যাদু-টোনা থেকে সুরক্ষায় সহিহ সুন্নাহ ভিত্তিক আমল
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
প্রশ্ন: আমার স্ত্রী তার গায়ের জামা গোসলের পর বাড়ির প্রাচীরের ভেতরেই রৌদ্রে শুকাতে দেয়। কিন্তু কেউ সেখান থেকে জামার দু স্থান থেকে দুটি অংশ কেটে নিয়ে গেছে।। আমরা ধারণা করছি, কেউ হয়তো আমার স্ত্রীর ক্ষতির জন্য যাদু করবে। এখন কী করণীয়?
উত্তর:
বিশেষজ্ঞগণ বলেন, যাদুকর যার উপর যাদু করতে চায় অনেক সময় তার ব্যবহৃত পোশাকের অংশ, শাড়ির আঁচল, তার ব্যবহৃত চিরুনির দাঁত, মাথার চুল, হাতের নখ, শরীরের চামড়া ইত্যাদি গোপনে সংগ্রহ করে তাতে যাদু করে। (যেমনটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, বনি জুরাইক গোত্রের লাবিদ বিন আসিম নামক এক ইহুদী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাথার চুল এবং তার চিরুনির ভাঙ্গা দাঁত এর মাধ্যমে তার উপর যাদু করেছিল।)
সুতরাং উপরোক্ত ঘটনায় যাদুর উদ্দেশ্যই এমনটি করা হয়েছে বলে অনুমান করা যায়। আমরা দুআ করি, মহান আল্লাহ উক্ত বোনটিকে সকল অনিষ্ট থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
➧ উল্লেখ্য যে, ইসলামের দৃষ্টিতে যাদু করা বা যাদুবিদ্যা চর্চা করা কুফরি পর্যায়ের গুনাহ।
এটি ঈমান ধ্বংসকারী কার্য সমূহের অন্তর্ভুক্ত। কেউ যদি জেনে-বুঝে যাদু-টোনা করে তাহলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাব। আর ইসলামি ফৌজদারি দণ্ডবিধি আইন অনুযায়ী তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
যাদু থেকে আত্মরক্ষার জন্য সহিহ সুন্নাহ ভিত্তিক করণীয় নিম্নরূপ:
◈ ১. সকাল-সন্ধ্যায় সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস তিনবার করে এবং আয়াতুল কুরসি একবার করে পাঠ করা।
◈ ২. পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর উক্ত তিনটি সূরা এবং আয়াতুল কুরসি একবার করে পাঠ করা।
◈ ৩. রাতে ঘুমানোর পূর্বে দু হাতের তালু একত্রিত করে তাতে ফুঁ দিয়ে উক্ত তিনটি সূরা একবার করে পাঠ করত: মাথা, মুখমণ্ডল ও শরীরের উপরিভাগ যতদূর সম্ভব হাত দ্বারা মাসেহ করা। (এভাবে তিন বার করা)
◈ ৪. সূরা বাকারা ও আলে ইমরান পাঠ করা।
আবু উমামাহ আল বাহিলী রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি:
" اقْرَءُوا الزَّهْرَاوَيْنِ الْبَقَرَةَ وَسُورَةَ آلِ عِمْرَانَ فَإِنَّهُمَا تَأْتِيَانِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كَأَنَّهُمَا غَمَامَتَانِ أَوْ كَأَنَّهُمَا غَيَايَتَانِ أَوْ كَأَنَّهُمَا فِرْقَانِ مِنْ طَيْرٍ صَوَافَّ تُحَاجَّانِ عَنْ أَصْحَابِهِمَا اقْرَءُوا سُورَةَ الْبَقَرَةِ فَإِنَّ أَخْذَهَا بَرَكَةٌ وَتَرْكَهَا حَسْرَةٌ وَلاَ تَسْتَطِيعُهَا الْبَطَلَةُ " . قَالَ مُعَاوِيَةُ بَلَغَنِي أَنَّ الْبَطَلَةَ السَّحَرَةُ .
