Thursday, May 25, 2023

টকিজ পেরেকটিং

আমাদের অধিকাংশ পরিবারে টাকা নিয়ে কথা বলাটা ট্যাবু। কিভাবে টাকা আয় করতে হয়, কি করা উচিৎ, আর কি উচিৎ নয় - এইসব আলোচনাকে ফালতু ও নষ্ট হয়ে যাবার কারণ হিসেবে নেয়া হয়। আর মা বাবারা চায় তাদের সন্তান সুখে থাকুক। কোন কষ্ট যেন না হয়।
এই হারামী ও সমাজ ধ্বংস করা চিন্তার জন্যই সমাজে নানা সমস্যা। 
কারণ এই আয়েশ নিশ্চিত করতে গিয়ে হালাল হারাম এর ধার ধারে না।
আবার আয়েশ বজায় রাখতে রাখতে বাস্তবের কোন বালাই রাখে না।
ওয়েট ওয়েট, আমায় গালি দিচ্ছেন কেন?
এসব করার পর বাবু হিসেবে ট্রিট করে যদিও বয়স মেয়ের ২৪+ আর ছেলের ৩০+।
এইটা নিয়া প্যারা নাই যতক্ষণ না পড়শী কিছু বলে। যা বলে সেটা তো আমরা জানি ই।
তখন শুরু হয় আসল রূপ এই নাগিন বংশীয় বাবা মায়ের।
তারা চায় তাদের সন্তান সুখে থাকুক, কিন্তু পয়সা কামাইয়ে সুখের বদলে আছে কষ্ট; যেটা তারা মেনে নিতে চায় না। কিন্তু ঠিকই ওই কষ্ট পুরো করার পরের মজা মজা ফল চায় তারা। (অনেকে এটাকে নুচু নূচু বলে থাকে)
এই দ্বিমুখী আচরণ সন্তানের বুঝেই আসে না। মাছকে হঠাৎ মরুভূমিতে ফেলে দিলে যা হয়; এখানেও তাই। আপনি সারা জীবন তৈরি করলেন সোনার পালঙ্কে বসিয়ে, হুট করে তাকে চান বীর হিসেবে!
যে আপনাকে রক্ষা করবে, সাপোর্ট দিবে, যেখানে আপনার এই ওযৌক্তিক্ দাবির আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আপনি শর্তহীন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়েছেন।
আজ হুট করে সেটা পাল্টালে কিভাবে সেটা সম্ভব?
যে ডাক্তার হয়, সে কি হুট করেই সাদা পোশাক পড়েই হয়ে যায় নাকি দীর্ঘ দিনের প্রস্তুতি লাগে?
যদি বলেন কুন ফায়া কুন - আর কিছু বলার নেই।
কিন্তু যদি স্বীকার করেন যে এটা দীর্ঘ দিনের প্রস্তুতি লাগে - তাহলে আপনার দাবির সঙ্গে সেই ট্রেনিং কি ছিল? দিয়েছিলেন?

।।।।

এমন ঘটনার ভুক্তভুগী যারা তারা আওয়াজ তুলুন!

আমাদের জানান, আপনার গল্পটা।

সাজ্জাদ হোসেন
মে ২৫, ২০১২



#toxicparenting #metoo 
  #learnwithsazzad #wordsofwisdom #sazzadais

(সাল দেখে বিব্রত হবার কিছু নেই, অনেক আগের লিখা ডায়রি থেকে)

