Tuesday, July 27, 2021

কুরআন নিয়ে কথা

 

এক লোক প্রচুর কুরআন পড়ত। কুরআন নিয়েই ডুবে থাকতে ভালবাসত। কিন্তু কেন যেন কুরআনের কিছুই সে মুখস্থ রাখতে পারত না। একদিন লোকটির ছোট ছেলে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলল, 'বাবা, আপনি যে এত কুরআন পড়েন, কিছুই তো মনে রাখতে পারেন না। এতে কী লাভ হচ্ছে?'
.
— তোমার এই প্রশ্নের উত্তরটা দিবো। তার আগে এক কাজ করো, তুমি এই বেতের ঝুড়িটা সমুদ্র তীরে নিয়ে যাও এবং পানি ভরে নিয়ে আসো।
— এটা তো বেতের তৈরি, পানি কীভাবে ধরবে?
— আহা, চেষ্টা করে দেখো না!
.
সাধারণত কয়লা আনা-নেওয়ার কাজে তারা এই ঝুড়ি ব্যবহার করে। তবুও বাবার কথায় ছেলেটি ঝুড়ি নিয়ে তীরে গেল এবং পানি ভরল। কিন্তু বাড়ি ফিরে আসতে আসতে সব পানি পথেই শেষ। পড়তে পড়তে একদম খালি হয়ে গেছে।
.
'দেখলেন? কোনো লাভ হলো? পানি একটুও বাঁচেনি।' ছেলে আফসোস নিয়ে বলল।
লোকটি আশ্বাস দিলো, 'চেষ্টা চালিয়ে যাও সোনা। আরও কয়েকবার চেষ্টা করো।'
.
এভাবে দুইবার, তিনবার, চারবার, সবশেষে পাঁচবার পর্যন্ত চেষ্টা করল ছেলেটি। কিন্তু এক মুঠো পানিও আনতে পারল না। অবশেষে হাল ছেড়ে দিয়ে বাবাকে বলল, 'এই ঝুড়ি দিয়ে আমার পক্ষে পানি আনা অসম্ভব।'
.
এবার লোকটি শান্ত গলায় বলল, 'আচ্ছা, তবে তুমি কি ঝুড়িটার ভিতরের দিকে খেয়াল করেছ? ভিতরের অবস্থার কোনো পরিবর্তন দেখেছ?'
— হ্যাঁ, এটা পানি ধরে রাখতে না পারলেও বার বার পানি ভরার কারণে কয়লার ময়লাগুলো সাফ হয়ে গেছে। ভিতরটা বেশ পরিষ্কার দেখাচ্ছে এখন।
— ঠিক ধরেছ। এবার বলি, কুরআনও ঠিক এই কাজটাই করে তোমার অন্তরের ভিতরে। দুনিয়ার পেছনে ছুটতে ছুটতে তোমার অন্তর যখন কলুষিত হয়ে পড়ে, তখন কুরআন সমুদ্রের পানির মতোই তোমাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দেয়। অন্তরে মুখস্থ রাখতে না পারলেও সে তোমাকে পবিত্র করে দেয়।
বাবারে, একটা কথা মনে রেখো, কুরআনের প্রথম অবতীর্ণ আয়াত 'পড়ো', 'মুখস্থ করো' না। কাজেই মুখস্থ করতে না পারার কারণে শয়তান যেন তোমাকে ধোঁকায় না ফেলে, কুরআন পড়া থেকে দূরে সরিয়ে দিতে না পারে।
.
ড. আলী মুহাম্মাদ আস-সাল্লাবী (হাফি.)-এর পেইজ থেকে অনূদিত।
অনুবাদ: ওয়াফিলাইফ
.

মেয়েদের পর্দা

 

- মেয়েদের পর্দা -
হিজাব, নিকাব, হাত মোজা, পা মোজা পড়া হয়? - আলহামদুলিল্লাহ, বাহিরে সর্বদা এসব পড়া হয়।
মডারেট?
- না, আলহামদুলিল্লাহ, পরিপূর্ণ প্র্যাকটিসিং।
কখনো হিজাব পড়া ছবি ফেসবুক বা সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়?
- না, কখনোই না, আলহামদুলিল্লাহ।
নন-মাহরাম মেইনটেইন করা হয়?
- জ্বি আলহামদুলিল্লাহ, সর্বাত্মকভাবে মেইনটেইন করা হয়।
সবই আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
কিন্তু কিন্তু...
ফেসবুকে ছবি পোস্ট করা পর্দার লঙ্ঘন বিধায় আপলোড করেন না কিন্তু আপনার মেয়ে বান্ধবী আপনার মাহরাম বিধায় তার সাথে সেলফি তুলেন যা হয়তো আপনার বান্ধবীর ফোনে থেকে যায়। কিংবা আপনার সাথে আপনার বান্ধবীর গ্রুপ ছবি আপনার বান্ধবীকে ইনবক্সে সেন্ড করেন।
আপনি হয়তো ভাবছেন আমার বান্ধবির ফোনেই তো ছবি স্টোর করা আছে কিংবা আমার বান্ধবির ইনবক্সেই তো পাঠিয়েছি, মেয়ে তো, দোষ কিসের।
আপনার বান্ধবি মেয়ে, তার সাথে আপনার পর্দা করতে হবে না ঠিকই, কিন্তু আপনার বান্ধবির ফোন যে তার স্বামী, ভাই, বাবা, চাচা, মামা কিংবা অন্য কোনো পুরুষ যে ধরবে না এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। আপনার বান্ধবীর ফোন তার মাহরাম পুরুষরা তো ধরতেই পারে কিংবা ইনবক্সেও অ্যাক্সেস থাকতে পারে, অথচ ঐসকল পুরুষ আপনার জন্য নন-মাহরাম। অর্থাৎ আপনার পর্দার লঙ্ঘন হতেই পারে। সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
আপনি হয়তো ভাবছেন আপনি যেসকল বান্ধবীর ফোনো ছবি তুলছেন কিংবা যেসকল বান্ধবির ইনবক্সে ছবি পাঠিয়েছেন, তারা সকলেই পরিপূর্ণ পর্দানশীল, পরিপূর্ণ ইসলাম প্র্যাকটিসিং, আপনার পর্দা লঙ্ঘনের সুযোগ নেই।
সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আপনার বান্ধবী ঠিকই পরিপূর্ণ প্র্যাকটিসিং এবং আপনার পর্দার হেফাজতে সর্বদা সতর্ক। কিন্তু হয়ত তার স্বামী/ভাই/বাবা/চাচা/মামা সহ কোনো না মাহরাম ইসলামিক মাইন্ডেড নয়, তারা হয়ত আপনার তোলা ছবি বা আপনার সেন্ড করা ছবি দেখে ফেলল। স্পষ্ট পর্দার লঙ্ঘন হবে।
একজন মেয়ের সকল মাহরাম যে ইসলামিক মাইন্ডেড হবে এবং ঐসকল মাহরাম পুরুষরা যে ঐ মেয়ের ফোন/ফেসবুক আইডি অ্যাক্সেস পাবে না, এরকম নিশ্চয়তা দেওয়ার সুযোগ নেই।
আর সকল নন-মাহরাম পুরুষরাও ইসলামিক মাইন্ডেড হলেই যে পরিপূর্ণ দ্বীনদার হবে, পরিপূর্ণ প্র্যাকটিসিং হবে, এর নিশ্চয়তাও দেওয়া সম্ভব না। আর পরিপূর্ণ প্র্যাকটিসিং না হলে আপনার পর্দার হেফাজত হবে - এমনটা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়।
ছবি সেন্ড করার বাইরে আপনার বান্ধবির কাছে "সেনসেটিভ" ম্যাসেজ সেন্ড করাটার ক্ষেত্রেও একই বিষয় ঘটতে পারে।
ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের ক্ষেত্রে এসব এড়াতে "আনসেন্ড" করার সুযোগ রয়েছে। আনসেন্ড অপশনটি ব্যবহার করে ম্যাসেজের বিষয়টি থেকে পর্দার লঙ্ঘন কিছুটা ঠেকানো সম্ভব, ইন শা আল্লাহ।
কিন্তু ছবি স্টোর করে রাখার ক্ষেত্রে কখনওই ১০০% রিস্ক ফ্রি নয়। অতএব, বিষয়টি অনেকেরই হয়ত মাথায় থাকে নি, বা মাথায় আসেনি। তাকওয়ার পরিচায়ক হবে এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে তা বাস্তবায়ন করা।
লেখাঃ মুহাম্মদ রাহাত

হিজাব নিয়ে কথা

 হিজাব নিয়ে কথা

হিজাব বা পর্দা করার অন্যতম শর্ত হল 'বডি হাগিং' বা টাইট কিছু না পরা, যেটাতে শরীরের শেপ বুঝা যাবে। পায়ের শেপ এর মাঝে ইনক্লুসিভ। তাই উপরে ঢোলা টপ্স আর নিচে চাপা জিন্স পরে পর্দার কন্ডিশন ফুলফিল হয় না। দেশবিশেষে এটা 'ভ্যারি' করবে না। বাংলাদেশেও যে নিয়ম, ক্যানাডাতেও তাই, উজবেকিস্তানেও। সাইজ ৮ আপনার আইডিয়াল মাপ হলে ১১ বা ১২ পরলে খুব অসুবিধা হবার কথা না। মুসলিম দেশে হিজাব করা লাগবে আর অমুসলিম দেশে সব মাফ, এটা খুব অদ্ভুত ধারণা। উৎপত্তি কার উর্বর মাথা থেকে হয়েছে ইবলিশ বলতে পারবে since he helped out.
.
হিজাব সবার জন্য ফরজ, শুধু হুজুরনীদের জন্য না। যে পরিবারের ছেলে সদস্যরা তাদের রেসপন্সিবিলিটির আন্ডারে থাকা মেয়ে/মহিলাদের এ বিষয়ে সাবধান করে না, শিক্ষা দেয় না, তাকে দাইয়ুস বলে। উনার স্থান জাহান্নামে।
.
হিজাব মানে শুধু মাথায় কাপড় দেয়া না। এটা মডেস্টি, হায়া। হিজাব একটা এটিচ্যুড, লাইফস্টাইল। চাপা জিন্স ফতুয়া পরতে সমস্যা নেই, উপরে এমন ভাবে কিছু দিয়ে ঢেকে ফেলতে হবে যেন এসব বডি হাগিং ক্লোথ কারো নজরে না পড়ে। এনি আউটার লেয়ার। নিতান্তই না পারলে খুব ঢোলা, একেবারে আনরিভিলিং কাপড় পরতে হবে। টাইট জিন্স/লেগিং উইথ টপস পরলে যেহুতু হিজাব হবে না, ঢোলা টিউনিক পরতে পারেন। সিম্পল, লুজ, এলিগেন্ট। খেয়াল করেছেন কখনো যে কোমর পর্যন্ত টপ্স পরে হেঁটে গেলে পাশের বাড়ির বুড়া মোখলেস দাদাও আপনার পেছন পানে চেয়ে থাকে? Basic human instinct, কিচ্ছু করবার নেই।
.
হাত বের করে মাথা ঢেকে রাখার ব্যাপারটা হিজাবের নিয়ম লংঘন করে। হাফ হাতা, থ্রি কোয়াটার হাতা, বা টাইট স্লিভ পরে শুধু চুল কভার করাটা ভ্রান্তিজনক। হাত, পা (একেবারে পায়ের পাতা পর্যন্ত) আওরার অন্তর্ভুক্ত।
.
হিজাব কেন করব?
.
ফরজ তাই। জাহান্নামি না হওয়ার জন্য। কন্সেপ্টটা বুঝে নিতে হবে আগে যে it is obligatory. Optional ব্যাপার স্যাপার নাই এখানে। যেটার বিধান স্পষ্টত ফরজ সেখানে প্রপার হিজাব না করাটা সিম্পলি বেয়াদবি, এখানে কোন এক্সকিউয খাটে না। নূন্যতম ঢোলা কাপড়টা পরেন যাতে মামা চাচা দুলাভাই আপনার বডি ডাইমেনশন্স মানসপটে এঁকে ফেলতে না পারে। সবাই যে ওঁৎ পেতে আছে আপনার শরীর মাপার জন্য তা না, কিন্তু কে কে মাপবে না তার নিশ্চয়তা কে দিচ্ছে?
.
'কেন আমাকে ঢেকেঢুকে চলতে হবে? ছেলেরা কেন হিজাব করবে না? আমি এত হুজুর না। এত কি মানা সম্ভব? দেবর, দুলাভাই তো নিজের ভাইয়ের মতন। ওদের সামনে হিজাব কেন করা লাগবে?' এসব বাচ্চা বাচ্চা প্রশ্ন আমাকে করবেন না প্লিয। এখনো যদি we can't grow up, তাহলে আল্লাহ্‌ মাফ করুক, হয়ত আমাদের অন্তরে সিল মারা হয়ে গেছে।
.
হিজাব না করলে কি হবে?
.
সেটা আল্লাহ্‌ আর আপনার মাঝের ব্যাপার। তবে যে জেনেশুনে তার প্রভুর কথা অমান্য করল, তার প্রভু তাকে অনুগ্রহ করবেন এটা আশা করা বিশাল লিপ অফ 'ফেইথ'। এতটা সিলি কারই হওয়া উচিত না।
.
পরে করব, মন থেকে আসলে করব, বুড়া হয়ে করব এসব খুব দুঃখজনক কথা। আপনার 'মন থেকে না আসলে' নিশ্চয়ই আপনি খাওয়া, টয়লেট বন্ধ করে রাখেন না। It's not optional.
.
বর্তমানে হিজাব করে আগের এলোমেলো বাতাসে উড়ানো খোলা চুলের ছবি দিলে হিজাব করার মানেটাই তো 'The End' হয়ে গেল, তাই না? সবাই তো আপনার লুকায়িত সৌন্দর্য দেখেই ফেলল।
.
'আমার মা হিজাব করে না, কিন্তু অনেক পরহেজগার।' Well, আল্লাহ্‌ কাস্টোমাইজড রুলিং দেন নাই, ছাড় দিয়েছে ক্ষেত্রবিশেষে করুণা করে। To think we are inclusive in that ছাড়, কি ভয়ংকর এক আশা!
.
নিজে হিজাব করে সন্তানকে মিনি মিনি বারবি জামা পরাবেন না প্লিজ। ভয়ংকর কিছু মানসিক রোগী সবখানেই বিচরণ করে। শালীনতা has no age limit, so the earlier you start, the better.
বইঃ হিজাব আমার পরিচয় 🖤

