Friday, May 14, 2021

অন্যান্য রুকইয়াহ বিষয়ক সব একসাথে

 অন্যান্য রুকইয়াহ বিষয়ক সব একসাথে

 

 

  1. সারসংক্ষেপ রুকইয়াহ শারইয়্যাহ
  2. ৭ দিনের রুকইয়াহ ডিটক্স প্রোগ্রাম
  3. শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার জন্য রুকইয়াহ
  4. ব্যাথার জন্য রুকইয়াহ
  5. রুকইয়ার সাইড ইফেক্ট কিভাবে সামলাবেন
  6. বাচ্চাদের রুকইয়ার ক্ষেত্রে লক্ষণীয়
  7. রুকইয়াহ শুরুর পূর্বে লক্ষণীয়

 

 

মুখতাসার রুকইয়াহ শারইয়্যাহ | সারসংক্ষেপ রুকইয়াহ শারইয়্যাহ!

[১] অবতরণিকা-

রুকইয়া শারইয়াহ বিষয়ে অনেক লম্বা চওড়া লেখা আছে, ইতোমধ্যে আমাদের রুকইয়াহ শারইয়াহ সিরিজও শেষ। আল্লাহর অনুগ্রহে “রুকইয়াহ” (আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ) নামে একটি বইও প্রকাশ হয়েছে। এসব যায়গায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আজ আমরা সংক্ষেপে রুকইয়াহ পরিচিতি এবং বিভিন্ন সমস্যার জন্য রুকইয়াহ করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানবো। বলতে পারেন এই লেখাটি অতীত ও ভবিষ্যতের পুরো রুকইয়াহ সিরিজের সারাংশ।

প্রবন্ধটির প্রথম সংস্করণ ১৭ই জুন ২০১৭তে প্রকাশ হয়েছিল। এরপর অনেক কিছু সংশোধন এবং সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। এটি পঞ্চম সংস্করণ। এখানে আরও কিছু যোগ করার পরামর্শ থাকলে জানাবেন, আর কোনো পুস্তক-পত্রিকা অথবা ফেসবুকের বাহিরে অন্য কোথাও প্রকাশ করতে চাইলে অনুগ্রহ করে অনুমতি নিবেন।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে হিফাজত করুন। আমীন!

[২] প্রাথমিক ধারণা-

রুকইয়া, রুকইয়াহ, রুকিয়া, রুকিয়াহ, রুকাইয়া সহ বিভিন্ন উচ্চারণ প্রচলিত রয়েছে, যার মূল হচ্ছে আরবি শব্দ (رقية) আর শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ রুকইয়াহ অথবা রুকইয়া।

রুকইয়াহ কী? - রুকইয়াহ অর্থ ঝাড়ফুঁক করা, মন্ত্র পড়া, তাবিজ-কবচ, মাদুলি ইত্যাদি। আর রুকইয়াহ শারইয়্যাহ (رقية شرعية) মানে শরিয়াত সম্মত রুকইয়াহ, কোরআনের আয়াত অথবা হাদিসে বর্ণিত দোয়া দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা। তবে স্বাভাবিকভাবে ‘রুকইয়া’ শব্দটি দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা বুঝায়। এই ঝাড়ফুঁক সরাসরি কারো ওপর হতে পারে, অথবা কোনো পানি বা খাদ্যের ওপর করে সেটা খাওয়া অথবা ব্যাবহার করা হতে পারে। এক্ষেত্রে রুকইয়ার পানি, অথবা রুকইয়ার গোসল ইত্যাদি পরিভাষা ব্যবহার হয়। আর সবগুলোই সালাফে সালেহিন থেকে বর্নিত আছে।

রুকইয়ার বিধানঃ রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “রুকইয়াতে যদি শিরক না থাকে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৫৪৪)

বিশুদ্ধ আক্বিদাঃ উলামায়ে কিরামের মতে রুকইয়া করার পূর্বে এই আক্বিদা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া উচিত ‘রুকইয়া বা ঝাড়ফুঁকের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই, সব ক্ষমতা আল্লাহ তা’আলার, আল্লাহ চাইলে শিফা হবে, নইলে নয়।’

ফিক্বহী বিধানঃ ফক্বিহদের মতে রুকইয়াহ বৈধ হওয়ার জন্য ৪ শর্ত পূরণ হওয়া আবশ্যক, যথা-

১. এতে কোন শিরক বা কুফরির সংমিশ্রণ না থাকা।
২. ঝাড়ফুঁকের নিজের কোন সক্ষমতা আছে; এমন কোন বিশ্বাস না রাখা। বরং বিশ্বাস করা, আল্লাহর ইচ্ছাতেই এর প্রভাব হয়, আল্লাহর হুকুমেই এর দ্বারা আরোগ্য হয়।
৩. এখানে পাঠ করা জিনিসগুলো স্পষ্ট আরবি ভাষায় হওয়া।
৪. যদি অন্য ভাষায় হয়, তবে এমন হওয়া; যার অর্থ স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে।

রুকইয়া প্রকারভেদঃ বিভিন্ন ভাবে রুকইয়া করা হয়, যেমনঃ দোয়া বা আয়াত পড়ে ফুঁ দেয়া হয়, মাথায় বা আক্রান্ত স্থানে হাত রেখে দোয়া/আয়াত পড়া হয়। এছাড়া পানি, তেল, খাদ্য বা অন্য কিছুতে দোয়া অথবা আয়াত পড়ে ফুঁ দিয়ে খাওয়া এবং ব্যাবহার করা হয়।

পূর্বশর্তঃ রুকইয়া করে উপকার পেতে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন।

১. নিয়্যাত (কেন রুকইয়া করছেন, সেজন্য নির্দিষ্টভাবে নিয়াত করা)
২. ইয়াক্বিন (এব্যাপারে ইয়াকিন রাখা যে, আল্লাহর কালামে শিফা আছে)
৩. মেহনত (অনেক কষ্ট হলেও, সুস্থ হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরে রুকইয়া চালিয়ে যাওয়া)।

লক্ষণীয়ঃ রুকইয়ার ফায়দা ঠিকমতো পাওয়ার জন্য দৈনন্দিনের ফরজ অবশ্যই পালন করতে হবে, পাশাপাশি সুন্নাতের প্রতিও যত্নবান হতে হবে। যথাসম্ভব গুনাহ থেকে বাঁচতে হবে। (মেয়েদের জন্য পর্দার বিধানও ফরজ) ঘরে কোনো প্রাণীর ছবি / ভাস্কর্য রাখা যাবেনা। আর সুরক্ষার জন্য সকাল-সন্ধ্যার মাসনুন আমলগুলো অবশ্যই করতে হবে। আর ইতিমধ্যে শারীরিক ক্ষতি হয়ে গেলে, সেই ঘাটতি পোষানোর জন্য রুকইয়ার পাশাপাশি ডাক্তারের চিকিৎসাও চালিয়ে যেতে হবে।

[৩] বদনজর সমস্যা-

আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:

বদনজর আক্রান্ত হওয়ার অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে, এরমাঝে কয়েকটি হচ্ছে-

  1. পড়ালেখা বা কোন কিছুতে অনেক ভাল ছিল, হঠাৎ ধ্বস নামা।
  2. কোন কাজে মনোযোগ না থাকা। নামায, যিকর, পড়াশোনাতে মন না বসা।
  3. প্রায়শই শরীর দুর্বল থাকা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব লাগা।
  4. বুক ধড়পড় করা, দমবন্ধ অস্বস্তি লাগা। মেজাজ বিগড়ে থাকা।
  5. অতিরিক্ত চুল পড়া। পেটে প্রচুর গ্যাস হওয়া।
  6. একেরপর এক অসুখ লেগে থাকা, দীর্ঘ চিকিৎসাতেও ভালো না হওয়া।
  7. ব্যবসায়-লেনদেনে ঝামেলা লেগেই থাকা। সব কিছুতেই লস হওয়া।

বদনজরের জন্য রুকইয়াহ:

যদি বুঝা যায় অমুকের জন্য নজর লেগেছে, তাহলে তাকে অযু করতে বলুন, এবংওযুর পানি গুলো আক্রান্তের গায়ে ঢেলে দিন। এরপর চাইলে ভালো পানি দিয়ে গোসল করুন। এতটুকুতেই নজর ভালো হয়ে যাবে ইনশা-আল্লাহ।

আর বদনজরের সেলফ রুকইয়া হচ্ছে, বদনজরের রুকইয়া তিলাওয়াত করবেন, অথবা তিলাওয়াত শুনবেন (ডাউনলোড লিংক নিচে)। এর পাশাপাশি ১ম অথবা ২য় নিয়মে রুকইয়ার গোসল করবেন। আর এভাবে লাগাতার ৩ থেকে ৭ দিন করবেন। প্রয়োজনে কয়েকদিন বিরতি দিয়ে আবার শুরু করুন, প্রতিদিন কয়েকবার রুকইয়া শুনুন, আর একবার রুকইয়ার গোসল করুন। এভাবে সমস্যা ভালো হওয়া পর্যন্ত করতে থাকুন। সমস্যা ভালো হওয়ার পরেও কয়েকদিন রুকইয়াহ করা উচিত।

[৪] রুকইয়ার গোসল-

১ম নিয়ম: একটা বালতিতে পানি নিবেন। তারপর পানিতে দুইহাত ডুবিয়ে যেকোনো দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস, ফালাক্ব, নাস, শেষে আবার কোনো দরুদ শরিফ-সব ৭বার করে পড়বেন। পড়ার পর হাত উঠাবেন এবং এই পানি দিয়ে গোসল করবেন।

২য় নিয়ম: একটা বালতিতে পানি নিন। ওপরের দোয়া-কালামগুলো পড়ুন আর মাঝেমাঝে ফুঁ দিন। এরপর ওই পান ইদিয়ে গোসল করুন।

৩য় নিয়ম: (জাদুর সমস্যার জন্য বিশেষভাবে উপকারী বরই পাতার গোসল) ৭টা বরই পাতা বেটে পানিতে গুলিয়ে নিন, এবং সেখানে আয়াতুল কুরসি, সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস- ৩বার করে পড়ে ফুঁ দিন। এরপর এই পানি থেকে তিন ঢোক পান করুন, আর বাকিটা দিয়ে গোসল করুন।

(যদি টয়লেট আর গোসলখানা একসাথে থাকে, তাহলে অবশ্যই বালতি বাহিরে এনে এসব পড়বেন। প্রথমে এই পানি দিয়ে গোসল করে এরপর চাইলে অন্য পানি দিয়ে ইচ্ছামত গোসল করতে পারেন। যার সমস্যা সে পড়তে না পারলে অন্য কেউ তার জন্য পড়বে, এবং অসুস্থ ব্যক্তি শুধু গোসল করবে।)

[৫] জিনের স্পর্শ-

আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:

জিন দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে, এরমাঝে কয়েকটি হচ্ছে-

  1. রাতে ঠিকমত ঘুমাতে না পারা। ঘুমালেও বারবার জেগে ওঠা।
  2. প্রায়শই ঘুমের মাঝে বোবা ধরা।
  3. ভয়ংকর স্বপ্ন দেখা। উঁচু থেকে পড়ে যেতে, কোন প্রাণীকে আক্রমণ করতে দেখা।
  4. দীর্ঘ মাথাব্যথা, অথবা অন্য কোন অঙ্গে সবসময় ব্যাথা থাকা।
  5. নামাজ, তিলাওয়াত, যিকির আযকারে আগ্রহ উঠে যাওয়া।
  6. মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকা, একটুতেই রেগে যাওয়া।
  7. আযান বা কোরআন তিলাওয়াত সহ্য না হওয়া।

জ্বিনের আসরের জন্য রুকইয়াহ:

যিনি রুকইয়া করবেন তিনি প্রথমে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে নিজের শরীরে হাত বুলিয়ে নিবেন। এরপর রুকইয়া শুরু করবেন। রুগীর পাশে বসে জোর আওয়াজে রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়তে থাকুন। রুকইয়ার অনেক আয়াত আছে সেগুলো শেষে বলা হবে। তবে জ্বিনের রোগীর রুকইয়ার জন্য স্বাভাবিকভাবে-

১. সুরা ফাতিহা
২. আয়াতুল কুরসি
৩. বাকারার শেষ ২ আয়াত
৪. সুরা ইখলাস, ফালাক, সুরা নাস। সম্ভব হলে এর সাথে-
৫. সুরা মু’মিনুনের ১১৫-১১৮ নং আয়াত
৬. সুরা সফফাতের প্রথম ১০ আয়াত এবং
৭. সুরা জিনের ১-৯ আয়াত পড়া যেতে পারে।

জ্বিন ছেড়ে দেয়া পর্যন্ত এগুলো বারবার পড়তে থাকুন, পড়ার মাঝেমাঝে রুগীর ওপর ফুঁ দিতে পারেন, (বৈধ ক্ষেত্রে) মাঝেমাঝে রুগীর মাথায় হাত রেখে পড়ুন। আর পানিতে ফুঁ দেয়ার পর মুখে এবং হাতে-পায়ে ছিটিয়ে দিন। জিন কথা বলতে শুরু করলে মাঝেমাঝে তাকে চলে যাওয়ার ব্যাপারে নির্দেশ দিতে হবে, এরপর আবার অবিরত তিলাওয়াত চালু রাখতে হবে। জ্বিনের রুগীর ক্ষেত্রে সাধারণত কথাবার্তা বলে জ্বিন বিদায় করতে হয়। এক্ষেত্রে জ্বিনের কথায় ঘাবড়ানো যাবেনা, তার কথা সহজে বিশ্বাসও করা যাবে না। হুমকিধামকি দিলে তাকেই উল্টা ধমক দিতে হবে। মোট কথা, যিনি রুকইয়া করবেন তাঁকে উপস্থিতবুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে। একদিনে না গেলে পরপর কয়েকদিন কয়েকঘন্টা করে এভাবে রুকইয়া করে যেতে হবে। ইনশাআল্লাহ এক পর্যায়ে জ্বিন পালাতে বাধ্য হবে।

[৬] বাড়িতে জ্বিনের উৎপাত থাকলে-

বাড়িতে জ্বিনের কোনো সমস্যা থাকলে পরপর তিনদিন পূর্ন সুরা বাক্বারা তিলাওয়াত করুন, এরপর আযান দিন। তাহলে ইনশাআল্লাহ সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে। তিলাওয়াত না করে প্রতিদিন যদি সুরা বাক্বারা প্লে করা হয় তাহলেও ফায়দা পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। তবে সবচেয়ে ভালো ফল পেলে তিলাওয়াত করা উচিত। এরপর প্রতিমাসে অন্তত এক দুইদিন সুরা বাকারা পড়বেন। অধিক ফায়দার জন্য চাইলে সুরা বাকারা পড়া শেষে পানিতে ফুঁ দেয়ার পর পুরো বাড়িতে ছিটিয়ে দিতে পারেন।

আর ঘরে প্রবেশের সময়, বের হবার সময়, দরজা-জানালা বন্ধের সময় বিসমিল্লাহ বলবেন। সন্ধ্যা বেলায় জানালা বন্ধ রাখবেন। ঘরে কোন প্রাণী বা মানুষের ছবি অথবা মূর্তি ঝুলিয়ে রাখবেন না। ইনশাআল্লাহ খুব শীঘ্রই সমস্যা কেটে যাবে।