"তোমরা দুটি উজ্জ্বল সূরা অর্থাৎ সূরা বাকারা এবং আলে ইমরান তিলাওয়াত করো। কিয়ামতের দিন এ দুটি সূরা এমনভাবে আসবে যেন তা দু খণ্ড মেঘ অথবা দুটি ছায়াদানকারী অথবা দুই ঝাঁক উড়ন্ত পাখি যা তার পাঠকারীর পক্ষ হয়ে কথা বলবে। আর তোমরা সূরা বাকারা পাঠ কর। এ সূরাটিকে গ্রহণ করা বরকতের কাজ এবং পরিত্যাগ করা পরিতাপের কাজ। আর বাতিলের অনুসারীগণ এর মোকাবেলা করতে পারে না। হাদিসটির বর্ণনাকারী আবু মুআবিয়াহ বলেছেন, "আমি জানতে পেরেছি যে, বাতিলের অনুসারী বলে যাদুকরদের কথা বলা হয়েছে।" [সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ৭। কুরআনের মর্যাদাসমূহ ও এতদসংশ্লিষ্ট বিষয়, পরিচ্ছেদঃ ১০. কুরআন তিলাওয়াত এবং সূরা বাকারা তিলাওয়াতের ফযিলত]
◈ ৫. বিশেষভাবে রাতে সূরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত তিলাওয়াত করা: (সালাতের মধ্যে হোক বা বাইরে হোক)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
مَنْ قَرَأَ بِالآيَتَيْنِ مِنْ آخِرِ سُورَةِ الْبَقَرَةِ فِي لَيْلَةٍ كَفَتَاهُ
"যে ব্যাক্তি রাতে সূরা বাকারার শেষ দু আয়াত পাঠ করবে তা তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।" [সহীহ বুখারী, অধ্যায়: ৫৩/ ফাজায়িলুল কুরআন]
অর্থাৎ যে ব্যক্তি রাতের বেলা সূরা বাকারা শেষ দুটি আয়াত (২৮৫ ও ২৮৬ নং আয়াত তথা “আ-মানার রাসূলু বিমা উনযিলা ইলাইহি মির রাব্বিহি….থেকে শেষ পর্যন্ত) পাঠ করবে আল্লাহর রহমতে তা জিনের সংক্রমণ, যাদু-টোনা, বদনজর ইত্যাদি সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে (একটি অভিমত অনুযায়ী)
◈ ৪. এ ছাড়া হাদিসে বর্ণিত নিম্নোক্ত দুআ সমূহ পাঠ করা:
◍ ক. সাহিহ মুসলিমে রয়েছে:
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
‘আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণী সমূহের ওসিলায় তাঁর নিকট আমি তিনি যা সৃষ্টি করেছেন সেগুলোর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই।’ (বিকালে ৩ বার)। [সাহিহ মুসলিম: ৪/২০৮১]।
◍ খ. সাহিহ বুখারিতে রয়েছে,
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ
‘আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের ওসিলায় সকল শয়তান ও বিষাক্ত জীব-জন্তু থেকে ও যাবতীয় ক্ষতিকর চোখ (বদ নযর) হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ [সাহীহ বুখারি ৪/১৪৭, নং ৩৩৭১]
◍ গ. আরও এসেছে,
«أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ الَّتِي لَا يُجَاوِزُهُنَّ بَرٌّ وَلَا فَاجِرٌ، مِنْ شَرِّ مَا يَنْزِلُ مِنَ السَّمَاءِ، وَمِنْ شَرِّ مَا يَعْرُجُ فِيهَا، وَمِنْ شَرِّ مَا ذَرَأَ فِي الْأَرْضِ، وَمِنْ شَرِّ مَا يَخْرُجُ مِنْهَا، وَمِنْ شَرِّ فِتَنِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ، وَمِنْ شَرِّ كُلِّ طَارِقٍ إِلَّا طَارِقًا يَطْرُقُ بِخَيْرٍ يَا رَحْمَنُ»
“আমি আল্লাহর ঐ সকল পরিপূর্ণ বাণীসমূহের সাহায্যে আশ্রয় চাই যা কোনও সৎব্যক্তি বা অসৎ ব্যক্তি অতিক্রম করতে পারে না, — আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন, অস্তিত্বে এনেছেন এবং তৈরি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে। আসমান থেকে যা নেমে আসে তার অনিষ্ট থেকে এবং যা আকাশে উঠে তার অনিষ্ট থেকে, আর যা পৃথিবীতে তিনি সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে, আর যা পৃথিবী থেকে বেরিয়ে আসে, তার অনিষ্ট থেকে, দিনে রাতে সংঘটিত ফেতনার অনিষ্ট থেকে, আর রাতের বেলায় হঠাৎ করে আগত অনিষ্ট থেকে। তবে রাতে আগত কল্যাণকর আগমনকারী ব্যতীত, হে দয়াময়।” (হিসনুল মুসলিম : ২/১৪১)।
◍ ঘ. হাদিসে আরও এসেছে,
«أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ»
“আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণী সমূহের ওসিলায় আশ্রয় চাই তাঁর রাগ থেকে, তাঁর শাস্তি থেকে, তাঁর বান্দাদের অনিষ্ট থেকে, শয়তানদের কুমন্ত্রণা থেকে এবং তাদের উপস্থিতি থেকে।” (আবু দাউদ: ৪/১২, নং : ৩৮৯৩। সাহীহুত- তিরমিযি ৩/১৭১)।
◍ ঙ. এ দুয়াটিও গুরুত্বপূর্ণ:
«حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ، عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ»
“আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কোনও সত্য মা‘বুদ নেই, আমি তাঁর উপরই ভরসা করি, আর তিনি মহান আরশের রব।” (৭ বার)। [সুনানে আবু দাউদ ৪/৩২১ ও হিসনুল মুসলিম ১/৬১)]
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সর্বপ্রকা অনিষ্ট থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
-আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
জুবাইল, সৌদি আরব
This is not a blog only-you will get almost everything helpful, educational materials and so on here with the passage of time.
Wednesday, June 16, 2021
যাদু-টোনা থেকে সুরক্ষায় সহিহ সুন্নাহ ভিত্তিক আমল
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment