চতুরঙ্গ-(৮ম পর্ব)
লেখক:নিথর শ্রাবণ শিহাব
[ বিঃদ্রঃ বাকী পর্বের লিঙ্ক এই পর্বের শেষে দেওয়া আছে ]
নার্গিস আশে পাশেই ছিলেন। ডোর বেল বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে দিলেন। আমাকে দেখেই বলে উঠলেন, “ ওফ! শান্তি পেলাম। আমি তো ভেবেছিলাম তোমাকে আর সুস্থ দেখবো কিনা! যে ভাবে মাথা ফেটে রক্ত দিয়ে ফ্লোর ভাসিয়ে দিয়েছিলে!” আমার হাত ধরে ভেতরে ঢোকালেন, “ আছো কেমন এখন?” শান্ত স্বভাবের এই মহিলাটির আন্তরিকতাটুকু খুব ভাল লাগল হঠাৎ।
আমি ওড়নার ওপর দিয়ে মাথার পেছন দিকে হাত বুলালাম নিজের অজান্তেই। চুলের আড়ালে ব্যান্ডেজটা ঢাকা পড়ে আছে। “এখন একটু ভাল আছি...... স্যারের সাথে কিছু জরুরী কথা ছিল- উনি কি জেগে আছেন?”
“ মনে হয়। ওনার রুমের লাইট জ্বলতে দেখলাম একটু আগেও। স্যার তোমাকে নিয়ে কি যে দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন! পুরো দিশেহারা!” সিঁড়ির দিকেএগুতে লাগলাম দুজনে।
“ তাই?” ভাবলেশহীন কন্ঠে বললাম।
“ হ্যা। বারবার বলছিলেন- ‘মেয়েটার কিছু হয়ে গেলে নিজেকে সারা জীবনেও হ্মমা করতে পারবো না আমি’। নিঃসন্তান মানুষ তো, তোমাকে নিজের মেয়ের মত ভাবে।” সিঁড়িপর্যন্ত এসে থমকে দাঁড়ালাম আমি। হল রুমের দরজাটা খোলা। তার মাঝ দিয়ে স্পষ্ট দেখলাম পুরো হল রুম বহাল তবিয়তে রয়েছে! একটা জিনিসও এদিক সেদিক নেই! কোনো কাঁচের জিনিসও মিসিং নেই। অথচ সে রাতে তো কেয়ামত হয়ে গিয়েছিল! আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম দীর্ঘ একটা মুহূর্ত। এর মাঝেই আবার কারেন্ট চলে গেল।বাহিরে ভীষণ শব্দে বাজ পড়ছে।দূর্গের প্রতিটা ইট কাঁপছে থর থর করে। কাঁচের সব জিনিস পত্র ঝন ঝন করে উঠল।
অন্ধকারের মধ্যে নার্গিস বিরক্ত গলায় বললেন, “ দেখো দেখি কান্ড! সময় অসময় নাই কারেন্ট চলে যায়। তুমি এখানে দাঁড়াও। আমি মোম জ্বালিয়ে আনি। জেনারেটরটা কয় দিন হল ঝামেলা করছে খুব। সোলেমান আজ সকালেই ঠিক করতে বসেছিল। কি জানি একটা পার্টস নতুন কিনে আনতে হবে। আজকে কেনা হয়নি। মোমবাতিই ভরসা আজকে।” অন্ধকারের মাঝে হাতড়ে হাতড়ে চলে গেলেন তিনি। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম সিঁড়ির কাছে। অন্ধকারের মাঝেও কাঁচের জানালা দিয়ে বাহির থেকে আসা ম্লান আলোতে আবছা ভাবে ঘরের জিনিস পত্র গুলো দেখা যায়। আমি সিঁড়ির রেলিং ধরে গলা বাড়িয়ে দো’তলার ঘরের দিকে তাকালাম। অন্ধকার। ডাঃ এমরান কি করছেন কে জানে। নার্গিসও আসছে না মোমবাতি নিয়ে। অস্বস্তি লাগছে খুব। বাহিরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কাঁচের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ চমকানোর সাদা আলো হঠাৎ হঠাৎ এসে দূর্গের ভেতরটাকে রহস্যময় করে তুলেছে।