Friday, August 11, 2023

জুমআর দিন বাদ আসর সালাফদের আমলঃ -

 

জুমআর দিন বাদ আসর সালাফদের আমলঃ -
 
১) “ বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত সাঈদ ইবনু জুবায়ের রাহিমাহুল্লাহ (জুমআর দিন) আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কারও সাথে কথা বলতেন না। (পুরো সময়টা দোয়াতে মশগুল থাকতেন)। ”
- ইবনুল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ
[যাদুল মাআদ : ১/২৮২]
২) ইমাম ইবনুল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ
“ জুমআর দিনটি হল ইবাদতের দিন। দিনের মধ্যে জুমআর দিনটি মাসের মধ্যে রমাদানের মতো আর জুমআর দিনের বিশেষ সময়টি মাহে রমাদানের লাইলাতুল কদরের মতো। ”
[যাদুল মাআদঃ ১/৩৮৬]
“ জুমআর দিন যে সময়টিতে দোয়া কবুল হয় তা হল, আসরের পরের শেষ সময়টি। সব ধর্মাবলম্বীরাই এই সময়টির কদর করে থাকে। ”
[যাদুল মাআদ : ১/২৮৪]
৩) ইমাম ইবনুল আসাকির রাহিমাহুল্লাহ তার বিখ্যাত ‘তারীখে দিমাশক’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেনঃ
“ একবার সালত ইবনু বুস্তাম রাহিমাহুল্লাহ দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। তখন তার বন্ধুবান্ধবরা তার জন্য জুমআর দিন আসরের পর দোয়া করতে থাকেন। মাগরিবের পূর্বে তার একটি হাঁচি আসে এবং তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসে। ”
[ইবনে আসাকির; তারীখে দিমাশক]
৪) হযরত তাউস বিন কায়সান রাহিমাহুল্লাহ জুমআর দিন আসরের নামাজ পড়ে কেবলামুখী হয়েই বসে থাকতেন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত কারও সাথে কথা বলতেন না।
[তারীখে ওয়াসেত]
৫) মোফাজ্জাল বিন ফাজালা রাহিমাহুল্লাহ জুমআর দিন আসরের নামাজ পড়ে মসজিদের এক কোনায় একাকী বসে যেতেন এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত একটানা দোয়া করতে থাকতেন।
[আখবারুল কুযাত]
৬) সালাফদের মধ্যে কোন এক বুজুর্গ বলেছেনঃ
“ আমি জুমআর দিন আসর ও মাগরিবের মাঝামাঝি সময়ে যে কোনও দোয়াই করেছি আল্লাহ আমার সেই দোয়াই কবুল করেছেন। একটা পর্যায়ে আমার কাছে কিছুটা লজ্জাও লাগতো। ”
৭) ইমাম ইবনুল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ বলেছেনঃ
“ যার জুমআর দিন ঠিক হয়ে যাবে তার পুরো সপ্তাহ হয়ে যাবে। ”
.
একটি বিশেষ দোয়াঃ -
اللهُمَّ إِنَّي أَسْأَلُكَ الْفِرْدَوْسَ الْأَعْلَى مِنَ الْجَنَّةِ
 
“ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তর-জান্নাতুল ফিরদাউস কামনা করি। ”
ইমাম ইবনুল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ এই দোয়াটির ব্যাপারে বলতেনঃ
“ আপনি যদি কাউকে এই দোয়াটি বেশি বেশি করতে দেখেন তাহলে নিশ্চিত থাকুন যে, আল্লাহ তার জন্য তা লিখে রেখেছেন। ”

