Monday, May 6, 2013

আমার বন্ধু রিয়ান -শেষ পর্ব [Ghost Stories -26]


আমার বন্ধু রিয়ান -শেষ পর্ব


কি তবে অশরীরী কিছু একটা?? আর কিছু ভাবতে পারলাম না ঠান্ডার মধ্যে ভয়ে শরীর আরো ঠান্ডা হয়ে যেতে লাগলো। কোন মতে কাপতে কাপতে বাড়িতে ঢুকলাম। অনেকদিন পর বাড়িতে এসেছি;চাচা-ফুপু ও ভাইবোন গুলোর সাথে ঠিকমত কথা বলতে পারলাম না। সারাক্ষণ এক ধরনের অস্বস্তি লেগেই থাকলো। অনেক কষ্টে বাবাকে বুঝিয়ে পরদিন ঢাকার পথে রওনা হলাম। বিকালে ঢাকার বাসায় ঢুকলাম আমি একা। সারাদিন জার্নি করে এসেছি তাই বিকালে আর কোথাও গেলাম না। বাসায় শুয়ে বসে কাটিয়ে দিলাম। রিয়ানের আম্মাকেও ফোন দিলাম না কারণ জানি রিয়ানকে পাওয়া যায়নি। সন্ধার পর অস্বস্তি কাটাতে টিভি দেখতে বসলাম। এবার খুব তাড়াতাড়ি ঠান্ডা পড়ে গেছে ঢাকায়। বাসায় বসেই হাত পা জমে যাওয়ার যোগাড় হয়েছে। ফোন বাজতেই রিসিভ করলাম। পাড়াঁত বড়ভাই ফোন করেছে;আড্ডা দিতে ডাকলো. সারাবিকেল তো বাসায় বসে ছিলাম তাই কিছু না বলে আমিও বের হলাম বাসা থেকে। ফিরলাম একটু দেরি করেই। বাসায় একা, কিছুই তো করার নাই ; একটিভি দেখা ছাড়া। তার থেকে আড্ডা দেয়া ভালো ছিলো। মন ভালোই ছিলো এতক্ষণ,এখন আবার নিজেকে খুব একা মনে হলো। রিয়ানকে মিস করা শুরু করলাম। লক খুলে বাসায় ঢুকতেই মনে হলো আমি কোন চুলার মধ্যে ঢুকলাম। এত গরম কেন বাসার ভিতরে আর কি বাজে পোড়া গন্ধ!! ভাবলাম জানলাগুলো আটকানো আছে এজন্য হয়ত গরম হয়ে উঠেছে ভিতরটা। ভ্যাপসা গরমে মনে হলো সিদ্ধ হয়ে যাবো।আমার রুমে ঢুকে লাইট জ্বালাতেই ভূত দেখার মত চমকে উঠলাম!! আমার বিছানায় রিয়ান বসে আছে। পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি ওর মুখে গলায় কেমন কালো কালো দাগ। মায়াভরা চোখ দিয়ে তাকিয়ে আছে ও আমার দিকে। বোবার মত নাকি সম্মোহিতের মত আমিও তাকিয়ে আছি ওর দিকে,ঠিক বুঝতে পারছি না। এত গরমের মাঝেও শীতল স্রোত অনূভব করলাম মেরুদন্ডে। জানি না হয়ত আমার মনের কথা বুঝতে পেরেই রিয়ান বলে উঠলো আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করিস না স্বাধীন। শুধু চল আমার সাথে। প্লিজ চল। রিয়ান যেহেতু বলছে আমি অবশ্যই যাবো ওর সাথে কিন্তু এখন রাত মোটামুটি ১টা বাজে; এত রাতে ও আমাকে কোথায় নিয়ে যেতে চায়। বেশ খটকা লাগলো আমার। এবারও আমার মনের কথা বুঝতে পেরেই রিয়ান বলে উঠলো আমি সময়মত সব বলবো তোকে,এখন চল আমার সাথে। আমার হাতে বেশি সময় নেই। না বলার মত শক্তি ছিলো না আমার গায়ে। মনে হচ্ছিলো কেউ স্ট্র দিয়ে বোতল থেকে পেপসি খাওয়ার মত আমার শরীর থেকে সব শক্তি শুষে নিয়েছে। চুপচাপ রাস্তায় বেড়িয়ে পড়লাম রিয়ানের সাথে। রিয়ান আমার সামনে হাটছে আর আমি পিছনে। কেমন আজব এক ধরনের অনূভুতি কাজ করছিলো আমার ভিতরে। খুব বেশিক্ষণ না,আমার অনুমান মত প্রায় ১০ মিনিট হাটার পর খেয়াল করলাম আশে পাশে কোন বাড়ি-ঘর নেই,রাস্তার লাইট পোস্টের বাতিগুলোও জ্বলছে না। যতদূর চোখ যায় শুধু মাঠ আর মাঠ। খেয়াল করিনি কখন রিয়ান আমার পাশে চলে এসেছেএখন ও আমার সাথে সাথেই হাটছে, প্রায় নিঃশব্দে। নিরবতা ভেংগে অন্ধকারের মাঝে একসময় রিয়ানের গলা শুনতে পেলাম। খুব আস্তে,সময় নিয়ে নিয়ে রিয়ান বলতে শুরু করলো রাত জেগে রাস্তায় রাস্তায় হাটা আমার স্বভাব। প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গিয়েছিলো আমার সেটা। তুই সবই জানিস।

সেদিন রাতেও বেরিয়েছি হাটতে। রাতের সুনসান নিরবতা আর অবিরত অন্ধকারের মাঝে নিজেকে খুজতে শুরু করেছি মাত্র,এই তো এই রাস্তাতেই। তোর সাথে কথা বলছিলাম তখন সাঁ করে একটা জিপ আমার পাশ দিয়ে কিছুদূর গিয়ে থামলো। এত রাতে একটা জিপকে এই নির্জন রাস্তায় থামতে দেখে আমার ভারী অবাক লাগলো। ফোনটা কেটে দিয়ে এগিয়ে গেলাম ঘটনা কি দেখতে। ততক্ষণে কতগুলো লোক জিপ থেকে একটা মেয়েকে নিয়ে নামলো। মেয়েটার কান্না শোনা যাচ্ছিলো থেকে থেকে। ঘটনা কি ঘটতে চলেছে বুঝতে পারলাম। মাথায় একটা
চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিলো কিভাবে মেয়েটাকে বাচানো যায়।

হঠাৎ একটা ছেলে কোথ্থেকে উদয় হয়ে এগিয়ে গেলো জিপটার দিকে। ততক্ষণে লোকগুলো মেয়েটিকে নগ্ন করে ফেলেছে। ছেলেটিকে দেখে লোকগুলো থেমে গেলো এবং তাদের মধ্যে থেকে একজন এসে ছেলেটিকে চলে যেতে বললো।