হঠাৎ একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম। আমি ছাড়া মিউজিয়ামের,অর্থাৎ হল রুমের দরজা কেউ খোলে না। তালার চাবি আমার কাছেই থাকে সব সময়। অন্য আরেক সেট চাবি থাকে ডাঃ এমরানের কাছে। আমি না থাকলে খুব একটা আসেন না তিনি এখানে। কিন্তু অন্য কারো এখানে আসার কথা না। তাহলে হল রুমের দরজা খোলা কেন? নাকি ডাঃ এমরান এসেছেন এখানে? কথাটা মাথায় আসতেই কৌতুহল হল। আবছা আলো ছায়ার মাঝ দিয়ে ত্রস্ত পদহ্মেপে এগিয়ে গেলাম হল রুমের দরজাটার কাছে। নিজের অজান্তেই চোখ চলে গেল চার তলা ওপরের ছাদের দিকে। বজ্রপাতের সাদা আলোতে দেখা যাচ্ছে বিশাল দাবার বোর্ডে স্থির হয়ে ঝুলে আছে মূর্তি গুলো, কোনো স্পন্দন নেই। কেবল রহস্যময় একটা ভাব ওদের মাঝে।
অন্ধকারে ডুবে থাকা মিউজিয়ামটার ভেতর ঢুকতেই হাটুতে বাড়ি লাগল একটা ছোট কাঁচের মূর্তিতে। সতর্ক হয়ে গেলাম। পায়ে লেগে কোনো কিছু ফেলে দিয়ে ডাঃ এমরানের মিউজিয়ামেরহ্মতি করতে চাই না।
কেমন যেন একটা চাপা অস্বস্তি লাগছিল। ভূতুড়ে কিম্বা অবাস্তব কিছু একটা দেখবো- এরকম একটা ভয় করছিল ভেতরে ভেতরে। কাঁপা গলায় ডাকলাম, “ স্যার? ডাঃ এমরান? আপনি এখানে আছেন?”
কথা গুলো প্রতিধ্বনিত হতে লাগল বিশাল হল রুমের দেয়ালে।
প্রায় সাথে সাথেই হল রুমের অন্য প্রান্ত থেকে ডাঃ এমরানের গলা ভেসে এল, “ কে? নোভেরা? এই অসময়ে তুমি এখানে?” গলা শুনেই মনে হল ভীষণ খুশি হয়েছেন আমাকে এখানে পেয়ে। আমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। অস্বস্তি জড়ানো গলায় বললাম , “ আপনি কোথায় স্যার? এই অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না।” পায়ের ভার বদল করলাম।
হল রুমের অন্য মাথা থেকে টর্চেরর আলো নড়া চড়া করতে দেখা গেল। “ দাঁড়াও, আসছি। লাইব্রেরীতে এসেছিলাম মাত্র। কারেন্ট যাওয়ার আর সময় পেল না। আর জেনারেটরটাও কিনা আজকেই নষ্ট হয়েছে।”
দেখলাম মাঝারি একটা ব্যাটারিওয়ালা টর্চ হাতে হইল চেয়ারে করে নিঃশব্দে কার্পেটের ওপর দিয়ে আমার কাছে এগিয়ে এলেন ডাঃ এমরান। এ ক’দিনে আরো শুকিয়ে গেছেন। চোখ ঢুকে গেছে কোটরে। চশমার ওপাশের চোখ দুটো কেবল জ্বল জ্বল করছে। মুখে হাসি। খুব কম সময়ই এই হাসিটা দেখেছি আমি।“ এখন কেমন আছো?” টর্চটা একটা বক্সের ওপর শুইয়ে রাখলেন যাতে সব দিকে আলো যায়।
“ মোটামুটি ভাল। আপনি এত শুঁকিয়ে গেছেন! খাওয়া দাওয়া করেন না?” একটা টুল টেনে বসে পড়লাম তাঁর সামনে।
“ আমার কথা বাদ দাও। আছিই দু-চার দিন। তার আবার খাওয়া দাওয়া। তোমার কথা বলো। আজকেই ডিসচার্জড হলে? ওষুধ পত্র খাচ্ছো ঠিকমত?”
