Wednesday, April 28, 2021

জাদুটোনা শয়তানের কুপ্রভাব থেকে বাঁচার উপায়

 May be an image of text that says 'জাদুটোনা শেয়তানের বেঁচে থাকার শ থেকে'

 জাদুটোনা শয়তানের কুপ্রভাব থেকে বাঁচার উপায়

 

আমাদের প্রতিবেশী এক নানু আম্মুর কাছে খুব আক্ষেপ করছিলেন উনার মেয়েদের বিয়ে শত্রুপক্ষ বারবার কুফরি করে আটকে রাখা নিয়ে।
অনলাইনে পরিচিত এক বোনের সাংসারিক জীবনের করুণ কাহিনী জানি। দুশ্চারিত্রা শাশুড়ির কুফরি কালামের আশ্রয়ে জাদুর বলয়ে বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার অবস্থায় পৌছিয়েছে।
এমন ঘটনা খুজে দেখলে অনেক পাওয়া যাবে।
ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কুফুরি কালাম বা জাদু টোনা এখন খুব কমন একটি প্র্যাকটিস বলা চলে। টিভি, পেপার, রাস্তায় রীতিমত বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে এদিকে আকৃষ্ট করা হচ্ছে।
 আর আমরা জানি নাওয়াক্বিদুল ঈমান তথা ঈমান ভঙ্গের ১০টি কারণের মাঝে একটি হল জাদু করা ও জাদুকরের কাছে গিয়ে সাহায্য চাওয়া।
এ প্রসঙ্গে আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, 
‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক জিনিস থেকে বেঁচে থাক। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ঐ ধ্বংসাত্মক জিনিসগুলো কি? তিনি বললেন, (১) আল্লাহর সাথে শিরক করা (২) যাদু করা (৩) অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, যা আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন (৪) সূদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা (৬) যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা (৭) সতী-সাধ্বী মুমিন মহিলাকে অপবাদ দেয়া’।[বুখারী হা/২৭৬৬; মুসলিম হা/২৭২; মিশকাত হা/৫২।]
 
আর এটি কোন কল্পকাহিনী নয়। কুফুরি কালামের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ করা, আত্মীয়ের ছেলে বা মেয়ের বিয়ে আটকিয়ে রাখা, পড়াশোনা, ব্যবসা, চাকরি ইত্যাদির ক্ষতি করা, কাউকে মানসিক ভারসাম্যহীন করে ফেলা, এমনকি এক্সট্রিম পর্যায়ের কুফুরি কালাম করে মানুষকে মেরে ফেলা পর্যন্ত সম্ভব।
আর এগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কেউ যাদুকরের কাছে গেলে তারও ঈমান চলে যাবে। একসঙ্গে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা কুরআনে হুশিয়ারি করে বলেন, ‘তারা ভালরূপেই জানে যে, যে কেউ যাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই’ (বাক্বারাহ ১০২)।
সুন্নতি লিবাসে প্রচুর শয়তান আজ এসবের সাথে জড়িত। আত্মীয়স্বজনের মাঝে বা পরিচিতদের অনেকেই কারো ভালো দেখতে না পেরে হিংসায় এগুলো করে থাকে। অথচ এই জাহেল মানুষগুলো বুঝে না এর মাধ্যমে তারা ইসলাম থেকেই বের হয়ে যায়। তাদের পূর্বের সকল আমল বরবাদ হয়ে যায়। এগুলো নিজেকে করা লাগে না, টাকার বিনিময়ে কিছু মানুষরুপী জানোয়ারের মাধ্যমে এগুলো খুব সহজেই করা যায় এবং আমাদের চারপাশের হাজার হাজার লোকজন এগুলো করছে। এবং এর ফলাফল হয় খুব ভয়াবহ। কেননা এইসব কুফুরি কালামের প্রভাব কার্যকরী। ক্রমাগত জঘন্য সব কুফুরি আর শির্ক করার মাধ্যমে শয়তানকে খুশি করা হয় আর শয়তান এসে তাদের কাজ করে দেয়। যারা জানেন না এগুলো কীভাবে করে, না জানাই ভালো। কেননা এগুলো জানা কোন জরুরী বিষয় নয়, জরুরী বিষয় হল এগুলো থেকে কীভাবে বেঁচে থাকবেন।
স্বয়ং রসুলুল্লাহ(ﷺ) কে কুফুরি কালাম করা হয়েছিল এবং উনার উপর এর প্রভাব কার্যকর করে আল্লাহ দেখিয়ে দিয়েছেন তা সত্য এবং আমাদের বেলায়ও তা হবে। এবং মৃত্যু পর্যন্ত উনার উপর এর কিছুটা প্রভাব ছিল বলে অনেক আলিম বলেছেন। এরই প্রেক্ষিতে সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস নাযিল হয়। যারা বলেন তাহলে তো গণতন্ত্রের মানসকন্যা ও গোলাপি আন্টি একজন আরেকজনকে এভাবে ধ্বংস করে দিতো, পারছে না কেন? তাদের জানা উচিত এইসব নেতারা কুফুরি কালামের মাধ্যমে বহু আগে থেকেই নিজেদেরকে প্রটেকশান দিয়ে রেখেছে। শুধু এই উপমহাদেশ নয় বরং ইউরোপ আমেরিকার নেতারাও প্রতিপক্ষের হাত থেকে বাঁচার জন্য এগুলোতে অভ্যস্থ। যারা এগুলো নিয়ে ঘেঁটেছেন তারা সহজেই বুঝতে পারবেন।
আরবিতে একটি প্রবাদ আছে, الوقایة خیرمن العلاج অর্থাৎ প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধ উত্তমতাই জাদু শয়তান ও জ্বিনের দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার আগেই সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন।
প্রতিরোধের উপায়ঃ
১) আকীদা বিশুদ্ধ করুন।
প্রত্যেক মুসলমানের উচিত তার আকিদা বিশুদ্ধ করা। সে দৃড়ভাবে বিশ্বাস করবে যে, যা কিছু হয় সবই আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। মুসীবত, কষ্ট, যন্ত্রণা সবই আল্লাহর হুকুমে হয়। আল্লাহর ইচ্ছা না থাকলে কোন কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না। না জাদুটোনা, না জ্বিন-শয়তান, না কোন সুপার পাওয়ার দাবিদার কেউ।
আল্লাহ তা'আলা বলেছে, "আর তারা (জাদুকরেরা) আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত কোন ক্ষতি করতে পারে না।" [সূরা বাকারা : ১০২]
যেহেতু আল্লাহর ইরাদা ও ইচ্ছা ব্যতীত কোন কিছু হয় না। তাই সুস্থতা-অসুস্থতা, বিপদ-আপদে সর্বাবস্থায় আল্লাহর দিকে ফিরে আসায় কল্যাণকর।
 