ছেলেটি মেয়েটিকে ওই পশুদের অত্যাচার হতে বাঁচাতে চাইলো, সে ওদের বাধা দেবার জন্য এগিয়ে গেল। কিন্তু একা ছেলেটির পক্ষে এতগুলো লোককে সামলানো সম্ভব ছিলো না, ফলে মার খেতে খেতে দূর্বল হয়ে পড়লো ছেলেটি। লোকগুলো ছেলেটি কে উঠিয়ে নিয়ে চললো ঔ ইটভাটাটির দিকে হাত উচিয়ে দিক নির্দেশ করলো আমাকে রিয়ান। ওর কথা মন দিয়ে শুনছিলাম। আশে পাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার আর নেই। আবছা আলো আধারিতে আশে পাশের মাঠ দেখা যাচ্ছে অস্পষ্টভাবে। রিয়ানের নির্দেশ করা দিকে তাকাতেই দেখলাম কিছু একটা রয়েছে সেখানে উচু মত; হ্য়ত ইটভাটাই। রিয়ান আবার বলতে শুরু করলো ইটভাটা টা পুরানো এবং ভাংগা। এখানে এখন আর ইট পোড়াঁনো হয় না। তবুও ভিতরে পোড়াঁর মত কিছু কাঠ ছিলো। লোকগুলো ছেলেটিকে ইটভাটার মধ্যে ফেলে জ্যান্তই আগুন ধরিয়ে দিলো। সারা শরীরে উত্তাপ অনূভব করে ছেলেটি, কিন্তু নড়াচড়ার শক্তি না থাকায় কিছুই করতে পারলো না। অনেক গরম আর অনেক ব্যাথা। ধীরে ধীরে নিস্তেজ হতে থাকে ছেলেটি, গায়ে অসহ্য ব্যাথা নিয়ে। একসময় পুরোপুরি নিস্তেজ হয়ে যায়। আগুনও নিভে যায় আস্তে আস্তে। পুরোপুরি না জ্বললেও শরীরের সিংহভাগই চলে যায় তার আগুনের দখলে। দগ্ধ লাশটি ওখানেই পড়ে থাকে, কেউ খুজতে আসে না ছেলেটাকে!!

রিয়ান থেমে যায়।

বলবো বলবো করে বলেই ফেলি আমি ছেলেটা এভাবে তোর চোখের সামনে মারা গেলো, তুই কেন বাচাতে পারলি না ছেলেটাকে?? রিয়ান কিছু না বলে হাটতে শুরু করে ইটভাটা-টির দিকে।

আমি ডাকি পিছন থেকে ওকে।

রিয়ান তবুও থামে না। হেটেই চলে। গরমে ঘেমে আমি মোটামুটি গোছল করে ফেলেছি। আমি আবারও ডাকি রিয়ান দাড়া। কোথায় যাচ্ছিস? এবার রিয়ান কথা বলে উঠে আমার সময় শেষ স্বাধীন। ওখানেই ফিরে যেতে হবে আমাকে। আমার শরীরটা যে ওখানেই পড়ে আছে সেই কবে থেকে!!! কেউ খুজতে আসে না!!!

আমার চোখের সামনেই রিয়ান ইটভাটার ভিতরে অদৃশ্য হয়ে যায়। ভোররাত্রির নিরবতা ছাপিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে আমি না! ঐ ছেলেটা তুই কিছুতেই হতে পারিস না রিয়ান!!

ঠান্ডার মধ্যে শরীর আরো ঠান্ডা হয়ে উঠে এবার!!


সমাপ্ত

ঘটনাটি জানিয়েছেনঃ রোদেঁশী

আমার বন্ধু রিয়ান-পর্ব-১ [Ghost Stories -25]


আমার বন্ধু রিয়ান-পর্ব-১


রিয়ানকে দুদিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে না। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য এই প্রথম রিয়ান আমাকে না জানিয়ে কোথায় যে ডুব মেরেছে বুঝতে পারছি না। সেবার বাড়ি থেকে পালিয়ে ও যে বান্দরবান গিয়েছিলো তা একমাত্র আমিই জানতাম। আমাদের ক্লাসমেট শান্তা আর সজীবের রিলেশনের ব্যাপারটা ওদের বাসায় জানিয়ে একটা ঝামেলার সৃষ্টি করেছিলো রিয়ান,সেটাও একমাত্র আমিই জানতাম। আর সেই রিয়ান দুদিন ধরে কাউকে কিছু না জানিয়ে কোথায় যে গেছে আল্লাহ মালুম। রাগ লাগছে আমার আবার সাথে সাথে দুশ্চিন্তাও হচ্ছে ওর জন্য। কোন ঝামেলায় পড়ে নাই তো ও। আর যদি কোথাও যেয়েই থাকে তাহলে আমাকে বললো না কেন?

কি এমন জরুরী কাজ পড়লো ?? মাঝে মাঝেই রিয়ান এমন হাওয়া হয়ে যায় তাই ওর বাবা মা তেমন দুশ্চিন্তা করছেন না ; কিন্তু আমার কেন জানি মনে হচ্ছে কোথাও কোন বড় অঘটন ঘটেছে। ওকে মোবাইলেও পাওয়া যাচ্ছে না। কোন পজেটিভ নিউজ পাবো না জেনেও রিয়ানের আম্মাকে ফোন করলাম।

-অ্যান্টি রিয়ানের কোন খোজ পেলেন?

-না বাবা। জানোই তো ও বরাবরই এমন করে। দেখো ঠিকই ৪-৫দিন পর এসে হাজির হবে।

-জ্বি অ্যান্টি,তাই হবে হ্য়ত। ঠিক আছে রাখি।

অ্যান্টিকে বলতেও পারলাম না যে অন্যবারের মত নিশ্চিত মনে বসে থাকতে পারছি না আমি। কারণ এবার যে রিয়ান আমাকেই কিছু বলে যায় নাই। রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি শেষ কখন,কি কথা বললাম রিয়ানের সাথে। হ্যা মনে পড়েছে,রিয়ান সেদিন রাতে রাস্তা দিয়ে হাটছিলো যথারীতি অন্যান্য দিনের মত। রাতে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরা ওর শখ। হাটতে হাটতে আমাকে ফোন করেছিলো,কথা বলছিলাম দুজন।

