Saturday, December 3, 2022

বর্তমানে কিছু হাদীস অস্বীকারকারি এই বলে হাদীস অস্বীকারের যৌক্তিকতা তৈরী করছে যে - হাদিস সংকলনের প্রক্রিয়া ছিল সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।

 

বর্তমানে কিছু হাদীস অস্বীকারকারি এই বলে হাদীস অস্বীকারের যৌক্তিকতা তৈরী করছে যে - হাদিস সংকলনের প্রক্রিয়া ছিল সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি।
তাদের দাবী হলো, শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান পদ্ধতিই একমাত্র সত্য জানার উপায়। আর অন্য সকল জ্ঞানের ক্ষেত্র হল অগ্রহণযোগ্য। এই মাইন্ডসেটকে বলে "বিজ্ঞানবাদ"
বিজ্ঞানবাদ এমন একটি দাবী, যা বলে আমাদের বাস্তবতা সম্বন্ধে সত্য নির্ণয়ে বিজ্ঞানই একমাত্র পন্থা। এ কথা দ্বারা বোঝানো হয়, কোন কিছু / কোন কথা গ্রহনযোগ্য তখনই হবে যখন তা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করা যায়। অন্যথায় তা গ্রহনযোগ্য হবে না।
আসলেই কি জগতের সব সত্য কে জানার জন্য বিজ্ঞান ই একমাত্র উপায়??
উত্তর হলো না। বিজ্ঞান সব সত্য উদঘাটন ও প্রমাণ করতে পারে না। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিগুলোর বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। কেমন সীমাবদ্ধতা??
তার আগে আপনাকে বুঝতে হবে,
- বিজ্ঞান কি,
- এটি কিভাবে কাজ করে,
- কোন লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করে,
- বিজ্ঞানের কাজের ক্ষেত্র আসলে কোথায়।
বিজ্ঞানবাদীরা দাবি করে যে দুনিয়ার সকল ক্ষেত্রেই বৈজ্ঞানিক গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে, যা নিতান্তই একটি ভ্রান্ত দাবি। কেননা বিজ্ঞান কাজ করে কেবলমাত্র প্রকৃতি নিয়ে। ইতিহাস, অদৃশ্য জগৎ, সমাজতত্ত্ব, অর্থনীতি, রাজনীতি, রসায়ন, মেডিসিন, মানুষের মন - এসব ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের কোনো কাজ নেই।
অনেকে মেডিসিন প্র্যাক্টিস অর্থাৎ ঔষধ নিয়ে গবেষণা ও ঔষধ তৈরীর পদ্ধতিকেও বিজ্ঞানের সাথে গুলিয়ে ফেলেন। একে যদিও আংশিকভাবে “ফলিত প্রযুক্তি” হিসাবে বর্ণনা করা যেতে পারে, তবে এটি একটি বিজ্ঞান নয়। মেডিসিন প্র্যাক্টিসগুলো উক্ত ডিসিপ্লিনের সংখ্যাগরিষ্ঠের ঐকমত্যের দ্বারা নির্ধারিত হয়, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি দ্বারা নয়।
(তথ্যসূত্র: The Chemistry of Essential Oils Made Simple: God’s Love Manifest in Molecules – pages 618 – 654)
তাহলে বিজ্ঞান কী?