[৭] যাদুগ্রস্ত-

জাদু বা ব্ল্যাক ম্যাজিকে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:

অনেক সময় যাদু করতে জ্বিনের সাহায্য নেয়া হয়, তাই যাদুগ্রস্ত রোগীর মাঝে জিন আক্রান্তের কিছু লক্ষণও দেখা যেতে পারে। এছাড়াও যাদুগ্রস্ত রোগীর মাঝে কিছু বিশেষ লক্ষণ দেখা যেতে পারে। যেমন:

  1. হঠাৎ কারও প্রতি বা কোন কিছুর প্রতি তীব্র ভালবাসা অথবা ঘৃণা তৈরি হওয়া, যা আগে ছিল না।
  2. বিশেষ কোন কারন ছাড়াই জটিল-কঠিন রোগে ভোগা। যার চিকিৎসা করলেও সুস্থ না হওয়া।
  3. পরিবারের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি লেগেই থাকা। বিশেষতঃ স্বামীস্ত্রীর মাঝে।
  4. দৃষ্টিভঙ্গি বা ব্যক্তিত্বে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যাওয়া। যাতে নিজেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়, চারপাশের মানুষও কষ্ট পায়।
  5. অদ্ভুত আচরণ করা। যেমন, কোন কাজ একদমই করতে না চাওয়া। কিংবা দিন-রাতের নির্দিষ্ট কোন সময়ে ঘরের বাইরে যেতে না চাওয়া।
  6. মেরুদণ্ডের নিচের দিকে ব্যাথা করা।
  7. বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মেজাজ খারাপ, মাথা ব্যথা অথবা অসুস্থ থাকা।

যাদু আক্রান্ত হলে বুঝার উপায়:

ওপরের এক বা একাধিক লক্ষণের সাথে মিল পাওয়া যাবে। আর যাদু আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়লে, অথবা অডিও শুনলে অস্বাভাবিক অনুভূতি হবে। যেমন, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, বমি আসা, বুক ধড়ফড় করা, শরীর অবশ হয়ে আসা ইত্যাদি।

জাদুর সমস্যার জন্য রুকইয়া:

সমস্যার ধরণ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার রুকইয়াহ করতে পরামর্শ হয়। তবে প্রসিদ্ধ সেলফ রুকইয়া হচ্ছে- প্রথমে সমস্যার জন্য নিয়াত ঠিক করে, ইস্তিগফার দরুদ শরিফ পড়ে শুরু করুন। তারপর রুকইয়ার আয়াতগুলো পাঠ করে অথবা কোন রুকইয়া শুনে নিশ্চিত হয়ে নিন আসলেই সমস্যা আছে কি না! শাইখ সুদাইস অথবা লুহাইদানের রুকইয়া শুনতে পারেন (ডাউনলোড লিংক নিচে)। সবশেষে একটি পাত্রে পানি নিন, এরপর নিচের আয়াতগুলো ৩বার অথবা ৭বার করে পড়ুন, পড়ার মাঝেমাঝে পানিতে ফুঁ দিন-

ক. সুরা ফাতিহা এবং আয়াতুল কুরসি
খ. সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২, ইউনুস ৮১-৮২ সুরা ত্বহা ৬৯নং আয়াত

١. وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَۖ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُوْنَ - فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُونَ - فَغُلِبُوْا هُنَالِكَ وَانقَلَبُوْا صَاغِرِيْنَ - وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِيْنَ -قَالُوْا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ - رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُوْنَ -

٢. فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُۖ إِنَّ اللّٰهَ سَيُبْطِلُهُۖ إِنَّ اللّٰهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِيْنَ - وَيُحِقُّ اللّٰهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْكَرِهَ الْمُجْرِمُونَ -

٣. وَأَلْقِ مَافِي يَمِيْنِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوْاۖ إِنَّمَا صَنَعُوْا كَيْدُ سَاحِرٍۖ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتٰى -

গ. এরপর সুরা ইখলাস, ফালাক্ব, নাস- সব ৩বার করে।

সমস্যা অনুযায়ী সাতদিন অথবা এরচেয়ে বেশি সময় যাবত প্রতিদিন সকাল-বিকাল এই পানি খেতে হবে, এবং গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করতে হবে। আর জাদুর সমস্যার থেকে সুস্থতা লাভের নিয়াত করে প্রতিদিন রুকইয়ার আয়াতগুলো তিলাওয়াত করতে হবে, অথবা দেড়-দুইঘণ্টা রুকইয়ার অডিও শুনতে হবে। কোন ক্বারির সাধারণ রুকইয়া একবার, আর সুরা ইখলাস, ফালাক, নাসের রুকইয়াহ একাধিকবার (ডাউনলোড লিংক নিচে)। এর পাশাপাশি আল্লাহর কাছে সুস্থতার জন্য দোয়া করতে হবে।

এভাবে রুকইয়াহ করার পর সপ্তাহ শেষে আপনার অবস্থা পর্যালোচনা করুন, প্রয়োজনে চিকিৎসার মেয়ার বাড়িয়ে নিন। রুকইয়াহ চলাকালীন সমস্যা বেড়ে গেলেও বাদ দিবেন না, হাল ছাড়বেন না। সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া পর্যন্ত রুকইয়া অবিরত রাখুন।

দ্বিতীয়ত: শুরুতে বর্ণনা করা রুকইয়ার গোসলগুলোর মাঝে ৩য় পদ্ধতিটি জাদুর চিকিৎসায় খুব উপকারী। সমস্যা বেশি হলে প্রথমে কয়েকদিন উল্লেখিত নিয়মে বরই পাতার গোসল করে এরপর সেলফ রুকইয়াহ শুরু করা যেতে পারে। ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুতই জাদুর সমস্যা থেকে মুক্ত হয়ে যাবেন।

যাদুর কোন জিনিশ অথবা তাবিজ খুঁজে পেলে:

সন্দেহজনক কোন তাবিজ পেলে অথবা কি দিয়ে যাদু করেছে যদি পাওয়া যায়, তাহলে সেসব বের করে আলাদা আলাদা করে ফেলুন, কোন গিরা বা বাধন থাকলে কেটে ফেলুন, শক্ত কিছু দিয়ে বাধা থাকলে ভেঙ্গে ফেলুন। এরপর একটা পাত্রে পানি নিয়ে ওপরে বলা জাদুর রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিন, এরপর তাবিজ অথবা যাদুর জিনিশগুলো ডুবিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ, তাহলে ইনশাআল্লাহ যাদু নষ্ট হয়ে যাবে। পরে সেগুলো পুড়িয়ে বা নষ্ট করে ফেলুন।

[৮] একাধিক সমস্যায় আক্রান্ত হলে:

একসাথে যাদু, জ্বিন কিংবা বদনজর সম্পর্কিত একাধিক সমস্যায় আক্রান্ত হলে প্রথমে কিছুদিন বদনজরের জন্য রুকইয়া করতে হবে, এরপর জ্বিনের জন্য এবং যাদুর জন্য রুকইয়া করতে হবে। এর মাঝেমাঝে শারীরিক রোগব্যাধির জন্য চিকিৎসা নেয়া বা ডাক্তারের ঔষধ সেবন করতেও কোন সমস্যা নেই। কিন্তু রুকইয়াহ করার কারণে ব্যাথা শুরু হলে এজন্য ঔষধ খাবেন না। বরং রুকইয়ার গোসল করলে অনেকটা স্বস্তি পাবেন ইনশাআল্লাহ।

[৯] ওয়াসওয়াসা রোগ-

আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:

  1. অকারণে সর্বদা চিন্তিত থাকা। মাথায় বিক্ষিপ্ত চিন্তা ঘোরাঘুরি করার কারণে কোন কিছুতে মন দিতে না পারা।
  2. ওযু-গোসল অথবা নামাজের বিশুদ্ধতা নিয়ে অতিরিক্ত দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকা।
  3. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা। টয়লেট বা গোসলখানায় অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা। এক অঙ্গ বারবার ধোয়া, এরপরেও তৃপ্ত হতে না পারা।
  4. বারবার মনে হওয়া ওযু ভেঙ্গে যাচ্ছে, অথবা প্রসাবের ফোঁটা পড়ছে, অথবা বায়ু বের হয়ে যাচ্ছে। বিশেষতঃ নামাজের সময় এমন হওয়া।
  5. আল্লাহ তা’আলা, রাসুল ﷺ অথবা ইসলামের ব্যাপারে বারবার মাথায় অবমাননাকর চিন্তা আসা।
  6. বারবার নামাজের রাকাত ভুলে যাওয়া, কিরাত, রুকু-সাজদা ইত্যাদির ব্যাপারে সন্দেহে ভোগা।

সমস্যা বেশিদিন পুরনো হয়ে গেলে এসব থেকে আরও শারীরিক-মানসিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর জিন সংক্রান্ত কোন সমস্যা (জিনের বদনজর বা জিনের আসর) থাকলেও ওয়াসওয়াসার সমস্যা প্রকট হতে পারে।

ওয়াসওয়াসার প্রতিকার-

১. এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়া। প্রতি নামাজের আগে-পরে, অন্যান্য ইবাদতের সময়, কোন গুনাহের জন্য ওয়াসওয়াসা অনুভব করলে এটা পড়া -

أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ، مِنْ غَضَبِهٖ وَعِقَابِهِ، وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ، وَأَنْ يَّحْضُرُوْنِ

ঈমান নিয়ে সংশয় উদিত হলে পড়া (সুরা হাদীদ, আয়াত নং ৩)

هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ ۖ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْم

[এছাড়া "আমানতু বিল্লাহ বলা" এবং "সুরা ইখলাস পড়ার" কথাও বর্ণিত হয়েছে] এবং এরপর ওয়াসওয়াসা পাত্তা না দিয়ে অন্য কিছুতে ব্যস্ত হয়ে যাওয়া।

২. পুরুষ হলে জামাআতের সাথে নামাজ পড়া, মুত্তাকী পরহেজগারদের সাথে উঠাবসা করা।

৩. নামাজে ওয়াসওয়াসা হলে বামে হালকা করে ৩বার থুতু ফালানো। আর রাকাত ভুলে গেলে- মনে থাকা কম সংখ্যাটা ধরে, এরপর প্রতি রাকাতে আত্তাহিয়্যাতু পড়া, আর নামাজের শেষে সাহু সাজদা দেয়া।

৫. সকাল-সন্ধ্যায় ও ঘুমের আগের আমলগুলো গুরুত্বের সাথে করা। টয়লেটে প্রবেশের দোয়া পড়া।

৬. আয়াতুল হারক (আযাব এবং জাহান্নাম সংক্রান্ত আয়াত) বেশি বেশি তিলাওয়াত করা। এবং প্রতিদিন এসবের তিলাওয়াত শোনা। (ডাউনলোড লিংক নিচে)

৭. সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক, নাস - ৩বার করে। এরপর শুধু সুরা নাস অনেক বার (৭বার/৩৩বার/আরও বেশি) পড়ে পানি আর অলিভ অয়েলে ফুঁ দেয়া। এরপর সুস্থতার নিয়াতে প্রতিদিন ২-৩ বেলা এই পানি পান করা। মাথায় এবং বুকে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা।

৮. বদনজর বা জিনের সমস্যা থাকলে সে অনুযায়ী রুকইয়াহ করা। যথাসম্ভবত ওয়াসওয়াসা পাত্তা না দেয়া; ইগনোর করা, এমনকি মুখে বিরক্তির ভাবও প্রকাশ না করা। আর আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকা।

[১০] সাধারণ অসুস্থতার জন্য রুকইয়াহ:

বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের রুকইয়ার জন্য রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কিরাম রা. এবং বিভিন্ন যুগের সালাফদের থেকে অনেক দু’আ-কালাম পাওয়া যায়, সুস্থতা লাভের নিয়াতে সেসব গুরুত্বের সাথে পড়া।

যেমন, কোরআন থেকে প্রসিদ্ধ কয়েকটি রুকইয়া হচ্ছে- সুরা ফাতিহা, ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস এবং ৬টি আয়াতে শিফা- (সূরা তাওবাহ/১৪, ইউনূস/৫৭, নাহল/৬৯, বানী ইসরাইল/৮২, শু’আরা/৮০, ফুসসিলাত/৪৪)

١. وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ
٢. وَشِفَاء لِّمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
٣. يخْرُجُ مِن بُطُونِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاء لِلنَّاسِ
٤. وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاء وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
٥. وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ
٦. قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاء

এছাড়া রাসুল স. থেকে বর্ণিত রুকইয়ার উপযোগী অনেক দো’আ আছে, যেমন-

١.اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ، اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
٢. بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
٣. بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ
٤. اَسْأَلُ اللهَ الْعَظِيْم، رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيْم، اَنْ يَّشْفِيَكْ
٥. بِسْمِ اللَّه، بِسْمِ اللَّه، بِسْمِ اللَّه، أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللَّهِ وَقُدْرَتِهِ، مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ

এসব আয়াত এবং দোয়াগুলো ৩বার অথবা ৭বার পড়ুন, ব্যাথার যায়গায় অথবা রুগীর মাথায় হাত রেখে পড়ুন, অথবা এসব পড়ার পর রুগীর ওপর ফুঁ দিন। পানিতে ফুঁ দিয়ে পান করুন, গোসল করুন অথবা অলিভ অয়েলে ফুঁ দিয়ে মালিশ করুন। মধু-কালোজিরায় ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন পানিতে গুলিয়ে খান। এসবের পাশাপাশি শাইখ লুহাইদান অথবা সা’দ আল গামিদির রুকইয়াহ শোনা যেতে পারে। (ডাউনলোড লিংক নিচে)

[১১] শিশুদের জন্য রুকইয়ার নিয়ম:

শুরুতে মনে মনে নিয়াত করে নিন কোন সমস্যার জন্য রুকইয়াহ করবেন, এরপর শিশুর মাথায় হাত রেখে কয়েকবার এই দুয়াটি পড়ুন, আর মাঝেমাঝে দিন। চাইলে সাথে ওপরের দোয়াগুলোও পড়া যেতে পারে।

أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ

এরপর সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি এবং সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস - ৩ বার করে পড়া।

সমস্যার মাত্রা বেশি হলে উল্লেখিত পদ্ধতিতে রুকইয়া করা শেষে আরেকবার এগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে পান করান এবং গোসল করান। সমস্যা ভালো হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন রুকইয়াহ এবং এই কাজগুলো করতে থাকুন। এছাড়া কোন অঙ্গে বিশেষ রোগব্যাধি থাকলে এসব দোয়া-কালাম পড়ে অলিভ অয়েল বা কালোজিরার তেলে ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন মালিশ করা।

ছোটদের পাশাপাশি বড়দের মাঝে কেউ নিজে নিজে রুকইয়াহ করতে অক্ষম হলে তার ওপরেও একই নিয়মে রুকইয়াহ করা যায়।

[১২] রুকইয়ার আয়াত:

কোরআন মাজিদের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা রুকইয়া করা হয়, তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ কিছু আয়াত হচ্ছে-