হঠাৎ রিয়ান পরে ফোন দিচ্ছি বলেই কলটা কেটে দিলো। ব্যস এইটুকুই। তারপর থেকেই ওকে ফোনে আর পাওয়া যাচ্ছে না। ধ্যাত কারেন্ট চলে গেলো। মোমবাতি জ্বালিয়ে ড্রইংরুমে এসে বসলাম। আব্বা আম্মা গেছেন ছোটমামার বাসায়। কখন আসবেন ঠিক নেই। ওহ এত গরম লাগছে কেন আমার। এখন তো শীতকাল!! যদিও শীতের মাত্রাটা কম,কিন্তু গরম লাগার কথা না।ভাপসা গরমের সাথে পোড়া পোড়া গন্ধও পাচ্ছি। মনে হচ্ছে বাথটাবে বসে থাকি। দরজায় নক করার আওয়াজে চিন্তায় ছেদ ঘটলো। কিন্তু কলিং বেল না বাজিয়ে দরজায় নক করছে কোন বেকুব। একটু বিরক্তি নিয়েই দরজা খুললাম। রিয়ান দাড়িয়ে বাইরে!! কোন কথা না শুনে গালাগাল শুরু করলাম ওকে। কোথায় ছিলি? আর কাউকে নাহোক আমাকে তো বলে যেতে পারতি। কারো কেয়ার তো তুই কখোনোই করিস নাই,ভাবতাম আমার জন্য একটু হলেও দরদ আছে তোর। কিন্তু না,আমাকেও অপ্রয়োজনীয় মনে করিস তুই। এখন আর চুপ করে দাড়িয়ে না থেকে ভিতরে এসে বোস। বলে আমিই আগে ঘরে ঢুকলাম। সোফায় বসতে যেয়ে দেখলাম রিয়ান ঘরে ঢোকেনি। দরজায় তাকিয়ে দেখলাম সেখানে কেউ নাই। আরে একটু আগেও তো রিয়ান ছিলো এখানে। ভীষণ রাগ লাগলো আমার। রিয়ান কি শুরু করেছে এসব। দরজা খুলে রেখেছিস কেন? ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বাবা বললেন।না মানে…” বলতে যেয়েও চেপে গেলাম। বাবা মা পছন্দ করেন না,আমি রিয়ানের সাথে মিশি। কারন রিয়ান আগে ড্রাগ এডিক্ট ছিলো কিন্তু এখন ও পুরাপুরি সুস্থ, কিন্তু সেকথা বাবা মাকে কে বোঝাবে? চুপচাপ নিজের ঘরে চলে আসলাম। তাহলে কি বাবা মা কে দেখেই রিয়ান চলে গেল। বাবা মা থাকলে ও বাসায় আসে না।ও জানে বাবা মা চান না আমি ওর সাথে মিশি। রাগ কিছুটা কমে গেল আমার। কিন্তু রিয়ান এত চুপচাপ ছিলো কেন? ৫ মিনিট ধরে আমি এতগুলো কথা বললাম্, ও না উত্তর দিলো না নিজে থেকে কিছু বললো। তবুও আশ্বস্ত হলাম এটা চিন্তা করে ও ফিরে তো এসেছে। খুশী হলাম অনেক্,রিয়ান কে ছাড়া আমিও যে অচল। রাতের খাবার খেয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়লাম। অনেক সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। নাস্তা খেয়ে ভার্সিটিতে যাবো বলে ফোন দিলাম রিয়ানকে। ফোন বন্ধ। ফাজিলটা নিশ্চই ফোনে চার্জ দেয়নি। আন্টির মোবাইলে ফোন করলাম। আমি হ্যালো বলতেই আন্টি বললেনঃ কি বাবা রিয়ানের কোন খোজঁ পেলে?

আন্টির কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লাম। রিয়ান কি তবে বাসায় যায়নি? কিছু না বলেই ফোন রেখে দিলাম। রিয়ান কি শুরু করেছে এগুলো? কাল রাতে দেখা হলো আমার সাথে ,এখন আবার লাপাত্ত্বা। এই ছেলের কপালে যে কি আছে আল্লাহ জানে। এতই বেশি রাগ লাগছে আমার যে মনে হচ্ছে রিয়ানের সাথে যোগাযোগ করাই বন্ধ করে দেই। আর ওকে ফোন দিবো না ডিসাইড করলাম। একাই রওনা দিলাম ভার্সিটির দিকে। সন্ধায় বাসায় ফিরে শুনলাম বাবা দেশের বাড়িতে যাবেন বলে ঠিক করছেন। আমরাও যাবো সাথে,৫ দিন পর ঢাকায় ফিরবো। আমার ঢাকার বাইরে যেতে ভালো লাগে না কিন্তু বাবার উপর কথা বলার সাহস আমার নেই। পরদিন অনেক সকালে আমরা রওনা হলাম বাগেরহাটের পথে। পৌছালাম বিকাল ৩টায়। খানিকক্ষণ বিশ্রাম নিয়েই ঘুরতে বের হলাম। ছোট্ট একটি মফস্বল শহর বাগেরহাট কিন্তু খুব সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো। রাস্তা ঘাট চিনি না কিন্তু তবুও হাটতেই থাকলাম। দড়াটানা নদীর তীরে যেতেই এক অদ্ভুত ভালোলাগায় মন ভরে গেলো। চুপচাপ এক গাছের নিচে বসেই সারাবিকেল পার করে দিলাম। শেষ বিকেলের লালচে কালো আভাটুকুও মিলিয়ে গেলো নদীতে তবুও বসে রইলাম মনোমুগ্ধের মত। ঠান্ডা বাতাসে গায়ে রীতিমত কাঁপন ধরে গেলো।সকাল থেকে এত ব্যস্ত ছিলাম যে রিয়ানের ব্যাপারটা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম। এখন মনে পড়ে গেল। নতুন করে ভাবনাগুলো এসে একসাথে ঘিরে ধরলো আমায়। খুব খারাপ লাগতে শুরু করলো আমার;অনেক কষ্টে কান্না থামিয়ে উঠে দাড়ালাম। ওহ! হঠাৎ করে এত গরম লাগছে কেন? এত গরমে মানুষ জামা কাপড় পড়ে থাকে কিভাবে;আমি আবার পড়েছি ফুল স্লীভ টি-শার্ট। মনে হলো একটানে শার্ট খুলে ফেলি।চুপচাপ হাটতে থাকলাম।একটু সামনে হেটে আসতেই মনে হলো দূরে কেউ গাছের নিচে কেউ বসে আছে। যে কেউ বসে থাকতে পারে, সেটাই স্বাভাবিক কিন্তু আমার কেন জানি ভীষন অস্বস্তি লাগতে লাগলো।কারণ যে বসে আছে তার বসার গড়ন আমার খুব পরিচিত,তার চুলগুলোও লম্বা; ঠিক যেন রিয়ানের মত। ওটা রিয়ান না তো ?? মনে হলো সেও আমাকে দেখছে। হাটতে হাটতে ছেলেটির কাছে চলে আসলাম আমি। যা ভেবেছি ঠিক তাই।রিয়ানই!! কিন্তু ও এখানে কি করছে? আমি বেশ রাগান্বিত হয়েই ডাকলাম রিয়ান! রিয়ান খুব আস্তে,খুবই আস্তে উচ্চারণ করলো স্বাধীন আমাকে সাহায্য কর আমি অবাক হয়ে গেলাম ওর গলার স্বর শুনে। রিয়ানের ভয়েজ তো এমন কখনোই ছিলো না।এতই আস্তে এবং ফ্যাসফ্যাসে গলা যে ও কি বললো তা বুঝতে আমার কিছুটা সময় লাগলো।কি বলবো ঐ মূহর্তে ভেবে পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ আমার কাঁধে হাত রাখলো। ফিরে দেখি একটা লোক। আমাকে তাকাতে দেখে জিজ্ঞেস করলো ভাই কি শহরে নতুন? না,আমার দাদাবাড়ি এখানে। কিন্তু আমরা ঢাকায় থাকি তাইলে ভাইজান একটা কথা কই,এই জায়গা খুব একটা সুবিধার না। বাড়িত যান,এইখানে খাড়াবার দরকার কি ? শীতের রাইত, লোকজন কম,কি হয় কওয়া যায় না।