২) তাকওয়া অর্জন করা।
সমস্ত কাজে আল্লাহর হুকুমকে সর্বাগ্রে এবং সব নিষেধ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। যে তাকওয়া অর্জন করে আল্লাহ তাকে সব রকম বিপদাপদ ও কষ্ট থেকে উদ্ধার করেন।
আল্লাহ বলেছেন- "যে তাকওয়া অর্জন করবে, আল্লাহ তাকে (বিপদাপদ ও পেরেশানি থেকে) বের হবার রাস্তা করে দেবেন।" [সূরা তালাক : ২]
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, "তোমরা যদি সবর ও তাকওয়া গ্রহণ করো, তবে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।" [সূরা আল ইমরান : ১১০]
 
৩) আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল রাখুন।
সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে। যে বান্দা আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করেন আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান।
আল্লাহ বলেছেন, "যে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।" [সূরা তালাক : ৩]
 
৪) ইস্তি'আযাহ করুন।
জাদু ও জাদুর প্রভাবে সবচে বেশি ভূমিকা রাখে জ্বিন ও শয়তান। বেশির ভাগ সময় তাদের মাধ্যমে জাদু করা হয়। তাই জ্বিন ও শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়াকে 'ইস্তি'আযাহ' বলে। তাই ইস্তি'আযার আয়াত, দু'আ ও যিকির-আযকারকে দৈনন্দিন আমল বানিয়ে নিন।
যেমন বেশি বেশি এ আয়াত পড়ুন-
رب اعوذ بک من ھمزت الشيطين - واعوذ بک رب ان يحضرون
‘হে আমার রব! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি শয়তানের প্ররোচনা থেকে।
আর হে আমার রব! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি আমার কাছে তাদের উপস্থিতি থেকে।’ [সূরা মু'মিনুন : ৯৭-৯৮]
৫) আজওয়া খেজুর খান।
সসম্ভব হলে জাদুর কুপ্রভাব থেকে বাঁচার জন্য আজওয়া খেজুর খান।
সা‘দ (রাযি.) তাঁর পিতা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেকদিন সকালবেলায় সাতটি আজওয়া উৎকৃষ্ট খেজুর খাবে, সেদিন কোন বিষ ও যাদু তার ক্ষতি করবে না। [সহীহ বুখারী, ৫৪৪৫]
 
