Showing posts with label Angry. Show all posts
Showing posts with label Angry. Show all posts

Wednesday, May 12, 2021

মাসনুন আমল: যাদু, জ্বিন এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে বাচার উপায় : যাদুগ্রস্ত ১২

 

মাসনুন আমল: যাদু, জ্বিন এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে বাচার উপায় : যাদুগ্রস্ত ১২

 

বিসমিল্লাহ! যারা যাদু আক্রান্ত হয়েছেন তাঁরা তো বটেই, তাদের সাথে আমাদের সবারই যাদু এবং জ্বিন-শয়তানের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিখিয়ে দেয়া আমলগুলো যত্নসহকারে করা উচিত। এগুলোকে মাসনুন আমল অর্থাৎ সুন্নাহসম্মত আমল বলে। এসবের অসাধারণ সব উপকারিতার পাশাপাশি বড় যে লাভ রয়েছে, তা হচ্ছে আল্লাহর ওপর তাওয়াককুল বাড়ে।

সব সুন্নাতই গুরুত্বপূর্ণ, আর সারাদিনের; বিশেষত সকাল-সন্ধ্যার ফযিলতপূর্ণ অনেক দুয়া ও যিকর হাদিসে আছে, সবকিছু বিস্তারিত এখানে উল্লেখ করা তো সম্ভব না। আর সবসময় সবগুলোর ওপর আমলও সম্ভব না। তাই আমরা এখানে অল্প কিছু মাসনুন দোয়া এবং আমল নিয়ে আলোচনা করবো। এর পাশাপাশি বদনজর থেকে বাচার উপায় (১) এবং জ্বিনের ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায় (২) লেখা দুটো দেখতে পারেন।

 

আল্লাহ আমাদের এসবের প্রতি যত্নবান হবার তাওফিক দেন। আমিন।


সংযুক্তি:

➫ প্রতিদিনের মাসনুন আমলগুলো করার সুবিধার্থে এই প্রবন্ধের দোয়াগুলোর সাথে প্রয়োজনীয় আরও অনেক দোয়াসহ একটি অ্যা‌ন্ড্রয়েড অ্যাপ বানানো হয়েছে। যা পাওয়া যাবে এই লিংকে- http://bit.ly/masnun-app

➫ অ্যাপের ওয়েব সংস্করণ আছে এই লিংকে- http://ruqyahbd.org/dua


আর হ্যাঁ! আরবি দোয়া অথবা কোরআনের আয়াতের উচ্চারণ বাংলায় লেখতে আমার কাছে কেমন যেন লাগে! কিন্তু অতীতে এই ধরনের পোস্টে অনেকেই উচ্চারণ চেয়ে পীড়াপীড়ি করেছে, তাই কয়েকটার উচ্চারণ লিখে দিলাম।

 

[ক] সকাল-সন্ধ্যার আমল

১. আ’উযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মা-তি, মিং-শাররি মা-খলাক্ব।

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পড়া। বিষ, যাদু এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে বাঁচতে। (জামে তিরমিযী, ৩৫৫৯)

২. বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা-ইয়াদ্বুররু মা‘আসমিহী, শাইউং ফিলআরদ্বী ওয়ালা- ফিসসামা-ই, ওয়াহুওয়াস সামি’উল ‘আলীম।

بِسْمِ اللهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ العَلِيمُ

সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পড়া। সব ধরনের ক্ষতি এবং বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকতে..। (জামে তিরমিযী, ৩৩৩৫)

৩. সুরা তাওবাহ ১২৯ নং আয়াতের অংশ-

حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ، عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ

যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় সাতবার এটি পাঠ করবে, আল্লাহ তাআলা তাঁর জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন। (সুনানে আবি দাউদ)

৪. সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস: প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে পড়া। সব ধরনের অনিষ্ট থেকে হিফাজতের জন্য এটা রাসুল স. এর শিখানো আমল। (সুনানে আবি দাউদ)

৫. লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকালাহ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হ্ামদ, ওয়াহুওয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর

لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ ، وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ ، وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

প্রতিদিন সকালে ১০০বার পড়া। এর অনেক বেশি ফজিলত, এবং জ্বিন-শয়তানের ক্ষতি থেকে বাঁচতে এটা পরিক্ষিত আমল। (বুখারি, মুসলিম হাদিস নং ৪৮৫৭) একশতবার না পারলে, অন্তত ফজর ও আসরের পর ১০বার করে পড়া। (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)

৬. জিন-শয়তানের ক্ষতি থেকে বাঁচতে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় (১বার) আয়াতুল কুরসি পড়া। (মুসতাদরাকে হাকিম ১/৫৬২)

 

download hd quality image

[খ] ঘুমের আগের আমল

ক. ওযু করে ঘুমানো, তাহলে ফিরিশতারা হিফাজতের জন্য দুয়া করতে থাকে। ডান কাত হয়ে ঘুমানো। এমনিতেও সর্বদা ওযু অবস্থায় থাকা সুন্নাত। (আল-মু’জামুল আওসাত)
খ. শোয়ার পূর্বে কোন কাপড় বা ঝাড়ু দিয়ে বিছানা ঝেড়ে নেয়া। (মুসলিম)
গ. আয়াতুল কুরসি পড়া। (বুখারী) সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া। (বুখারী)
ঘ. সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়ে হাতের তালুতে ফু দেয়া, এরপর পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে নেয়া। (বুখারী)

[গ] অন্যান্য সময়ের আমল

১. সম্ভব হলে মদিনার আজওয়া খেজুরের ব্যবস্থা করা, না হয় যে কোন আজওয়া খেজুরেও হবে। রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সাতটি আজওয়া খেজুর সকাল বেলায় আহার করবে সেদিন তাকে কোন বিষ ও যাদু ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী)

২. ঘুমের মাঝে ভয় পেলে বা অন্যসময় খারাপ অনুভূতি হলে পড়া

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ الله التَّامَّاتِ مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ وشَرّ عِبَادِهِ ، ومِنْ هَمَزَاتِ الشّيَاطِينِ وأَنْ يَحْضُرُونِ

আ‘ঊযু বিকালিমা-তিল্লাহিত্তা-ম্মাতি মিন্ গাদ্বাবিহি ওয়া ইক্বা-বিহি ওয়া শাররি ‘ইবা-দিহি ওয়ামিন হামাযা-তিশ্শায়া-ত্বীনি ওয়া আন ইয়াহ্দুরূন।

৩. টয়লেটে ঢুকার পূর্বে দোয়া পড়া-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ 

আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা, মিনাল খুবসি ওয়াল খবা-ইছ। অর্থ: হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি খারাপ জ্বিন ও খারাপ পরী থেকে। (সহীহ মুসলিম, ৩৭৫)

৪. বিয়ের প্রথম রাতে স্ত্রীর কাছে গিয়ে পড়া [*]

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ

[*] এবিষয়ে প্রচলিত একটি ভুল ধারণা হচ্ছে, অনেকে এটি স্ত্রীর মাথায় হাত রেখেই পড়তে হবে। কিছু হাদিসে মাথায় হাত রেখে পড়ার কথা থাকলেও, প্রসিদ্ধ হাদিসগুলোতে কিন্তু স্ত্রীর কাছে গিয়ে শুধু পড়ার কথা আছে। (সুনানে আবি দাউদ ২২৪৩ এবং ইবনে মাযাহ ১৯০৮ দ্রষ্টব্য)

৫. স্ত্রী সহবাসের পূর্বে দোয়া পড়া।

بِسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا

বিসমিল্লাহি আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ শাইত্বা-না, ওয়া জান্নিবিশ্-শাইত্বানা মা-রযাকতানা। (বুখারী, ৪৮৭০)

৬. দৈনিক একবার হলেও মসজিদে প্রবেশের দোয়া পড়া

أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنْ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: মসজিদে প্রবেশের সময় কেউ এটা পড়লে শয়তান বলে, এই ব্যক্তি আজ সারাদিনের জন্য আমার থেকে রক্ষা পেয়ে গেল। (সুনানে আবি দাউদ, ৩৯৩)

৭. বিসমিল্লাহ বলে দরজা-জানালা লাগানো। খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা।

 

 

 

(১)

বদনজর থেকে বাচার উপায়, কিছু ঘটনা : বদনজর ৩

 

গত পর্বে আমরা বদনজর বিষয়ে সালাফের মতামত এবং বদনজর লাগার কিছু লক্ষণ জেনেছি। আজ বদনজর থেকে বাঁচার উপায় এবং এসম্পর্কিত কিছু সত্য ঘটনা জানবো।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিজের প্রয়োজন পূরণ হওয়া পর্যন্ত সেটা গোপন রাখার মাধ্যমে সাহায্য লাভ করো! কেননা, প্রতিটা নিয়ামত লাভকারীর সাথেই হিংসুক থাকে!” (তাবারানী)

এটা নজর এবং হিংসা থেকে বাচার একটা টিপস। নিয়ামত গোপন রাখার মানে হচ্ছে অন্য কারো সামনে অহেতুক নিজের, নিজের সম্পদের, প্রশংসা না করা, সন্তানের প্রশংসা না করা, মেয়েরা নিজ স্বামীর প্রশংসা অন্যদের সামনে না করা, ছেলেরা নিজ স্ত্রীর প্রশংসা অন্যদের সামনে না করা। নিজের প্রজেক্টের প্রপার্টির ব্যাবসার গোপন আলোচনা অন্যদের সামনে প্রকাশ না করা। অনেকে অহেতুক অন্যদের সামনে গল্প করেন, অমুক প্রজেক্টে এতো লাভ হলো, অমুক চালানে এতো টাকার বিক্রি হলো।

মোটকথা: অহেতুক অন্যের সামনে নিজের কোনো নিয়ামতের আলোচনা না করাই উত্তম। প্রসঙ্গক্রমে করলেও কথার মাঝে যিকর করা। যেমনঃ ‘আলহামদুলিল্লাহ্‌, এবছর ব্যাবসায় কোনো লস যায়নি।’ “আল্লাহর রহমতে আমার ছেলে বেশ ভালো রেজাল্ট করেছে!” “মা-শা-আল্লাহ ভাবি! আপনি তো কাপড়ে অনেক ভালো ফুল তুলতে পারেন!!” ইত্যাদি ইত্যাদি.