  1. সুরা ফাতিহা
  2. সুরা বাকারা ১-৫
  3. সুরা বাকারাহ ১০২
  4. সুরা বাকারাহ ১৬৩-১৬৪
  5. সুরা বাকারাহ ২৫৫
  6. সুরা বাকারাহ ২৮৫-২৮৬
  7. সুরা আলে ইমরান ১৮-১৯
  8. সুরা আ'রাফ ৫৪-৫৬
  9. সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২
  10. সুরা ইউনুস ৮১-৮২
  11. সুরা ত্বহা ৬৯
  12. সুরা মু'মিনুন ১১৫-১১৮
  13. সুরা সফফাত ১-১০
  14. সুরা আহকাফ ২৯-৩২
  15. সুরা আর-রাহমান ৩৩-৩৬
  16. সুরা হাশর ২১-২৪
  17. সুরা জিন ১-৯
  18. সুরা ইখলাস
  19. সুরা ফালাক
  20. সুরা নাস

এই আয়াতগুলো একসাথে পিডিএফ করা অবস্থায় নিচে লিংক দেয়া ওয়েবসাইটে পাবেন।

[১৩] যাদু, জিন, শয়তান ইত্যাদির ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়:

১. প্রতিটি কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা। যেমন, খাবার পূর্বে, ঘরে ঢুকতে - বের হতে, দরজা-জানালা বন্ধ করতে ইত্যাদি।

২. বিষ, যাদু এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে বাঁচতে সকাল-সন্ধ্যায় এই দোয়া তিনবার পড়াঃ

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

আ’উযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মা-তি, মিং-শাররি মা-খলাক্ব। (জামে তিরমিযী, ৩৫৫৯)

৩. সব ধরনের ক্ষতি এবং বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকতে এই দোয়া সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পড়াঃ

بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِه شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ العَلِيْمُ

বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা-ইয়াদ্বুররু মা‘আসমিহী, শাইউং ফিলআরদ্বী ওয়ালা- ফিসসামা-ই, ওয়াহুওয়াস সামি’উল ‘আলীম। (জামে তিরমিযী, ৩৩৩৫)

৪. প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস তিনবার করে পড়া। এবং এটা বিশেষ গুরুত্বের সাথে করা। (সুনানে আবি দাউদ)

৫. ঘুমের আগে আয়াতুল কুরসি এবং সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া। সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়ে হাতের তালুতে ফু দিয়ে পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে নেয়া। (বুখারী)

৬. টয়লেটে ঢোকার পূর্বে দোয়া পড়া-

اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ

আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা, মিনাল খুবসি ওয়াল খবা-ইছ। (মুসলিম, ৩৭৫)

৭. তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। প্রতিদিনের অন্যান্য মাসনুন আমল করতে থাকা। এবং আল্লাহর কাছে সবসময় দোয়া করতে থাকা।

___________

(সংক্ষেপে বিভিন্ন সমস্যার জন্য ইসলাম সম্মত ঝাড়ফুঁক)
- রচনায়: আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ
- প্রথম প্রকাশ: ১৭ – জুন – ২০১৭
- সর্বশেষ আপডেট: (৫.০) পঞ্চম সংস্করণ, ০৭ – আগস্ট – ২০১৯
- রুকইয়াহ অডিও ডাউনলোড: https://ruqyahbd.org/download
- রুকইয়াহ সাপোর্ট গ্রুপ: https://facebook.com/groups/ruqyahbd
- রুকইয়াহ বিষয়ক অন্যান্য তথ্যের জন্য: www.ruqyahbd.org

 

 

আল-আশফিয়া: ৭ দিনের ডিটক্স রুকইয়াহ

 

আশফিয়া – শিফাউন এর বহুবচন, যার অর্থ আরোগ্য। কোরআনুল কারিম এবং হাদিসে যেসব মেডিসিন এবং হার্বসকে শিফা এবং বরকতময় বলা হয়েছে, আমাদের এই ৭দিনের কোর্সটি হচ্ছে সেগুলোর একটি সম্মিলিত প্রয়োগ। এজন্যই এটার নাম রাখা হয়েছে ‘আল-আশফিয়া’ The Collection of cures!

এটি শাইখ আদিল বিন তাহির মুকবিল হাফিযাহুল্লাহুর দেয়া প্রেসক্রিপশন। উনার চাকুরীই হচ্ছে যাদুকরদের গ্রেফতার করে অথরিটির হাতে তুলে দেয়া আর যাদুর জিনিসপত্র ধ্বংস করা। অর্থাৎ ডিরেক্টর অব ডেস্ট্রয়িং ম্যাজিক!

আমাদের আলোচ্য প্রেসক্রিপশনটি বিশেষভাবে যাদু, জিন, বদনজর এবং এর পাশাপাশি অন্যান্য কঠিন শারীরিক ব্যাধির চিকিৎসাতে খুবই ফলপ্রসূ। কারও সমস্যা যদি অনেক প্রকারের কিংবা অনেক বেশি হয়, তখন সেটাকে একটা মাত্রায় আনার জন্য আমরা ডিটক্স সাজেস্ট করে থাকি। এছাড়া এই রুটিনটা “সার্বজনীন পূর্ণ রুকইয়াহ প্রোগ্রামে” প্রোগ্রামের মাঝেও প্রেসক্রাইব করা হয়েছে।

 “সার্বজনীন পূর্ণ রুকইয়াহ প্রোগ্রামে”

 

শুরুর কথা

আজ আমরা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি। এটাকে বলা যায় “কমন রুকইয়াহ রুটিন।”
আরেকটু বিস্তারিত বললে, এটি একটি সার্বজনীন রুকইয়াহ গাইড, যা যাদু – জিন – বদনজর অথবা অন্যান্য যেসব রোগের জন্য রুকইয়াহ রিকমেন্ড হয়, সবগুলোতে আক্রান্তরা আমভাবে এটা অনুসরণ করতে পারেন। তাই যাদের সমস্যা অনেক বেশি এবং অনেক প্রকারের, তারা চাইলে প্রতিটা সমস্যার জন্য বিশেষ বিশেষ রুকইয়ার নিয়ম না ফলো করে, একভাবে এই রুটিন অনুসরণ করে দেখুন, ইনশাআল্লাহ যথেষ্ট উপকার হবে।

উল্লেখ্য, আজকে আলোচ্য সাজেশনগুলো উস্তায তিম হাম্বল সচরাচর দিয়ে থাকেন। আমি উনার পদ্ধতি হুবহু ভাষান্তর না করে, প্রয়োজন মাফিক কিছু করা যোগ-বিয়োগ করব। এবং নিজের ভাষায় বর্ণনা করবো।
চলুন, আমরা এবার আলোচনা শুরু করি।

যিনি রুকইয়াহ করবেন 

১. আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার ওপর তাকে পূর্ণ ভরসা রাখতে হবে।
২. অবশ্যই প্রতিদিনের ফরজ ইবাদাতগুলো করতে হবে, আর যথাসম্ভব রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের প্রতি যত্নবান হতে হবে।
৩. প্রতিদিনের মাসনুন আমলগুলো গুরুত্বের সাথে করতে হবে, এবং এগুলোকে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। (এবিষয়ে আলাদা লেখা আছে)
৪. রুগীর সাথে কোন তাবিজ রাখা যাবে না। আগে ব্যবহার করেছে এরকম কোন তাবিজ থাকলে, পুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলতে হবে।
৫. বাড়ীর পরিবেশ যতদূর সম্ভব পবিত্র রাখতে হবে। কোন প্রাণীর ছবি, ভাস্কর্য, কুকুর বা এমন কিছু রাখা যাবে না, যা রহমতের ফেরেশতা প্রবেশে বাঁধা হয়, আর শয়তান প্রবেশের কারণ হয়।
৬. সমস্যা একদম দূর হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর ওপর ভরসা করে, সবরের সাথে রুকইয়া চালিয়ে যেতে হবে।
৭. যথাসম্ভব গুনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে, আর সুস্থতার জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করতে হবে।

 প্রতিদিন যা করবেন 

১. প্রতিদিন সকাল–সন্ধ্যা এবং ঘুমের আগের মাসনুন আমল সঠিকভাবে করা। (মেয়েদের অনেকে পিরিয়ডের সময় এসব দোয়া পড়ে না। এটা বড় ধরনের ভুল কাজ। সেসময় আরও গুরুত্ব দিয়ে আমল করা উচিত। পিরিয়ডের সময় দোয়া পড়তে কোন মানা নেই।)
২. [রুকইয়া করার নিয়াতে] প্রতিদিন কমপক্ষে পৌনে একঘণ্টা কোরআন তিলাওয়াত করা। একবারে এতক্ষণ না পড়তে পারলে দুই-তিন বারে পড়া। সম্ভব হলে আরও বেশি পড়া। সম্ভব হলে সুরা বাকারা পুরাটা পড়ুন, কিংবা বিভিন্ন রুকইয়ার আয়াত রাখুন আপনার তিলাওয়াত লিস্টে, অথবা কোরআনের যেখান থেকে ইচ্ছা পড়ুন।
আর সুযোগ কম পেলে “সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক, নাস” এগুলো বারবার পড়ে উল্লেখিত সময় পূরণ করবেন। নিজে তিলাওয়াত করতে না পারলে অন্য কেউ রুগীর ওপর রুকইয়া হিসেবে পড়বে। একান্ত অপারগ হলে অডিও শুনবে, এক্ষেত্রে দিগুণ সময় শোনা উচিত। চাইলে কিছুক্ষণ নিজে পড়ে, কিছুক্ষণ অডিও শোনা যেতে পারে।
৩. বেশি বেশি ইস্তেগফার করা। প্রতিদিন কমপক্ষে ৭০ থেকে ১০০বার ইস্তেগফার করা উচিত।
৪. সুস্থতার জন্য প্রতিদিনই দোয়া করা। এক্ষেত্রে আয়াতে শিফা পড়ে দুয়া করা যেতে পারে, সুস্থতার কিংবা রুকইয়ার জন্য রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত দোয়াগুলো পড়া যেতে পারে।

প্রতি সপ্তাহে যা করবেন 

আক্রান্ত ব্যক্তি অথবা অন্য কেউ প্রতি সপ্তাহে বাড়িতে সুরা বাকারা তিলাওয়াত করবে। উত্তম হচ্ছে, প্রতি তিনদিনে কমপক্ষে একবার পড়া। যদি প্রতিদিন তিলাওয়াতে সুরা বাকারা শেষ করে, তাহলে সবচেয়ে ভালো।
যদি পূর্ণ সুরা পড়ার মত কাউকে না পাওয়া যায়, তাহলে অপারগতা হেতু অডিও প্লে করা যেতে পারে। কিন্তু পড়ার মত কেউ থাকলে অবশ্যই তিলাওয়াত করা উচিত।

প্রতি মাসে যা করবেন 

রোগীকে প্রতিমাসে কমপক্ষে ১ বার “সুস্থতার পথে ৭দিন; ডিটক্স প্রোগ্রাম” করতে হবে। আরও ভালো ভালো হয় যদি দুইবার করতে পারে। এক্ষেত্রে সুবিধা মত এক সপ্তাহ করার পর কিছুদিন ব্রেক দিয়ে আবার শুরু করতে পারে, অথবা লাগাতার দুই সপ্তাহ করতে পারে।

যে কাজ মাঝে-মধ্যেই করা উচিত

১. হিজামা করা – খুবই উপকারী চিকিৎসা, রুকইয়াহ করে করে যেসব যায়গায় ব্যথা থাকবে, যেসব অঙ্গে রুকইয়ার বেশি ইফেক্ট হবে, সেগুলোতে হিজামা করানো উচিত। রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের বলেছিলেন, “তোমরা যেসব চিকিৎসা করো এর মধ্যে হিজামা সবচেয়ে সেরা।” রাসুলুল্লাহ বিভিন্ন রোগের জন্য হিজামা করিয়েছেন। এক্ষেত্রে হিজামা বা কাপিং থেরাপিতে অভিজ্ঞ কারও সহায়তা নিতে পারেন।

২. আমাদেরকে আপডেট জানানো! – যারা এটা শুরু করবেন, তাদের উচিত হবে একটি ডায়েরি বা নোটবুক হাতের কাছে রাখা, এবং যিনি আপনাকে রুকইয়ার ব্যাপারে গাইড করবেন তাকে অথবা রুকইয়াহ সাপোর্ট গ্রুপে মাঝেমাঝে আপনার অবস্থার আপডেট জানানো।

আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে হিফাজত করেন এবং সুস্থতা দান করেন। আমিন!

_____

নোট: এই ৭দিনের ডিটক্স রুকইয়াহ নিয়ে প্লেস্টোরে আমাদের একটি সুন্দর অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ আছে। চাইলে দেখতে পারেন, আশা করি ভালো লাগবে। লিংক- https://play.google.com/store/apps/details?id=org.ruqyahbd.detox

_____

আমাদের যা যা দরকার হবে –

১. পানি। সাড়ে তিন থেকে চার লিটার।

  • জমজমের পানি হলে সবচেয়ে ভালো। রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এর মাঝে শিফা আছে।
  •  নইলে বৃষ্টির পানি – আল্লাহ তা’আলা এটাকে বরকতময় বলেছেন।
  •  এসব না পেলে সাধারণ পানি – রাসূল স. সাধারণ পানিও রুকইয়ার জন্য ব্যবহার করেছেন।
    (জমজম বা বৃষ্টির পানি অল্প থাকলে বরকতের জন্য সাধারণ পানির সাথে মিক্স করা যেতে পারে)

২. অলিভ অয়েল। কোরআনুল কারিমে যাইতুনের তেলকে বরকতময় বলা হয়েছে। ১০০মিলি. হলে যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ।

  •  সবচেয়ে ভালো হয় মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশের এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল হলে।
  •  নইলে এমনি সাধারণ ভালো কোন অলিভ অয়েল।

৩. মধু। ২৫০ গ্রাম। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, মধুর মাঝে মানুষের জন্য শিফা রয়েছে।

  •  যথাসম্ভব পিওর মধু। এক্ষেত্রে পরিচিত কারও থেকে বা নির্ভরযোগ্য অনলাইন শপের সহায়তা নেয়া যায়।

৪. কালোজিরা। ৫০গ্রাম। রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের শিফা।

  • এটাও ভালো হওয়া উচিত, ব্যবহারের আগে সম্ভব হলে ময়লা ঝেড়ে ফেলা।

৫. তিলাওয়াতের জন্য কোরআন । আল্লাহ তা’আলা বলেছেন- বিশ্বাসীদের জন্য কোরআনের মাঝে শিফা এবং রহমত রয়েছে।

এসব যদি সংগ্রহ করা হয়ে যায়, তাহলে আমরা শুরু করতে পারি। উপকরণগুলো হাতের কাছে রেখে নিম্নের আয়াতগুলো পড়ুন এবং সেগুলোতে ফুঁ দিন ।

১. সুরা ফাতিহা – ৭বার
২. আয়াতুল কুরসি – ৭বার
৩. সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস – সব তিনবার করে।
৪. সুরা বাক্বারা সম্পূর্ণ।

এক বসাতেই পুরাটা পড়ে শেষ করতে হবে এমন না, একবারে যতটুকু পারবেন পড়বেন, ফুঁ দিবেন। এরপর কোন কাজ থাকলে সেটা শেষ করে এসে বাকিটা পড়বেন, প্রয়োজনে দুই-তিন দিনে প্রস্তুত করবেন, এরপর কোর্স শুরু করবেন। সমস্যা নাই। 

এসব পড়ুন আর মাঝে মাঝে পানি অলিভ অয়েল ফুঁ দিন। এরপর মধু ও কালোজিরায় ফু দিন।

এই স্টেপগুলো ঠিকভাবে অনুসরণ করে থাকলে আপনি “সুস্থতার পথে ৭ দিন” প্রোগ্রাম শুরু করার জন্য প্রস্তুত!

