Wednesday, April 28, 2021

কিয়ামুল লাইল:

 May be an image of text that says 'পর্ব:২৩ আমার ঘুম আমার ইবাদাত আহমাদ সাব্বির 188112'

 

২২৷ কিয়ামুল লাইল:
ঘুমুতে যাবার একটি আদবের কথা বলেছিলাম— বিছানায় যাবার সময় শেষ রাতে কিয়ামুল লাইলের নিয়ত করবার কথা৷ অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামাজ পড়বার বাসনা নিয়ে ঘুমুতে যাওয়া ঘুমানোর একটি আদব এবং নবিজীর সুন্নাহ৷ তিনি কিয়ামুল লাইলের নিয়ত করে ঘুমুতে যেতেন৷ তার অনুসরণে সাহাবায়ে কেরাম এবং যুগে যুগে আল্লাহপ্রেমি সকল মনিষা এমন নিয়ত করেই তবে বিছানায় মাথা রেখেছেন৷
আজ বলবো সেই নিয়ত বা ইচ্ছাটাকে বাস্তবায়নের কথা৷ শেষ রাতে ঘুম থেকে জেগে কিয়ামুল লাইল আদায় করা ভিন্ন একটি আদব৷ কেবল আদবই কেন! কিয়ামুল লাইলের যে অপার প্রাপ্তি তার কথা তো পেছনে আপনাদের বলেই এসেছি৷ তবু একবার মনে করিয়ে দিই৷
কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদের নামাজ এক যামানায় এটি সবার ওপর ফরজ ছিলো৷ পরবর্তিতে ফরজ না থাকলেও যুগে যুগে আল্লাহ অন্তপ্রাণ মুমিনেরা ফরজের মতো করেই কিয়ামুল লাইলের আমল করে এসেছেন৷ আমাদের যতো মহান মনীষার জীবন ইতিহাসে পাই তাদের সবাইই যত্নের সাথে কিয়ামুল লাইল পালন করতেন৷ এবং প্রায় প্রত্যেকেই স্বীকারোক্তি দিয়ে গেছেন যে— আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রিয় হবার জন্যে কিয়ামুল লাইল এক অব্যর্থ আমল৷
কিয়ামুল লাইলকে নিজের জীবনে আবশ্যিক করে নেয়ার জন্যে এর চাইতে বড় প্ররোচক আর কি হতে পারে যে, এ আমল আমাকে মহান রবের কাছে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করবে! তবু কিছু ফজিলাতের কথা আপনাদের সামনে পেশ করছি৷
১, প্রিয় নবীর অনুসরণ৷ নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যধিক গুরুত্ব দিতেন কিয়ামুল লাইলের প্রতি৷ নামাজে দাঁড়িয়ে থাকতেন এত সময় যে তাঁর দুই পা ফুলে যেতো৷
২, জান্নাত লাভের বড় উপায়৷
৩, জান্নাতিদের মধ্যে বিশেষ মর্যাদা প্রাপ্তির মাধ্যম৷
৪, কিয়ামুল লাইলের প্রতি যত্নবান ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার বিশেষ রহমাতে স্নাত হবে৷
৫, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামুল লাইলে যত্নবান ব্যক্তিকে প্রশংসায় ভূষিত করেছেন— وَالَّذِينَ يَبِيتُونَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَقِيَامًا
تَتَجَافَى جُنُوبُهُمْ عَنِ المَضَاجِعِ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَطَمَعًا
৬, ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ৷
৭, কিয়ামুল লাইল পর্বতসম গোনাহের স্তুপ মুহূর্তে গুড়িয়ে দেয়৷
৮, যে কিয়ামুল লাইল আদায় করে তাকে নিয়ে আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করেন৷
৯, কিয়ামুল লাইলের প্রতি যে যত্নবান কেয়ামত দিবসের ভয়াবহতা স্পর্শ করবে না তাকে৷
১০৷ কিয়ামুল লাইল আদায়কারীর জন্যে নবিজী রহামাতের দোআ করে গেছেন৷
আরও বহু লাভের কথা সুন্নাহতে বর্ণিত আছে৷ এই যে, যে হাদিসটিতে শয়তানের জাদু বিস্তারের কথা বর্ণনা করা হয়েছে, বলা হয়েছে যে সে ঘুমন্ত ব্যক্তির ওপর জাদু করে৷ যার ফলে ঘুমন্ত ব্যক্তি দুর্বলতা অনুভব করে৷ শয়তানের জাদু থেকে পরিত্রাণের জন্যে নবিজী সেই হাদিসে যে তিনটি উপায় বলে দিয়েছেন তার একটি তো এই কিয়ামুল লাইল৷ নবিজী বলেছেন—
তোমাদের কেউ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ের পশ্চাদংশে তিনটি গিট দেয়। প্রতি গিটে সে এ বলে চাপড়ায়, 'তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি শুয়ে থাক।' কিন্তু সে যদি জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে তাহলে একটি গিট খুলে যায়৷ তারপর যখন উটে অজু করে খুলে যায় তার আরেকটি গিট, অতঃপর সালাত আদায় করে যখন সর্বশেষ গিটটিও খুলে যায়। তখন তার প্রভাত হয় উৎফুল্ল মনে ও অনাবিল চিত্তে। অন্যথায় সে সকালে জেগে ওঠে কলুষ কালিমা ও আলস্য সহকারে।
(বুখারি)
হাদিসের সংকলন তারগিব ও তারহিব৷ সেখানে ভিন্ন সূত্রে এমন আরও দুটি বর্ণনা হাজির করা হয়েছে৷
কিয়ামুল লাইল মহান এক ইবাদাত৷ ফরজ সালাতের পরেই তার অবস্থান৷ আমাদের সকলের উচিত ফরজ সালাতের পাশাপাশি কিয়ামুল লাইলের ব্যপারেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া৷ আল্লাহ তায়ালা কবুল করুন৷
শেষ করবার আগে একটি পরামর্শ দিতে চাই কিয়ামুল লাইল সম্পর্কিত৷ পরামর্শটি আমার দেয়া নয়৷ হাদিস থেকেই বলছি৷
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলছেন— নবিজী রাতে যখন সালাত আদায় করতেন প্রথম দুই রাকাত সংক্ষিপ্ত করতেন৷
(মুসলিম)
অর্থাৎ, নবিজী তার আদায়কৃত কিয়ামুল লাইলের প্রথম দুই রাকাত স্বল্প সময়ে শেষ করে সালাম ফেরাতেন৷ প্রথম দুই রাকাত দীর্ঘ করতেন না
এর কারণ কী?
কারণ বলতে গিয়ে বুখারী শরীফের বিখ্যাত ভাষ্যকার ইবনু হাজার আসকালানি রহিমাহুল্লাহ বলেছেন— যেহেতু কিয়ামুল লাইলের মাধ্যমে শয়তানের জাদু থেকে মুক্তি মেলে তাই নবিজী দ্রুতই শয়তানের গিট্টু খুলে নিতেন৷ প্রথমে গিট খুলে নিয়ে এরপরের রাকাত গুলি লম্বা সময় নিয়ে আদায় করতেন৷
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দীনের সঠিক উপলব্ধি দান করুন৷

 

 

 

No comments:

Post a Comment