Showing posts with label motivation. Show all posts
Showing posts with label motivation. Show all posts

Saturday, August 27, 2022

পোকামাকড়ের আগুনের সাথে সন্ধি - Friendship that burns you, destroys you for all

 পোকামাকড়ের আগুনের সাথে সন্ধি

 


 

বর্ষাকাল আসলে একটা বিরক্তিকর ব্যাপার ঘটে। পোকামাকড়ের উৎপাত খুব বেড়ে যায়। ঘরের ভেতর-বাহির, খেত-খামার, গ্রাম, শহর—সবখানেই। সাধারণত সন্ধ্যার পর থেকে উৎপাত শুরু হয়। চারপাশ অন্ধকার হয়ে এলে সবাই যখন বাতি জ্বালায়, তখনই তারা আত্মপ্রকাশ করে। এজন্য অনেক সময় পোকামাকড়ের জন্য আলো দিয়েই ফাঁদ তৈরি করা হয়।

.

পোকামাকড়ের স্বভাব হলো, তারা আলোর প্রতি মোহাবিষ্ট থাকে। ফলে কোনটা আলো আর কোনটা আলেয়া, সেটা পার্থক্য করতে পারে না। অনেক সময় নিরেট আলো ভেবে সন্ধি করে বসে আগুনের সাথেও। ফলাফল—মৃত্যু!

.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঠিক এরকমই একটি উপমা দিয়ে সাহাবিদেরকে একটি বিষয় বুঝিয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

 

আমার অবস্থা সে লোকের অবস্থার মতো, যে আগুন জ্বালিয়েছিল, তখন তাতে তার চতুষ্পার্শ্ব আলোকিত হলো, তখন পতঙ্গ ও সেসব জন্তু যা আগুনে পড়ে থাকে, তাতে পড়তে লাগল আর সে লোক সেগুলোকে বাধা দিতে লাগল। তবে তারা তাকে হারিয়ে দিয়ে তাতে ঢুকে পড়তে লাগল।”

 

.

তিনি বলেন, “এটাই হলো তোমাদের অবস্থা আর আমার অবস্থা। আমি আগুন থেকে রক্ষার জন্য তোমাদের কোমরবন্ধগুলো ধরে টানি ও বলি যে, ‘আগুন হতে দূরে থাকো, আগুন থেকে দূরে থাকো’; কিন্তু তোমরা আমাকে পরাস্ত করে তার মধ্যে ঢুকে পড়ছ।”[১]

.

এই হাদীসটা প্রথম যখন পড়েছিলাম, তখন হৃদয়ের খুব গভীর থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মুগ্ধতা অনুভব করেছিলাম। কী অসাধারণ একজন মানুষ ছিলেন তিনি। হৃদয়ছোঁয়া উপমার কথা নাহয় একপাশে রেখে দিলাম; উম্মতের প্রতি কত গভীর দরদ তিনি লালন করতেন, তা এই হাদীসের কথাগুলো থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। মানুষ পোকামাকড়ের মতো আগুনে ঝাঁপ দিয়ে অবুঝ আত্মহুতি দিতে চায়, আর তিনি তাদের কোমর টেনে ধরে আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতেন! সুবহানাল্লাহ! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম

.

কোরিয়ান বয় ব্যান্ড বিটিএসের নাম শুনেনি, এমন মানুষ এখন খুঁজে পাওয়া ভার। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যেও বিটিএস এখন হটটপিক। বিশেষ করে স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের জন্য বিটিএস এখন এক ভয়াবহ ফিতনার নাম। আমরা প্রথমে গায়ে মাখিনি। গানবাজনা করে খায় এমন ফিতনাবাজ শিল্পী তো আমাদের নিজেদের দেশেও অনেক আছে। বিটিএস কি এর চেয়ে বেশি কিছু না কি! কিন্তু যখন একটু কৌতুহলী হয়ে বিটিএসের ভক্তদের সম্পর্কে হালকাপাতলা ঘাঁটাঘাঁটি করলাম, তখন আমাদের চোখ ছানাবড়া

.

বিটিএসের ভক্তদের মধ্যে অধিকাংশই স্কুলপড়ুয়া টগবগে প্রাণোচ্ছল কিশোরী মেয়ে। কিন্তু এরা অন্যান্য কিছুর ভক্তদের মতো নয়। এরা নিজেদেরকে পরিচয় দেয় আর্মি হিসেবে। তারা বিটিএস আর্মি। কোনো দেশের আর্মি যেমন সে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য নিজেদের বিলিয়ে দেয়, এরাও তেমনি তাদের হিরোদের(!) মান-ইজ্জত বাঁচাতে সর্বদা সচেষ্ট থাকে। বিটিএস নিয়ে কেউ কোনো সমালোচনা করলে তারা আঘাত পায়। প্রতিপক্ষকে কাউন্টার দিতে মরিয়া হয়ে ওঠে

.