এটুকু লোকটা হাটা শুরু করলো। রিয়ানের দিকে ঘুরতেই দেখি ও নেই। নদীর পাড়ে যতটুকু চোখ যায় দেখি শুধু লোকটি হেটে যাচ্ছে আর আমি দাড়িয়ে আছি।হাওয়ার মিলিয়ে যাওয়ার মত এত তাড়াতাড়ি রিয়ান গেলো কোথায় ?? একটু একটু ভয় লাগলো আমার। একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম রিয়ান আমাকে কিছু বলতে চায়;বলার জন্যই আসে আমার কাছে কিন্তু সামনে থাকলে চলে যায়।রিয়ান জানলোই বা কিভাবে আমি এখন বাগেরহাটে।আগে তো ও কখনো আসে নাই এদিকে!!ও জানতো আমার দাদাবাড়ি বাগেরহাটে,কিন্তু ঠিক এখানে আসলেই যে আমাকে এখন পাওয়া যাবে তা তো রিয়ানের জানার কথা না!! খাপে খাপ মিলাতে পারলাম না আমি। মাথা ঘুরতে লাগলো;বাড়ির দিকে রওনা হলাম আমি।এত ঠান্ডা লাগছে যে গরম কাপড় পড়ে বের হলাম না কেন ভাবছি। একটা কথা খেয়াল করা মাত্রই আমার গাঁ শিরশির করে উঠলো। ঢাকায় আমার বাসায় যেদিন রিয়ান এসেছিলো ঔদিন ঠান্ডার মাঝেও অস্বাভাবিক গরম লেগেছিলো আমার এবং আজও লাগলো। রিয়ান চলে যাবার পর আবার ঠান্ডা লাগা শুরু করলো!!এমন কেন হলো? রিয়ান কি তবে অশরীরী কিছু একটা??আর কিছু ভাবতে পারলাম না ঠান্ডার মধ্যে ভয়ে শরীর আরো ঠান্ডা হয়ে যেতে লাগলো।


১ম পর্ব সমাপ্ত

ঘটনাটি জানিয়েছেনঃ রোদেঁশী

**শবসাধকের কাল্ট – শেষ পর্ব** [Ghost Horror Stories -24]


**শবসাধকের কাল্ট শেষ পর্ব**


রুমে ফিরে দেখি মুখতার বাজার করে ফিরে এসেছে।আজ গরুর গোশত এনেছে দু কেজি। ইশতিয়াক থাকবে ভেবেছিল। আমাদের চা দিয়ে বাজারে গেল মুখতার। ইশতিয়াক চা খেতে খেতেই আদিত্যর ফোন পেল। ওরা আজ রাতে বান্দরবান যাচ্ছে। আদিত্য আরেক ছন্নছাড়া।ওর ফোন পেয়েই ব্যাগ গুছিয়ে নিল ইশতিয়াক। ভাঙতি টাকা ফেরত দিয়ে মুখতার বলল, আপনার বন্ধু স্যারে চইলা গেছেন সার? বললাম, হ্যাঁ। আপনি এখন চা খাইবেন ছার? না। এখন চা খাব না। আমি গফুর আসকারী বাড়িতে চা খেয়েছি সে টা আর মুখতারকে বললাম না। থাক তাইলে । বেহুদাই মাংস নষ্ট হইল। আপনার বন্ধু স্যারে চইলা গেলেন। ওহো। তুমি তো আবার মাছ-মাংস খাও না। না সার খাই না। তাহলে কিছু মাংস বাসায় নিয়ে যেও।

তাইলে কাঁচা মাংসই দিয়েন। কথাটা শুনে আমার ভ্রুঁ কুঁচকে গেল। কেন কাঁচা মাংস কেন? রান্না করা গোশতই নিয়ে যাও। বউবাচ্চাকে দিও। মুখতার উত্তর দিল না। মাথা নীচু করে রইল। আমি মজা করে বললাম,কি মুখতার? তুমি কি কাঁচা মাংস খাও-টাও নাকি? খাই ছার। মাঝে মইধ্যে। মৃদু চমকে উঠলাম। 
বল কি! তুমি কাঁচা মাংস খাও। কেন?

আমার চোখ ছাড়াবড়া হয়ে যাওয়ার কথা। মুখতার ফিসফিস করে বলল, আমি পাগল মানুষ ছার। পাগল? কে বলল। কেউ বলে না। আমি বলি ছার। আমার বউ মরল। আমি পাগল হইয়া গেলাম। ওহ্ হো। তোমার বউ মারা গেছে? জি ছার। আমার বউ মারা গেছে। তারপর থেকে আমি পাগল। খানিকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কীভাবে বুঝলে যে তুমি পাগল? তোমাকে তো আমার ঠিক পাগল মনে হয় না। বাজারের হিসেব ঠিকমতো দাও, তরকারীতে কোনওদিন ঝাল বেশি কিংবা লবন কম হয়নি? তাহলে? মুখতার ন্যাড়া মাথা চুলকে বলল, আপনি আমারে মায়া করেন স্যার। এই জইন্যে আমি যে পাগল সেইডা আপনি বুঝবার পারেন না। এই কথা বলে সে চলে গেল। আমি বেশ কনফিউসড হয়ে গেলাম।

দুপুরের পর একবার হাসপাতালে যেতে হল। জিন্নাত আলী আউটডোরে বসে আছে দেখলাম। মাথায় ব্যান্ডেজ। পাশে একজন নার্স। কাছে গিয়ে বললাম, কি হয়েছে? জিন্নাত আলী কাঁদো কাঁদো গলায়বলল, ইটা দিয়া মুখতারে আমার মাথা ফাটাইয়া দিছে ছার। কে মাথা ফাটিয়েছে বললে? নার্স বলল, মুখতার স্যার,আপনার পিয়ন স্যার। ওহ্। অবাক হলাম। তবে আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। কোয়াটারে ফিরতে ফিরতে রাত দশটা বাজল। সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতে উঠতে মনে হল জিন্নাত আলীর মেয়ে মুমতাজ আপ্লাসস্টিক অ্যানেমিয়ায়ভুগত। বাংলায় এই অসুখটাকে বলে অবর্ধক রক্তশূন্যতা। অস্থিমজ্জার কোষ যথেষ্ট পরিমানে নতুন রক্তকোষ উৎপাদন করতে পারে না। আবদুর রহমান- এর শরীরেও ওই একই লক্ষণ দেখেছি রুমে ফিরে হাতমুখ ধুয়ে নিয়ে খেতে বসলাম। মুখতার ভাত বেড়ে রেখেছে । আজও তার চোখ দুটি লাল দেখলাম। রাতে মুখতার- এর চোখ দুটি লাল থাকে । নেশাটেশা করে মনে হল। কোন দিন জিজ্ঞেস করিনি। অবশ্য এখন জিজ্ঞেস করলাম, তুমি আজ জিন্নাত আলীর মাথা ফাটিয়েছ শুনলাম? টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল মুখতার। বলল হ ছার। মুখতার ঝালঝাল করে গরুর গোশত রান্না করেছে । ভাত মাখতে মাখতে জিজ্ঞেস করলাম, কেন? লোকটা ভালা না ছার। কেন ভালা না? জিন্নাত আলীয়ে তাবিজ-কবচ করে। বাণটোনা করে। লোকটা পিশাচ। আমি অবাক হয়ে তাকালাম। বললাম তাবিজ কবচ করে মানে? জিন্নাত আলী গুণীণ নাকি? ,হে গুণীণ। তয় বদ গুনীণ। বুঝাম গুণীণ। তাই বলে লোকটা পিশাচ হতে যাবে কেন? গ্রামেগঞ্চে অনেক ওঝা-গুণীণ আছে। হ। আছে। তারা কি সকলে বদ? না। তাহলে তার মাথা ফাটালে কেন? জিন্নাত আলী কেস করবে না? হুহ্ । কেছ করব। হালারপুতের সেই সাহস আছে নি। পাবলিকরে সব বইলা দিমু না। কি বলে দেবে? আমি ছোট প্লেট থেকে লেবু তুলে রস বার করছিলাম। আমার হাত থেমে গেল।