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

১. প্রথম ৩দিন ঘুমের আগে মাথা থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত, পুরো শরীরে রুকইয়া করা অলিভ অয়েল মালিশ করবেন। পরের ৪দিন শরীরের যেসব যায়গায় ব্যথা আছে, শুধু সে জায়গাগুলোতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন।
২. এরপর আধা গ্লাস রুকইয়ার পানিতে এক চা চামচ মধু দিন। এর সাথে সাতটা কালোজিরা মিশিয়ে এটাকে গুলিয়ে খেয়ে ফেলুন। এটাকে শরবত না, বরং ঔষধ মনে করে খাবেন।
৩. পরেরদিন সকালে ভালোভাবে গোসল করবেন, এই গোসলের পানিতে এক গ্লাস রুকইয়ার পানি মিশিয়ে নিবেন।
(সাবান-শ্যাম্পু ব্যবহার করতে মানা নেই, শীতকালে হালকা গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন বা একটু বেলা হলে গোসল দিতে পারেন, কোন সমস্যা নেই।)
৪. সকালে গোসলের পর আবার আধা গ্লাস রুকইয়ার পানিতে, ১ চামচ মধু এবং ৭টা কালোজিরা গুলিয়ে খেয়ে নিন।

এই কয়দিনে কি ঘটতে পারে?

১. প্রথম দিন হয়তো তেমন কিছুই অনুভব করবেন না। তবে কারো কারো প্রথম দিন থেকেই ইফেক্ট শুরু হয়।
২. দ্বিতীয় এবং তৃতীয়দিন সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। হয়তো অসুস্থ হয়ে পড়বেন, প্রচণ্ড দুর্বল লাগবে। অথবা পুরো শরীর বা বিভিন্ন অঙ্গ ব্যথা হয়ে থাকবে। ভারি ব্যায়াম করলে যেমন ব্যথা হয়, সেরকম হতে পারে।
৩. চতুর্থ দিন থেকে সমস্যা কমতে শুরু হবে ইনশাআল্লাহ, এবং ৭দিনের প্রোগ্রাম শেষ হতে হতে আল্লাহ চায়তো আপনি একদম ফ্রেশ হয়ে যাবেন।
৪. যদি (আল্লাহ না করুক) ৭ দিন পরেও আপনার যথেষ্ট উন্নতি দেখা না যায়, তাহলে আপনার উচিত হবে অভিজ্ঞ কারও পরামর্শ নিয়ে নির্দিষ্ট পরামর্শ ফলো করা, অথবা লাগাতার কয়েকমাস “সর্বজনীন পূর্ণ রুকইয়াহ প্রোগ্রাম” অনুসরণ করা।
৫. আপনার উচিত হবে এই কয়দিন নিজের গুনাহ থেকে ক্ষমা চেয়ে ইস্তেগফার করতে থাকা। প্রতিদিনের মাসনুন আমলগুলো করা। আর বেশি বেশি দোয়া করা, যেন সপ্তাহ শেষে আপনি একদম সুস্থ হয়ে যান।
৬. এই কয়দিন চাইলে “রুকইয়াহ অডিও ডাউনলোড” পেজ থেকে কোন কারির সাধারণ রুকইয়াহ শুনতে পারেন। নিজে তিলাওয়াত করলে আরও ভালো, সম্ভব হলে রুকইয়ার নিয়াতে প্রতিদিন সুরা বাক্বারা তিলাওয়াত করুন অথবা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। ইনশাআল্লাহ অনেক উপকার হবে।
৭. আর হ্যাঁ! এই রুটিন ফলো করার সময় একটা ডায়েরি বা নোটবুক রাখুন, খুব সংক্ষেপে আপনার অবস্থা নোট করুন। যেন প্রোগ্রাম শেষে সেটা আপডেট জানাতে পারেন।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুস্থ এবং নিরাপদ রাখুন, আমিন।

 

শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার জন্য রুকইয়াহ

বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের জন্য রুকইয়া করতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনেক দু’আ-কালাম পাওয়া যায়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুগীর মাথায়/কপালে হাত রেখে এসব পড়তেন, কখনো এসব পড়ে অসুস্থ ব্যক্তিকে ফুঁ দিতেন। সব এখানে লেখা সম্ভব না, কমন একটা রুকইয়া বলা হচ্ছে। এটা ফলো করলে ইনশাআল্লাহ উপকার পাওয়া যাবে।

কোরআন থেকে প্রসিদ্ধ কয়েকটি আয়াতে রুকইয়া- “সুরা ফাতিহা, সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস, ৬টি আয়াতে শিফা, ৮টি আয়াতে সালাম” এগুলো তিনবার বা সাতবার করে পড়া ।

এর সাথে রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত রুকইয়ার দোয়াগুলো পড়া।

৬টি আয়াতে শিফা (৯/১৪, ১০/৫৭, ১৬/৬৯, ১৭/৮২, ২৬/৮০, ৪১/৪৪)

১.وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ 
২. وَشِفَاء لِّمَا فِي الصُّدُورِ
৩. يخْرُجُ مِن بُطُونِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاء لِلنَّاسِ
৪. وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاء وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
৫. وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ
৬. قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاء

এরপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত অনেক দো’আ আছে, এর মাঝে কয়েকটি হল-

১. اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ، اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
২. بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
৩. بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ
৪. اَسْأَلُ اللهَ الْعَظِيْم، رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيْم، اَنْ يَّشْفِيَكْ
৫. بِسْمِ اللَّه، بِسْمِ اللَّه، بِسْمِ اللَّه، أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللَّهِ وَقُدْرَتِهِ، مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ

আয়াতগুলোর উচ্চারণ https://facebook.com/ruqyahdhaka/videos/376534342782043/

শারীরিক অসুস্থতার জন্য রুকইয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি- 

১. এগুলো সরাসরি পড়ে রুগীকে ফুঁ দেয়া, বিশেষত আক্রান্ত স্থানে ফুঁ দেয়া।
২. রুগীর মাথায় হাত রেখে পড়া, অথবা ব্যাথার যায়গায় হাত রেখে পড়া।
৩. এসব পড়ার পর কালোজিরার তেল বা অলিভ অয়েলের ওপর ফুঁ দিয়ে ব্যবহার করতে পারেন, মালিশ করতে পারেন।
৪. পুষ্টিকর কোন খাদ্য, কালোজিরা, মধু, পানি, ভিটামিন অথবা ডাক্তারের দেয়া ঔষধে এগুলো পড়ে ফুঁ দিয়ে খেতে পারেন।
৫. আর এর পাশাপাশি রুকইয়া শুনতে চাইলে “শাইখ হুযাইফি” রুকইয়া এবং সা’দ আল গামিদির আধাঘণ্টার রুকইয়া শুনতে পারেন। এসবের মাঝে অনেক অনেক দোয়া, আয়াতে শিফা আছে। (অডিও লিংক – http://bit.ly/ruqyahdownload#qari)
৬. আর রুকইয়ার গোসলও বিভিন্ন অসুখের জন্য খুব উপকারী। (গোসলের পানিতে হাত রেখে সাতবার করে দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক, নাস পড়া। সেই পানি দিয়ে গোসল করা।)

ডাক্তারের চিকিৎসা নেয়ার পাশাপাশি পরপর কয়েকদিন উপরোক্ত এক বা একাধিক রুকইয়ার টিপস অনুসরণ করা। এর সাথে আল্লাহর কাছে তাহাজ্জুদ এবং নফল নামাজ পড়ে বেশি বেশি দোয়া করা। সাদকাহ করা।

মানসিক সমস্যার জন্য সুরা ইয়াসিন, সফফাত, দুখান, জ্বিন, তিনকুল – এসব তিলাওয়াত করা খুব উপকারী। এসব হয়তো তিলাওয়াত করেছেন আগেও, কিন্তু এমনি তিলাওয়াত করা আর রুকইয়াহ বা চিকিৎসার নিয়াতে তিলাওয়াত করার মাঝে পুর্ব-পশ্চিম ফারাক।

তো, রুগীর ওপর এসব তিলাওয়াত করা। সমস্যা নিজের হলে, নিজে তিলাওয়াত করলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। পাশাপাশি রুকইয়ার গোসল করা যেতে পারে। নিদ্রাহীনতার চিকিৎসাতে এই সুরাগুলোর রুকইয়া আলহামদুলিল্লাহ খুব বেশি উপকারী। তিলাওয়াত করার দুর্বল বিকল্প হিসেবে শোনা যেতে পারে। (অডিও লিংক – http://bit.ly/ruqyahdownload#6)

 

 

যেকোন ব্যথার জন্য রুকইয়াহ

 উসমান ইবনে আবিল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একবার আমার শরীরে ব্যাথা অনুভব করছিলাম, তখন আমি রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এর কাছে এব্যাপারে অনুযোগ করলাম। রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- তোমার হাতটি ব্যাথার যায়গায় রাখো, এরপর তিনবার বল “বিসমিল্লাহ”। তারপর ৭বার বল- “আ’ঊযু বি’ইঝঝাতিল্লা-হি ওয়াক্বুদরাতিহ, মিন শাররি মা-আজিদু ওয়াউহ্‌া-যির”। : أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللَّهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ […]

 ব্যথার জন্য রুকইয়ান

 

রুকইয়াহ করার পর সাইড ইফেক্ট সামলানো

-----------------
রুকইয়াহ করার সময় অনেকের বেশ ধকল যায়। কেউ এতটা ক্লান্ত হয়ে যান, ফিরে হেটে বাড়ী যাওয়ার মত অবস্থা থাকে না। নিজে রুকইয়াহ করলে দেখা যায়, রুকইয়াহ করে এমন ক্লান্ত হয়ে গেছেন, যে পরিবারের জন্য রান্না করতে পারছে না। এরকম সবসময়ই যে হয় তা না, বরং কখনও কখনও এমন হয়ে থাকে। তাই রুকইয়া করার পর কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা উচিত।
১. রুকইয়ার পর ওযু করা বা হাত-মুখ ধুয়ে নেয়া। এতে অনেক হালকা বোধ হয়।
২. প্রস্রাব-পায়খানা করা। অনেকের ভেতরের এভিল থিংগস রুকইয়ার পর টয়লেটে গেলে বের হয়ে যায়।
৩. সময় দেয়া। আপনি যদি রাকী হন, তবে রুকইয়াহ করার পর রুগীকে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে দিন। অবস্থা বিবেচনায় ১৫ থেকে ৩০ মিনিট হতে পারে।
৪. রুকইয়ার গোসল করা। এটা খুব উপকারী। বিশেষত: অনেকের রুকইয়াহ করতে গিয়ে মাথাব্যথা, পুরো শরীর ব্যথা, কেউ কেউ অনেকটা অসুস্থ হয়ে যান। এক্ষেত্রে রুকইয়াহ শেষে (পানিতে হাত রেখে ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ৩কুল সব ৭বার করে পড়ে) গোসল করে নেয়া উচিত। তাহলে অনেক আরাম পাওয়া যায়। জিনের রুগীর ক্ষেত্রে যদি কখনও কয়েকদিন রুকইয়াহ করা লাগে, তাহলে প্রতিদিনের রুকইয়াহ শেষে রুকইয়ার গোসল করানো উচিত।
৫. আরেকটা কাজ করা যেতে পারে, তাৎক্ষনিক সুস্থতার নিয়াতে সুরা ফাতিহা এবং আয়াতে শিফা (৯/১৪, ১০/৫৭, ১৬/৬৯, ১৭/৮২, ২৬/৮০, ৪১/৪৪) তিনবার করে পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে খেয়ে নিন। ইনশাআল্লাহ আরাম পাবেন।

 

৬টি আয়াতে শিফা (৯/১৪, ১০/৫৭, ১৬/৬৯, ১৭/৮২, ২৬/৮০, ৪১/৪৪)

১.وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ 
২. وَشِفَاء لِّمَا فِي الصُّدُورِ
৩. يخْرُجُ مِن بُطُونِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاء لِلنَّاسِ
৪. وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاء وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
৫. وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ
৬. قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاء

 

 

প্রশ্নঃ বাচ্চাদের জন্য কিভাবে রুকইয়াহ করব এবং এক্ষেত্রে লক্ষনীয় বিষয়গুলো কি কি?