শুধু খারাপ মানুষের নজর লাগে এমন কিন্তু না। ভালো মানুষের নজরও লাগতে পারে। বদনজর লাগার আসল কারণ হচ্ছে, আমরা যখন কোনো বস্তুর বা ব্যাক্তির প্রশংসা করি তখন এর মাঝে আল্লাহকে স্মরণ করি না। মা-শা-আল্লাহ, বারাকাল্লাহ বলি না। কোন কিছু দেখলে আমরা ওয়াও, অসাম! বাপরে! কি দেখাইলো মাইরি! হেব্বি হইছে! এক্কেরে ফাডালাইছে-এসব বলি। অথচ আমাদের উচিত ছিলো মা-শা-আল্লাহ, বারাকাল্লাহ, বলা।

সূরা কাহাফে এক ঘটনায় আল্লাহ্‌ বলেন: “যখন তুমি তোমার বাগানে প্রবেশ করলে, তখন ‘মা-শা-আল্লাহ; লা-কুও্ওয়াতা ইল্লা-বিল্লাহ’ (সব আল্লাহর ইচ্ছাতে হয়েছে, আল্লাহ ছাড়া কারো ক্ষমতা নেই) কেন বললে না?” (১৮:৩৯)

এখন অন্য কেউ যদি আপনার কিছুর প্রশংসা করে, তাহলে উনি যিকর না করলে আপনার উচিত হবে যিকর করা। উদাহরণ স্বরুপ কেউ বললো- ভাবি আপনার ছেলেটা তো অনেক কিউট! আপনি বলুন- আলহামদুলিল্লাহ্‌… মনে মনে বলুন- আল্লাহর কাছে বদনজর থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আপনি অন্যের প্রশংসা করতে গিয়ে কথার মাঝে যিকর করুক। “মাশা-আল্লাহ! আপনার রান্না অনেক সুন্দর।”
আর অধিক পরিমাণে সালামের প্রচলন করুন, ইনশাআল্লাহ হিংসা দূর হয়ে যাবে।

সর্বোপরি আল্লাহর কাছে দু’আ করুন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমরা বদনজর থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও, কেননা বদনজর সত্য!”

নজর থেকে বাচার একটা দুয়া, রাসুল সা. এটা পড়ে হাসান এবং হুসাইন রা.কে ফুঁ দিয়ে দিতেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই একই দু’আ আমাদের জাতির পিতা ইবরাহীম আ.-ও ইসমাইল আ. এবং ইসহাক আ. এর জন্য পড়তেন। দুয়াটি হচ্ছে-

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
.
উচ্চারণঃ আ’উযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাহ। মিং-কুল্লি শাইত্বনিও ওয়াহা-ম্মাহ। ওয়ামিং-কুল্লি ‘আইনিল্লা-ম্মাহ।
অর্থঃ আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট হতে পানাহ চাচ্ছি।

এই হাদিসটি আছে- বুখারি, তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ, মুসতাদরাকে হাকেম, তাবারানী, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, মুসনাদে আহমাদ, মুসনাদে বাযযার, মুসান্নাফ, মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাকে..

এই দু’আ সকাল-সন্ধ্যায় কয়েকবার পড়ে বাচ্চাদের ফুঁ দিয়ে দিবেন, নিজের জন্যও পড়বেন। ইনশাআল্লাহ তাবিজ-কবচ টোটকা ইত্যাদির কোনো দরকার হবেনা। আল্লাহই হিফাজত করবে।

বদনজর বিষয়ে অনেকগুলো ঘটনা আগেরবার (প্রথম সিরিজে) বলা হয়েছে, সেসব আর উল্লেখ না করি.. আমি আগের পোস্টগুলোর লিংক কমেন্টে দিয়ে দিচ্ছি। তবে সাহল ইবনে হুনাইফ রা. এর ঘটনা; যা মুয়াত্তা মালেক, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাযাহ এবং নাসাঈ শরিফে আছে! সেটা এটা এখানে না বললেই নয়.

সাহল ইবনে হুনাইফ রাযি. কোথাও গোসলের জন্য জামা খুলেছিলেন। উনি বেশ সুঠাম দেহের অধিকারী ছিলেন। বদরী সাহাবী আমির ইবনে রবী’আ রাযি. তাঁকে দেখতে পেয়ে বললেন, এতো সুন্দর মানুষ আমি জীবনে দেখিনি। এমনকি এত সুন্দর কোন যুবতীকেও দেখিনি। আমির রাযি. কথাটা বলার পরপরই সাহাল রাযি. সেখানে বেহুশ হয় পড়ে গেলেন। তাঁর গায়ে জ্বর চলে আসলো। মারাত্মক জ্বরে ছটফট করতে লাগলেন হযরত সাহাল রাযি.।
অন্য সাহাবিরা রাসূল সা. কে জানালেন, সংবাদ পেয়ে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবস্থা দেখতে আসলেন। সাহল রাযি. কে হঠাৎ করে এমনটা হবার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি ঘটনাটা খুলে বললেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন: “তোমরা কেন তোমাদের ভাইকে নজর দিয়ে হত্যা করছো?” আমির ইবনে রবী’আকে ডেকে বললেন: “তুমি যখন তাকে দেখলে, তখন আরো বরকতের দু’আ কেন করলেনা? বারাকাল্লাহ কেন বললে না?” (অর্থাৎ দুয়া করলে নজর লাগতো না)
এরপর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন আমির রাযি. কে বললেন: অজু কর! আমির রাযি. অজু করলেন। অতঃপর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর নির্দেশে অযুর পানি সাহল এর গায়ে ঢেলে দিলেন। আল্লাহর রহমতে কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন।”
এটা বিশুদ্ধ সনদে নাসাঈ এবং ইবনে মাজাহতে বর্ণিত প্রসিদ্ধ একটি ঘটনা, যা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। আমরা বুঝতে পারি, ভালো মানুষের নজরও লাগতে পারেরে, এখানে আমির ইবনে রবিয়া রা. তো বদরি সাহাবি, বদরী সাহাবিদের আগের পরের সব গুনাহ মাফ!! এরকম মানুষের নজর লেগেছে, সেখানে অন্যরা কোন ছার..

আরেকটা হাদিস, উম্মুল মুমিনিন হাফসা রা. কোনো সাহাবির বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন, ফিরে এসে রাসুল সা.কে ওদের হালহাকিকত শোনালেন। বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! ওই সাহাবির সন্তানরা প্রায় সময় অসুস্থ হয়ে থাকে.. রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আসলে বদনজর তাদের দিকে খুব দ্রুত কাজ করে!”
আসমা রা. এর ব্যাপারেও এরকম ঘটনা পাওয়া যায়.. (হাদিসগুলো সহীহ মুসলিমে  আছে)

আমার বাড়ির একটা গল্প বলি, এবার ছুটিতে গিয়ে আম্মুকে আমার বদনজর নিয়ে লেখা আগের প্রবন্ধগুলো দেখালাম। সেখানে “বদনজর মানুষকে কবর পর্যন্ত আর উটকে রান্নার পাতিল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়!” হাদিসটা দেখিয়ে আমি হাসতে হাসতে বললাম ‘হাদিসটা মজাদার না’?!!
আম্মু দেখি মন খারাপ করে বলছে- কয়েকদিন আগে আমার একটা মুরগী মরে গেছে..
জিগাইলাম কিভাবে?
আম্মু বলছে- “সন্ধ্যায় সব মুরগিকে খাওয়ার দিয়ে আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি, তখন ওই মুরগিটার দিকে তাকায়া বললাম ইশ! এরকম আর একটা মুরগিও হলোনা.. একটা মুরগিও এরকম বড়সড় না, আর এর মতো একটাও ডিম দেয় না… তারপর সব মুরগি কুটিরে উঠেছে, ওই বড়সড় মুরগিটাও উঠেছে। পরদিন সকালে দেখি ওই মুরগিটা আর বের হয়না! পরে কুটিরের ভিতরে তাকায়া দেখি মুরগিটা এক কোণায় মরে পড়ে আছে… একদম ভালো মুরগি, কোনো অসুখ ছিল না, আমার ওই কথাগুলা বলার সময় কি নজর লাগছিল?”
– আমি বললাম.. “হ্যা….”

 

(২)

 

জ্বিন আসরের লক্ষণ এবং জ্বিনের ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায় : জিনের স্পর্শ ৪

 

আজ শুরুতে আমরা জ্বিন আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ জানবো। গতপর্বে ব্যখা করা হয়েছে, মানুষ কয়েকভাবে জ্বিন দ্বারা আক্রান্ত হয়। আমাদের সমাজে whole body possession বা যেটাকে জ্বিনে ধরা বলে এটাকেই শুধু জ্বিনের সমস্যা ভাবা হয়, পুরো শরীর পজেসড না হলে সচরাচর কেউ বিশ্বাস করে না যে জ্বিন আছে শরীরে। কিন্তু আসলেই এটা সম্ভব যে, কারো শরীরে জ্বিন ঢুকে আছে.. আর দিনের পর দিন ধীরেধীরে সে মানসিক এবং শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখা জরুরী, আমরা যে লক্ষণগুলো আলোচনা করতে যাচ্ছি এক-দুদিন এসব দেখলেই জ্বিন আক্রান্ত হয়েছে ভাববার কারণ নেই, কারণ এগুলো স্বাভাবিক অসুখবিসুখ এর কারণেও হতে পারে। এই লক্ষণগুলো কারো মাঝে যদি দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান থাকে, তাহলে ধরে নিবেন সমস্যা আছে।

আলোচনার সুবিধার্থে পজেসড হওয়ার লক্ষণগুলোকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করে নিচ্ছি। ঘুম সংক্রান্ত এবং অন্য সময়ের..।

ঘুম সংক্রান্ত লক্ষণ সমূহঃ

১। নিদ্রাহীনতা: যার জন্য সারারাত শুধু বিশ্রাম নেয়াই হয়, ঘুম হয়না
২। উদ্বিগ্নতা: যেজন্য রাতে বার বার ঘুম ভেঙে যাওয়া। 
৩। বোবায়ধরা: ঘুমের সময় কেউ চেপে ধরেছে, নড়াচড়া করতে পারছে না। প্রায়ই এমন হওয়া
৪। ঘুমের মাঝে প্রায়শই চিৎকার করা, গোঙানো, হাসি-কান্না করা
৫। ঘুমন্ত অবস্থায় হাটাহাটি করা (Sleepwalking)
৬। স্বপ্নে কোনো প্রাণিকে আক্রমণ করতে বা ধাওয়া করতে দেখা। বিশেষতঃ কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর, উট, সিংহ, শিয়াল, সাপ (*)
৭। স্বপ্নে নিজেকে অনেক উঁচু কোনো যায়গা থেকে পড়ে যেতে দেখা
৮। কোনো গোরস্থান বা পরিত্যক্ত যায়গা, অথবা কোনো মরুভূমির সড়কে হাটাচলা করতে দেখা
৯। বিশেষ আকৃতির মানুষ দেখা। যেমন: অনেক লম্বা, খুবই খাটো, খুব কালো কুচকুচে
১০। জ্বিন-ভুত দেখা

দ্রষ্টব্যঃ যদি স্বপ্নে সবসময় দুইটা বা তিনটা প্রাণী আক্রমণ করতে আসছে দেখে, তাহলে বুঝতে হবে সাথে দুইটা বা তিনটা জ্বিন আছে।

ঘুম ব্যতীত অন্য সময়ের লক্ষণ

১। দীর্ঘ মাথাব্যথা (চোখ, কান, দাত ইত্যাদি সমস্যার কারণে নয়, এমনিই)
২। ইবাদত বিমুখতা: নামাজ, তিলাওয়াত, যিকির আযকারে আগ্রহ উঠে যাওয়া। মোটকথা, দিনদিন আল্লাহর থেকে দূরে সরে যাওয়া
৩। মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকা, কিছুতেই মন না বসা..
৪। ব্যাপক অলসতা; সবসময় অবসন্নতা ঘিরে রাখা
৫। মৃগীরোগ
৬। শরীরের কোনো অংঙ্গে ব্যাথা কিংবা বিকল হয়ে যাওয়া। ডাক্তাররা যেখানে সমস্যা খুজে পেতে বা চিকিৎসা করতে অপারগ হচ্ছে।

