চতুরঙ্গ -(১৪তম পর্ব)
লেখক:নিথর শ্রাবণ শিহাব
[ বিঃদ্রঃ বাকী পর্বের লিঙ্ক এই পর্বের শেষে দেওয়া আছে ]
সোজা ছাদের দিকে উঠে যেতে লাগল।
মাঝামাঝি উচ্চতায় এসে গাড়িসহ চার মূর্তিই
উল্টে গেল। চাকা চলে গেল ছাদের দিকে, সুইমিং পুল
চলে এল মাথার ওপর দিকে। গাড়িটা নিয়ে নামল
ছাদের বোর্ডে। আমি তখন পাগলের মত নিঃশ্বাস
নিচ্ছি বাতাস পেয়ে। তার মাঝেই দেখলাম
সাদামূর্তি চারটা গাড়ির চারপাশে স্থির
হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গ্রীক পুরাণের যোদ্ধাদের মত
মূর্তি।
আমি আমার দুই পা নাড়াতে পারছি না।
রক্তে ভেসে যাচ্ছে। এর মাঝেই আবিষ্কার করলাম
আমি দরজা খুলে দাবার বোর্ডে নেমেছি। আমার দুই
পা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয়ে সাদা দাবার
ঘর ভেসে যাচ্ছে লাল হয়ে। অথচ আমি আমার দুই
পায়ে অদ্ভূত একটা শক্তি অনুভব করছি। নিজের
অজান্তেই মাথার ওপর দিকে তাকিয়ে দেখলাম হল
রুমের নানান জিনিস পত্র, সুইমিং পুলের পানি, নতুন
মূর্তি সব কিছু নড়ছে! যেন বৃষ্টির মত
নেমে আছড়ে পড়বে এই বোর্ডের ওপর। কিন্তু
আমি তাকানো মাত্রই সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যার
যার স্থানে বসে গেল! আমি বাদুরের মত ঝুলে আছি,
আমার গাড়িটাও। তার ভেতরে জয়নাবের লাশ।
আধখোলা চোখে ভাঙ্গা উইন্ডশীল্ড
দিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
মিষ্টি একটা হাসি ফুঁটে আছে ওর ঠোঁটের কোণায়।
সে রাতেই ছাদে চারটা নতুন সাদা মূর্তি যোগ হয়।
যেগুলোর কারিগর সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই।
মানুষের শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য স্রষ্টা অদ্ভুত সব
ব্যবস্থা করে রেখেছেন। কিন্তু সেই ইচ্ছা পুরণের
ব্যবস্থাটার মাঝে জয়নাবের সহযাত্রীও
পড়ে গিয়েছিল সেদিন।” শেষের কথাগুলো বিড়বিড়
করে আপন মনে বললেন। চোখে পানি জমে উঠেছে তাঁর।
“ মানে?” আমি বুঝতে পারলাম না।
বিচিত্র ভাবে হাসলেন, “ বুঝবেনা এখন। বয়স বাড়ুক
তোমার। একদিন বুঝে যাবে।” দেয়ালে ঝোলানো জয়নাব
আরার ছবিটার দিকে তাকালেন।
আমি বিভ্রান্তের মত তাকিয়ে রইলাম, “
আপনি আসলে সে রাতেই আবিষ্কার করেন
যে আপনি উল্টো হয়ে ছাদ থেকে ঝুলে থাকতে পারেন?
শুধু নিজের না, অনেক কিছুর গ্র্যাভিটির দিক
বদলে ফেলতেও পারেন- তাই না?”
ফিরে তাকালেন অবাক হয়ে ডাঃ এমরান।
আমি কি করবো বুঝতে পারলাম না। কিন্তু বিস্ময়ের
সাথে দেখলাম ডাঃ এমরানের অশ্রু
জমে ওঠা দু’চোখে অদ্ভুত একটা হাসি ফুটে উঠেছে।
রহস্যময় একটা হাসি।“ জাহিদকে আমি আপনার
সাথে দাবা খেলতে দেখেছি স্যার। ছাদে,
উল্টো ভাবে......। আপনি বোধ হয় বুঝতে পারছেন
আমি কাকে বোঝাচ্ছি। আমার খুব কাছের বন্ধু।
হাসপাতালে আপনারা মিট করেছিলেন......”
