#২২
আমি আগের মত প্রতিটা ইমেইলের লম্বা রিপ্লাই দেয়ার সময় পাচ্ছি না, তবে ইমেইল দেখেছি আর শর্টকাটে হলেও রিপ্লাই দিয়ে দিব পরের সপ্তাহে। একটা প্রশ্ন রিপিটেডলি আসে সেটা হচ্ছে কিভাবে বেশী প্রোডাক্টিভ হওয়া যায়, কাজ করার মোটিভেশন আনা যায় অথবা Procrastination দূর করা যায়।
আগেই বলে নেই আমি কোন বোদ্ধা বা স্কলার না। কোন বইতে বা পোডকাস্টে দেখেছি এমন কিছু টিপস জানি, দুইটা টেকনিক বলছি যেগুলো আমার ক্ষেত্রে ভালো কাজ করেছে
১) ৫ সেকেন্ড রুল
কোন কাজ করার সময় হলে ৫ সেকেন্ডের মধ্যেই সেটা করা শুরু করে দিতে হবে। ১৫ টা পুশাপ দিবেন? ৫-৪-৩-২-১ বলে শুরু করে দিন। বই পড়ার প্ল্যান ছিল? দ্রুত বইটা খুলে প্রথম চ্যাপ্টার থেকে পড়া শুরু করুন। আজান দিয়েছে? এখনই অজু করতে দৌড় দিন। কোন সেকেন্ড থট ব্রেইনকে দিবেন না, নাহলে ব্রেইন পালাতে চাইবে [1]।
ব্রেইন এমন ভাবেই তৈরি যে এটা আপনাকে অজানা বিপদ থেকে সেইভ করতে চায়, আপনি যখন নতুন কোন হ্যাবিট তৈরি করতে চান বা কনফোর্ট জোনের বাইরে বেরুতে চান তখন মস্তিষ্ক নানা রকম দুশ্চিন্তা আর টক্সিক সেলফ টক তৈরি করে আপনাকে ওয়ার্নিং দিবে। এজন্যে চেঞ্জ আনাটা এত কঠিন।
৫ সেকেন্ডের বেশী দেরী করা মানে ব্রেইনকে অদরকারি ওভার এনালাইজ করার সুযোগ দেয়া। ভয়, কনফিউশন আর হেইজিটেশন মাথায় ভর করতে দেয়া। ধরুন আপনি ঠিক করেছেন বিকালে পার্কে দৌড়াতে যাবেন, আপনার ব্রেইন প্রথমে সায় দিবে। তারপর আপনি একটু অপেক্ষা করছেন আর ততক্ষণে মনে হলো আপনার বাইরে যাবার গেঞ্জিটার রঙ আসলে ক্ষ্যাত বা আপনার একটা রানিং শু কেনার পরেই দৌড়ানো শুরু করা উচিত। এভাবে নানারকম চিন্তার ফিকিরে পরে আপনি ফেসবুক স্ক্রল শুরু করে দিলেন, আপনার এই সপ্তাহে আর দৌড়ানোই হলো না।
এডাল্ট হিসেবে আপনি জানেন কোন সময়ে আপনার কি করা উচিত, সময়ের আগে কাজটা নিয়ে অতশত ভাববেন না। সময় হবে, এলার্ম বাজবে তখন নিজেকে একটা কাউন্ট ডাউনদিন, 5-4-3-2-1 তারপর রকেটের মত নিজেকে কাজের দিকে লঞ্চ করুন- নো সেকেন্ড থট! এই কাউন্ট ডাউনটা গুরুত্বপূর্ণ, এটা প্রিফ্রনটাল কর্টেক্সকে জাগ্রত করবে।
একটা সময়ে আমি এলার্ম দেয়ার পরেও ঘুম থেকে উঠতে পারতাম না। এই মেথডে আমি এক দিনের মধ্যেই সকালে উঠেতে পেরেছি। এলার্ম শুনলেই কোন চিন্তা না করে 5-4-3-2-1 বলে উঠে বিছানা থেকে উঠে বসতাম। এসম্পর্কে আরো জানতে মেল রবিন্সের “The 5 second rule” বইটা পড়তে পারেন।
২) রিভার্স সাইকোলজি