প্রিয় শিল্পীর জন্য এরকম একটুআধটু পাগলামো করা বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে খুব বেশি অস্বাভাবিক না যারা মূলত দ্বীনদার নয় বা দ্বীনের বুঝ ঠিকমত পায়নি বাইরে থেকে দেখে মনে হয় দ্বীনের বুঝ আছে – যেমন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজী, তাহাজ্জুদ গুজার, ফরয ও নফল সাওম পালনকারী, হারাম হালাল নিয়ে বেশ সচেতন, “বয় ফ্রেন্ড” নাই, নিয়মিত কুরআন হাদীস পড়েন, অন্যদের দাওয়াতও দেন – এমন অনেকও এই বিটিএস বিষে আক্রান্ত। তথাপি, তাদের এই “পছন্দের” ব্যাপারটা এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকলে এটা নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তারও কিছু ছিল না আমাদের। কিন্তু ঘটনা এরচেয়েও অনেক বেশি ভয়াবহ এবং চিন্তাজাগানিয়া

.

আমাদের অবুঝ ভাইবোনগুলো বিটিএসের ফিতনায় এতটাই বেহুশ হয়ে গেছে যে, কেউ বিটিএসের সমালোচনা করলে তারা আক্রমণাত্মকভাবে তেড়ে আসে। এমনকি কোনো আলিম কিংবা দাঈ যদি ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে বিটিএস-এর ভুলগুলো ধরিয়ে দেন, তখন এই বিটিএস আর্মি নামক ভক্তরা ইসলামকে নিজেদের প্রতিপক্ষ হিসেবে নেয়। কেউ কেউ তো বলেও বসে যে, বিটিএস-ই নাকি তাদের রব! ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন! আবার যারা বলে না, তাদের আচরণে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে তাদের ইসক ঠিক কতটা বিটিএস এর জন্য। তারা আল-ওয়ালা ওয়াল বারা মানে না (আল্লাহর জন্য ভালবাসা, আল্লাহর জন্য বৈরীতা/শত্রুতা)। ভালবাসার একক ও একমাত্র মানদন্ড আল্লাহর জন্য। আপনি আল্লাহকে ভালবাসবেন, আল্লাহর জন্য ভালবাসবেন। আর বৈরীতা করতেও আল্লাহর জন্যই করবেন। নিজের ব্যক্তিগত কোন কারণে নয়।

.

আমাদের স্কুলপড়ুয়া ছোট্ট বোনগুলো বিটিএস-এর পৌরুষহীন ছেলেগুলোর প্রেমে এতটাই মজে গেছে যে, তাদেরকে নিয়ে পর্বের পর পর্ব ফিকশনাল লাভ স্টোরি লিখে ফেলছে। এই নপুংসক ছেলেগুলো হয়ে গেছে তাদের স্বপ্নের পুরুষ! আমাদের ছোট্ট বোনগুলোর মানসিক রুচিবোধের এমন ভয়াবহ বিপর্যয় দেখে আহত হৃদয় আরও আহত হলো। আমাদের এই মুসলিম বোনদের ভালবাসা এতটাই সস্তা হয়ে গেছে যে সেটা এই kফিr গায়করা এমনিই পেয়ে যায়, অনেকেতো তাদেরকে “জামাই”ও বলে (নাউযুবিল্লাহ্) (সাতজনের বউ একজন! আস্তাগফিরুল্লাহ্ )। পোকামাকড়ের মতো তাদেরকে বিটিএস নামক ফিতনার আগুনে হুমড়ি খেয়ে পড়া দেখে হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হলো শুধু হৃদয়ই ক্ষতবিক্ষত হয় না, নিজেদের শরীরও ক্ষতবিক্ষত করে।

.

হে আমার সম্মানিতা বোন!

তোমার রুচিবোধ তো এমন ছিল না। তুমি কী করে এমন নপুংসক ছেলেদেরকে নিজের স্বপ্নপুরুষ বানিয়ে নিলে, যারা নিজেরাই মেয়েদের বেশ ধারণ করে থাকে? তুমি কি জানো না যে, আমাদের নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঐসব পুরুষদেরকে লা’নত দিয়েছেন, যারা নারীদের বেশ ধারণ করে?[২]

.

তোমার স্বপ্নপুরুষ হবার কথা তো ছিল তাঁরা, যারা ছিলেন আল্লাহর রাস্তায় সীসাঢালা প্রাচীরের মতো। যাঁদের বীরত্বের কথা স্বীকার করে তাঁদের শত্রুরাও। যাঁদের বীরত্বে পৃথিবী দেখেছিল খিলাফতের সোনালি শাসন! তোমার স্বপ্নপুরুষ তো হবার কথা ছিল তাঁরা!

.

বোন আমার!

তুমি কেমন করে এমন কাfiরদের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছ, যারা পৃথিবীর বুকে সমকামিতার মতো ঘৃণ্য কাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে? অথচ সমকামিতার অপরাধের জন্য আমাদের রব পুরো একটি জাতিকে পৃথিবীর বুক থেকে মুছে দিয়েছিলেন

.

তুমি হয়তো বলবে, ওরা তো সমকামী না। বোন আমার, শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে আমরাও এটা বলছি না যে, ওরা সমকামী। তবে ওদের সমকামী আচরণগুলো কি তুমি দেখোনি?[৩] তারা যে সমকামিতার পক্ষে কথা বলে, তা কি তুমি জানো না?[৪] তারা যে সমকামীদের প্রাইড মান্থ উদ্‌যাপনে স্টেইজ শো করে, তা কি তুমি দেখোনি?[৫]

.

