Wednesday, December 14, 2011

হাদিস বিষয়ক কিছু পরিভাষা [ Some Hadith Related Terms ]

হাদিস বিষয়ক কিছু পরিভাষাঃ

আমরা অনেকে হাদিস নিয়ে পড়া লিখা করে থাকি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের এই প্রয়াস ভুল ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়ে সঠিক শিক্ষা নেয়ার মত আমাদের বিচার বুদ্ধি দিবেন এই দোয়া করি।আল্লাহ হুম্মাআমিন।
হাদিস অনেক প্রকার হয়ে থাকে। এবং এই হাদিস এর প্রকার ভেদে কি নামে ডাকা হয়, যিনি হাদিস বর্ণনা করে তাঁদের কি নামে ডাকা হয়, কোন হাদিস দুর্বল, কোন হাদিস শক্তিশালি এই সকল ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় কিছু আরবি শব্দ বাংলায় লিখা হয়ে থাকে।আমরা যেহেতু বাংলা ভাষার দেশের মানুষ তাই অনেক আরবি ভাষা প্রয়গ হয়ে থাকে হাদিস গ্রন্থে যা আমাদের বোধগম্য হয় না। ঐ সকল শব্দের সাথে সকলকে পরিচয় করেয়ে দেয়াই হল আমাদের এই পোস্টের প্রচেষ্টা।

হাদিসঃ ফাকিহগনের পরিভাষায়নবী (সাঃ) আল্লাহ্‌র মননিত রাসুল হিসাবে যা কিছু বলেছেন যা কিছু করেছেন এবং যা কিছু বলার বা করার অনুমুতি দিয়েছেন অথবা সমর্থন জানিয়েছেন তাকে হাদিস বলে।

হাদিসে কুদসীঃ এ ধরনের হাদিসের মুল কথা সরাসরি আল্লাহ্‌র নিকট থেকে প্রাপ্ত এবং আল্লাহ্‌র সাথে সম্পর্কিত। যেমন আল্লাহ তাঁর নবী(সাঃ)কে ইলহাম,কিংবাস্বপ্ন যোগে অথবা জিবরীল (আঃ) এর মাধমে তা জানিয়েছেন মহানবী (সাঃ) তা নিজ ভাষায় বর্ণনা করেছেন তাকে হাদিসে কুদসি বলে।

** কুরানের আয়াত যেভাবে অবতীর্ণ হত তা ঠিক সেইভাবে মানুষকে জানাতেন ।কুরানের আয়াত এবং হাদিসে কুদসির মাঝে এই বিশাল পার্থক্য।

কাওলি হাদিসঃ কাওলি মানে হল বাচনিক। কোন বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যা বলেছেনঅর্থাৎ যে হাদিসে তাঁর কোন কথা বিধৃত হয়েছে তাকে কাওলি হাদিস বলে।

ফেলী হাদিসঃ ফেলী অর্থ হল কর্ম মুলক। যে হাদিসে রাসুল(সাঃ) এর কাজের বিবরন উল্লেখিত হয়েছে তাকে ফেলী হাদস বলে।

তাকরিরি হাদিসঃ সাহাবিগনের যে সকল কথা ও কাজ মাহানবী (সাঃ) এর অনুমদন বা সমর্থন প্রাপ্ত হয়েছে সে ধরনের কোন কথা বা কাজের বিবরন হতেও শরীয়তের জানা যায়। অতএব যে হাদিসে এ ধরনের কোন ঘটনা বা কাজের উল্লেখ পাওয়া যায় তাকে তাকরির হাদিস বলে।

আছারঃ আছার শব্দের অর্থ কখনও কখনও রাসুলুইল্লাহ(সাঃ)এর হাদিস নির্দেশ করে।তবে কেও কেও হাদিস ও আছার এর মধ্যে পার্থক্য করে থাকেন।তাদের মতে সাহাবিদের থেকে শরীয়ত সম্পর্কে যা কিছু বলা হয়েছে তাকে আছার বলে। তবে এই বেপারে সবাই একমত যে শরীয়তের সম্পর্কে সাহাবিদের নিজস্ব কোন মতবাদবা কোন বিধান দেয়ার প্রশ্নই উঠেনা।কাজেই এই বেপারে তাঁদের কথা মুলতঃ রাসুলুল্লাহ(সাঃ) এর ই কথা। হয়ত কোন কারন বসত তারা শুরুতে নবী(সাঃ)এর নাম উল্লেখ করেন্নি। হাদিসের পরিভাষায় এই সকল হাদিসকে মাওকুফ হাদিসও বলে।

সাহাবীঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে রাসুল (সাঃ) এর সাহচর্যলাভ করেসেন বা তাকে দেখেছেন ও তাঁর এক্তি হাদিস বর্ণনা করেছেন অথবা একবার দেখেছেন এবং ঈমানের সাথে মৃত্যুবরন করেছেন তাকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সাহাবী বলে।

