[১]
জিন বেশিরভাগ
সময় মেয়েদের উপর আছর করে মূলত শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য। তদ্রুপ কিছু
কিছু ছেলের সাথেও নারী জিন শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য আছর করে।
এর সত্যতার প্রমাণ হলো প্রায় ৮/৯ মাস পূর্বে আমার এক বন্ধুবর আমাকে বললো,
-- মাহমুদ, আমাকে একটা হেল্প করবি?
-- কি হেল্প?
--
আসলে গতকাল এক মহিলা আমার কাছে বার্তা পাঠিয়েছে এই যে "" আসসালামুআলাইকুম
হুজুর, আমি একজন বিবাহিত মহিলা বিগত কয়েক মাস ধরে কোন এক জিন আমার ওপর
আছর করেছে। সে প্রায় সময়ই আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে। ঘুমন্ত
অবস্থায় অথবা জাগ্রত অবস্থায় সে আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে। আমি তার
অত্যাচারে একদম অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। এখন হুজুরের কাছে আমার আকুল আবেদন আমি
কিভাবে এর থেকে পরিত্রান পেতে পারি আমাকে একটু বলবেন""। এ বার্তাটি আমার
কাছে সে পাঠায় । এখন তুই বল আমি এই মহিলাকে কি জবাব দিব কিভাবে সে এই
সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবে?
-- আসলে দেখ আমি এই ব্যাপারে অনেকটাই অজ্ঞ! সুতরাং তুই অমুক হুজুরের কাছে গিয়ে এ ব্যাপারে আলাপ কর।
আমি
তার কথা শুনে অনেকটা সন্দিহানে পড়ে গিয়েছিলাম যার কারণে তাকে অন্য এক
হুজুরের সাথে আলাপ করতে বললাম।এবং এই ব্যাপারটা নিয়ে অনেকটা চিন্তিত হয়ে
পড়লাম। তারপর এটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে এই আয়াতটি সামনে আসে। সূরা
আর রহমানের ৫৬ নং আয়াত, "সেখানে রয়েছে আনতনয়না রমণীগণ, যাদেরকে তাদের
পূর্বে কোন মানুষ বা জিন স্পর্শ করেনি"’এর ব্যাখ্যায় ইবনু জাওজী বলেন, এই
আয়াতে দলীল রয়েছে যে, জিনের সাথে মানুষের এবং মানুষের সাথে জিনের শারীরিক
মিলন সম্ভব।
এ আয়াতের
ব্যাখ্যা জানার পর আমার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে গেল মানুষের সাথে জিনের শারীরিক
সম্পর্ক সম্ভব। এবং ওই মহিলার সাথে যা যা ঘটেছে তাও সত্য।
.
বলে
রাখি আমার যে বন্ধু সে একজন হাফেজ, এবং সে এখন দাওরা হাদিস পড়ছে তার
পাশাপাশি একটি মসজিদের মোয়াজ্জিন। সে বিবাহিত তার একটি ছেলেও আছে।ইমাম
মোয়াজ্জেন এর কাছে আশেপাশে মানুষ অনেকেই অনেক কিছু জানতে চায়। সেই সুবাদে
উক্ত মহিলা তার কাছে এই বার্তা পাঠায়।পরবর্তিতে ঐ মহিলার সাথে কি হয়েছে
তা আমি জানিনা।এই ব্যাপারে আমার বন্ধুর সাথে কোন ধরণের কথা হয়নি।
[২]
জিনেরা
বেশিরভাগ মেয়েদের হায়েযের সময় আছর করে যখন তারা নাপাকি অবস্থায় থাকে এবং
আল্লাহ তায়ালার জিকির থেকে গাফেল থাকে। কেননা হায়েযের সময়ে অনেক মেয়েরাই
একাকী থাকে। এমনকি হায়েযের কাপড় এখানে
সেখানে ফালায়,মাথায় কাপড় দেয় না, একাকী অন্ধকারে ঘুমায়,বন জঙ্গল দিয়ে চলাচল করে। এজন্যই উক্ত সময়ে তাদের উপরে বেশি আছর করে।
আবার
অনেক মেয়েরাই আছে যারা বাথরুমে ঢোকার দোয়া পড়ে না। এমনকি পুরো উলঙ্গ
হয়ে গোসল করে। এর ফলে দুষ্টু জিনেরা তার গোপন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দেখে লালচে
হয়ে যায়।এবং তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য পায়তারা করে।
মেয়েদের উপর জিনের আছর করার প্রধান কারণ হচ্ছে এই দুটি। তাই আপুরা এই দুটি ব্যাপারে সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।
.
