এক লোক প্রচুর কুরআন পড়ত। কুরআন নিয়েই ডুবে থাকতে ভালবাসত। কিন্তু কেন যেন কুরআনের কিছুই সে মুখস্থ রাখতে পারত না। একদিন লোকটির ছোট ছেলে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলল, 'বাবা, আপনি যে এত কুরআন পড়েন, কিছুই তো মনে রাখতে পারেন না। এতে কী লাভ হচ্ছে?'
.
— তোমার এই প্রশ্নের উত্তরটা দিবো। তার আগে এক কাজ করো, তুমি এই বেতের ঝুড়িটা সমুদ্র তীরে নিয়ে যাও এবং পানি ভরে নিয়ে আসো।
— এটা তো বেতের তৈরি, পানি কীভাবে ধরবে?
— আহা, চেষ্টা করে দেখো না!
.
সাধারণত কয়লা আনা-নেওয়ার কাজে তারা এই ঝুড়ি ব্যবহার করে। তবুও বাবার কথায় ছেলেটি ঝুড়ি নিয়ে তীরে গেল এবং পানি ভরল। কিন্তু বাড়ি ফিরে আসতে আসতে সব পানি পথেই শেষ। পড়তে পড়তে একদম খালি হয়ে গেছে।
.
'দেখলেন? কোনো লাভ হলো? পানি একটুও বাঁচেনি।' ছেলে আফসোস নিয়ে বলল।
লোকটি আশ্বাস দিলো, 'চেষ্টা চালিয়ে যাও সোনা। আরও কয়েকবার চেষ্টা করো।'
.
এভাবে দুইবার, তিনবার, চারবার, সবশেষে পাঁচবার পর্যন্ত চেষ্টা করল ছেলেটি। কিন্তু এক মুঠো পানিও আনতে পারল না। অবশেষে হাল ছেড়ে দিয়ে বাবাকে বলল, 'এই ঝুড়ি দিয়ে আমার পক্ষে পানি আনা অসম্ভব।'
.
এবার লোকটি শান্ত গলায় বলল, 'আচ্ছা, তবে তুমি কি ঝুড়িটার ভিতরের দিকে খেয়াল করেছ? ভিতরের অবস্থার কোনো পরিবর্তন দেখেছ?'
— হ্যাঁ, এটা পানি ধরে রাখতে না পারলেও বার বার পানি ভরার কারণে কয়লার ময়লাগুলো সাফ হয়ে গেছে। ভিতরটা বেশ পরিষ্কার দেখাচ্ছে এখন।
— ঠিক ধরেছ। এবার বলি, কুরআনও ঠিক এই কাজটাই করে তোমার অন্তরের ভিতরে। দুনিয়ার পেছনে ছুটতে ছুটতে তোমার অন্তর যখন কলুষিত হয়ে পড়ে, তখন কুরআন সমুদ্রের পানির মতোই তোমাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দেয়। অন্তরে মুখস্থ রাখতে না পারলেও সে তোমাকে পবিত্র করে দেয়।
বাবারে, একটা কথা মনে রেখো, কুরআনের প্রথম অবতীর্ণ আয়াত 'পড়ো', 'মুখস্থ করো' না। কাজেই মুখস্থ করতে না পারার কারণে শয়তান যেন তোমাকে ধোঁকায় না ফেলে, কুরআন পড়া থেকে দূরে সরিয়ে দিতে না পারে।
.
ড. আলী মুহাম্মাদ আস-সাল্লাবী (হাফি.)-এর পেইজ থেকে অনূদিত।
অনুবাদ: ওয়াফিলাইফ
.