-----
উত্তরঃ
.
বাচ্চাদের জন্য রুকইয়াহ করা বড়দের রুকইয়াহ করার চেয়ে তুলনামূলকভাবে সহজ, আবার ফলাফল পাওয়া যায়ও তাড়াতাড়ি। বাচ্চাদের জন্য রুকইয়াহকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি-
.
১) বাচ্চার মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো নিশ্চিতভাবে পাওয়া না যায়ঃ
.
যদি বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো নিশ্চিত হওয়া না যায় যেমন- “এমন কোন শারীরিক সমস্যা যেটা “দেখে মনে হয়” মেডিক্যালে এর কোন “ব্যাখা নেই” অথবা “মনে হচ্ছে” যে নজর লেগেছে অথবা বাচ্চারা তাদের স্বাভাবিক আচরণ করছে না” এক্ষেত্রে আমরা বাচ্চাদের জন্য “সার্বজনীন পূর্ণ রুকইয়াহ প্রোগ্রাম” বা দীর্ঘ মেয়াদি কোন রুকইয়ার পরামর্শ দিবো না। বরঞ্চ এই পর্যায়ে আমরা “বদনজরের সাধারণ রুকইয়া” অথবা “৭ দিনের ডিটক্স প্রোগ্রাম” করার পরামর্শ দিবো। বাচ্চার বয়স যদি এক বছরের নিচে হয় তাহলে ডিটক্স প্রোগ্রাম থেকে মধু বাদ দিবেন। ছোট বাচ্চা এক কাপ বা আধা গ্লাস পানি না খেতে পারলে সেটারও অর্ধেক খাওয়ান। আর তিলাওয়াত বাবা অথবা মা করে দিতে পারেন। ৭ দিনের ডিটক্স প্রোগ্রাম সাধারণত সব বয়সের মানুষের জন্যই উপযোগী।
.
২) বাচ্চার মধ্যে নিশ্চিতভাবে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু জ্বিনও হাজির হচ্ছে না এবং বাচ্চার খুব বেশি ইফেক্টও হচ্ছে নাঃ
.
যদি আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো নিশ্চিত হওয়া যায় কিন্তু বাচ্চা শক্ত কোন প্রতিক্রিয়াও না দেখায় আবার জ্বিন দ্বারা আসর নাও হয় তাহলে সেটা হতে পারে উপরে উল্লিখিত চিকিৎসা পদ্ধতি নেওয়ার কারণে (৭ দিনের ডিটক্স প্রোগ্রাম)। এক্ষেত্রে আমরা পরামর্শ দিবো সার্বজনীন রুকইয়াহ প্রোগ্রাম করার জন্য। কিন্তু রুকইয়াহ করতে হবে আরমাদায়ক ভাবে। অর্থাৎ বাচ্চাকে জোর করে মূর্তির মত এক জায়গায় বসিয়ে রাখা যাবে না, বাচ্চা ভয় পায় এমন কিছু করা যাবে না। আর এসব ক্ষেত্রে সাধারণত হিজামাও করার দরকার পরে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এত টুকুতেই বাচ্চা ভাল হয়ে যায়। এতে বাচ্চার কোন অসুবিধাও হয় না আবার জ্বিনের আসরের মত কিছুও ঘটে না।
.
৩) যদি সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে, যেমন বাচ্চা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে বা চিৎকার চেঁচামেচি করে, বাচ্চার ওপর জ্বিন হাজির হয়ে যায় বা আসর করে বসে তাহলে এক্ষেত্রে প্রতিদিন সরাসরি রুকইয়ার পাশাপাশি আমরা সার্বজনীন রুকইয়াহ প্রোগ্রাম অনুসরণ করার পরামর্শ দিবো। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ কাউকে দিয়ে প্রয়োজনে হিজামাহ করানো যেতে পারে। আর একটু খেয়াল রেখে (সতর্কভাবে) রুকইয়াহ করতে হবে। যেমন বাচ্চাকে কাছে বসিয়ে রাখতে হবে, রুকইয়াহ এর আয়াতগুলোতে বেশি বেশি জোর দিতে হবে।
.
.
বিশেষ জ্ঞাতব্যঃ
-------------------
.
ক) বাচ্চার নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্য সবসময়ই সর্বোচ্চ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। যেহেতু বাচ্চার আচরণ ও মানসিকতা পূর্ণবয়স্ক মানুষের মত নয়, তাই বাচ্চার সাথে পূর্ণবয়স্ক মানুষের মত আচরণ করা যাবে না। রুকইয়াহ করার সময় বাচ্চা যেন পরিপূর্ণ আরামদায়ক ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রুকইয়াহ করার সময় একটু পর পরে চেক করতে হবে, বাচ্চারা রিল্যাক্সড ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে কিনা। তাদের সাথে হালকা খেলাধূলাও করতে পারেন, তাদেরকে বলতে পারেন “আমার সাথে সাথে পড়।” যদি আপনি বাচ্চার অপরিচিত কেউ হয়ে থাকেন, তাহলে রুকইয়াহ করার আগে ও পরে তার সাথে কিছু সময় কাটান। যেন সে আপনাকে সহজ ভাবে নিতে পারে।
.
খ) কখনোই, কখনোই বাচ্চাকে প্রহার বা আঘাত করবেন না। সত্যিকার অর্থে রুগী যেই হোক না কেন, বাচ্চা অথবা পূর্ণবয়স্ক, তাকে প্রহার করা সাধারণত ভালো রেজাল্ট দেয় না। বরং এর কারণে অনেক সময় জ্বিন আরো দীর্ঘ সময় শরীরে ঘাপটি মেরে বসে থাকতে পারে। আর বাচ্চার গায়ে আঘাত করা হলে, বাচ্চা সিরিয়াস ইনজুরিতে পড়ে যেতে পারে। অনেকক্ষেত্রে রুকইয়াহ চলাকালীন সময়ে “জ্বিনকে” প্রহার করার কারণে বাচ্চা মারাও যায়। তাই প্রহার করা এক্ষেত্রে জ্বিনকে সাহায্য করারই নামান্তর।
যদি বুঝতে পারেন জ্বিন শরীরের এখানে সেখানে ছুটোছুটি করছে, তাহলে মৃদুভাবে সেই জায়গায় মালিশ করবেন। ফলে বাচ্চাও আরাম বোধ করবে আর জ্বিনও প্রেশারে থাকবে।
.
গ) বাচ্চাদের রুকইয়াহ করার সবচেয়ে জটিল বিষয় হচ্ছে, বাচ্চারা বড়দের মত তাদের অনুভূতি আর অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করতে পারে না। স্বভাবগত ভাবেই বাচ্চারা একটু ছুটোছুটি বা দৌড়াদৌড়ি পছন্দ করে। এটাকে জ্বিনের লক্ষণের সাথে গুলিয়ে ফেললে হবে না। সময় নিয়ে বাচ্চার আচরণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে; বিশেষ করে রুকইয়াহ করার সময় ও রুকইয়াহ করার আগে বা পরের সময়ের আচরণে পার্থক্য ভালো করে খেয়াল করতে হবে। তাহলে আপনি বাচ্চার স্বাভাবিক আচরণ আর অস্বাভাবিক আচরণের মাঝে পার্থক্য ধরতে পারবেন।
.
ঘ) যদি বাচ্চা বয়সে একটু বড় হয়, নিজের কথা বুঝিয়ে বলতে পারে; তাহলে বাচ্চার সাথে তার সমস্যা নিয়ে আলোচনা করুন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, তার মন থেকে শয়ত্বান জ্বিনের ভয় দূর করতে হবে। বাচ্চাদের মনে বড়দের তুলনায় শয়ত্বান জ্বিনের ভয় বেশি প্রভাব ফেলে। এমন যেন না হয়, জ্বিনের ভয়ে বাচ্চা ঘুমাতেই পারছে না। বাচ্চার কাছে শয়ত্বান জ্বিনের দূর্বলতাগুলো তুলে ধরবেন। তাদেরকে বুঝান শয়ত্বান জ্বিন কিভাবে কুর’আনের ভয়ে পালিয়ে বেড়ায়। বাচ্চাদেরকে শয়ত্বান জ্বিন থেকে সুরক্ষার জন্য মাসনূন দু’আ গুলো শিখিয়ে দিন।
.
ঙ) যদি জ্বিন হাজির হয়েই যায় এবং কথাও বলা শুরু করে, তাহলে জ্বিনের সাথে অপ্রয়োজনীয় ও বেশি কথা বার্তা বলবেন না। জ্বিনকে “ইসলাম গ্রহণ করে বাচ্চার শরীর থেকে বের” হয়ে যেতে বলবেন। আর যদি “ইসলাম” গ্রহণ করতে না চায়, তাহলে বলবেন যেন “চলে যায় এবং আর ফিরে না আসে।” জ্বিনের কোন গাল-গল্পই বিশ্বাস করবেন না, তাদের সাথে কোন বোঝাপড়াতেও যাবেন না।
.
চ) রুকইয়াহ করার জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় ধরাবাঁধা নেই। কিন্তু আপনি যদি দেখেন কোন নির্দিষ্ট সময়ে বাচ্চার মধ্যে লক্ষণগুলো প্রকট হয় (যেমনঃ মাগরিবের পর), তাহলে সে সময়ে রুকইয়াহ করাটাই সবচেয়ে ভালো। অন্যথায় যে সময় বাচ্চা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, সে সময়ই রুকইয়াহ করবেন।
.
ছ) অবস্থা বুঝে রুকইয়াহ করার পদ্ধতি ও সময় পরিবর্তন করতে পারেন। তবে খুব দ্রুত রুকইয়াহর পদ্ধতি পরিবর্তন করবেন না, কারণ এতে জ্বিন শয়তান আপনাকে নিয়ে খেলা করার বা ম্যানুপুলেট করার সুযোগ পাবে।
.
আল্লাহই ভালো জানেন।

 

 

রুকইয়া শুরুর পূর্বে
------------------------
যারা রুকইয়া শুরু করবেন অথবা রুকইয়া করছেন নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন ইনশাআল্লাহ।
১। রুকইয়া একপ্রকার ইবাদত। দুয়াতে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া হয়, একইভাবে রুকইয়ার মাধ্যমেও আল্লাহর সাহায্য চাওয়া হয়। এটাকে কখনোই হেলাফেলার বিষয় মনে করবেন না। “রুকইয়া করে দেখি কাজ হয় কিনা। কাজ নাহলে কবিরাজের কাছেই যেতে হবে” এরকম মানসিকতা নিয়ে রুকইয়া করবেন না। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আর আমি কুরআন নাযিল করি যা মুমিনদের জন্য শিফা ও রহমত, কিন্তু তা যালিমদের ক্ষতিই বাড়িয়ে দেয়।” (বনী ইসরাঈল ৮২)
আল্লাহর কালামে শিফা আছে এই কথা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রেখে রুকইয়া শুরু করবেন।
২। “রুকইয়া করব এবং কবিরাজের চিকিৎসাও চালিয়ে যাব” এরকম মন মানসিকতা থাকলে রুকইয়া করবেন না। রুকইয়ার পাশাপাশি ডাক্তারী চিকিৎসা নিতে পারেন। কিন্তু কবিরাজের চিকিৎসা,জীন হাজির করে জবাব নেয়া এমন কিছু করা যাবেনা। রুকইয়া শুরুর পূর্বে গায়ে/বাসার সকল তাবিজ নষ্ট করবেন। তাবিজ নষ্ট করে তাওবা করার পর রুকইয়া শুরু করবেন। 
শরীয়ত সমর্থন করেনা এমনকিছু বাসায় রেখে রুকইয়া করবেন না। যেমন- কুকুর, প্রাণির উন্মুক্ত ছবি, মূর্তি, জ্যোতিষীদের দেয়া কোনকিছু। প্রশ্ন করতে পারেন, তাবিজ থাকলে সমস্যা কি? সমস্যা আছে, তাবিজ রেখে রুকইয়া করলে অনেক সময় উলটাপালটা প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, সমস্যা থাকলেও রুকইয়া করে কোন উপকার হয়না।
৩। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “বান্দা আমার সম্পর্কে যেমন ধারণা করে আমি তার নিকট তেমনই”। (বুখারী, ৬৯০১)
আল্লাহ সম্পর্কে সর্বোচ্চ সুধারণা রাখতে হবে। যাবতীয় সমস্যার জন্য বেশি বেশি দোয়া করতে হবে। বিশেষত দোয়া কবুলের সময়গুলোতে (যেমন- তাহাজ্জুদের সময়ে)। আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করবেন কিনা সেটা নিয়ে কনফিউজড থাকা যাবেনা। আল্লাহ দোয়া কবুল করবেন এমন ধারণা রেখেই দোয়া করতে হবে। এটা দোয়ার আদব।
৪। ফরজ ইবাদতে (যেমন নামাজ,পর্দা ইত্যাদি) সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। রুকইয়া করছেন এজন্য বা অন্যকোন কারণে না, আল্লাহ করতে বলেছেন তাই আপনাকে নামাজ পড়তে হবে, পর্দা করতে হবে। ফরজ ইবাদত নিয়মিত না থাকলে কি রুকইয়া শুরু করা যাবেনা? যাবে, তবে ফরজ ইবাদতের দিকে বেশি মনযোগ দিতে হবে। রুকইয়া যেহেতু এক প্রকার ইবাদত তাই রুকইয়া থেকে ভালো ফলাফল আশা করলে ফরজ ইবাদত ঠিক হওয়া জরুরি। পাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকতে হবে যথাসম্ভব। সুস্থ এবং অসুস্থ সবারই উচিত হিফাজতের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিখিয়ে দেয়া সকাল সন্ধ্যা ও ঘুমানোর আগের আমলগুলো করা। যারা রুকইয়া করবেন এসব আমল করা তাদের জন্য আরো জরুরী। হিফাজতের জন্য বলা মাসনুন আমল এখানে পাওয়া যাবে,
৫। কিছু মানুষ বলে বেড়ায়, “কোরআন দিয়ে হবেনা। কুফরি কাটানোর জন্য কুফরিই করতে হবে।” নাউযুবিল্লাহ! জেনেশুনে কুফরি করা এবং মানুষকে কুফরির দিকে আহবান করা মারাত্মক গুনাহের কাজ। কুফরি কাটানোর জন্য কোরআন দিয়েই চিকিৎসা করতে হবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“আল্লাহ কোন হারাম বস্তুতে তোমাদের জন্য আরোগ্য রাখেননি।” (সহীহ ইবনে হিব্বান)
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“যদি আমি এই কোরআন পাহাড়ের উপর অবতীর্ণ করতাম, তবে তুমি দেখতে যে, পাহাড় বিনীত হয়ে আল্লাহ তা’আলার ভয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেছে। আমি এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্যে বর্ণনা করি, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।” (সুরা আল হাশর ২১)
কোরআন কোন পাহাড়ের উপর নাজিল করলে আল্লাহর ভয়ে পাহাড়টাই মাটিতে মিশে যেত! সুবহানাল্লাহ! সৃষ্টিকুলের মালিক আল্লাহ তায়ালার কালামের সামনে দাঁড়াতে পারে এমন কিছু আসমান জমীনে নাই। আল্লাহর কোন সৃষ্টি, আপনার অসুখ এসবেরও কোন ক্ষমতা নাই আল্লাহর কালামের সামনে টিকে যেতে পারে।
প্রচলিত কুফরি কবিরাজি সম্পর্কে জানুন এবং এসব থেকে দূরে থাকুন। 
৬। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে রুকইয়া চালিয়ে যাবেন। পরিপূর্ণ সুস্থ হওয়া পর্যন্ত রুকইয়া করবেন। রুকইয়া কতদিন করলে সুস্থ হবেন? আল্লাহ যেদিন চান সেদিন আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন, দিনক্ষণ হিসেব করে বলা যাচ্ছেনা। যাদের সমস্যা একটু বেশি তাদের উচিত নিয়মিত রুকইয়াতে দৃঢ় থাকা।
আল্লাহ আপনাদের রুকইয়াহ সফল করুন এবং যাবতীয় রোগব্যধি থেকে শিফা করুন।

 

 

 মাসনুন আমল
https://allzinone.blogspot.com/2021/05/blog-post_21.html



বদনজর বিষয়ক সবকিছু একসাথে

https://allzinone.blogspot.com/2021/05/blog-post_56.html



জ্বীন বিষয়ক সব একসাথে

https://allzinone.blogspot.com/2021/05/blog-post_13.html


প্রসিদ্ধ বিষয়গুলো সব একসাথে
https://allzinone.blogspot.com/2021/05/blog-post_9.html


শয়তানি ওয়াসওয়াসা বিষয়ে সবকিছু একসাথে
https://allzinone.blogspot.com/2021/05/blog-post_25.html


যাদু বিষয়ক সবকিছু একসাথে Treatment relating to magic illness in a single place

https://allzinone.blogspot.com/2021/05/treatment-relating-to-magic-illness-in.html

 

 

 

 

 

Thursday, May 13, 2021

শয়তান যাদুকর/কবিরাজ প্রসঙ্গে সবকিছু একসাথে

শয়তান যাদুকর/কবিরাজ প্রসঙ্গে সবকিছু একসাথে

 

 

  1. রুকইয়াহ শিরকিয়্যাহ
  2. যাদুকরের হাজিরা দেখা, আপনাদের বিভ্রান্তি
  3. ঝাড়ফুঁক জায়েজ তাই তাবিজও জায়েজ?
  4. কুফরি কাটাতে কুফরি করা লাগবে?
  5. যেসব মুত্তাকী ব্যক্তি বাতিল কবিরাজি করেন...
  6. ফেরেশতা হাজির করার আমল নাকি শয়তান পুঁজা?
  7. জিনদের সাহায্য নেয়া যাবে কি?
  8. রুকয়াইয়হ vs কবিরাজি

 

 

রুকইয়াহ শিরকিয়্যাহ!

