Monday, July 17, 2023

মুক্ত নারীর মুক্তি

দুইটা গাইনোসেন্ট্রিক মিথ বা ডিলুশন আমি বার বার ব্যবহৃত হতে দেখিঃ 

১। “মেয়েরা আগে অনেক অনেক দুঃখী ছিল, পুরুষতান্ত্রিকতার গ্যাঁড়াকলে থেকে এক্কেরে প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছিল। এখন নারীবাদিতা এসে মুক্তি দিয়েছে” 
 
শিক্ষার হার, ক্যারিয়ার, স্বাধীনতা - এরকম অনেক অবজেক্টিভ মেট্রিকেই মেয়েদের মেয়েরা আগের থেকে এগিয়ে আছে - যেগুলি উন্নত ও সুখী জীবনের মাপকাঠি ধরা হয়েছিল। তাহলে হাইপোথেটিকালি অবশ্যই মেয়েদের আগের থেকে ঢের সুখে থাকার কথা। কিন্তু দেখা গেল দিনকে দিন মেয়েদের ওয়েল বিয়িং কমছে। শুধু কমছেই না, বরং রিলেটিভলি পুরুষদের সাথে পাল্লা দিয়ে অনেক কমছে। 

বলে রাখি এটা কোন Fuwang কোম্পানির রিসার্চ না, আইভি লিগের Wharton বিজনেস স্কুলের রিসার্চ। বিভিন্ন ডেটাসেট ক্রস চেক করেও রেজাল্ট কনসিস্টেন্ট থেকেছে। 

এটা নিয়ে কারো দ্বিমত নাই যে ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজড দেশগুলিতে নারীরা পৃথিবীর বাকি সব যায়গা থেকে বেশী প্রিভিলেজড রাইট? ওখানে তো কাওকে চার দেয়ালের ভেতর আটকে রাখা হচ্ছে না। ওখানকার মাম্মি-পাপারা সব ফ্রেন্ডস; সাব কন্টিনেন্টের মতন না। স্বামী এসে জোর করে রান্না করাচ্ছে না, রাত বিরাতে বাসার বাইরে থাকলে কেউ প্রশ্ন করছে না। 

তবুও বিস্ময়কর ভাবে ‘সুখ’ কমে যাবার কারণটা ঠিক বোধগম্য নয়, তাই একে বলা হচ্ছে ‘প্যারাডক্স’। কেন ঠিক পুরুষতান্ত্রিক দাদুদের হাতেই দাদীরা সুখে ছিলেন? আমরা কারণটা জানি, কিন্তু বলব না। 

২। “যোগ্য ছেলেরা উচ্চ শিক্ষিত মেয়ে পছন্দ করে, দূর্বল ছেলেরা ভয় পায়”  

“আমার ৩৫ বছর বয়সে দুইটা পিএইচডি আর চারটা মাস্টার্স নিয়ে আমি সদ্য কলেজ পাশ করা সুন্দরীর থেকে বিয়ের বাজারে এগিয়ে থাকব”  

“আমার কনফিডেন্স দেখে সবার চোয়াল ড্রপ হবে, কারণ প্রিয়াংকা চোপকরশালা বলেছে……”  

এটা ঠিক যে মেয়েরা সব সময় হায়ারারকির উপরের দিকের, কনফিডেন্ট well-rounded ছেলে পছন্দ করে। কারণটা খুবই যৌক্তিক। একটা কনফিডেন্ট পুরুষলোক মানে সাহসী, হাই সার্ভাইবরশিপ আর প্রটেক্টরশিপের সাইন। 

দায়িত্ব কাধে নেয়া, আর স্ত্রীকে কঠিন কঠিন ডিসিশন মেকিংয়ের থেকে দায়মুক্ত করা- এটাইতো হওয়া উচিত পুরুষের বৈশিষ্ট্য। যেসব সয়বয়দের গ্রুম করে নিতে হয় এদের মেয়েরা চাবে কেন?  

এখন এই কারণে কিছু মেয়ে ভেবে থাকেন বিষয়টা হয়তো ভাইস-ভার্সা টাইপের। অর্থাৎ মাসকিউলিন ছেলেরাও হয়তো এমন পুরুষত্ব বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মেয়েই চায়, আফটারঅল নাটক সিনেমাতেও তো এগুলো দেখাচ্ছে তাই না? 

ব্যাপারটা এমন না। একটা ম্যাসকিউলিন ছেলে তার polar opposite চাবে। সারাদিন খাটুনি করে, অন্যান্য পুরুষদের সাথে কম্পিটিশন করার পরে এই feminine aura আমাদের লাইফের একটা ইম্পারেটিভ বিষয়। কোমলতা, কম্প্যাশন, একটু খানি ফিক করে হাসি- এগুলি আমাদের সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে দিতে পারে। 

তো এসব বৈশিষ্ট্য কোন ধরণের মেয়ের মধ্যে পাওয়া যাবে আপনার মনে হয়? যে মেয়ে আট-দশ ধরে বছর আরেকটা পুরুষের মতই ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করে জীবন যুদ্ধে কুস্তি করেছে সে? নাকি যেই মেয়ে তার জীবনের ইয়ং প্রাইম সময়টাতেই বিয়ে করে ফেলেছে?        