আমার বোন!

তুমি কি জানো, কেন তুমি তাদের আচরণে প্রভাবিত হচ্ছ? কারণ, তুমি তো তাদের গানের জাদুতে বেহুশ হয়ে গেছ! এখন আবার বোলো না যে, তুমি তাদের গানের ভাষাই বুঝো না। গানের ভাষা বুঝা জরুরি কিছু না। গানের মাঝে থাকা মিউজিক তোমার অন্তরকে বশ করে ফেলেছে। কেননা, মিউজিক হচ্ছে অন্তরের মদ। এই মদ তোমার অন্তরে নিফাক জন্ম দিয়েছে। ফলে তুমি তোমার ধর্মের বিরোধিতা করে হলেও বিটিএস-এর সমর্থন করে যাচ্ছ!

.

আর ভাইয়ারা,

তোমরা কেন গায়কদের মতো হতে চাচ্ছ, যেখানে গায়ক-গায়িকা হওয়া, গান শেখা – এসব কিছুই রাসূল (সাঃ) কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।[৫.১] আর দের পৌরুষ বলতে কিছু কি আছে? যাদের মধ্যে পুরুষালী আচরণের চেয়ে মেয়েলি আচরণই বেশি? তোমাদের সামনে কি সত্যিকারের পুরুষদের উদাহরণ নেই? তোমরা কি সেইসব বীরপুরুষদের দেখো না, যারা যুগে যুগে পৃথিবীতে ইতিহাস রচনা করে গেছেন? তোমরা কি সেইসব বীরপুরুষদের দেখো না, যারা যুগে যুগে আল্লাহর শত্রুদের দম্ভ চূর্ণ করে দিয়েছেন, বুলন্দ করেছেন আল্লাহর কালিমাকে? তাঁরাই তো তোমাদের আইডল হবার কথা ছিল

.

আদরের ভাইয়া ও আপুরা!

তোমরা কাদেরকে অনুসরণ করছ, কাদেরকে ভালোবাসছ একটু চিন্তা করে দেখো। বিটিএস সদস্যরা তো আল্লাহদ্রোহী কাfir। তারা তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানুষকে জাহান্নামের দিকে আহ্বান করছে। এরা যদি আল্লাহর ওপর ঈমান আনা ছাড়াই মৃত্যুবরণ করে, তাহলে তো নিশ্চিত জাহান্নামে যাবে। জাহান্নামের চিরস্থায়ী বাসিন্দা হবে। তোমরা এমন কিছু লোকের অনুসরণে মত্ত হয়ে গেছ, যারা কি না জাহান্নামের পথের পথিক! আর যার অনুসরণ করা হয়, যাকে মহব্বত করা হয়, তার সাথেই তার হাশর হয়, তার সাথেই তার পরিণতি নিহিত। [৫.২]

.

মুসলিম হিসেবে তোমরা কি আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের সাথে হাশর করতে চাও না? না কি এসব জাহান্নামের পথিকদের সাথে হাশর করতে চাও? কেননা, দুনিয়াতে তুমি যাকে ভালোবাসবে, যার অনুসরণ করবে, কিয়ামাতের দিন তোমার হাশর তার সাথেই হবে।[৬] ভেবে দেখো, তোমরা কি বিটিএস-এর সাথে হাশর করতে চাও না কি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে হাশর করতে চাও!

.

ভাইয়া ও আপুরা!

ভাই হিসেবে তোমাদের এমন পথচ্যুতিতে আমরা ব্যথিত হই। আগুনের সাথে তোমাদেরকে সন্ধি করতে দেখে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়! চোখের সামনে তোমাদেরকে জাহান্নামের দিকে দৌড়াতে দেখে আমাদের অন্তর ভয়ে কেঁদে ওঠে!

.

বিশ্বাস করো, আমরা স্বপ্ন দেখি—সবাই মিলে জান্নাতের সবুজ বাগানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে আড্ডা দেব! তোমরাও কি এমন সৌভাগ্যবান হতে চাও না? তাহলে আজই ফিরে আসো তোমাদের রবের পথে। থুথু মারো বিটিএস কালচারের মুখে। প্লিজ, আগুনের সাথে সন্ধি কোরো না! পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে! দুনিয়াতেও, আখিরাতেও!

 

 

তথ্যসূত্র :

[১] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং – ৫৮৫১

[২] সুনানু আবী দাঊদ, হাদীস নং – ৪০৯৭, সহীহ হাদীস

[৩] বিটিএসের সমকামী আচরণ - https://www.youtube.com/watch?v=ArM6S8JZnyY

[৪] বিটিএসের সমকামপ্রীতি (সময় সংবাদ) - https://tinyurl.com/2zc92up6

[৫] প্রাইড মান্থ সেলেব্রেশন কনসার্ট - https://tinyurl.com/btspridemonth

[৫.১] আল্লাহ তায়ালা গান বাজনা হারাম করেছেন সূরা লোকমান ৬

এক শ্রেণীর লোক আছে, যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশ্যে অন্ধভাবে অসার বাক্য ক্রয় করে (বেছে নেয়) এবং আল্লাহর প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি। (সূরা লুক্বমান ৬)

