ফাঁসি !!!! [ Collection of Stories - 14 ]
মা,
কেমন আছো তুমি? আজ থেকে যখনঅনেকদিন পর আবার এই চিঠি পড়বে তখনও মনে করো তোমার ছেলে
তোমার কাছে জানতে চাইছে: তুমি কেমন আছো? মা, তোমাদের এই এত আদরের ছেলেকে বাঁচাবার জন্য তোমরা নানা জায়গায় দৌড়া-দৌড়ি
করেছো, এখান থেকে সেখানে গিয়ে এর-ওর পায়ে ধরেছো। আমার যে
কি খারাপ লেগেছে শুনে, বিশ্বাস করো মা। আমি শুধু তোমাদের
কষ্টই দিয়ে গেলাম, কিছুই করে যেতে পারলাম না, ওরা আমাকে করতে দিল না। আমাকে পারলে ক্ষমা করে দিও মা।
বাবা,
স্কুলে থাকতে বন্ধুদের সাথে পিকনিকে
যাওয়া নিয়ে তোমার সাথে কথা-কাটাকাটি হবার পর সেই যে তুমি আমার সাথে কথা বন্ধ করে
দিলে, আরমাঝখানে ৫টি বছর কথাই বললে না। আমার মনে হত তুমি
বোধহয়আমাকে একটুও পছন্দ কর না। কিন্তু সেদিন যখন ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ৩ জন মূল
অপরাধীর সাথে নিরপরাধ এ আমারও ফাঁসির আদেশ হয়ে গেল,তখন
আদালত প্রাঙ্গণে ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে তোমার চিৎকার করে কান্না দেখে আমার যে
কি পরিমাণ খারাপ লেগেছে, আমি বলে বোঝাতে পারব না। বাবা,
তুমি যে আমাকে এত ভালবাসো আমি জানতাম না। আমিও তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি
বাবা। আমার জন্য আর কেঁদোনা বাবা,তোমাকে কাঁদতে দেখলে
আমার খুব কষ্ট হয়।
তিতলি,
ছোট্ট বোন আমার, কেমন আছিস?ভাইয়া তো আর তোকে কোনদিন"তেলাপোকা"
বলে ক্ষেপাবে না। আর কোনদিন তোকে অভিযোগ করতে হবে না: "মা, ভাইয়াকে সবসময় বেশি বেশি আদর করে, আমাকে করে না।" যাই হোক, ভাইয়া তো চলে
যাচ্ছি, তোর উপর এখন অনেক দায়িত্ব। মা-বাবাকে দেখে রাখবি,
তারা যেন আমার অভাব বোধ না করে সেই চেষ্টা করবি, কখনো কষ্ট দিবি না। আর হ্যা, ভাইয়ার জন্য মন
খারাপ করবি না। খুব বেশি মন খারাপ হলে ভাববি, ভাইয়া তোর
পাশেই আছে, ঠিক আছে?
নিরপরাধ তরুন ছেলেটিকে একসময় ফাঁসির
মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। ছেলেটির কেন যেন কিছুই বিশ্বাস হতে মন চায় না। মনে হয় সবকিছু
বুঝি শুধুই একটা দু:স্বপ্ন, এখুনি মা'র ধমকে ঘুম ভাঙবে আর দেখবে সে বিছানায় শুয়ে আছে। কিন্তু বাস্তবতা খুব
কঠিন। ছেলেটির বার বার তার মা-বাবা-বোনের শেষবারের মত তার হাত ধরে প্রচন্ড কান্নার
কথা মনে পড়ে। আস্তে আস্তে সে ফাঁসির জায়গাটিতে এসে দাঁড়ায়। তাকে মাথায় কালো কাপড়
পড়িয়ে দেয়া হয়।
হঠাৎ করে সময় যেন থমকে দাঁড়ায়।
প্রতিটা সেকেন্ড যেন একেকটা ঘন্টার মত যেতে থাকে। ছেলেটির জীবনের শেষ সময়ে এসেও
হাল ছেড়ে দিতে ইচ্ছা করে না। মানুষ মৃত্যুর আগে খড়-কুটো ধরেও বাঁচার শেষ চেষ্টা
করে। তার হঠাৎ বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে : আল্লাহ হয়ত শেষ মূহুর্তে তাকে বাঁচাতে
কাউকে না কাউকে পাঠাবেন যার কাছে আদালতের একটা নির্দেশনামা থাকবে যেখানে লেখা
থাকবে "ছেলেটি নির্দোষ, ওকে ছেড়ে দেয়া হোক।"
ভয়ংকর নীরবতার মাঝে এক একটা সেকেন্ড
যেন অনন্তকালহয়ে যেতে থাকে। হঠাৎ ছেলেটি যেন কার পায়ের জুতোর ঠক ঠক শব্দ শুনতে পায়,
কে যেন আসছে!! ছেলেটির মাঝে একটু আশার সঞ্চার দেখা দেয়। সত্যি কি
কেউ আসছে?? নাকি এ তার বেঁচে থাকার তীব্র বাসনা থেকে
সৃষ্ট কল্পনা??
ঠক ঠক ঠক .......এক ব্যাখ্যাতীত উত্তেজনায়
ছেলেটি সেই বাস্তব-অবাস্তবের বেড়াজ্বালে ঘেরা শব্দটি কান পেতে শুনতে
থাকে..............
...............................................
গল্পটি নেয়া : https://www.facebook.com/Golpo143
গল্পটি লিখেছেনঃসপ্নীল
...................................
No comments:
Post a Comment