“ জানি। তোরাব চাচার নাতি সে-ই।
হাসপাতালে ওকে পেয়ে খুব অবাক হয়েছিলাম।
ভেবেছিলাম আমাকে চিনবে ও। কিন্তু একেবারেই
চিনতে পারেনি। একটা নতুন ফ্যামিলিতে অ্যাডপ্ট
করা হয়েছিল বোধ হয় ওকে। কারণ আমার
জানা মতে অনাথ ছিল ছেলেটা।” কপাল ডললেন
চিন্তিতভাবে।
“ আপনাকে চিনতে পারেনি ঠিক আছে। কিন্তু ছাদ
থেকে ঝুলে আপনার সাথে দাবা খেলার
ব্যাপারটা বুঝলাম না। এই অস্বাভাবিক ব্যাপারটার
সাথে জাহিদ জড়াচ্ছে কি করে?
আমি যতটা ওকে চিনি- ও অনেক সহজ সরল একটা ছেলে।
পড়া শোনা আর কবিতা লেখা-
লেখি ছাড়া জীবনে ওকে আর অন্য কিছু করতে দেখিনি।
দাবা খেলা তো দূরের কথা।” ভ্রুঁ কুটি করলাম।
ডাঃ এমরান দু’হাতের আঙ্গুলগুলো এক
সাথে লাগিয়ে মোচার মত করে সেটার
দিকে তাকালেন, “তুমি তো বুঝেই গেছো আমি ছোট
খাটো একটা হ্মমতা হঠাৎ করেই পেয়ে গেছি।
এটা হ্মমতা না অভিশাপ সেটাই জানি না......” একটু
থামলেন। আমি কিছু বললাম না, কেবল
কৌতূহলি চোখে তাকিয়ে রইলাম।
“ হ্মমতাটা পাওয়ার অল্প কিছুদিন পরের কথা,
তখনো আমি হ্মমতার ব্যাপারটা ঠিক বিশ্বাস
করতে পারিনি। হঠাৎ করেই একদিন লহ্ম্য করলাম –
আমার ব্যক্তিগত ডায়েরীতে ভিন্ন ভিন্ন হাতের
লেখা।
আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি ঘটনাটা কি ঘটেছে।
আমি ভেবেছি কেউ আমার অগোচরে আমার
ডায়েরী খুলে তাতে হাবি জাবি সব অংক, ফিজিক্স
এসব লিখে ভরিয়ে দিয়েছে। যেগুলোর
আগা মাথা আমি কিছুই বুঝি না। কিন্তু কার এমন
ঠেকা পড়ল যে আমার ডায়েরীতে এসে অংক
নিয়ে গবেষণা পত্র লেখতে যাবে? খুব অবাক হলাম।
এরকম ঘটনা পর পর তিন দিন ঘটল।” দাঁড়িতে আঙ্গুল
চালালেন অস্বস্তি নিয়ে।“ বুঝলাম না! আপনার
ডায়েরীতে অন্য মানুষ লিখবে কেন?” আমি অবাক গলায়
বললাম।
“ কথাটা সেখানেই। আমার খঁটকা লাগল। এই বিশাল
বাড়িতে কাজের মানুষ তিন জন ছাড়া আর কেউ
থাকে না। আর তারাও সবাই বিশ্বস্ত। বহু দিন
ধরে এখানে আছে। আমার অজান্তে এসে আমার
ডায়েরীতে লিখবে- এটা পুরোপুরি অসম্ভব! তার ওপর
ডায়েরীটা থাকে আমার বালিশের নিচে। কেউ
এসে যে ওটা নেবে- সেটাও সম্ভব না। তাই পরের
রেতে জেগে রইলাম সারা রাত। সারা রাতে কেউ এল
না আমার ঘরে। শেষ রাতে তন্দ্রা মত এসে গিয়েছিল।
অল্প সময়ের জন্য চোখ বন্ধ করেছিলাম। হঠাৎ চোখ
মেলতেই দেখলাম বিছানার ওপর
ডায়েরীটা পড়ে আছে, খোলা- তাতে নতুন নতুন সব
ফিজিক্সের আংক!