বিজ্ঞান হলো প্রকৃতিতে ঘটমান ঘটনাগুলোর উপর পর্যবেক্ষণ করে সেগুলো কিভাবে ঘটছে, সেটা ব্যাখ্যা করার প্রক্রিয়া। বিজ্ঞান নির্ভর করে Present Time এর উপর, এটি অতীত কিংবা ভবিষ্যৎ নিয়ে কাজ করতে পারে না। বর্তমান সময়ে ঘটমান কোনো বিষয়ে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞান কাজ করে, এটাকে বলা হয় "অভিজ্ঞতাবাদ"।
যেমন, আপনি মাটিতে পানি ঢাললে গাছ মাটি থেকে পানি ও পুষ্টি নিয়ে সূর্যের আলোর সাহায্যে তার খাবার তৈরী করে বেড়ে উঠে। এই যে গাছটার শরীরের ভিতর এসব কাজ হলো, এই কার্যক্রমকে পর্যবেক্ষণ করে সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা করার কাজটাকে বলা হয় "বিজ্ঞান"
গাছ কোথা থেকে এল, গাছটা কেন মাটি থেকে নির্দিষ্ট কিছু পুষ্টি উপাদানই নিল, কেন সরাসরি মাটি গিলে ফেলল না - এই প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞান দিতে পারে না। কারণ বিজ্ঞান কিছুই ব্যাখ্যা করে না - এটি কেবল বর্ণনা করতে পারে।
তাই গাছটি কিভাবে পুষ্টি সংগ্রহ করে, এই প্রক্রিয়াটির বর্ণনাই কেবল "বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান পদ্ধতি‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌"র মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব। কিন্তু কেন গাছের শরীরে এসব কাজ হচ্ছে, অন্যভাবে কেন হচ্ছে না - এসব "বৈজ্ঞানিক গবেষণা পদ্ধতির আলোকে" প্রমাণ করা অসম্ভব।
কারণ, কোনো ব্যাপারে মানুষ বাস্তবিক অভিজ্ঞতা লাভ করা ব্যতীত সেখানে বিজ্ঞানের মূলতত্ত্ব "অভিজ্ঞতাবাদ"কে এপ্লাই করা যায় না।
কোনো ব্যাপারে অভিজ্ঞতা লাভের জন্য বিজ্ঞান তার ইন্সট্রুমেন্ট এবং পর্যবেক্ষণের যন্ত্রপাতি দ্বারা সীমাবদ্ধ। যন্ত্রপাতিগুলো কেবলমাত্র তাই বের করতে পারে যা সনাক্ত করার জন্য সেগুলোকে ডিজাইন করা হয়েছে। আর বিজ্ঞান কেবলমাত্র সেসবের বর্ণনা করতে পারে, যেসব ঘটনাকে সে তার যন্ত্রপাতি দিয়ে যাচাই করে অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে।
একজন মানুষ সত্য বলছে নাকি মিথ্যা বলছে, এটা এখন পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ১০০% নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা সম্ভব না। কারণ, মানুষের মন পর্যবেক্ষণের প্রযুক্তি কিংবা যন্ত্রপাতি এখনো কেউ তৈরী করতে পারেনি।
এজন্যে একজন মানুষের চরিত্র নির্ণয়ের সবচাইতে কার্যকর পদ্ধতি হলো তার পুরো জীবন সম্পর্কে খোঁজ নেয়া, তার লাইফস্টাইল ও চরিত্র যাচাই করা। এভাবে ব্যক্তির চরিত্র যাচাই করে তার কথার গ্রহণযোগ্যতাও পরিমাপ করা যায়।
যার কথা খুব পাতলা, মিথ্যা, গীবতসহ নানান ধরণের অনৈতিক কাজে সে লিপ্ত থাকে - তার কথা গ্রহণযোগ্য হবে না। আবার যে ব্যক্তি সারাজীবন সত্যের উপর অটল থেকেছে, সম্পূর্ণ জীবন চালিয়েছে নৈতিকতার উপর, তার কথাগুলো গ্রহণযোগ্য।
এভাবে যুক্তি ও ইতিহাসের ক্রমধারা বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি হাদীসের গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করা হয়। হাদীস সংগ্রহের পদ্ধতিতে "মুতাওয়াতির সূত্র" বলে একটা কথা আছে।
মুতাওয়াতির সূত্র মানে হল, ধারাবাহিকভাবে কোনো জিনিস এতগুলো মানুষের মাধ্যমে আসা যে সুস্থ বিবেক একইসাথে সবাইকে মিথ্যাবাদী বলাকে অসম্ভব মনে করে। এই মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণনাকারী হিসেবে কাদেরকে গ্রহণ করা হবে, সেটার জন্যেও সকল বর্ণনাকারীর জীবনের আদ্যোপান্ত যাচাই করা হতো।
এভাবে বিপুল পরিমাণ সর্বোচ্চ পরিমাণ সৎ লোকদের ধারাবাহিক নিরবিচ্ছিন্ন বর্ণনার আলোকে মুতাওয়াতির সূত্রের হাদীসগুলো সংকলিত হয়। এটা অতীতের কোনো ঘটনা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে অনেক উৎকৃষ্ট একটা পদ্ধতি।