প্রচণ্ড ঘাত প্রতিঘাত পুরুষকে পুরুষ বানায়, তেমনি নারীকেও পুরুষই বানায়। আমার বিছানার পাশে আমার মতই একটা সালমান খান শুয়ে থাকবে এটা একটা হিউজ টার্ন অফ।   

ফোর্বস ৪০০ লিস্টের পুরুষদের নিয়ে একটা সমীক্ষা হয়েছিল। দেখা গেছে যে, এদের প্রথম ওয়াইফরা এদের থেকে অন এভারেজে ৭ বছরের ছোট। এদের বেশীর ভাগেরই একের বেশী বিয়ে হয়। আর পরের স্ত্রীরা গড়ে ২২ বছরের ছোট!  

[ফোর্বসের লোকেরা সব সময় স্ট্যান্ডার্ড না, কারণ এদের স্ত্রী বাদেও বহু সাইডচিক থাকে। উদাহরণটা এই কারণে দেয়া যাতে করে বোঝা যায় যে অপশনওয়ালা পুরুষদের প্রিফারেন্সটা কি। সব মেয়েদের সিচুয়েশন হয়তো এক না, কিছু বোনের সংগ্রাম করা ব্যতীত কোন উপায় থাকে না। এর জন্য সমাজের পুরুষত্বহীনতাও অনেকটা দায়ী]


- ওমর বিন মাহতাব 


বাই-সেক্সু-য়াল সমস্যার সমাধান

প্রশ্ন:
আমি এখনো বিয়ে করি নি, বয়স ২৫+ চলছে। আমার মনে হয় আমি বাই-সেক্সু-য়াল, মাঝে পুরুষ নারী উভয়ের জন্য আকর্ষণ কাজ করে। আগে প্রচুর পর্ন দেখতাম, এখন দীর্ঘদিন এসব না দেখলেও আমার উভয়লিংগের প্রতি এমন অনুভূতি হয়। এসব নিয়ে ব্যাক্তিগত জীবনে খুব মানসিক অশান্তিতে আছি। সামনে যদি বিয়ে করি, হয়ত এসব নিয়ে সমস্যায় পড়তে পারি।
কিভাবে এসব ফিলিং থেকে বের হয়ে আসতে পারি? রেগুলার ইসলাম পালন করলে মনে হয়, আমার নারী পুরুষ কারো প্রতি আকর্ষণ কাজ করে না। আর নিয়মিত পালন না করলে মনে হয়, আমার উভয়ের প্রতি তীব্র আকর্ষণ কাজ করে, ক্ষেত্রবিশেষে কারো প্রতি বেশি কাজ করে আবার কারো প্রতি বেশ কম কাজ করে।

উত্তর:
প্রথমত, বাইসেকসুয়ালিটির ধারণা মূলত একটি মানসিক ব্যাধি। পর্ণগ্রাফির আসক্তি ও অন্যায্যভাবে নারী-পুরুষের সাথে মেলামেশার কারণে এসব মানসিক রোগ তৈরী হয়। পর্নগ্রাফী ও অন্যায্য যৌনচিন্তা ও মেলামেশার কারণে এই ধরণের অনেক মানসিক রোগ হওয়ার ভুরিভুরি উদাহরণ আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে। সুতরাং এই অসুস্থতা থেকে বের হতে আসতে চাইলে সবার আগে অনুধাবন করতে হবে, এটি একটি রোগ। মানসিক রোগ। মানসিক রোগ মানে কেবল পাগলামি না; এর পরিধি অনেক বড় ও বিস্তৃত। সুতরাং প্রথমে আত্মস্থ করুন; এটি একটি মারাত্মক মানসিক অসুস্থতা বা রোগ।
দ্বিতীয়ত, এই রোগের চিকিৎসার সঠিক জায়গা খুঁজে বের করতে হবে। ইদানিং অনেকেই এসব মানসিক রোগীদের শ্রুশ্রুষা দেওয়ার লক্ষ্যে ক্যাম্পেইন ও পরামর্শসভার আয়োজন করে থাকেন।সঠিক চিকিৎসক ও ক্ষেত্র খুঁজে নিতে সেগুলোর দ্বারস্থ হতে পারেন। এক্ষেত্রে মুক্ত বাতাসের খোঁজে নামক ফেসবুক পেজটির সহায়তা নিতে পারেন।
তৃতীয়ত, সকল ধরণের বদঅভ্যাস ত্যাগ করুন। বিশেষত, পর্দাহীনতা, পর্নগ্রাফী দেখা ও আত্মীয় বন্ধুদের সাথে অন্যায্য চলাফেরা ত্যাগ করুন। একাকি থাকা পরিহার করুন; যথাসম্ভব। একা অন্ধকার রুমে শয়তানের আনাগোনা বেশী থাকে। চেষ্টা করুন গুনাহ পরিহার করতে।
চতুর্থত, বেশী বেশী জিকির করুন। দুরুদ পড়ুন। সকাল-সন্ধ্যা ছয় তাসবিহ আদায় করুন।
পঞ্চমত, বিয়ের সামর্থ থাকলে দ্রুত বিয়ে করে নেওয়ার চেষ্টা করুন। বিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সহায়তা করে।
এবং অতি অবশ্যই নিজের রোগ মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্য রোনাজারি করে নিয়মিত দুআ করুন। তিনি সবচেয়ে বড় শিফা দাতা।

উত্তর দিয়েছেন মুফতি নুরুজ্জামান নাহিদ হাফি.