----------
আজকাল কবিরাজ নামের ভণ্ড যাদুকররাও বলছে "রুকইয়া করি"
শয়তানি আগেরগুলোই আছে, শুধু নাম দিচ্ছে রুকইয়া!
গতকাল একজনের খবর পেলাম উনাকে বলেছে রুকইয়া করবে, পরে- উনার নাম আর মায়ের নাম জিজ্ঞেস করেছে। মায়ের নাম জিজ্ঞেস করার কারন হচ্ছে, শয়তানী যাদু করবে তাই কবিরাজরা বাপের পরিচয় স্বীকার করতে চায় না।
এক ফেসবুক পেইজে দেখলাম রুকইয়া করার নামে প্রেমভালবাসার তাবিজ বিক্রি চলছে!! রিলেশন ব্রেকআপ হওয়া ছেলেমেয়েরা ভিড় জমাচ্ছে কুফরি করার জন্য।
কিন্তু এই কুফরি করছে রুকইয়ার নাম দিয়ে।
হ্যাঁ! এসব (শাব্দিক অর্থে) রুকইয়া তো বটে! কিন্তু সেটা হল জাহেলী জামানার কুফরি-শিরকি রুকইয়াহ!
সহজ ট্রিক শিখিয়ে দেই, যে লোক তাবিজ লেখবে, তাবিজ ভেঙে ওর সামনে গিয়ে খুলবেন, জিজ্ঞেস করবেন - পড়েন কি লেখেছেন, এই তাবিজে কয়জন শয়তানের নামের যিকর করছেন বলেন।
শয়তান পূজারি যাদুকর চেনার সহজ উপায় হচ্ছে, চিকিৎসা করতে গেলে আপনার কাপড় চাইবে, অথবা আপনার কোন অংশ (যেমন চুল চাইবে)। আর আপনার নাম এবং মায়ের নাম জিজ্ঞেস করবে।

 

 

যাদুকরের হাজিরা দেখা, আপনাদের বিভ্রান্তি

যাদুর একটা ধরন হচ্ছে শয়তান ও যাদুকরের মাঝে এক ধরনের চুক্তি, যেখানে শর্ত থাকে যে যাদুকর কতিপয় হারাম বা শিরকী কাজে লিপ্ত হবে, আর বিনিময়ে শয়তান তাকে সহযোগিতা করবে ও তার অনুসরণ করবে। শয়তানের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য যাদুকরেরা ঘৃণ্য কিছু উপায় অবলম্বন করে। যেমনঃ
  • কুরআনের আয়াত উল্টো করে লিখা, 
  • কুরআন পায়ের নিচে দলিত করে টয়লেটে নিয়ে যাওয়া বা নোংরা কিছু দিয়ে কোরআনের আয়াত লিখা, 
  • সর্বদা নাপাক থাকা বা বিনা অযুতে সালাত আদায় করা, 
  • শয়তানের উদ্দেশ্যে পশু জবাই করে জবাইকৃত পশু শয়তানের নির্ধারিত স্থানে অর্পণ করা, ইত্যাদি। 
  • অনেকে আবার মাহরাম (আপনজন, যাদের সাথে বিয়ে হারাম) এমন মানুষের সাথে জিনা করা বা সংখ্যাতাত্ত্বিক চিহ্ন ব্যবহার করে ছক কেটে নক্সা এঁকে শয়তানের উপাসনা করে থাকে।
অর্থাৎ, যে যাদুকর যত বেশি কুফরিতে লিপ্ত হতে পারবে, শয়তান তাকে ততবেশি সাহায্য করবে।
আমাদের দেশে আমরা হরহামেশাই বিভিন্ন হুজুর, তান্ত্রিক সাধু, বা জ্যোতিষীর দেখা পাই যারা দাবি করে যে মুখ দেখেই আপনার অতীত বর্তমান ভবিষ্যত বলে দেবে। মূলত তারা এসব করে নিজেদের অনুগত শয়তান জীনের সাহায্যে আপনার ক্বারীন জ্বীনের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে। ক্বারিন অর্থ হচ্ছে সংগী, প্রত্যেক মানুষের সাথেই শয়তান জ্বীন লেগে থাকে, সংগী হিসেবে। এরা সবসময় মানুষের অন্তরে খারাপ চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়ে পাপ কাজ করতে উৎসাহিত করে।
তো যা বলছিলাম...
কিছুদিন আগে এক ভাই/বোন গ্রুপে এই ছবিটা পোস্ট করেছিলেন। এটাচমেন্টে দেখেন।
 
No photo description available.
 
ওনার ভাষ্যমতে স্বপ্নের মাধ্যমে কোন এক ওয়ালী (আল্লাহর প্রিয় বান্দা) নাকি এই মহিলাকে গায়েবী ক্ষমতা দান করেছেন, সেই ওয়ালির সাহায্যেই এই মহিলা হাজিরা দেখা আর মানুষের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কাজ করেন।প্রকৃত পক্ষে এই গায়েবী ওয়ালি এক শয়তান জ্বীন, অন্য কিছু নয়। আর হাজিরা বা উপস্থিতিও জ্বীনের, অর্থাৎ জ্বীন উপস্থিত হয়ে তাকে অদৃশ্যের খবর বলে যায়।
ওয়াক্তিয়া নামাজের পর এই মহিলা জায়নামাজের সামনে দু-পাশে দুটি মোম বাতি জ্বালান, মাঝখানে একগ্লাস পানি রাখেন, আর আগর বাতির ধোয়া ছড়ান.. এরপর উনি জায়নামাজে বসে মনে মনে ওয়ালিআল্লাহ'কে স্মরণ করলে ওয়ালীআল্লাহ নাকি উনার সামনে আসেন এবং ওয়ালিআল্লাহ মহিলার মাধ্যমে রোগীর নাম, পিতা-মাতার নাম, কি সমস্যা (রোগ) ইত্যাদি জিজ্ঞেস করেন। তারপর রোগীকে বলে দেন যে রোগী অমুক অমুক জায়গায় গিয়েছে, আর অমুক জায়গায় তাকে জ্বীন আক্রমণ করেছে।
সবশেষে সিজদা করে উঠে সামনে রাখা গ্লাসের পানি রোগীকে পান করতে বলেন, মাথায় ঝাড়ফুঁক করেন আর তাবিজ লিখে দেন। তারপর বলেন ওয়ালিআল্লাহর দরবার জিয়ারত করে আসতে। সাধারণত এই দরবার মানে কোন একটা মাজার বা দরগাহ হয়।
ঠিক একই রকম ঘটনা কিছুক্ষণ আগে আমি আমার এক আত্নীয়ের কাছ থেকে শুনলাম। তাঁর এক কাজিনের প্রেগন্যান্সির শুরুর দিকে ডাক্তারি পরীক্ষায় কিছুই ধরা পড়ছিল না, কিন্তু সব লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছিল যে সে প্রেগন্যান্ট। তো এমনই এক বয়স্ক মহিলা ছিল পরিচিত, যার সাথে জ্বীন আছে বলেই সবাই জানতো। এই মহিলাকে বলার পর তিনি মাগরিবের নামাজের পর জায়নামাজে থেকেই কিছু দোয়া দরুদ পড়লেন, সামনে যথারীতি আগরবাতি/মোমবাতি আর গ্লাস ভর্তি পানি ছিল। যেহেতু পূর্ব পরিচয় ছিল, সেহেতু আর তিনি রোগীর নামধাম বা সমস্যার বিবরণ জানতে চান নি। কিছুক্ষণ পর সিজদা করে উঠে রোগীকে পানি খেতে বললেন আর জানিয়ে দিলেন সে আসলেই প্রেগন্যান্ট, তাঁর সাথের জ্বীন তাকে বলেছে। সাথে কিছু ঝাড়ফুঁক করে দিলেন, তবে তাবিজ দিয়েছিলেন কিনা তা আর সেই আত্নীয়া মনে করতে পারেন নি।তবে এই বয়স্ক মহিলা ছিলেন নিঃসন্তান।
চিত্তাকর্ষক বর্ণনা, তাই না?
এবারে ব্যাখ্যায় আসি। এই দু’জন মহিলাই স্রেফ শয়তানের পূজারি যাদুকর। তারা শয়তানকে সিজদা করেছেন, আগুন/ধোঁয়ার মাধ্যমে যাদুর নিয়মকানুন পালন করেছেন। বিনিময়ে শয়তান তাঁদেরকে গোপন তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছে। আর শয়তানের এই তাঁবেদারি জঘন্যতম শিরক।
তবে মজা দেখতে চাইলে এরপর যখনই এমন কারো ওপর ‘আল্লাহর ওলী’ (?) ভর করবে, তখন আপনার কানে আঙুল দিয়ে জোরে আজান দিবেন। এরপর দেইখেন সার্কাস 😛
মনে প্রশ্ন আসছে না? কেন সেই মহিলা নিঃসন্তান ছিলেন? এর উত্তর দিতে হলে একটু পেছনে যেতে হবে। সাধারণত যাদুকর এবং জ্বীনের গোত্র প্রধানের মধ্যে এই মর্মে চুক্তি হয় যে, যাদুকরের কিছু প্রকাশ্য কুফরি বা শিরকী কাজের বিনিময়ে জ্বীনের গোত্র প্রধান তাকে নিজে সাহায্য করবে, বা কোন এক জ্বীনকে যাদুকরের কার্যসিদ্ধির জন্য নিযুক্ত করে দিবে। তো, এই প্রতিনিধি জ্বীন যদি কখনো আনুগত্য না করে, তাহলে যাদুকরের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জ্বীনের গোত্র প্রধান তাকে শাস্তিও দিয়ে থাকে। এই শাস্তি অনেক সময় প্রতিনিধি জ্বীনের ক্রোধের কারণ হয়ে যায়, আর ক্রোধের কারণে জ্বীন যাদুকরের সন্তান সন্ততি ও সম্পদের ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। যাদুকরকে জ্বীন অনেক কষ্টও দিয়ে থাকে, আর সাধারণত যাদুকরের সন্তানও হয় না, কারণ জ্বীন মাতৃগর্ভের শিশুকে মেরে ফেলে। এজন্য দেখবেন অনেক যাদুকর সন্তানের আশায় যাদু করা থেকে সাময়িকভাবে বিরত থাকে।
“কেন জ্বীনরা কবিরাজদের ক্ষতি করে” তাঁর একটা কারণ রয়েছে এখানে।
আল্লাহ্‌ আমাদের এসব শিরক - কুফর থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দিন, আমীন।

 

 

ঝাড়ফুঁক জায়েজ তাই তাবিজও জায়েজ?

---------
কুফরি তাবিজের ব্যাপারে বলতে লাগলেই আমাদের যেসব ভাইয়েরা ঝাড়ফুঁকের কথা টেনে ওটাকে জায়েজ করার চেষ্টা করেন। তাদেরকে আমি সচরাচর কিছু প্রশ্ন করে থাকি-
ঝাড়ফুঁকের ব্যাপারে সহীহ মুসলিমে যাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. এর সাফ হাদিস আছে, রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে ঝাড়ফুঁক নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। এরপর যাচাই করার পর শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দিয়েছেন।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে,
১. আজকাল যেসব "২৪৬৮ ৭৬৮ ৫৮০ ইয়া ফিরাউন ইয়া জিবরাইল" তাবিজ আমাদের হুজুররা লেখে। এসব তাবিজের ব্যাপারে রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবে অনুমতি দিয়েছেন?
২. আপনারা শর্ত সাপেক্ষে তাবিজ জায়েজ বলেন - ভালো কথা। তো তাবিজ জায়েজ হওয়ার শর্তের সাথে মিলে এরকম তাবিজ জীবনে কয়টা দেখেছেন?
৩. যেসব তাবিজের চর্চা হয়, এর শতকরা ৯৯.৯৯% আপনাদের ফাতওয়ার হিসেবেই হারাম কুফর। এরপরেও এই ফিতনার ব্যাপারে আপনারা নিশ্চুপ কেন? ফিতনার দরজা বন্ধ করা না ওয়াজিব?
৪. গাইরে মাহরামের সাথে অহেতুক চ্যাট করা, পত্রালাপ করা, ফোনে কথা বলা - এটার হুরমত তো নফসান বা ক্বাত'আন না, তবুও আলেমরা এটা নিষিদ্ধ বলেন কেন? কারণ এটা হচ্ছে হারাম কাজে পৌঁছানোর রাস্তা, শুরুতেই ফিতনার দরজার বন্ধ না করলে এটা যিনা পর্যন্ত পৌছাবে। সবাই তো আর যিনা করে না, তবুও ফোনে প্রেম করা হারাম বলেন কেন? কারণ এটা হারাম পর্যন্ত পৌঁছানোর মাধ্যম। খুতুওয়াতিশ শাইত্বান।
তাবিজের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা, আপনি প্রথমে না থামালে তাঁরা কুফরি-শিরকি তাবিজে পৌঁছাবে। আর এমনটাই হচ্ছে আমাদের সমাজে।
৫. এক মাযহাব মানা আবশ্যক বলেন, কারণ সাধারণ মানুষকে ইচ্ছামত মাযহাব মানতে দিলে তাঁরা ফিতনার জন্ম দিবে। আওয়ামরা উসুল বুঝবে না, একেক মাজহাবের সব সহজ বিষয় নিয়ে ধর্মকে জগাখিচুড়ী বানাবে। তা ভাই আপনার তাবিজের উসুলগুলা কজন আওয়াম বুঝে? তাদেরকে যে ফিতনার রাস্তায় ছেড়ে দিচ্ছেন, এরপর যখন সে স্বয়ং শয়তানের লেখা তাবিজ নিবে, তখন এর দায় আপনি নিবেন? দোষ তো আপনার! ফিতনার দরজা খালি মাজহাবের সময়েই বন্ধ করেছেন, তাবিজের সময় আরও রাস্তা দেখাইছেন।
রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঝাড়ফুঁকের ক্ষেত্রেও বলেছেন- "তোমাদের ঝাড়ফুঁক করার মন্ত্র আমাকে দেখাও, যদি শিরক না থাকে সমস্যা নাই" (মুসলিম)
তখনও কুফরি শিরকির প্রচলন ছিল বিধায় ঝাড়ফুঁকের ক্ষেত্রে রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাচাই করে তারপর অনুমতি দিয়েছেন আমভাবে দেননি। সাহাবায়ে কিরাম সুরা ফাতিহা দিয়ে রুকইয়াহ করেও নিশ্চিত হননি, রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞেস করেছেন- কাজটা ঠিক হয়েছে তো?
আমার প্রশ্ন হচ্ছে,
৬. আপনারা তাবিজ নিলে কি সেটা যাচাই করেন? উম্মতকে কখনও বলেন যাচাই করার কথা? নাকি উল্টা পরামর্শ দেন "সমস্যা হইছে? কবিরাজের কাছে যান!"
৭. শেষ প্রশ্ন, আপনারাও তো কবিরাজদের কাছে যান। তাবিজ নেন। জীবনে কয়টা তাবিজ ভেঙ্গে দেখেছেন এটা জায়েজ নাকি নাজায়েজ?
অথচ আল্লাহ তা'আলা বলেছেন -
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا
হে ইমানদাররা! কোন পাপাচারী ব্যক্তি যখন তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে তখন সেটা যাচাই কর। ভেরিফাই কর। (সুরা হুজুরাত-৬)
তাবিজের ব্যাপারে আমার দর্শন উস্তায মুহাম্মাদ তিম হাম্বলের অনুরূপ।
আমি বলব, তাবিজ পাইলে সবার আগে ভাঙবেন! দেখবেন ভেতরের লেখাটা কি খালি কোরআনের আয়াত, নাকি সাথে প্রাইমারির ২৪৬৮ নামতা লেখা আছে? খালি কোরআন আঁকা আছে, নাকি সাথে যাদুকরদের নকশাও আছে? খালি আল্লাহর যিকর আছে, নাকি চিপা দিয়ে ফেরাউন শয়তানের যিকরও আছে। যদি কোন সমস্যা না পান, অস্পষ্ট কিছু না থাকে। তখন আপনার সিদ্ধান্তে ছেড়ে দিলাম সেটা যা ইচ্ছা করতে পারেন।
আল্লাহ যেন আমাদের হিদায়াত দেয়।

 

কুফরি কাটাতে কুফরি করা লাগবে?