Thursday, August 10, 2023

দোয়া কবুলের অব্যর্থ উপায়

দোয়া কবুলের অব্যর্থ উপায়
وَذَا النُّوْنِ اِذْ ذَّهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ اَنْ لَّنْ نَّقْدِرَ عَلَیْهِ فَنَادٰی فِی الظُّلُمٰتِ اَنْ لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنْتَ سُبْحٰنَكَ ٭ۖ اِنِّیْ كُنْتُ مِنَ الظّٰلِمِیْنَ
তরজমা: এবং মাছ সম্পর্কিত (নবী ইউনুস আলাইহিস সালাম) কে দেখ, যখন সে ক্ষুব্ধ হয়ে চলে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল, আমি তাকে পাকড়াও করব না। অতঃপর সে অন্ধকার থেকে ডাক দিয়েছিল, (হে আল্লাহ!) তুমি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তুমি সকল ত্রুটি থেকে পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি অপরাধী (আম্বিয়া: ৮৭)।
ইবরত: ইউনুস আলাইহিস সালামের দোয়াখানা আল্লাহ তাআলা কুরআনে স্থান দিয়ে অমর করে রেখেছেন। এই বাক্যটিতে আছে সমস্ত বিপদের নিদান। একজন ব্যক্তি যত বিপদগ্রস্তই হোক, এই দোয়াটি পড়তে থাকলে, আল্লাহ তাআলা তাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবেনই।
ইবরত: এই ছোট্ট একটি বাক্যে কী এমন রহস্য লুকিয়ে আছে?
প্রথম রহস্য: দোয়ার শুরুতেই সর্বশ্রেষ্ঠ আমলের কথা বলা হয়েছে। তাওহিদ হল সবশ্রেষ্ঠ আমল। আমলের উসিলা দিয়ে দোয়া করলে, আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করে নেন। তাওহিদ মানে আল্লাহ তাআলাকে এক ও একক মনে করা। ইউনুস আলাইহিস সালাম দোয়া শুরুই করেছেন তাওহিদের স্বীকারোক্তি দিয়ে। তিনি জীবনে অনেক আমল করেছেন। মাতাপিতার প্রতি সদাচার করেছেন, আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করেছেন, পরোপকার করেছেন, মানুষকে দ্বীনের দিকে দাওয়াত দিয়েছেন। আরো অসংখ্য আমল করেছেন। সবকিছু সরিয়ে তিনি আল্লাহর তাওহিদকে সামনে নিয়ে এসেছেন। মুমিনজীবনে আল্লাহর তাওহিদের চেয়ে উত্তম, পবিত্র, বরকতময় আমল আর হতে পারে না। হাঁ, আমার তাওহিদটা হতে হবে বিশুদ্ধ, ভেজালমুক্ত, শিরকমুক্ত, বেদাতমুক্ত, সন্দেহমুক্ত, দ্বিধাসংকোচমুক্ত। আমার তাওহিদ যতবেশি শুদ্ধ হবে, দোয়া কবুল হওয়ার নিশ্চয়তাও তত বেড়ে যাবে।
দ্বিতীয় রহস্য: আরেকটি বিস্ময়কর ব্যাপার আছে দোয়াবাক্যটিতে। ইউনসু আলাইহিস সালাম সরাসরি মুুক্তির কথা বলেননি। সুস্পষ্ট শব্দে বিপদমুক্তির আবেদন জানাননি। তিনি বলেননি, ইয়া রব! আমাকে উদ্ধার করুন, আমাকে বাঁচান, আমাকে এই তিনস্তরবিশিষ্ট অন্ধকার থেকে বের করুন। দোয়ার এই ভঙ্গিটিও অত্যন্ত চমৎকার। স্পষ্ট করে ভঙ্গিটির কথা বলতে গেলে,
আল্লাহ তাআলার কাছে আমি কতটা অসহায়, আমি কতটা তার মুখাপেক্ষী, তার দয়া-রহমত ছাড়া আমি কতটা অচল, সেটা খোলাখুলিভাবে আল্লাহ তাআলার কাছে তুলে ধরব। অভাব-অভিযোগ, প্রয়োজন-চাহিদার কথা বলব না। আল্লাহর সামনে নিজের বিনয়, নম্রতা, আনুগত্য তুলে ধরব। আল্লাহ তাআলার কাছে বলব, আমি ভীষণ দুর্বল, আমি নিদারুণ বিপর্যস্ত, আমি সীমাহীন দুঃখ ভারাক্রান্ত। দুনিয়ার সমস্ত দ্বার আমার সামনে রুদ্ধ, সম্ভাব্য সম দরজায় টোকা দেয়ার পরও কাজ হয়নি। সবাই আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আপনি ছাড়া আমার আর কেউ নেই। আপনার দরজা ছাড়া আমার আর কোনো দরজা নেই।