আবারও মনে করিয়ে দেই, শারীরিক রোগের কারণেও এসব হয়ে থাকে। তবে যখন দীর্ঘদিন যাবত যখন এসব লক্ষণ দেখা যাবে, তখন ভাববেন কোনো সমস্যা আছে।

জ্বিনের আক্রমণ থেকে বাচার জন্যঃ

আগামী পর্বে হয়তো বাসাবাড়ি থেকে জিন তাড়ানোর পদ্ধতি, এরপর জ্বিনদ্বারা আক্রান্ত রুগীকে রুকইয়াহ করার নিয়ম আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ। তবে পোস্ট অনেক লম্বা হতে পারে। এজন্য দুই পর্বে দেয়ার ইচ্ছা আছে।
যাহোক, আজ সবশেষে খবিস জ্বিনের ক্ষতি থেকে বাঁচতে কয়েকটি মৌলিক বিষয় জেনে নিন।

১। জামা’আতে নামাজ আদায় করা। তাহাজ্জুদ পড়া। এই দুটি আপনার আত্মিক শক্তি বৃদ্ধি করে।

২। গানবাজনা থেকে বিরত থাকা।

৩। সর্বদা পাকপবিত্র থাকা। বিশেষত: ঘুমের আগে অযু করে বিছানায় যাওয়া।

৪। ঘুমের আগে আয়াতুল কুরসি এবং সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া।

৫। সব কাজে বিসমিল্লাহ বলা, বিশেষত: খাবার সময় এবং ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করতে। এছাড়া উঁচু থেকে লাফ দেয়ার সময়, কিছু ফেলার সময়, অন্ধকারে কিছু করার সময়ও বিসমিল্লাহ বলা ভালো।

৬। কুকুর – বিড়াল না মারা, সাপ মারতে চাইলে আগে জোর আওয়াজে ৩বার বলা “জ্বিন হলে চলে যাও..”

৭। কোনো গর্তে প্রসাব না করা। হাদিসে এব্যাপারে পরিষ্কার নিষেধাজ্ঞা আছে।

৮। ঘরে প্রবেশের এবং বের হওয়ার দোয়া পড়া, দোয়া না জানলে অন্তত বিসমিল্লাহ বলা।

৯। সন্ধ্যার সময় ঘরের জানালা বন্ধ করা, বাচ্চাদের বাহিরে বের হতে না দেয়া। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর বাচ্চাদের বের হতে কিংবা জানালা খুলতে পারেন।

১০। স্ত্রী সহবাসের পুর্বে অবশ্যই দু’আ পড়া। বিয়ের প্রথম রাতের দোয়াটি পড়া।

১১। টয়লেটে ঢোকার সময় দু’আ পড়া।

১২। প্রতিদিন “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারীকালাহ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হ্ামদ, ওয়াহুওয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর” ১০০বার পড়া। একশতবার না হলে, অন্তত সকাল – সন্ধ্যায় ১০বার করে পড়া।

১৩। সকাল সন্ধ্যার অন্যান্য মাসনুন আমলগুলো নিয়মিতভাবে প্রতিদিন করা

১৪। সুরা ইখলাস ফালাক নাস, তথা তিনকুল-এর আমল গুরুত্ব সহকারে করা। আয়েশা সিদ্দীকা রা. থেকে এব্যাপারে চল্লিশটিরও বেশি সনদে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল সা. জীবনের শেষ পর্যন্ত এর আমল করেছেন।
আমল হলো, রাসূল সা. প্রতিরাতে ঘুমানোর পূর্বে সূরা ইখলাস তিনবার, সূরা ফালাক তিনবার ও সূরা নাস তিনবার পড়ে দুইহাতের তালুতে ফুঁ দিতেন। ফুঁ এর সাথে হালকা থুতু বেরিয়ে আসতো। এরপর সমস্ত শরীরে হাত বুলিয়ে নিতেন।

দ্বিতীয়ত: প্রতিদিন ফজর ও মাগরিবের নামাযের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার সূরা ইখলাস, একবার সূরা ফালাক ও একবার সূরা নাস এভাবে তিন সূরা তিনবার পড়তেন। এসময়ে ফুঁ দেয়া লাগবে না।
হাদীসের শেষাংশে আল্লাহর রাসূল সা বলেন, এআমলই তোমার জন্য যথেষ্ট।অন্য হাদিসের আছে এই সুরাগুলো পড়ে বাচ্চাদের ফুঁ দিয়ে দিতেন।

উপরে উল্লেখিত পরামর্শ বিভিন্ন হাদিস থেকে নেয়া, লেখা দীর্ঘ হয়ে যাবে এজন্য সবগুলো হাদিস উল্লেখ করা সম্ভব হলো না।

আর উপরে বলা কিছু দুয়া (এই লিখার শুরুতেই আছে) পাবেন। এছাড়া বাকিগুলো প্রসিদ্ধ অনেক বইতে পাবেন, যেমনঃ হিসনে হাসিন, গুলজারে সুন্নাহ, হিসনুল মুসলিম। আরো সহজে পাবেন নুরানী মাদরাসার বাচ্চারা একটা নীল রঙের বই পড়ে (নুরানী পদ্ধতিতে কোরআন শিক্ষা এরকম নাম), বেলায়েত সাহেবের লেখা, সেখানে।

যাহোক, অনেকগুলো ব্যাপার আলোচনা হলো, আল্লাহ আমাদের সতর্ক থাকার তাওফিক দিন, আমিন।

 

 

 

 

বাচ্চাদের সমস্যার জন্য রুকইয়ার ব্যাপারে আরো বিস্তারিত

 বাচ্চাদের সমস্যার জন্য রুকইয়ার ব্যাপারে আরো বিস্তারিত

 No photo description available.

 

[ক]
বাচ্চা কারা?
– জন্মের পর থেকে এখনো বালেগ হয়নি যারা তারাই বাচ্চা।
বাচ্চাদের সমস্যাগুলোঃ
১। খাওয়া-দাওয়া করতে চায় না।
২। রাগ-জিদ বেশি।
৩। কথা শোনে না, বেয়াদব।
৪। পড়াশুনা করতে চায় না।
৫। টিভি, কার্টুন, মোবাইল, গেম নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকে।
৬। বয়সের তুলনায় কথা বলতে পারে না।
৭। বয়সের তুলনায় বুঝে কম।
৮। খাওয়া-দাওয়া ঠিক থাকার পরেও স্বাস্থ্য খারাপ
৯। কথা বেশি বলে কিন্তু কখন কি বলতে হবে বুঝে না।
১০। মারামারি করে
১১। বড় হয়েছে, তারপরও ঘুমালে বিছানা নষ্ট করে
১২। দুধের বাচ্চা মায়ের বুকের দুধ খেতে চায় না। মুখের কাছে নিলে ঠেলে সরিয়ে দেয়, কাঁদে।
১৩। রাতে ঘুমের মধ্যে ছটফট করে, চিৎকার দিয়ে জেগে উঠে কাঁদতে থাকে।
১৪। অকারনেই ভয় পায়, কিছু একটা দেখে ও সেদিকে ইশারা করে, তাকিয়ে থাকে।
১৫। সময় সময় চেহাড়ার রঙ পরিবর্তন হয়ে যায়, চেনা যায় না।
১৬। রেগে গেলে শরীরে অস্বাভাবিক শক্তি চলে আসে যা বয়সের সাথে মানানসই নয়।
১৭। অটিজমে আক্রান্ত।
[খ]
বাচ্চাদের মোটামুটিভাবে এই সমস্যাগুলোই হয়। এখন কথা হল, ১ থেকে ৭ নং সমস্যাগুলো বেশ কমন সমস্যা। জাতীয় সমস্যা টাইপ। যেসব বাচ্চাদের কেবল এই সমস্যাগুলোই আছে তাদের অভিভাবকদের জন্য পরামর্শ হল, বাচ্চাদের অধিক সময় দিন। বাবা-মার মনোযোগ আকর্ষন করার জন্য বাচ্চারা রাগ জিদ করে। কাজেই তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। সে যেটা চাইছে সেটা যদি তার জন্য ভাল না হয় তাহলে তাকে বুঝিয়ে বলুন। বার বার বুঝিয়ে বলুন। তারপরও মানতে না চাইলে তার মনোযোগ অন্য কোনদিকে ঘুড়িয়ে দিন। তার জিদের কাছে যদি হার মানেন তাহলে সে নিজের চাহিদা পূরণের জন্য বার বার জিদ করবে। যেটা তার জন্য ক্ষতিকর সেটা তাকে কখনই দিবেন না, সে যতই জিদ করুক। কাঁদতে কাঁদতে বমি করে দিলেও না।
খাবারে বৈচিত্র আনতে হবে। ফল খেতে চায় না? জুস করে দিন। ভাত খেতে চায় না? তাকে নিজে নিজে খেতে দিন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে খেলেও খেতে দিন। বিকল্প পুষ্টিকর খাবার খেতে দিতে পারেন। ছাতু, আখের গুড় খেতে দিতে পারেন। বাইরের খাবার পছন্দ করলে সেগুলো ঘরেই বানিয়ে দিন। এভাবে বিভিন্ন কিছু চিন্তা করতে পারেন। এভাবে বাকি পয়েন্টগুলো নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করে দেখতে পারেন।
[গ]
কিন্তু এই সমস্যাগুলোই যদি হঠাৎ করে দেখা দেয় তবে নজরের রুকইয়াহ করা উচিত। আর পরের সমস্যাগুলো যদি কোন বাচ্চার দেখা দেয় তাহলে নজরের রুকইয়াহ করবেন। ইনশাআল্লাহ উপকার পাবেন। তবে রুকইয়াহ প্রসঙ্গে যাবার আগে আরও দুই-একটা কথা বলি।
আক্বিকাঃ অনেক অভিভাবক আছেন বাচ্চার হবার পর আক্বিকা দিতে দেরি করেন। এটা মোটেও ঠিক না। বরং গর্ভাবস্থার জটিলতার জন্য আমরা যেভাবে প্রস্তুতি নেই বাচ্চার আক্বিকার জন্যও সেভাবে প্রস্তুতি থাকা উচিত। এতে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ হল। কেউ কেউ আক্বিকাকে সন্তানের দীর্ঘায়ু ও সুস্থতার জন্য সহায়কও বলেছেন। হাদিসের ভাবার্থ অনুযায়ী শিশুর হিফাজতের জন্য আকিকার গুরুত্ব রয়েছে।
মায়ের সমস্যাঃ বিশেষত ছোট বাচ্চার জন্য ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে মায়ের সমস্যা বাচ্চাকে প্রভাবিত করে। যেমন, বুকের দুধ খাওয়া বাচ্চার স্বাস্থ্য অনেক সময় মায়ের খাদ্যাভ্যাসের উপর নির্ভর করে। মার পেটে সমস্যা হলে বাচ্চারও হয়। একইভাবে, মায়ের যদি বদনজর, জ্বিন, যাদু সংক্রান্ত সমস্যা থাকে তাহলে তা বাচ্চাকে প্রভাবিত করতে পারে। কাজেই বাচ্চার রুকইয়াহ করার সাথে সাথে অভিভাবকদের নিজেদের সমস্যার ব্যাপারেও চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।
কৃমিঃ বাচ্চার স্বাস্থ্য না বাড়ার অন্যতম কারন এটি। কাজেই ডাক্তারের পরামর্শে সময় সময় মা এবং বাচ্চা দুজনেরইর কৃমি ওষুধ খাওয়া উচিত।
তাবিজঃ অনেক গর্ভবতী মা ইচ্ছায় হোক বা চাপে পড়ে হোক গর্ভাবস্থায় তাবিজ ব্যবহার করে থাকেন। তাদেরকে বলা হয় এই তাবিজ হল বাচ্চার যেন কোন ক্ষতি না হয় তার তাবিজ। অনেকটা বাচ্চার জন্য আল্লাহ তায়ালা যথেষ্ঠ নন। (নাউযুবিল্লাহ) জন্মের আগেই বাচ্চার পিছনে শয়তান লাগানোর অনেক বড় একটা ষড়যন্ত্র এই তাবিজ। দেখা যায়, একজন মা কোন ধরনের প্যারানরমাল সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন না। কিন্তু এসব কুফরী/শিরকি তাবিজের প্রভাবে তিনি এবং তার সন্তান নানা ধরনের জটিলতায় আক্রান্ত হচ্ছেন। কাজেই রুকইয়াহ করার আগে তাবিজ অবশ্যই নষ্ট করে ফেলতে হবে।
 