দ্রুত বিয়ে ও উত্তম স্ত্রী কিংবা স্বামী পাওয়ার আমল

 

দ্রুত বিয়ে ও উত্তম স্ত্রী কিংবা স্বামী পাওয়ার আমল:
 
▪️আমাদের জীবনে সেটাই ঘটবে যা আল্লাহ তাআলা আমাদের ভাগ্যে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তাই পেরেশান হওয়ার কিছু নেই৷ আল্লাহর ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকা চাই৷ আল্লাহ বলেন:
 
قُلْ لَنْ يُصِيْبَنَا إِلاَّ مَا كَتَبَ اللهُ لَنَا هُوَ مَوْلَانَا
▪️অর্থ: তুমি বল, আল্লাহ আমাদের ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন, তা ব্যতীত কিছুই আমাদের নিকট পৌঁছবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক।
➖(সুরা তওবা: ৫১)
▪️তবে বেশি বেশি করে দুআ করবেন৷ কারণ দুআ অনেক পাওয়ারফুল আমল৷ আল্লাহ তাআলা আম্বিয়ায়ে কেরামের আমলের মধ্যে দুআর বিষয়টি পবিত্র কুরআনে বারবার উল্লেখ করেছেন৷ হাদিসে এসেছে-
لاَ يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلاَّ الدُّعَاءُ
▪️অর্থ: ভাগ্য পরিবর্তন হয় না দুআ ব্যতীত।➖(তিরমিযী: ২১৩৯)
▪️অতিদ্রুত হালাল, উত্তম ও সম্মানজনক রুজি এবং উত্তম ও দ্বীনদার স্ত্রী কিংবা স্বামী পাওয়ার জন্য বেশি বেশি করে মুসা আলাইহিস সালাম কৃত দুআটি পড়তে পারেন:
 
رَبِّ اِنِّیۡ لِمَاۤ اَنۡزَلۡتَ اِلَیَّ مِنۡ خَیۡرٍ فَقِیۡرٌ
▪️অর্থ: হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ নাযিল করবে, আমি তার মুখাপেক্ষী। ➖(সুরা কাসাস: ২৪)
▪️উত্তম জীবনসঙ্গী, নেককার সন্তান-সন্ততির জন্য আল্লাহ তাআলার শিখিয়ে দেয়া কুরআনি এই দুআটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যাপক অর্থপূর্ণ:
 
رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ اَزۡوَاجِنَا وَذُرِّیّٰتِنَا قُرَّۃَ اَعۡیُنٍ وَّاجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِیۡنَ اِمَامًا.
▪️অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ কর।
➖(সুরা ফুরকান:৭৪)
▪️বেশি বেশি তাওবা ও ইস্তিগফার করুন। কারণ এটা রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম একটি আমল। আর, আপনার জীবনের প্রতিটি নিয়ামত ও প্রশান্তি আপনার রিজিকেরই অন্তর্ভুক্ত। নফল সাদাকা করুন৷ বেশি করে সালাতুল হাজত পড়ে আল্লাহর নিকট সাহায্য চান। কারণ এটা দ্রুত বিয়ে ও দ্বীনদার স্বামী/স্ত্রী পাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ আমল।
▪️আর হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই৷ আল্লাহ তাআলা আপনাকে অবশ্যই সাহায্য করবেন৷ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
 
ﺛَﻠَﺎﺛَﺔٌ ﺣَﻖٌّ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻮْﻧُﻬُﻢْ: ﺍﻟﻤُﺠَﺎﻫِﺪُ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟﻤُﻜَﺎﺗَﺐُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻷَﺩَﺍﺀَ، ﻭَﺍﻟﻨَّﺎﻛِﺢُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻟﻌَﻔَﺎﻑَ
▪️অর্থ: তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহ্ তাআলার জন্য কর্তব্য হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলার রাস্তায় জিহাদকারী, চুক্তিবদ্ধ গোলাম যে তার মনিবকে চুক্তি অনুযায়ী সম্পদ আদায় করে মুক্ত হতে চায় এবং ওই বিবাহে ইচ্ছুক ব্যক্তি যে (বিবাহ করার মাধ্যমে) পবিত্র থাকতে চায়।
➖(আমি : ১৬৫৫, নাসায়ী: ৩২১৮)
▪️ধৈর্যধারণ করে এই আমলগুলো করতে থাকুন৷ আল্লাহ তাআলার প্রতি দৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস রাখুন৷ শীঘ্রই ব্যবস্থা হয়ে যাবে
ইন শাআল্লাহ।
_এডমিন✅

সবচেয়ে সুস্বাদু পাপ - গীবত

 May be an image of one or more people and text that says 'সবচেয়ে সুস্বাদু পাপ পাপ "গীবত" FAYSAL AHMED'

 

আমাদের অনেকের সমস্যা হচ্ছে, ঠিক কোন গুলো গীবত তা ধরতে না পারা । এখানে বেশ কয়েক প্রকারের গীবত নিয়ে আলোচনা করা হলো"‼️🥺
(১) খাবারের গীবত :
নিকৃষ্টতম গীবত হল খাবারের গীবত করা । একজন মানুষ কষ্ট করে রান্না করে, আর সবাই মিলে রান্নার বদনাম করতে থাকে । খাবারের গীবত বেশি হয় বিয়ে বাড়িতে ।
যেমন বলা, খাবারটা মজা হয় নাই, লবণ কম হইছে, এত লবণ দিয়েছে যে তিতা লাগছে ইত্যাদি ।
নবী(স:) কখনই খাবারের দোষ ধরতেন না । ভালো না লাগলে এক পাশে সরিয়ে রাখতেন । কখনই বলতেন না, কী খাবার রান্না করেছে মুখেই দেয়া যাচ্ছে না !
(২) দৈহিক কাঠামোর গীবত :
কারো কাছে কোন ব্যক্তির দৈহিক ত্রুটি উল্লেখ করাও গীবত ।
যেমন বলা, অমুক ব্যক্তি খুব মোটা, তার নাক বোঁচা, চোখ খুবি ছোট, চোখে দেখে না, মাথায় তো চুল নাই, পেটে ভূড়ি আছে, সে তো খুবি খাট ইত্যাদি ।
তো কোন ব্যক্তির আড়ালে অন্য কারো সাথে যদি আপনি ঐ ব্যক্তির দৈহিক কাঠামো নিয়ে এরকম আলোচনা করেন তাহলে তা গীবত হয়ে যাবে ।
"একবার আয়েশা(রা:) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল ! আপনি কী সাফিয়ার বেঁটে হওয়াটা অপছন্দ করেন না ?
রাসূল(স:) বললেন, হে আয়েশা ! তুমি এমন একটি কথা বললে যা নদীর পানির সাথে মিশিয়ে দিলে তার উপর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে ।"
(আবু দাউদ )
(৩) পোশাকের গীবত :
এভাবে বলা, অমুকের পোশাক খাট, কেমন কালারের জামা-কাপড় পরে দেখতে বিশ্রি লাগে, ঐ মেয়ে এত ফিটিং ওয়ালা পোশাক পরে, অমুক তো পাতলা ড্রেস পরে ইত্যাদি ।
" একবার আয়েশা(রা:) বলেন, অমুক স্ত্রীলোকের আচল খুব লম্বা । রাসূল(স:) একথা শুনে বললেন, হে আয়েশা ! তোমার থুথু ফেলা কর্তব্য । আয়েশা(রা:) বলেন, আমি থুথু ফেললে মুখ থেকে গোশতের একটি টুকরা বের হয়ে আসে ।"
(আত তারগীব ওয়াত তারহীব)
(৪) বংশের গীবত :
তুচ্ছ করার জন্য কাউকে বলা, অমুকের বংশ নিচু, অমুকের পূর্ব পুরুষেরা ছিল কূলি মজুর বা চোর ডাকাত ইত্যাদি, অমুকের তো কোন বংশই নেই ইত্যাদি বলা ।
"নবী(স:) বলেন, দীনদ্বার ও সৎকর্ম ব্যতীত কোন ব্যক্তির অপর কোন ব্যক্তির উপর শ্রেষ্ঠত্ব্য নেই ।"
(আব্দুর রহমান আশ-শারানী)
(৪) অভ্যাস বা আচার-আচারণের গীবত :
কোন ব্যক্তির আচার ব্যবহার নিয়ে সমালোচনা করা । যেমন, সে মানুষকে কষ্ট দিয়ে কথা বলে, ব্যবহার খারাপ, অভদ্র, পেটুক, অলস, সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘুমায় ইত্যাদি ।
একবার সালমান ফারসী(রা:) আহার করে শুয়ে পড়লেন । দুই ব্যক্তি তার খাওয়া ও শোয়ার ধরণ নিয়ে সমালোচনা করলে নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয়,
"তোমরা পরস্পরের গীবত কর না । "
(সুরা হুজরাত : ১১)
(ইবনে জুরাইহ এর সূত্রে দুররুল মানছুরে)
(৫) ইবাদতের গীবত :
ইবাদতের ত্রুটি বিচ্যুতি নিয়ে সমালোচনা করা । যেমন, কাউকে গিয়ে বলা অমুকতো ঠিকমত নামায পরতে পারে না, মাকরুহ ওয়াক্তে নামায পরে, রমযানের রোজা রাখে না, এত বড় হইছে কিন্তু এখনো নামায পড়ে না, এত বড় মেয়ে কুরআন পড়তে জানে না ইত্যাদি ।
"তাহাজ্জুদের ওয়াক্তে কতক লোক ঘুমিয়ে থাকলে শেখ সাদী(রহ:) তাদের সমালোচনা করেন এবং বলেন, এই লোকগুলো যদি তাহাজ্জুদ পড়তো তবে কতই না ভালো হত । সাদীর পিতা একথা শুনে বলেন, কতই না ভালো হত যদি তুমি তাহাজ্জুদ না পড়ে এদের মত ঘুমিয়ে থাকতে । তাহলে এদের গীবত করার পাপ তোমার ঘাড়ে চাপত না ।"
(ইহয়া উলূমিদ-দীন)
(৬) গুনাহের গীবত :
যেমন বলা, অমুক যেনা করেছে, অমুক মানুষের নামে বদনাম করে, বাবা-মা কে কষ্ট দেয়, মিথ্যা কথা বলে, হিংসুক, অমুকের মেয়ে প্রেম করে ছেলে নিয়ে রাস্তা দিয়ে ঘুড়ে বেড়ায় ইত্যাদি ।
(৭) অভিনয়/ইশারা-ইংগিতের মাধ্যমে গীবত :
কোন ব্যক্তির অসহায় অবস্থা অভিনয়ের বা ইশারা-ইংগিতের মাধ্যমে দেখানো । যেমন, অন্ধ, বোবা, খুরা ইত্যাদি সেজে দেখানো । এমনকি সমালোচনার জন্য কারো চালচলন, কথা, পোশাক ইত্যাদি নকল করে অভিনয় করাটাও গীবত । সরাসরি নামোল্লেখ না করে এমন কিছু ইংগিতবহ উপমা ব্যবহার করে দোষ বর্ণনা করা যে লোকেরা উপমা শুনেই বুঝে ফেলে কার কথা বলা হচ্ছে । অর্থাৎ গীবত করার সময় নাম না নিলেও এমন ভাবে কোন ব্যাক্তির দোষ-ত্রুটি বলা যে মানুষের আর বুঝতে বাকি থাকে না কার কথা বলা হচ্ছে, এটাও গীবত পর্যায়ে পড়বে ।
"রাসূল(স:) বলেন, আমি পরানুকরণ পছন্দ করি না, এত এত সম্পদের বিনিময়েও না ।"
(তিরমিযি)
(৭) কানের গীবত :
নিজে না বললেও কারো গীবত শোনা এবং শোনার সময় কোনরুপ বাধা না দেয়া কানের গীবত । গীবত দুই ভাবে হয় -
(১) মুখে বলে
(২) কানে শোনে
গীবত বলা ও শোনা সমান পাপ ।
"রাসূল(স:) বলেছেন, গীবত শ্রবণকারীও গীবতকারীদের একজন ।"
(তাবরানী)
(৮) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে গীবত :
নিজের হাত, পা, চোখ ইত্যাদির মাধ্যমে অন্য লোকের নিকট কোন ব্যক্তির দোষ বর্ণনা করা ।
যে ব্যক্তি চোখ এবং হাতের ইশারার দ্বারা মানুষদের কষ্ট দেয় তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি । এবং হুতামাহ নামক জাহান্নামটি তাদের জন্যও প্রস্তুত রয়েছে ।
যেমন, কোন ব্যক্তি কোন মজলিস থেকে উঠে চলে যাওয়ার পর তার প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য চোখ অথবা হাতের ব্যবহার করা ।
"খর্বাকৃতি এক মহিলা মহানবী(স:) এর নিকট আগমন করলো । তার চলে যাওয়ার পর আয়েশা(রা:) তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্য হাতের দ্বারা তার প্রতি ইংগিত করেন । মহানবী(স:) বলেন, হে আয়েশা ! তুমি তো তার গীবত করলে ।" (বায়হাকী)
ভুল ত্রুটিগুলো(পোস্ট এ কোন ভুল থাকলে) ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন দয়া করে।
Copied

 

সমসাময়িক প্রেক্ষাপট: আমার কিছু ভাবনা

 

কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে অহরহ একটি বিষয় লক্ষ করছি। তাই এটা নিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে কিছু লিখার প্রয়োজন মনে করলাম।
সমসাময়িক প্রেক্ষাপট -১
কয়েকদিন ধরে চেনা-অচেনা অনেকেই ইনবক্সে একটি মেসেজ দিচ্ছেন। সেটা হচ্ছে একটি অ্যাপকে রেফার করা। আর সেই অ্যাপটি হচ্ছে সকলের সুপরিচিত ‘টিকটক’। আমরা দৈনন্দিন প্রয়োজনে বিভিন্ন অ্যাপ রেফার করে থাকি। নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু অ্যাপ আমাদের সর্বদাই কাজে লাগে। কিন্তু এই টিকটক কি আসলেই নিত্যকার প্রয়োজনীয়?
টিকটকের কার্যক্রম কিরকম আর এই অ্যাপ কি নিয়ে কাজ করে সেটা কারোরই অজানা নয়। তাই এ নিয়ে আজ কিছু লিখতে চাই না। যুবসমাজের ধ্বংসের মূল একটি হাতিয়ার বললেও মনে হয় খুব বেশি ভুল হবে না। আর এই অ্যাপ প্রমোট করা, রেফার করা একজন মুসলিমের জন্য কতটুকু যুক্তিযুক্ত সেটাই ভাবার বিষয়।
কয়েকদিন ধরে যেটা লক্ষ করছি সেটা হচ্ছে যারা কোনদিন টিকটক ব্যবহার করেননি বা কোনভাবেই এর সাথে যুক্ত ছিলেন না তারাও এর রেফারেল মেসেজ দিচ্ছেন। কেন? কারণ একটি রেফার করলেই কিছু টাকা দিচ্ছে অথোরিটি। এরকম কয়েকটি রেফার করতে পারলেই হাতিয়ে নেওয়া যাবে হাজার দুয়েক টাকা। এতে অথোরিটির লাভ কি? সহজ উত্তর, এতে তাদের অ্যাপের প্রচার হচ্ছে যার ফলে তাদের ইনকাম সোর্স বাড়ছে আর সেখান থেকেই কিছু অংশ রেফারকারীকে দিচ্ছে তারা।
অনেকেই ভাবছেন, বাহ! সহজ তো। অল্প কষ্টে অধিক টাকা, তাও আবার বসে থেকেই।
থামুন!! একজন মুসলিম হিসেবে আপনার উচিৎ নয় যেখানে সেখানে আয়ের উৎস খোঁজা। একজন বিবেকবান মানুষ যেমন ডাস্টবিন থেকে পঁচা খাবার তুলে খাবে না, যতই সুস্বাদু হোক, তেমনি একজন মুসলিমও যেখানে সেখানে আয়ের উৎস খুজতে পারে না, যতই লাভজনক হোক।
কিন্তু আপনি বলতে পারেন, সমস্যা কি? আমি তো আর ভিডিও দেখছি না বা তৈরি করছি না। এবার আমি বলি, আপনি কিছু টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্য অন্তত ১০ জনকে রেফার করছেন। এই ১০ জনের কেউই যে তাদের ভিডিও দেখবে না বা তৈরি করবে না তার কি গ্যারান্টি? আবার এই ১০ জন অন্য যাদের রেফার করবে তারা যে দেখবে না তার কি গ্যারান্টি? এতে তাদের সমপরিমাণ গুনাহ আপনার আমলনামায় যোগ হবে। আর এটা প্রজন্মের মতো চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকবে।
এখন আপনি তো আবার আল্ট্রা প্রো-ম্যাক্স বুদ্ধি নিয়ে চলেন। আপনি হয়তো বলতে পারেন আমি তো অন্য কাউকে রেফার করি না, আমি নিজেই ১০ টা একাউন্ট খুলে সেটাতে রেফারেল কোড ব্যবহার করছি। পরে আবার ডিলেট করে দিব। এক্ষেত্রে বুঝা যায় আপনার উদ্দেশ্য ভিডিও দেখা না, শুধু কিছু টাকা কামানো। এতে সমস্যা কি? এতেও সমস্যা আছে। কারণ তাদের যে আয়ের উৎস সেটা কিন্তু হারাম। অন্যরা তাদের অ্যাপ ব্যবহার করছে আর এতে তারা লাভবান হচ্ছে, আর সেখান থেকেই কিছু অংশ আপনাকে দিচ্ছে। এটা স্পষ্টত যে তাদের উৎস হারাম আর সেখান থেকেই আপনাকে টাকা দিচ্ছে।
একজন সুদখোরের বাড়িতে দাওয়াত খাওয়া একজন মুসলিমের জন্য জায়েজ নয়, কারণ তার আয়ের উৎস হারাম (ভিন্ন কোন উৎস থাকলে আলাদা ব্যাপার)। তাহলে যার একমাত্র আয়ের উৎস হারাম তার থেকে আপনি টাকা নিবেন কোন যুক্তিতে? সে তো আর অন্য কোন সোর্স থেকে আপনাকে টাকা দিবে না। একটি প্রশ্ন, এই সামান্য ক-টি টাকা না হলে কি আপনার বিরাট কোন লোকসান হবে, পরিবারের কেউ না খেয়ে মারা যাবে? তাহলে হারামে পা বাড়াচ্ছেন কেন?
এখন টাকা তুলেই ফেলেছেন, তাহলে করণীয় কি? টাকা তুললে আপনি সেই টাকা সাওয়াবের নিয়ত ব্যাতিত দান করে দিন। পাপে জড়ানোর কারণে তওবা করে নিন (নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমা করতে ভালবাসেন)। আর যাদেরকে আপনি রেফার করেছেন তাদের হাতে পায়ে ধরে হলেও বলুন তারা যেন ডিলেট করে দেয়। কারণ তওবা করেও কোন লাভ হবে না যদি এর মাধ্যমে তারা ফায়দা নিয়ে থাকে। এতে আপনার আমলনামায় চক্রবৃদ্ধি হারে গুনাহ আসতেই থাকবে।
|| সমসাময়িক প্রেক্ষাপট: আমার কিছু ভাবনা||
“হাসান তারিক”

তারবিয়্যাহ—সঠিক প্রশিক্ষণ

| তারবিয়্যাহ—সঠিক প্রশিক্ষণ |
 
ইসলাম পুরোটাই চর্চার বিষয়। ইসলামে নন-প্র্যাক্টিসিং বলে কোনো কথা নেই। মুসলিম মানেই তো ইসলাম অনুযায়ী জীবনযাপনকারী। যে ইসলাম সম্পর্কে জেনেও মানে না, সে আবার কেমন মুসলিম! তাই ইসলামে তারবিয়্যাহ এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সমাজকে প্রভাবিত করতে পারবে, এমন নীতিমান নাগরিক গড়ে তুলতে হলে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আচার-আচরণের সুষ্ঠু রীতিনীতি থাকা অপরিহার্য। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ছোট-বড় যত ধরনের সামাজিক সমস্যা আছে, তার সবগুলোর মূলে রয়েছে তারবিয়্যাতের অভাব। 
 
বর্তমানে আমরা উন্মাদের মতো বস্তুগত উন্নতির পিছনে ছুটছি। সন্তান প্রতিপালনের জন্য আমরা জাদুকরি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির তালাশে আছি, যেন আমাদের নিজেদের সময় ও শক্তি খরচ করতে না হয়। এর ফলে আমাদের সন্তানরা বড় হয়ে অযত্নশীল ও স্বার্থপর হবে—এটাই তো স্বাভাবিক। পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা খরচ করলেই এইসব সমস্যা সমাধান হয়ে যায় না। কথায় আছে, ‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে’। সন্তানদের যেভাবে বড় করে তুলব, তার উপর নির্ভর করবে আমাদের সমাজ, জীবন, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। সন্তানদের বিলাসিতার মধ্য দিয়ে বড় করার অর্থ হচ্ছে নিজেদের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত করা। আর পার্থিব ভবিষ্যৎ তথা পরনির্ভরশীল বার্ধক্যের দুর্ভোগ তো আছেই। সন্তানকে শুধু টাকা দিলেই হয় না, সময় এবং মনোযোগও দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে কোনো শর্টকাট রাস্তা নেই। 
 
তারবিয়্যাতের ক্ষেত্র পাঁচটি:
 
১. আকিদা (ধর্মীয় বিশ্বাস)
২. ইবাদাত
৩. মু‘আমালাত (লেনদেন)
৪. মু‘আশারাত (আচরণ)
৫. আখলাক (চরিত্র)
 
উল্লিখিত প্রত্যেকটি বিষয়ের প্রতি সমান মনোযোগ দেওয়া জরুরি। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমাকে আখলাকের শিক্ষা দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে।’ এর মানে এই নয় যে, আকিদা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে আকিদা ও আখলাক উভয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সচরাচর প্রথম দুটির প্রতি মনোযোগ দিয়েই দায়িত্ব শেষ করি। আর বাকি তিনটিকে একেবারেই অগ্রাহ্য করি। শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে আমরা নিজেদের পদ্ধতি ছেড়ে দিয়ে অন্যদের পদ্ধতি গ্রহণ করছি। আসলে আমরা নিজেদের পদ্ধতি সম্পর্কে জানিই না।
 
মু‘আমালাত, মুয়া‘আশারাত এবং আখলাকের মূল বিষয়গুলো কুরআন, সুন্নাহ, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সীরাহ এবং সাহাবায়ে কেরামের জীবনীতে পাওয়া যায়। তাই সেই সর্বোত্তম প্রজন্মের কথা বেশি বেশি আলোচনা করাকে জীবনের অংশ বানিয়ে নিতে হবে। নিজেরাও জানতে হবে, জানাতে হবে সন্তানদেরও। তাদের ঘটনাগুলো যেন আমাদের কাছে বাস্তব ও জাজ্বল্যমান অনুপ্রেরণায় পরিণত হয়। খেলোয়াড়, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং নাটক-সিনেমার তারকা নয়; সাহাবায়ে কেরামগণই আমাদের স্বতন্ত্র ও গৌরবময় পরিচয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের সন্তানরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পরিবার-পরিজন ও সাহাবায়ে কেরামের নামের তুলনায় তথাকথিত এসব সেলিব্রিটিদের নামের সাথেই অধিক পরিচিত। আর কথাটা কেবল আমাদের সন্তানদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়।
 
আসুন, একটি উদাহরণের মাধ্যমে সাহাবায়ে কেরামের জীবনী জানার উপকারিতা বোঝার চেষ্টা করি। আধুনিক গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থার দিকে একটু তাকান। ক্ষমতাশীল লোকেরা এই শাসনব্যবস্থা থেকে নিজেদের মনের মতো ফায়দা লুটছে। এখন প্রশ্ন হলো, ইসলাম কি এমন কোনো পন্থা দেখিয়েছে, যেখানে এমন সুবিধাবাদের কোনো স্থান নেই? যার মাধ্যমে একজন ভালো শাসক নিযুক্ত পাওয়া সম্ভব?
খলিফা আবু বকর সিদ্দিক (রা.) এবং উমার ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর শাসনকে বিশ্লেষণ করে দেখলে এর উত্তর পাওয়া যাবে। কোন ভিত্তি ও মৌলিক শক্তি তাঁদেরকে সঠিক পথের উপর অটল রেখেছিল? আল্লাহর প্রতি তাকওয়া এবং আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে—এই নিশ্চিত বিশ্বাস। এটাই তাদেরকে শয়তানের সকল ষড়যন্ত্র থেকে সুরক্ষা দিয়েছে। তারাও তো মানুষ, তাদেরও ছিল নিজস্ব কামনা-বাসনা। ইসলামি ব্যবস্থা লঙ্ঘন করে যে অনৈতিক সুবিধা পাওয়া যাবে, তা-ও ছিল তাদের জানা। তাকওয়াই তাঁদেরকে আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক কিছু করা থেকে বিরত রেখেছে। এটাই মূল চাবি। আর তারবিয়্যাহ হলো তাকওয়ার সেই পর্যায়ে পৌঁছানোর উপায়।
 
© মির্জা ইয়াওয়ার বেইগ
['বিশ্বাসের পথে যাত্রা'—বই থেকে]
সিয়ান | বিশুদ্ধ জ্ঞান | বিশ্বমান

জীবনকে সুখী করতে কয়েকটি অতি মূল্যবান কথাঃ

 

আসসালামু আলাইকুম,
*জীবনকে সুখী করতে কয়েকটি অতি মূল্যবান কথাঃ
● যখন আপনার রক্ত সম্পর্কীয়দের পক্ষ থেকে আঘাত পান, এই বলে মনকে সান্ত্বনা দেবেন, ইউসুফ (আঃ)-এর সাথে তাঁর আপন ভাইরাও কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন ।
● যদি আপনার মাতা-পিতা আপনার বিরোধিতা করেন, স্মরণ করবেন ইব্রাহীম (আঃ) -কে, যার পিতা তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করেছিলেন।
● যদি এমন একটা সমস্যাতে আটকে পড়েন যেখানে উদ্ধার পাওয়া কঠিন, ভুলে যাবেন না ইউনুস (আঃ) মাছের উদরে কিভাবে আটকে ছিলেন !
● যদি আপনি রোগাক্রান্ত হয়ে কষ্টের জ্বালায় কাঁদেন, স্মরণ করুন আয়ুউব (আঃ) -র রোগ- দুর্দশা কিন্তু আপনার অপেক্ষা বহুগুণ বেশী ছিলো ।
● যখন আপনার নামে কেউ অপবাদ ছড়ায়, ভুলবেন না মা আয়েশা (রাঃ) -ও কিন্তু এমন অপবাদ থেকে রেহাই পান নি ।
● যদি আপনি একাকীত্ব অনুভব করেন, স্মরণ করুন আদম (আঃ)-কে যাকে নিঃসঙ্গ সৃষ্টি করা হয়েছিলো ।
● যখন কনো যুক্তি খুঁজে পাবেন না, ভেবে দেখুন যে নূহ (আঃ) (লোকের চোখে) কোনো যুক্তি ছাড়াই কিন্তু সেই জাহাজটি বানিয়েছিলেন ।
● যদি আপনাকে কেউ বিদ্রূপ বা উপহাস করে আমাদের নবী (সাঃ)-কেও কিন্তু বহু উপহাস সহ্য করতে হয়েছে !
● আল্লাহ সুবহানআল্লাহু তা'য়ালা তাঁর নবী রসুলদের নানা পরীক্ষায় ফেলেছিলেন যাতে তাঁদের উম্মাহ এবং বংশধররা শিক্ষা গ্রহন করে আল্লাহর হুকুমের উপর সবর করতে শেখে ।
● আল্লাহ সুবহানআল্লাহু তা'য়ালা যেন আমাদের সঠিক জ্ঞান এবং বুঝার তৌফিক দেন। আমীন (সংগৃহীত)