এমন অসহায় আর্জিমাখা দোয়া শুনলে আল্লাহ তাআলার রহমতের দরিয়ায় ঢেউ জেগে ওঠে। এমন দোয়াকে বলা হয় দোয়ায়ে হাল (دُعاء الحال)-অবস্থার দোয়া। নিজের অসহায় অবস্থার দোয়া। নিজের হালতের কথা আল্লাহ তাআলার সামনে তুলে ধরা।
তৃতীয় রহস্য: দোয়টি উলুহিয়তের মূলনির্যাস ধারণ করে আছে। উলুহিয়ত মানে ইলাহ বা উপাস্য হওয়ার যোগ্যতা। উলুহিয়তের সারকথা হল উবুদিয়ত-দাসত্ব। ইসলামি আকিদার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ‘তাওহিদুল উলুহিয়াহ’। মানে একমাত্র আল্লাহ তাআলাকেই ইবাদতের যোগ্য মনে করা। লা-ইলাহা ইল্লা আনতা, আপনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই, আপনি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কেউ নেই। এই বাক্যেই তাওহিদুল উলুহিয়ত প্রকাশ পেয়েছে। বান্দার এই আকিদা আল্লাহ তাআলা খুবই পছন্দ করেন। এজন্যই কালিমাতেই এই আকিদার স্বীকারোক্তি বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন।
চতুর্থ রহস্য: দোয়াটিতে তাওহিদের ইবাদতের পাশাপাশি আল্লাহ তাআলার অত্যন্ত প্রিয় আরেকটি ইবাদতের কথা আছে। ইউনুস আলাইহিস সালাম আল্লাহ তাআলার কাছে ইবাদতখানা পেশ করেছিলেন। সেটি হচ্ছে ‘অসহায়ত্ব ও দীনহীনতার ইবাদত (عبادة الفقر والمسكنة)। মানে, আল্লাহ তাআলার কাছে নিজের চরম অসহায়ত্ব ফুটিয়ে তোলা। আল্লাহ ছাড়া আমি দেউলিয়া, একথা তুলে ধরা।
ইবরত: বান্দা অনেকভাবে আল্লাহ তাআলার দয়া ও অনুগ্রহ লাভ করে। কেউ বেশি বেশি দান-সদকার করে আল্লাহর প্রিয়ভাজন হয়ে যান। কেউ বেশি বেশি নফল নামাজের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করেন। কেউ কেউ মা-বাবার প্রতি সদাচারের মাধ্যমে আল্লাহর খাস রহমত হাসিল করেন। কেউ কেউ আল্লাহর কাছে বেশি বেশি নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরার ইবাদতের মাধ্যমে প্রিয় হয়ে যান। এমন ইবাদতকারীর সংখ্যা পরিমাণে খুবই কম হয়।
ইবরত: আল্লাহ তাআলার কাছে নিজের অসহায়ত্ব ও দীনহীনতার ইবাদত কীভাবে পেশ করব? স্বীকারোক্তি। হাঁ, আল্লাহ তাআলার কাছে একথার স্বীকারোক্তি দেয়া: ইয়া আল্লাহ, আমি জালেম আমি পাপী, আমি গুনাহগার, আমি আপনার যথাযথ মর্যাদা উপলব্ধিতে ব্যর্থ।
ইবরত: একজন নবি জুলুমের স্বীকারোক্তি দিচ্ছেন। নবিগণ মাসুম-নিষ্পাপ। ইউনুস আলাইহিস সালাম নিজেকে জালেম দাবি করছেন। নিঃসন্দেহে এটা আল্লাহর প্রতি তার বিনয়। একজন নবী আল্লাহর কাছে নিজেকে জালিম বলে সোপর্দ করতে পারলে, আমার মতো সাধারণ মানুষের কেমন হওয়া উচিত?
ইবরত: আমরা সাধারণত মনে করি, জুলুম শুধু অন্যের প্রতিই করা যায়। না, নিজের প্রতিও জুলুম হতে পারে। সেটা কীভাবে? আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগীতে অলসতা করা, শিথিলতা করা, শরিয়ত লঙ্ঘন করাই নিজের প্রতি জুলুম। আমি আরো বেশি ইবাদত করতে পারি, তারপরও করছি না, এটাও নিজের প্রতি একপ্রকার জুলুম। আমার উচিত নিজের ইবাদত ঘাটতির জন্য নিয়মিত ইস্তেগফার করা, তাওবা করা, আল্লাহ তাআলার কাছে নিজের এই ত্রুটি থেকে মুক্তি কামনা করা।
রাব্বে কারিম তাওফিক দান করুন। আমীন।