তাবিঈঃ যিনি মুহাম্মাদ (সাঃ)এর কোন সাহাবীর নিকট হাদিস শিক্ষা করেছেন অথবা অন্ততপক্ষে তাকে দেখেছেন এবং ঈমানের সাথে মৃত্যু বরণ করেছেন তাকে তাবিঈ বলে।

মুহাদ্দিসঃ যে ব্যক্তি হাদিস অধায়ন করেন এবং বহু সংখ্যক সনদ ও মতন সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান রাখেন তাকে মুহাদ্দিস বলে।

শায়েখঃ হাদিসের শিক্ষাদাতারাবিকে শায়েখ বলে।

শায়খায়নঃ শাবীদের মধ্যে আবু বকর (রাঃ) এবং ঊমর ফারুক (রাঃ) কে একত্রে শায়খায়ন বলা হয়। কিন্তু হাদিস সাস্রে ঈমাম বুখারি (রহঃ) এবং ঈমাম মুসলিম (রহঃ) কে একত্রে শায়খায়ন এবং ফিকাহসাস্রে আবু হানিফা (রহঃ) এবংআবু ইউসুফ (রহঃ) কে একত্রে শায়খায়ন বলা হয়।

সনদঃ হাদিসের মূলকথাটুকু যে সুত্রে পরস্পরায় গ্রন্থ সংকলনকারী পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকে সনদ বলে।এতে হাদিস বর্ণনাকারীর নাম একে একে সজ্জিত থাকে।

মতনঃ হাদিসের মুল কথা এবং শব্দ সমষ্টিকে মতন বলে।

হাফিজঃ যিনি সনদ এবং মতন সমস্থ বৃত্তান্ত সহ এক লাখ হাদিস আয়ত্ত করেছেন তাকে হাফিয বলে।

হুজ্জাতঃ যিনি সনদ এবং মতন সমস্থ বৃত্তান্ত সহ তিন লাখ হাদিস আয়ত্ত করেছেন তাকে হাফিয বলে।

হাকীমঃ যিনি সমস্ত হাদিস আয়ত্ত করেছেন তাকে হাকীম বলে।

রিজালঃ হাদিসের রাবি সমষ্টিকে রিজাল বলে।

রিওয়ায়াতঃ হাদিস বর্ণনা কারিকে রিওয়ায়াত বলে। অনেক সময় একটি পূর্ণ হাদিস কে রিওয়ায়াত বলে। যেমন, এইকথার সমর্থনে একটি হাদিস আছে।

মারফুঃ যে হাদসের সনদ (বর্ণনা পরম্পরায়) রাসুল(সাঃ) পর্যন্ত পৌঁছেছে অর্থাৎ যে সনদের ধারাবাহিকতা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) থেকে হাদিস গ্রন্থ সংকলঙ্কারি পর্যন্ত সুরক্ষিত আছে এবং মাজখান থেকে কোন রাবীর নাম বাদ পড়েনি তাকে মারফু হাদিস বলে।

মাওকুফঃ যে হাদিসের বর্ণনা সুত্র ঊর্ধ্বদিকে সাহাবী পর্যন্ত পৌঁছেছে অর্থাৎ যে সনদ সুত্রে কোন সাহাবীর কথা বা কাজ বা অনিমদন বর্ণিত হয়েছে তাকে মাওকুফ হাদিস বলে।

মাকতুঃ যে হাদিসের সনদ কোন তাবিঈ পর্যন্ত পৌঁছেছে তাকেমাক্তু হাদিস বলে।

মুত্তাসিলঃ যে হাদিসের সনদের ধারাবাহিকতা উপর থেকেনীচ পর্যন্ত পূর্ণরূপে রক্ষিত আছে কোন স্তরে কোন রাবির নাম বাদ পরেনি তাকে মুতাসিল হাদিস বলে।

সহীহঃ যে মুতাসিল হাদিসের সনদে উল্লেখিত প্রতেক রাবীইপূর্ণ আদালত ও জাবতগুন সম্পন্ন এবং হাদিস্তি যাবতীয় দোষ মুক্ত তাকে সহীহ হাদিস বলে।

হাসানঃ যে মুতাসিল হাদিসের সনদে উল্লেখিত কোন রাবীর যাবতগুনে পরিপুরনতার অভাব রয়েছে তাকে হাসান হাদিস বলে। ফিকাহ বিদগণ সাধারনত সহীহ এবং হাসান হাদিসের ভিত্তিতে আইন প্রনয়ন করে থাকেন।

জঈফঃ যে হাদিসের রাবী কোন হাসান হাদিসের রাবীর গুণসম্পন্ন নন তাকে জঈফ হাদিস বলে। রাবির দুর্বলতারকারনেই হাদিসটিকে দুর্বল বলাহয়ে থাকে অন্যথায় রাসুলুল্লাহ (সাঃ)এর কোন কথাই জইফ নয়।
——————————————————————————-
তথ্য সুত্রঃ আবু দাউদ, প্রকাশনা ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
———————

No comments:

Post a Comment