 
যাদুর জিনিস বা তাবিজ নষ্ট করার নিয়মঃ
-----------
সন্দেহজনক কিছু বা কোন তাবিজ যদি পাওয়া যায় তাহলে সেটা নষ্ট করার জন্য একটি পাত্রে পানি নিন। তারপর সেই পানিতে সুরা আ’রাফ ১১৭-১২২ নং আয়াত, ইউনুস ৮১-৮২, সুরা ত্বহা ৬৯, সূরা ফালাক্ব ৩ বার, সূরা নাস ৩ বার পড়ে ফুঁ দিন।
লক্ষণীয়ঃ
১। তাবিজ,পুতুল,কাগজ,যাদুকরের দেয়া যেকোনকিছু উপরের আয়াতগুলো পড়া পানিতে ডুবিয়ে রাখবেন কিছুক্ষণ। কাগজে লেখা থাকলে সেটা ঘষে মুছে ফেলার চেষ্টা করবেন। লেখা মুছার পরে ছিড়ে অনেকগুলো টুকরো করবেন। তারপর শুকিয়ে পুড়িয়ে ফেলবেন। পুড়ানোর সময়ে নিশ্বাসের সাথে সেটার ধোঁয়া নেয়া থেকে বিরত থাকবেন।
২। তাবিজ খালি হাতে না ধরে গ্লাভস ব্যবহার করতে পারেন। তাবিজ ধরার পূর্বে এবং নষ্ট করার পুরোটা সময়ে ফালাক, নাস পড়বেন।
৩। তামা বা অন্য ধাতুর তাবিজ বা আংটিতে খোদাই করা লেখা থাকলে লেখাটা ঘষে মুছে ফেলবেন। ঘষে মুছতে না পারলে পুড়িয়ে হলেও লেখাটা মুছে ফেলা জরুরী। নিজে করতে না পারলে কোন স্বর্ণকারের কাছে গিয়ে লেখাটা মুছে ফেলবেন।
৪। তাবিজে গিট দেয়া থাকলে সাবধানে প্রতিটা গিট খুলবেন। কোন পুতুল, মূর্তি, পাখি, মাছ ইত্যাদি পাওয়া গেলে সাবধানে খেয়াল করবেন এদের গায়ে কোন পিন আছে কিনা। থাকলে প্রতিটা পিন খুলবেন। পিনগুলোও পানিতে ডুবিয়ে রাখবেন। জীবন্ত কোনকিছু যেমন- পাখি পাওয়া গেলে তার ডানার নিচে এবং শরীরের প্রতিটা জায়গায় খুঁজে দেখবেন কোন তাবিজ,পিন বা সন্দেহজনক কিছু আছে কিনা। থাকলে এগুলো সাবধানে খুলে নিয়ে পাখিকে তাবিজ নষ্টের পানি দিয়ে ভিজিয়ে ছেড়ে দিবেন। তাবিজের ভেতরে কাগজ ছাড়াও অন্যকিছু থাকতে পারে। তাবিজ খুলতে গেলে অনেক সময় খোলস ভেঙ্গে বের করা লাগতে পারে। যাই থাকুক, ভাঙ্গা টুকরোসহ সবটুকুই পানিতে ঢালবেন। একইভাবে যাদুকরের দেয়া তেলপড়া,পানিপড়া ইত্যাদি জিনিসপত্র পানিতে ঢালবেন।
৫। ব্যবহৃত পানি ফেলার জন্য এবং তাবিজ পুড়ানোর জন্য, সাধারনত মানুষের যাতায়াত হয়না এমন কোন জায়গা ঠিক করে নিন।
৬। কোন জায়গায় তাবিজ রাখা আছে সন্দেহ হলে সেখানে পরপর তিনদিন তাবিজ নষ্টের পানিটা ছিটিয়ে দিন। কারো বাসার দেয়ালে,ফ্লোরে অথবা যেকোন স্থানে তাবিজ আঁকা অথবা খোদাই করা থাকলে লেখাটা ঘষে মুছতে হবে। তারপর তাবিজ নষ্টের পানিটা ওখানে ছিটিয়ে দিতে হবে। অনেক সময় বাসা বানানোর সময়ে প্রতি কোণায় তাবিজ রেখে দেয়া হয়। সেক্ষেত্রে এসব কোণায় তাবিজ নষ্টের পানিটা ছিটিয়ে দিবেন পরপর তিনদিন। আর দোয়া করবেন যেন আল্লাহ তাবিজ নষ্ট করে দেন।
৭। জ্যোতিষীর দেয়া কোন বিশেষ আংটি থাকলে তাবিজ নষ্টের পানিতে ডুবিয়ে রাখবেন। কিছুক্ষণ রেখে পাথরটা ভেঙে তারপর ফেলে দিবেন। জ্যোতিষীরা বিশ্বাস করে পাথরের ক্ষমতা আছে। তাই কোনমতেই এই পাথর রেখে দেয়া যাবেনা।
৮। আপনি তাবিজ ব্যবহার করলে উপরোক্ত নিয়ম অনুযায়ী তাবিজ নষ্ট করবেন। তারপর তাবিজ ব্যবহার করার জন্য তাওবা করবেন।
 
 
 
ছবিঃ বাচ্চাদের ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার না করাই নিরাপদ। মূলত অহেতুক কোন ছবি শেয়ার/তোলা থেকে বিরত থাকাই সাবধানতা।
[ঙ]
এবার রুকইয়াহ নিয়ে কথা বলি।
প্রথম ধাপঃ
বাচ্চাদের রুকইয়াহ করার জন্য প্রথমে যে কাজটা করবেন তা হল ঘরের সবার অযুর ব্যবহার করা পানি একটি পাত্রে জমা করবেন। তারপর গোসলের আগে সেই পানি বাচ্চার গায়ে ঢেলে দিবেন। এরপর ইচ্ছামত যেভাবে গোসল করানোর করবেন। বাচ্চাদের অনেকসময় ঘরের লোকদেরই নজর লাগে। তাই এই ব্যবস্থা। আর যদি জানা থাকে বা অনুমান করতে পারে বাচ্চার ওপর কার নজর লেগেছে, তাহলে শুধু তার অযুর পানি নিবেন। এই পদ্ধতি একবার করাই যথেষ্ঠ হবে ইনশাআল্লাহ।
দ্বিতীয় ধাপঃ
প্রথম ধাপ পার করার পরও যদি তেমন উন্নতি চোখে না পড়ে তাহলে এই পদ্ধতি অনুসরন করতে পারেন। বাবুর মাথায় হাত রেখে এই দুয়াগুলো পড়বেন এবং মাঝেমাঝে বাবুর গায়ে ফুঁ দিবেন, এভাবে কয়েকবার করবেন। বাবু যদি নিজেই পড়তে পারে তাহলে নিজের মাথায় বা বুকে হাত রেখেই পড়বে। অথবা পড়ার পর দু’হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে নিলেও হবে।
১.
أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
উ”ঈযুকুম বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মাহ। মিং কুল্লি শাইত্বা-নিও- ওয়াহা-ম্মাহ। ওয়ামিং কুল্লি “আঈনিল্লা-ম্মাহ।
২.
بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ، بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
বিসমিল্লা-হি আরকীক। মিং কুল্লি শাইয়িই ইউ’যীক। মিং শাররি কুল্লি নাফসিন আও “আইনি হাসিদ। আল্লা-হু ইয়াশফীক। বিসমিল্লা-হি আরকীক।
৩.
بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ
বিসমিল্লা-হি ইউবরীক। ওয়ামিং কুল্লি দা-ঈই ইয়াশফীক। ওয়ামিং শাররি হাসিদিন ইযা- হাসাদ। ওয়া শাররি কুল্লি যী “আঈন ।
৪.
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ، اشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
আল্লা-হুম্মা রাব্বান না-স। আযহিবিল বা’স । ইশফি ওয়াআংতাশ শা-ফী। লা-শিফাআ ইল্লা-শিফাউক। শিফাআল লা-ইউগা-দিরু সাক্বামা-।
দোয়াগুলোর বড় ফন্টের ছবি প্রথম কমেন্টে পাবেন।
এরপর সুরা ফাতিহা এবং আয়াতুল কুরসি ১বার। এবং সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস ৩ বার পড়বেন এরপর বাবুকে ফুঁ দিবেন। চাইলে সুরা ফালাক নাস অনেকবার পুনরাবৃত্তি করতে পারেন। এটা আম রুকইয়াহ। সবধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি উপকারী।
তৃতীয় ধাপঃ
সমস্যা বেশি হলে উল্লেখিত পদ্ধতিতে রুকইয়া করা শেষে, এগুলো আরেকবার পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন কয়েকবার বাবুকে খাওয়াবেন এবং বালতির পানিতে ফু দিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করাবেন। তবে বাথরুমে বসে এসব দোয়া/আয়াত পড়বেন না। বালতি বাইরে নিয়ে এসে পড়বেন। সমস্যা ভালো হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন করবেন এই দুটো কাজ। এছাড়া কোন অঙ্গে ব্যাথা থাকলে এসব দোয়া-কালাম পড়ে তেলে ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন মালিশ করতে পারেন।
উল্লেখিত সবগুলো দোয়া রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হাদিস থেকে নেয়া।
[চ]
রুকইয়াহর ইফেক্টঃ
বাবুর রুকইয়াহ করলে অনেক সময় সাথে সাথে টয়লেট হতে পারে, বমি হতে পারে। এমন হলে ইনশাআল্লাহ দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে। আবার অনেক সময় জ্বর, সর্দি ইত্যাদি হতে পারে। মোট কথা রুকইয়াহ করার পর যদি কোন অবস্থার অবনতি হয় তাহলে বুঝতে হবে রুকইয়াহ কাজ করা শুরু করেছে। তখন আরও ধৈর্য্যের সাথে যত্ন নিয়ে রুকইয়াহ চালিয়ে যেতে হবে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। এভাবে কমপক্ষে ৭ দিন করা উচিত (দ্বিতীয় ও তৃতীয় নিয়মের রুকইয়ার ক্ষেত্রে) ।
নোটঃ
১) যদি বুঝতে না পারেন বদনজরের সমস্যা কিনা তবুও বদনজরের রুকইয়াহ করতে পারেন। এর কোন ক্ষতি নেই। যদি নজর সংক্রান্ত কোন সমস্যা থাকে তাহলে ইনশাআল্লাহ চলে যাবে। আর যদি না থাকে তাহলেতো নেই-ই। এর কোন সাইড ইফেক্ট নেই।
২) অন্যান্য রোগের জন্যও এই নিয়মে রুকইয়া করতে পারেন, ইনশাআল্লাহ উপকারী হবে।
৩) ডাক্তারী সমস্যার জন্য অবশ্যই এর পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
[ছ]
বয়স হয়ে যাবার পরেও যারা বিছানা নষ্ট করেঃ
তাদের ক্ষেত্রে পরামর্শ হল, রাতে বিছানায় যাবার কমপক্ষে এক ঘন্টা আগে রাতে খাবার শেষ করবেন। এরপর বিছানায় যাবার আগে টয়লেট সেরে অযু করাবেন। এরপর নিচের লিংকে দেয়া ঘুমের আগের আমলগুলো করাবেন। যারা নিজেরা পড়তে পারে না তাদেরকে অন্য কেউ পড়ে ফু দিবে। একইভাবে সকালে ও সন্ধ্যায় উল্লেখিত দোয়াগুলো পড়ে ফু দিবে। ইনশাআল্লাহ ধীরে ধীরে সমস্যা চলে যাবে।
[জ]
অটিজমে আক্রান্তঃ
১। প্রথমে ৭ দিন ডিটক্স করাবেন।
পাশাপাশি ruqyahbd.org/download লিংক থেকে বিভিন্ন কারীদের সাধারন রুকইয়াহ (১১ থেকে ২১ পর্যন্ত) থেকে যেকোন একটা শোনাতে পারেন।
একই সাথে সুরা আর-রাহমান শোনাবেন। যদি আপনি নিজে তেলাওয়াত করে শোনাতে পারেন তাহলে আরও ভাল। নাহলে বিভিন্ন এপ্সে পাবেন বা ইন্টারনেট থেকে অডিও ডাউনলোড করে নিন।
২। ডিটক্স শেষ হলে সাধারন অসুস্থতার রুকইয়াহ করবেন। এর নিয়ম উপরের ২ এবং ৩নং পদ্ধতির মতই। নিচের লিংকে এবিষয়ে আরও বিবরণ পাবেন। এভাবে রুকইয়াহ চালিয়ে যেতে থাকবেন। আল্লাহ চাইলে উপকার পাবেন।
 