এই পদ্ধতিটা শুধু তাদের জন্য যারা কোন ভাবেই প্রোক্রাস্টিনেশন থেকে বের হতে পারছেন না। প্রথমে মনে রাখুন যে আপনার ব্রেইন সার্ভাইবলের জন্য অসাধারণ একটা যন্ত্র, হঠাৎ করে সামনে একটা জংলি ভাল্লুক পড়লে আপনি হয়তো ট্রেইনিং ছাড়াই হাই জাম্প দিতে পারবেন [2]। এটা মস্তিষ্কের কামাল, মস্তিষ্ক মাসেলকে ট্রিগার করে। প্রথমেই বলেছি ব্রেইন চায় আপনি বেঁচে থাকুন, তাই কমফোর্ট জোন বা ডেইলি রুটিনের বাইরে অজানা, অচেনা কোন অভ্যাস ফর্ম করতে প্রচুর রেজিস্ট করে।
দেখুন আপনি আপনার লক্ষ্য নিয়ে সিরিয়াস এতে সন্দেহ নাই। কিন্তু আপনার দুষ্ট ব্রেইন আপনাকে প্রোগ্রাম করে রেখেছে “অনেক সময় আছে, পরে কাজ করা যাবে”, এজন্যেই আপনি হাই তুলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আবার ডেডলাইনের একেবারে আগের দিন আপনি সুপারম্যানের মত কাজ করছেন। এই অভ্যাস থেকে বাঁচতে ব্রেইনকে নেগেটিভ প্রোগ্রামিং করতে হবে।
আপনি যদি একজন ক্রোনিক প্রোক্রাস্টিনেটর হয়ে থাকেন আর আপনার কাছে সময় থাকে তাহলে, “ডেইলি দৈনিক ৬ ঘন্টা পড়ব” ভাবার কোন দরকার নাই। ভাবুন “জাস্ট ১ ঘন্টা পড়ব, এর বাইরে এক মূহুর্তও না”। এক ঘন্টা পড়ার পর যতই পড়ার ইচ্ছা করুক না কেন পড়বেন না। এতে আপনার ব্রেইন ভয় পাবে, পড়ার আগ্রহ বাড়বে।
কারণ ব্রেইন তখন রিভার্স ক্যালকুলেশন করবে, আগে নিশ্চিত ভাবে ভাবত যে ৬ ঘন্টা পড়ে সব শেষ হয়ে যাবে। এখন চিন্তা করবে ১ ঘন্টা পড়ে তো সিলেবাস শেষ হবে না। এক সপ্তাহ পরে পড়ার সময় আরো এক ঘন্টা বাড়ান, এভাবে দেখবেন আপনি পড়ার টেনশনে একসময় আগের থেকে বেশীই পড়ছেন।
এই টেকনিক আমি ফলো করেছিলাম একাডেমিক রাইটিং লেখার সময়টাতে। এক সপ্তাহের মধ্যে আমার প্রোডাক্টিভিটি বুস্ট করেছিল। এই পদ্ধতিতে চিট করবেন না, বেশী পড়তে ইচ্ছা হলেই পড়তে বসবেন না। কয়েকদিন অপেক্ষা করুন তারপর পড়ার সময় বাড়ান। ব্রেইনকে রিয়াক্ট করার সুযোগটা দিন।
একটা এক্সট্রা টিপ হলো- কাজ করতে মোটিভেশন না পেলেও কাজটা শুরু করে দেয়া উচিত। কারণ কাজ করতে করতে মোটিভেশন একসময় চলে আসবে। কাজটা শুরু করে কিছুটা এগিয়ে গেলে যে ডোপামিন রিলিজ হবে সেটা থেকেই কাজটা শেষ করার মোটিভেশন পাওয়া যাবে [3]।
1. The 5 Second Rule - Mel Robbins
2. https://www.scientificamerican.com/article/extreme-fear-superhuman/
3. The Subtle Art of Not Giving a F*ck - Mark Manson
- Omar Bin Mahtab
No comments:
Post a Comment