ঘটনা টা আমি যখন ক্লাস ৭ এ পড়ি তখন।ঈদে
বেড়াতে প্রত্যেক বারের মত নানুর বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইলে গিয়েছিলাম।ঈদের তখন ও দু
দিন বাকী।বিকেলে পৌছানোর সাথে সাথেই দেখলাম গ্রামের কিছু ছেলে পুলে আর আমার এক মামা
২দিন আগে জন্ম নেয়া খুব খুব সুন্দর ছোট্ট একটা বাছুরের সাথে খেলছে,খেলা মানে বাছুর
টাকে ধরতে গেলেই সেটা উঠোন ভরে দৌড়াচ্ছিল,আর ছেলে রা গোল হয়ে দাঁড়িয়ে সেই বাছুর টাকে
ধরার চেষ্টা করছিল।সব ক্লান্তি ঝেরে ফেলে দিয়ে আমিও তাদের দলে যোগ দিয়েছিলাম।সে রাত
কেটে গেল।বলা বাহুল্য,বাছুর টার কপালে চাদ সাইন ছিল,গ্রামের ভাষায় যাকে চাদ কপালে বলা
হয়।ঘটনা টা তার পরের রাতের।মামার সাথে ঘুমোচ্ছিলাম রাতে।মামা তখন ক্লাস নাইনে পরত।হঠাত
মাঝ রাতে আমার খুব প্রস্রাব চাপে।মামা কে ডাকলে মোটামুটি বিরক্ত হয়।আপনারা সবাই জেনে
থাকবেন,গ্রামের টয়লেট গুলো জঙ্গলের কাছাকাছি কিংবা একটু দূরে দূরে হয়।আর ছোটো খাটো
কাজ করার জন্য আনাচে কানাচেই যথেষ্ট।আমিও সেই সুযোগ টাই নিচ্ছিলাম।হঠাত মামা ডেকে বলল,দেখ,দেখ,আমাদের
বাছুর টা না?হুম তাইত,সেই চাদ কপালে বাছুর।চিনতে ভুল হয় নাই।মামা বলল,গোয়াল ঘর তো তালা
মারা।তাইলে এইটা এইখানে আসল কেমনে?আমি বললাম,চোর ঢুকসে,আমি সিউর।বাছুর টা আমাদের দিকে
কয়েক পাক ঘুরে সোজা সামনের পুকুর পাড়ের পারিবারিক কবরস্থানে্র দিকে দৌড় দিল।আমরা তাড়াতাড়ি
গোয়াল ঘরে গেলাম,সেটা দিব্যি তালা মারা ছিল।হৈ চৈ করে বাড়ি তে সেই রাতেই জিনিষ টা জানানো
গেল,কেউ কথা কানে না তুলে ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য গালমন্দ করতে লাগল।কিন্তু তারপর ও যখন
লাইট নিয়ে সবাই গোয়াল ঘরের তালা খুলে ভিতরে ঢুকল,তখন দেখতে পেলাম,বাছুর টা নিশ্চিন্তে
ঘুমোচ্ছে।আরো কিছু গালমন্দ কপালে জোটার পর সেই রাতে ঘুমোতে গেলাম।
২ দিন পরের ঘটনা
বাজার থেকে একাই ফিরছিলাম,বাজার টা গ্রাম
থেকে ২ কিমি এর মত দুরে।রাত ৭টা হবে,শীত কালে এই সমইয়েই গ্রাম নীরব হয়ে যায়।কুয়াশার
কারনে চাদের আলো স্পষ্ট ছিল না,সেই আলো তে আমি স্পষ্ট দেখলাম,ওই বাছুর টাই আমার পাশ
ঘেষে একটা পুকুরে নেমে অদৃশ্য হয়ে গেল।আমি এক দৌড় দিয়ে বাড়ি আসতে পারলাম ঠিক ই,কিন্তু
একটা জায়গায় পরিত্যক্ত বাশ এ পা লেগে ছিটকে একটা রেইন ট্রি গাছের নিচে পড়ে খুব ব্যাথা
পাই।তখন ব্যাথার চোট টা ভয়ের চেয়ে কম ছিল।তাই আবার দৌড় দিয়ে যখন বাড়িতে পৌছালাম,তখন
দেখি,মামার মাথায় পানি ঢালার রাজ কারবার চলছে।তাকে মাস্টার বাড়ীর পুকুরের সামনে অজ্ঞান
অবস্থায় পাওয়া যায়।মাস্টার বাড়ির পুকুর টা সেই পুকুর যেটায় বাছুর টাকে আমি নামতে দেখেছিলাম।সুস্থ
