Thursday, June 17, 2021

১৭. আমার স্বামীর অক্ষমতার দরুন আমি আমার দেবরের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাই। এতে কি আমার জন্য আমার স্বামী হারাম হয়ে গেছে? এখন আমার কী করণীয়? Marriage education series

 No photo description available.

 

আমার স্বামীর অক্ষমতার দরুন আমি আমার দেবরের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাই। এতে কি আমার জন্য আমার স্বামী হারাম হয়ে গেছে? এখন আমার কী করণীয়?
----------------
প্রশ্ন: বিয়ের পর আমি আমার দেবরের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাই। কারণ আমার স্বামী শারীরিকভাবে অক্ষম ছিল। এখনো একই অবস্থা আছে। তখন আমার কাছে আমার শারীরিক চাহিদাটাই সবচাইতে বড় মনে হত।
আমি যে কত বড় পাপ করতেছি তা আমার বোধগম্য ছিল না তখন। কিন্তু আমি এখন বুঝতে পারছি, আমি কত জঘন্য পাপ করছি। জানিনা আমার পাপ আল্লাহ ক্ষমা করবেন কি না।
কিন্তু আমি এখন আল্লাহর রাস্তায় ফিরে এসে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক বাকি জীবনটা পার করতে চাই
আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি এবং আমার দেবরের সাথে আমার যে খারাপ সম্পর্কটা ছিল তা থেকে সরে আসছি। আর এখন আমি আমার দেবর থেকে অনেক দূরে থাকি। ওর সাথে আমার আর এখন দেখা হয় না। আমি এখন ওনার সামনেও যাই না এবং সেও আমার সামনে আসে না। আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পারছি। আমি এখন নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছি। নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইছি। পর্দা করছি এবং তওবা করেছি আর কখনো জীবনে এরকম পাপ এবং ভুল করবো না।
কিন্তু আমার প্রশ্ন হল, আমি একটা ইসলামিক পোস্ট করছিলাম যে, বিয়ের পরে স্বামী ব্যতীত অন্য কারো সাথে অবৈধ সম্পর্ক থাকলে স্বামীর সাথে সম্পর্ক হারাম হয়ে যায়। আমার যদি কোন সম্পর্ক হারাম হয়ে যায় তাহলে তা বৈধ করার উপায় কি? এখন আমার কী করা উচিত? কেউ খারাপ কমেন্ট করবেন না দয়া করে।
উত্তর:
নি:সন্দেহে জিনা-ব্যাভিচার অত্যন্ত নোংরা কাজ, কবিরা গুনাহ এবং ইসলামি আইনে কঠিন দণ্ডনীয় অপরাধ। বিশেষ করে বিবাহিত ব্যক্তির জিনার ভয়াবহতা ও শাস্তি আরো কঠিন। সঙ্গীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা তো বটেই।
তাইতো আল্লাহ তাআলা জিনার ধারেকাছে যেতেও নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,
وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلزِّنَىٰٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَسَآءَ سَبِيلٗا
"আর জিনার ধারেকাছেও যেও না। নিশ্চয় তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট পথ।" (সূরা ইসরা: ৩২)
তাছাড়া স্বামীর নিকট আত্মীয়দের মধ্যে দেবর, ভাসুর ইত্যাদির ব্যাপারে আরো বেশি সতর্ক করা হয়েছে। হাদীসে এদেরকে মৃত্যু সমতূল্য ভয় করতে বলা হয়েছে।
🔶 স্বামী শারীরিকভাবে অক্ষম হলে স্ত্রীর কী করণীয়?
স্বামী যদি শারীরিক ভাবে অক্ষম হয় তাহলে তার জন্য অনতিবিলম্বে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া জরুরি। বর্তমানে আলহামদুলিল্লাহ যৌন রোগের অনেক উন্নত আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। এসময় স্ত্রীর কর্তব্য, সর্বোচ্চ ধৈর্য সহকারে চিকিৎসার ক্ষেত্রে স্বামীকে সাহায্য করা এবং মানসিকভাবে তাকে শক্তি যোগানো।
কিন্তু যদি সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং একান্তই তার ধৈর্য ধারণ করাও সম্ভব না হয় বরং নৈতিক স্খলন এবং পাপাচারে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তার জন্য উক্ত স্বামী থেকে খোলা তালাক নিয়ে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েজ আছে। তাও সম্ভব না হলে নিয়মিত রোজা রাখবে। কেননা রোজা যৌন চাহিদা দমনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক।
যাহোক, কেউ যদি শয়তানের কু প্ররোচনা বা কু-প্রবৃত্তির টানে এই অপকর্মে লিপ্ত হয়ে যায় এবং পরক্ষণেই নিজের অপরাধ বুঝতে পেরে ভুল স্বীকার করত: আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে তাহলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।
সুতরাং এখন আপনার করণীয় হল, এমন জঘন্য গুনাহের জন্য লজ্জিত অন্তরে খাঁটি ভাবে আল্লাহর কাছে তওবা করা আর কখনো এমন খারাপ সম্পর্কে না জড়ানোর জন্য আল্লাহর কাছে ওয়াদা করা। সেই সাথে বেশি বেশি নেকির কাজ করা। তাহলে আশা করা যায় দয়াময় আল্লাহ আপনার অতীতের সকল গুনাহ মোচন করে আপনাকে পরিশুদ্ধ ও পবিত্র করে দিবেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ عَمَلٗا صَٰلِحٗا فَأُوْلَٰٓئِكَ يُبَدِّلُ ٱللَّهُ سَيِّـَٔاتِهِمۡ حَسَنَٰتٖۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا
"তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, ফলে আল্লাহ্‌ তাদের গুণাহসমূহ নেক দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আর আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।" (সূরা আল ফুরকান: ৭০)
আল্লাহ আরো বলেন,
قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ
“আপনি বলে দিন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছো, তোমরা আল্লাহ তা’আলার রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ [অতীতের] সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করবেন। নিশ্চয় তিনি বড়ই ক্ষমাশীল, দয়ালু।” (সূরা যুমার: ৫২ ও ৫৩)
বহু হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে, দয়াময় আল্লাহ তাআলা তওবার মাধ্যমে বান্দার অতীতের সকল গুনাহ মোচন করে দেন। আলহামদুলিল্লাহ।
আল্লাহ আমাদের সকলকে ক্ষমা করুন। আমীন।
🔶 স্বামী থাকা অবস্থায় অন্যের সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করলে বা জিনা করলে স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধন বিচ্ছিন্ন হয় বা তার সাথে সম্পর্ক হারাম হয়ে যায় এ কথা কি সঠিক?
উত্তর: না, এ কথা সঠিক নয়। ইসলামে এমন কোন কথা বলা হয় নি। মূলত: যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তালাক না দিলে কখনোই বিবাহবিচ্ছেদ হয় না।
তাই খাঁটিভাবে তওবা করুন এবং বেশি বেশি নেকির কাজ করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকারী।
 