৬) সকাল-সন্ধ্যার আমল করুন।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে দু'আগুলো সকাল-সন্ধ্যায় শিখিয়েছেন, তা গুরুত্বের সাথে পাঠ করুন।
যেমন-
 
ক. প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে ও ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসী পড়া। একটি হাদীসে এসেছে, "যে ব্যক্তি রাতে ঘুমানোর সময় আয়াতুল কুরসি পড়বে, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে একজ ফেরেস্তা নিযুক্ত করা হবে, সে সারারাত পাঠকারী বান্দাকে পাহারা দেয়। শয়তানকে তার কাছে ঘেষতে দেয় না।" [সহীহ বুখারী, ২৩১১]
 
খ. ঘরে সূরা বাকারা তিলাওয়াত দ্বারাও শয়তান ও জাদু থেকে হিফাজতে থাকা যায়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, "যে ঘরে সূরা বাকারা তিলাওয়াত করা হয়, শয়তান সে ঘর থেকে পালিয়ে যায়।" [সহীহ মুসলিম, ৭৮০]
 
গ. সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত রাতের বেলা পাঠ করাও গুরুত্বপূর্ণ। তা মানুষকে জাদুর প্রভাব থেকে মুক্ত রাখে।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি রাতে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়বে, এই দুই আয়াত তার জন্য যথেষ্ট হবে।" [সহীহ মুসলিম, ৮০৭]
 
ঘ. সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস বেশি বেশি পড়তে থাকা। বিশেষ করে প্রত্যেক সালাতের পর একবার করে এবং ফজর ও মাগরিবের পরে প্রত্যেক সূরা তিনবার তিনবার করে পড়লে দুনিয়ার সবকিছুর জন্য যথেষ্ট হবে।
 
ঙ. সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার নিচের দু'আটি পড়লে দুনিয়ার কোন কিছু তার ক্ষতি করতে পারবে না। দু'আটি হলো,
«بسم الله الذي لا يضر مع اسمه شيء في الازض ولا في السماء وھو السميع العليم».
“আল্লাহ্‌র নামে; যাঁর নামের সাথে আসমান ও যমীনে কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।”[ আবূ দাউদ, ৪/৩২৩, নং ৫০৮৮; তিরমিযী, ৫/৪৬৫, নং ৩৩৮৮; ইবন মাজাহ, নং ৩৮৬৯; আহমাদ, নং ৪৪৬।]
 
৭) মানুষের সাথে শত্রুতা থাকলে তা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করতে হবে। 
 
আল্লাহ আযযা ওয়া জাল আমাদের সকলকে হিফাজত করুন।
||জাদুটোনা (শয়তানের কুপ্রভাব) থেকে বেঁচে থাকার উপায়||
~ জেবা ফারিহা

 

 

 

 

ইসলামী পদ্ধতিতে রাত্রিযাপন !!

 