( চলবে )
লেখক:নিথর শ্রাবণ শিহাব
[ বিঃদ্রঃ বাকী পর্বের লিঙ্ক এই পর্বের শেষে দেওয়া আছে ]
সোজা ছাদের দিকে উঠে যেতে লাগল।
মাঝামাঝি উচ্চতায় এসে গাড়িসহ চার মূর্তিই
উল্টে গেল। চাকা চলে গেল ছাদের দিকে, সুইমিং পুল
চলে এল মাথার ওপর দিকে। গাড়িটা নিয়ে নামল
ছাদের বোর্ডে। আমি তখন পাগলের মত নিঃশ্বাস
নিচ্ছি বাতাস পেয়ে। তার মাঝেই দেখলাম
সাদামূর্তি চারটা গাড়ির চারপাশে স্থির
হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গ্রীক পুরাণের যোদ্ধাদের মত
মূর্তি।
আমি আমার দুই পা নাড়াতে পারছি না।
রক্তে ভেসে যাচ্ছে। এর মাঝেই আবিষ্কার করলাম
আমি দরজা খুলে দাবার বোর্ডে নেমেছি। আমার দুই
পা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয়ে সাদা দাবার
ঘর ভেসে যাচ্ছে লাল হয়ে। অথচ আমি আমার দুই
পায়ে অদ্ভূত একটা শক্তি অনুভব করছি। নিজের
অজান্তেই মাথার ওপর দিকে তাকিয়ে দেখলাম হল
রুমের নানান জিনিস পত্র, সুইমিং পুলের পানি, নতুন
মূর্তি সব কিছু নড়ছে! যেন বৃষ্টির মত
নেমে আছড়ে পড়বে এই বোর্ডের ওপর। কিন্তু
আমি তাকানো মাত্রই সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যার
যার স্থানে বসে গেল! আমি বাদুরের মত ঝুলে আছি,
আমার গাড়িটাও। তার ভেতরে জয়নাবের লাশ।
আধখোলা চোখে ভাঙ্গা উইন্ডশীল্ড
দিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
মিষ্টি একটা হাসি ফুঁটে আছে ওর ঠোঁটের কোণায়।
সে রাতেই ছাদে চারটা নতুন সাদা মূর্তি যোগ হয়।
যেগুলোর কারিগর সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই।
মানুষের শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য স্রষ্টা অদ্ভুত সব
ব্যবস্থা করে রেখেছেন। কিন্তু সেই ইচ্ছা পুরণের
ব্যবস্থাটার মাঝে জয়নাবের সহযাত্রীও
পড়ে গিয়েছিল সেদিন।” শেষের কথাগুলো বিড়বিড়
করে আপন মনে বললেন। চোখে পানি জমে উঠেছে তাঁর।
“ মানে?” আমি বুঝতে পারলাম না।
বিচিত্র ভাবে হাসলেন, “ বুঝবেনা এখন। বয়স বাড়ুক
তোমার। একদিন বুঝে যাবে।” দেয়ালে ঝোলানো জয়নাব
আরার ছবিটার দিকে তাকালেন।
আমি বিভ্রান্তের মত তাকিয়ে রইলাম, “
আপনি আসলে সে রাতেই আবিষ্কার করেন
যে আপনি উল্টো হয়ে ছাদ থেকে ঝুলে থাকতে পারেন?
শুধু নিজের না, অনেক কিছুর গ্র্যাভিটির দিক
বদলে ফেলতেও পারেন- তাই না?”
ফিরে তাকালেন অবাক হয়ে ডাঃ এমরান।
আমি কি করবো বুঝতে পারলাম না। কিন্তু বিস্ময়ের
সাথে দেখলাম ডাঃ এমরানের অশ্রু
জমে ওঠা দু’চোখে অদ্ভুত একটা হাসি ফুটে উঠেছে।
রহস্যময় একটা হাসি।“ জাহিদকে আমি আপনার
সাথে দাবা খেলতে দেখেছি স্যার। ছাদে,
উল্টো ভাবে......। আপনি বোধ হয় বুঝতে পারছেন
আমি কাকে বোঝাচ্ছি। আমার খুব কাছের বন্ধু।
হাসপাতালে আপনারা মিট করেছিলেন......”