কোপা শামসুদারুণ এক ‘বিজনেস পলিসি’।

কোপা শামসু
দারুণ এক ‘বিজনেস পলিসি’। 
অথচ মানুষটা দেখতে শুনতে নিতান্তই গোবেচারা। পেশায় কসাই। তার প্রচলিত আর পাঁচ-দশটা কসাইয়ের চেয়ে তার ব্যবসার ধরণ ভিন্ন। অন্যরা প্রতিদিন গোশত বিক্রি করে। এই মানুষটা সপ্তাহে শুধু একদিন-শুক্রবার ছুটির দিন গোশত বিক্রি করে। বাকি দিনগুলোতে খালি দোকান খুলে বসে থাকে। প্রতি সোম-মঙ্গলবারের দিকে কোত্থেকে বিরাট, তাগড়া, দশাসই এক গরু নিয়ে আসে। কোনো সপ্তাহে মহিষ।
গরু-মহিষ আনার আগে থেকে তার নিজস্ব পদ্ধতিতে প্রচারণা চালাতে শুরু করে। শুক্রবার রাত থেকেই প্রচার শুরু হয়। দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়া পথিককে সালাম দিয়ে বলে
-ভাই, আগামি সোমবারে গরু আইব। দোয়া রাইখেন।
নিয়মিত যারা ক্রেতা তাদের কাছে খবর পাঠায়। মসজিদের হুজুরের কাছে দোয়া চায়। ছোট শিশুরা তার প্রচারণার বাইরে থাকে না,
-বাজান, গরু গোশত দিয়ে ভাত খাইছ? আমগো গরুর লাইগা দোয়া কইর। সোমবারে গাবতলি হাট থিকা আনমু।
গরু কেনার আগাগোড়া প্রক্রিয়া সম্পর্কেও নিয়মিত আপডেট দিতে থাকে। এই পর্বে থাকে গরুর ঠিকুজি-কুলজি সম্পর্কে বিশদ বিবরণ,
-ও ভোইন, এবারের গরুটা কিন্তু এক্কেবারে খাঁটি। নোয়াখালির চর আলেকজান্ডার থেকে সরাসরি আমদানি করা। পিউর ঘাসলতা খাওয়া গরু। চাষ বা খামারের না। এই গরুর গোশত যে একবার খাইছে, সারাজীবন তার স্বাদ জিভে লেগে থাকবে। 
আপডেট চলতে থাকে,
-ভাইজান, আজ গরুর মালিকের সাথে কথা ফাইনাল। রাতে ঢাকায় ঢুকবে। 
গরুর ট্রাক কখন কতদূর পৌঁছল, সেটার ধারাবাহিক ধারাভাষ্য চলতে থাকে। গরু আনতে যাওয়ার আগে হুজুর ডেকে দোকানে দোয়া করায়। জিলিপি বিলায়। গরু আনতে যাওয়ার সময় দোকানে একজনকে বসিয়ে যায়। তার কাজ হল, দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়া প্রতিটি ব্যক্তিকে গরুর আপডেট জানানো।
কসাই গরু আনতে যাওয়ার সময়, নিয়মিত ও অনিয়মিত ক্রেতাদের কাছে ফোন করে দোয়া চেয়ে নেয়। গরু নিয়ে মহল্লায় প্রবেশের দৃশ্যটাও দেখার মতো। কসাইয়ের সহকারিরা ফুলের মালা, মোবাইল, ক্যামেরা নিয়ে প্রস্তুত থাকে। গরু ও কসাই উভয়কেই মালা দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। দোকানের কাছাকাছি এলে, কোনো সপ্তাহে কসাইয়ের মা, কখনো বাবা, কখনো অন্য কোনো মুরুব্বির হাতে গরু বা মহিষের রশি ধরিয়ে দেয়া হয়। তারা দোকানের সামনে রাখা খুঁটির সাথে রশিটা বাঁধেন। গরুর শুভাগমন উপলক্ষ্যে হালকা মিষ্টি বিতরণ হয়।
এরপর থেকে শুরু হয় চূড়ান্ত পর্ব। কখনো দেখা যায় কসাই নিজহাতে গরুকে সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে দিচ্ছে। কখনো ফুলের মালা দিয়ে গরুর সাথে সেলফি তুলছে। গরুর গায়ে বসা তো দূরের কথা, পাশ দিয়েও কোনো মশা-মাছি যায় কি না, সেদিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে নজর রাখছে। ভুলে কোনো মাছি এদিকে এসে পড়লে, ওটাকে তাড়াতে তাড়াতে গলিছাড়া করে তারপর দম নেয়। 
বাকিসময় কসাই বসে বসে গরুর সাথে গল্প করে। কত কী যে বলে। জীবনে যা করেছি, যা করেনি, সবই গরুকে বলে। নিজের বা পাড়ার ছেলে-মেয়েদেরকে গরুর পিঠে বসিয়ে ছবি তোলে। 
গরু জবেহ করা হয় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে। গরু জবেহ করতে যাওয়ার সময়ও অনেক নাটকীয়তা। শেষবারের মতো গরুটাকে মালা পরানো হয়। গরুটাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না থেকে শুরু করে, আরো নানা আনুষ্ঠানিকতা।
ফজরের পরপরই দোকানে দোকানে গোশত উঠে যায়। দোকানের এককোণে তরতাজা গোশত রান্না হতে থাকে। অত্যন্ত ছোট ছোট টুকরায় কুটে কিছু গোশত রান্না করা হয়। ক্রেতাদেরকে ডেকচি থেকে ধোঁয়া ওঠা গোশত খেতে দিয়ে বলে,
-খেয়ে দেখুন। মজা না লাগলে কিনবেন না।
ক্রেতা না হলেও যারা দেখতে আসে, তাদেরকেও গোশত চাখতে দেয়। ছোট বাচ্চা এলে, তাকেও দেয়। ধনী-গরিব সব বাচ্চাই এক টুকরা পায়। গোশতের লোভে গরীব ছেলেমেয়েরা দোকানে ভীড় করে। হাঁড়ি খালি হওয়া পর্যন্ত রান্না করা গোশত বিলানো চলতে থাকে। গোশত শেষ হলে ছোট্ট চামচে করে গোশতের ঝোল দেয়া হয়।
জুমার আগেই গোটা গরু বিক্রি শেষ।