Monday, June 21, 2021

৩৮. স্বামী যদি স্ত্রীকে তার ভাই-বোন, খালা, খালাতো বোন ইত্যাদি রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করতে নির্দেশ দেয় তাহলে কি তা মানা আবশ্যক? Marriage education series

 No photo description available.

 

 

 

স্বামী যদি স্ত্রীকে তার ভাই-বোন, খালা, খালাতো বোন ইত্যাদি রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করতে নির্দেশ দেয় তাহলে কি তা মানা আবশ্যক?
▬▬▬🔹♦🔹▬▬▬
প্রশ্ন: স্বামী যদি পারিবারিক কলহ বা মনোমালিন্যের কারণে স্ত্রীকে তার ভাই-বোন, খালা-খালাতো বোন ইত্যাদি রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের বাড়ি যেতে এবং সম্পর্কচ্ছেদ করতে নির্দেশ দেয় তাহলে স্ত্রীর জন্য তা পালন করা জরুরি কি?
উত্তর:
রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করা হারাম। কেননা, প্রখ্যাত সাহাবী জুবাইর ইবনে মুতয়িম রা. হতে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
لا يَدْخُلُ الجَنَّةَ قَاطِعٌ، قَالَ سفيان في روايته: يَعْني: قاطِع رحِم. متفقٌ عَلَيهِ
“সম্পর্কচ্ছেদ কারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” সুফিয়ান বলেন, অন্য বর্ণনায় আছে: রক্ত সম্পর্কচ্ছেদ কারী (জান্নাতে প্রবেশ করবে না।) (বুখারী ও মুসলিম)
সুতরাং স্বামীর জন্য এ ধরণের হারাম কাজের নির্দেশ প্রদান করা হারাম আর যদি সে নিষেধ করেও থাকে তবে স্ত্রীর জন্য তা পালন করা বৈধ নয়। কেননা, ইসলামের দৃষ্টিতে আল্লাহর অবাধ্যতা করে তার সৃষ্টির আনুগত্য করা অবৈধ।
জ্ঞাতব্য যে, স্ত্রী যদি মনে মনে তাদেরকে ভালোবাসে, তাদের কল্যাণ কামনা করে এবং কখনও সুযোগ হলে বাড়ির বাইরে তাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করে, কথাবার্তা বলে বা মাঝে-মধ্যে ফোন কল-মেসেজ ইত্যাদির মাধ্যমে যোগাযোগ রাখে তাহলে তা ‘আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ’ হিসেবে গণ্য হবে না-যদিও স্বামীর নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া না হয়।
উল্লেখ্য যে, স্বামী যেহেতু তাদের বাড়ি যেতে নিষেধ করেছে সেহেতু দাম্পত্য জীবনের বৃহত্তর স্বার্থে সে বোনের জন্য স্বামীর কথা অমান্য করে তাদের বাড়ি বেড়াতে যাওয়া ঠিক হবে না-যতদিন না তাদের মাঝে সুসম্পর্ক ফিরে আসে এবং প্রকাশ্যে স্বামীর কথার লঙ্ঘন করে সে সরাসরি তাদের সাথে যোগাযোগও করবে না বরং একটু কৌশল অবলম্বন করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করবে এবং আল্লাহর নিকট দুআ করবে, তিনি যেন তাদের মাঝে ভালোবাসা ও সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে দেন।
দুআ করি, মহান আল্লাহ যেন পারিবারিক মনোমালিন্য ও সমস্যা দূরভীত করে পুনরায় তাদের মাঝে সুসম্পর্ক সৃষ্টি করে দেন। আমীন।
 
▬▬▬🔹♦🔹▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

 

৩৭. কী কী কারণে স্ত্রীর জন্য তার স্বামীর নিকট খোলা তালাক চওয়া বৈধ? Marriage education series

