Thursday, June 17, 2021

২৪. প্রশ্ন: বাসর রাতে কি যৌনমিলন আবশ্যক? যদি তাই হয় তাহলে একজন অপরিচিতার সাথে তা কীভাবে সম্ভব? Marriage education series

 No photo description available.

 

 

প্রশ্ন: বাসর রাতে কি যৌনমিলন আবশ্যক? যদি তাই হয় তাহলে একজন অপরিচিতার সাথে তা কীভাবে সম্ভব?
▬▬▬◖❤❤◗▬▬▬
উত্তর:
বাসর রাতে যৌনমিলন করতেই হবে ইসলামে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। যদি স্বামী-স্ত্রী উভয়ে সম্মত ও আগ্রহী হয় তাহলে সহবাস করবে, অন্যথায় বিরত থাকবে।
 
❤ বাসর রাতে করণীয়:
 
বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী একসাথে আগে পিছে দাঁড়িয়ে দু রাকআত নফল সালাত আদায় করবে, স্বামী নব বধূর কপালে হাত রেখে দুআ পাঠ করবে, তাকে দুধ বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে দিবে। তাপর পরস্পরে কথাবার্তা বলবে, পরিচিত হবে, স্ত্রীর মন থেকে ভয়ভীতি দূর করে একটা আন্তরিকতা ও ভালবাসা পূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করবে।
 
অত:পর যদি তারা উভয়ের মধ্যে যৌন মিলনে আগ্রহ সৃষ্টি হয় তাহলে দুআ পড়ে সহবাসে লিপ্ত হবে।
--------------------------------------
 
❤ বাসর রাতে স্বামী স্ত্রীর কপালে হাত রেখে এই দোয়াটি পাঠ করা সুন্নত:
 
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ
 
(আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা জাবালতাহা ‘আলাইহি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা জাবালতাহা ‘আলাইহি)
 
“হে আল্লাহ, আমি এর যত কল্যাণ রয়েছে এবং যত কল্যাণ তার স্বভাবে আপনি দিয়েছেন তা চাই। আর এর যত অকল্যাণ রয়েছে এবং যত অকল্যাণ ওর স্বভাব-চরিত্রে আপনি রেখেছেন তা থেকে আপনার আশ্রয় চাই।”
 
(আবু দাঊদ-২/২৪৮, নং ২১৬০; ইবন মাজাহ্‌ ১/৬১৭, নং ১৯১৮। আরও দেখুন, সহীহ ইবন মাজাহ, ১/৩২৪)
❤ সহবাসের পূর্বে স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ের জন্য নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়া সুন্নত :
 
” ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺟَﻨِّﺒْﻨَﺎ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥَ ، ﻭَﺟَﻨِّﺐْ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥَ ﻣَﺎ ﺭَﺯَﻗْﺘَﻨَﺎ ”
 
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহ্‌। আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়তান ও জান্নিবিশ শায়তানা মা রাযাক্বতানা।
 
অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করছি। হে আল্লাহ, আমাদেরকে শয়তান হতে বাঁচান এবং আমাদেরকে যদি কোন সন্তান দেন তাকেও শয়তান হতে বাঁচান। [বুখারী হা/ ৬৩৮৮ ও মুসলিম হা/ ১৪৩৪)]
 
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
FB ID: AbdullaahilHadi
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

বাসর রাতে জামাআতের সাথে নবদম্পতীর দু রাকাআত নফল সালাত আদায় করা মুস্তাহাব Marriage education series

 No photo description available.

 

বাসর রাতে জামাআতের সাথে নবদম্পতীর দু রাকাআত নফল সালাত আদায় করা মুস্তাহাব
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
প্রশ্ন: বাসর রাতে নতুন বর ও কনের দু রাকাআত নামাযের বিধান কি? এ সংক্রান্ত হাদীসগুলো কি সহীহ?

