Monday, July 5, 2021

বিয়ে কেনো করবেন, কখন করবেন? - when to marry, whom to marry, why to marry?

 May be an image of text that says 'বিয়ে নিয়ে কিছু কথা [বিয়ে কেন করবেন? কখন করবেন?] বিয়ে: অর্ধেক দ্রীন'

 

বিয়ে কেনো করবেন, কখন করবেন?
.
ইদানিং নানা কারণে আমি পাবলিক থেকে আড়ালে থাকছি। তারপরও মাঝে মধ্যে ভাই বেরাদারদের সাথে দেখা হয়ে যায়। এমনি (নতুন পরিচিত) একজনের সাথে সাক্ষাত হল। অবশ্য আমি নিজেই তাকে হুট করে দাওয়াত দিয়েছিলাম।
খাওয়া দাওয়ার পর বলল, হুজুর, বিয়ের ব্যাপারে একটু পরামর্শ দেন।
- বলেন কী? এখনো বিয়ে করেননি?
- জি না। এখনো করা হয়নি।
- তা এখন কেনো বিয়ে করতে চাচ্ছেন?
- বিয়ে তো করতেই হবে। এই ফিতনার যুগে ঈমান বাঁচাতে বিয়ে না করে উপায় আছে?
- হুমম, এটাও ঠিক। আবার এমনও তো হতে পারে, আপনার ঈমান বাঁচানো বিয়ে ১০ জনের ঈমানকে সংকটে ফেলে দিল!
- এইটা আবার কী বলেন হুজুর, আমার বিয়ে ১০ জনের ঈমান নিয়ে টানাটানির কারণ হবে কেনো?
- দেখা গেলো আপনি বিয়ের পর বিবি, বাচ্চা, মা বাবা সহ অন্যান্যদের হক ঠিকমতো আদায় করলেন না, তখন সংসারে ঝগড়াঝাটি, কান্নাকাটি, পরস্পর দোষারোপ আর আপনার দীনদারী নিয়ে নানা কথা উঠবে। এতে এক সাথে অনেক মানুষের ঈমানের মধ্যে ফাটল দেখা দিতে পারে।
- তাহলে এখন আমি কী করব? বিয়ে করব না?
- কেনো করবেন না? অবশ্যই করবেন। তবে বুঝেশুনে। আবেগে নয়। নিজেকে প্রস্তুত করে। হুট করে নয়
- এই বিষয়েই একটু পরামর্শ দেন। 
 
𝌆 তাহলে শুনেন। বিয়ের আগে কমপক্ষে চারটা জিনিস মাথায় রাখবেন। 
 
১. কেনো বিয়ে করছি? :
 
শুধু শারীরিক চাহিদা বা সাময়িক আবেগ দমনে বিয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হলে একটু থামুন। 
 
লম্বা দাম্পত্যজীবনে শারিরীক চাহিদার স্থায়িত্ব খুব কম। সময়ের সাথে এই চাহিদা কমতে থাকে। সেক্ষেত্রে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও দায়িত্ববোধ ছাড়া সংসার টিকে না। তাই রাসুল সা. সামর্থ্য থাকলে বিয়ে করতে বলেছেন। না থাকলে রোজা রাখতে বলেছেন। 
 
তাই সামর্থ্য বিচার করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিন। এবং সেটা নূন্যতম হলেও চলবে। সেক্ষেত্রে পাত্রীও তেমন বুঝমান হতে হবে।
 
মনে রাখবেন, পিতার সামর্থ্য আপনার সামর্থ্য নয়।  
 
পিতার দায়িত্ব আপনাকে বিয়ে করানো, আপনার সংসার চালানো নয়। তিনি যদি আপনার সংসার চালানোর সামর্থ্য রাখেন, তবে তার উচিত নিজেই মাসনা করা।
 
 
২. কাকে বিয়ে করবেন? :
 
অনেকে দীন পালন শুরু করেই নিজের অবস্থার চেয়ে উঁচু পরিবারে বিয়ে করতে চায়। অনেকে আবার একেবারে আবেগী হয়ে অবস্থান থেকে অনেক নিচে নেমে যায়। আলেমরা উচ্চবিত্ত জেনারেল পরিবারে বিয়ে করে বসে। আবার অনেক জেনারেল ভাই দরিদ্র দীনদার পরিবারের মেয়ে বিয়ে করে।
 