Sunday, July 25, 2021

এক মহিলা এসে তার স্বামীর ব্যাপারে ভয়ানক রকমের তিনটা অভিযোগ পেশ করেন।

 

একবারের ঘটনা। নবীজি ﷺ সাহাবিদের নিয়ে বসা। এসময় এক মহিলা এসে তার স্বামীর ব্যাপারে ভয়ানক রকমের তিনটা অভিযোগ পেশ করেন।
১। আমি নামাজ পড়তে গেলে আমার স্বামী আমাকে মারেন।
২। ফজরের নামাজ না পড়ে উনি ঘুমিয়ে থাকেন।
৩। আমি নফল রোযা রাখলে রোযা ভাঙতে বাধ্য করেন।
মজার বিষয় এই মহিলার স্বামী সফওয়ান ইবনে মু'আত্তল রা.। যিনি সেই মজলিশে অন্য সবার সাথে বসা। নবীজি ﷺ সফওয়ানকে ডেকে বললেন, অভিযোগগুলো কি সত্য? তিনি বিনয়ের সাথে বললেন, হ্যা অভিযোগ সত্য। তবে এর ব্যাখ্যা আছে হে আল্লাহর নবী।
: কী ব্যাখ্যা?
:: সে প্রথম অভিযোগ তুলেছে, সে নামাজ পড়লে আমি তাকে মারি। আসলে সে নামাজে লম্বা লম্বা কেরাত পড়ে। ফলে আমাকে সে সময় দিতে পারে না। অপেক্ষায় ঝুলিয়ে রাখে। অথচ আমি তার সঙ্গ পেতে চাই। তার সেবার মুখাপেক্ষী থাকি।
নবীজি ﷺ বললেন,
: নামাজের জন্য ছোট কেরাতই যথেষ্ট।
নোট- স্বামী ঘরে থাকা অবস্থায় স্বামীর সেবা নফল ইবাদাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। স্বামীকে সঙ্গ দেয়াই একটি ইবাদাত। অথচ আজকাল আমাদের মা-বোনেরা বই/মোবাইল/ঘুম/ফেসবুক/ইউটিউব নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। যা মোটেও ইবাদাত তো নাই, বরং ক্ষেত্রে বিশেষ গোনাহের কারখানা।
:: তার দ্বিতীয় অভিযোগ, ফজরের নামাজ না পড়ে আমি ঘুমিয়ে থাকি। আসলে বিষয়টা হল আমার পেশা হল পানি টানা। এটাই আমার জীবিকা নির্বাহের উপায়। সেটা রাতের বেলাতেই করতে হয়। কাজ যখন শেষ হয়, তখনও ফজরের ওয়াক্ত হয় না। এদিকে প্রচন্ড ঘুমের চাপে মাঝেমধ্যে ঘুমিয়ে যাই। নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি না। পরে ঘুম ভাঙ্গে সূর্যদয়ের পর!
নবীজি ﷺ বললেন,
: আচ্ছা। তাহলে যখনি ঘুম ভাঙবে সালাত আদায় করে নিবে।
:: তার তৃতীয় অভিযোগ, সে রোযা রাখলে আমি তাকে তা ভাঙতে বাধ্য করি। কারণ আমি সারা রাত কঠিন পরিশ্রম করি৷ দিনের বেলাতেই কেবল স্ত্রীর কাছে যাওয়ার ফুরসত পাই। আর সেই সময়টাতেও তার সাথে মিলিত হতে পারি না, কারণ সে তখন রোযাদার!
নবীজি ﷺ বললেন,
: তোমরা সবাই শোনো, আজকের পর মহিলারা তার স্বামীর সম্মতি ছাড়া নফল রোযা রাখতে পারবে না।
নোট- স্বামীর অধিকার ক্ষুন্ন করে নফল কোনো ইবাদাত স্ত্রীর জন্য বৈধ নয়।
[ আবু দাউদঃ২৪৫৯, আদ্দুরারুস সানিয়াহ এর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা]
আজকের অধিকাংশ দীনি বোনদের মেজাজ হল- ''সব ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা খোজা''। পুরুষকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা। বিশেষত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের মাঝে এটা প্রকট। স্বামী তালাক দিতে পারলে স্ত্রী কেন পারবে না...? স্বামীর জন্য নেটজগত অবাধ হলে স্ত্রীর জন্য কেন ফেতনা...? দুজনের গড়ে তোলা সংসারে পুরুষ কেন নেতা...? এমনকি অনেকে অভিযোগ তোলে, পুরুষ ৭০ টা হুর পেলে নারী কেন 'কিছু' পাবে না...? ডিভোর্স বৃদ্ধি ও সংসারে অশান্তির প্রধান কারণও কিন্তু এই 'সমতা' ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা' এর বিষাক্ত চেতনা!
অথচ আল্লাহ এবং নবীজি ﷺ পুরুষকে নারীর চেয়ে কর্তৃত্বের দিক থেকে উপরে রেখেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা তো হবে আল্লাহ তা'আলা যদি 'সমতা' বিধান দিতেন।
নবীজি ﷺ বলেছেন,
আল্লাহর পর কাউকে সাজদাহ করা বৈধ হলে আমি প্রতিটা স্ত্রীকে বলতাম, সে যেন তার স্বামীকে সাজদাহ করে! কেননা আল্লাহ তা'আলা স্বামীদেরকে স্ত্রীদের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। [ আবু দাউদঃ২১৪০, আয যাওয়াজিরঃ২/৪১, সনদ সহিহ]
আল্লাহু আকবার!

বিপদ যখন নিয়ামত

 