-------------------
বহুল প্রচলিত জঘন্য আকিদাগুলোর মাঝে এটা একটা। নিঃসন্দেহে এটা কোরআন বিরোধী আকিদা, বাস্তবতা পরিপন্থী আকিদা, মুর্খতাসুলভ কুফরি আকিদা। আমি কাউকে তাকফির করছি না, কিন্তু বাস্তবেই এটা ইসলাম বিরোধী বাতিল আকিদা।
কোরআন এর কথা হচ্ছে – “মন্দ প্রতিরোধ সেটা দিয়েই করুন, যা উত্তম। তারা যা বলে, আমি সে বিষয়ে সবিশেষ অবগত। আর বলুনঃ হে আমার পালনকর্তা! আমি শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর হে আমার রব! তাদের উপস্থিতি থেকেও আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” [মুমিনুন, ৯৬-৯৮]
সুতরাং আপনি যদি শয়তানি যাদুতে আক্রান্ত হন, তবে আপনার কাজ হবে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া। রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কিরামও যাদুতে আক্রান্ত হয়েছে। তাঁরা তো আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছেন, শয়তানের কাছে না। সুরা ফালাকের মাঝে আল্লাহ আমাদের সেটাই শিখিয়েছেন।
"আর (আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি) গিরায় ফুঁ দিয়ে জাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে" [আয়াত ৪]
আর বাস্তবতা এটাই, ঈমান আসবে; কুফর চলে যাবে। হক আসবে; বাতিল চলে যাবে। কোরআনের এই আয়াতটা তো সবার মুখস্ত -
وَقُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ ۚ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا
"বলুন, সত্য এসেছে; মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল।"
এর পরের আয়াতটা কি জানেন?
وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ ۙ وَلَا يَزِيدُ الظَّالِمِينَ إِلَّا خَسَارًا
“আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত, গোনাহগারদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়..। [বানি ইসরাইল, ৮১-৮২]
সুতরাং যদি ক্ষতি থেকে বাঁচতে চান আর আল্লাহর রহমত আশা করেন, তবে কুফর থেকে দূরে থাকেন, এবং কোরআন দিয়ে রুকইয়াহ করেন।
আল্লাহ আমাদেরকে জানার, বুঝার এবং মানার তাওফিক দিক, আমিন!

 

মুত্তাকী / আলেম ব্যক্তি যারা কবিরাজি করেন, তাদের ব্যাপারে কি বলব?

--------------------------
যাদুটোনা ব্যবহার করা কবিরাজ চেনার কিছু পদ্ধতি বলা হয়েছিল। যথাঃ

  • আপনার কাপড় চাইবে
    আপনার কোন অংশ (যেমন চুল চাইবে)
    আপনার নাম এবং মায়ের নাম জিজ্ঞেস করবে।

এটা দেখার পর অনেকে প্রশ্ন করছেন, অনেক আলেম মানুষও তো এরকম করেন। তাদের ব্যাপারে কি বলব?
কেউ বলছেন - অমুক বড় মাদরাসা থেকে ইফতা পড়া মুফতি সাহেব এভাবে এভাবে করেন, তার ব্যাপারে কি বলব?
তাবিজ নিয়ে কথা বলতে গেলেও এরকম মন্তব্য শোনা যায়, খুব পরিচিত একজন মুত্তাকী আলেম আছেন, যিনি সংখ্যা দিয়ে তাবিজ লেখেন, এবং টাকাও নেন না। তাকে আমি কিভাবে ভুল বলব?
প্রিয় ভাই! এখানে কয়েকটা পয়েন্ট মাথায় ঢুকিয়ে নিলে আশা করি ব্যাপারটা সহজ হয়ে যাবে-
১. 'রুকইয়া শারইয়্যাহ এবং শিরকিয়্যাহ' একটা স্বতন্ত্র বিষয়। এই বিষয়ে ক্লাস নিতে চাইলে, ৪ মাসের এক সেমিস্টার পুরোটা ক্লাস নিয়েও আলোচনা শেষ করা মুশকিল।
২. একজন ব্যক্তি মুহাদ্দিস সাহেব অথবা মুফতি সাহেব হতে পারেন, কিন্তু তার মানেই উনি তাবিজ-কবচ বিষয়ে খুব গভীর ধারণা রাখবেন এমন তো না। উনি মাদরাসায় পড়েছেন ফিকহে ইসলামি অথবা উলুমে হাদিস বিষয়ে, বদনা চালান দেয়া তো দারুল ইফতায় শিখেননি।
৩. “উনি কাওমি মাদরাসায় পড়েছেন, উনি যে তাবিজ লেখেন!” – এর উত্তরে আমি বলি “দুঃখিত ভাই! কাওমি মাদরাসায় তাবিজ লেখা শিখানো হয় না। এটা উনি অন্য কোথাও শিখেছেন।”
৪. বাস্তবতা হচ্ছে, যারা এসব করেন, তাদের খুবই কম সংখ্যক এসবের গভীর জ্ঞান রাখেন। হয়তো একটা বই পেয়েছে কোন দোকানে বা ফুটপাথে, পড়ার পর আগ্রহ জন্মেছে। ব্যস! শুরু করে দিয়েছেন। এজন্যই আমরা অহরহ দেখি “বশ করার তাবিজ (পড়ুন যাদু) করতে গিয়ে ভুল করেছিল, এখন পাগল হয়ে গেছে, কিংবা মারাত্মক অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে।”
৫. গভীর জ্ঞান না রাখা একটা কারণ, দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে- এব্যাপারে বিজ্ঞ আলেমদের মতামত জানতে না চাওয়া, তাদের শরণাপন্ন না হওয়া।
৬. তৃতীয় কারণ হচ্ছে, এব্যাপারে শরিয়ত সমর্থিত পদ্ধতির প্রচলন না থাকা। যার কারণে, লোকেরা ধীরে ধীরে কুফরি যাদুটোনা আর তাবিজের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে।
স্মরণ করুন, আলী রা. এর প্রসিদ্ধ উক্তি -
"আহলে হক যখন চুপ থাকে, তখন আহলে বাতিল ধারণা করে, তারাই হক!"

 

 

ফেরেশতা হাজির করার আমল? নাকি শয়তান পুঁজা?

------------------
[ক]
আল্লাহ তা'আলা শিরকের ব্যাপারে অনেক কঠোর। স্বাভাবিক! একজন মানুষই তো তার ভালোবাসা, তার প্রভাব প্রতিপত্তিতে অন্যের ভাগ বসানো পছন্দ করবে না, আর আল্লাহর সুবহানাহু তা'আলা তো রাজাধিরাজ। আমাদের কল্পনাও যার নাগাল পেতে অক্ষম, কিভাবে সেই রাব্বুল আলামিনের ব্যপারে অংশিদারিত্ব সহ্য করা যায়?
“নিশ্চয় শিরক বিরাট বড় জুলুম” [সুরা লুকমান:১২]
[খ]
শিরকের ক্ষেত্রে এজন্য আল্লাহ তা’আলার শাস্তি অনেক ভয়াবহ। “নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না। এছাড়া যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করে দেন।” [সুরা নিসা:১১৬]
আমরা জানি ঈসা আ.কে যখন মানুষেরা কিয়ামত দিবসে আল্লাহর নিকট সুপারিশের জন্য বলবে, তিনি চিন্তাগ্রস্ত থাকবেন। কারণ, মানুষ তার সাথে আল্লাহকে সাজদা করেছিল। মুর্তিপুজারিদের সাথে মুর্তিও জাহান্নামে পুড়ানো হবে মর্মে কোথাও পড়েছিলাম।
মোটকথা, আল্লাহ শিরকের ব্যাপারে কোন ছাড় দিবেন না।
[গ]
আমরা সেদিন একটি তাবিজের পোস্টমর্টেম দেখলাম, যেখানে সুরা ইখালাসের সাথে শিরক মিশিয়ে ভয়াবহতম শিরক করা হয়েছে। আচ্ছা সেসব কবিরাজ বা যাদুকররা “ইয়া জিবরাইল ইয়া মিকাইল” তাবিজ লেখে, তারাও তো শিরক করছে। তাইনা? ফিরিশতাদের সাথে শিরক। নিজে তো করছে, অন্যকেও শিরকি কালাম বিতরণ করছে!
মূলতঃ শয়তানকে সন্তষ্ট করার জন্য তাঁরা ফেরেশতাদের নাম নিয়ে আল্লাহর সাথে শিরক করে। কোন এক শয়তানি কবিরাজির বইয়ে সুরা ইখলাসের ওঁই শিরকি এডিশন লিখা ছিল, এরপর কিছু নিয়মকানুন বলা ছিল। এভাবে এভাবে এত হাজার বার লিখবেন পড়বেন এতদিন, এরপর “তিনজন মক্কেল আসবে আপনার খেদমতে!!!”
এই তিনজনের মধ্যে একজনের ব্যাপারে লিখেছে – সে বলবে আমার নাম আব্দুর রহমান, "সুরা ইখলাস পাঠ করিয়া আমাকে ডাকিলে" আমি হাজির হইব। আমি আপনাকে “বহুবিধ জ্ঞান ও আশ্চর্য বিদ্যা” শিক্ষা দিব। এরপর তাহারা সিজদা করিতে বলিলে আল্লাহর নামে সিজদা করিবে!
এবার আমি ব্যাখ্যা করি শোনেন – “সুরা ইখলাসের সাথে কয়েক হাজার বার জঘন্যভাবে শিরক মিশ্রিত করে বড় শয়তান সন্তুষ্ট করতে পারলে, সে তিনটা চামচা পাঠাবে। এই তিনজনের মধ্যে এক শয়তান এসে যাদু শিখাবে, আর এসব স্যাটানিক রিচ্যুয়াল পালন শেষে এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে, যখন শয়তানকে সিজদা করতে হবে।”
এই কবিরাজদেরকেই মানুষ বিরাট বুজুর্গ মনে করে, তাই না?
[ঘ]
দেখুন আমাদের প্রভু আল্লাহ তা'আলা কি বলছেন -
“যেদিন তাদের সবাইকে একত্রিত করবেন এবং ফেরেশতাদেরকে বলবেন, এরা কি তোমাদেরই পূজা করত? ফেরেশতারা বলবে, আপনি পবিত্র, আমরা আপনার পক্ষে, তাদের পক্ষে নই, বরং তারা জিনদের পূজা করত। তাদের অধিকাংশই শয়তানে বিশ্বাসী।” [সুরা সাবা:৪০-৪১]

 

জিনদের সাহায্য নেয়া যাবে কি?

----------
[ক]
অনেক কবিরাজ আছে, যারা জিনদের সাহায্য নিয়ে চিকিৎসা করে। আর শোনা যায় এসব কবিরাজদেরই ডিমান্ড বেশি!
বেশ কয়েক বছর আগের কথা, এক নিকটাত্মীয়ার চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন যায়গায় খোঁজ করছিলাম, তখন রুকইয়াহ বিষয়ে কোন ধারণা ছিল না। কক্সবাজারের এক কবিরাজের খবর পেলাম, যে নাকি জিন দিয়ে চিকিৎসা করে। উনি ১০০টাকা নিলেন আর 'রুগীর এবং মায়ের নাম' নিয়ে টেস্ট করে বলেছিলেন - ২০ হাজার টাকা লাগবে!
আমাকে যে লোক খোঁজ দিয়েছিল তাঁকে বললাম, উনি এত চাচ্ছেন কেন? উত্তরটা ছিল লিখে রাখার মত - "আসলে এই হুজুরের সিস্টেমই এরকম। উনাকে জিনেরা বলেছে, আপনি যত বেশি টাকা নিবেন, ততবেশি উপকার হবে!!"
কবিরাজদের এক গ্রুপ আছে, যারা নিজের নামের শেষ "শাজলী" যোগ করে। ওরা বলে "সাহাবি জিন" নাকি ওদের খেদমত করে। (কোন ফাইজলামি এটা আল্লাহই জানে)
হাসবেন না প্লিজ.. এসব ভন্ডদের পিছেই মানুষ বেশি দৌড়ায়।
তো আমাকে জিনদের সাহায্য নেয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে বলি - "ভাই আমিতো মুফতি না, তাই ফাতওয়া দিতে পারছি না। তবে আমার জানামতে জিনদের সাহায্য চাওয়া কখনও শুধু হারাম, কখনও এর সাথে শিরক, কখনও কুফর। এটা কিভাবে সাহায্য চাইছে, কিভাবে সাহায্য করছে এর ওপর নির্ভর করে।"
.
[খ]
আজ চলুন কিছু চলুন দলিল দেখা যাক। হাদিসে এব্যাপারে কি আছে আমার জানা নাই, তবে কোরআনুল কারিমে দুইটা আয়াত পেয়েছি।
প্রথম আয়াটি সবাই জানেন, সুরা জিনে আল্লাহ বলছেন -
وَأَنَّهُ كَانَ رِجَالٌ مِّنَ الْإِنسِ يَعُوذُونَ بِرِجَالٍ مِّنَ الْجِنِّ فَزَادُوهُمْ رَهَقًا
অনেক মানুষ অনেক জিনের আশ্রয় নিত, ফলে তাঁরা জিনদের অহংকার বাড়িয়ে দিত। (সুরা জিন, আয়াত ৬)
 