আর
ছেলেদের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় দুষ্টু female জিনেরা আছর করে তাদের
নাপাকি অবস্থায়। অর্থাৎ অনেক ছেলেরাই আছে, যারা স্ত্রী সহবাস করে সাথে
সাথে গোসল না করে অন্যান্য দিনের ন্যায় দুপুরবেলা গোসল করে। অথচ তার জন্য
উচিত ছিল সাথে সাথে গোসল করে নেওয়া । কিন্তু সে এটা না করে সারাদিন নাপাক
অবস্থায় এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ায়। এই অবস্থায় নারী জিনেরা তাদের উপর আছর
করে।এমনকি তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক ও করতে চায়।
আবার
অনেকেই আছে যারা অবিবাহিত। তাদের স্বপ্নদোষ হওয়ার পর সাথে সাথে গোসল
করার কথা ছিল। কিন্তু তা না করে নাপাক অবস্থায় এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ায়
এমতাবস্থায় তাদের উপর জিনেরা আছর করে। আবার অনেকে আছে যেখানে সেখানে
প্রস্রাব করে । যার কারণে ছেলেদের গোপনাঙ্গ তাদের চোখে দৃশ্যমান হয় । আর
তারা তখন তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার নিমিত্তে তাদের উপর আছর করে।
অতএব ছেলেদের উপর আছর করার প্রধান কারণগুলো মধ্য থেকে এগুলো কয়েকটি। তাই
আমার ভাইদের কাছে আকুল আবেদন এগুলোর প্রতি সতর্ক হওয়া চাই।
[৩]
শারীরিক
সম্পর্কের উদ্দেশ্যে জিনের আছর আপনার যে ক্ষতি করতে পারে তা হল আপনি যদি
অবিবাহিত হন তাহলে সে নানান উপায়ে আপনার বিয়েতে বাধা দিতে থাকবে। কেননা
সে চায়না আপনার অন্য যায়গায় বিয়ে হয়ে যাক আর আপনি অন্য কারো সাথে
শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে যান। কেননা সে আপনার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতে
করতে আপনার প্রতি আশেক হয়ে যায়। এজন্য এই জিনের আছরের কারণে অনেক
মেয়েদের বিয়ে হতে বিলম্ব হয়ে থাকে।
আবার
আপনি যদি বিবাহিত হন তাহলে সব সময় আপনার সংসারের মাঝে ঝগড়া লাগানোর
চেষ্টা করে। সব সময় আপনার হাজব্যান্ড থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করবে।
আপনাদের উভয়ের মাঝে সব সময় ধন্দ লাগিয়ে রাখবে। এই কারণে অনেক সংসারে
ঝগড়া লেগেই থাকে।
.
শারীরিক
সম্পর্ক করলে বুঝার উপায় হলো,কোন জিন যদি কোন মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক
করার উদ্দ্যেশেই আছড় করে। তখন মেয়েটির গায়ের বিভিন্ন জায়গায় দাগ পরিলক্ষিত
হয়।
এই দাগ মাঝে মাঝেই মেয়েটির গায়ে দেখা যায়।
শারীরিক সম্পর্ক না হলেও এরকম দাগ দেখা যাবে,লাল দাগ, খামচি বা কামড়ের দাগ
ইত্যাদি।বিশেষ করে গলার নিচের দিকে।
কোন
জিন যদি কোন মেয়েকে পছন্দ করে তখন ওই জিন সবসময় ওই মেয়ের আশেপাশে থাকে।
যখন ঘুমায় তখন তার কাছে আসে, অতঃপর ঘুমের মধ্যেই শারীরিক সম্পর্ক
করে।মেয়েটি তখন বাস্তবতা অনুভব করতে পারে, কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না।
আর
ছেলেদের ক্ষেত্রে জেগে থাকা অবস্থায় ( হস্তমৈথুনের মাধ্যমে) এসময় জিন
রোগির হাত,মস্তিষ্ক পজেস করে ইন্দ্রিয়তৃপ্তি লাভ করে।এটা তখনই বোঝা যাবে
যখন কেউ আগে থেকে গুপ্ত অভ্যাসে লিপ্ত ছিল না কিন্তু ধীরে ধীরে যৌন চাহিদা
বৃদ্ধির ফলে হস্তমৈথুনে লিপ্ত হয়ে যায়। অথবা আগে থেকেই গুপ্ত অভ্যাসে
লিপ্ত ছিল কিন্তু তা অল্প পরিমানে,হঠাৎ করে যদি মাত্রাতিরিক্ত ভাবে যৌন
চাহিদা বেড়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে আশিক জিনের কাজ এটা।
আবার
কেউ কেউ বলেন জিন মানুষের সঙ্গে মিলনের সময় যৌনাঙ্গে গরম বাতাসের মত
অনুভূত হয়। এমনকি জিনরা দীর্ঘক্ষণ সঙ্গম করে। তাই এই সঙ্গমের পরে মেয়ে
ছেলেরা খুব দুর্বল হয়ে যায় । এবং দিন দিন শরীর শুকিয়ে যায়। এবং শরীরের
বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা অনুভূত হয়।
[৪]
এই
সমস্যাগুলো থেকে বেঁচে থাকতে প্রতিনিয়ত আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা।
প্রতিদিন কোরআন তিলাওয়াত করা, সাওয়াবের কাজ করা, রোজা রাখা, আল্লাহর
জিকিরে নিজেকে ব্যস্ত রাখা এবং কথা বলার সময়ে জিহ্বাকে সংযত রাখা,
প্রতিনিয়ত আল্লাহর সাহায্য চাওয়া এবং বেশি বেশি তাওবা ইস্তেগফার করা।
সুরা বাকারা, নূর, ইউসুফ তিলাওয়াত করা। তিলাওয়াত করতে না পারলে অডিও শোনা।
যতই
ভয় দেখাক, ঝামেলা করুক, বিভিন্ন কথাবার্তা বলে একজনের প্রতি আরেকজনকে
বিষিয়ে তোলার চেষ্টা করুক, জিনকে কোন প্রকার পাত্তা না দেয়া। এসব জিনরা চায়
আমরা তাদের গুরুত্ব দেই। তারা নিজেদেরকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে ভালোবাসে,
এজন্য বিভিন্ন মিথ্যা কিচ্ছা কাহিনী বর্ণনা করে।
সবচেয়ে
জরুরী বিষয়! দোয়া করা। দোয়া মুমিনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। দিনের অধিকাংশ সময়ে
দোয়া করা। দোয়ার জন্য আলাদা সময় বের করে নেয়া। দুই হাত তুলে রবের নিকট
দোয়া করা, যেন আল্লাহ এই সমস্যা পুরোপুরি ভালো করে দেন এবং তাদেরকে যেন
আল্লাহর উপর ভরসা করে ধৈর্য্য ধরার তৌফিক দেন।
--------------------------
লেখনীতে - Mahmud Bin Noor
No comments:
Post a Comment