 May be an image of text that says 'সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'কোনো মহিলা যদি বিনা দোষে স্বামীর নিকট তালাক প্রার্থনা করে, তাহলে জান্নাতের সুগন্ধি তার জন্য হারাম হয়ে যাবে"। [মুসনাদে আহমদ; তিরমিযী; মিশকাত, হাদীস নং ৩২৭৯]'

 

 

 

কী কী কারণে স্ত্রীর জন্য তার স্বামীর নিকট খোলা তালাক চওয়া বৈধ?
▬▬▬✪✪✪▬▬▬
উত্তর:
🔰 ইসলামের দৃষ্টিতে একান্ত জরুরি কারণ ছাড়া স্বামীর নিকট তালাক চাওয়া বৈধ নয়। হাদিসে এ ব্যাপারে কঠিন পরিণতির কথা বর্ণিত হয়েছ। যেমন,
সাওবান রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏ أَيُّمَا امْرَأَةٍ سَأَلَتْ زَوْجَهَا طَلاَقًا فِي غَيْرِ مَا بَأْسٍ فَحَرَامٌ عَلَيْهَا رَائِحَةُ الْجَنَّةِ ‏‏
“যদি কোন মহিলা অহেতুক তার স্বামীর নিকট তালাক চায় তার জন্য জান্নাতের সুগন্ধও হারাম হয়ে যায়।” (আবু দাউদ, অধ্যায়: তালাক, অনুচ্ছেদ: খোলার বর্ণনা, হা/২২২৬, সহীহ)
🔰 প্রাসঙ্গিক ভাবে উল্লেখ্য যে, অনেক সময় কিছু খারাপ চরিত্রের মানুষ কোন সহজ-সরল স্ত্রীর নিকট তার স্বামীর বদনাম গেয়ে তার ব্যাপারে বিতৃষ্ণা সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস চালায় অথচ ইসলামে এ ব্যাপারে কঠোর হুমকি এসেছে। যেমন,
আবূ হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
‏ لَيْسَ مِنَّا مَنْ خَبَّبَ امْرَأَةً عَلَى زَوْجِهَا أَوْ عَبْدًا عَلَى سَيِّدِهِ ‏
“যে ব্যক্তি কোন স্ত্রীকে তার স্বামীর বিরুদ্ধে অথবা দাসকে তার মনিবের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (আবু দাউদ, অধ্যায়: তালাক, অনুচ্ছেদ: অনুচ্ছেদ-১ যে ব্যক্তি কোন স্ত্রীকে স্বামীর বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে হা/২১৭৫, সহীহ)
🔰 অনেক সময় স্ত্রী তার সতীনকে তালাক দেয়ার জন্য স্বামীর নিকট দাবি করে অথবা বাইরে কোন মহিলা কোন পুরুষকে বিবাহ করার জন্য শর্ত দেয় যে, তার আগের স্ত্রীকে তালাক দিতে হবে তাহলে তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে। অথচ এ ধরণের দাবি বা শর্তারোপ কোনটাই ইসলামে বৈধ নয়।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
لاَ تَسْأَلِ الْمَرْأَةُ طَلاَقَ أُخْتِهَا لِتَسْتَفْرِغَ صَحْفَتَهَا وَلْتَنْكِحْ فَإِنَّمَا لَهَا مَا قُدِّرَ لَهَا ‏"‏ ‏
“কোন নারী যেন নিজ স্বার্থের জন্য এবং বিয়ে বসার জন্য তার বোনের তালাক না চায়। কেননা সে তাই পাবে যা তার জন্য নির্ধারিত আছে।” ( সহীহুল বুখারী, অধ্যায়: বিবাহ। অনুচ্ছেদ, বিয়েতে যে সকল শর্ত করা বৈধ নয়। সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: তালাক, অনুচ্ছেদ: কোন মহিলার স্বামীর নিকট তার সতীনের তালাক দাবি করা হা/২১৭৬, সহীহ)
➰ যে সব কারণে স্ত্রীর জন্য তার স্বামীর নিকট তালাক চাওয়া জায়েয:
সম্মানিত ফিকহবিদগণ বলেন, স্ত্রী যদি স্বামীর পক্ষ থেকে ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হয় বা হওয়ার আশংকা করে তাহলে তার স্বামীর নিকট তালাক চাওয়া জায়েয রয়েছে। এই ক্ষয়-ক্ষতি শারীরিক, মানসিক, আমল-আখলাক, ইবাদত-বন্দেগি ইত্যাদি বিভিন্ন দিক দিয়ে হতে পারে।