মুখতার চুপ করে থাকে। একটু পর ফিসফিস করে বলে, জিন্নাত আলী আমার শ্বশুর লাগে। কী! জিন্নাত আলী তোমার শ্বশুর? আমার গলায় ভাত আটকে যাচ্ছিল। হ। তার মাইয়া মুমতাজে আমার বউ। বউ? সেকি! তুমি না আজ বললে তোমার বউ মারা গেছে। মুখতার এর মুখটি বেদনাতুর হয়ে উঠল। করুন কন্ঠে বলল, বউয়ে একলগে না থাকলে তো মারা যাওনের কেছ ছার। হুমম। বেশ কনফিউসড হয়ে গেলাম। এই লোকটা আমাকে বারবার কনফিউসড করে দিচ্ছে। বললাম, তা তোমার বউ একসঙ্গে থাকে না কেন? জিন্নাত আলী আমার বউরে লইয়া যায়। নিয়ে যায় কেন? এই কথা বলা যাবে না। মুখতার আর মুখ খুলল না। তবে বেশ কিছু ক্লু পেলাম।আমার মস্তিস্ক সেসব জোড়া লাগিয়ে ফেলল। জিন্নাত আলী গুপ্ত কোনও তন্ত্রমন্ত্রের সাধনা করে। মুমতাজের তাতে ভূমিকা আছে। আর সেটা মুখতার জানে, কিন্ত পছন্দ না। ব্যাপারটা নিয়ে কালই একবার গফুর আসকারী সাহেব- এর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। ভদ্রলোক তন্ত্রসাধনা নিয়ে অনেক কিছু জানেন। তবে আজ গফুর আসকারী সাহেবের বাসায় পচা গন্ধ পাচ্ছিলাম। আবদুর রহমানও পালিয়ে চলে গেছে বললেন । তার এই পালিয়ে যাওয়ার কারণ কি? রহস্য ঘনীভূত হয়ে উঠছে ঠিকই । কিন্তু সন্দেহ কাকে করব ঠিক বুঝতে পারছি না। মুখতার চলে গেল। আমি সিগারেট ধরালাম। তারপর আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম। আজও ঘুম আসবে কিনা জানি না। ইনসমনিয়ার রোগীদের অষুধ দিই ঠিকই তবে আমি নিজে ইনসমনিয়ার অষুধ খাই না। ঘুমের জন্য বরং মেডিটেশন করি। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অভ লথ-এর এক গবেষণায় জানা গেছে অনিদ্রা দূর করতে মেডিটেশন একটি কার্যকরী পদক্ষেপ। তা ছাড়া আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন ফর ইনসমেনিয়া অনিদ্রা দূর করার ক্ষেত্রে যে মেথড সাজেস্ট করে তার মূলই হচ্ছে মেডিটেশন। সিগারেট অ্যাশট্রেতে গুঁজে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লাম। তারপর পায়ের পাতায় কনসেনট্রেট করলাম। ধীরে ধীরে মনোযোগ উঠিয়ে নিয়ে আসব বুড়ো আঙুলের ডগায়।
তারপর পায়ের আঙুলের গোড়ায়  
     টের পেলাম জানালায় ঝিরঝির বৃষ্টি
               ভেজা হাওয়া ঢুকছিল ঘরে .. আজ ঘুম আসবে কি?
   নীচে কুকুর ডাকছে।
শরীরে গভীর অবসাদ টের পাচ্ছি  
 দূরে ঝমঝম ঝমঝম ট্রেনের শব্দ মিলিয়ে যাচ্ছে। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কিনা মনে নেই।

সচেতন হওয়ার পর মনে হল আবছা আলোয় গফুর আসকারীর বাগান দেখলাম মনে হল। বাগানে সাদা কাপড় পরা কয়েজন লম্বা লম্বা লোক। স্বপ্ন দেখছিলাম? বাগানে পচাগন্ধও পেলাম।(স্বপ্নে কি পচা গন্ধ পাওয়া সম্ভব?) ঘরে অন্ধকার। আর সেই বৃষ্টির ঝিরঝির শব্দটা নেই। এখন কটা বাজে? ঠিক বুঝতে পারলাম না। এলজিটা বালিশের পাশে । ওটা তুলে দেখলাম ৩টা বেজে ১১ মিনিট। ঘন্টা কয়েক ঘুমিয়েছি তাহলে? অন্ধকারেই একটা সিগারেট ধরালাম। আজ রাতে আর ঘুম আসবে না। উঠে বসলাম। জানালায় জ্যোস্নার ফুটফুটে আলো। তার মানে আকাশে মেঘ-টেঘ নেই। এমন সব জ্যোস্নার রাতে দূরের নির্জন ঘুমন্ত চরাচর দেখতে দেখতে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। জানালার পাশে এসে দাঁড়ালাম। নীচে তাকিয়ে দেখি মর্গের সামনের চাতালে কারা যেন আমার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠল। ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম জিন্নাত আলী, তার মেয়ে মুমতাজ আর গফুর আসকারী হাতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। মুহূর্তেই আমার মাথার ভিতরে কুয়াশা ছড়িয়ে যায়। শরীর অবশ ঠেকল। ঘাড়ের পিছন দিক ঠান্ডা হয়ে উঠতে থাকে। মর্গের দরজাটা খোলা। দু-জন লোক ধরাধরি করে একটি শব মর্গ থেকে বের করে আনল। তারপর শবটা চাতালের ওপর শুইয়ে দিয়ে সিদে হয়ে দাঁড়াল।

মুখতার ও আবদুর রহমান কে চিনতে পারলাম। আবদুর রহমান তাহলে পালিয়ে যায়নি? গফুর আসকারী আমাকে মিথ্যে বলেছেন। কেন? তাহলে কি গফুর আসকারী গোপন কাল্টএর সদস্য? কাল্টটি শবসাধনা করে? জন্নাত আলী অদ্ভূত আসনে বসল শবের মাথার কাছে। সেই কি কাল্ট-গুরু? গফুর আসকারী শবের ওপর ঝুঁকে পড়েছে। বৃদ্ধকে আজ কাল অনেক রাতে মর্গের দরজা খুলে একটা লোক বেরিয়ে আসার কথা বললাম। তিনি কি জানেন আমি তাদের দেখছি?

