Wednesday, June 23, 2021

৫৯. এক মেয়েকে বিয়ে করার পর একটি বাচ্চাও ভূমিষ্ঠ হয়েছে। তারপর জানা গেছে সে তার দুধবোন! এ ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান কি? Marriage education series

 May be an image of ‎text that says '‎"হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাওয়ার কারণে কিংবা অনিচ্ছাবশত: অন্যায় করে ফেলি তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না I" (সূরা বাকারা: ২৮৬) ربنا لاتواحِدنا أوأخطانا نسينا إن Fb page: Guidance2TheRightPa‎'‎

এক মেয়েকে বিয়ে করার পর একটি বাচ্চাও ভূমিষ্ঠ হয়েছে। তারপর জানা গেছে সে তার দুধবোন! এ ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান কি?
 
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
প্রশ্ন: আমার পরিচিত এক ভাইয়ের দাম্পত্য জীবন আজ আট বছর প্রায়। তার স্ত্রী সম্পর্কে আপন খালাতো বোন। তাদের তিন বছরের একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে জানা গেছে যে, বিশেষ প্রয়োজনে বা নিরুপায় হয়ে আমার সেই ভাইয়ের মা’ র দুগ্ধ পান করেছিলো তার উক্ত খালাতো বোন বর্তমানে যে তার স্ত্রী। তাদের বিয়ের সময় অভিভাবকদের অজ্ঞতা হোক বা ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবের কারণেই হোক বিষয়টি তখন দৃষ্টিগোচর হয় নি। কিন্তু বর্তমানে বিষয়টি জানাজানি হয়েছে। ইসলাম এক্ষেত্রে কী বলে? পুনরায় উল্লেখ করা যাচ্ছে যে, তাদের তিন বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
তাই এক্ষেত্রে ইসলামের শরিয়ত অনুযায়ী সঠিক করণীয় বলে দিলে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ থাকবো।
উত্তর:
ইসলামের দৃষ্টিতে দুধ ভাই-বোনের মাঝে বিবাহ বন্ধন চিরকালের জন্য হারাম। কেননা আল্লাহ তাআলা যে সকল মহিলার সাথে বিবাহ বন্ধন হারাম করেছেন সেগুলোর মধ্য একজন হল, দুধবোন। যেমন: আল্লাহ বলেন,
وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُم مِّنَ الرَّضَاعَةِ
 
"(তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে) তোমাদের সে মা’ দেরকে যারা তোমাদেরকে দুধ পান করিয়েছে (দুধ মাগণ) এবং তোমাদের দুধ বোনদেরকে।" (সূরা নিসা: ২৩)
এ ব্যাপারে একাধিক সহিহ হাদিসও বিদ্যমান রয়েছে।
সুতরাং যদি কোন পুরুষ এবং নারী নির্দিষ্ট কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে একই মায়ের ‘দুধ পান’ করেছে বলে সাব্যস্ত হয় তাহলে তাদের মাঝে বিবাহ বন্ধন চিরকালের জন্য হারাম।
সম্মানিত ফকিহগণ উল্লেখ করেছেন যে, রাযআত বা দুগ্ধ পান এর কারণে বিবাহ হারাম হওয়ার বিষয়টি সাব্যস্ত হওয়ার জন্য কতিপয় শর্ত রয়েছে। সেগুলো হল:
● ক. দু বছর বয়সের মধ্যে শিশুর দুধ পান করা।
● খ. কমপক্ষে পাঁচ বার তৃপ্তি সহকারে দুধ পান করা।
● গ. পাঁচ বার দুধ পান করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া।
● ঘ. দুধ শিশুর পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছা।
● ঙ. এবং এ বিষয়ে কমপক্ষে একজন বিশ্বস্ত মহিলা সাক্ষ্য প্রদান করা। (এ বিষয়ে বিস্তারিত আলাদা একটি পোস্ট দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ)
.
যদি উপরোক্ত শর্তাবলী অনুযায়ী কোন শিশু কোন মহিলার দুধ পান করেছে বলে সাব্যস্ত হয় তাহলে তাদের মাঝে রাযআত বা দুধ পান জনিত কারণে মাহরামিয়াত সাব্যস্ত হবে। অর্থাৎ উক্ত শিশুর সাথে ওই মহিলা ও তার স্বামীর সাথে সম্পর্ক হবে হুবহু নিজের জন্মদাতা পিতামাতার অনুরূপ এবং তাদের সন্তানাদির সাথে সম্পর্ক হবে হুবহু জন্মসূত্রের ভাই-বোনের অনুরূপ। অর্থাৎ তাদের মাঝে পর্দা করা আবশ্যক নয় এবং তাদের মাঝে চিরতরে বিবাহ বন্ধন হারাম। (এতে সম্পদের উত্তরাধিকার সাব্যস্ত হবে না।)
কিন্তু যদি কোনো পুরুষ ও নারীর মাঝে বিয়ে সংঘটিত হওয়ার পরে জানা যায় যে, তারা শিশুকালে একই মায়ের দুধ পান করেছিলো (এবং তা যথাযথ শর্তাবলীর আলোকে সুসাব্যস্ত হয়) তাহলে সাথে সাথে তাদের বিয়ে বাতিল বলে গণ্য হবে এবং তাদেরকে তৎক্ষণাৎ পৃথক হতে হয়ে যেতে হবে।
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগেও এমন একটি ঘটনা ঘটেছিলো। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে, তিনি তাদেরকে আলাদা করে দেন। এ মর্মে হাদিস হল:
 