এখানে বুঝার বিষয় হল, বিয়ে তো দু জনের। কিন্তু সম্পর্কটা দুটি পরিবার বা খান্দানের। তাই ইসলামের দেয়া কুফু তথা সমতা রক্ষা না করে অতি আবগের পরিচয় দিলে পস্তানোর সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। 
 
 
৩. বিয়ের আগে পরিবারে দায়িত্বশীল আচরণ করুন :
 
আপনার মা বাবা আপনাকে কেনো বিয়ে করাবে? আপনার মধ্যে কি সংসারের প্রতি দায়িত্ববোধ আছে? টাকা কামিয়ে পরিবারে দেয়া এক জিনিস আর দায়িত্ব নেয়া আরেক জিনিস।
 
সংসারের দায়িত্ব নিন। বাজার করুন। বিলগুলো দিন। কাকে ডাক্তার দেখাতে হবে, কার ঔষধ লাগবে, কার কী সমস্যা, এগুলোর খোঁজ রাখুন। 
 
আপনার মা বাবা ভালো মানুষ হলে আপনাকে শীঘ্রই বিয়ে করিয়ে দেবে।
 
 
৪. দ্বীনি পরিবেশ তৈরি করুন :
 
আপনি কি চান, আপনার স্ত্রী পর্দা করুক? আপনার বাসার সবাই তাকে পর্দা করতে সাহায্য করুক? আপনার স্ত্রী গুনাহমুক্ত থাকুক? 
 
তাহলে বিয়ের আগে আপনাকে আপনার পরিবারের মধ্যে এসব চর্চা করতে হবে। 
 
চাচী, মামী, ভাবী, খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোন, বিয়াইন ইত্যাদি গাইরে মাহরামের সাথে কঠোরভাবে পর্দা করতে হবে। পরিবারে কোনো গুনাহযুক্ত অনুষ্ঠান হলে তা জায়েজ উপায়ে করার জোড় চেষ্টা করতে হবে। না হলে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। এমনকি গুনাহযুক্ত অনুষ্ঠানের পাঠানো খাবারও এড়িয়ে যেতে হবে।
 
যদি তা করতে পারেন, তাহলে আপনার স্ত্রীর ব্যাপারে সবাই সতর্ক থাকবে।
 
আর না পারলে আপনি যখন স্ত্রীর পর্দা ইত্যাদির কথা বলবেন, তখন নানা টিপ্পনী শুনতে হবে। 
 
আর হ্যাঁ, একটা বিষয় সব সময় মাথায় রাখবেন। বিয়ের ব্যাপারে মোটেও ফ্যান্টাসিতে ভোগা যাবে না। এ ব্যাপারে পুরোদস্তুর বাস্তববাদী থাকতে হবে। 
 
সবশুনে ভাই আমার বিদায় নিয়ে চলে গেলো। আর যোগাযোগ নাই। দেখি, সুযোগ বুঝে আমিই খোঁজ নিব।
 
—লেখা : আহমাদ ইউসুফ শরীফ 
 
𝌆 দ্বীনি পাত্র—পাত্রী সহজে খুঁজে পেতে ভিজিট করুন : Al-Yaqeen Marriage Media, https://ordhekdeen.com তে।

 

সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র - The most powerful weapon

 May be an image of text that says '"সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র" সাওদা সিদ্দিকা নূর'

 

 

