে দেখেন, রেগুলার এসব স্ট্যাটাস দেয়াতে আদতে রুকইয়াহ ফিল্ডের জন্য ফায়দা হচ্ছেনা। উম্মাহর দীর্ঘমেয়াদি ফায়দা তো আরওই না।
আপনার ভালোভালো ঘটনা একসাথে করে একটা ডক বানালে বা ব্লগে রাখলে তখন ভিন্ন বিষয়, অল্প কজন যারা রুকইয়া নিয়ে কাজ করবে তারা বারবার পড়ে শিখতে পারবে।
কিন্তু শত শত সাধারন মানুষের কাছে পোস্ট করে দিলে এসব মানুষের মনে জীন-জাদু সম্পর্কে যেসব ফ্যান্টাসি আছে, সেগুলো আরো উসকে যাচ্ছে।
 
আর নিজের ওয়ালে দিতে চাইলে আমভাবে সবার জন্য শিক্ষনীয় ঘটনা একদম ফিল্টার করে দেয়া উচিত, সাথে এই ঘটনা থেকে কি বুঝা গেল, এটা কেন ইউনিক, এথেকে কি কি উপদেশ গ্রহণ করার আছে এগুলো উল্লেখ করে দেয়া উচিত।
নইলে দিন শেষে এগুলো পড়া আর ভুত এফএম বা রূপকথার গল্প পড়ার মাঝে খুব একটা ব্যবধান থাকবে না।
 
আবু ইবরাহিমের আলোচনাগুলো খেয়াল করলে এই জিনিসটা পাবেন, সে প্রতিটা ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে শিক্ষণীয় বিষয় কি কি সেটা উল্লেখ করে দেয়।
 
রুকইয়াহ গ্রুপের ওয়েবসাইটে কিন্তু কেস স্ট্যাডি সেকশন আছে, কিন্তু পুরা খালি। সবরকম ঘটনা শেয়ার করলে সেটা অনেক আগেই ভরে যেত। আপনি/আপনারা চাইলে সেটা ব্যবহার করতে পারেন। 
 
বেছে বেছে ঘটনা সেন্সর এবং সম্পাদনা করে সংরক্ষণ করলেন। ভবিষ্যতে যারা রুকইয়াহ নিয়ে কাজ করবে তাদের ফায়দা হবে।
হ্যা, লাভের লাভ একটা আছে কিছু লোকের! তা হচ্ছে, "এগুলা গল্প বা ভিডিও দিয়ে কাস্টমার ধরে।" এই কারণেই ওয়েস্টের বহু রাক্বি জায়েজ-নাজায়েজ বিবেচনা না করে, রোগীর প্রাইভেসির পাত্তা না দিয়ে ইউটিউবে রুকইয়ার অস্বাভাবিক অবস্থার ভিডিও আপলোড করতে থাকে। রোগীর অপ্রস্তুত অবস্থার ভিডিও আপলোড দিয়ে কাস্টমার ধরা নিসন্দেহে জঘন্যতম কাজগুলোর একটা।
যাহোক। শেষ কথা বলি - 
 
৫. আপনিও একটা বিষয় জানেন, সেটা হলো "রাক্বিদের কাজ হল রুকইয়াহ আর মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা। জ্বিনের সাথে বেশি কথা বলা ঠিক নানাম, ধর্ম, কেন এসেছে। বিধর্মি হলে দাওয়াত দেয়া। এরপরে চলে যেতে বলা। গেলে ওয়াদা নেয়া আর না গেলে তাকে শাস্তির ভয় দেখানো" এটুকুই। 
 
হ্যাঁ, অন্য কথা বললে রোগীকে করা যাদুর জিনিসপত্রের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা যায়। তবে পুরাপুরি বিশ্বাস করা যাবে না।
 
এসব কথার বাইরে বেশি কথা বললে কোরআনে বলা "জ্বিন থেকে ফায়দা নেয়ার দিকে" যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। আমরা শুরুর দিকে লোক হিসেবে আগুন কেন, ধুয়া থেকেও দূরে থাকব তাইনা? যেন ভবিষ্যতের জন্য উদাহরণ হতে পারি।
 
যেমন, বেন হালিমা শয়তান জিনের থেকে দাজ্জালের গল্প শুনে, ভালো জিন(!) ডেকে খারাপ জিন তাড়ায়। চিন্তা করেন অবস্থা...। (এমন শয়তানি পরামর্শও নতুন রাক্বি ভাইদেরকে কেউ কেউ ইনবক্সে পাঠাচ্ছে)
 
এগুলা বাদ, আপনার স্ট্যাটাসেই অনেকে বলছে জিনকে ওখানে পাঠান / এটা ওটা করতে বলেন। কেউ কেউ নিজের স্বপ্ন কিংবা হ্যালুসিনেশনের কথা এমনভাবে বলছে, যেন এটা যে এতে কোন সন্দেহের সুযোগ নাই। আপনি এসব স্বপ্ন কিংবা ভ্রমকে পাত্তা দিতে মানা করলে আপনাকেই মন্দ ভাবা শুরু করবে।
এভাবে তো শয়তান খেলার সুযোগ পাচ্ছে আমাদের নিয়ে।
কবিরাজদের ব্যাপারে একটা ফেমাস উক্তি হচ্ছে "ওরা ভাবে যে শয়তানকে বশ করে নিজের কাজ করাচ্ছে, আসলে শয়তানই ওদেরকে বশ করেছে।"
আমাদের ক্ষেত্রে যেন এমন সম্ভাবনা তৈরি না হয়।
অনেক কথা বললাম। একটু সতর্ক থাইকেন প্লিজ। প্রয়োজনে প্রতিটা লেখার পূর্বে আলেমদের সাথে মাশওয়ারা করেন, লাভ-ক্ষতি চিন্তা করেন, ইস্তিখারা করেন, এসব আমাদের পূর্বসূরিবড়দের অভ্যাস ছিল।
পরামর্শগুলো একটু সময় নিয়ে ভাববেন।
আল্লাহ আপনাকে ও আমাকে সবসময় কল্যাণের মাঝে রাখুক। আমিন।