তারপরও মর্গে এসেছেন? তাদের এত আত্মবিশ্বাসের উৎস কী। ওই মর্গ কি ওই শবসাধক-কাল্টের পবিত্র বেদি? হঠাৎ চমকে উঠে জ্যোস্নার অলোয় দেখি আরও অনেক মানুষ গাছপালা ভেদ করে ধীরে ধীরে জড়ে হচ্ছে মর্গের সামনের চাতালে। এদের অনেককেই আমি চিনি আমি চিনতে পারলাম। এরা এই শহরেরই বাশিন্দা। এদের অনেকের ট্রিটমেন্টও করেছি। প্রত্যেকেই কমবেশি অ্যানেমিয়ার রুগী। ঘরের বাতাসে পচা মাংসের গন্ধ পাচ্ছি। আমার হাত থেকে সিগারেট খসে পড়ল। টের পাচ্ছি আমার হার্টবিট ভীষণ বেড়ে যাচ্ছিল। দ্রুত ভাবছি এই শহর থেকে আমার এখুনি পালিয়ে যেতে কত সময় লাগবে?

সমাপ্ত

গল্প: ইমন জুবায়ের

*শবসাধকের কাল্ট – ১ম পর্ব* [Ghost Stories-horror-23]


*শবসাধকের কাল্ট ১ম পর্ব*


জ্যোস্নার আবছা আলোয় দেখলাম মর্গের দরজা খুলে একটা লোক (নাকি শব?) বেরিয়ে এল। আশ্চর্য! কে লোকটা? এতরাতে কি করছিল মর্গে?এখন প্রায় শেষরাত। জানলার পাশে এসে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিলাম। অনেক দূরে কুকুর ডাকছিল। হঠাৎ মর্গের দিকে চোখ যেতেই চমকে উঠলাম। ভালো করে লোকটাকে দেখাও গেল না। চোখের পলকে অদৃশ্য হয়ে গেল কলাঝোপের আড়ালে। চোখের ভুল? লাশকাটা ঘরটা অবশ্য বেশ দূরে।

চারতলা সরকারি কোয়ার্টারের জানালার পাশ থেকে দেখছি। রাতজাগার ফলে হয়তো আমি চোখে কিছুটা ঝাপসা দেখছি। বছর খানেক ধরে ইনসমনিয়ায় ভুগছি। রাতে ভালো ঘুমও হয় না। বই পড়ে,মুভি দেখে,ঘরে পায়চারী করে কিংবা জানালার কাছে দাঁড়িয়ে থেকে, সিগারেট টেনে রাত কাটে। আবছা অন্ধকারে টেবিলের কাছে এলাম। এলজিটা তুলে দেখলাম: দুটো বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিট। ইশতিয়াক বিছানার ওপর হাত পা ছড়িয়ে ভোঁস ভোঁস করে ঘুমাচ্ছে। ঘরে বেনসনের গন্ধ ভাসছিল। শালা চেইন স্মোকার। আজই ঢাকা থেকে এসেছে। কালই চলে যাবে। ইশতিয়াক আমার ছেলেবেলার বন্ধু। চারুকলা থেকে পাস করেছে। খুবই আমুদে আর অস্থির। চাকরি- বাকরিতে মন বসে না। এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ায়। মুভি পাগল। আমার জন্য ৬/৭টা ডিভিডি এনেছে। আজ রাত জেগে ল্যাপটপে একটা মুভি দেখছিলাম। নেকক্রোমানটি। পুরনো দিনের জার্মান হরর ছবি। শসম্ভোগ বা নেক্রোফিলিয়ার ব্যাপারটার জন্য ছবিটা বিতর্কিত। যদিওকাল্ট ফিলিম- এর মর্যাদা পেয়েছে নেকক্রোমানটি। আমি নির্জনতাপ্রিয় মুখচোরা মানুষ। ডাক্তারি করি জেলা সদরে সরকারি হাসপাতালে। নির্জন এই শহরটাও আমার বেশ ভালো লেগে। বড়োখেবড়ো হলেও ছিমছাম নির্জন পথঘাট। ঘুমন্ত দোকানপাট, ঘরবাড়ি। লাল রঙের নিঝঝুম রেলস্টেশন। শীতল সর্পিল রেললাইন। হলুদ-হলুদ সরকারি কোয়ার্টারস। প্রাচীন মন্দির। অ-দূষিত বাতাস।

মর্গটা আমার কোয়ার্টারের পিছনেই। হাসপাতালে আসতে যেতে চোখে পড়ে। একতলা হলুদ দালান। সামনে বড় সিমেন্ট বাঁধানো একটি চাতাল। চারপাশে ঘন গাছপালা। পচা পাতাভরা পুকুর। শ্যাওলাধরা দেয়াল। নাড়িকেল গাছ। তারপর রেললাইন। নিরিবিলি এই মফস্বল শহরে দিনগুলি বেশ কেটে যাচ্ছে। রোজ দুবেলা হাসপাতালে যাই, রোগী দেখি। ধৈর্যশীল চিকিৎসক হিসেবে সামান্য নামও ছড়িয়েছে। স্থানীয় লোকজন শ্রদ্ধভক্তি করে। মাঝেমধ্যে ইশতিয়াক-এর মতন দু-একজন বন্ধুও আসে বেড়াতে। দু-একদিন থেকে চলে যায়।

আমার একজন পিয়ন আছে। নাম মুখতার। মধ্যবয়েসি লোক। মিশমিশে কালো থলথলে শরীর। মুখতারকে শার্ট-প্যান্টে একেবারেই মানায় না। মাথাটা মুড়িয়ে রাখে। মাথার তালুও কালো। সেই কালো তালুর মাথায় খোঁচা খোঁচা চুল। কানে ছোট্ট একটা পিতলের রিং। মুখতার সন্ন্যাস নিয়েছে কিনা বোঝা গেল না। কথা কম বলে। তবে কথাবার্তায় অনেকবারই অসংলগ্নতা টের পেয়েছি। তবে মুখতার-এর রান্নার হাত ভালো। আর বেশ বিশ্বস্ত। রাতে অবশ্য চোখ লাল থাকে তার। নেশাটেশা করে মনে হল। বাজার সদাই মুখতারই করে। মাছমাংস খায় না দেখি। মুখতার মনে হয় গৃহীসন্ন্যাসী। সকালবেলা ইশতিয়াক কে বিদায় দিতে রেলস্টেশনে এসেছি।