ইসলামী পদ্ধতিতে রাত্রিযাপন !!
____________________________________________
____________________________________________
.
মুমিনের সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর জন্য নিবেদিত। তাঁর প্রতিটি মুহূর্ত অতিবাহিত হবে আল্লাহর স্মরণে, আল্লাহর বিধান পালনের মাধ্যমে। যেভাবে ইসলাম ঈমানদারের দিন অতিবাহিত করার নিয়ম শিক্ষা দিয়েছে, অনুরূপ রাত্রিযাপনেরও আদব-শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছে।
রাত আল্লাহর সৃষ্টির নিদর্শন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি রাত ও দিনকে নিদর্শনস্বরূপ সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা : বনি ইসরাইল, আয়াত : ১২)
.
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তিনি রাতকে মানুষের প্রশান্তির উপায় হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৯৬)
.
∆ সন্ধ্যাকালীন কাজ:
যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসবে, শিশুদের ঘরে ঢুকিয়ে নেবে এবং ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেবে। রাসুল (সা.) বলেন, “যখন রাতের আঁধার নেমে আসবে, তখন তোমরা তোমাদের শিশুদের আটকে রাখবে, কেননা এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে। আর যখন রাতের কিছু অংশ অতিক্রান্ত হবে, তখন তাদের ছাড়তে পারো। তোমরা ঘরের দরজা বন্ধ করবে এবং এ সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে, কেননা শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না।” (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩০৪)
.
∆ এশার নামাজের আগে ঘুমাবে না:
এশার নামাজের আগে ঘুমানো ইসলামের দৃষ্টিতে অপছন্দনীয় কাজ। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) এশার আগে ঘুমাতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি এশার পর না ঘুমিয়ে গল্পগুজব করা পছন্দ করতেন না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৯)
.
∆ এশার পরে অপ্রয়োজনে রাত্রি জাগরণ করবে না :
মহানবী (সা.) এশার নামাজের পর গল্পগুজব ও গভীর রাত পর্যন্ত অযথা জেগে থাকা অপছন্দ করতেন। তবে দ্বীনি শিক্ষা দিতে তিনি কখনো কখনো রাত জাগতেন। মুসলমানদের সম্পর্কে কল্যাণকর পরামর্শের জন্য অনেক সময় রাতে তিনি আবু বকর (রা.)-এর বাসায় যেতেন। (তাহাবি শরিফ, হাদিস : ৭২০৩)
.
হজরত আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-কে কখনো এশার আগে ঘুমাতে ও এশার পর গল্পগুজব করতে দেখিনি। এশার পর হয়তো জিকিরে মশগুল থাকতেন, নয়তো ঘুমিয়ে পড়তেন। এর দ্বারা সব অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে মুক্ত থাকা যায়। আয়েশা (রা.) বলেন, তিন ধরনের মানুষের জন্য রাত জাগার অনুমতি রয়েছে : বিয়ের রাতে নবদম্পতি, মুসাফির ও নফল নামাজ আদায়কারী। (মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস : ৪৮৭৯)
.
∆ ঘুমানোর আগের প্রয়োজনীয় কাজ:
একটি হাদিসে ঘুমানোর আগে সতর্কতাস্বরূপ প্রয়োজনীয় কয়েকটি কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা রাতে পানাহারের পাত্রগুলো ঢেকে রেখো। ঘরের দরজাগুলো বন্ধ রেখো। আর সাঁঝের বেলায় তোমাদের বাচ্চাদের ঘরে আটকে রেখো, কারণ এ সময় জিনেরা ছড়িয়ে পড়ে এবং কোনো কিছুকে দ্রুত পাকড়াও করে। নিদ্রাকালে বাতিগুলো নিভিয়ে দেবে। কেননা অনেক সময় ছোট ক্ষতিকারক ইঁদুর প্রজ্বলিত সলতেযুক্ত বাতি টেনে নিয়ে যায় এবং গৃহবাসীকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩১৬)
.
∆ শোয়ার জায়গায় সতর্কতা :
একাকী ঘরে রাত যাপনেরর ব্যাপারে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী করিম (সা.) কোনো ঘরে একাকী রাতযাপন ও একাকী সফর করতে নিষেধ করেছেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৫৬৫০)
.
অনুরূপ ছাদে শোবে না। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি বেষ্টনীবিহীন ছাদে রাতে ঘুমাল, (কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে) তার সম্পর্কে (আল্লাহর) কোনো জিম্মাদারি নেই।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৪১)
.
∆ পবিত্রতা অর্জন:
রাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র হয়ে শোয়া সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি কোনো মুসলমান রাতে আল্লাহকে স্মরণ করে অজু শেষে শয়ন করে এবং রাতে জাগ্রত হয়ে দুনিয়া ও আখিরাতের কোনো কল্যাণ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাআলা তা দান করেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৪২)
.