এই আয়াতের আলোকে আলেমরা বলেন "জিনদের সাহায্য চাওয়া হারাম"। তবে স্বাভাবিকভাবেই শয়তান/জিনরা তো হুদাই আপনার কাজ করবে না। শয়তান বা জিনদের থেকে ফায়দা নিতে হলে, তাদের কথা অনুযায়ী স্যাটানিক রিচ্যুয়াল পালন করতে হয়, সেক্রিফাইস করতে হয়, আল্লাহর নামে না করে তাঁদের নামে পশু জবাই করতে হয়। ইত্যাদি ইত্যাদি।
আপনারা হয়তো অনেক কবিরাজকে দেখে থাকবেন, যারা বলে- গরু লাগবে, মুরগি লাগবে, ছাগল লাগবে। তাঁদের অনেকে নিজে এসব শয়তানের নামে বলি দেয়, আর অনেকে বলে “জবাই করার পর রক্তটা আমাকে দিয়েন।" তাঁরা এই রক্ত শয়তানের উপাসনায় ব্যবহার করে। যাদুবিদ্যায় বিভিন্ন মৃত প্রাণীর রক্ত ব্যবহার করা খুবই কমন ব্যাপার।
ওহ! আরেকটা কথা! আমরা শুনে থাকি, জিনেরা কবিরাজদের বিভিন্ন ক্ষতি করেছে। এটা করার বড় একটা কারণ হচ্ছে, এই বুঝাপড়ায় সমস্যা হওয়া। অর্থাৎ শয়তানের মর্জি মাফিক ইবাদত বা অর্চনা করতে পারেনি, সেক্রিফাইস করে শয়তানদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। ব্যাস! দেয় প্যাদানি!
.
[গ]
কোন কোন আলেম বলেন- "কোন কুফর শিরক ছাড়া, স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মানুষের খিদমাতের জন্য যদি কোন জিন সাহায্য করে। তবে নাকি জায়েজ হবে।"
এর জবাব হচ্ছে-
১। এসব বিষয়ে যাদের অভিজ্ঞতা আছে তারা ভালোভাবেই জানেন, জিনেরা প্রচণ্ড মিথ্যাবাদী আর ধোকাবাজ হয়। অতএব, আপনি যাকে পূণ্যবান জিন ভাবছেন, হতে পারে সে আসলে একটা শয়তান। আপনাকে কৌশলে ফিতনায় ফেলছে।
২। আমাদের চিকিৎসার জন্য কোরআন আছে। সুন্নাহস্মত রুকইয়াহ আছে। কেন আমরা সুন্নাহ ছেড়ে সন্দেহজনক বিষয়ে পতিত হব?
৩। আর আওয়ামুন নাস যেহেতু পেছনের খবর জানে না, তাঁদেরকে মুসতাগিস মিনাল জিনের কাছে পাঠানো মানে হচ্ছে "নিজ হাতে ফিতনার দরজা খুলে দেয়া।"
সুতরাং তাঁদের জন্য নিরাপদ হচ্ছে এসব সন্দেহজনক বিষয় থেকে দূরে থাকা, আর সুন্নাহসম্মত রুকইয়াহ করা।
.
[ঘ]
এবার আমি আপনাদের একটা ঝাটকা দেই! দেখুন এসব কবিরাজদের ব্যাপারে কোরআনে কি আছে -
 
وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ جَمِيعًا يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ قَدِ اسْتَكْثَرْتُم مِّنَ الْإِنسِ ۖ وَقَالَ أَوْلِيَاؤُهُم مِّنَ الْإِنسِ رَبَّنَا اسْتَمْتَعَ بَعْضُنَا بِبَعْضٍ وَبَلَغْنَا أَجَلَنَا الَّذِي أَجَّلْتَ لَنَا ۚ قَالَ النَّارُ مَثْوَاكُمْ خَالِدِينَ فِيهَا إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ ۗ إِنَّ رَبَّكَ حَكِيمٌ عَلِيم.
 
যেদিন আল্লাহ সবাইকে একত্রিত করবেন, হে জিন সম্প্রদায়, তোমরা মানুষের মাঝে অনেককে তোমাদের অনুগামী করে নিয়েছ। মানুষদের মাঝে তাঁদের বন্ধুরা বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, "আমরা পরস্পরে পরস্পরের মাধ্যমে উপকার লাভ করেছি।" আর এখন আপনি আমাদের জন্যে যে সময় নির্ধারণ করেছিলেন, আমরা তাতে উপনীত হয়েছি।
তখন তাঁদের বলা হবে “আগুন হল তোমাদের বাসস্থান। সেখানে তোমরা চিরকাল অবস্থান করবে; আর আল্লাহ যেমন চাইবে..।” নিশ্চয় আপনার পালনকর্তা প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞানী। (সুরা আন’আম, আয়াত ১২৮)

 

 

রুকইয়াহ vs কবিরাজি

অনেকের ধারনা রুকইয়াহ এবং কবিরাজি একই। গ্রুপ এডমিনদের প্রতিও ধারনা তারা কবিরাজি করেন। রুকইয়াহ সম্পর্কে যার ন্যূণতম জ্ঞান আছে, সে অন্তত এই ধারণা করবে না। সাধারন মানুষ কবিরাজের কাছে যায়, কিছু টাকা দেয় বা না দেয়; কবিরাজ বলে হয়ে যাবে। কিন্তু কিভাবে হবে সেটা আর বলে না। ভয়ে তাকে জিজ্ঞেসও করা যায় না। এত্তবড় কবিরাজ/হুজুর। জিজ্ঞেস করলে যদি আবার আমার কোন ক্ষতি হয়! ইমাম সাহেব উনি, উনি খতিব, উনি মুফতি সাহেব! উনি কি আর ভুল কিছু করবেন?
কাজেই আমরা যখন "বদনজর, জ্বিন, যাদুর" ব্যাপারে কথা বলতে যাই তখন স্বাভাবিক ইম্প্রেশনে মানুষ কবিরাজ/হুজুরই মনে করে। কারন তারা ভাবে কবিরাজ/হুজুররা কুরআন দিয়েই চিকিৎসা করে। আমরাও সে কথাই বলি। কেউ খতিয়ে দেখার কথা ভাবে না যে, তলে তলে কি হচ্ছে।
এই কারনে কুফরী করা, শিরক করা, ভণ্ড কবিরাজ/হুজুর চেনা জরুরী।
লন্ডনের এক বিখ্যাত রাক্বি (যিনি রুকইয়াহ করেন) কবিরাজ/হুজুর চেনার কিছু উপায় বলেছিলেন। আপনাদের জন্য সেখান থেকে তুলে দেয়া হলঃ
১. যদি জিজ্ঞেস করে আপনার মায়ের নাম কি,বাবার নাম কি, দাদার নাম কি, বংশ পরিচয় জানতে চায়-ইত্যাদি।
২. যদি বলে আপনার কাপড়ের অংশ লাগবে/আন্ডারগার্মেন্টেসের অংশ লাগবে/ চুল লাগবে/ দাড়ি লাগবে/কানের দুলটা/গলার চেইনটা লাগবে/হাতের চুড়ি লাগবে।
৩. যদি সে বলে "একগ্লাস পানি আনেন। আর একটা ছুড়ি আনেন। এবার গ্লাসের পানিতে ছুড়ি চালান।" আপনি চালাবেন আর আপনার মনে হবে আপনি ছুড়ি পানিতে না গোশতের মধ্যে চালাচ্ছেন।
৪. যদি সে আপনার বাসায় আসে, বসে পড়ে এদিক সেদিক তাকায় আর কি যেন বিড়বিড় করে। সুন্দর সুন্দর কথা বলে কিন্তু সেগুলো কুরআনের আয়াত নয়, হাদীসের দোয়াও নয়।
৫. যদি এমন বলে (সাধারনত মেয়েদের বলে) যে, আপনি যদি সুস্থ হতে চান তাহলে "এই জিনিস"টা আমাকে আপনার গোপন অঙ্গে ঘষতে হবে। যদি সুস্থ হত চান তাহলে আপনার এই এই অঙ্গ আমাকে ধরতে হবে/ আপনাকে উলঙ্গ হতে হবে -ইত্যাদি ইত্যাদি। (নাউজুবিল্লাহ)
৬. যদি বলে যে, এক বোতল পানি আনেন। বোতলটা টেবিলের উপর/ওয়ারড্রোবের উপর রাখুন। অথবা বলে যে, বোতলের মুখ খুলে হাতে রাখুন। আমি যখন বলব তখন সাথে সাথে মুখ লাগিয়ে দিবেন।
৭. যদি বলে যে, এই নেন এই তাবিজটা/কবচটা গলায়/হাতে/কোমড়ে পড়েন। কারণ প্রায় ৯৯% তাবিজেই শিরক, কুফর বিদ্যমান। 
৮. যদি বলে, চোখ বন্ধ করুন। কিছু একটা দেখতে পাবেন। যখন দেখতে পাবেন তখনই ধরে ফেলবেন। অথবা বলবে যখনই দেখবেন তখনই দু'হাতে মশা মারার মত করে মারবেন।
৯. আপনারা হয়তো অনেক কবিরাজকে দেখে থাকবেন, যারা বলে গরু লাগবে, মুরগি লাগবে, ছাগল লাগবে তাহলে আপনার কাজ হবে। তাদের অনেকে নিজে এসব শয়তানের নামে বলি দেয়, আর অনেকে বলে “জবাই করার পর রক্তটা দিবেন।" তাঁরা এই রক্ত শয়তানের উপাসনায় ব্যবহার করে। যাদুবিদ্যায় বিভিন্ন মৃত প্রাণীর রক্ত ব্যবহার করা খুবই কমন ব্যাপার।
বাংলাদেশের কবিরাজ/হুজুররা আরও কিছু কাজ করে থাকে যেমনঃ
১। কাপড় মাপে, কাপড় ছোট বড় করে দেখায়। একই ভাবে হাত মেপে হাত ছোট বড় দেখায়।
২। মুখে দেখেই অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কথা বলে এবং কিছু কিছু মিলেও যায়।
৩। জ্যোতিষিদের মত হাত দেখে।
৪। কোন কিছু পুতে রাখার জন্য বলে।
৫। জ্বিন বোতলে বন্দি করে রেখেছে, জ্বিনকে অমুক জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছে, জ্বিন রক্তে মিশে গেছে -এই জাতীয় উদ্ভট কথা বলে।
৬। কবিরাজদের একদল নিজের নামের শেষ "শাজলী" যোগ করে। ওরা বলে "সাহাবি জিন" নাকি ওদের খেদমত করে।
৭। সাত ঘাটের পানি লাগবে, অমুক জায়গায় মাটি লাগবে ইত্যাদি অর্থহীন কাজ করবে।
৮। অন্য জনের উপর জ্বিন হাজির করে তাকে দিয়ে কথা বলাবে ।
৯। শনিবারে যেতে হবে, মঙ্গলবার যেতে হবে, মাগরিবের পর যেতে হবে -ইত্যাদি অনর্থক শর্ত আরোপ করবে।
১০। নির্দিষ্ট জিনিস খাওয়া নিষেধ করতে পারেন। যেমন,কলা খাওয়া নিষেধ, গোশত খাওয়া যাবে যাবে না- খেলে ওষুধ কাজ করবে না। অন্যকোন ওষুধ খাওয়া যাবে না -ইত্যাদি বলতে পারে।
১১। তুলা রাশির লোক লাগবে -এসব বলতে পারে।
কাজেই যারা আমাদের সম্পর্কে এমন গর্হিত ধারনা পোষন করেন তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে আমরা এই ধরনের কথা বলে থাকি, এই ধরনের কাজ করি থাকি, তার প্রমান দিবেন। আর যদি প্রমান দিতে না পারেন তবে তওবা করে নিজের ধারনা সংশোধন করে নিবেন।
কবিরাজির বাস্তবতা সম্পর্কে কয়েকটা কথা বলি।
১) এদের কাছে গেলে আপনার সমস্যার সমাধান হবে না বরং আপনি জটিল থেকে জটিলতর সমস্যায় আক্রান্ত হবেন। অনেক মানুষ আছেন যার হয়ত সামান্য একটা সমস্যা ছিল। কিন্তু নানান কবিরাজের কাছে দৌড়াতে দৌড়াতে সেই সামান্য সমস্যাকে ভয়াবহ আকারে নিয়ে গিয়েছেন।
২) মেম্বাররা প্রায়ই বলেন, অমুক কবিরাজের কাছে গিয়েছিলাম, তাবিজ দিয়েছিল, এরপর এক মাস ভাল ছিলাম। এরপর আবার এই সমস্যা, ঐ সমস্যা শুরু হয়েছে। আসল কথা হল, শয়তানের একটা কাজ করে দিয়েছেন আপনি তাই একমাস আপনাকে বিরক্ত করেনি। একমাস পরে আবার শয়তানি করবে যেন আমি আবার নতুন করে কোন শয়তানি কুফরীতে লিপ্ত হন। প্রতিবার বড় থেকে বড় গোনাহে আপনি লিপ্ত হয়ে যাবেন। ক্ষুধার্থ কুকুরের মত। মাংস দিবেন, পেট ভরবে, চুপ থাকবে। হজম হয়ে গেলেই আবার ঘেঊ ঘেউ শুরু করবে।
৩) কবিরাজের/হুজুরের দেয়া তাবিজ কিছুদিন পর পর হারিয়ে যায়। ঘটনা একই আপনাকে আবার তাবিজ/টোটকা নিতে হবে। আবারও কোন গোনাহ করতে দিতে হবে।
৪) কেউ কেউ বলে জ্বিন নাকি নিজেই খেদমত করে। ডাহা মিথ্যে কথা। প্রথম দিকে হয়ত ছোট ছোট সমস্যার ব্যাপারে সহায়তা করে আপনার বিশ্বস্ততা অর্জন করতে চাইবে। পরে আপনাকে ঈমানহারা করে ফেলবে। আর পাশাপাশি ভয়ভীতি দেখাবে। আপনিও দেখবেন অমুক কাজ হয়েছে, তমুক কাজ হয়েছে এখন কথা না শুনলে না জানি আমার কি ক্ষতি করে। আমার ফ্যামিলির কি ক্ষতি করে! এ এক ভয়াবহ দুষ্টচক্র।
৫) ঈমানের ন্যুনতম নূর যার অন্তরে আছে তার কাছে কুফরী করা, শিরক করা কবিরাজ/হুজুর/যাদুকরের কাছে গেলেই মনেহবে "আমি ভুল কিছু করলাম নাতো"। মনে অশান্তি, খচখচানি থাকবে সারাজীবন।
অথচ রুকইয়াহ! কুরআনী চিকিৎসা, হাদিসের দোয়া নির্ভর চিকিৎসা। গোপনীয় কোন কিছু নেই। এমন না আমরা গ্রুপে এককথা বলি আর ইনবক্সে অন্য কথা বলি। যারা আমাদের ইনবক্স করেছেন তারা ভাল করেই জানেন কি অবস্থা। এখনো মনে হয় একেক জন্য এডমিনের ৩-৪ শ' মেসেজ রিকুয়েস্ট ঝুলে আছে।
এগুলো ঝুলেই থাকবে।
আপনি নিজেই করেন নিজের চিকিৎসা। কারও কাছে যেতে হবে না। আপনার জ্বিন সংক্রান্ত সমস্যা হলে আপনার বাবা, মা, ভাই, বোন, যেকাউকে (যার কুরআন তেলাওয়াত শুদ্ধ আছে) বলেন আপনাকে রুকইয়াহ করতে। চার আনা পয়সাও আপনাকে খরচ করতে হবে না। রুকইয়াহ ইনডেক্সে (bit.ly/ruqyahindex) সবই আছে। তবুও যদি আমাদের পরামর্শ চান তাহলে গ্রুপে ( facebook.com/groups/ruqyahbd ) তে পোস্ট করেন। একটা পয়সাও আমাদের দিতে হবে না। শুধু একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।
এরপরও যারা "বিচার মানি তালগাছ আমার" টাইপ তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দু'আ। আল্লাহ যেন তাদের হেদায়াত দান করেন।
কবিরাজ/হুজুরদের সম্পর্কে আরও কিছু লেখা রুকইয়াহ ইন্ডেক্সে পাবেন। আগ্রহ থাকলে পড়ে দেখতে পারেন। ইন্ডেক্সের লিংকতো আগেই দিয়েছি। যারা জানেন না রুকইয়াহ কি তারাও ইন্ডেক্সে যান।