হওয়ার পর মামা কাউকেই আসল কথা বলতে চায় নি।আমার ঘটনা টা মামার সাথে শেয়ার করার পর মামা
যা বলল,সেই রাতে মামা প্রাইভেট পরে আসছিল।হঠাত বাছুর টা মামাকে ওভারটেক করে ক্রমান্বয়ে
একটা বিড়ালে পরিণত হয়।তারপর যখন পুকুরে নামে তখন একটা মেয়ে হয়ে ডুব দেয়।মামা বলেছিল,সেই
মেয়ে টা মাস্টার বাড়ির বড় বউ,যে গত বছর গর্ভবতী থাকা অবস্থায় পুকুরের পানি তে গোসল
করতে যেয়ে মারা যায়।গাভীন গরু টা ওই মাস্টার বাড়ির ছিল।মামারা যেটা কিনে নেয়।সেই গরু
টার যাবতীয় পরিচর্যা ওই মহিলাই করত।আর আমার পায়ের ব্যথায় ভীষন জ্বর আসে।রাতে হঠাত চিতকার
চেচামেচি তে ঘুম ভাঙ্গে।রাত কত বলতে পারব না,তবে অনেক রাত ছিল।কারন ছিল,গোয়াল ঘরের
বাছুর টার গলায় কামড়ের দাগ পাওয়া গেছে।সেটি আর বেচে নেই।সবার ধারণা,কাজ টি শেয়ালের,তালা
দেয়া ঘরে শেয়াল কিভাবে ঢুকল সেই প্রশ্ন কেন কারো মনে আসেনি,সে প্রশ্ন অনেকের কাছেই
করেছিলাম।তারা কেউ ই বিষয় টি আমার মত করে নেয় নি।হয়ত অত জটিল ভাবনায় তারা সময় নষ্ট
করতে চায়নি।আরো প্রশ্ন থেকে যায়।যদি কাজ টি শেয়ালের ই হয়ে থাকে,সেই গোয়াল ঘরে আরো কিছু
ছাগল,গরু ছিল।এই অবলা বাছুর টার ই কেন এই অবস্থা হবে?পরে এই বাছুর টাকে আর দেখা না
গেলেও মাস্টার বাড়ির ওই বউ কে রাতে অনেকেই অনেক জায়গায় আবিস্কার করেছে।অনেকেই ওই পুকুর
পারে ওই মহিলা কে অনেক রাতে কাদতে দেখেছে ঠিক কোন সদ্য ভুমিষ্ঠ কোন শিশুর কান্নার সুরে।আরো
কিছু ঘটনা ঘটে।যার সাক্ষী আমি তো বটেই,আরো অনেকেই।সেগুলো অন্য আরেক দিন শেয়ার করব।ওই
পুকুর টা কে এক পর্যায়ে ভরাট করে ফেলা হয়।সাতার জানা এক গ্রাম্য দিন মজুর বিকেলের কিছু
পরে হাত পা ধুতে সেই পুকুরেই নেমেছিলেন।দুর্ভাগ্য তাকেও মুক্তি দেয় নি।লাশ হয়ে তার
মর দেহ টাকেই তার পরিবার উপহার হিসেবে পেয়েছিল।এরপর পুকুর টা ভরাট হয়েছে হয়ত,কিন্তু
এর বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সাক্ষী অনেকেই।যেসব লোক জন সেই কাজে পুকুরে নেমেছিলেন,তাদের
অনেকের বাচ্চাই মৃত্যু কে আলিংগন করেছে।এক শ্রমিকের স্ত্রী কিছু দিন পর বাচ্চা প্রসব
করার পর মারা যায়,আর বাচ্চাটাও কিছুদিন পর মারা গিয়েছিল গলায় কোন প্রশ্নবিদ্ধ কামরের
যন্ত্রনায়।তাহলে কি সেই মহিলা টার মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না, নাকি মরার পর তার কাছের
গরু কিংবা অপয়া পুকুর টার মায়া ত্যাগ করতে পারে নি??গাভী টাকে অনেক আগেই হাটে বেচে
ফেলা হয়।কে জানে পরবর্তী মালিক ও সেই গরু রাখতে গিয়ে নতুন কোন অঘটনের জন্ম দিয়েছেন
কিনা।
No comments:
Post a Comment