নিম্নে এ বিষয়ে মৌলিক ১০টি দিক তুলে ধরা হল:
----------------
১. স্বামী যদি স্ত্রীর ভরণ-পোষণের হক আদায় করতে অপারগ হয়।
২. স্বামী যদি স্ত্রীর জৈবিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়।
৩. স্বামী যদি পরকীয়া, পাপাচারিতা এবং অন্যায়-অপকর্মে লিপ্ত হয়।
৪. স্বামীর প্রতি মনে প্রচণ্ড ঘৃণা সৃষ্টি হলে ( তা যে কারণেই হোক না কেন)।
৫. স্বামী দীর্ঘ সময় জেলে বন্দি থাকার কারণে স্ত্রী যদি নিজের নিরাপত্তা হীনতা অনুভব করে বা ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
৬. স্বামী দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত থাকার কারণে স্ত্রী যদি এতে নিজের ঈমান-আখলাকের ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা করে।
৭. স্বামী যদি স্ত্রীকে শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতিরেকে মারপিট, জুলুম-নির্যাতন, অপমান-অপদস্থ, অভিসম্পাত ও গালাগালি করে।
৮. স্বামী যদি এমন কোন দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় যার কারণে স্ত্রী তাতে সংক্রমিত হওয়ার আশংকা করে।
৯. স্বামী যদি স্ত্রীকে তার পরিবার-পরিজন বিশেষ করে পিতামাতার সাথে দেখা-সাক্ষাতে সম্পূর্ণভাবে বাধা দেয়।
১০. স্বামী যদি নিজে তাওহীদ ভিত্তিক জীবন গঠন, নামায, রোযা, যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি ইসলামের মৌলিক বিধি-বিধান পালন না করে অথবা ইসলামের কোন বিষয়কে অস্বীকার করে অথবা ইসলাম সম্পর্কে কটূক্তি করে অথবা স্ত্রীকে নামায, রোযা, পর্দা ইত্যাদি ফরয ইবাদতে বাধা দেয়...ইত্যাদি।
♻ মোটকথা, স্বামীর অন্যায়-অপকর্ম ও পাপাচারের কারণে স্ত্রী নিজের ঈমান-আমল, আখলাক ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা করলে এবং স্ত্রীর প্রতি অবধারিত হক আদায়ে ব্যর্থতার পরিচয় দিলে সেই স্বামীর নিকট স্ত্রীর খোলা তালাক চাওয়া বৈধ।
স্বামী খোলা তালাক দিতে অস্বীকার করলে সে কোর্টের আশ্রয় নিয়ে বিবাহ ভঙ্গ করতে পারে। তবে একজন বুদ্ধিমান নারীর করণীয় হল, স্বামীর মাঝে দোষ-ত্রুটি দেখলে তাকে ধৈর্যের সাথে সংশোধন করার চেষ্টা করা, নিজে না পারলে অন্যের মাধ্যমে চেষ্টা করা, স্বামীকে তার আচার-আচরণ পরিবর্তনের জন্য পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ দেয়া।
সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাড়াহুড়া করবে না এবং সন্তান-সন্ততির কথা বিবেচনা করে সবর অবলম্বন করবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে বিজ্ঞজনদের পরামর্শ গ্রহণের পাশাপাশি ইস্তিখারার সালাত আদায় করবে। তাহলে আশা করা যায়, আল্লাহ তাকে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করবেন।আল্লাহু আলাম
আল্লাহু তাওফিক দান করুন। আমীন।
▬▬▬✪✪✪▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব