বিয়ে কেনো করবেন, কখন করবেন?
.
ইদানিং নানা কারণে আমি পাবলিক থেকে আড়ালে থাকছি। তারপরও মাঝে মধ্যে ভাই বেরাদারদের সাথে দেখা হয়ে যায়। এমনি (নতুন পরিচিত) একজনের সাথে সাক্ষাত হল। অবশ্য আমি নিজেই তাকে হুট করে দাওয়াত দিয়েছিলাম।
খাওয়া দাওয়ার পর বলল, হুজুর, বিয়ের ব্যাপারে একটু পরামর্শ দেন।
- বলেন কী? এখনো বিয়ে করেননি?
- জি না। এখনো করা হয়নি।
- তা এখন কেনো বিয়ে করতে চাচ্ছেন?
- বিয়ে তো করতেই হবে। এই ফিতনার যুগে ঈমান বাঁচাতে বিয়ে না করে উপায় আছে?
- হুমম, এটাও ঠিক। আবার এমনও তো হতে পারে, আপনার ঈমান বাঁচানো বিয়ে ১০ জনের ঈমানকে সংকটে ফেলে দিল!
- এইটা আবার কী বলেন হুজুর, আমার বিয়ে ১০ জনের ঈমান নিয়ে টানাটানির কারণ হবে কেনো?
- দেখা গেলো আপনি বিয়ের পর বিবি, বাচ্চা, মা বাবা সহ অন্যান্যদের হক ঠিকমতো আদায় করলেন না, তখন সংসারে ঝগড়াঝাটি, কান্নাকাটি, পরস্পর দোষারোপ আর আপনার দীনদারী নিয়ে নানা কথা উঠবে। এতে এক সাথে অনেক মানুষের ঈমানের মধ্যে ফাটল দেখা দিতে পারে।
- তাহলে এখন আমি কী করব? বিয়ে করব না?
- কেনো করবেন না? অবশ্যই করবেন। তবে বুঝেশুনে। আবেগে নয়। নিজেকে প্রস্তুত করে। হুট করে নয়।
- এই বিষয়েই একটু পরামর্শ দেন।
𝌆 তাহলে শুনেন। বিয়ের আগে কমপক্ষে চারটা জিনিস মাথায় রাখবেন।
১. কেনো বিয়ে করছি? :
শুধু শারীরিক চাহিদা বা সাময়িক আবেগ দমনে বিয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হলে একটু থামুন।
লম্বা দাম্পত্যজীবনে শারিরীক চাহিদার স্থায়িত্ব খুব কম। সময়ের সাথে এই চাহিদা কমতে থাকে। সেক্ষেত্রে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও দায়িত্ববোধ ছাড়া সংসার টিকে না। তাই রাসুল সা. সামর্থ্য থাকলে বিয়ে করতে বলেছেন। না থাকলে রোজা রাখতে বলেছেন।
তাই সামর্থ্য বিচার করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিন। এবং সেটা নূন্যতম হলেও চলবে। সেক্ষেত্রে পাত্রীও তেমন বুঝমান হতে হবে।
মনে রাখবেন, পিতার সামর্থ্য আপনার সামর্থ্য নয়।
পিতার দায়িত্ব আপনাকে বিয়ে করানো, আপনার সংসার চালানো নয়। তিনি যদি আপনার সংসার চালানোর সামর্থ্য রাখেন, তবে তার উচিত নিজেই মাসনা করা।
২. কাকে বিয়ে করবেন? :
অনেকে দীন পালন শুরু করেই নিজের অবস্থার চেয়ে উঁচু পরিবারে বিয়ে করতে চায়। অনেকে আবার একেবারে আবেগী হয়ে অবস্থান থেকে অনেক নিচে নেমে যায়। আলেমরা উচ্চবিত্ত জেনারেল পরিবারে বিয়ে করে বসে। আবার অনেক জেনারেল ভাই দরিদ্র দীনদার পরিবারের মেয়ে বিয়ে করে।
এখানে বুঝার বিষয় হল, বিয়ে তো দু জনের। কিন্তু সম্পর্কটা দুটি পরিবার বা খান্দানের। তাই ইসলামের দেয়া কুফু তথা সমতা রক্ষা না করে অতি আবগের পরিচয় দিলে পস্তানোর সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
৩. বিয়ের আগে পরিবারে দায়িত্বশীল আচরণ করুন :
আপনার মা বাবা আপনাকে কেনো বিয়ে করাবে? আপনার মধ্যে কি সংসারের প্রতি দায়িত্ববোধ আছে? টাকা কামিয়ে পরিবারে দেয়া এক জিনিস আর দায়িত্ব নেয়া আরেক জিনিস।
সংসারের দায়িত্ব নিন। বাজার করুন। বিলগুলো দিন। কাকে ডাক্তার দেখাতে হবে, কার ঔষধ লাগবে, কার কী সমস্যা, এগুলোর খোঁজ রাখুন।
আপনার মা বাবা ভালো মানুষ হলে আপনাকে শীঘ্রই বিয়ে করিয়ে দেবে।
৪. দ্বীনি পরিবেশ তৈরি করুন :
আপনি কি চান, আপনার স্ত্রী পর্দা করুক? আপনার বাসার সবাই তাকে পর্দা করতে সাহায্য করুক? আপনার স্ত্রী গুনাহমুক্ত থাকুক?
তাহলে বিয়ের আগে আপনাকে আপনার পরিবারের মধ্যে এসব চর্চা করতে হবে।
চাচী, মামী, ভাবী, খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোন, বিয়াইন ইত্যাদি গাইরে মাহরামের সাথে কঠোরভাবে পর্দা করতে হবে। পরিবারে কোনো গুনাহযুক্ত অনুষ্ঠান হলে তা জায়েজ উপায়ে করার জোড় চেষ্টা করতে হবে। না হলে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। এমনকি গুনাহযুক্ত অনুষ্ঠানের পাঠানো খাবারও এড়িয়ে যেতে হবে।
যদি তা করতে পারেন, তাহলে আপনার স্ত্রীর ব্যাপারে সবাই সতর্ক থাকবে।
আর না পারলে আপনি যখন স্ত্রীর পর্দা ইত্যাদির কথা বলবেন, তখন নানা টিপ্পনী শুনতে হবে।
আর হ্যাঁ, একটা বিষয় সব সময় মাথায় রাখবেন। বিয়ের ব্যাপারে মোটেও ফ্যান্টাসিতে ভোগা যাবে না। এ ব্যাপারে পুরোদস্তুর বাস্তববাদী থাকতে হবে।
সবশুনে ভাই আমার বিদায় নিয়ে চলে গেলো। আর যোগাযোগ নাই। দেখি, সুযোগ বুঝে আমিই খোঁজ নিব।
—লেখা : আহমাদ ইউসুফ শরীফ
𝌆 দ্বীনি পাত্র—পাত্রী সহজে খুঁজে পেতে ভিজিট করুন : Al-Yaqeen Marriage Media, https://ordhekdeen.com তে।