রসুল (সাঃ) বাজনা শুনতে নিষেধ করেছেন এবং রাসুল (সাঃ)

যখন বাজনার শব্দ শুনতেন তখন আঙ্গুল দিয়ে কান বন্ধ করতেন সহিহ বুখারি ২৯০৬ সহিহ মুসলিম ১৯৩৮ নাম্বার হাদিস

আবু দাউদ ৪৮৪৪

 

একদা ইবন উমার (রাঃ) বাদ্যযন্ত্রের শব্দ শুনে তাঁর কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেন। তিনি সেখান থেকে দূরে গিয়ে আমাকে বলেনঃ হে নাফি! তুমি কি এখনও কোন শব্দ শুনতে পাচ্ছ। আমি বলিঃ না। তখন তিনি তাঁর কান থেকে আঙ্গুল বের করে বলেনঃ একদিন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম, তিনি এরূপ শব্দ শুনে-এরূপ করেন। আবু দাউদ ৪৮৪৪

 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা গায়িকা নারীদের ক্রয়-বিক্রয় করো না, তাদেরকে গান-বাজনা শিক্ষা দিও না, তাদের (ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা) ব্যবসায়ের মধ্যে কোন মঙ্গল নেই এবং এদের মূল্যও হারাম। এ প্রসঙ্গেই এই আয়াত অবতীর্ণ হয় (অনুবাদ) “এমনও কিছু লোক আছে, যারা বাতিল অশ্লীল কাহিনীসমূহ ক্রয় করে আনে, যেন লোকদের অজ্ঞতাবশত আল্লাহ্‌ তা'আলার পথ হতে আলাদা করতে পারে এবং এ পথকে ঠাট্টা-বিদ্ধপ করতে পারে। এ ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে অপমানকর আযাব"- (সূরা লুকমান ৬)।

তিরমিজী ৩১৯৫ নাম্বার হাদিস

 

ঢোলক হারাম, বাদ্যযন্ত্র হারাম, তবলা হারাম এবং বাঁশীও হারাম।’ গানের জন্য যা কিছু আছে সব হারাম (বাইহাকী ২০৭৮৯)

 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি খেল-তামাশা পছন্দ করি না এবং খেল-তামাশারও আমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই। অর্থাৎ আমার সাথে বাতিলের কোন সম্পর্ক নাই। আল আদাবুল মুফরাদ ৭৯০ নাম্বার হাদিস

 

আব্বাস (রাঃ) বলেন। “এমন কতক লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে ভ্ৰষ্ট করার লক্ষ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে”তায়া হচ্ছে গান বাজনা

আল আদাবুল মুফরাদ ৭৯১ নাম্বার হাদিস

 

আনসার গোত্রের লোকেরা যে সব গান গেয়ে গর্ব করেছিল সে সব গান আবৃত্তি করছিল। এ সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাদর মুড়ে নিজেকে ঢেকে রেখেছিলেন। এ অবস্থা দেখে আবূ বাকর বালিকা দু’টিকে ধমক দিলেন

সহীহ : বুখারী ৯৮৭, ৩৫২৯, মুসলিম ৮৯২, নাসায়ী ১৫৯৩, ইবনু হিব্বান ৫৮৭৬ মিসকাত ১৪৩২

 

মহান আল্লাহ বলেন,

وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ

 

অর্থাৎ, মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞ লোকদের আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করার জন্য অসার বাক্য ক্রয় করে এবং আল্লাহর প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। ওদেরই জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি। (লুক্বমানঃ ৬)

 

(২৩০৫) আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) তিন তিনবার কসম খেয়ে খেয়ে বলেছেন, ‘উক্ত আয়াতে ‘অসার বাক্য’ বলতে ‘গান’কে বুঝানো হয়েছে। (তাফসীর ইবনে কাসীর ৩/৪৪১)

 

গান শুনা হারাম একেবারে পরিস্কার করে বলা হয়েছে

মূর্তি বা ছবি, হিংস্র জন্তুর চামড়া, (মহিলার) নগ্নতা ও পর্দাহীনতা, গান, (পুরুষের জন্য) সোনা ও রেশমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন।’’ (আহমাদ ১৬৯৩৫, ত্বাবারানী ১৬২৪০-১৬২৪১, সহীহুল জামে’ ৬৯১৪)

 

আল্লাহ তাদেরকে মাটিতে ধসিয়ে দেবেন এবং বানর ও শূকরে পরিণত, আল্লাহুআকবার

আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘অবশ্যই আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে, তাদের মাথার উপরে বাদ্যযন্ত্র বাজানো হবে এবং নর্তকী নাচবে। আল্লাহ তাদেরকে মাটিতে ধসিয়ে দেবেন এবং বানর ও শূকরে পরিণত করবেন!’’ (ইবনে মাজাহ ৪০২০, ইবনে হিব্বান ৬৭৫৮, ত্বাবারানী ৩৩৪২, বাইহাকী ১৭১৬০, সহীহুল জামে’ ৫৪৫৪)

 

আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘অবশ্যই আল্লাহ আমার উম্মতের জন্য মদ, জুয়া, ঢোল-তবলা এবং বীণা-জাতীয় বাদ্যযন্ত্রকে হারাম করেছেন।---’’ (আহমাদ ৬৫৪৭, সিলসিলাহ সহীহাহ ১৭০৮)