আহসান সাহেব শহরের একজন দক্ষ ব্যবসায়ী। ব্যবসা সম্পর্কে অগাধ পান্ডিত্ব্য থাকা সত্ত্বেও, হঠাৎ-ই বড় ধরণের বিপর্যয়ের শিকার হলেন। কোটি টাকার ধসে- যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো!
এই মহা বিপর্যয়ে আহসান সাহেবের প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে? হয়ত অধিক শোকে পাথর, নয়তো কেঁদেকেটে আশপাশের মানুষজন এক করা, কিংবা ক্ষোভে-দুঃখে ব্যবসা বন্ধ করে বনবাসী হওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া, ইত্যাদি।
যদি তার প্রতিক্রিয়া উপরের কোনো একটি হয়, তাহলে পরিণতি কী হতে পারে?
অপরদিকে, আসাদ সাহেব বেশ আজিব ব্যবসায়ী।
জীবনের এক উৎফুল্ল সকালে তিনিও কোটি টাকার লোকসানের শিকার হলেন। তবে আহসিন সাহেবের মতো ভেঙ্গে পড়লেন না। বিপর্যয়ের কারণে দুঃখ-দুশ্চিন্তা ভর করতে পারতো তার উপর, কিন্তু তিনি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে ব্যাপারটা হাসিমুখে সামলে নিলেন ভিন্ন পন্থায়।
কেন কীভাবে লোকসানটা হল- সেটা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নবউদ্যমে ফের শুরু করলেন। বছর খানেক পর, তার আত্মবিশ্বাস ও ঘুরে দাঁড়ানো তাকে পৌঁছে দিল বিশ্বের সেরা ব্যবসায়ীদের একজনের স্থানে।
অবশেষে উষ্ণ চায়ের কাপে প্রশান্তির চুমুক।
এদিকে আমাদের রহিম চাচা একজন সাদামাটা ব্যবসায়ী। তিনিও একদিন ব্যবসায় চরম ধরা খেলেন। তাৎক্ষণিক খবরটা পেয়ে কিছুটা বিচলিত হলেও পরমুহূর্তেই প্রশান্তচিত্তে বিশ্বাস রাখলেন, এটি মহান আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছাতেই ঘটেছে। আল্লাহর থেকে প্রতিদানের আশায় ধৈর্য ধারণ করে কষ্ট সহ্য করলেন। তারপর আসাদ সাহেব যে পথে এগিয়েছিলেন, সেই পথ ধরলেন।
উপরের তিন ব্যক্তির মধ্যে কে উত্তম? কে আসলেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?
আহসান, আসাদ কিংবা রহিম সাহেবদের জীবনের পর্যালচনা করা মুখ্য নয়, আমাদের উদ্দেশ্যে এটি উদঘাটন করা যে- বিপদের মতো এক অনিবার্য বিষয়, যার সাথে আমাদের সবারই অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সাক্ষাৎ হয়ে যায়- এহেন দূর্দশা যখন ঘিরে ধরে, তখন আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত?
কেমন হলে তা আমাদের চলার পথকে বিষাক্ত কণ্টকযুক্ত না করে, করবে ফুলের মতো মসৃণ?
নিয়ত ও ইয়াকীন বা বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গি
দৃষ্টিভঙ্গির শক্তি- একই পরিস্থিতিতে একজনের কাছে যা বিপদ, অন্যজনের কাছে তা-ই নিয়ামতঃ
আলী বানাত (রহ.) এর ঘটনা আমাদের প্রায় সকলেরই জানা, ক্যান্সার যার জীবনে এক মহান নিয়ামত হয়ে এসেছিল।
আমরা আলী বানাত (রহ.)কে দাঁড়িপাল্লার একদিকে রেখে, ঠিক তার পরিস্থিতিতে থাকা আর একজন ক্যান্সারের রোগীকে অপর প্রান্তে রেখে বিষয়টা বুঝার চেষ্টা করবো।
দুজনের অবস্থা ও পরিস্থিতি একই হওয়া সত্ত্বেও আলী বানাত রহ. কেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে প্রশান্ত ছিলেন? অন্যজন কেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দুঃখী? পার্থক্যটা কোথায়?
দৃষ্টিভঙ্গিতে। মনোযোগে। লক্ষ্যে। নিয়তে।
আলী বানাত রহ:-এর দৃষ্টিভঙ্গিতে ছিল কৃতজ্ঞতা। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁর স্রষ্টাকে।
অপরদিকে অন্য রোগীটির দৃষ্টিভঙ্গিতে ছিল হতাশা। তিনি মগ্ন ছিলেন অন্যদিকে- জীবন বুঝি শেষ হয়ে আসছে, এই চাকচিক্যময় পৃথিবী ছেড়ে পাড়ি জমাতে হবে অনিশ্চিত গন্তব্যে।
আমরা ভাবি, আমাদের সাথে যা ঘটে তার ওপর নির্ভর করে- আমরা সুখী হবো নাকি দুঃখী। গবেষক ও লেখিকা Gallagher এর মতে, যুগ যুগ ধরে হয়ে আসা গবেষণা এর সাথে বিরোধ করে বলে- আমাদের জীবন কেমন হবে তা নির্ভর করছে- আমরা কোথায় মনোযোগ দিচ্ছি- তার উপর। আমাদের ব্রেইন সেই অনুযায়ী দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে নেয়।(১)
দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তি বিশ্বাসের উপর। বিশ্বাস পরিণত হয় চিন্তায়, চিন্তা পরিণত হয় শব্দে, শব্দ পরিণত হয় কর্মে, কর্ম পরিণত হয় অভ্যাসে।(২)
দ্বীন আমাদের এই অভ্যাস বা স্বভাবে পরিণত করতে হবে।
এই অভ্যাসের মূল ভিত্তিই যেহেতু বিশ্বাস, বারবার বিশ্বাস পরিশুদ্ধ ও দৃঢ় করাতে মনোযোগী হন।
শাইখুল ইসলাম তাকী উসমানী (হাফি) বলেন,
"এই দ্বীন মূলত দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের নাম। ওই কাজটিই যদি আপনি আরেক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে করেন, আরেক নিয়তে করেন, অন্য উদ্দেশ্যে করেন, তা হলে সেই জিনিসটিই-যেটি নিরেট দুনিয়া ছিল-দ্বীন হয়ে যায়।"(৩)
এই দৃষ্টিভঙ্গির অর্থ কী? এর অর্থ হলো, আমরা আমাদের আশপাশে যা ঘটছে তা কীভাবে দেখছি, বুঝছি ও উপলব্ধি করছি এবং ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো আমাদের কাছে কী অর্থ বহন করছে। এটা আমাদের বিশ্বাস দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়।
দৃষ্টিভঙ্গিই হতে পারে আমাদের বিপদের উৎস কিংবা নিয়ামতের। যে পরকালে বিশ্বাস করে ও যে করে না, যেকোন পরিস্থিতিতে তাদের সিদ্ধান্ত ও অন্তরের অবস্থা কখনোই এক হবে না।
মানুষ বস্তু বা ঘটনার চেয়ে বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা অধিক প্রভাবিত হয়। মানুষ বস্তু বা ঘটনা দ্বারা বিশৃঙ্খলতার শিকার হয় না, বরং তা থেকে সে যে দৃষ্টিভঙ্গি নেয়, তা দ্বারা হয়।(৪)
আমাদের জীবনের অধিকাংশ সমস্যাগুলোর সমাধানই হলো- দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। উপরের উদাহরণেই দেখেছি- কেবল দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা কীভাবে একই পরিস্থিতিতে থাকা দুজন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীকে দুরকম মানসিক অবস্থায় রাখতে পারে।
যার বিশ্বাসের গন্তব্য শেষ হয় জান্নাতে, পার্থিব কোনো বিপদই তার পথে বাঁধা হতে পারে না, বরং বিপদ যেন তার সামনে নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করে।
রাসূল সা. এর দুটো অমিয় বাণী উল্লেখ করতে চাই- যা আমাদের অস্থির অন্তরে প্রশান্তির এই পরশ বুলিয়ে দেবে- কীভাবে আমাদের জীবনের সমস্ত বিপদও হতে পারে নিয়ামত।
একটি বিখ্যাত হাদিস, কিন্তু আলোচ্য বিষয়ের সাথে কীভাবে তা সম্পৃক্ত সে সম্পর্ক হয়তো অনেকেরই ভাবা হয়নি গভীরভাবে।
রাসূল(সাঃ) বলেছেন, মুমিনের বিষয় বড়ই আশ্চর্যজনক। তার সবকিছুই তার জন্য কল্যাণকর; মুমিন ছাড়া আর কারও এই বৈশিষ্ট্য নেই। সে যখন আনন্দদায়ক কিছু লাভ করে তখন শোকর করে, আর শোকর তার জন্য কল্যাণের বিষয়। যখন কষ্টদায়ক কোনো কিছুর সম্মুখীন হয়, তখন সে সবর করে, আর সবরও তার জন্য কল্যাণের বিষয়।(৪)
কিছু ক্ষেত্রে শব্দগুলো পড়ে গেলেই হয় না, গভীরভাবে অনুভব করতে হয়; যেন তা অন্তরে গেঁথে যায়, শরীরের শিরা-উপশিরায় মিশে যায়।
এই হাদিসের দৃষ্টিতে চিন্তা করতে পারলে, ভবিষ্যত কেন্দ্রিক সমস্ত ভয় দূর হয়ে যাবে। কারণ আমরা জেনে গেছি, যা-ই ঘটুক, তা মুমিনের জন্য কল্যাণকর।
আরেক হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেন, শপথ সেই সত্তার, যার হাতে আমার প্রাণ! আল্লাহ মুমিনদের জন্য এমন কোনো বিষয় নির্ধারণ করেন না, যাতে তাঁর উপকার নেই। আর এই বিশেষত্ব মুমিনগণ ছাড়া আর কারও জন্যেই নয়।“(৫)
সুতরাং জীবনের সমস্ত সচেতনতা ও মনোযোগ একটি খাতে ব্যয় করুন- কীভাবে মুমিন হওয়া যায়, আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত হওয়া যায়। একবার মুমিন হতে পারলে, যা কিছুই ঘটুক না কেন, হতাশ হওয়ার কারণ নেই। যা ঘটেছে তাতে উপকার আছে বলেই ঘটেছে।
দ্বিতীয় হাদিসঃ
নাবী (ﷺ) বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তির উপর যে সকল যাতনা, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আপতিত হয়, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে বিদ্ধ হয়, এ সবের দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন। (৬)
যেকোন বিপদের সময়ই রাসূল(সাঃ) এর এই বাণী হতে পারে আমাদের অন্তরের স্বস্তি ও শীতলতা।
সমস্যা হল, সুখের সময় অনেক কিছুই করা যায়, বলা যায়; কিন্তু বিপদে যে পড়ে সে-ই জানে এর বাস্তবতা। বিপদে পতিত ব্যক্তির সচেতনতা অনেকাংশে লোপ পায়, বিবেকের চেয়ে আবেগ অধিক সক্রিয় হয়ে ওঠে।
তাই উত্তম হলো, যত দ্রুত সম্ভব বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গির জমিনে এই দুটো হাদিসের বীজ বপন করে দেওয়া, যেন তা শেকড় গজিয়ে অন্তরের গভীর পর্যন্ত পৌঁছে যায়, যা বিপদের সময়ও আমাদেরকে রাখবে দৃঢ় ও প্রশান্ত।
এই প্রশান্তির ব্যাপারে শাইখ সালমান আল আওদাহ বলেন,
"ঈমানের পর আপনার জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামত হলো অন্তরের প্রশান্তি, স্থিরচিত্ত ও সুখ।"(৭)
বিপদ-আপদে কীভাবে শোকর করা যায়?
এক্ষেত্রে মূলনীতিটা হল, দুনিয়ার ক্ষেত্রে নিজ অবস্থানের নিচে দৃষ্টি দেয়া, আখেরাতের ক্ষেত্রে উপরে।
যেমন- যার এক হাত ভাঙলো, তার জন্য শুকরিয়ার বিষয়, দুই হাত ভাঙ্গেনি। যে দুই হাত হারাল, তার শুকরিয়ার বিষয়- দুই পা হারায়নি। যে দুই পা হারালো, তার শুকরিয়ার বিষয়- জীবন যায়নি।
সবর ও শোকর একজন মানুষের জীবনের সার্বক্ষণিক কাজ। কীভাবে? মানুষের যে কোন অবস্থাই হয় তার মনমত, অথবা তার মনের বিপরীত। প্রথম অবস্থায় শোকরের নির্দেশ রয়েছে, আর দ্বিতীয় অবস্থায় রয়েছে সবরের নির্দেশ।(১০)
ইমাম বুখারী রহ. এর লিখিত হযরত আনাস(রাঃ) এর আম্মার ঘটনা।
তাঁর ছোট ছেলের ইন্তেকাল হয়। তিনি রাতে এটা স্বামীকে জানায় না। স্বাভাবিকভাবেই খাবার তৈরি করেন। ভাল কাপড় পরেন। সুগন্ধি মাখেন। খাবার খাওয়ার পর রাতে তাঁদের মিলন হয়। স্বামী ফজরের নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় ছেলের মৃত্যুর খবর দিয়ে বলেন, নামাজের পর দাফন করতে। সেই রাতের মিলনে তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে আব্দুল্লাহর ঔরসে এমন ন’জন সন্তান লাভ করে, যারা প্রত্যেকে ছিলেন কুর’আনের হাফিজ।(৮)
শাইখুল হাদিস জাকারিয়া রহঃ এর কাছে যখন মাওলানা ইউসুফ সাহেব রহঃ এর মৃত্যুর সংবাদ আসে, সে মুহূর্তের ব্যাপারে তিনি লিখেন,
“মৃত্যুর জন্য তো কোন সময় অসময় নেই এবং এটা অসম্ভব কোন ব্যাপারও নয়।“(৯)
তাঁর মৃত্যুর খবর শুনার পরপরই জাকারিয়া (রহঃ) বাহ্যিক দুনিয়ার মানুষের ভিড়, কথাবার্তা উপেক্ষা করে ওঠে ওযূ করে নামাজের নিয়ত বাঁধেন।
তিনি আল্লাহর কাছে নিজেকে সপর্দ করে বিপদের সময়টা কীভাবে নিয়ামতে পরিণত করলেন দেখুন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই তিনি বলেন-
“এ সময়টা খুব গুরুত্বপুর্ণ ও মূল্যবান। খুব বরকতের সময়। এ সময়টাতে মন দুনিয়া ভুলে আখেরাতমুখী হয়, এ সময়ের তেলাওয়াত দা্মী, যিকর ও ধ্যানও দামী।“(১০)
প্রিয় পাঠক, কল্পনাও যেখানে হার মানে! আল্লাহর ফায়সালা সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়ার কোন স্থরে পৌঁছেছিলেন তাঁরা একবার ভাবতে পারেন?
“বিপদের তীরের লক্ষ্যস্থল হয়ে ‘উঃ’ শব্দ না করাই প্রকৃত সবর।“
“আরেফ অর্থাৎ খোদার তত্ত্বজ্ঞানী ব্যক্তি সর্বদা ‘রেযা’ অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলার বিধানের প্রতি সন্তুষ্টির গহ্বরে অবতরণ করে।“(১১)
বিপদ মোকাবেলা করার সবচেয়ে ইফেক্টিভ যে উপায় আমার কাছে মনে হয়, তা হল, 'Accept–then act' নীতি।
যা ঘটেছে তা এমন ভাবে বিনা বাধায় গ্রহণ করে নিন, যেন আপনি তা স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছেন। তারপর বিপদটাকে বন্ধু ভেবে কাজ করুন, শত্রু ভেবে নয়।
“If you take any action—leaving or changing your situation—drop the negativity first, if at all possible. Action arising out of insight into what is required is more effective than action arising out of negativity.”(১২)
এটুকু করা গেলে বিপদ মোকাবেলা করা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ। আপনার কাজ হলো, আপনার দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাওয়া। সমাধান করা গেলে গেল, না গেলে তাকদীরে যা আছে।
