নিয়ামতে ভরপুর স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন উপহার দেওয়ার জন্য আল্লাহ্ কখনো মানুষকে সাময়িকভাবে নিঃস্ব-অসহায় করে দেন।
.
আইয়ুব আলাইহিস সালাম। আল্লাহর প্রিয় এক বান্দা ও নবি। জীবনের এক কঠিন সময়ে তাঁর সমস্ত সম্পদ, আত্মীয়-স্বজন হারান; ভয়ানক রোগে আক্রান্ত হয়ে পুরোপুরি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যান। কেবল মমতাময়ী স্ত্রী ছিলেন তাঁর পাশে—সেবায় নিয়োজিত থাকেন বিরতিহীন।
.
এমন করুণ অবস্থাতেও আইয়ুব (আ.) হতাশ হননি, আল্লাহকে ভুলেননি। নিজের অসহায়ত্বের কথা আল্লাহর কাছে তুলে ধরেছেন—
.
أَنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنْتَ أَرْحَمُ الرّٰحِمِينَ
.
‘‘আমাকে দুঃখ-কষ্ট আঁকড়ে ধরেছে; আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়াশীল।’’ [সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৩]
.
আল্লাহও তাঁর প্রিয়তম বান্দা আইয়ুবকে পরীক্ষা করে নিলেন। তাঁর দু‘আ কবুল করলেন। এরপর তাঁকে প্রচুর অর্থ-সম্পদ, আত্মীয়-স্বজন, সুস্বাস্থ্য দিয়ে নিয়ামতে ভরপুর এমন জীবন দান করলেন, যা পূর্বের চেয়ে বহুগুণে উত্তম ও শ্রেষ্ঠ ছিলো।
.
আল্লাহ্ তা‘আলা আইয়ুব (আ.)-এর প্রশংসায় বলেন, ‘‘কতই না চমৎকার বান্দা সে!’’ [সুরা সোয়াদ, আয়াত: ৪৪]
.
একই আয়াতে আল্লাহ্ আরো বলেন, ‘‘আমরা তাকে পেলাম ‘ধৈর্যশীল’ হিসেবে।’’
.
অতএব, পরিস্থিতি যেমনই হোক—সবর করতে হবে, আল্লাহর সিদ্ধান্ত ও তাকদিরকে সম্মান করতে হবে, তাঁর দিকেই ফিরে আসতে হবে। বিনিময়ে তিনি উত্তম বদলা দিবেন; যেভাবে আইয়ুব (আ.)-কে দিয়েছিলেন।
.
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা:
আমরা সরাসরি বাক্যে কিছু চাওয়াকেই কেবল দু‘আ মনে করি। যেমন: ‘‘হে আল্লাহ! আমাকে এই দাও, সেই দাও।’’ অথচ নবি-রাসুলগণ সবসময় সরাসরি বাক্যে চাইতেন না। তাঁরা কখনো কখনো নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করতেন এবং আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব, গুণাবলী ও পবিত্রতা ঘোষণা করতেন। এতেই দু‘আ কবুল হতো। যেমন: আইয়ুব (আ.)-এর দু‘আ—‘‘আমাকে দুঃখ-কষ্ট আঁকড়ে ধরেছে; আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়াশীল।’’ [সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৩]
.
এখানে কিন্তু সরাসরি কিছু চাওয়া হচ্ছে না। তেমনিভাবে, ইউনুস (আ.) মাছের পেটে গিয়ে বলেছিলেন—
.
لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحٰنَكَ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظّالِمِيْنَ
.
‘‘আপনি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; আপনি পবিত্র আর আমি তো জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।’’ এখানেও দেখুন—স্পষ্ট করে কিছু চাওয়া হচ্ছে না। সবসময় স্পষ্ট করে চাওয়ার দরকারই-বা-কী! মহান অন্তর্যামী আল্লাহ্ তো বোঝেন—আমাদের কী চাওয়া! তবে, দু‘আর ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের অসহায়ত্ব, অযোগ্যতা, গুনাহ ইত্যাদি আল্লাহর কাছে পেশ করা এবং আল্লাহর মহানত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব, মর্যাদা, অমুখাপেক্ষীতা ইত্যাদি স্বীকার করা এবং এগুলোর উসিলা দেওয়া (নিজের নেক আমলের উসিলাও গুরুত্বপূর্ণ কাজ)।
.
Tasbeeh
No comments:
Post a Comment