 

ডুল তবলা হারাম---।’’(ত্বাবারানী ১২৪৩৫, সিলসিলাহ সহীহাহ ১৮০৬)

 

ফিরিশতা সেই দলের সঙ্গী হন না; যে দলের সাথ মিউজিকের শব্দ থাকে।’’ (আহমাদ ২৬৭৭১, সহীহুল জামে’ ৭৩৪২)

 

মিউজিক ‘ঘন্টা বা ঘুঙুর হল শয়তানের বাঁশি।’’ (মুসলিম ২১১৪, আবূ দাঊদ ২৫৫৬, আহমাদ ২/৩৬৬, ৩৭২, বাইহাকী ৫/২৫৩

 

এখনি কি আপনারা গান শুনবে কিনা সেটি আপনারা যানেন

আমি শুধু তুলে ধরেছি গান বাজনা শুনা হারাম

এবং যারা গায় তাদের সব কিছু হারাম,তাদেরকে ভালোবাসাও হারাম যদি তাদেরকে ভালোবাসেন তাহলে তাদের সাথে আপনার হাসর হবে রাসুল (সাঃ) বলেছেন

من تشبه بقوم فهو منهم

 

جزاك لله خيرا يا اخي الكريم

[৫.২]

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَوَلَّوْا قَوْمًا غَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ قَدْ يَئِسُوا مِنَ الْآخِرَةِ كَمَا يَئِسَ الْكُفَّارُ مِنْ أَصْحَابِ الْقُبُورِ

 

অর্থ: হে মুমিনগণ! আল্লাহ তাআলা যাদের প্রতি ক্রুদ্ধ, তোমরা সে সম্প্রদায়ের সাথে বন্ধুত্ব করো না। তারা আখেরাত সম্পর্কে হতাশ হয়ে গেছে। যেমন কাফেরগণ কবরে দাফন-কৃত লোকদের সম্পর্কে হতাশ। সূরা মুমতাহিনা: ১৩

আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ও রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয়ে মসজিদে নববী হতে বের হচ্ছিলাম। এমন সময় মসজিদের দরজায় এক লোকের সাথে সাক্ষাৎ হল।

সে বলল: “হে আল্লাহর রসূল, কিয়ামত কবে সংঘটিত হবে?”

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “‏ مَا أَعْدَدْتَ لَهَا“তুমি কিয়ামাতের জন্যে কী প্রস্তুত করেছো?

আনাস রা. বলেন, তখন লোকটি যেন (এত বড় প্রশ্ন শুনে) ভয়ে পেয়ে নরম হয়ে গেল। তারপর বলল: “হে আল্লাহর রসূল! আমি তো কিয়ামতের জন্য বেশি পরিমাণ সলাত, সিয়াম ও দান-সদকা সংগ্রহ করি নি তবে আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসি।”

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন:أَنْتَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ “তুমি তার সাথেই থাকবে যাকে তুমি ভালবেসেছ।” [সহীহ মুসলিম, হা/6608, অধ্যায়: সদ্ব্যবহার, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও শিষ্টাচার (كتاب البر والصلة والآداب) পরিচ্ছদ: যাকে যে মানুষ ভালবাসে সে তার সাথেই থাকবে- হাদিস একাডেমী]

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

، جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ تَرَى فِي رَجُلٍ أَحَبَّ قَوْمًا وَلَمَّا يَلْحَقْ بِهِمْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ ‏”‏

জনৈক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল: হে আল্লাহর রাসূল, “সে ব্যক্তি সম্পর্কে আপনি কী মনে করেন, যে একটি কউম বা জাতিকে ভালবাসে অথচ সে তাদের সাথে মিলিত হয় নি (অর্থাৎ ঈমান ও আমলের দিক দিয়ে তাদের সমপর্যায়ভূক্ত হয় নি।)

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ “মানুষ তার সাথেই থাকবে যাকে সে ভালোবাসে।”

[সহীহ মুসলিম, হা/৬৪৭৭, অধ্যায়: সদ্ব্যবহার, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও শিষ্টাচার (كتاب البر والصلة والآداب) পরিচ্ছদ: মানুষ তার সাথেই থাকবে যাকে সে ভালোবাসে- হাদিস একাডেমী]

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

، جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ تَرَى فِي رَجُلٍ أَحَبَّ قَوْمًا وَلَمَّا يَلْحَقْ بِهِمْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ ‏”‏

জনৈক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল: হে আল্লাহর রাসূল, “সে ব্যক্তি সম্পর্কে আপনি কী মনে করেন, যে একটি কউম বা জাতিকে ভালবাসে অথচ সে তাদের সাথে মিলিত হয় নি (অর্থাৎ ঈমান ও আমলের দিক দিয়ে তাদের সমপর্যায়ভূক্ত হয় নি।)

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ “মানুষ তার সাথেই থাকবে যাকে সে ভালোবাসে।”

[সহীহ মুসলিম, হা/৬৪৭৭, অধ্যায়: সদ্ব্যবহার, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও শিষ্টাচার (كتاب البر والصلة والآداب) পরিচ্ছদ: মানুষ তার সাথেই থাকবে যাকে সে ভালোবাসে- হাদিস একাডেমী]