সাধারন অসুস্থতার জন্য রুকইয়াহ 
শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার জন্য রুকইয়াহ
---------------------------
[ক]
বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের জন্য রুকইয়া করতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনেক দু’আ-কালাম পাওয়া যায়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুগীর মাথায়/কপালে হাত রেখে এসব পড়তেন, কখনো এসব পড়ে অসুস্থ ব্যক্তিকে ফুঁ দিতেন। সব এখানে লেখা সম্ভব না, কমন একটা রুকইয়া বলা হচ্ছে। এটা ফলো করলে ইনশাআল্লাহ উপকার পাওয়া যাবে।
.
[খ]
কোরআন থেকে প্রসিদ্ধ কয়েকটি আয়াতে রুকইয়া- "সুরা ফাতিহা, সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস, ৬টি আয়াতে শিফা, ৮টি আয়াতে সালাম” এগুলো তিনবার বা সাতবার করে পড়া ।
এর সাথে রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত রুকইয়ার দোয়াগুলো পড়া।
৬টি আয়াতে শিফা (৯/১৪, ১০/৫৭, ১৬/৬৯, ১৭/৮২, ২৬/৮০, ৪১/৪৪)
১.وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ
২. وَشِفَاء لِّمَا فِي الصُّدُورِ
৩. يخْرُجُ مِن بُطُونِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاء لِلنَّاسِ
৪. وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاء وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
৫. وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ
৬. قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاء
.
এরপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত অনেক দো’আ আছে, এর মাঝে কয়েকটি হল-
. اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ، اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
২. بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
৩. بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ
৪. اَسْأَلُ اللهَ الْعَظِيْم، رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيْم، اَنْ يَّشْفِيَكْ
৫. بِسْمِ اللَّه، بِسْمِ اللَّه، بِسْمِ اللَّه، أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللَّهِ وَقُدْرَتِهِ، مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ
.
শারীরিক অসুস্থতার জন্য রুকইয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি-
১. এগুলো সরাসরি পড়ে রুগীকে ফুঁ দেয়া, বিশেষত আক্রান্ত স্থানে ফুঁ দেয়া।
২. রুগীর মাথায় হাত রেখে পড়া, অথবা ব্যাথার যায়গায় হাত রেখে পড়া।
৩. এসব পড়ার পর কালোজিরার তেল বা অলিভ অয়েলের ওপর ফুঁ দিয়ে ব্যবহার করতে পারেন, মালিশ করতে পারেন।
৪. পুষ্টিকর কোন খাদ্য, কালোজিরা, মধু, পানি, ভিটামিন অথবা ডাক্তারের দেয়া ঔষধে এগুলো পড়ে ফুঁ দিয়ে খেতে পারেন।
৫. আর এর পাশাপাশি রুকইয়া শুনতে চাইলে "শাইখ লুহাইদান, হুযাইফি অথবা সা'দ আল গামিদির আধাঘণ্টার রুকইয়া শুনতে পারেন (অডিও লিংক - ruqyahbd.org/download )
৬. আর রুকইয়ার গোসলও বিভিন্ন অসুখের জন্য খুব উপকারী। (গোসলের পানিতে হাত রেখে সাতবার করে দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক, নাস পড়া। সেই পানি দিয়ে গোসল করা। অথবা শুধু এগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে গোসল করা।)
.
[গ]
ডাক্তারের চিকিৎসা নেয়ার পাশাপাশি পরপর কয়েকদিন উপরোক্ত এক বা একাধিক রুকইয়ার টিপস অনুসরণ করা। এর সাথে আল্লাহর কাছে তাহাজ্জুদ এবং নফল নামাজ পড়ে বেশি বেশি দোয়া করা। সাদকাহ করা।
.
[ঘ]
মানসিক সমস্যার জন্য সুরা ইয়াসিন, সফফাত, দুখান, জ্বিন, তিনকুল – এসব তিলাওয়াত করা খুব উপকারী। এসব হয়তো তিলাওয়াত করেছেন আগেও, কিন্তু এমনি তিলাওয়াত করা আর রুকইয়াহ বা চিকিৎসার নিয়াতে তিলাওয়াত করার মাঝে পুর্ব-পশ্চিম ফারাক।
তো, রুগীর ওপর এসব তিলাওয়াত করা। সমস্যা নিজের হলে, নিজে তিলাওয়াত করলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। পাশাপাশি রুকইয়ার গোসল করা যেতে পারে। নিদ্রাহীনতার চিকিৎসাতে এই সুরাগুলোর রুকইয়া আলহামদুলিল্লাহ খুব বেশি উপকারী। তিলাওয়াত করার দুর্বল বিকল্প হিসেবে শোনা যেতে পারে। 

 
 
[ঝ]
সবশেষে একটি জরুরী কথা বলি। আপনি রুকইয়াহ করেন বা না করেন, আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দু’আ করবেন নিজের সন্তানের জন্য। নিজের কৃত পাপের জন্য তওবা ইস্তেগফার করবেন। সাধ্যমত দান-সদকা করবেন। ঘরে ইসলামী পরিবেশ কায়েক করবেন আর নামায ও পর্দার দিকে বিশেষ মনোযোগ দিবেন। ইনশাআল্লাহ অনেক বিপদ-আপদ, রোগবালাই থেকে বেচে যাবেন।
 
 
 

Wednesday, May 5, 2021

মুখতাসার রুকইয়াহ শারইয়্যাহ | সারসংক্ষেপ রুকইয়াহ শারইয়্যাহ!

 

মুখতাসার রুকইয়াহ শারইয়্যাহ | সারসংক্ষেপ রুকইয়াহ শারইয়্যাহ!

[১] অবতরণিকা-

রুকইয়া শারইয়াহ বিষয়ে অনেক লম্বা চওড়া লেখা আছে, ইতোমধ্যে আমাদের রুকইয়াহ শারইয়াহ সিরিজও শেষ। আল্লাহর অনুগ্রহে “রুকইয়াহ” (আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ) নামে একটি বইও প্রকাশ হয়েছে। এসব যায়গায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আজ আমরা সংক্ষেপে রুকইয়াহ পরিচিতি এবং বিভিন্ন সমস্যার জন্য রুকইয়াহ করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানবো। বলতে পারেন এই লেখাটি অতীত ও ভবিষ্যতের পুরো রুকইয়াহ সিরিজের সারাংশ।

প্রবন্ধটির প্রথম সংস্করণ ১৭ই জুন ২০১৭তে প্রকাশ হয়েছিল। এরপর অনেক কিছু সংশোধন এবং সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। এটি পঞ্চম সংস্করণ। এখানে আরও কিছু যোগ করার পরামর্শ থাকলে জানাবেন, আর কোনো পুস্তক-পত্রিকা অথবা ফেসবুকের বাহিরে অন্য কোথাও প্রকাশ করতে চাইলে অনুগ্রহ করে অনুমতি নিবেন।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে হিফাজত করুন। আমীন!