কিন্তু কোনো ব্যক্তি সত্য বলছে নাকি মিথ্যা বলছে, ঐতিহাসিক কোনো ঘটনার সত্যতা কতটুকু - এগুলো কখনোই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে যাচাই করা সম্ভব নয়। কারণ, আমাদের কাছে টাইম মেশিন নেই যে অতীতে গিয়ে ঘটনা পর্যবেক্ষণ করবো। বিজ্ঞানের কাজই না এটা।
প্রতিটা প্রক্রিয়াই তার নিজ নিজ জায়গায় স্বতন্ত্র, একটি প্রক্রিয়ার সাপেক্ষে আরেকটিকে যাচাই করতে যাওয়াটা একটা ভুল এপ্রোচ। আপনি পদার্থবিজ্ঞান এর প্রক্রিয়া দিয়ে মনস্তত্ত্ব কে বিচার করতে পারেন না। জোতির্বিজ্ঞান এর সাপেক্ষে কেমিস্ট্রিকে যাচাই করা সম্ভব না। তেমনি বিজ্ঞান কিংবা পশ্চিমা ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার নিয়মকানুন এর সাপেক্ষে হাদীস সংকলন কিংবা ফিকাহ এর নিয়মকানুনকে যাচাই করাটাও অসম্ভব।
‌‌
প্রতিটা প্রক্রিয়ারই নিয়মকানুন, কাজের ক্ষেত্র এবং লক্ষ্য-উদ্দেশ্য আলাদা। এ ব্যাপারে উস্তাদ মীর সালমান এর একটি আলোচনা প্রাসঙ্গিক মনে করছি।
আপনি কি জানেন, নুহ, ইব্রাহিম এবং মুসা আলাইহিমুস সালামগণের অস্তিত্বের কোন ঐতিহাসিক প্রমান নেই? নুহ, ইব্রাহিম এবং মুসা আলাইহিমুস সালামগণ তো বটেই এমনকি খোদ ইসা (আ) এর অস্তিত্বের ঐতিহাসিক প্রমান খুবই দুর্বল।
তাহলে কি আমি নুহ, ইব্রাহিম, ইসহাক, ইসমাইল, ইউসুফ, মুসা, হারুন, ইসা (আ) এর অস্তিত্বে বিশ্বাস করিনা? অবশ্যই করি। তাদের উপর ইমান আমার শাহাদাতের অংশ। রাসুলের উপর ইমান আনার মানেই এসব নবীদের উপর ইমান আনা।
আমি এসব নবিদের উপর ইমান এজন্য রাখিনা যে তাঁদের অস্তিত্বের ঐতিহাসিক প্রমান আছে বরং তাদের উপর ইমান রাখি এজন্য যে তাদের ব্যাপারে কুরআন ইমান আনতে বলেছে। এটা হচ্ছে ইমান বিল গায়েব।
গায়েব বিজ্ঞান বা ইতিহাসের বিষয় নয়। আমরা যেমন ইব্রাহিম (আ) এর আগুনে পোড়া বা ইসা (আ) এর জন্ম ঐতিহাসিক বা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারিনা তেমন এখন পর্যন্ত তাদের অস্তিত্বের ঐতিহাসিক প্রমান নেই।
এই যে আমরা নবীগণের অস্তিত্বের ঐতিহাসিক বা মুজিজাগুলোর বৈজ্ঞানিক প্রমান নেই শুনেই বিচলিত হই তার কারন কি? কারন আমরা ইমান বিল গায়েবের হাকিকত ভুলে গিয়েছি, আমরা কুরআনের পরিবর্তে বিজ্ঞান আর ইতিহাসের বস্তুবাদী পদ্ধতিকে (হক বাতিলের) ফুরকান মনে করি।
পাশাপাশি আরও একটা বিষয় হচ্ছে আমরা বিজ্ঞান, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, ঐতিহাসিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানিনা। আমরা বৈজ্ঞানিক ও ঐতিহাসিক পদ্ধতিকে অকাট্য রকমের সঠিক মনে করি। আমরা বৈজ্ঞানিক ও ঐতিহাসিক পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানি না।
যারা জানতে চান তারা limitation of scientific methodology, limitation/ problem of induction, philosophy of science, limitation of historical methodology এসব নিয়ে পড়ুন। তাহলে বুঝতে পারবেন নিজের সীমানায় এরা দুর্দান্ত পারফর্মেন্স করলেও এদের অনেক নো গো জোন আছে। এদের সীমানা পার হলেই বৈজ্ঞানিক ও ঐতিহাসিক পদ্ধতি কত দুর্বল সেটা ভালভাবে চোখে পড়ে।
কিন্তু ওয়াহি হচ্ছে সত্য লাভের সবচেয়ে নিরাপদ ও বিস্বস্ত উপায়। এ নিয়ে ইমাম গাযযালির অনেক ভাল আলোচনা আছে। আগ্রহিগন পড়ে নিতে পারেন।
কোন কিছু ঐতিহাসিক সত্য হতে হলে তার নিচের দুইটার যেকোন একটা বৈশিষ্ট অবশ্যই থাকতে হবে।
১) কোন প্রমান থাকতে হবে। যেমন কোন লেখা তা কাগজ, হরিণের চামড়া, পাহাড়ের গা, শিলালিপি বা কোন প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন যেকোন কিছু থাকতে হবে। সেগুলো যে সমসাময়িক কালের লেখা বা লেখাগুলো চাক্ষুস সাক্ষীর লেখা এমন সম্ভাবনা থাকতে হবে। এসকল পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞানীরা কার্বন ডেটিং করেন।
২) সাক্ষ্য। বর্ননাকারির নিরবিচ্ছিন্ন চেইন থাকতে হবে।
এই পদ্ধতিকে আমি খারাপ বলছিনা। এই পদ্ধতিগুলো কুরআন ও হাদীস সংকলনে ও সংরক্ষনে সবচেয়ে পূর্ন ও সফলভাবে ব্যাবহার করা হয়েছে। কিন্তু এসকল পদ্ধতি সর্বদা ত্রুটিমুক্ত নয়। কেন?