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ الْحَارِثِ، أَنَّهُ تَزَوَّجَ ابْنَةً لأَبِي إِهَابِ بْنِ عَزِيزٍ، فَأَتَتْهُ امْرَأَةٌ فَقَالَتْ قَدْ أَرْضَعْتُ عُقْبَةَ وَالَّتِي تَزَوَّجَ‏.‏ فَقَالَ لَهَا عُقْبَةُ مَا أَعْلَمُ أَنَّكِ أَرْضَعْتِنِي وَلاَ أَخْبَرْتِنِي‏.‏ فَأَرْسَلَ إِلَى آلِ أَبِي إِهَابٍ يَسْأَلُهُمْ فَقَالُوا مَا عَلِمْنَا أَرْضَعَتْ صَاحِبَتَنَا‏.‏ فَرَكِبَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِالْمَدِينَةِ فَسَأَلَهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ كَيْفَ وَقَدْ قِيلَ ‏"‏‏.‏ فَفَارَقَهَا، وَنَكَحَتْ زَوْجًا غَيْرَهُ‏.‏
 
উকবা ইবনে হারিস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি আবু ইহাব ইবনে আজিজের কন্যাকে বিবাহ করলেন। পরে এক মহিলা এসে বলল, আমি তো উকবাহ এবং যাকে সে বিয়ে করেছে দু জনকেই দুধ পান করিয়েছি। উকবাহ রা. তাকে বললেন, এটা তো আমার জানা নেই যে, আপনি আমাকে দুধ পান করিয়েছেন আর আপনিও এ বিষয়ে আমাকে অবহিত করেন নি।
অতঃপর আবু ইহাব পরিবারের নিকট লোক পাঠিয়ে তিনি তাদের নিকট জানতে চাইলেন। তারা বলল, সে আমাদের মেয়েকে দুধ পান করিয়েছে বলে তো আমাদের জানা নেই। তখন তিনি মদিনার উদ্দেশে সওয়ার হলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “যখন এরূপ বলা হয়েছে তখন এ (বিবাহ) কিভাবে সম্ভব?”
অত:পর উকবাহ রা. তাকে ত্যাগ করলেন। আর সে অন্য জনকে বিয়ে করল।
(সহিহ বুখারি, অধ্যায়: সাক্ষ্যদান, অনুচ্ছেদ: ৫২/৪. অধ্যায়: এক বা একাধিক ব্যক্তি কোন বিষয়ে সাক্ষ্য প্রদান করলে আর অন্যরা এ বিষয়ে অজ্ঞতা প্রকাশ করলে সাক্ষ্য দাতার কথা অনুযায়ী ফায়সালা হবে।)
অজ্ঞতা বশত: এমন বিয়ে হওয়ার পর যদি তাদের সন্তান হয় তাহলে তা পিতার সন্তান হিসেবে গণ্য হবে এবং সন্তান হিসেবে বাবার মৃত্যুর পর সে উত্তরাধিকারী সম্পদ ভাগ পাবে। কারণ এখানে বিবাহটি ছিল শুবহা তথা সংশয়পূর্ণ। (যা অজ্ঞতাবশত সংঘটিত হয়েছিল)
এ কথাই বলেছেন ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ.। তিনি বলেন:
 
فإن المسلمين متفقون على أن كل نكاح اعتقد أنه نكاح سائغ إذا وطئ فيه فإنه يلحقه فيه ولده ويتوارثان باتفاق المسلمين، وإن كان ذلك النكاح باطلاً في نفس الأمر باتفاق المسلمين. انتهى
 
আর যেহেতু বিষয়টি তাঁদের অজানা বশত: হয়েছিল সেহেতু ইনশাআল্লাহ তারা গুনাহগার হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন:
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا
 
"হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাওয়ার কারণে কিংবা অনিচ্ছাবশত: অন্যায় করে ফেলি তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না।" (সূরা বাকারা: ২৮৬)
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb id: AbdullaahilHadi
Daee at jubail dawah & guidance center. KSA

 

৫৮. ‘স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত’ এ কথা কি হাদিস সম্মত? Marriage education series

 No photo description available.