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

، جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ تَرَى فِي رَجُلٍ أَحَبَّ قَوْمًا وَلَمَّا يَلْحَقْ بِهِمْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ ‏”‏

জনৈক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল: হে আল্লাহর রাসূল, “সে ব্যক্তি সম্পর্কে আপনি কী মনে করেন, যে একটি কউম বা জাতিকে ভালবাসে অথচ সে তাদের সাথে মিলিত হয় নি (অর্থাৎ ঈমান ও আমলের দিক দিয়ে তাদের সমপর্যায়ভূক্ত হয় নি।)

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ “মানুষ তার সাথেই থাকবে যাকে সে ভালোবাসে।”

[সহীহ মুসলিম, হা/৬৪৭৭, অধ্যায়: সদ্ব্যবহার, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও শিষ্টাচার (كتاب البر والصلة والآداب) পরিচ্ছদ: মানুষ তার সাথেই থাকবে যাকে সে ভালোবাসে- হাদিস একাডেমী]

আনাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন,

: فَمَا فَرِحْنَا بِشَيْءٍ ، فَرَحَنَا بِقَوْلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : أَنْتَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ

فَأَنَا أُحِبُّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبَا بَكْرٍ، وَعُمَرَ، وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ مَعَهُمْ بِحُبِّي إِيَّاهُمْ ، وَإِنْ لَمْ أَعْمَلْ بِمِثْلِ أَعْمَالِهِمْ

এই হাদিসটি শুনে এত বেশি বেশি আনন্দিত হয়েছি যে, আর কোন কিছুতে এত আনন্দিত হই নি। কারণ আমি নবী সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম, আবু বকর রা. এবং ওমর রা. কে ভালবাসি। সুতরাং আমি আশা করি, তাদেরকে আমার ভালোবাসার কারণে কিয়ামতের দিন তাদের সাথেই থাকব যদিও আমি তাদের মত আমল করি নি।”

ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন, “মানুষ তার প্রিয়জনের কাছে থাকার বিষয়টি স্বভাবজাত প্রবণতা; এর ব্যতিক্রম হয় না।” (মজুম ফতোয়া)

 

ইবনুল কাইয়েম রহঃ. বলেন: “প্রত্যেক ব্যক্তিকে কর্মগতভাবে তার সমগোত্রীয় ব্যক্তির সাথে মিলিত করা হবে। সুতরাং যারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে একে অপরকে ভালবাসত তারা একসাথে জান্নাতে থাকবে আর যারা শয়তানের অনুসরণে একে অপরকে ভালবাসত তারা দুজন একসাথে জাহান্নামে থাকবে। সুতরাং মানুষ ইচ্ছা করুক অথবা না করুন তাকে তার সাথেই রাখা হবে যাকে সে ভালবাসত।” (যাদুল মাআদ ৪/২৪৮)

"যার সাথে যার মুহাব্বত তার সাথে তার কিয়ামত" সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছেঃ

 

حَدَّثَنَا وَهْبُ بْنُ بَقِيَّةَ، حَدَّثَنَا خَالِدٌ، عَنْ يُونُسَ بْنِ عُبَيْدٍ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: رَأَيْتُ أَصْحَابَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرِحُوا بِشَيْءٍ لَمْ أَرَهُمْ فَرِحُوا بِشَيْءٍ أَشَدَّ مِنْهُ، قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، الرَّجُلُ يُحِبُّ الرَّجُلَ عَلَى الْعَمَلِ مِنَ الْخَيْرِ يَعْمَلُ بِهِ وَلَا يَعْمَلُ بِمِثْلِهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ صحيح

 

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদেরকে একটি ব্যাপারে এতটা আনন্দিত দেখতে পেলাম যে, অন্য কোনো ব্যাপারেই এরূপ আনন্দিত হতে দেখিনি। তা হলো, এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে তার সৎকাজের জন্য ভালবাসে, কিন্তু সে তার মতো সৎকাজ করতে পারে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ প্রত্যেক ব্যক্তিই যাকে ভালোবাসে সে তার সাথী হবে।

(আবু দাউদ ৫১২৭,বুখারী,মুসলিম)

 

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ، أَخْبَرَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ جَعْفَرٍ، عَنْ حُمَيْدٍ، عَنْ أَنَسٍ، أَنَّهُ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَتَى قِيَامُ السَّاعَةِ فَقَامَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِلَى الصَّلاَةِ فَلَمَّا قَضَى صَلاَتَهُ قَالَ " أَيْنَ السَّائِلُ عَنْ قِيَامِ السَّاعَةِ " . فَقَالَ الرَّجُلُ أَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ . قَالَ " مَا أَعْدَدْتَ لَهَا " قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا أَعْدَدْتُ لَهَا كَبِيرَ صَلاَةٍ وَلاَ صَوْمٍ إِلاَّ أَنِّي أُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ وَأَنْتَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ " . فَمَا رَأَيْتُ فَرِحَ الْمُسْلِمُونَ بَعْدَ الإِسْلاَمِ فَرَحَهُمْ بِهَذَا .