কারন হিসাবে অনেক কিছু বলা যায় কিন্তু খুব সাদামাটাভাবে এসকল পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করলে বলা যায় :
১) আপনি আর্কিওলজিক্যাল এভিডেন্সে যখন যথেষ্ট পার্শ্ব সমর্থন পাবেননা তখন তাতে অনেক মিথ্যা তথ্যও লেখা থাকতে পারে। ৫০ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেভাবে প্রতি সরকার আমলে বদলায় তাতে আর্কিওলজিক্যাল গ্রাউন্ডে লেখা সবকিছুই যে সঠিক লেখা থাকবে তা সম্ভব নয়।
২) সাক্ষিরা মিথ্যা বলা, ভুলে যাওয়া খুবই সম্ভব।
এই দুই সীমাবদ্ধতাযে সর্বদাই কাটিয়ে উঠা অসম্ভব তা কিন্তু নয়।
কিভাবে?
যেমন ধরেন স্বাধীনতার ঘোষনা রাতের আঁধারে দেওয়া ফলে অনেকে হয়তো কনফিউজড। কিন্তু ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষন কিন্তু নিশ্চিত সত্য। কেন? তার ভিডিও, অডিও আছে। সেগুলো যে ফেক নয় তার প্রমান হিসাবে বিপুল পরিমান শত্রু মিত্রের সাক্ষ্য আছে। ইসলামের পরিভাষায় একে বলা যায় মুতাওয়াতির।
এজন্য আমরা দেখি কুরআনের মাসহাফ এবং সেই মাসহাফের সাক্ষী বিপুল পরিমান সব যুগে ছিল।
এখন সমস্যা হচ্ছে প্রাচীনকালে এমন অকাট্য ঐতিহাসিক রেফারেন্স তেমন একটা পাওয়া যায়না। প্রাচীন ইতিহাসের উপাদানের এপিস্টমলিজিক্যাল নিশ্চয়তা তেমনভাবে পাওয়া যায়না।
ওহির ক্ষেত্রে এই সমস্যা নাই। কারন আল্লাহ মিথ্যা দেখেননা, মিথ্যা বলেননা, মিথ্যা শুনেননা। তিনি সর্বশক্তিমান। তাই তিনি কাউকে কোন তথ্য পাঠাতে চাইলে সেই তথ্য যে বিশুদ্ধভাবে পৌছেছে তা নিশ্চিত করা তাঁর জন্য খুব সহজ।
এভাবে ওহি বিশুদ্ধ ইলমের ধারক। কিন্তু ওহি একটি অলৌকিক বিষয়। ওহি ইলমে গাইবের বিষয়। ফলে এটি মানে ওহি ঐতিহাসিক সংরক্ষন পদ্ধতি অংশ নয় বরং তাঁর চেয়ে উন্নত পদ্ধতি।
এই আলোচনায় আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে অলৌকিকতা কিন্তু ঐতিহাসিক সংরক্ষন পদ্ধতির অংশ নয়। যেমন ধরেন ইলহাম, কাশফ বা স্বপ্নের ভিত্তিতে কেউ কোন হাদীস বললে মুহাদ্দিসরা তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করবেন। যদিও হাদীসে আছে নবুওয়্যাতের ৪৬ ভাগের এক ভাগ হচ্ছে স্বপ্ন। আমি বলছিনা এটা বিশুদ্ধ উদাহরন।
কারন ওহি হচ্ছে নিশ্চিত জ্ঞান কিন্তু ইলহাম, কাশফ বা স্বপ্ন নির্ভুল হওয়ার কোন নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু বোঝানোর জন্য কাছকাছি একটা উদাহরন দিলাম।
ঐতিহাসিক পদ্ধতির ব্যাপারে আমাদের একটা জিনিস অবশ্যই বুঝতে হবে, আমি চাঁদ তারা ধরতে পারিনা বলে চাঁদ তারা মিথ্যা নয়। শিয়াল আঙ্গুর খেতে পারেনি বলে বলেছে আঙ্গুর ফল টক।