[২] প্রাথমিক ধারণা-

রুকইয়া, রুকইয়াহ, রুকিয়া, রুকিয়াহ, রুকাইয়া সহ বিভিন্ন উচ্চারণ প্রচলিত রয়েছে, যার মূল হচ্ছে আরবি শব্দ (رقية) আর শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ রুকইয়াহ অথবা রুকইয়া।

রুকইয়াহ কী? - রুকইয়াহ অর্থ ঝাড়ফুঁক করা, মন্ত্র পড়া, তাবিজ-কবচ, মাদুলি ইত্যাদি। আর রুকইয়াহ শারইয়্যাহ (رقية شرعية) মানে শরিয়াত সম্মত রুকইয়াহ, কোরআনের আয়াত অথবা হাদিসে বর্ণিত দোয়া দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা। তবে স্বাভাবিকভাবে ‘রুকইয়া’ শব্দটি দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা বুঝায়। এই ঝাড়ফুঁক সরাসরি কারো ওপর হতে পারে, অথবা কোনো পানি বা খাদ্যের ওপর করে সেটা খাওয়া অথবা ব্যাবহার করা হতে পারে। এক্ষেত্রে রুকইয়ার পানি, অথবা রুকইয়ার গোসল ইত্যাদি পরিভাষা ব্যবহার হয়। আর সবগুলোই সালাফে সালেহিন থেকে বর্নিত আছে।

রুকইয়ার বিধানঃ রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “রুকইয়াতে যদি শিরক না থাকে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৫৪৪)

বিশুদ্ধ আক্বিদাঃ উলামায়ে কিরামের মতে রুকইয়া করার পূর্বে এই আক্বিদা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া উচিত ‘রুকইয়া বা ঝাড়ফুঁকের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই, সব ক্ষমতা আল্লাহ তা’আলার, আল্লাহ চাইলে শিফা হবে, নইলে নয়।’

ফিক্বহী বিধানঃ ফক্বিহদের মতে রুকইয়াহ বৈধ হওয়ার জন্য ৪ শর্ত পূরণ হওয়া আবশ্যক, যথা-

১. এতে কোন শিরক বা কুফরির সংমিশ্রণ না থাকা।
২. ঝাড়ফুঁকের নিজের কোন সক্ষমতা আছে; এমন কোন বিশ্বাস না রাখা। বরং বিশ্বাস করা, আল্লাহর ইচ্ছাতেই এর প্রভাব হয়, আল্লাহর হুকুমেই এর দ্বারা আরোগ্য হয়।
৩. এখানে পাঠ করা জিনিসগুলো স্পষ্ট আরবি ভাষায় হওয়া।
৪. যদি অন্য ভাষায় হয়, তবে এমন হওয়া; যার অর্থ স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে।

রুকইয়া প্রকারভেদঃ বিভিন্ন ভাবে রুকইয়া করা হয়, যেমনঃ দোয়া বা আয়াত পড়ে ফুঁ দেয়া হয়, মাথায় বা আক্রান্ত স্থানে হাত রেখে দোয়া/আয়াত পড়া হয়। এছাড়া পানি, তেল, খাদ্য বা অন্য কিছুতে দোয়া অথবা আয়াত পড়ে ফুঁ দিয়ে খাওয়া এবং ব্যাবহার করা হয়।

পূর্বশর্তঃ রুকইয়া করে উপকার পেতে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন।

১. নিয়্যাত (কেন রুকইয়া করছেন, সেজন্য নির্দিষ্টভাবে নিয়াত করা)
২. ইয়াক্বিন (এব্যাপারে ইয়াকিন রাখা যে, আল্লাহর কালামে শিফা আছে)
৩. মেহনত (অনেক কষ্ট হলেও, সুস্থ হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরে রুকইয়া চালিয়ে যাওয়া)।

লক্ষণীয়ঃ রুকইয়ার ফায়দা ঠিকমতো পাওয়ার জন্য দৈনন্দিনের ফরজ অবশ্যই পালন করতে হবে, পাশাপাশি সুন্নাতের প্রতিও যত্নবান হতে হবে। যথাসম্ভব গুনাহ থেকে বাঁচতে হবে। (মেয়েদের জন্য পর্দার বিধানও ফরজ) ঘরে কোনো প্রাণীর ছবি / ভাস্কর্য রাখা যাবেনা। আর সুরক্ষার জন্য সকাল-সন্ধ্যার মাসনুন আমলগুলো অবশ্যই করতে হবে। আর ইতিমধ্যে শারীরিক ক্ষতি হয়ে গেলে, সেই ঘাটতি পোষানোর জন্য রুকইয়ার পাশাপাশি ডাক্তারের চিকিৎসাও চালিয়ে যেতে হবে।

[৩] বদনজর সমস্যা-

আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:

বদনজর আক্রান্ত হওয়ার অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে, এরমাঝে কয়েকটি হচ্ছে-

  1. পড়ালেখা বা কোন কিছুতে অনেক ভাল ছিল, হঠাৎ ধ্বস নামা।
  2. কোন কাজে মনোযোগ না থাকা। নামায, যিকর, পড়াশোনাতে মন না বসা।
  3. প্রায়শই শরীর দুর্বল থাকা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব লাগা।
  4. বুক ধড়পড় করা, দমবন্ধ অস্বস্তি লাগা। মেজাজ বিগড়ে থাকা।
  5. অতিরিক্ত চুল পড়া। পেটে প্রচুর গ্যাস হওয়া।
  6. একেরপর এক অসুখ লেগে থাকা, দীর্ঘ চিকিৎসাতেও ভালো না হওয়া।
  7. ব্যবসায়-লেনদেনে ঝামেলা লেগেই থাকা। সব কিছুতেই লস হওয়া।

বদনজরের জন্য রুকইয়াহ:

যদি বুঝা যায় অমুকের জন্য নজর লেগেছে, তাহলে তাকে অযু করতে বলুন, এবংওযুর পানি গুলো আক্রান্তের গায়ে ঢেলে দিন। এরপর চাইলে ভালো পানি দিয়ে গোসল করুন। এতটুকুতেই নজর ভালো হয়ে যাবে ইনশা-আল্লাহ।

আর বদনজরের সেলফ রুকইয়া হচ্ছে, বদনজরের রুকইয়া তিলাওয়াত করবেন, অথবা তিলাওয়াত শুনবেন (ডাউনলোড লিংক নিচে)। এর পাশাপাশি ১ম অথবা ২য় নিয়মে রুকইয়ার গোসল করবেন। আর এভাবে লাগাতার ৩ থেকে ৭ দিন করবেন। প্রয়োজনে কয়েকদিন বিরতি দিয়ে আবার শুরু করুন, প্রতিদিন কয়েকবার রুকইয়া শুনুন, আর একবার রুকইয়ার গোসল করুন। এভাবে সমস্যা ভালো হওয়া পর্যন্ত করতে থাকুন। সমস্যা ভালো হওয়ার পরেও কয়েকদিন রুকইয়াহ করা উচিত।

[৪] রুকইয়ার গোসল-

১ম নিয়ম: একটা বালতিতে পানি নিবেন। তারপর পানিতে দুইহাত ডুবিয়ে যেকোনো দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস, ফালাক্ব, নাস, শেষে আবার কোনো দরুদ শরিফ-সব ৭বার করে পড়বেন। পড়ার পর হাত উঠাবেন এবং এই পানি দিয়ে গোসল করবেন।

২য় নিয়ম: একটা বালতিতে পানি নিন। ওপরের দোয়া-কালামগুলো পড়ুন আর মাঝেমাঝে ফুঁ দিন। এরপর ওই পান ইদিয়ে গোসল করুন।

৩য় নিয়ম: (জাদুর সমস্যার জন্য বিশেষভাবে উপকারী বরই পাতার গোসল) ৭টা বরই পাতা বেটে পানিতে গুলিয়ে নিন, এবং সেখানে আয়াতুল কুরসি, সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস- ৩বার করে পড়ে ফুঁ দিন। এরপর এই পানি থেকে তিন ঢোক পান করুন, আর বাকিটা দিয়ে গোসল করুন।

(যদি টয়লেট আর গোসলখানা একসাথে থাকে, তাহলে অবশ্যই বালতি বাহিরে এনে এসব পড়বেন। প্রথমে এই পানি দিয়ে গোসল করে এরপর চাইলে অন্য পানি দিয়ে ইচ্ছামত গোসল করতে পারেন। যার সমস্যা সে পড়তে না পারলে অন্য কেউ তার জন্য পড়বে, এবং অসুস্থ ব্যক্তি শুধু গোসল করবে।)

[৫] জিনের স্পর্শ-

আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:

জিন দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে, এরমাঝে কয়েকটি হচ্ছে-

  1. রাতে ঠিকমত ঘুমাতে না পারা। ঘুমালেও বারবার জেগে ওঠা।
  2. প্রায়শই ঘুমের মাঝে বোবা ধরা।
  3. ভয়ংকর স্বপ্ন দেখা। উঁচু থেকে পড়ে যেতে, কোন প্রাণীকে আক্রমণ করতে দেখা।
  4. দীর্ঘ মাথাব্যথা, অথবা অন্য কোন অঙ্গে সবসময় ব্যাথা থাকা।
  5. নামাজ, তিলাওয়াত, যিকির আযকারে আগ্রহ উঠে যাওয়া।
  6. মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকা, একটুতেই রেগে যাওয়া।
  7. আযান বা কোরআন তিলাওয়াত সহ্য না হওয়া।

জ্বিনের আসরের জন্য রুকইয়াহ:

যিনি রুকইয়া করবেন তিনি প্রথমে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে নিজের শরীরে হাত বুলিয়ে নিবেন। এরপর রুকইয়া শুরু করবেন। রুগীর পাশে বসে জোর আওয়াজে রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়তে থাকুন। রুকইয়ার অনেক আয়াত আছে সেগুলো শেষে বলা হবে। তবে জ্বিনের রোগীর রুকইয়ার জন্য স্বাভাবিকভাবে-

১. সুরা ফাতিহা
২. আয়াতুল কুরসি
৩. বাকারার শেষ ২ আয়াত
৪. সুরা ইখলাস, ফালাক, সুরা নাস। সম্ভব হলে এর সাথে-
৫. সুরা মু’মিনুনের ১১৫-১১৮ নং আয়াত
৬. সুরা সফফাতের প্রথম ১০ আয়াত এবং
৭. সুরা জিনের ১-৯ আয়াত পড়া যেতে পারে।

জ্বিন ছেড়ে দেয়া পর্যন্ত এগুলো বারবার পড়তে থাকুন, পড়ার মাঝেমাঝে রুগীর ওপর ফুঁ দিতে পারেন, (বৈধ ক্ষেত্রে) মাঝেমাঝে রুগীর মাথায় হাত রেখে পড়ুন। আর পানিতে ফুঁ দেয়ার পর মুখে এবং হাতে-পায়ে ছিটিয়ে দিন। জিন কথা বলতে শুরু করলে মাঝেমাঝে তাকে চলে যাওয়ার ব্যাপারে নির্দেশ দিতে হবে, এরপর আবার অবিরত তিলাওয়াত চালু রাখতে হবে। জ্বিনের রুগীর ক্ষেত্রে সাধারণত কথাবার্তা বলে জ্বিন বিদায় করতে হয়। এক্ষেত্রে জ্বিনের কথায় ঘাবড়ানো যাবেনা, তার কথা সহজে বিশ্বাসও করা যাবে না। হুমকিধামকি দিলে তাকেই উল্টা ধমক দিতে হবে। মোট কথা, যিনি রুকইয়া করবেন তাঁকে উপস্থিতবুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে। একদিনে না গেলে পরপর কয়েকদিন কয়েকঘন্টা করে এভাবে রুকইয়া করে যেতে হবে। ইনশাআল্লাহ এক পর্যায়ে জ্বিন পালাতে বাধ্য হবে।

[৬] বাড়িতে জ্বিনের উৎপাত থাকলে-

বাড়িতে জ্বিনের কোনো সমস্যা থাকলে পরপর তিনদিন পূর্ন সুরা বাক্বারা তিলাওয়াত করুন, এরপর আযান দিন। তাহলে ইনশাআল্লাহ সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে। তিলাওয়াত না করে প্রতিদিন যদি সুরা বাক্বারা প্লে করা হয় তাহলেও ফায়দা পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। তবে সবচেয়ে ভালো ফল পেলে তিলাওয়াত করা উচিত। এরপর প্রতিমাসে অন্তত এক দুইদিন সুরা বাকারা পড়বেন। অধিক ফায়দার জন্য চাইলে সুরা বাকারা পড়া শেষে পানিতে ফুঁ দেয়ার পর পুরো বাড়িতে ছিটিয়ে দিতে পারেন।