“ হ্যা।” কথার খেঁই হারিয়ে ফেললাম। এত সহজ সরল মানুষটার কারণে আমার জীবনে যে বিরাট একটা আতংকের সৃষ্টি হয়েছে- কেমন করে বলি?
“ কি ব্যাপার? তোমাকে খুব টেন্সড লাগছে। কোনো সমস্যা?”ভ্রুঁ জোড়া কাছাকাছি হল তাঁর। আমার ওপর স্থির হল দৃষ্টি।
অস্বস্তিতে নড়ে চড়ে বসলাম। বার কয়েক খুঁক খুঁক করে কেঁশে জড়তা কাটিয়ে বলা শুরু করলাম, “ স্যার, আমি বোধ হয় মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরেছি।”
“ কি রকম?” তীহ্ম হল তাঁর চোখের দৃষ্টি।
“ আমি মে বি আপনাকে নিয়ে হ্যালুসিন্যাসনে ভূগছি। আমি প্রায়ই আপনাকে দেখছি আপনি ছাদের দাবা বোর্ডে উল্টো ভাবে ঝুলে হাটা চলা করছেন, নামায পড়ছেন। এমনকি হাসপাতালেও আপনাকে আমার কেবিনে উল্টো ভাবে ছাদ থেকে ঝুলে থাকতে দেখেছি। আমি...... আমি খুব কনফিউজড স্যার...... “ বিব্রত গলায় বললাম।
ডাঃ এমরান হাসতে লাগলেন আমারকথা শুনে, “ সে দিন জ্বরের ঘোরে তোমাকে কি না কি বলেছি আবোল তাবোল- আর ওমনি তুমি ভয় পেয়ে গেলে? বুঝ্রছি। আমার কথাতে হিপনটাইজড হয়ে গেছো। তাই এসব উল্টো পাল্টা জিনিস দেখছো!ডাক্তার হয়ে অবাস্তব জিনিসকে বস্তব ভাবো কি করে?”
আমি অপ্রস্তুত ভাবে বসে রইলাম, কিছু বললাম না।
## চলবে ##
লেখক:নিথর শ্রাবণ শিহাব
[ বিঃদ্রঃ বাকী পর্বের লিঙ্ক এই পর্বের শেষে দেওয়া আছে ]
নার্গিস আশে পাশেই ছিলেন। ডোর বেল বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে দিলেন। আমাকে দেখেই বলে উঠলেন, “ ওফ! শান্তি পেলাম। আমি তো ভেবেছিলাম তোমাকে আর সুস্থ দেখবো কিনা! যে ভাবে মাথা ফেটে রক্ত দিয়ে ফ্লোর ভাসিয়ে দিয়েছিলে!” আমার হাত ধরে ভেতরে ঢোকালেন, “ আছো কেমন এখন?” শান্ত স্বভাবের এই মহিলাটির আন্তরিকতাটুকু খুব ভাল লাগল হঠাৎ।
আমি ওড়নার ওপর দিয়ে মাথার পেছন দিকে হাত বুলালাম নিজের অজান্তেই। চুলের আড়ালে ব্যান্ডেজটা ঢাকা পড়ে আছে। “এখন একটু ভাল আছি...... স্যারের সাথে কিছু জরুরী কথা ছিল- উনি কি জেগে আছেন?”