কিন্তু প্রজ্ঞাবান কোন মানুষ তা করতে পারেনা। তারা যেখানে বাসে যাওয়া সুবিধা সেখানে বাসে যায়, যেখানে বাসে যাওয়া যায়না সেখানে প্লেনে যায়। আমার ৫০ তম পূর্ব পুরুষের অস্তিত্বের কোন প্রমান আমার কাছে নাই আমার অস্তিত্ব ছাড়া। কিন্তু তিনি ছিলেন। খেয়েছেন, পড়েছেন, ঝগড়া করেছেন, প্রেম করেছেন। সবই করেছেন। কিন্তু তা সম্পর্কে ঐতিহাসিক পদ্ধতি দিয়ে জানা সম্ভব নয়। ফলে তাদের জীবনাচার অনৈতিহাসিক কিন্তু অসত্য নয়।
এখন আসেন আলোচ্চ নবিদের ঐতিহাসিকতা বিষয়ে। কুরআন ওহি এবং নিশ্চিত জ্ঞান কিন্তু রাসুল (সা) এর সাথে অন্য নবিদের বস্তুগত নিরবিচ্ছিন্ন চেইন নেই। আর বাইবেল গুলোর কোন মান নেই। কারন বাইবেলের বর্ননাসূত্র প্রচন্ড জয়িফ হাদীসের চেয়েও জয়িফ। মওযু সনদগুলোর সাথেই এগুলোর বিরাট অংশের তুলনা চলে।
ওল্ড টেস্টামেন্টের সবচেয়ে পুরোনো আর্কিওলজিক্যাল মাসহাফ হচ্ছে ডেড সি স্ক্রল। যা মুসা (আ) এর প্রায় ১০০ বছর পরে লেখা। দাউদ (আ) বাইবেলের প্রথম নবি যার আর্কিওলজিক্যাল এভিডেন্স পাওয়া যায়। তাঁর সময়ের একটি শিলালিপি পাওয়া গিয়েছে যেখানে হাউস অব দাউদ লেখা আছে। তাছাড়া তার বাড়ির প্রাচিরের কিছু অংশ জেরুজালেমের প্রাচীন অংশে পাওয়া যায়।
কিন্তু তাঁর পূর্বের কোন নবিকে আমরা ঐতিহাসিক পদ্ধতির মাধ্যমে পাইনা। পাই ওরাল ট্রেডিশনে যার কোন সনদ নাই।
কিন্তু এসকল নবীর উপর ইমান আমরা রাখি কারন ঐতিহাসিক পদ্ধতির পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতার কারনে আমরা নবীদের ব্যাপারে সেপদ্ধতিতে জানতে না পারলেও আমরা অপেক্ষাকৃত অনেক উন্নত পদ্ধতি ওহির মাধ্যমে এসকল নবিদের ব্যাপারে জানতে পারি।
এজন্যই কুরআনকে অন্যান্য নবিদের সত্যায়নকারি বলা হয়। কেন কারন কুরআন যদি মিথ্যা হয় তবে অন্য নবিদের সত্যতা সম্পর্কে জানার আমাদের কোন উপায় নাই।
পশ্চিমা জ্ঞানতাত্ত্বিক ধারাসমূহের স্ট্রাকচারাল লেভেলেই প্রচুর গলদ আছে। নিজের সীমানায় এরা দুর্দান্ত পারফর্মেন্স করলেও এদের অনেক নো গো জোন আছে। এদের সীমানা পার হলেই এরা অত্যন্ত দূর্বল।
এজন্যে বিজ্ঞানবাদীরা হাদীস সংকলনের ইতিহাসের উপর আপত্তি তোলে কেবলমাত্র হাদীস সংকলনের প্রক্রিয়া "অবৈজ্ঞানিক" বলে, বিজ্ঞান ব্যতীত জ্ঞানের অন্য সকল ধারাকে অস্বীকার করে বর্জন করে, এটা নিছক একটা পাগলামি। এভাবে তারা মুসলিমদের বিভ্রান্ত করছে।
 
ফারদিন ভাই 

No comments:

Post a Comment