আমলঃ
বিপদকে নিয়ামতে পরিণত করা
সুলতান মুহাম্মদ গাযনাওয়ী রহিমাহুল্লাহ একবার তার গোলাম ‘আওয়ায’কে একটি আংটি দিয়ে বললেন, আংটিতে এমন কিছু লিখে দাও যা আমি সুখের সময় দেখলে চিন্তিত হয়ে পড়বো এবং দুঃখের সময় দেখলে আনন্দ অনুভব করবো।
বুদ্ধিবান সেই গোলাম আংটিতে লিখল, ‘এই সময়টাও অতিবাহিত হয়ে যাবে।‘
সময় তার আপন গতিতেই অতিবাহিত হয়ে যাবে, বিপদও কেটে যাবে, কেবল আমল রয়ে যাবে।
বিপদের কারণে অন্তরে যে অস্থিরতা বা পেরেশানির সৃষ্টি হয়, মানুষ দুনিয়ার কাছেই এর সমাধান চায়। অথচ যিনি এই কষ্ট নিমিষেই দূর করে দিতে পারেন, তাঁর কাছে যাওয়া হয় না, তাঁর কথা স্মরণে থাকে না; অন্তরে থাকে সেই হাহাকার–"দুনিয়া, দুনিয়া, দুনিয়া..."
আদীব হুজুর কত চমৎকারভাবে বলেছেন,
"আশ্চর্য! এই একটি ভুল জীবনে বারবার করি। 'মাটির পুতুল', আমরা আশা করি তার কাছে কিছু পাওয়ার, যার না আছে দেওয়ার ইচ্ছা, না আছে সাধ্য৷ আশা করি এবং নিরাশ হই। অথচ শান্তি ও সান্ত্বনার ডালি সাজিয়ে যিনি প্রতীক্ষায় আছেন আমার জন্য, কখন হাত পেতে দাঁড়াবো তাঁর দুয়ারে, তাঁর কথা আমরা ভুলে যাই।"(১৩)
বিপদ তখনই নিয়ামত, যখন তা আমাদের সাথে আমাদের রবের বন্ধন দৃঢ় করে; আর তখন শাস্তি, যখন তা আমাদেরকে রবের থেকে দূরে সরায়।
চলুন দেখে নেই কী করলে- বিপদগুলো স্রেফ বিপদ হয়ে আমাদের কিছুদিন কষ্টে রেখেই সময়ের স্রোতে বয়ে যাবে না, বরং তা বিদায় নেয়ার সময় আমাদের সাথে আমাদের মহান রবের বন্ধন আরও দৃঢ় করে দিয়ে যাবে।
ইস্তিরজা:
যেকোন বিপদে পতিত হলেই পড়ুন ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন’ অর্থাৎ ‘নিশ্চয় আমরা আলাহর জন্য এবং আমরা তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাব।‘(১৪)
বিশ্বাস ও ধৈর্য:
বিশ্বাস: কোন বিপদ ঘটে গেলে এই বিশ্বাস রাখুন যে, এটি আল্লাহর ফায়সালা ও নির্দেশমতোই ঘটেছে।
ধৈর্য: আল্লাহর থেকে প্রতিদানের আশায় ধৈর্য ধারণ করে সেই কষ্ট সহ্য করুন।
ঈমাম ইবনু কাসির (রহ.) মতে, এই দুটি কাজ করতে পারলে, আপনার কষ্টের ক্ষতিপূরণ স্বরুপ আল্লাহ অন্তরকে সৎপথে পরিচালিত করবেন, ঈমানকে সুদৃঢ় করবেন, যা কিছু হারিয়েছেন তাঁর পরিবর্তে সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ অথবা এরচেয়েও ভাল কিছু আপনাকে দান করবেন। (১৫)
দু'আঃ
ধৈর্য, প্রশান্তি ও নিরাপত্তা- এই শক্তিশালী বিষয়গুলো দুর্বল মানবচিত্ত থেকে উৎসারিত হয় না, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ামত হিসেবে আসে।(১৬) বিপদে পড়লে আমাদের সর্বপ্রথম কাজ হলো, কল্যাণের ফায়সালার জন্য দু’আ করে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া, ধৈর্য ও প্রশান্তি চাওয়া। যদি এ দুটো সম্বল থাকে, তবে তা-ই আপনার জন্য দৃঢ় ও অটল-অবিচল থাকার জন্য যথেষ্ট।(১৭)
আল্লাহ তা'আলার কাছে এমন দৃঢ়তা অর্জনের দু’আ করুন, যেন যত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় জীবনে বয়ে যাক না কেন, আকাশপানে তাকিয়ে বলতে পারেন–"যা-ই ঘটুক, তাতে কী এমন হবে? আমার দ্বারা আমার রব্ব অসন্তুষ্ট হবার মতো কিছু না হলেই হলো।"
তাওয়াক্কুলঃ
পরিস্থিতি যতোই কঠিন হোক, পুরো বিষয়টা আল্লাহর উপর ন্যস্ত করে নির্ভার হয়ে যান।(১৮) হৃদয় দিয়ে অনুভব করে এই দুটো আয়াত পড়ে দেখুন তা কীভাবে আপনার সমস্ত দুঃখ ও কঠিন বোঝাকে হালকা করে দেয়-
“যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।“(১৯)
যেসব বিষয় অনিশ্চিত, অজানা কিংবা আশঙ্কার, সেসব ব্যাপারে আমরা কেন তাঁর উপর ভরসা করতে পারি না যিনি আমাদের প্রতি আমাদের মায়ের চেয়েও দয়াশীল?
প্রিয় পাঠক, আসুন আল্লাহর কাছে দু'আ করে, ভিক্ষা চেয়ে একবার আল্লাহর উপর ভরসা করা শিখে ফেলি; তারপর দুনিয়ার কোনো বিপদকেই বিপদ মনে হবে না। ভীষণ বিপদেও প্রশান্তি ব্যতিত অস্বস্তিকর কোনো অনুভূতিই অন্তরে জায়গা পাবে না।
আল্লাহর রহমতঃ
যত বড় বিপদের কালো মেঘই জড়ো হোক না কেন; আপনি সেই মুহূর্তেও আল্লাহর রহমতের বারিধারা বর্ষণের আশা করুন, অন্বেষণ করুন।
মূলত, রবের সাথে সম্পর্ক যত গভীর হবে, রবের প্রতি সুধারণা যত দৃঢ় হবে, বিপদ তত তুচ্ছ মনে হবে, বিপদের সময়ও তত বেশি মানসিকভাবে শক্ত থাকতে পারবেন।
তাকদীরের প্রতি সন্তুষ্টি:
আমাদের অশান্তির সিংহ ভাগই বোধহয় এমন কিছু, যা আমরা পরিবর্তন করতে পারি না, বা করা সম্ভব নয়। এই অযথা অশান্তিকে প্রশ্রয় না দিয়ে আমাদের কাজ হলো, ইচ্ছেশক্তি প্রয়োগ করে যা আমরা , তা মেনে নিয়ে তাকদিরের উপর সন্তুষ্ট হওয়া।
যে বিষয়গুলো স্মরনে রাখা প্রয়োজন:
• জীবনের সমস্ত বিপদ-আপদই পূর্বনির্ধারিত।(২০)
• আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া কোন বিপদই আসে না।(২১)
• মুমিনের জীবনে যে বিপদই আসুক না কেন, তা তার জন্য কল্যাণকর।
• মুমিন জীবনের সর্বক্ষেত্রেই জান্নাতি-সুখ অনুভব করে, কারণ সে আল্লাহর প্রতিটি সিদ্ধান্তেই সন্তুষ্ট থাকে। এটা সেই জান্নাতি সুখ, ইবনে তাইমিয়া রহঃ দুনিয়ার যে জান্নাতের কথা বলেছেন। আর এই সুখের ভিত্তি হলো তাকদীরের উপর সন্তুষ্টি। যতক্ষণ কেউ আল্লাহর ফায়সালার উপর সন্তুষ্টির বিশ্বাস স্থাপন করবে না, ততক্ষণ সে প্রশান্তি লাভ করতে পারবে না।
যত সম্পদ, যশ-খ্যাতি-সম্পদ-প্রতিভা কারও থাকুক না কেন, সে চাইলেই তার সমস্ত ইচ্ছে পূরণ করতে পারবে না। মানুষকে দুর্বলভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় কোনো না কোনো পর্যায়ে এসে সে অসহায় হতে বাধ্য।
হাদিসে দুনিয়াকে মুমিনের জন্য কারাগার বলা হয়েছে, যা ইচ্ছে পূরণের কারখানা নয়।
মূলকথা, এই মূলনীতি বিশ্বাসে গেঁথে নিন- আল্লাহ যা চান তা-ই করেন। আমাদের উপর যে বিপদ এসেছে, তা না-আসার ছিল না। আর যে বিপদ আসেনি, তা আসার ছিল না। কলম শুকিয়ে গেছে। সুতরাং অভিযোগ ও হা-হুতাশ না করে আল্লাহ তা’আলার ফায়সালার সামনে আত্মসমর্পন করুন।
সর্বাবস্থায় তাকদীরের প্রতি সন্তুষ্ট থাকার সিদ্ধান্ত নিন। অজ্ঞাত শঙ্কা থেকে চিরমুক্তি মিলবে ইনশা আল্লাহ।(২২)
রবের ফায়সালার ব্যাপারে সুধারণা
আল্লাহ আপনার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন তা আপনার নিজের নির্বাচনের থেকে উত্তম।(২৩) প্রত্যেক কাজেই আল্লাহ তা'আলার হিকমাহ রয়েছে, যে ব্যাপারে আমরা অজ্ঞ। দৃশ্যমান জগতেই আমাদের জ্ঞান সীমাবদ্ধ।
এই ব্যাপারে মালিক ইবনে দিনার (রহঃ) এর একটি চমৎকার ঘটনা রয়েছে। আল্লাহ তাঁর মেয়েকে দুনিয়া থেকে নিয়ে, মূলত তাঁকে বাঁচিয়েছিলেন। তাঁর মেয়েকে হারানোর পর তিনি হয়েছিলেন পৃথিবীর বুকে হেঁটে যাওয়া শ্রেষ্ঠ মানুষদের একজন; পেয়েছিলেন এমন এক নির্মল জীবন, যে জীবনের প্রতি পদে পদে উন্নীত হয়েছিলেন এক অনন্য উচ্চতায়।
তাঁর দুনিয়াবী জীবনের এইযে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটি হারানো- তাঁর জন্য মূলত বিপদ ছিল, নাকি নিয়ামত?
আলেমগণ বলেন, অনেক সময় এমন হয়, আল্লাহ তা’আলা বাহ্যিকভাবে আপনাকে দিয়েছেন, কিন্তু বাস্তবে বঞ্চিত করেছেন। এমনও হতে পারে, বাহ্যিকভাবে বঞ্চিত করেছেন, বাস্তবে দান করেছেন। (২৪)
আমাদের জ্ঞান বড় সীমিত, যা দ্বারা আমরা অনেকসময় বুঝতে সক্ষম হই না- পার্থিব স্বচ্ছলতা-অস্বচ্ছলতা রবের সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির নির্ণায়ক হতে পারে না।
১০
চিরস্থায়ী বিপদ ও নিয়ামতঃ
আল্লাহ তা’আলা বান্দাকে দুনিয়ায় এমন কোন বিপদে ফেলেন না, যা সহ্য করার ক্ষমতা তার নেই।(২৫) আমাদেরকে বরং সেই মহা বিপদ নিয়ে গভীরভাবে ভাবা উচিত- যার সময়সীমা ১ দিন হলেও, তা ভোগ করার ক্ষমতা আমাদের নেই।
মৃত্যুটা খুব বড় বিপদ নয়, বরং ভয়াবহ বিপদ হলো সেটাই, যা মৃত্যুর পর ঘটবে।(২৬)
দুনিয়ার বিপদও ক্ষণস্থায়ী, নিয়ামতও ক্ষণস্থায়ী। দুনিয়াতে যত বড় বিপদই আসুক না কেন, তা একসময় কেটে যায়। কিন্তু আখেরাতের বিপদে? মৃত্যুর পরে যদি গন্তব্য হয় জাহান্নাম, সেই লেলিহান শিখার এক মুহূর্তের স্পর্শ সহ্য করার ক্ষমতা কি আছে আমাদের?
দুনিয়ার অনিশ্চিত কোনো বিপদের সামান্য আশঙ্কাও আমাদের কাবু করে ফেলে; অথচ আখেরাতের মতো একটি অনিবার্য বিষয় আমাদের মাঝে কোন প্রভাব ফেলে না!”(২৭)
এখন একটা চমৎকার বিষয় লক্ষ করুন- জাহান্নামের স্মরণ ও কল্পনাকে যদি কাজে লাগানো যায়, গুনাহ থেকে বিরত থাকা সহজ হবে।
আমার কথা হলো, জাহান্নামের মতো এক ভয়াবহ বিপদ থেকেও যদি ভাল কিছু বের করে আনা যায়; তাহলে আপনিই বলুন, দুনিয়ায় কি এমন কোন বিপদ থাকতে পারে, যে বিপদ থেকে ভাল কিছু বের করে আনা যাবে না!
১১
টাটকা গরম পানির মধ্যে আলু দিলে, তা ভেতর থেকে নরম হয়ে আসে, আবার ডিম দিলে তা ভেতর থেকে শক্ত হয়। একই গরম পানিতে কফির দানা দিলে, তা পানিটাকেই পরিবর্তন করে দেয়, কফিতে পরিণত করে।
প্রিয় পাঠক, আমরা ৩ জন ব্যক্তির কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম। এতটুক পর্যন্ত আসলে, আপনি বুঝে গেছেন, সেই তিন জনের মধ্য থেকে রহিম সাহেবই সফল ছিলেন। তিনি দুনিয়ার কল্যাণের জন্য যা করা প্রয়োজন তা করতে যেমন ভুল করেননি, সেই সাথে আখেরাতের পুঁজি অর্জন করতেও ভুলে যাননি। বিপদ ছিল তার জন্য নিয়ামত, দুনিয়া ও আখেরাত উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে।
রহিম সাহেবের মতো আমাদেরও দৃঢ় হওয়া উচিত- জমিনে যা-ই ঘটুক, ফায়সালা তো হয় আসমানে।
“যাদের ফয়সালা হয় আসমানে তারা তো জমিনের ভয়ে ভীত নয়।“ আল্লাহ তা'আলা তো এজন্যই আপনাকে বিপদে ফেলেন, যেন আপনার অন্তরে এই চেতনা জাগ্রত হয়–এই দুনিয়ার বেলা ফুরাবার আগে যেন আপনি রবের কাছে ফিরে আসেন। আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির চেয়ে শ্রেষ্ঠ নিয়ামত আর কি হতে পারে? (২৮)
যে বিপদ আপনার মাঝে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের আকাঙ্খার বীজ বপন করে দিয়ে যায়, তাঁর সাথে ভালোবাসার বন্ধন দৃঢ করতে সহযোগিতা করে, যে বিপদ তাওবার বদ্ধদুয়ার উন্মোচন করে; সেই বিপদের চেয়ে বড় নিয়ামত এই ক্ষণিকের জীবনে আর কী হতে পারে বলুন তো?
এমন বিপদে পড়লে তো আপনি বাস্তবে কিছুই হারাননি, বরং বাহ্যিক দৃষ্টিতে দুনিয়ার মাপকাঠিতে যত বড় ক্ষতিই হোক না কেন, আপনি সবকিছুই পেয়ে গেলেন।
যে বিষয় আপনার উদাসীনতা দূর করে আপনার অন্তরে এক তীব্র অনুভূতি জাগ্রত করে, আল্লাহর সন্তুষ্টির মতো সবচেয়ে বড় নিয়ামত অর্জনের জন্য, এরচেয়ে উত্তম কিছু আর কী হতে পারে?
আমাদেরকে বিপদকে নিয়ামত হিসেবে নেয়ার মাঝে এক বিরাট বাঁধা হল বস্তুজগতে অভ্যস্ততা। আমাদের চশমা (পড়ুন, দৃষ্টিভঙ্গি) বদলাতে হবে। পার্থিব লাভ-ক্ষতির চশমায় দুনিয়া দেখলে চলবে না। এটা আল্লাহর বিশেষ রহমত যে, তিনি আমাদের বেছে নিয়েছেন তাঁর দ্বীন মেনে চলার জন্য।
আমাদের চোখের সামনে থাকতে হবে সেই চশমা, যা দিয়ে সমস্ত কিছু আখিরাতের লাভ-ক্ষতির ফিল্টার হয়ে প্রবেশ করবে আমাদের অন্তরে। তবেই আমরা এই পার্থিব জীবনের বিপদগুলো নিয়ামতরূপে দেখতে পারবো।
বিপদ কীভাবে নিয়ামত হতে পারে কুর’আনে এর চমৎকার একটি উদাহরণঃ
অসহনীয় যন্ত্রণাও অনেক সময় লুকায়িত রহমত হয়ে থাকে।
মারইয়াম (আঃ) যন্ত্রণার কারণে মৃত্যু কামনা করেছিলেন।
"হায়! এর আগে যদি আমার মৃত্যু হতো।"(২৯) অথচ তাঁর গর্ভে ছিলেন একজন নবী যিনি মানুষের জন্য রহমত হয়ে এসেছেন।(৩০)
প্রিয় পাঠক, যদি কখনো মনে হয় যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল, গোটা জীবন তছনছ হয়ে গেল; যদি এমন পরিস্থিতে হারিয়ে আপনার মন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়; সবর করুন ও আল্লাহর ফায়সালার উপর সন্তুষ্ট হয়ে অন্তরের সেই ভাঙ্গা টুকরো গুলো নিয়েও স্বপ্ন দেখুন সেই জীবনের– যে জীবনে কোন কিছুই ভেঙ্গে যায় না, যে জীবনের প্রশান্তি অনন্তকালের, যে জীবনে বিপদের কোন ছিটেফোঁটা নেই, আছে কেবল নিয়ামতের অসীম বারিধারা।
প্রিয় দুটো লাইন দিয়ে শেষ করছি; যে দুটো লাইন পুরো লেখার মূল বক্তব্যের সাথে মিলে যায়-
“সে কি পেল, যে আল্লাহকে হারাল?
সে কি হারালো, যে আল্লাহকে পেল?”(৩১)
.
বিপদ যখন নিয়ামত
তাহসিন কামাল