“ মনে হয়। ওনার রুমের লাইট জ্বলতে দেখলাম একটু আগেও। স্যার তোমাকে নিয়ে কি যে দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন! পুরো দিশেহারা!” সিঁড়ির দিকেএগুতে লাগলাম দুজনে।
“ তাই?” ভাবলেশহীন কন্ঠে বললাম।
“ হ্যা। বারবার বলছিলেন- ‘মেয়েটার কিছু হয়ে গেলে নিজেকে সারা জীবনেও হ্মমা করতে পারবো না আমি’। নিঃসন্তান মানুষ তো, তোমাকে নিজের মেয়ের মত ভাবে।” সিঁড়িপর্যন্ত এসে থমকে দাঁড়ালাম আমি। হল রুমের দরজাটা খোলা। তার মাঝ দিয়ে স্পষ্ট দেখলাম পুরো হল রুম বহাল তবিয়তে রয়েছে! একটা জিনিসও এদিক সেদিক নেই! কোনো কাঁচের জিনিসও মিসিং নেই। অথচ সে রাতে তো কেয়ামত হয়ে গিয়েছিল! আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলাম দীর্ঘ একটা মুহূর্ত। এর মাঝেই আবার কারেন্ট চলে গেল।বাহিরে ভীষণ শব্দে বাজ পড়ছে।দূর্গের প্রতিটা ইট কাঁপছে থর থর করে। কাঁচের সব জিনিস পত্র ঝন ঝন করে উঠল।
অন্ধকারের মধ্যে নার্গিস বিরক্ত গলায় বললেন, “ দেখো দেখি কান্ড! সময় অসময় নাই কারেন্ট চলে যায়। তুমি এখানে দাঁড়াও। আমি মোম জ্বালিয়ে আনি। জেনারেটরটা কয় দিন হল ঝামেলা করছে খুব। সোলেমান আজ সকালেই ঠিক করতে বসেছিল। কি জানি একটা পার্টস নতুন কিনে আনতে হবে। আজকে কেনা হয়নি। মোমবাতিই ভরসা আজকে।” অন্ধকারের মাঝে হাতড়ে হাতড়ে চলে গেলেন তিনি। আমি দাঁড়িয়ে রইলাম সিঁড়ির কাছে। অন্ধকারের মাঝেও কাঁচের জানালা দিয়ে বাহির থেকে আসা ম্লান আলোতে আবছা ভাবে ঘরের জিনিস পত্র গুলো দেখা যায়। আমি সিঁড়ির রেলিং ধরে গলা বাড়িয়ে দো’তলার ঘরের দিকে তাকালাম। অন্ধকার। ডাঃ এমরান কি করছেন কে জানে। নার্গিসও আসছে না মোমবাতি নিয়ে। অস্বস্তি লাগছে খুব। বাহিরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কাঁচের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ চমকানোর সাদা আলো হঠাৎ হঠাৎ এসে দূর্গের ভেতরটাকে রহস্যময় করে তুলেছে।হঠাৎ একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম। আমি ছাড়া মিউজিয়ামের,অর্থাৎ হল রুমের দরজা কেউ খোলে না। তালার চাবি আমার কাছেই থাকে সব সময়। অন্য আরেক সেট চাবি থাকে ডাঃ এমরানের কাছে। আমি না থাকলে খুব একটা আসেন না তিনি এখানে। কিন্তু অন্য কারো এখানে আসার কথা না। তাহলে হল রুমের দরজা খোলা কেন? নাকি ডাঃ এমরান এসেছেন এখানে? কথাটা মাথায় আসতেই কৌতুহল হল। আবছা আলো ছায়ার মাঝ দিয়ে ত্রস্ত পদহ্মেপে এগিয়ে গেলাম হল রুমের দরজাটার কাছে। নিজের অজান্তেই চোখ চলে গেল চার তলা ওপরের ছাদের দিকে। বজ্রপাতের সাদা আলোতে দেখা যাচ্ছে বিশাল দাবার বোর্ডে স্থির হয়ে ঝুলে আছে মূর্তি গুলো, কোনো স্পন্দন নেই। কেবল রহস্যময় একটা ভাব ওদের মাঝে।
অন্ধকারে ডুবে থাকা মিউজিয়ামটার ভেতর ঢুকতেই হাটুতে বাড়ি লাগল একটা ছোট কাঁচের মূর্তিতে। সতর্ক হয়ে গেলাম। পায়ে লেগে কোনো কিছু ফেলে দিয়ে ডাঃ এমরানের মিউজিয়ামেরহ্মতি করতে চাই না।
কেমন যেন একটা চাপা অস্বস্তি লাগছিল। ভূতুড়ে কিম্বা অবাস্তব কিছু একটা দেখবো- এরকম একটা ভয় করছিল ভেতরে ভেতরে। কাঁপা গলায় ডাকলাম, “ স্যার? ডাঃ এমরান? আপনি এখানে আছেন?”