তাই ঘুমানোর আগে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেবে, যাতে খাবারের কোনো কিছু লেগে না থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শয়তান ঘ্রাণ নিতে খুবই দক্ষ ও লোভী। তোমরা নিজেদের ব্যাপারে শয়তান থেকে সতর্ক হও। কোনো ব্যক্তি খাদ্যের চর্বি ইত্যাদির ঘ্রাণ হাত থেকে দূর না করে রাত যাপন করলে এবং এতে তার কোনো ক্ষতি হলে সে এ জন্য নিজেকেই যেন তিরস্কার করে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৮৫৯)
.
∆ শয্যা গ্রহণের কিছু আদব:
• শয্যা গ্রহণের আগে বিছানা ঝেড়ে নেওয়া উচিত। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যদি তোমাদের কেউ শয্যায় যায়, তখন সে যেন তার লুঙ্গির দ্বারা বিছানাটা ঝেড়ে নেয়। কারণ সে জানে না যে বিছানার ওপর তার অনুপস্থিতিতে পীড়াদায়ক কোনো কিছু আছে কি না। তারপর এ দোয়া পড়বে—হে আমার রব! আপনারই নামে আমার শরীরটা বিছানায় রাখলাম এবং আপনারই নামে আবার উঠব।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৩২০)
.
• চোখে বেজোড় সংখ্যায় সুরমা লাগানো সুন্নত।
.
• ডান কাতে শয়ন করা সুন্নত।
.
• শয়নকালে দোয়া পড়া সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি শয়নের পর আল্লাহর নাম নেয় না, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বঞ্চনা নেমে আসবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৫৬)
.
হাদিস শরিফে ঘুমানোর আগে কয়েকটি দোয়া বর্ণিত হয়েছে। সবগুলো দোয়া পড়তে না পারলে ছোট এ দোয়াটি পড়া যায় : ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহ্ইয়া’—অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! তোমার নামে আমি শয়ন করছি এবং তোমারই দয়ায় আমি পুনর্জাগ্রত হব।’
.
• সুরা এখলাস ও নাস-ফালাক পড়ে শরীরে ফুঁ দেওয়া সুন্নত। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রাতে যখন বিছানায় যেতেন, তখন দুই হাত একত্রিত করে তাতে সুরা এখলাছ, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁক দিতেন। অতঃপর মাথা ও চেহারা থেকে শুরু করে যত দূর সম্ভব দেহে তিনবার দুই হাত বুলাতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০১৭)
.
• আয়াতুল কুরসি পাঠ করা সুন্নত : রাসুল (সা.) বলেন, “তুমি যখন শয্যা গ্রহণ করবে, তখন ‘আয়াতুল কুরসি’ পড়বে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না।” (বুখারি, হাদিস : ২৩১১)
.
‌‌∆ রাত্রিকালীন কিছু কুসংস্কার ও অহেতুক বিশ্বাস:
ইসলামপূর্ব আরবে অনেক ধরনের কুসংস্কার ও অহেতুক বিশ্বাস প্রচলিত ছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরআন-সুন্নাহর শিক্ষার মাধ্যমে সমাজ থেকে সব কুসংস্কার দূর করেন। আরবরা গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজে বের হওয়ার আগে পাখি উড়াত, পাখিটি উড়ে ডান দিকে গেলে যাত্রা শুভ মনে করত, আর বাঁ দিকে গেলে অশুভ মনে করত। কারো বাড়িতে প্যাঁচা বসলে মনে করত গৃহবাসীদের নিকটতম কারো মৃত্যু হবে অথবা ঘর বিরান হয়ে যাবে। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘এসব কুলক্ষণের কোনো বাস্তবতা নেই।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৭০৭)
.
ইসলামী জ্ঞানের অভাবে আমাদের সমাজেও নানা কুসংস্কার ছড়িয়ে আছে। অনেক এলাকায়ই রাতকেন্দ্রিক কিছু অহেতুক বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে। নিচে এর কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো,
.
• রাতে নখ, চুল, দাঁড়ি, গোফ ইত্যাদি কাটতে নেই।
• রাতে আয়না দেখতে নেই।
• ঘরের ময়লা পানি রাতে বাইরে ফেললে সংসারে অমঙ্গল হয়।
• রাতে বাঁশ কাটা যাবে না।
• রাতে ফল পাড়া ও গাছের পাতা ছেঁড়া যাবে না।
• রাতে কাউকে সুইসুতা দিতে নেই।
• রাতে কোনো কিছুর লেনদেন করা ভালো নয়।
• রাতের বেলা কালোজিরার ভর্তা খেলে মায়ের জানাজা পায় না।
• খালি ঘরে সন্ধ্যায় বাতি দিতে হয়, না হলে বিপদ আসে।
• রাতে কাক বা কুকুর ডাকলে বিপদ আসে।
• রাতে প্যাঁচার ডাককে বিপদ সংকেত মনে করে।
.
এ ছাড়া এলাকাভেদে আরো অনেক কুসংস্কারের প্রচলন রয়েছে। এসব মনগড়া কথা, ইসলামে এর কোনো ভিত্তি নেই। একজন মুসলমানের কাজ হলো, সব ধরনের কুসংস্কার বাদ দিয়ে সব ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার ওপর দৃঢ় ঈমান ও সুদৃঢ় আস্থা রাখবে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার উম্মতের ৭০ হাজার লোক বিনা হিসেবেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা হবে এমন লোক, যারা শরিয়তে নিষিদ্ধ ঝাড়ফুঁকের আশ্রয় নেয় না, কোনো বস্তুর শুভ-অশুভ মানে না। একমাত্র প্রতিপালকের ওপরই ভরসা রাখে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৭২)
লেখাঃ সাইদ মুকসিত