‘স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত’ এবং ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত’ কোনটি সঠিক?
➖➖➖➖➖➖➖➖
প্রশ্ন: মানুষকে বলতে শোনা যায় যে, “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত”। আবার এটাও শোনা যায় যে, “স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত।” এ দুটি কথার মধ্যে মূলত: কোন হাদিসটি সঠিক দয়া করে জানাবেন।
উত্তর:
💠 “স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত” এ কথাটা কোন হাদিস নয়। বরং বানোয়াট কথা। কিন্তু হাদিস হিসেবে আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছেে!!
তবে স্ত্রীর কাছে স্বামীর সম্মানের কথা হাদিসে এভাবে উল্লিখিত হয়েছে,
لَوْ كُنْتُ آمِرًا أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِغَيْرِ اللهِ لأَمَرْتُ الْمَرْأَةَ أَنْ تَسْجُدَ لِزَوْجِهَا وَالَّذِى
نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ تُؤَدِّى الْمَرْأَةُ حَقَّ رَبِّهَا حَتَّى تُؤَدِّىَ حَقَّ زَوْجِهَا وَلَوْ سَأَلَهَا نَفْسَهَا وَهِىَ عَلَى قَتَبٍ لَمْ تَمْنَعْهُ
“যদি আমি কাউকে নির্দেশ দিতাম আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে সিজদা করার, তাহ’লে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করার জন্য।” (ইবনে মাজাহ হা/১৮৫৩; সহীহাহ হা/১২০৩।)
💠 "মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত” হুবহু এ শব্দে বর্ণিত হাদিসটি খুব দুর্বল মতান্তরে বানোয়াট। কিন্তু তার অর্থটি সঠিক- যেমনটি বর্ণিত হয়েছে নিম্নোক্ত হাদিস সমূহে:
🔰 মু‘আবিয়া ইবনে জাহিমা রা. হতে বর্ণিত। একদা আমার পিতা জাহিমা রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে বললেন,
يَا رَسُولَ اللهِ أَرَدْتُ الْغَزْوَ وَجِئْتُكَ أَسْتَشِيْرُكَ فَقَالَ هَلْ لَكَ مِنْ أُمٍّ قَالَ نَعَمْ فَقَالَ الْزَمْهَا فَإِنَّ الْجَنَّةَ عِنْدَ رِجْلِهَا
‘হে আল্লাহর রাসূল, আমি জিহাদে যেতে ইচ্ছুক। আমি আপনার নিকট পরামর্শ নিতে এসেছি। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মা আছে কি? লোকটি বললেন, হ্যাঁ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তুমি তার পদযুগল জড়িয়ে থাকো (অর্থাৎ তার সেবা করো), কেননা তাঁর পায়ের নিকটেই জান্নাত রয়েছে।” [আহমদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৯৩৯; সহীহুল জামে‘ হা/১২৪৯, সহীহু তারগীব ওয়াত তারহীব।]
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
فالزَمها فإنَّ الجنَّةَ تحتَ رِجلَيها
“তুমি তার পদযুগল জড়িয়ে থাকো (অর্থাৎ তার সেবা করো), কেননা তাঁর পায়ের নিচেই জান্নাত রয়েছে।” [সহিহ নাসাঈ, হা/৩১০৪]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাহিমা রা. তাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
أَلكَ والِدَانِ . قُلْتُ : نَعَمْ . قال : الزَمْهُما ، فإنَّ الجنةَ تَحْتَ أَرْجُلِهما
"তোমার কি পিতামাতা আছে?"
আমি বললাম, হ্যাঁ।
তিনি বললেন, "তুমি তাদেরকে আঁকড়িয়ে থাকো। কারণ জান্নাত রয়েছে, তাদের পায়ের নিচে।" [সহিহ তারগিব, হাসান সহিহ, ২৪২৫]
এ বর্ণনায় পাওয়া গেলো, পিতামাতা উভয়ের পায়ের নিচেই জান্নাত রয়েছে।
🔰 আবু উমামা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খিদমতে হাজির হয়ে বললেন,
يَا رَسُولَ اللهِ مَا حَقُّ الْوَالِدَيْنِ عَلَى وَلَدِهِمَا قَالَ هُمَا جَنَّتُكَ وَنَارُكَ
“হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সন্তানের উপর পিতামাতার কি হক? তিনি বললেন, “তারা উভয় তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম’। [ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/৪৭২৪।] অর্থাৎ মায়ের সেবা করা জান্নাতে যাওয়ার একটি মাধ্যম।
❌ ‘মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত’ মর্মে নিন্মোক্ত শব্দে বর্ণিত দুটি হাদিস সহিহ নয়। যথা:
((الجنة تحت أقدام الأمهات)). وفي لفظ: ((الجنة تحت أقدام الأمهات، مَنْ شِئن أدخلن، ومَن شِئن أخرجن!))
ক. “বেহেশত রয়েছে মায়েদের পদতলে ।”
খ. অন্য শব্দে “বেহেশত রয়েছে মায়েদের পদতলে। যাকে খুশি তারা জান্নাতে প্রবেশ করাবে আর যাকে খুশি বের করবে।”
এই শব্দে বর্ণিত হাদিস দুটি মুহাদ্দিসদের মতানুসারে জঈফ (দুর্বল) আর কারো মতে মউযু (বানোয়াট)।
তবে ‘মায়ের পায়ের নিকট জান্নাত’ এর মর্মার্থটি পূর্বোল্লিখিত হাদিস দ্বয়ের আলোক সহিহ।
আল্লাহু আলাম
-----------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার , সৌদি আরব
FB/AbdullaahilHadi