 

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট একজন লোক এসে প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। কিয়ামাত কখন সংঘটিত হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন। নামায সমাপ্তির পর তিনি প্রশ্ন করেনঃ  কিয়ামাত সংঘটিত হওয়ার প্রসঙ্গে প্রশ্নকারী লোকটি কোথায়? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। এই যে আমি।

 

তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কিয়ামাতের জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছ? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। আমি অবশ্য তেমন লম্বা (নাফল) নামাযও পড়িনি, রোযাও (নাফল) রাখিনি, তবে আমি নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালোবাসি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ  যে লোক যাকে ভালোবাসে, কিয়ামাত দিবসে সে তার সাথেই অবস্থান করবে। তুমিও যাকে ভালোবাস তার সাথেই অবস্থান করবে। বর্ণনাকারী বলেন, তারা এ কথায় এতই সন্তুষ্ট হলেন যে, ইসলাম গ্রহণের পর মুসলমানদের আর কোন বিষয়ে এত খুশি হতে দেখিনি।

(তিরমিজি ২৩৮৫)

 

حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عُمَرَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ أَبِي النَّجُودِ، عَنْ زِرِّ بْنِ حُبَيْشٍ، قَالَ أَتَيْتُ صَفْوَانَ بْنَ عَسَّالٍ الْمُرَادِيَّ أَسْأَلُهُ عَنِ الْمَسْحِ، عَلَى الْخُفَّيْنِ فَقَالَ مَا جَاءَ بِكَ يَا زِرُّ فَقُلْتُ ابْتِغَاءَ الْعِلْمِ فَقَالَ إِنَّ الْمَلاَئِكَةَ تَضَعُ أَجْنِحَتَهَا لِطَالِبِ الْعِلْمِ رِضًا بِمَا يَطْلُبُ . قُلْتُ إِنَّهُ حَكَّ فِي صَدْرِي الْمَسْحُ عَلَى الْخُفَّيْنِ بَعْدَ الْغَائِطِ وَالْبَوْلِ وَكُنْتَ امْرَأً مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَجِئْتُ أَسْأَلُكَ هَلْ سَمِعْتَهُ يَذْكُرُ فِي ذَلِكَ شَيْئًا قَالَ نَعَمْ كَانَ يَأْمُرُنَا إِذَا كُنَّا سَفَرًا أَوْ مُسَافِرِيِنَ أَنْ لاَ نَنْزِعَ خِفَافَنَا ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ وَلَيَالِيَهُنَّ إِلاَّ مِنْ جَنَابَةٍ لَكِنْ مِنْ غَائِطٍ وَبَوْلٍ وَنَوْمٍ . فَقُلْتُ هَلْ سَمِعْتَهُ يَذْكُرُ فِي الْهَوَى شَيْئًا قَالَ نَعَمْ كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي سَفَرٍ فَبَيْنَا نَحْنُ عِنْدَهُ إِذْ نَادَاهُ أَعْرَابِيٌّ بِصَوْتٍ لَهُ جَهْوَرِيٍّ يَا مُحَمَّدُ . فَأَجَابَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى نَحْوٍ مِنْ صَوْتِهِ هَاؤُمُ وَقُلْنَا لَهُ وَيْحَكَ اغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَ فَإِنَّكَ عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَقَدْ نُهِيتَ عَنْ هَذَا . فَقَالَ وَاللَّهِ لاَ أَغْضُضُ . قَالَ الأَعْرَابِيُّ الْمَرْءُ يُحِبُّ الْقَوْمَ وَلَمَّا يَلْحَقْ بِهِمْ . قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ "

 

ইবন আবূ উমার (রহঃ) ..... যির ইবন হুবাইশ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি সাফওয়ান ইবন আসসাল মুরাদী (রাঃ) এর কাছে চামরার মোজার উপর মাসেহ করার বিষয়ে প্রশ্ন করার জন্য এলাম। তিনি বললেনঃ হে যির! কি উদ্দেশ্যে তোমার আগমন? আমি বললামঃ ইলমের অন্বেষণে। তিনি বললেনঃ তালেবুল ইলমের জন্য ফিরিশতারা তাদের পাখনা বিছিয়ে দেন তার ইলম সন্ধানের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশে। আমি বললামঃ প্রসাব-পায়খানার পর (উযূর ক্ষেত্রে) চামড়ার মোজায় মাসেহ করার বিষয়টি আমার মনে সন্দেহের উদ্রেক হচ্ছে। আপনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের একজন। তাই আপনার কাছে জিজ্ঞেস করতে এলাম যে, এই বিষয়ে আপনি তাকে কিছু বলতে শুনেছেন কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তিনি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা যখন মুসাফির থাকি তখন যেন গোসল ফরযজনিত কারন ব্যতীত (উযূ করার) তিন দিন তিন রাত আমাদের চামড়ার মোজা না খুলি, প্রস্রাব-পায়খানা ও নিদ্রা ইত্যাদি কারণের বেলায়ও নয়।

 