আর ঘরে প্রবেশের সময়, বের হবার সময়, দরজা-জানালা বন্ধের সময় বিসমিল্লাহ বলবেন। সন্ধ্যা বেলায় জানালা বন্ধ রাখবেন। ঘরে কোন প্রাণী বা মানুষের ছবি অথবা মূর্তি ঝুলিয়ে রাখবেন না। ইনশাআল্লাহ খুব শীঘ্রই সমস্যা কেটে যাবে।

[৭] যাদুগ্রস্ত-

জাদু বা ব্ল্যাক ম্যাজিকে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:

অনেক সময় যাদু করতে জ্বিনের সাহায্য নেয়া হয়, তাই যাদুগ্রস্ত রোগীর মাঝে জিন আক্রান্তের কিছু লক্ষণও দেখা যেতে পারে। এছাড়াও যাদুগ্রস্ত রোগীর মাঝে কিছু বিশেষ লক্ষণ দেখা যেতে পারে। যেমন:

  1. হঠাৎ কারও প্রতি বা কোন কিছুর প্রতি তীব্র ভালবাসা অথবা ঘৃণা তৈরি হওয়া, যা আগে ছিল না।
  2. বিশেষ কোন কারন ছাড়াই জটিল-কঠিন রোগে ভোগা। যার চিকিৎসা করলেও সুস্থ না হওয়া।
  3. পরিবারের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি লেগেই থাকা। বিশেষতঃ স্বামীস্ত্রীর মাঝে।
  4. দৃষ্টিভঙ্গি বা ব্যক্তিত্বে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যাওয়া। যাতে নিজেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়, চারপাশের মানুষও কষ্ট পায়।
  5. অদ্ভুত আচরণ করা। যেমন, কোন কাজ একদমই করতে না চাওয়া। কিংবা দিন-রাতের নির্দিষ্ট কোন সময়ে ঘরের বাইরে যেতে না চাওয়া।
  6. মেরুদণ্ডের নিচের দিকে ব্যাথা করা।
  7. বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মেজাজ খারাপ, মাথা ব্যথা অথবা অসুস্থ থাকা।

যাদু আক্রান্ত হলে বুঝার উপায়:

ওপরের এক বা একাধিক লক্ষণের সাথে মিল পাওয়া যাবে। আর যাদু আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়লে, অথবা অডিও শুনলে অস্বাভাবিক অনুভূতি হবে। যেমন, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, বমি আসা, বুক ধড়ফড় করা, শরীর অবশ হয়ে আসা ইত্যাদি।

জাদুর সমস্যার জন্য রুকইয়া:

সমস্যার ধরণ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার রুকইয়াহ করতে পরামর্শ হয়। তবে প্রসিদ্ধ সেলফ রুকইয়া হচ্ছে- প্রথমে সমস্যার জন্য নিয়াত ঠিক করে, ইস্তিগফার দরুদ শরিফ পড়ে শুরু করুন। তারপর রুকইয়ার আয়াতগুলো পাঠ করে অথবা কোন রুকইয়া শুনে নিশ্চিত হয়ে নিন আসলেই সমস্যা আছে কি না! শাইখ সুদাইস অথবা লুহাইদানের রুকইয়া শুনতে পারেন (ডাউনলোড লিংক নিচে)। সবশেষে একটি পাত্রে পানি নিন, এরপর নিচের আয়াতগুলো ৩বার অথবা ৭বার করে পড়ুন, পড়ার মাঝেমাঝে পানিতে ফুঁ দিন-

ক. সুরা ফাতিহা এবং আয়াতুল কুরসি
খ. সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২, ইউনুস ৮১-৮২ সুরা ত্বহা ৬৯নং আয়াত

١. وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَۖ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُوْنَ - فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُونَ - فَغُلِبُوْا هُنَالِكَ وَانقَلَبُوْا صَاغِرِيْنَ - وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِيْنَ -قَالُوْا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ - رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُوْنَ -

٢. فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُۖ إِنَّ اللّٰهَ سَيُبْطِلُهُۖ إِنَّ اللّٰهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِيْنَ - وَيُحِقُّ اللّٰهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْكَرِهَ الْمُجْرِمُونَ -

٣. وَأَلْقِ مَافِي يَمِيْنِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوْاۖ إِنَّمَا صَنَعُوْا كَيْدُ سَاحِرٍۖ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتٰى -

গ. এরপর সুরা ইখলাস, ফালাক্ব, নাস- সব ৩বার করে।

সমস্যা অনুযায়ী সাতদিন অথবা এরচেয়ে বেশি সময় যাবত প্রতিদিন সকাল-বিকাল এই পানি খেতে হবে, এবং গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করতে হবে। আর জাদুর সমস্যার থেকে সুস্থতা লাভের নিয়াত করে প্রতিদিন রুকইয়ার আয়াতগুলো তিলাওয়াত করতে হবে, অথবা দেড়-দুইঘণ্টা রুকইয়ার অডিও শুনতে হবে। কোন ক্বারির সাধারণ রুকইয়া একবার, আর সুরা ইখলাস, ফালাক, নাসের রুকইয়াহ একাধিকবার (ডাউনলোড লিংক নিচে)। এর পাশাপাশি আল্লাহর কাছে সুস্থতার জন্য দোয়া করতে হবে।

এভাবে রুকইয়াহ করার পর সপ্তাহ শেষে আপনার অবস্থা পর্যালোচনা করুন, প্রয়োজনে চিকিৎসার মেয়ার বাড়িয়ে নিন। রুকইয়াহ চলাকালীন সমস্যা বেড়ে গেলেও বাদ দিবেন না, হাল ছাড়বেন না। সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া পর্যন্ত রুকইয়া অবিরত রাখুন।

দ্বিতীয়ত: শুরুতে বর্ণনা করা রুকইয়ার গোসলগুলোর মাঝে ৩য় পদ্ধতিটি জাদুর চিকিৎসায় খুব উপকারী। সমস্যা বেশি হলে প্রথমে কয়েকদিন উল্লেখিত নিয়মে বরই পাতার গোসল করে এরপর সেলফ রুকইয়াহ শুরু করা যেতে পারে। ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুতই জাদুর সমস্যা থেকে মুক্ত হয়ে যাবেন।

যাদুর কোন জিনিশ অথবা তাবিজ খুঁজে পেলে:

সন্দেহজনক কোন তাবিজ পেলে অথবা কি দিয়ে যাদু করেছে যদি পাওয়া যায়, তাহলে সেসব বের করে আলাদা আলাদা করে ফেলুন, কোন গিরা বা বাধন থাকলে কেটে ফেলুন, শক্ত কিছু দিয়ে বাধা থাকলে ভেঙ্গে ফেলুন। এরপর একটা পাত্রে পানি নিয়ে ওপরে বলা জাদুর রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিন, এরপর তাবিজ অথবা যাদুর জিনিশগুলো ডুবিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ, তাহলে ইনশাআল্লাহ যাদু নষ্ট হয়ে যাবে। পরে সেগুলো পুড়িয়ে বা নষ্ট করে ফেলুন।

[৮] একাধিক সমস্যায় আক্রান্ত হলে:

একসাথে যাদু, জ্বিন কিংবা বদনজর সম্পর্কিত একাধিক সমস্যায় আক্রান্ত হলে প্রথমে কিছুদিন বদনজরের জন্য রুকইয়া করতে হবে, এরপর জ্বিনের জন্য এবং যাদুর জন্য রুকইয়া করতে হবে। এর মাঝেমাঝে শারীরিক রোগব্যাধির জন্য চিকিৎসা নেয়া বা ডাক্তারের ঔষধ সেবন করতেও কোন সমস্যা নেই। কিন্তু রুকইয়াহ করার কারণে ব্যাথা শুরু হলে এজন্য ঔষধ খাবেন না। বরং রুকইয়ার গোসল করলে অনেকটা স্বস্তি পাবেন ইনশাআল্লাহ।

[৯] ওয়াসওয়াসা রোগ-

আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:

  1. অকারণে সর্বদা চিন্তিত থাকা। মাথায় বিক্ষিপ্ত চিন্তা ঘোরাঘুরি করার কারণে কোন কিছুতে মন দিতে না পারা।
  2. ওযু-গোসল অথবা নামাজের বিশুদ্ধতা নিয়ে অতিরিক্ত দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকা।
  3. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা। টয়লেট বা গোসলখানায় অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা। এক অঙ্গ বারবার ধোয়া, এরপরেও তৃপ্ত হতে না পারা।
  4. বারবার মনে হওয়া ওযু ভেঙ্গে যাচ্ছে, অথবা প্রসাবের ফোঁটা পড়ছে, অথবা বায়ু বের হয়ে যাচ্ছে। বিশেষতঃ নামাজের সময় এমন হওয়া।
  5. আল্লাহ তা’আলা, রাসুল ﷺ অথবা ইসলামের ব্যাপারে বারবার মাথায় অবমাননাকর চিন্তা আসা।
  6. বারবার নামাজের রাকাত ভুলে যাওয়া, কিরাত, রুকু-সাজদা ইত্যাদির ব্যাপারে সন্দেহে ভোগা।

সমস্যা বেশিদিন পুরনো হয়ে গেলে এসব থেকে আরও শারীরিক-মানসিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর জিন সংক্রান্ত কোন সমস্যা (জিনের বদনজর বা জিনের আসর) থাকলেও ওয়াসওয়াসার সমস্যা প্রকট হতে পারে।

ওয়াসওয়াসার প্রতিকার-

১. এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়া। প্রতি নামাজের আগে-পরে, অন্যান্য ইবাদতের সময়, কোন গুনাহের জন্য ওয়াসওয়াসা অনুভব করলে এটা পড়া -

أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ، مِنْ غَضَبِهٖ وَعِقَابِهِ، وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ، وَأَنْ يَّحْضُرُوْنِ

ঈমান নিয়ে সংশয় উদিত হলে পড়া (সুরা হাদীদ, আয়াত নং ৩)

هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ ۖ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْم

[এছাড়া "আমানতু বিল্লাহ বলা" এবং "সুরা ইখলাস পড়ার" কথাও বর্ণিত হয়েছে] এবং এরপর ওয়াসওয়াসা পাত্তা না দিয়ে অন্য কিছুতে ব্যস্ত হয়ে যাওয়া।

২. পুরুষ হলে জামাআতের সাথে নামাজ পড়া, মুত্তাকী পরহেজগারদের সাথে উঠাবসা করা।

৩. নামাজে ওয়াসওয়াসা হলে বামে হালকা করে ৩বার থুতু ফালানো। আর রাকাত ভুলে গেলে- মনে থাকা কম সংখ্যাটা ধরে, এরপর প্রতি রাকাতে আত্তাহিয়্যাতু পড়া, আর নামাজের শেষে সাহু সাজদা দেয়া।

৫. সকাল-সন্ধ্যায় ও ঘুমের আগের আমলগুলো গুরুত্বের সাথে করা। টয়লেটে প্রবেশের দোয়া পড়া।

৬. আয়াতুল হারক (আযাব এবং জাহান্নাম সংক্রান্ত আয়াত) বেশি বেশি তিলাওয়াত করা। এবং প্রতিদিন এসবের তিলাওয়াত শোনা। (ডাউনলোড লিংক নিচে)