কথা গুলো প্রতিধ্বনিত হতে লাগল বিশাল হল রুমের দেয়ালে।
প্রায় সাথে সাথেই হল রুমের অন্য প্রান্ত থেকে ডাঃ এমরানের গলা ভেসে এল, “ কে? নোভেরা? এই অসময়ে তুমি এখানে?” গলা শুনেই মনে হল ভীষণ খুশি হয়েছেন আমাকে এখানে পেয়ে। আমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। অস্বস্তি জড়ানো গলায় বললাম , “ আপনি কোথায় স্যার? এই অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না।” পায়ের ভার বদল করলাম।
হল রুমের অন্য মাথা থেকে টর্চেরর আলো নড়া চড়া করতে দেখা গেল। “ দাঁড়াও, আসছি। লাইব্রেরীতে এসেছিলাম মাত্র। কারেন্ট যাওয়ার আর সময় পেল না। আর জেনারেটরটাও কিনা আজকেই নষ্ট হয়েছে।”
দেখলাম মাঝারি একটা ব্যাটারিওয়ালা টর্চ হাতে হইল চেয়ারে করে নিঃশব্দে কার্পেটের ওপর দিয়ে আমার কাছে এগিয়ে এলেন ডাঃ এমরান। এ ক’দিনে আরো শুকিয়ে গেছেন। চোখ ঢুকে গেছে কোটরে। চশমার ওপাশের চোখ দুটো কেবল জ্বল জ্বল করছে। মুখে হাসি। খুব কম সময়ই এই হাসিটা দেখেছি আমি।“ এখন কেমন আছো?” টর্চটা একটা বক্সের ওপর শুইয়ে রাখলেন যাতে সব দিকে আলো যায়।
“ মোটামুটি ভাল। আপনি এত শুঁকিয়ে গেছেন! খাওয়া দাওয়া করেন না?” একটা টুল টেনে বসে পড়লাম তাঁর সামনে।
“ আমার কথা বাদ দাও। আছিই দু-চার দিন। তার আবার খাওয়া দাওয়া। তোমার কথা বলো। আজকেই ডিসচার্জড হলে? ওষুধ পত্র খাচ্ছো ঠিকমত?”
“ হ্যা।” কথার খেঁই হারিয়ে ফেললাম। এত সহজ সরল মানুষটার কারণে আমার জীবনে যে বিরাট একটা আতংকের সৃষ্টি হয়েছে- কেমন করে বলি?
“ কি ব্যাপার? তোমাকে খুব টেন্সড লাগছে। কোনো সমস্যা?”ভ্রুঁ জোড়া কাছাকাছি হল তাঁর। আমার ওপর স্থির হল দৃষ্টি।
অস্বস্তিতে নড়ে চড়ে বসলাম। বার কয়েক খুঁক খুঁক করে কেঁশে জড়তা কাটিয়ে বলা শুরু করলাম, “ স্যার, আমি বোধ হয় মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরেছি।”
“ কি রকম?” তীহ্ম হল তাঁর চোখের দৃষ্টি।
“ আমি মে বি আপনাকে নিয়ে হ্যালুসিন্যাসনে ভূগছি। আমি প্রায়ই আপনাকে দেখছি আপনি ছাদের দাবা বোর্ডে উল্টো ভাবে ঝুলে হাটা চলা করছেন, নামায পড়ছেন। এমনকি হাসপাতালেও আপনাকে আমার কেবিনে উল্টো ভাবে ছাদ থেকে ঝুলে থাকতে দেখেছি। আমি...... আমি খুব কনফিউজড স্যার...... “ বিব্রত গলায় বললাম।
ডাঃ এমরান হাসতে লাগলেন আমারকথা শুনে, “ সে দিন জ্বরের ঘোরে তোমাকে কি না কি বলেছি আবোল তাবোল- আর ওমনি তুমি ভয় পেয়ে গেলে? বুঝ্রছি। আমার কথাতে হিপনটাইজড হয়ে গেছো। তাই এসব উল্টো পাল্টা জিনিস দেখছো!ডাক্তার হয়ে অবাস্তব জিনিসকে বস্তব ভাবো কি করে?”
আমি অপ্রস্তুত ভাবে বসে রইলাম, কিছু বললাম না।
## চলবে ##