ইশতিয়াক বেশ রোম্যান্টিক জীবন কাটাচ্ছে। ট্রেন পেলে বাসে চড়বে না। ওকে ট্রেনে তুলে দিয়ে রেলস্টেশন বাইরে চলে এসেছি। ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছিল। দেখলাম একটা কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচে জিন্নাত আলী দাঁড়িয়ে ছিল। আমাকে দেখেই সালাম দিল। লোকটার বয়স ষাটের কাছাকাছি। রেলওয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সে। থাকে পিছনের রেলওয়ে কলোনিতে । জিন্নাত আলী বিপত্নীক। একটি মেয়ে বাবার সংসারে থাকে । মধ্যবয়েসি মেয়ের নাম মুমতাজ। মুমতাজ রক্তশূন্যতায় ভুগছিল। মাস কয়েক আগে অবস্থা কাহিল হলে ওরই ট্রিটমেন্ট করতে গিয়েছিলাম। আমি সাধারণত স্থানীয় গরিব লোকদের কাছ থেকে ফি-টি নিইনা। জিন্নাত আলী সেটা মনে রেখেছে। মাঝেমধ্যে দেখা হলে সালাম দেয়।

জিন্নাত আলী বলল,রিকশা নিবেন স্যার? ডাইকা দিমু? না,না। আমি হেঁটেই যাব। বিসটি ছার। অসুবিধে নেই। বলে হাঁটতে থাকি। স্টেশন থেকে আমার কোয়ার্টারটা কাছেই। বড় রাস্তায় খানিক হেঁটে বাঁয়ে মোড় নিলে কালিবাড়ির গলি। সে গলি পেরিয়ে মর্গের পিছন দিয়ে মিনিট দশকের পথ । কালিবাড়ির গলিটা বেশ সরু। গলিতে কিছুক্ষণ হাঁটার পর ঝিরঝির বৃষ্টিটা থেমে রোদ উঠল। গলির বাঁ পাশে একটা কালো রঙের লোহার গেইটের সামনে দেখলাম গফুর আসকারী সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন। ভদ্রলোক আমার মোটামুটি পরিচিত। ধ্যাপক। এখন অবশ্য রিটায়ার করেছেন। লোকটা বেশ অদ্ভূত। বয়স ষাটের কাছাকাছি। মাথায় টাক-টাক নেই;একমাথা ধবধবে চুল। চোখে পুরু লেন্সের কালো ফ্রেমের চশমা। চশমার কাঁচ বেশ ধূসর। বৃদ্ধ বেশ লম্বা আর ফরসা। স্বাস্থও ভালো। তবে মুখ কেমন ফ্যাকাশে।

অ্যানিমিক মনে হয়। ভদ্রলোক আমাকে দেখে কেন যেন গেইটের ভিতরে ঢুকে যেতে চাইলেন। তার আগেই আমি সালাম দিয়ে বললাম,কেমন আছেন? গফুর আসকারী মুহূর্তেই ভোল পালটে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললেন,আরে ইয়াংম্যান যে। খবর কী? ভালো । বললাম। বলে হাসলাম। গফুর আসকারী গেইটটা খুলে বললেন,এসো এসো। বাসায় এসো। এক কাপ চা খেয়ে যাও।

গেইটের ওধারে ছোট্ট শ্রীহীন বাগান। বাগান মানে পেঁপে, শুপারি আর এঁটে কলার অযত্ন লালিত ঝোপ। গফুর আসকারী বিপত্নীক এবং নিঃসন্তান। দেখাশোনার জন্য আবদুর রহমান নামে একটা লোক আছে। মাস ঝয়েক আগে তারই অসুখ হয়েছিল। আমিই তখন টিট্রমেন্ট করেছিলাম। তখনই গফুর আসকারীর সঙ্গে পরিচয়। কলাঝোপের মাঝখান দিয়ে সরু পথ। তারপর একতলা লালটালির ছাদের বাংলোবাড়ি। ছোট্ট লাল মেঝের বারান্দা। বসার ঘরে সোফা কিংবা আসবাবপত্রের বদলে শ্রীহীন কাঠের তিনটে চেয়ার আর চার-পাঁচটা আলমারী।

আলমারী ভর্তি বাংলা- ইংরেজি বই। গফুর আসকারী অধ্যাপনা করেছেন দর্শনশাস্ত্রে । বইয়ের এরকম কালেকশন থাকাই স্বাভাবিক। গফুর আসকারী বললেন,তুমি ঐ চেয়ারে বস। আমি একটা চেয়ারে বসতে যাব গফুর আসকারী বললেন,না,না। ডানপাশেরটায় বস । হ্যাঁ। ঠিক আছে। বস। আমি চা করে আনি। হাসি চেপে বৃদ্ধের দেখিয়ে দেওয়া চেয়ারে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলাম, চা আপনি বানাবেন? কেন?আবদুর রহমান কি বাসায় নাই? বৃদ্ধ বললেন,আর বলো না ডাক্তার। দেশে যাব বলে দুদিনের ছুটি নিয়ে ছেলেটা সেই যে গেল। প্রায় দু সপ্তাহ হল-এখনও ফিরে এল না। দেখ দেকি কী কান্ড। বৃদ্ধের ফরসা মুখে অবশ্য বিরক্তির কোনও চিহ্ন দেখতে পেলাম না। ফিরে এল না? আশ্চর্য! কেন? কি ভাবে বলি বল? যাক,সে ছেলে চুলায় যাক। তুমি বস। চলে যেও না। আমি এখুনি চা তৈরি করে নিয়ে আসি। বৃদ্ধ ভিতরে চলে গেলেন। বসার ঘরে ঢুকেই কেমন পচা গন্ধ পাচ্ছিলাম। ইঁদুর বিড়াল মরে পচে গেলে যে রকম গন্ধ ছড়ায়। ঠিক সেই রকম। গন্ধের উৎস বোঝা গেল না। বাগানে কিছু মরে পড়ে থাকতে পারে। বুড়োর খেয়াল নেই। ছন্নছাড়া লোকের ছন্নছাড়া সংসার। বইয়ের আলমারীতে একটা বইয়ের ওপর চোখ আটকে গেল।