--------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার,‌ সৌদি আরব)
পশ্চিম শিবরামপুর, দিনাজপুর

 

১৬. আজানের সময় আজানের জবাব আগে না কি স্বামীর ডাকে সাড়া দেয়া আগে? সহবাসের সময় আজানের জবাব দেয়া যাবে কি? Marriage education series

 No photo description available.

 

 

আজানের সময় আজানের জবাব আগে না কি স্বামীর ডাকে সাড়া দেয়া আগে? সহবাসের সময় আজানের জবাব দেয়া যাবে কি?
-------------------------
প্রশ্ন: আজানের সময় আজানের জবাব দিচ্ছি। এমন সময় স্বামী ডাকল অথবা কল দিল। আমার জন্য উত্তম কোনটা হবে-আজানের জবাব দেওয়া নাকি তার কল ধরা বা ডাকে সাড়া দেয়া? আর সহবাসের সময় আজানের জবাব দেয়া যাবে কি?
উত্তর:
যদি মনে হয়, স্বামীর কল ধরতে বিলম্ব হলে তিনি রাগ করবেন বা মন খারাপ করবেন তাহলে আজানের জবাব বাদ দিয়ে তার সাথে কথা বলা জরুরি।
আর আশেপাশে থাকা অবস্থায় ডাকলে তার ডাকে সাড়া দেয়ার মধ্যেও আজানের জবাব দেয়ার চেষ্টা করা ভালো যদি সম্ভব হয়। কারণ কারো সাথে টুকটাক কথা বলার ফাঁকে বা কাজ করা অবস্থায় মুখে আজানের জবাব দেয়া সম্ভব।
তবে মনে রাখতে হবে, আজানের জবাব দেয়া ফরয বা ওয়াজিব নয় বরং মোস্তাহাব আর স্বামীর ডাকে সাড়া দেয়া ফরয। সুতরাং স্বামীর হক আগে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।
অবশ্য স্বামী-স্ত্রী মিলনের সময় আজানের জবাব দেয়া ঠিক নয়:
ইমাম নওবী রহ. সহিহ মুসলিমের ব্যাখ্যায় বলেন: 
 
ويكره للقاعد على قضاء الحاجة أن يذكر الله تعالى بشيء من الاذكار فلا يسبح ولا يهلل ولا يرد السلام ولا يشمت العاطس ولا يحمد الله تعالى اذا عطس ولا يقول مثل ما يقول المؤذن. قالوا وكذلك لا يأتي بشيء من هذه الأذكار في حال الجماع، وإذا عطس في هذه الاحوال يحمد الله تعالى في نفسه ولا يحرك به لسانه. وهذا الذي ذكرناه من كراهة الذكر في حال البول والجماع هو كراهة تنزيه لا تحريم فلا إثم على فاعله. انتهى.
والله أعلم.
 
“হাজত পূরণের জন্য (পেশাব-পায়খানার জন্য) বসা অবস্থায় কোনো ধরণের আল্লাহর জিকির করা মাকরূহ (অ পছন্দনীয় কাজ)। সুতরাং এ অবস্থায় তাসবিহ-তাহলিল পাঠ করবে না, সালামের জবাব দিবে না, হাঁচির জবাব দিবে না, হাঁচি দিলে আল ‘হামদু লিল্লাহ’ পড়বে না এবং মুয়াজ্জিনের অনুরূপ শব্দ উচ্চারণ করে আজানের জবাব দিবে না। 
 
ফকিহগণ আরও বলেছেন: স্বামী-স্ত্রীর মিলনের সময়ও এ সব জিকির-আজকার উচ্চারণ করবে না। তবে এ অবস্থায় হাঁচি দিলে মনে মনে আল হামদুলিল্লাহ পাঠ করবে কিন্তু জিহ্বা নেড়ে তা উচ্চারণ করবে না।
তবে এই যে পেশাব-পায়খানা এবং সহবাসের সময় জিকির পাঠ করার
মাকরূহ বা অ পছন্দনীয় হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করলাম এটা মাকরূহে তানযিহী; তাহরিমী নয়। সুতরাং কেউ যদি এমনটি করেও তাতে গুনাহ হবে না। আল্লাহু আলাম।”
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
--------------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব
Fb I'd: Abdullaahilhadi