উত্তর:


বাসর রাতে নব দম্পতীর দু রাকাআত নামায পড়ার ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কোন হাদীস পাওয়া যায় না। তবে একাধিক সাহাবীর আমল পাওয়া যায়। তাই অনেক আলেমগণ বলেছেন, এই দু রাকাআত নামায পড়া মুস্তাহাব।


এ ব্যাপারে সাহাবীদের আমল সম্পর্কে সহীহ সনদে দুটি হাদীস উল্লেখ করা হল: 


🌀 ১. আবু উসাইদ . এর গোলাম আবু সাঈদ হতে বর্ণিত। তনি বলেন, আমি গোলাম থাকা অবস্থায় বিয়ে করলাম এবং কয়েকজন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবীকে ডাকলাম। তাদের মধ্যে ছিলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ, আবু যর এবং হুযায়ফা রা.।
তিনি বলেন, আমি তাদেরকে বললাম, আমাকে (আমার করণীয় সম্পর্কে) শিক্ষা দিন। তারা বললেন,
إذا أدخل عليك أهلك فصل عليك ركعتين ، ثم سل الله تعالى من خير ما دخل عليك ، وتعوذ به من شره ، ثم شأنك وشأن أهلك
“যখন তোমার ঘরে তোমার স্ত্রীকে প্রবেশ করানো হবে তখন তুমি দু রাকাআত সালাত আদায় কর এবং তোমার ঘরে যে এসেছে আল্লাহর নিকট তার কল্যাণ প্রার্থনা কর এবং অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা কর। তারপর তুমি এবং তোমার স্ত্রীর যা করণীয় কর।”(মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ৩/৪০১ এবং মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৬/১৯১, শাইখ আলবানী রহ. বলেন, আবু সাঈদ পর্যন্ত এ হাদীসের সনদ সহীহ)

🌀 ২) শাকীক রহ. তবে বর্ণিত, এক লোক আব্দুল্লাহ (অর্থাৎ ইবনে মাসঊদ) এর নিকট আগমন করলেন (তিনি আবু জারীর নামে পরিচিত)। তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা কে বললেন, আমি এক যুবতী মেয়ে বিয়ে করেছি। কিন্তু আমার আশংকা হচ্ছে, সে আমাকে অপছন্দ করবে (বা আমার প্রতি রাগ-গোস্বা করবে)।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ বললেন, 


ن الإلف من الله ، والفرك من الشيطان ، يريد أن يكره إليكم ما أحل الله لكم ، فإذا أتتك فمرها أن تصلي وراءك ركعتين

ভালবাসা ও সুসম্পর্ক আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় আর ঘৃণা বা রাগ-গোস্বা হয় শয়তানের পক্ষ থেকে। কারণ সে আল্লাহর হালাল করা বিষয়ে তোমাদের মাঝে ঘৃণা সৃষ্টি করতে চায়। সুতরাং তোমার স্ত্রী তোমার কাছে আসলে তাকে আদেশ করবে, সে যেন তোমার পেছনে দু রাকাআত সালাত আদায় করে।” ( মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ৩/৪০২ এবং মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৬/১৯১, ত্বাবারানী কাবীর ৯/২০৪ শাইখ আলবানী রহ. বলেন, হাদীসের সনদ সহীহ- আদাবুয যাফাফ পৃষ্ঠা ২৪)


উক্ত হাদীসদ্বয় দ্বারা অনেক আলেম, বাসর রাতে নতুন স্বামী-স্ত্রীর কর্তৃক দুরাকাআত নামায আদায় করাকে মুস্তাহাব বলেছেন।

💠 নামায পড়ার নিয়ম হল, স্বামী আগে দাঁড়াবে আর স্ত্রী তার পেছনে দাঁড়াবে। তারপর জামাআতের সাথে দু রাকাআত নফল সালাত আদায় করবে। তারপর তারা উভয়ে তাদের নতুন জীবনের কল্যাণ চেয়ে এবং অকল্যাণ থেকে আশ্রয় চেয়ে মহান আল্লাহর নিকট দুআ করবে।

💠 বাসর রাতে এ দু রাকআত নামাযে কিরাআত কি উঁচু স্বরে পড়বে না কি নিচু স্বরে পড়বে?

উত্তর:
যদি রাতের বেলায় উক্ত নামায পড়া হয় তাহলে একটু উঁচু স্বরে আর দিনের বেলায় পড়লে নিম্ন স্বরে পড়বে। যে কোন নফলের ক্ষেত্রে এটিই সাধারণ সুন্নত। সুতরাং এ বিধান এখানেও প্রযোজ্য হবে ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব