Thursday, June 17, 2021

১৪. প্রশ্ন: আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত স্বামীর আনুগত্য করা আবশ্যক কি? Marriage education series

 No photo description available.

 

 

প্রশ্ন: আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত স্বামীর আনুগত্য করা আবশ্যক কি?
 
উত্তর:- স্বামী যদি হারাম কাজে লিপ্ত থাকে, হালাল-হারামের তোয়াক্কা না করে বা হারাম উপায়ে অর্থ উপার্জন করে তাহলে তাকে স্ত্রী যথাসাধ্য দ্বীনের পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে, বুঝাবে এবং তার হেদায়েতের জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করবে। কোনভাবেই তার অবৈধ কাজের সমর্থন করবে না। তাহলে স্ত্রী গুনাহ থেকে বেঁচে যাবে ইনশাআল্লাহ।
এ সময় সে স্বামীর কেবল বৈধ কাজে অনুগত্য করবে, সেবা করবে, তার সঙ্গ দিবে এবং তার হক আদায় করবে।
অবশ্য সে যদি কোন হারাম কাজের নির্দেশ দেয় বা আল্লাহর ফরজ বিধানে বাধা দেয় তাহলে সে ক্ষেত্রে তার অনুগত্য করা বৈধ নয়। কেননা, স্রষ্টার অবাধ্যতা করে সৃষ্টির অনুগত্য করা যাবে না।
আর সে যদি শিরক বা কুফুরীর মত অপরাধে লিপ্ত থাকে তাহলে বুঝানোর পরও সংশোধন না হলে তার সাথে ঘর সংসার অব্যহত রাখা বৈধ নয়। বরং তালাক নেয়া জরুরি। আল্লাহু আলাম।
--------------------------
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

 

১৩. স্বামীর আনুগত্য এবং তার সীমা Marriage education series

 No photo description available.

 

১৩. স্বামীর আনুগত্য এবং তার সীমা
 
 

স্বামীর আনুগত্য এবং তার সীমা
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
প্রশ্ন: স্বামীর আনুগত্য বলতে কি এটা বুঝায় যে, স্বামীর কথামত স্ত্রী চোখ বন্ধ করে তার সব কথা মেনে নেবে?
স্বামী যদি দ্বীন পালন এবং ব্যক্তিগত ব্যাপারে বাধা দেয় তাহলেও কি তার কথা মানতে হবে? যেমন, স্ত্রী রাতে ঘুমানের পূর্বে সূরা মূলক ও অন্যান্য দুআ ও জিকির পড়তে চায় কিন্তু স্বামী ঘুমের পূর্বে এ সব পড়তে দিতে চায় না। অবশ্য সে অন্য সময় কুরআন তিলাওয়াত ও জিকির-আজকারে বাধা দেয় না।
অনুরূপভাবে স্বামী চায়, স্ত্রী যেন কোন দীনি বোনের সাথে কোন যোগাযোগ না রাখে অথচ দীনি বোনদের সান্নিধ্যে থাকলে ঈমান বৃদ্ধি পায়। এই সকল ব্যাপারে স্ত্রী কি স্বামীর প্রতিবাদ করতে পারবে? দয়া করে জানাবেন।
উত্তর:
স্ত্রী তার স্বামীর আনুগত্য করবে যদি সে হারাম এবং সাধ্যের অতিরিক্ত কোন কাজের আদেশ না করে। সেই সাথে যথাসাধ্য তার সেবা করবে। বিপরীতে স্বামী তার থাকা, খাওয়া, পোশাক, চিকিৎসা, নিরাপত্তা ইত্যাদির ব্যবস্থা করবে। এভাবেই পারষ্পারিক সুসম্পর্কের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা এ বিশ্বটাকে আবাদ রাখেন।
♻ তবে এই আনুগত্যের একটি সীমা রয়েছে। তা হল, স্বামী কখনো স্ত্রীকে আল্লাহর ফরজ ইবাদত পালনে বাধা দিতে পারবে না এবং তাকে হারাম বা সাধ্যের অতিরিক্ত কোন কাজের আদেশ করতে পারবে না। এ ধরণের কাজের আদশে দিলেও স্ত্রীর জন্য তা মান্য করা আবশ্যক নয়। কারণ ইসলাম বলে, স্রষ্টার অবাধ্যতা করে সৃষ্টির আনুগত্য করা করা বৈধ নয়।
♻ অনুরূপভাবে স্ত্রী যথাসম্ভব নফল ইবাদতও করতে পারবে। তবে খেয়াল রাখা আবশ্যক যে, এতে যেন স্বামীর খেদমতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয় বা তার বিরক্তির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।
তাইতো হাদীসে স্বামী বাড়িতে থাকা অবস্থায় তার অনুমতি ছাড়া স্ত্রীকে নফল রোযা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। নফল রোযা রাখলেও স্বামী যদি তাকে রোযা ভেঙ্গে দিতে বলে তাহলে তা ভেঙ্গে দিতে হবে।
♻ অনুরূপভাবে স্বামী যদি চায় যে, ঘুমের আগে স্ত্রী দুয়া ও জিকির নিয়ে ব্যস্ত না থাকুক তাহলে স্ত্রীর উচিৎ স্বামীর মনোভাবের দিকে লক্ষ্য রাখা এবং তা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা।
তবে একজন দ্বীনদার স্বামীর উচিৎ, তার স্ত্রীকে এসব দুআ ও জিকির করতে সুযোগ দেয়া। কিন্তু স্বামী যদি না চায় তাহলে না করাই উত্তম হবে। সে ক্ষেত্রে স্ত্রী স্বামীর সঙ্গ দেয়ার আগে বা পরে দুয়া ও জিকিরগুলো পড়ে নেয়ার চেষ্টা করবে।
♻ আপনি বলেছেন যে, স্বামী স্ত্রীকে ঘুমের সময় ছাড়া অন্য সময় কুরআন তেলাওয়াত ও জিকির-আযাকারে বাধা দেয় না। তাহলে স্ত্রীর উচিৎ সে সব সময়কে যথার্থভাবে কাজে লাগনো।
♻ আর দীনী বোনদের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বলব, অনেক সময় এ সব দীনী বোনের সাথে যোগাযোগের নামে অনেক বোন ইমো, ফেসবুক, হোয়াটসআপ বা ফোনকলে প্রচুর ব্যস্ত হয়ে যায় যা তার সাংসারিক কাজ, সন্তান-সন্তুদি প্রতিপালন, স্বামীর সেবা ইত্যাদিতে প্রভাব ফেলে। আবার এমনও হয়, এ সব অতিরিক্ত যোগাযোগের কারণে তারা নানা ধরণের ফেতনায় জড়িয়ে পড়ে।
সে ক্ষেত্রে স্বামী যদি এ যোগাযোগকে সীমিত করতে বা বন্ধ করতে চায় তাহলে এটা তার অধিকার আছে। বিষয়টি নির্ভর করছে একজন স্ত্রীর অবস্থার উপর। এ ক্ষেত্রে স্বামীর কথার মূল্যায়ন করা জরুরি। তার কথা লঙ্ঘন করলে হতে পারে, এতে দুজনের মাঝে মনমালিন্য সৃষ্টি হয়ে দাম্পত্য জীবনের সুখ বিনষ্ট হবে।
♻ মোটকথা, ফরজ ইবাদতের ক্ষেত্রে স্ত্রীর জন্য স্বামীর নিষেধ মান্য করা জায়েয নয়। কিন্তু অন্যান্য নফল ইবাদতে স্বামীর মনোভাবের দিকে লক্ষ্য করে ইবাদত করতে হবে। নফল ইবাদত করতে গিয়ে স্বামীর যেন কোন কষ্ট না হয় বা বিরক্তির কারণ না হয় সেটা লক্ষ রাখা আবশ্যক।
দুআ করি, আল্লাহ তাআলা যেন, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সুসম্পর্ক ও প্রেমের সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনকে সুখময় করেন এবং বেশি নেকি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি মূলক কার্যক্রম করার মাধ্যমে উভয়কে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করে নেন। আমীন।
●●●●●●●●●●●
*উত্তর প্রদানে:*
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলিল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, KSA
দাঈ, জুবাইর দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, KSA