গাড়ি
চালিয়ে বাসায় ফিরছিলাম। হটাত
এক জায়গায় মানুষের জটলা দেখতে
পেলাম। রাস্তার পাশে গাড়ি
থামিয়ে সেদিকে আগালাম। ভিড়
ঠেলে ঢুকতেই দেখতে পেলাম একটা
মেয়ে রাস্তায় পরে আছে। পাশে
কিছুটা রক্ত পরে আছে। মনে হয়
এক্সিডেন্ট করেছে। এ কেমন
দেশ রে ভাই!!
একটা
মানুষ রাস্তায় এক্সিডেন্ট
করে পরে আছে আর মানুষ দাঁড়িয়ে
দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে!!
বসে
মেয়েটার মুখ তা ঘুরাতেই আমার
বু
কের
মধ্যে মনে হল কে যেন হাতুরি
দিয়ে আঘাত করল। তাড়াতাড়ি কলে
তুলে গাড়িতে উঠালাম। হাসপাতালে
নিয়ে ভর্তি করালাম। ইমারজেন্সি
রুমে ঢুকিয়ে আমি বসে বসে অপেক্ষা
করতে লাগলাম। যদিও আমার মন
সায় দিচ্ছিল না সেখানে থাকতে।
কিন্তু একটা কারণে থাকতে বাধ্য
হলাম। স্মৃতির ঝাড়ুদার ঝাড়ু
দিয়ে পুরনো দিনের কথা মনে
করিয়ে দিল।
২০০৬
সাল
আমি
মেঘ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
অধ্যয়নরত। তখন আমি ৩য় বর্ষের
ছাত্র। ভালোই কাটছিল দিনকাল।
একদিনের কথা। ক্লাস শেষে আমি
বের হচ্ছি এমন সময় মনে হল কে
যেন আমার নাম ধরে ডাকছে। মেয়েলি
কণ্ঠ। একটু অবাকই হলাম। মেয়েদের
সাথে যে কথা বলি না তা কিন্তু
না,কিন্তু
যাদের সাথে কথা বলি তাদের
কন্থের সাথে মিলছে না। পিছনে
তাকালাম। অপরিচিত একটা মেয়ে।
আগে কখনো দেখেছি বলে মনে হয়
না।
-কেমন
আছেন ভাইয়া?
-হুম
ভালো। আপনাকে তো চিনলাম না।
-না
চিনারই কথা। আমি রাজকন্যা।
Zoology
তে
পড়ছি,১ম
বর্ষে।
-রাজকন্যা!!
এটা
কেমন নাম?
এই
নাম তো মানুষ আদর করে ডেকে
থাকে।
-হুম।
আমার পুরো নাম নিশাত মেহজাবিন
রাজকন্যা।
-ও
আচ্ছা। তা কি জন্য ডেকেছেন
বলুন।
-এমনিই,
আপনার
সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য। আপনি
তো অনেক সুন্দর কবিতা লেখেন।
-আমি
কবিতা লেখি সেটা আপনি জানলেন
কিভাবে?
-সেটা
জানার কি দরকার আছে বলুন?
আপনার
কবিতা আমার খুব ভালো লাগে।
-ধন্যবাদ।
আমার একটু কাজ আছে আপনার সাথে
পরে কথা হবে।
-ভাইয়া
আপনার কন্টাক্ট নাম্বার দেওয়া
যাবে?
(মাইয়া
তো সুবিধার না,
চিনে
না জানে না আজকের পরিচয়েই
নাম্বার চায়। নাম্বার তা দিয়াই
নি। নাইলে মনে করব ভাব মারতাছি।
:P)
-লিখেন,০১.............
-ধন্যবাদ
ভাইয়া। ভালো থাকবেন।
এভাবেই
রাজকন্যার সাথে আমার পরিচয়।
এরপর থেকে আমাদের নিয়মিত কথা
হত। মেয়েটাকে যে আমার খারাপ
লাগত তা না। এভাবে চলতে চলতে
কখন যে ভাললাগা ভালবাসায় রুপ
নিল তা নিজেও বুঝতে পারলাম
না।
আমি
তাকে প্রপোস দিয়েছিলাম একটা
কবিতার দিয়ে।
মেঘ,তুমি
কি রবে চিরকাল আমার?
কেন
রবো না বলো প্রিয়া আমার!?
তুমিতো
বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়বে,
তুমিতে
ঝড়ে পড়ে যাবে,
তুমি
ঝড়ে গেলে যে আমি কষ্ট পাব!
আমি
বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়ব তোমার
শরীরে,
মিশে
যাব তোমাতে থাকব হৃদয় জুড়ে।
আমার
রাজকন্যাকে কি করে একলা ফেলে
যাই,
কেঁদে
কেঁদে ভাসাও বুক তা কি আমি
চাই!
পড়বে
না কভু এক ফোঁটা জল ঐ আঁখি বেয়ে,
পড়ার
আগেই মুছে দেব সে জল আমার
ভালোবাসা দিয়ে। (কাওছার)
এরপর
থেকে আমাদের পথ চলা শুরু।
ভালবাসায় রাগ অভিমান সবই ছিল।
রাজকন্যা তার স্বপ্নের কথা
যখন বলত তখন আমারও ভালো লাগত।
-আপনি
রোগীর কি হন?
নার্সের
কথায় বাস্তবে ফিরে আসলাম।
আমি কি কিছু হই??
নিজের
কাছেই কেমন যেন লাগল কথাটা।
-কি
ব্যাপার,কথা
বলছেন না কেন?
আপনি
রোগীর কি হন?