৭. সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক, নাস - ৩বার করে। এরপর শুধু সুরা নাস অনেক বার (৭বার/৩৩বার/আরও বেশি) পড়ে পানি আর অলিভ অয়েলে ফুঁ দেয়া। এরপর সুস্থতার নিয়াতে প্রতিদিন ২-৩ বেলা এই পানি পান করা। মাথায় এবং বুকে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা।

৮. বদনজর বা জিনের সমস্যা থাকলে সে অনুযায়ী রুকইয়াহ করা। যথাসম্ভবত ওয়াসওয়াসা পাত্তা না দেয়া; ইগনোর করা, এমনকি মুখে বিরক্তির ভাবও প্রকাশ না করা। আর আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকা।

[১০] সাধারণ অসুস্থতার জন্য রুকইয়াহ:

বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের রুকইয়ার জন্য রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কিরাম রা. এবং বিভিন্ন যুগের সালাফদের থেকে অনেক দু’আ-কালাম পাওয়া যায়, সুস্থতা লাভের নিয়াতে সেসব গুরুত্বের সাথে পড়া।

যেমন, কোরআন থেকে প্রসিদ্ধ কয়েকটি রুকইয়া হচ্ছে- সুরা ফাতিহা, ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস এবং ৬টি আয়াতে শিফা- (সূরা তাওবাহ/১৪, ইউনূস/৫৭, নাহল/৬৯, বানী ইসরাইল/৮২, শু’আরা/৮০, ফুসসিলাত/৪৪)

١. وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ
٢. وَشِفَاء لِّمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
٣. يخْرُجُ مِن بُطُونِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاء لِلنَّاسِ
٤. وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاء وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
٥. وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ
٦. قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاء

এছাড়া রাসুল স. থেকে বর্ণিত রুকইয়ার উপযোগী অনেক দো’আ আছে, যেমন-

١.اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ، اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
٢. بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
٣. بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ
٤. اَسْأَلُ اللهَ الْعَظِيْم، رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيْم، اَنْ يَّشْفِيَكْ
٥. بِسْمِ اللَّه، بِسْمِ اللَّه، بِسْمِ اللَّه، أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللَّهِ وَقُدْرَتِهِ، مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ

এসব আয়াত এবং দোয়াগুলো ৩বার অথবা ৭বার পড়ুন, ব্যাথার যায়গায় অথবা রুগীর মাথায় হাত রেখে পড়ুন, অথবা এসব পড়ার পর রুগীর ওপর ফুঁ দিন। পানিতে ফুঁ দিয়ে পান করুন, গোসল করুন অথবা অলিভ অয়েলে ফুঁ দিয়ে মালিশ করুন। মধু-কালোজিরায় ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন পানিতে গুলিয়ে খান। এসবের পাশাপাশি শাইখ লুহাইদান অথবা সা’দ আল গামিদির রুকইয়াহ শোনা যেতে পারে। (ডাউনলোড লিংক নিচে)

[১১] শিশুদের জন্য রুকইয়ার নিয়ম:

শুরুতে মনে মনে নিয়াত করে নিন কোন সমস্যার জন্য রুকইয়াহ করবেন, এরপর শিশুর মাথায় হাত রেখে কয়েকবার এই দুয়াটি পড়ুন, আর মাঝেমাঝে দিন। চাইলে সাথে ওপরের দোয়াগুলোও পড়া যেতে পারে।

أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ

এরপর সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি এবং সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস - ৩ বার করে পড়া।

সমস্যার মাত্রা বেশি হলে উল্লেখিত পদ্ধতিতে রুকইয়া করা শেষে আরেকবার এগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে পান করান এবং গোসল করান। সমস্যা ভালো হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন রুকইয়াহ এবং এই কাজগুলো করতে থাকুন। এছাড়া কোন অঙ্গে বিশেষ রোগব্যাধি থাকলে এসব দোয়া-কালাম পড়ে অলিভ অয়েল বা কালোজিরার তেলে ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন মালিশ করা।

ছোটদের পাশাপাশি বড়দের মাঝে কেউ নিজে নিজে রুকইয়াহ করতে অক্ষম হলে তার ওপরেও একই নিয়মে রুকইয়াহ করা যায়।

[১২] রুকইয়ার আয়াত:

কোরআন মাজিদের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা রুকইয়া করা হয়, তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ কিছু আয়াত হচ্ছে-

  1. সুরা ফাতিহা
  2. সুরা বাকারা ১-৫
  3. সুরা বাকারাহ ১০২
  4. সুরা বাকারাহ ১৬৩-১৬৪
  5. সুরা বাকারাহ ২৫৫
  6. সুরা বাকারাহ ২৮৫-২৮৬
  7. সুরা আলে ইমরান ১৮-১৯
  8. সুরা আ'রাফ ৫৪-৫৬
  9. সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২
  10. সুরা ইউনুস ৮১-৮২
  11. সুরা ত্বহা ৬৯
  12. সুরা মু'মিনুন ১১৫-১১৮
  13. সুরা সফফাত ১-১০
  14. সুরা আহকাফ ২৯-৩২
  15. সুরা আর-রাহমান ৩৩-৩৬
  16. সুরা হাশর ২১-২৪
  17. সুরা জিন ১-৯
  18. সুরা ইখলাস
  19. সুরা ফালাক
  20. সুরা নাস

এই আয়াতগুলো একসাথে পিডিএফ করা অবস্থায় নিচে লিংক দেয়া ওয়েবসাইটে পাবেন।

[১৩] যাদু, জিন, শয়তান ইত্যাদির ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়:

১. প্রতিটি কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা। যেমন, খাবার পূর্বে, ঘরে ঢুকতে - বের হতে, দরজা-জানালা বন্ধ করতে ইত্যাদি।

২. বিষ, যাদু এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে বাঁচতে সকাল-সন্ধ্যায় এই দোয়া তিনবার পড়াঃ

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

আ’উযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মা-তি, মিং-শাররি মা-খলাক্ব। (জামে তিরমিযী, ৩৫৫৯)

৩. সব ধরনের ক্ষতি এবং বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকতে এই দোয়া সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পড়াঃ

بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِه شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ العَلِيْمُ

বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা-ইয়াদ্বুররু মা‘আসমিহী, শাইউং ফিলআরদ্বী ওয়ালা- ফিসসামা-ই, ওয়াহুওয়াস সামি’উল ‘আলীম। (জামে তিরমিযী, ৩৩৩৫)

৪. প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস তিনবার করে পড়া। এবং এটা বিশেষ গুরুত্বের সাথে করা। (সুনানে আবি দাউদ)

৫. ঘুমের আগে আয়াতুল কুরসি এবং সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া। সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়ে হাতের তালুতে ফু দিয়ে পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে নেয়া। (বুখারী)

৬. টয়লেটে ঢোকার পূর্বে দোয়া পড়া-

اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ

আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা, মিনাল খুবসি ওয়াল খবা-ইছ। (মুসলিম, ৩৭৫)

৭. তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। প্রতিদিনের অন্যান্য মাসনুন আমল করতে থাকা। এবং আল্লাহর কাছে সবসময় দোয়া করতে থাকা।

___________

(সংক্ষেপে বিভিন্ন সমস্যার জন্য ইসলাম সম্মত ঝাড়ফুঁক)
- রচনায়: আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ
- প্রথম প্রকাশ: ১৭ – জুন – ২০১৭
- সর্বশেষ আপডেট: (৫.০) পঞ্চম সংস্করণ, ০৭ – আগস্ট – ২০১৯
- রুকইয়াহ অডিও ডাউনলোড: https://ruqyahbd.org/download
- রুকইয়াহ সাপোর্ট গ্রুপ: https://facebook.com/groups/ruqyahbd
- রুকইয়াহ বিষয়ক অন্যান্য তথ্যের জন্য: www.ruqyahbd.org

Wednesday, April 21, 2021

People Skills for Little People Developing Social Emotional Skills in Pre-­‐‑school

People  Skills  for  Little  People 

Developing  Social  Emotional  Skills  in  Pre-­‐‑school 

 

 

Akhlaq    An  Important  Component  of  Our  Faith: 

Akhlaq,   an   Arabic   term   refers   to   the   practice   of   virtue,   morality   and   manners.   The   English  dictionaries   translate   the   word   as   disposition,   nature,   temper,   ethics,   morals   or   character.   Allah  (SWT)   speaks   about   the   importance   of   good   conduct,   ethics,   morals   or   character   in   the   Holy  Quran.  We  are  continuously  reminded,  throughout  the  Holy  Qur’an,  to  develop  good  character  and  treat  people  well: 

 

“Worship  Allah,  and  do  not  associate  partners  with  him.  And  be  good  to  your  parents,  and  the  relatives,  and  to  the  orphans,  and  to  the  poor  people,  and  the  neighbor  that  is  close  to  you  and  the  neighbor  that  is  not  close  to  you,  and  your  companion  on  the  journey.  Verily  Allah  does  not  love  any  of  those,  who  full  of  conceit,  act 

in  a  boastful  manner,”                                                            -­‐‑  Surah  An-­‐‑Nisa  -­‐‑  Verse  36  (4:36) 

 

Our   beloved   Prophet   Muhammad   (Peace   and   blessings   be   upon   him)   was   an   embodiment   of  perfect  manners  and  Akhlaq. 

 

Allah  (SWT)  says  in  the  Qur’an: 

“You  have  in  the  Messenger  of  Allah  a  beautiful  pattern  (of  conduct)  for  any  one  whose  hope  is  in  Allah  and  the  Final  Day,  and  who  engages  much  in  the  praise  of  Allah.” 

-­‐‑  Surah  Al-­‐‑Ahzab-­‐‑Verse  21  (33:21) 

 

We  have  several  sayings  of  the  Prophet  that  remind  us  about  the  importance  of  good  morals: 

 

“The  dearest  of  you  to  me  is  he  who  is  the  best  of  you  in  Akhlaq.”                               (Al-­‐‑Tirmidhi) 

 

“None  of  you  truly  believe  unless  he  loves  for  his  brother  what  he  loves  for  himself.”   

(Sahih  Al-­‐‑Bukhari  &  Muslim) 

 

The  Qur’an  outlines  the  following  morals  as  the  essentials  of  all  relationships    respect,  honesty,  kindness,   tolerance,   patience,   forgiveness,   compassion   and   self-­‐‑restraint.   All   these   virtues   apply  between  parents  and  children,  spouses,  business  partners,  co-­‐‑workers,  neighbors  and  friends. 

 

To   be   involved   in   the   moral   upbringing   of   a   child   is   a   great   privilege,   whether   as   a   parent,   a  childcare  provider  or  a  teacher.  Part  of  our  responsibility  as  parents  and  teachers  is  to  instill  and  nurture  values  and  skills  that  will  guide  the  child  through  the  journey  of  life.    Normally  teaching  values   and   social   skills   has   been   the   responsibility   of   parents,   but   with   both   parents   in   the  workforce,  this  “awesome”  duty  is  now  fulfilled  by  teachers. 

 

Child   development   experts   say   that   teaching   values   to   a   child   along   with   meeting   basic   needs  begins  at  birth  and  continues  throughout  a  child’s  life.  The  early  years  of  one’s  life  are  prime  for  learning   values.   (Bronwyn   Fees,   Assistant   Professor   of   Family   Studies   and   Human   Services    

Kansas  State  University)