“ জানি। তোরাব চাচার নাতি সে-ই।
হাসপাতালে ওকে পেয়ে খুব অবাক হয়েছিলাম।
ভেবেছিলাম আমাকে চিনবে ও। কিন্তু একেবারেই
চিনতে পারেনি। একটা নতুন ফ্যামিলিতে অ্যাডপ্ট
করা হয়েছিল বোধ হয় ওকে। কারণ আমার
জানা মতে অনাথ ছিল ছেলেটা।” কপাল ডললেন
চিন্তিতভাবে।
“ আপনাকে চিনতে পারেনি ঠিক আছে। কিন্তু ছাদ
থেকে ঝুলে আপনার সাথে দাবা খেলার
ব্যাপারটা বুঝলাম না। এই অস্বাভাবিক ব্যাপারটার
সাথে জাহিদ জড়াচ্ছে কি করে?
আমি যতটা ওকে চিনি- ও অনেক সহজ সরল একটা ছেলে।
পড়া শোনা আর কবিতা লেখা-
লেখি ছাড়া জীবনে ওকে আর অন্য কিছু করতে দেখিনি।
দাবা খেলা তো দূরের কথা।” ভ্রুঁ কুটি করলাম।
ডাঃ এমরান দু’হাতের আঙ্গুলগুলো এক
সাথে লাগিয়ে মোচার মত করে সেটার
দিকে তাকালেন, “তুমি তো বুঝেই গেছো আমি ছোট
খাটো একটা হ্মমতা হঠাৎ করেই পেয়ে গেছি।
এটা হ্মমতা না অভিশাপ সেটাই জানি না......” একটু
থামলেন। আমি কিছু বললাম না, কেবল
কৌতূহলি চোখে তাকিয়ে রইলাম।
“ হ্মমতাটা পাওয়ার অল্প কিছুদিন পরের কথা,
তখনো আমি হ্মমতার ব্যাপারটা ঠিক বিশ্বাস
করতে পারিনি। হঠাৎ করেই একদিন লহ্ম্য করলাম –
আমার ব্যক্তিগত ডায়েরীতে ভিন্ন ভিন্ন হাতের
লেখা।
আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি ঘটনাটা কি ঘটেছে।
আমি ভেবেছি কেউ আমার অগোচরে আমার
ডায়েরী খুলে তাতে হাবি জাবি সব অংক, ফিজিক্স
এসব লিখে ভরিয়ে দিয়েছে। যেগুলোর
আগা মাথা আমি কিছুই বুঝি না। কিন্তু কার এমন
ঠেকা পড়ল যে আমার ডায়েরীতে এসে অংক
নিয়ে গবেষণা পত্র লেখতে যাবে? খুব অবাক হলাম।
এরকম ঘটনা পর পর তিন দিন ঘটল।” দাঁড়িতে আঙ্গুল
চালালেন অস্বস্তি নিয়ে।“ বুঝলাম না! আপনার
ডায়েরীতে অন্য মানুষ লিখবে কেন?” আমি অবাক গলায়
বললাম।
“ কথাটা সেখানেই। আমার খঁটকা লাগল। এই বিশাল
বাড়িতে কাজের মানুষ তিন জন ছাড়া আর কেউ
থাকে না। আর তারাও সবাই বিশ্বস্ত। বহু দিন
ধরে এখানে আছে। আমার অজান্তে এসে আমার
ডায়েরীতে লিখবে- এটা পুরোপুরি অসম্ভব! তার ওপর
ডায়েরীটা থাকে আমার বালিশের নিচে। কেউ
এসে যে ওটা নেবে- সেটাও সম্ভব না। তাই পরের
রেতে জেগে রইলাম সারা রাত। সারা রাতে কেউ এল
না আমার ঘরে। শেষ রাতে তন্দ্রা মত এসে গিয়েছিল।
অল্প সময়ের জন্য চোখ বন্ধ করেছিলাম। হঠাৎ চোখ
মেলতেই দেখলাম বিছানার ওপর
ডায়েরীটা পড়ে আছে, খোলা- তাতে নতুন নতুন সব
ফিজিক্সের আংক!
( চলবে )