গ্যাবরিয়েলি উইটকপ-এর দি নেকক্রোফিলিয়াক ;একেই বলে কোইন্সিডেন্স। গতরাত্রেই নেকক্রোমানটি ছবিটা দেখছিলাম। শবদেহের প্রতি এক ধরনের যৌন আকর্ষনকে বয়োমেডিক্যাল পরিভাষায় বলা হয়নেকক্রোফিলিয়া । এই যৌন আকর্ষনকে আমেরিকান সাইক্রিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন- এর ডাগায়নোস্টিক অ্যান্ড স্ট্রাটেস্টিটিকাল ম্যানুয়ালপ্যারাফিলিয়া বর্গের অন্তর্ভূক্ত করেছে। প্যারাফিলিয়া শব্দটি গ্রিক । এর অর্থ প্রেম। তবে বয়োমেডিক্যাল পরিভাষায় শব্দটির মানে স্বাভাবিক উপায়ের বদলে অস্বাভাবিক বিষয়ে বা পরিস্থিতিতে যৌনবোধ জাগ্রত হওয়া। এতে ব্যক্তির আচরণ অস্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে । মনে পড়ল কাল অনেক রাতে দেখলাম মর্গের দরজা খুলে একটা লোক বেরিয়ে এল।শবদেহের প্রতি এক ধরনের যৌন আকর্ষনকে বয়োমেডিক্যাল পরিভাষায় বলা হয় নেকক্রোফিলিয়া । কেউ লাশকাটা ঘরে ওই কাজটা করে না তো? অবশ্য এমনটা ভাবার কোনওই কারণ নেই। গফুর আসকারী এক কাপ চা নিয়ে ফিরলেন। কাপ নিতে বললাম,আপনার চা কই? লাজুককন্ঠে বৃদ্ধ বললেন,চা আমি রান্নাঘরে বসেই খেয়ে এসেছি। বলেই ধপ করে কাঠের চেয়ারের ওপর বসলেন। অরেকটু হলেই উলটে পড়তেন। আগেই লক্ষ্য করেছি গফুর আসকারী বেশ মজার মানুষ । লেবু চা । চুমুক দিয়ে বোঝা গেল চিনির বদলে গুড় দিয়েছেন। আরও বোঝা গেল দর্শনের এই অধ্যাপকটি বেশ উদ্ভট আর উৎকেন্দ্রীক মানুষ। বৃদ্ধকে দেখে বরাবারই আমার বেশ খানিকটা খাপছাড়া আর উদভ্রান্ত মনে হয়েছে। চায়ে চুমুক দিয়ে বললাম,কাল রাত্রে অদ্ভূত এক দৃশ্য দেখলাম। কি বল তো শুনি? বৃদ্ধ ঝুঁকে পড়লেন। দেখলাম মর্গের দরজা খুলে একটা লোক বেরিয়ে এল।তখন অনেক রাত। এই ধরুন শেষ রাত। হুমম। তো? গফুর আসকারী সাহেব স্থির চোখে আমার দিকে চেয়ে আছেন। চশমার কাঁচে কুয়াশা জমে আছে। বড় বড় দুটি কর্নিয়া দেখা যায়। তবে কাঁচ এত ঘোলা হওয়ায় তিনি দেখছেন কীভাবে তা ঠিক ভেবে পেলাম না। বললাম, না,মানে নেক্রোফিলিয়াক কেউ হতে পারে কি? এই নিয়ে তো আপনি বেশ পড়াশোনা করেছেন দেখলাম।

বলে চায়ে চুমুক দিলাম। গফুর আসকারী যতই পাগলাটে লোক হোক, চায়ের স্বাদ দারুন হয়েছে। যাওয়ার সময় রেসিপিটা জেনে নিতে হবে। বৃদ্ধ বললেন,হুমম হতে পারে। তেমনটা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এমন প্রবণতা অতি সাধারণ মানুষের ভিতরেও সুপ্ত থাকতে পারে। শোন একটা ঘটনা বলি। তখন আমি সোহাগপুর কলেজে পড়াই। সেই সময়টায় আমি তন্ত্র,শবসাধনা এসব নিয়ে খুব পড়াশোনা করছিলাম। বয়স কম । জানে সাহস ছিল। রাতবিরেতে শ্মশানে-গোরস্থা নে ঘুরে বেড়াতাম। ঘাপটি মেরে বসে থাকতাম। আমি আতকে উঠে বললাম, বলেন কী! হ্যাঁ। আমি একটা বিষয়ে আগ্রহ বোধ করলে তার শেষ দেখেই তবে ছাড়ি,বুঝলে। বুঝলাম। তা আপনি শ্মশানে- কবরস্থানে মাঝরাতে ঘাপটি মেরে বসে থাকতেন কেন? বলে ছোট্ট চুমুকে চাটুকু শেষ করে কাপটা সামনের বেতের টেবিলের ওপর রেখে দিলাম। বৃদ্ধ বললেন,হাতেনাতে শবসাধকদের ধরব বলে। ধরতে পেরেছেন কখনও?

আমার নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হওয়ার যোগার। হুমম। একবার ধরেছি। তখন আমি সৈয়দনগর মহিলা কলেজে বদলি হয়েছি। শহরের উপকন্ঠে নদীর ধারে কবরখানা। এক মধ্যরাত্রে একটা বহেড়া গাছের আড়ালে ঘাপটি মেরে বসে আছি। দেখি গুটিশুটি পায়ে কে যেন এসে কবরের মাটি খুঁড়তে লাগল। গিয়ে জাপটে ধরলাম। কে সে?আবদুর রহমান। আবদুর রহমান! ঠিক আছে,ধরলেন। তারপর? আমার কৌতূহল চরমে উঠেছে। ধরার পর কতক্ষণ চলল ধস্তাধস্তি। আবদুর রহমান-এর বয়স তখন এই আঠারো কি উনিশ। টেনে- হিচঁড়ে ঘরে নিয়ে এলাম। কিছুতেই বলবে না কবরখানায় কেন গিয়েছিল। সে যা হোক। ওকে ধীরে ধীরে থেরাপি দিয়ে সুস্থ করে তুললাম। এখন ও সুস্থ। তবে আবার কেন পালাল ঠিক বুঝতে পারছি না। পালিয়েছে মানে? প্রায়ই তো পালায়। পাজী,নচ্ছাড় ছেলে একটা। বলতে বলতে গফুর আসকারী হাই তুললেন । বললেন,আমার এখন ঘুম পাচ্ছে ডাক্তার। তুমি না হয় চুপটি করে বস। আমি ঘন্টাখানেক ঘুমিয়ে নিই। না। না। আমি ঘুমান। আমি এখন যাই। পরে সময় করে একদিন আসব। আর একটা কথা। ইয়ে মানে আপনি কি বইটই ধার দেন?

বই? না,না। আমি ওই কাজটি কক্ষনো করি না। তুমি বরং অন্যকিছু ধার নাও। এই ফুলদানীটা ধার নেবে? ফুলদানী? না থাক। আমি বরং এখন যাই। বই যখন ধার দেন না। তখন গুড় দেওয়া লেবু চায়ের রেসিপিও বলবেন না। বাগান পেরিয়ে গলিতে বেরিয়ে মনে মনে হাসলাম। কিন্তু আমার হাসা উচিত নয়। আমি ডাক্তার। গফুর আসকারী এমনিতে ভালো মানুষ তবে ঐ একটু

মর্গের পিছন দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছি। আবদুর রহমান পালিয়ে গেল কেন? সে গোরস্থানে কবর খুঁড়ত? কেন? কথাটা বৃদ্ধ এড়িয়ে গেলেন। কেন? বসার ঘরে পচা গন্ধ পাচ্ছিলাম। কেন? গফুর আসকারীর পাগলামী কোনও কারণে চরমে পৌঁছে যায়নি তো?  রহস্য ঘনীভূত হয়ে উঠল।রহস্য যখন ঘনীভূত হয়ে উঠলই তখন কাউকে না কাউকে তো সন্দেহ করতেই হয়।


১ম পর্ব সমাপ্ত
গল্প: ইমন জুবায়ের