আমি বললামঃ মুহাব্বাতের বিষয়ে তাঁকে কিছু বলতে শুনেছেন কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম।আমরা তাঁর কাছে ছিলাম এমন সময় বেদুঈন উচ্চৈস্বরে তাকে ডাক দিয়ে বললঃ হে মুহাম্মাদ! তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মত আওয়াজে উত্তর দিলেনঃ এস। আমরা তাকে বললামঃ ওহে! তোমার আওয়াজ একটু নীচু কর। কেননা তুমি তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসেছ। আর তাঁর কাছে এরূপ করতে তোমাকে নিষেধ করা হয়েছে। সে বললঃ আল্লাহর কসম! আমি আমার আওয়াজ নীচু করতে পারব না। পরে ঐ বেদুঈন বললঃ কোন ব্যক্তি এক সম্প্রদায়কে ভালবাসে বটে কিন্তু তাদের সঙ্গে মিলিত হতে পারে নি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে যাকে ভালবাসবে, কিয়ামতের দিন সে তার সঙ্গেই থাকবে।

(তিরমিজি ৩৫৩৫)

 

وَعَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِىِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ كَيْفَ تَقُولُ فِىْ رَجُلٍ أَحَبَّ قَوْمًا وَلَمْ يَلْحَقْ بِهِمْ؟ فَقَالَ:اَلْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

 

 আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমাতে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে আপনার কি অভিমত? যে কোন কওম বা দলকে ভালোবাসে; কিন্তু তাদের সাথে (কখনো) সাক্ষাৎ হয়নি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সে ব্যক্তি তার সাথেই আছে, যাকে সে ভালোবাসে।

 

সহীহ : বুখারী ৬১৬৮, ৬১৬৯, ৬১৭০; মুসলিম ১৬৫-(২৬৪০), তিরমিযী ২৩৮৭, আবূ দাঊদ ৫১২৭, সহীহুল জামি‘ ৬৬৮৯, সহীহ আত্ তারগীব ৩০৩৩, বাযযার ৩০১৪, আহমাদ ১৩৩৮৮, আবূ ইয়া‘লা ৫১৬৬, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৫৭, শু‘আবুল ঈমান ৪৯৭, সুনানুর নাসায়ী আল কুবরা ১১১৭৮, দারাকুত্বনী ২, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৭২০৮, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ৭৯৫।

 

ব্যাখ্যাঃ (الْمَرْءُ مَعَ من أحبَّ) অর্থাৎ হাশরের মাঠে তুমি তার সাথে থাকবে যাকে তুমি ভালোবাস। এর কারণ হলো মানব জাতি অনুকরণপ্রিয়। যে যাকে ভালোবাসে তার নীতি, আদর্শ অনুসরণ করে ও তা জীবনে বাস্তবায়ন করে।

সে জন্য কিয়ামতের দিনেও সে তার বন্ধু হবে।

 

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,

 

وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَالرَّسُولَ فَأُولٰئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِمْ

 

‘‘আর যারা রসূলের অনুসরণ করেন তারা (কিয়ামতের দিন) তাদের সাথে থাকবে যাদেরকে আল্লাহ অনুগ্রহ (নি‘আমাত) দান করেছেন’’- (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ৬৯)।

 

 أَحَبَّ قَوْمًا  অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি কোন কওম বা সম্প্রদায়কে ভালোবাসে, এ ভালোবাসা আল্লাহর ওয়াস্তে হওয়া চাই এবং যাকে ভালোবাসবে তার সৎ হওয়া চাই।

 

(وَلَمْ يَلْحَقْ بِهِمْ) কিন্তু তাদের সাথে তার কখনো সাক্ষাৎ হয়নি। ‘‘মিরকাত’’ গ্রন্থকার এর কয়েকটি অর্থ করেছেন- ১. তাদের সাহচর্য লাভ করেনি, ২. ‘ইলম বা বিদ্যায় তাদের সমপর্যায় পৌঁছেনি। ৩. ‘আমালে তাদের সমকক্ষ হয়নি। ৪. তাদের সাথে মিলিত হয়নি তথা তাদের দেখা পায়নি। তাদের কাজের মতো কাজও করেনি, শুধু তাদেরকে ভালোবাসে। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

 

অত্র হাদীসটি দ্বারা বাহ্যিকভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, তোমরা নেক ও সৎ বন্ধুদের সাথে বন্ধুত্ব কর, তাহলে তোমরা কিয়ামতের দিন তাদের সাথে থাকতে পারবে। যেমনটি অন্য একটি হাদীসে এসেছে- الْمَرْءُ عَلٰى دِينِ خَلِيلِه ‘‘ব্যক্তি (মানুষ) তার বন্ধুর ধর্মের উপর থাকে’’- (আবূ দাঊদ হাঃ ৪৮৩৩)। বাহ্যিকভাবে হাদীসটির মধ্যে উৎসাহ ও ভীতি এবং সতর্ক ও সাবধনতা রয়েছে।

 (তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৩৮৬)

 

হাদীস দ্বারা পরোক্ষভাবে বুঝা যায় যে, ‘আলিম-‘উলামা ও সৎ লোকেদেরকে ভালোবাসা জান্নাত লাভের অন্যতম মাধ্যম। পক্ষান্তরে জাহিল ও অসৎ এবং অমুসলিমদেরকে ভালোবাসা জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

 

 

(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

 

[৬] সহীহ বুখারি, হাদীস নং – ৩৬৮৮