-আমি
ফ্রেন্ড।
-ওনার
কোন আত্মীয় সজন নেই?
-আছে।
কিন্তু তাদেরকে কোন খবর দিতে
পারি নি। ফোন নাম্বার নেই তো
তাই।
-ও।
রোগীর এক ব্যাগ A+
রক্তের
প্রয়োজন। তাড়াতাড়ি ব্যাবস্হা
করুন।
আমার
আর রাজকন্যার রক্তের গ্রুপ
একই। কিছুটা দ্বিধা কাজ করছিল।
কিন্তু সব ঝেড়ে ফেলে সিদ্ধান্ত
নিলাম রক্ত দেব।
-আমার
রক্তের গ্রুপও A+।
-তাহলে
আসুন আমার সাথে।
রাজকন্যাকে
দেখতে পেলাম শুয়ে আছে। কত
নিষ্পাপ একটা চেহারা। কিন্তু
নিজেকে ফিরিয়ে নিলাম। ওদিকে
আমাই যত তাকাবো ততই নতুন করে
মায়া কাজ করবে। আমি তা চাই না।
রক্ত দেওয়ার সময়ও মুখ ফিরিয়ে
রেখেছিলাম অন্যদিকে। কত
নিষ্ঠুর আমি তাইনা!!
রক্ত
দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলাম।
এখানে আমার আর এক মুহূর্তও
থাকতে ইচ্ছা হচ্ছে না। খুব
কাছের বন্ধু রুমান কে ফোন দিয়ে
হাসপাতালে আস্তে বললাম।
-তুমি
আর কোনদিন আমার সাথে যোগাযোগ
করার চেষ্টা করো না মেঘ।
-আরে
তুমি এ কথা বলছ কেন?
আর
তুমি কাঁদছই বা কেন?
-আমার
বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।
কাল আমার বিয়ে। তুমি আর কোনদিন
আমার সাথে যোগাযোগ করবে না।
কি
হল কিছুই বুঝলাম না। এমন তো
হওয়ার কথা ছিল না। তবে কেন এমন
হল। আমি এরপর বারবার চেষ্টা
করেছি যোগাযোগ করার কিন্তু
ওকে পাই নি। তারপর মনে একটা
কথার উদয় হল। “যে আমাকে চায়
না তাকে আমি কিভাবে পাব?”
কত
সারথপর আমি তাই না!!
ভালোবাসার
মানুশকে কাছে পাওয়ার জন্য
একবারও চেষ্টা করলাম না!!
কিভাবে
পারলাম আমি এমন করতে??
কেমন
ভালবেসেছিলাম আমি যে রাজকন্যাকে
আটকে রাখতে পারলাম না??
আমার
ভালবাসায় মনে হয় খাঁদ ছিল।
-কিরে
দোস্ত?
কি
হইছে?
রুমান
কে সব খুলে বললাম।
-কিন্তু
তুই চলে যাচ্ছিস কেন?
-আমি
কেন চলে যাচ্ছি তা তুই ভালো
করেই জানিস। যা যা করতে বললাম
তাই করবি। এর অন্যথা করিস না
দোস্ত। তাহলে তুই তোর একটা
বন্ধুকে কষ্ট দিবি। বল তুই
আমার কথা রাখবি?
রুমান
কোন কথা না বলে আমাকে জড়িয়ে
ধরে কেঁদে দিয়েছিল।
-আরে
রুমান ভাই!!
আপনি
এখানে?
-হু,
তুমি
এক্সিডেন্ট করেছিলে ,পরে
তোমাকে দেখতে পেয়ে হাসপাতালে
নিয়ে এলাম।
-ও
আচ্ছা। আমাকে রক্ত কি আপনি
দিয়েছেন?
-হ্যাঁ।
কথাগুলো
বলতে রুমানের অনেরক কষ্ট
হচ্ছিল। চোখ দিয়ে প্রায় পানি
এসে পরেছিল। অনেক কষ্টে তা
সংবরণ করল। কিন্তু রাজকন্যার
কাছে ঠিকই ধরা পরে যায় সে।
বাধ্য হয়ে সব খুলে বলতে বাধ্য
হয় সে। সব শুনে হতবাক হয়ে যায়
সে। তাহলে কি মেঘ আমাকে এখন
ভালবাসে??
আর
ভাবতে পারে না সে। চোখ দিয়ে
পানি চলে আসে তার।কিন্তু তখন
আর কিছুই করার ছিল না। সময় যা
চলে গিয়েছে তা আর কখনো ফিরে
আসে না।
-মা
মা,
বারান্দায়
বসে কি করছ?
-কিছু
না বাবা।
-মিথ্যে
বল না মা। কি করছ বল?
-আকাশ
দেখছিলাম। সাদা সাদা মেঘগুলো
কত সুন্দর করে উড়ে বেরাচ্ছে
দেখছিস।
-ঠিক
আমার মত তাই না মা!!
আমিও
মেঘ,
আমিও
একদিন অদের মত আকাশে উড়ে বেড়াবো।
ছেলের
কথা শুনে রাজকন্যা কেঁদে দেয়।
মেঘকে বুকে জড়িয়ে কাদতে লাগল।
-মা
তুমি কেদ না। তুমি কাদলে আমার
কষ্ট লাগে।
-ঠিক
আছে বাবা আর কাদব না।
-চল
ছাদে যাই। সেখানে বসে বসে সাদা
মেঘ এর আনাগোনা দেখি। তাদের
মাঝে মিশে যাই।
-চল
মা।
-সমাপ্ত-
লিখেছেন:
-এম
এস কে তাম্মিন