❝ আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ লিখেছেন, একজন স্ত্রীর মধ্যে চারটি গুণ থাকা আবশ্যক। four must have qualities in a wife

 

❝ আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ লিখেছেন, একজন স্ত্রীর মধ্যে চারটি গুণ থাকা আবশ্যক।
.
প্রথম গুণ: চেহারায় লাজুকতা থাকা।
.
বলাবাহুল্য, যে নারীর চেহারায় লাজুকতা থাকবে, তার অন্তরেও নিশ্চিত লজ্জা থাকবে। প্রবাদে বলে, চেহারা মনের আয়না। চেহারায় তাই ফুটে ওঠে যা অন্তরে বিদ্যমান থাকে৷ চেহারায় লজ্জা থাকলে বোঝা যাবে তার অন্তরে লাজুকতা রয়েছে।
.
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) এর বিখ্যাত বাণী, 'পুরুষদের জন্য লজ্জা উত্তম আর নারীদের জন্য লজ্জা অতি উত্তম'।
.
দ্বিতীয় গুণ: মুখে মিষ্টতা থাকা।
.
অর্থাৎ তার কথা শুনলে মন জুড়িয়ে যাবে। স্বামীর সাথে কড়া কথা বলবে না। বাচ্চাদেরকে ধমক দেবে না। সবসময় শান্ত ও মিষ্টি সুরে কথা বলবে। আচরণ ও উচ্চারণে মাধুর্য থাকবে।
.
তৃতীয় গুণ : অন্তর সৎ হওয়া।
.
চতুর্থ গুণ : হাত সর্বদা কাজে ব্যস্ত থাকা।
.
যার মধ্যে এই গুণগুলো থাকবে, সে-ই উত্তম স্ত্রী। ❞
- শাইখ যুলফিকার আহমদ নকশবন্দী (হাফি.)
[ তাকওয়া ও আত্মশুদ্ধি, পৃ:৩৬; অনু: আবু জারীর আবদুল ওয়াদুদ, মাকতাবাতুল আযহার ]