আমি বিভিন্ন সেমিনারে দ্বীনি বোনদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন দেখেছি। তার মধ্যে আমার কাছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন মনে হয়েছে একটু বয়স করে দ্বীনে ফেরা বোনদের প্রশ্নগুলো। সাধারণত ২৬-২৭ বছর বয়সে পড়াশোনা শেষ করে যেসব বোনেরা দ্বীনের বুঝ অর্জন করে, তাদের কমন প্রশ্ন থাকে, এই বয়সে তারা কোনো দ্বীনদার ছেলের জন্য অপেক্ষা করবে কিনা। তাদের এই প্রশ্নের উত্তরে সেমিনারের সকল স্পিকার একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলেছেন, নাহয় কিছু সময় চুপ থেকে বলেছেন, ‘এই প্রশ্নের তেমন কোনো উত্তর নেই। আপনারা দু’আ করতে থাকুন’। প্রথমত তাদের দ্বীনের বুঝ দেরিতে হয়েছে, তারপর আবার এই বয়সে কোনো দ্বীনদার ছেলের জন্য অপেক্ষা করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা ২৬-২৭ বছর বয়সী দ্বীনদার বোনদের জন্য নূন্যতম ২৭-৩৫ বছর বয়সের কোনো দ্বীনি জীবনসঙ্গী প্রয়োজন। যেসব দ্বীনি ভাইদের বয়স ২৭-২৮ বছর, তারা স্বাভাবিক ভাবেই ২২-২৫ বছর বয়সী কাউকে চাইবে। আর যাদের বয়স আরো বেশি, তারা অলরেডি বিয়ে করে ফেলেছে। তাই এমন একটা অবস্থায় এই বোনদের দ্বীনদার কারো জন্য অপেক্ষা করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সবাই দু’আ করতে বলে।
এবার আসি মূল পয়েন্টে...
আসলে দ্বীনি বোনদের এই প্রশ্নের জবাবে আমিও বলব দু’আ করতে। কারণ দু’আর থেকে শক্তিশালী কোনো অস্ত্র নেই। হয়ত আমার এই পোস্ট শুধুমাত্র তাদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য একটু সাহায্য করবে। আমি চাই আমার বোনেরা যেন কখনো হতাশ না হয়।
একটা উদাহরণ দেয়া যাক। হজরত ইব্রাহীম (আ.) কিন্তু ১০০ বছর বয়সে পিতা হয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী সারা (আ.) নিজেকে বন্ধ্যা বলতেন। তাঁরা বার্ধক্যের সর্বোচ্চ সীমায় গিয়ে সন্তান লাভ করেন। শুধু তাই নয়, আল্লাহ তাঁদের কাছে ফেরেশতা পাঠিয়ে তাঁদের অনাগত সন্তানের আগমনের সংবাদ দিয়েছিলেন। আরো বলেছিলেন, সেই সন্তান হবেন নবি। আবার সেই সন্তানের সন্তানও হবেন নবি।
এরপর আমি আমার নিজের জীবন থেকে একটা বাস্তব উদাহরণ দেই। মাত্র তিন-চারদিন আগে আমার হলের এক আপু মেসেজ দিয়ে জানাল আমার এক ক্লাসমেটের বিয়ে হয়ে গিয়েছে এবং সে যেমন জীবনসঙ্গী চেয়েছিল, ঠিক তেমন পেয়েছে। সুবাহানাল্লাহ। সে আমার থেকে পরে দ্বীনে ফিরেছিল। তারও দ্বীন পালনে প্রতিবন্ধকতা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই এত সহজে বিয়ে হয়ে গিয়েছে শুনে ভেতরে ভেতরে একটা ধাক্কা খাই আর সেই আপুকে বলি, ‘কিছু মানুষের সমস্যাগুলো আল্লাহ কত সহজে সমাধান করে দেন!’ আমার কথা শুনে আপু বলে, সেই মেয়েটা কখনো তাহাজ্জুদ বাদ দেয়নি। তখনই বুঝতে পারি, এত তাড়াতাড়ি মন মত জীবনসঙ্গী পাওয়ার কারণ।
জীবনের অন্তিম প্রহরে ইব্রাহিম (আ.)-এর সন্তান লাভের উছিলা আর আমার হলের সেই বান্ধবীর এত জলদি বিয়ে হওয়া, তার সকল সমস্যার সমাধান হওয়ার পেছনে একটাই কারণ। তা হচ্ছে, পৃথিবীর সবথেকে শক্তিশালী অস্ত্র দু’আ, যা সরাসরি আরশে গিয়ে পৌঁছায়। এগুলো কখনো বৃথা যায় না।
আল্লাহর কাছে অসাধ্য বলে কিছু নেই। পার্থিব অপার্থিব কোনো শক্তির সাথে আল্লাহর তুলনা চলে না। তিনি চাইলেই পারেন। তিনি শুধু বলেন ‘হও’। আর সাথে সাথে সেটা হয়ে যায়। শুধু যারা দেরিতে দ্বীনের বুঝ পেয়েছে তাদের জন্য নয়, দু’আ আমাদের জীবনের সকল সমস্যার সমাধান মুহূর্তেই করে দিতে পারে। শুধুমাত্র আমাদের ইখলাসের সহিত দু’আ করতে হবে।
.
.
.
|| সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র ||
-সাওদা সিদ্দিকা নূর