ভুল

 

" আপনার মেয়ে বিয়ের পরে অন্য একটা ছেলের জন্য বিষ খেয়েছে, ওরকম মেয়ে তো থাকার থেকে না থাকাই ভালো! ভালোই হয়েছে মরে গেছে। এরকম মেয়েদের মরাই উচিৎ। খুব তো হুজুরগীরি দেখাতো অথচ তলে তলে এতো কিছু। আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম ঘুমটার নিচে যে খ্যামটা নাচে। কেন যে আম্মা রনি ভাইয়ের জন্য এরকম একটা দুশ্চরিত্রা ক্ষ্যাত মেয়ে পছন্দ করেছিলেন? রনি ভাইয়ের জীবনটা একেবারে নরক হয়ে গেলো। এতো সুন্দর স্মার্ট একটা ছেলে তাকে রেখে যদি বউ বাইরে গিয়ে আকাম-কুকাম করে তাহলে তার জীবনটা কি আর জীবন থাকে!" কথাগুলো বলে একটা তৃপ্তির ঢেকুর তুলল সুমুর বড় জা মালিহা। মনে মনে বেশ ভালো লাগছে তার। এই মেয়ে একেবারে শাশুড়ীর প্রাণ বায়ু ছিলো এবার দেখুক মালিহার থেকে ভালো আর কেউ নেই! ট্রেনে উঠে সুমুর বাবাকে দেখতে না দেখতেই এতো গুলো কথা বলে ফেলল সুমুর বড় জা।
সুমুর বাবা নাদিম শেখ নিরব দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করলেন সুমুর শশুড়বাড়ির প্রতিটি মানুষকে। সুমুর শাশুড়ীর মুখ বেশ গম্ভীর। সুমুর শশুর, শাশুড়ী, বড় জা আর বড় ভাসুর । নাদিম শেখ ভেবে পায়না মানুষ এতোটা কান্ডজ্ঞাণহীন হয় কিভাবে? সুমু তার একটা মেয়েই। সেই মেয়েটা কাল রাতে মারা গেছে সেই কষ্টটা সামলাতেই পাথর হয়ে গেছেন তিনি আর এই মানুষগুলো এসেছে তার নিত্য তৈরি হওয়া কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে। হায় মানুষ, কবে তোমরা আসল মানুষ হবে? কবে তোমাদের ছোটো ছোটো কথার আঘাতে অন্যের হ্রদয়ের ক্ষত বিক্ষত হওয়া দেখবে?
একবুক কষ্ট নিয়ে সুমুর মায়ের দিকে তাকালো নাদিম শেখ। তার কোলের উপরে চুপটি করে ঘুমিয়ে আছে সুমুর মা। কান্না করতে করতে চোখমুখ ফুলে গেছে একদম। কয়েকটা ঘন্টায় যেনো কতো বড় ঝড় বয়ে গেছে চেনা পরিচিত মুখটায়। তাও ভালো হয়েছে সুমুর মা ঘুমে নাহলে কথা গুলো শুনে আরো বেশি কষ্ট পেতো।
আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন নাদিম শেখ। হটাৎ খেয়াল হলো তিনি আজ জানালার পাশের সিটটাতে বসেছেন। অথচ বিয়ের এতোগুলা বছরে সবসময় সুমুর মা বাচ্চাদের মতো জেদ করে জানালার পাশের সিটটাতে বসেছে। এই দীর্ঘ ৩১ বছরে কখনোই এই নিয়মের ব্যাঘাত ঘটেনি। আর আজ? সুমুর মায়ের এতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার মাথায় নেই!
বিয়ের ৯ বছর পরে কোনো এক বৃষ্টিমুখর রাতে সুমুর অস্তিত্বের খবর জানতে পেরেছিলেন নাদিম শেখ । এতোটা খুশি তিনি জীবনে আর কবে হয়েছিলো মনে পড়ে না। তারপর আস্তে আস্তে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! যেদিন সুমু জন্ম নিলো। সেইদিনটা এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে নাদিম শেখের। তার মা ছোট্ট একটা পরী এনে দিলেন তার কোলে। পাখির ছানার মতো ছোটো ছোটো হাত পা, ছোট্ট একটা মাথা। নাদিম শেখের আনন্দের দিনের তো সেই শুরু।
সুমুর ছোটো বেলা থেকে শুরু করে বিয়ে দেয়ার আগে পর্যন্ত এই একুশ বছরের প্রতিটা প্রতিক্রিয়া মনে করার চেষ্টা করলো নাদিম শেখ। খুব বেশি চেষ্টাও করতে হলো না তাকে স্মৃতি যেনো হরহর করে জানান দিচ্ছে তাদের উপস্থিতি। তার মেয়ে ছোটো থেকেই বেশ বুদ্ধিমতি ছিলো কিন্তু মনটা ছিলো তুলোর মতো নরম। আজ সুমুর বড় জা যেভাবে কথাগুলো বললো সুমুকে কেউ ভয়াবহ কষ্ট দিলেও সে এরকম কথা কখনোই বলতো না। ছোটো থেকেই মেয়েটার ছিলো ইসলামের প্রতি বেশ ঝোক। নামাজ, রোজা, আমল আর উত্তম আখলাক এর সুন্দর একটা উদাহরণ ছিলো সুমু। এক ওয়াক্ত নামাজ বাদ দিয়ে পার পেতো না নাদিম শেখ অমনি সুমুর হাজারটা যুক্তির ফেরে বিপদে পড়ে যেতেন তিনি।
একদিন তার সুমুটা একটা পাখির ছানা নিয়ে বাসায় আসলো। প্রশ্ন করলাম, " এটা কোথা থেকে এনেছো মা?" সুমু কিছুটা অপরাধী ও উৎফুল্লের সাথে পাখি আনার ঘটনা বললো। ছাদে চিলেকোঠার অইখানে একটা পাখির বাসা ছিলো। সেখানে চারটা পাখির ছানা দেখেছিলো সুমু আর নিচের ফ্ল্যাটের মেয়ে রাহা। তারপর অনেক কসরত করে সেই পাখির বাসা নিচে নামিয়ে দুইটা ছানা রাহা আর দুইটা এনেছে সুমু। নাদিম শেখ সেদিন সুমুকে বলেছিলো," সুমু মা তোমাকে যদি আমাদের কাছে থেকে কেউ অন্যকোথাও নিয়ে যায় আমাদের অনেক কষ্ট হবে না ? তোমরা যে পাখির ছানা গুলো নিয়ে এসেছো এখন পাখির আব্বু আম্মু যখন বাসায় এসে দেখবে তাদের ছানা গুলো সেখানে নেই পাখিগুলো অনেক কষ্ট পাবে না? আর কোনো জীবজন্তকে কষ্ট দিলে আল্লাহ যে অনেক গুনাহ দিবে মা। "
আর বেশি কিছু বলার প্রয়োজন পড়েনি সেদিন সুমুকে। সুমু নাদিম শেখকে নিয়ে চিলেকোঠায় গিয়ে পাখির ছানা গুলো দিয়ে এসেছিলো। বাসায় এসেই সুমুর সেকি মন খারাপ! ওর মাকে বারবার জিজ্ঞাসা করছিলো কি করলে আল্লাহ ওকে গুনাহ দিবে না? কোন কাজগুলো করলে আল্লাহ ওকে মাফ করে দিবে? ওর বারবার প্রশ্নের কারণে ওর মা হয়তো বলেছিলো, " আল্লাহর কাছে তওবা করে অই কাজ আর না করলে আল্লাহ মাফ করে দিবেন। "
তারপর ওর দাদুর কাছে জিজ্ঞাসা করেছে তওবা কিভাবে করে? ও তওবা করবে। ওর দাদু সেভাবে বুঝতে না পারাতে আমার কাছে জিজ্ঞাসা করেছে, " তওবা কিভাবে করে বাবা ?"
আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম ওর প্রশ্নে। তওবা কিভাবে করে সেটা ও জেনে কি করবে? পরে বুঝতে পারলাম ঘটনা। ওকে বললাম, "অজু করে আসো তো সুমু মা।" সুমু অজু করে একদম জায়নামাজ হিজাব নিয়ে এসেছে দেখলাম। ওকে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে বললাম। নামাজ শেষ হলে বললাম, " এখন আল্লাহ তোমাকে যে নেয়ামত গুলো দিয়েছে সেগুলোর শুকরিয়া আদায় করো। আল্লাহর যে নাম গুলো তুমি মুখস্থ করেছো সেগুলো বলে আল্লাহকে ডাকো। আল্লাহকে বলো তুমি নিজের উপর জুলুম করেছো এখন তওবা করছো আর কখনো অই কাজ করবে না। তারপর আল্লাহর কাছে মাফ চাও।" তারপর আমার কথা মতো ও অনেকক্ষণ ধরে মোনাজাত করলো। কান্নাও করলো দেখলাম। এরপর বড় হয়েও এই অভ্যেসটা বজায় রেখেছিলো সুমু।
তারপর ঘুমাতে যাওয়ার আগে পরে যখন মনে পড়ে তখনই ওর মাকে আর আমাকে এসে প্রশ্ন করছে ওকে আল্লাহ মাফ করে দিয়েছে কিনা। যখন বলি আল্লাহ অনেক দয়ালু মা। আল্লাহ তোমাকে অবশ্যই মাফ করে দিবে। তখন খুব খুশি হয়ে যায় ওর মায়া মায়া মুখটা। এখনো চোখ বন্ধ করলে সব যেনো স্পষ্ট হয়ে উঠে নাদিম শেখের কাছে। দিনে কতোবার যে এই একই প্রশ্ন করতো আর যখন বলা হতো আল্লাহ অনেক দয়ালু তোমাকে অবশ্যই মাফ করে দিবে প্রতিবারই খুশিতে জ্বলজ্বল করতো সুমুর মুখটা।
সুমুর হয়েছিলো একদম ওর মায়ের মতো দেখতে। শুধুমাত্র ওর নাকটা হয়েছিলো নাদিম শেখের নাকের মতো বেশ তীক্ষ্ণ। নাক তীক্ষ্ণ হয় কিভাবে সেটা জানা নেই নাদিম শেখের তবে ওর নাক নিয়ে কথা উঠলে সবাই এটাই বলতো। তাই নাদিম শেখও সুমুর বেলায় ঠিক সেই উদাহরণটাই ভাবতো। আরেকটা জিনিসের সাথে সুমুর সাথে নাদিম শেখের বেশ মিল ছিলো সেটা হচ্ছে হাত পায়ের নখ। নাদিম শেখ মাঝে মাঝেই সুমুর সাথে বসে ওর হাত পায়ের নখের সাথে নিজের নখ মিলিয়ে দেখতো। একদম নাদিম শেখের নখের মতো নখ শুধু মাত্র আকারে হালকা ছোটো এই যা।
অনেক রাত হয়ে এসেছে ঠিক কয়টা বাজে তা ঠাওর করতে পারছে না নাদিম শেখ। ট্রেন চলছে একটা খটখট শব্দ করে। তাছাড়া আর তেমন কোনো শব্দ নেই আশেপাশে। সুমুর শশুরবাড়ির সবাই ঘুমে। তাদের কারো কোনো বিকার নেই এই মানুষদুটোর কষ্ট সম্পর্কে। তারা তাদের মতো অভিযোগ করেই যাচ্ছে। সুমুকে নিয়ে যে কথা গুলো বলছে ওরা যে অপবাদ গুলো দিচ্ছে তার মেয়েটার উপর অন্যসময় হলে হয়তো এদের মাথা ফাটিয়ে ফেলতো নাদিম শেখ। কিন্তু আজকে তার কিছুই বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। প্রবাদে আছে না,
" অল্প সুকে কাতর, অধিক সুকে পাথর "। পাথরই হয়ে গেছে নাদিম শেখ। অনেক চেষ্টা করেও একফোঁটা পানি আসছে না চোখে। কান্না আসলেই এক অদ্ভুত ব্যাপার। কখনো না চাইতেই চোখের কোনে উঁকি দেয় আর কখনো অনেক চেষ্টার পরেও দেখা মেলে না তাদের। নাদিম শেখ আল্লাহর প্রত্যেকটা ফয়সালাই হাসি মুখে মেনে নেয়। যুদ্ধ যতো কঠিন হোক আত্মবিশ্বাসের সাথে লড়ে যায় একজন লড়াকু সৈনিকের মতো। কিন্তু আজ যে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না নাদিম শেখ। সুমু কি শুধু তার মেয়ে সুমু তো তার বেঁচে থাকার অক্সিজেন। আজ সেই অক্সিজেন টাই নাকি নেই। নেই মানে কোথাও নেই। আর কখনোই নাদিম শেখের অক্সিজেন হবে না তার সুমু মা।
নাদিম শেখ অনেক চেষ্টা করেও তার অবচেতন মনকে বিশ্বাস করাতে পারছে না যে সুমু আত্মহত্যা করেছে তাও আবার পর পুরুষের জন্য। নাদিম শেখের কেনো বেশি কষ্ট হচ্ছে সুমুকে হারানোর জন্য নাকি সুমু সম্পর্কে এসব বাজে কথা শোনার জন্য? ঠিক বুঝতে পারছে না নাদিম শেখ। অন্তরটা যেনো ফালা হয়ে গেছে সুমু নেই খবরটা শোনার পরে থেকে। আর তাতে নুন আর মরিচের গুঁড়ো ছিটানোর জন্য তো কথার অভাব নেই।
কিছুদিন পর পর নাদিম শেখের কাছে রনি ফোন দিয়ে সুমুর নামে বিচার দিতো। সুমু নাকি ওর কোনো কথা শুনে না। তারপর সুমুর সাথে কথা বলার সময় ওর মা আর নাদিম শেখ সুমুকে খুব বোঝাতো জামাইয়ের কথার অবাধ্য না হতে। কিছুদিন পর পর জামাইয়ের বিচারে অতিষ্ঠ হয়ে গেছিলো নাদিম শেখ। লাস্টে সুমুকে বলেছে জামাইয়ের কথা না শুনলে তোর সাথে আমরা কেউ কথায় বলবো না। সুমু বরাবরই চুপ করে থাকে আর শুনে যায়। কোনটা যে ঠিক আর কোনটা বেঠিক সেটা বোঝার উপায় নেই। সুমুকে কোনো ফোন ইউজ করতে দিতো না রনি। আর রনি বেশ রাতে ফেরার কারণে শুক্রবার ছাড়া কথা বলতে পারতো না সুমুর সাথে। পঁচিশ দিন যাবত সুমুর সাথে কথা হয়না নাদিম শেখের। জামাইয়ের কথা শুনে না তাই একটু শাসন তো করতেই হয়। অবশ্য নাদিম শেখের কলিজাটা ছিন্নভিন্ন হয়ে যেতো সপ্তাহে একটা দিন সুমু মায়ের সাথে কথা না বলে।
নাদিম শেখের কাছে ব্যাপারটা কেমন রহস্যময় লাগছে। এতোক্ষণ মনের সাথে যতোই যুদ্ধ করুক তার ভেতরটা বারবার জানান দিচ্ছে সুমু কখনোই এরকম কাজ করতে পারে না। যে মেয়ে আল্লাহর ভয়ে একটা ছেলের দিকে পর্যন্ত তাকাতো না সেই মেয়ে মাত্র ১১ টা মাসে এতো পরিবর্তন হতে পারে না। যদিও কোনো ভাবেই ব্যাপারটা নাদিম শেখের বিশ্বাস হচ্ছে না কারণ সুমুর মা তো শোনার পরে থেকেই কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে তার মেয়ে এরকম না এটা বলে। ঠিক এই একই কথাও নাদিম শেখ নয় নাদিম শেখের পুরো অস্তিত্ব জানে। তার মেয়ে কোনোভাবেই আত্মহত্যা করতে পারে না। কিন্তু তাহলে কেনো তার জামাই এরকম বললো। শুধু তাই নয় ওর জামাই এটাও বললো যে শুধু মাত্র এই ঘটনাটার জন্যই নাদিম শেখের কাছে জানাতো যে সুমু কথা শুনে না। কারণ এটা বলতে নাকি তার রুচিতে বাধতো। ভাবতো সময় দিলে হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। নাদিম শেখ যেনো এক সাগরের অতলে হাড়িয়ে যাচ্ছে কাকে বিশ্বাস করবে সে এতোগুলো বছরের দেখা সুমুকে না তার তার যুক্তিসংগত ভাবে কথা বলা মেয়ের জামাইকে।
সারারাত কষ্টের সাগরে সাতরে সাতরে অবশেষে তবে সকাল হলো। অবশেষে তার সুমুকে সে দেখতে পাবে। ট্রেন থেকে নেমে সবাই পৌছালো সুমুদের বাসায়। তিনরুমের একটা আলিশান ফ্ল্যাটে থাকতো সুমু আর রনি। বিছানার একটা চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা তার মেয়েটা হ্যা অইতো তার মেয়ে। কষ্টগুলো যেনো দলা পাকিয়ে বুকের ভেতর একটা ধাক্কা দিয়ে উঠলো।
সুমুদের লাইব্রেরীর মতো রুমটাতে ঢুকলো নাদিম শেখ। তার মেয়েটার বই পড়ার প্রতি ছিলো অদম্য আগ্রহ। হঠাৎই চোখ পড়লো কালো চামড়ার মোটা ডাইরিটার উপর। নাদিম শেখ যদি খুব ভুল না করেন তাহলে এটা সুমুর ডাইরি। হ্যা এটা অবশ্যই সুমুর ডাইরি। ডাইরিটা নিয়ে নিলো নাদিম সাহেব।
ফিরতি ট্রেনের পথ ধরেছে সবাই। আলাদা একটা কামরা বুক করা হয়েছে নাদিম শেখদের জন্য। সুমুর শশুড়বাড়ির কেউ এই কামরায় আসেনি। তাদের নাকি লাশের সাথে এক কামরায় যেতে ভয় লাগে। শুধু ভয় পান না এই দুটো মানুষ। যাদের নয়নের মণি আজ লাশ হয়ে গেছে। সুমুর মায়ের কান্নার আওয়াজে আর ট্রেনের খটখট শব্দে অদ্ভুত এক শব্দ তৈরি হয়েছে কামরার ভেতরে । মেয়েটার মাথা কোলে নিয়ে অনেকক্ষণ যাবত তাকিয়ে রইলো নিষ্পাপ মুখটার দিকে। আবারো খুব চেষ্টা করছে নাদিম শেখ একটু কান্না করতে। সুমুর মায়ের মতো কেদে একটু হালকা হতে। হঠাৎ করেই নাদিম শেখের মনে পড়লো ডাইরিটার কথা। পাশের ব্যাগটা থেকে ডাইরিটা হাতে নিলো।
প্রথম পেইজ উল্টাতেই চোখে পড়লো সুমুর হাতের ছোটো ছোটো লেখাগুলো। এটা ২০১৯ এর মে মাসের একটা দিন। যেদিন সুমুর পা কেটে গিয়েছিলো। সেটা লিখে রেখেছে সুমু। নাদিম শেখ মনে করার চেষ্টা করলো সুমুর বিয়ের ডেট। হ্যা ২০২০ এর ফেব্রুয়ারি মাসের ১৭ তারিখ বিয়ে হয়েছিলো সুমুর। পাতা উল্টে নাদিম শেখ চলে গেলো সেই ফেব্রুয়ারী মাসটাতে।
১১ ই ফেব্রুয়ারি,
" সেদিন যে ছেলেটা দেখতে এসেছিলো সেই ছেলের সাথে বিয়ে দিতে যেনো রাজি না হয় বাবা। ছেলেটাকে আমার মোটেও ভালো লাগে নি। দাড়ি তো নেই আর না আছে টাকনুর উপর প্যান্ট। আল্লাহ একটা দ্বীনদার জীবনসঙ্গী দিও আমাকে। রাব্বানা হাবলানা,,,,,,"
১৪ ফেব্রুয়ারি,
"বাবা কিভাবে যেনো রাজি হয়ে গেলো। মাকে বললাম ছেলেটা তো দ্বীনদার না মা। মা বললো সমস্যা কি বিয়ের পরে বানিয়ে নিবি। মা বাবা দুজনেই মুটামুটি ইসলাম মেনে চলে। তাদের কাছে আমি এরকমটা একদমই আশা করিনি। আল্লাহ হেদায়েত না দিলে কিভাবে মানুষ দ্বীনের পথে আসবে? আমার বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত হলেও বাবা বুঝবে। "
১৭ ই ফেব্রুয়ারি,
"আজ আমার বিয়ে। বিয়ে নিয়ে কতো কতো স্বপ্ন দেখেছি, কতো ভাবনা সেগুলো আর তেমন একটা কাজ করছে না আজ। কিভাবে কাজ করবে স্বপ্নের মানুষটার সাথে যে বাস্তব মানুষটার কোনই মিল নেই। তাছাড়া কিভাবে একজন মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকবো আমি এটাও ভাবনার ব্যাপার। বাবা শেষ পর্যন্ত আর বুঝেনি। আমিও পারলাম না এতোদিনের ইচ্ছেটা প্রকাশ করতে। বাবা মা যা করবে আমার ভালোর জন্যই নিশ্চয়ই এই ভেবে চুপচাপ মেনে নিলাম সব। কেনো যে টাকাওয়ালা ছেলের জন্য আমাদের বাবারা দ্বীনদার ছেলেদের রিজেক্ট করে। "
লিখাটুকু পড়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো নাদিম শেখ। সুমু রাজি ছিলো না বিয়েতে। তিনি কিভাবে এতোবড় একটা ভুল করলেন? দোষ তো তারই ছেলেদের অবস্থা দেখে তিনি যেনো পাগলই হয়ে গেছিলেন।
৭ ই মার্চ,
" আল্লাহগো তুমি জানো কি চলছে আমার ভেতর। মানুষটা নামাজ ও পড়ে না। শুধু জুমাবারে মসজিদে যায়। আমিতো এরকম ছেলে চাইনি আল্লাহ। "
১০ ই আগস্ট,
" এই নিয়ে তিনবার উনি আমার গায়ে হাত তুলেছে। কি করবো আমি? পর্দা যে আমার জন্য ফরজ কি করে আমি তোমার অবাধ্য হয়ে ওনার কথা শুনি? ওনার ফ্রেন্ডদের সামনে বোরকা পড়ে গিয়েছি বলে ওনার নাকি সব প্রেস্টিজ লো করে দিয়েছি আমি। "
১৬ অক্টোবর,
" আমি আল্লাহর উপর ভরসা করে দুনিয়ার সব শখ আহ্লাদ ছেড়ে দিলাম। আমার আর প্রয়োজন নেই অন্যকারো ভালোবাসার। আমি আর কষ্ট পাবো না। ভেংগেও পড়বো না। যতো মারধর করে করুক আমি কোনোভাবেই বেপর্দা হয়ে কারো সামনে যাবো না।"
ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন নাদিম শেখ। তার ছোট্ট একটা ভুলের জন্য এতোটা কষ্ট পেয়েছে তার সুমু। অথচ এই নিষ্পাপ মেয়েটাকে নিয়ে এরকম একটা ঘটনা তৈরি করেছে ছি!
যে মেয়েটাকে ফুলের টোকা লাগতে দেননি এতোগুলা বছর সেই মেয়েটাকে এতোটা অত্যাচার করেছে পাষন্ডটা।
আপনা আপনি ধৈয্য হাড়িয়ে ডাইরিটার শেষ লিখাটায় চলে গেলেন নাদিম শেখ।
২৮ ই ডিসেম্বর
" এতো কিছুর মাঝেও আল্লাহ আমার জন্য একটা স্বস্তির খবর পাঠালো। আলহামদুলিল্লাহ আমি কনসিভ করেছি। এইতো আমার বেচে থাকতে আর কি লাগে। এইতো অনেক প্রশান্তি আমার!"
৬ ই জানুয়ারি, ২০২১
" আল্লাহগো আমার বাবুটার কিছু হতে দিও না। আমি অনেক দূরে চলে যাবো তবুও বাবুটার যেনো কিছু না হয়। আজকে অনেক মেরেছে আমাকে। বাচ্চাটা এবরশন করাতে বলে। বয়স হয়ে গেছে ৩২ এর উপরে এখনো নাকি বাবা হওয়ার বয়স হয়নি। থ্রেট দিয়েছে এবরশন না করালে আমাকে বিষ খায়িয়ে মেরে ফেলবে। আমি বাবার কাছে চলে যাবো। যদিও বাবা মার কাছে আমার নামে উল্টো পাল্টা বলেছে বলুক। অবশ্যই বাবা মা আমাকে বুঝবে। আমার সোনাটার তো কোনো দোষ নেই ওকে পৃথিবীর আলো দেখানোর পথে বাধা হয়ে দাড়াবো না আমি। সুস্থ একটা পরিবেশ পাবে আমার সোনাটা। এরকম অসুস্থ পরিবেশে না থাকাই ভালো আমার বাবুর। কোন সন্তান মেনে নিতে পারবে যে তার বাবা চরিত্রহীন! আল্লাহগো বাবার সাথে কথা বলার ব্যাবস্থা করে দাও। আমি আর পারছি না এই অসুস্থ পরিবেশে থাকতে। যখন তখন আমার পেটে লাত্থি দিতে পারে। আমার বাবুটা যে তাহলে আর পৃথিবীর আলো দেখবে না।
ট্রেন চলছে নিস্তব্ধ রাতের অন্ধকার চিড়ে। তার মাঝে ডুকরে কেঁদে উঠছে এক বুড়ো। সে তার জীবনের অনেক বড় একটা ভুল বুঝতে পেরেছে কিন্তু সময় হাড়িয়ে। আকাশের দিকে তাকিয়ে বুড়োটা চিল্লিয়ে বলে উঠলো, " আল্লাহগো সারাজীবন নিজেকে খুব দ্বীনদার মনে হতো। নামাজ, রোজা, নফল আমল, সুন্নাত ইবাদাত কতো ইবাদতই না করেছি। আজ সেসব তুচ্ছ মনে হচ্ছে আল্লাহ। আমিতো তোমাকে সত্যি ভালো বাসতে পারনি আল্লাহ। যদি পারতাম তাহলে তোমার উপর ভরসা করে মেয়েটাকে একটা দ্বীনদার পাত্রের হাতে তুলে দিতে পারতাম। আমার একটা ভুলের জন্য আমার মেয়েটার জীবন যে নরক হয়ে গিয়েছিলো আল্লাহ ভুলের মাসুল ও আমার সুমু মা দিলো। আজ পৃথিবীর প্রত্যাকটা বাবাকে বলতে ইচ্ছে করছে আপনারা নিজেদের ঈমানের পরিক্ষা এই যায়গাটাতে এসে দিন। আপনার মেয়েটাকে কম আয়ের হলেও একটা দ্বীনদার পাত্রের হাতে তুলে দিন। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। নাহলে আমার মতো হ্যা আমার মতো অনেক পরে এসে বুঝতে পারবেন। আপনাদের সুমুরা সবাই হয়তো আমার সুমুর মতো মারা যাবে না তবে যতোদিন বেচে থাকবে এক নরকের মতো জীবন যাপন করতে হবে।
আচ্ছা সুমু মার মৃত্যুর জন্য কে বেশি অপরাধী ? রনি নাকি নাদিম শেখ নিজে!
ভুল
Taiyeeba Tania