ক্রীড়ারঙ্গ, পর্ব-৩
[৫]
অনেকের কাছেই হয়তো এতক্ষণের আলোচনা শুধুমাত্র সমস্যা চিহ্নিতকরণ ঘরানার মনে হতে পারে। কিংবা প্রচলিত কোন সামাজিকভাবে গৃহীত বিষয়ের প্রতি অপ্রয়োজনীয় অঙ্গুলি উত্তোলনের মতও ঠেকতে পারে। তবে বিষয়টি মোটেই তেমনটা নয়।
একজন মুসলিম হিসেবে, আমাদের যে কোন সমস্যার দিকে চোখ দিতে হয় ইসলামের চশমা দিয়ে। কোন সমস্যার সমাধানও খুঁজতে হয় ইসলামের চশমা দিয়েই। এটা জরুরী নয়, যে যা আমার কাছে ভালো লাগছে, তাতে ইসলামের কোন সমস্যা থাকবেনা, কিংবা যা আমার কাছে খারাপ লাগছে, ইসলামের তাতেও খারাপ লাগতে হবে। বরং, আমাদের বিষয়টা দেখতে হবে এইভাবে, যে আমাদের সৃষ্টিকর্তা, যিনি সত্য দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা) সহ একের পর এক তাঁর রাসূল (দ্বীনের বাণী বহনকারী) পাঠিয়েছেন, তিনি আসলে কোন কিছুকে কিভাবে দেখছেন। তাঁর পাঠানো জীবন ব্যবস্থায় বিষয়টি কিভাবে পরিগণিত হচ্ছে।
তবে প্রশ্ন হল কেন আমরা তাঁর পাঠানো জীবন ব্যবস্থা দিয়েই সবকিছু বিচার করতে যাব? এই মৌলিক প্রশ্নের জবাব আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’লা) নিজেই দিচ্ছেন,
إن الدين عند الله الإسلام
“নিশ্চিতভাবেই আল্লাহর কাছে (গ্রহণযোগ্য) একমাত্র জীবনব্যবস্থা হল ইসলাম” [৩ : ১৯]
আল্লাহ অন্যত্র বলেছেন,
ومن يبتغ غير الإسلام دينا فلن يقبل منه وهو في الآخرة من الخاسرين
“এবং যে-ই ইসলাম ছাড়া অন্য কোন জীবন ব্যবস্থা তালাশ করবে, কোনদিনই তা তার কাছ থেকে গ্রহণ করা হবেনা এবং সে আখিরাতে থাকবে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে” [৩ : ৮৫]
ইসলামের এই আদ-দ্বীন [الدين] বিষয়টা ইসলামকে সকল ধর্ম থেকে পৃথক করে ফেলেছে। الدين শব্দের অর্থ হল জীবন ব্যবস্থা বা ওয়ে অফ লাইফ। আমরা প্রত্যেকেই কোন না কোন ওয়ে অফ লাইফ বা জীবন ব্যবস্থায় জীবন যাপন করছি। আমরা যে যেইভাবে দিনানিপাত করছি, সেটাই আমাদের জীবন ব্যবস্থা। সেটাই আমাদের দ্বীন। আমরা হয়তো কেউ ধর্মনিরপেক্ষ দ্বীন অনুসরণ করছি, কেউ বা ২৪ ঘন্টা খেটে খাওয়া দ্বীন অনুসরণ করছি, কেউ আয়েশি দ্বীন অনুসরণ করছি, কেউ বা কোন সুপারস্টার কিংবা আইকনের লাইফ স্টাইল বা দ্বীন অনুসরণ করছি। কিন্তু এমন কোন দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থাই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য যে হবেনা, আল্লাহ তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন আগেই। তাই অতি অবশ্যই আমাদের জীবনের যে কোন সমস্যা বা সমাধান ঠিক তেমনি ভাবেই ইসলামি জীবন ব্যবস্থায় খুঁজতে হবে, যেমনটা আমরা অন্যান্য জীবন ব্যবস্থায় খুঁজে থাকি। আর যখনই কোন সমস্যার সমাধানে ইসলামের দিকে ফেরা হয়, তখন বেশ অবাক হতে হয়। অত্যন্ত সাবলীল আর যৌক্তিকভাবেই সমস্ত কিছুর ব্যাখ্যা পাওয়া যায় কুরআন ও সুন্নাহর উপর ভিত্তি করে।
একজন মুসলিম হিসেবে, আমাদের অবশ্যই অবশ্যই আমাদের সময়ের ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্ক হতে হবে। সময়ের গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে ও সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এই অনুধাবন কেবল কেতাবি অনুধাবন হলে চলবেনা এ পরীক্ষায় খাতার সেলাইএর ফাঁকে আটকে থাকে। সময় যে দ্রুত বয়ে যাচ্ছে আর আমরা বেখবর হয়ে আছি, সে বিষয়ে আল্লাহ বলেন,
والعصر. إن الإنسان لفي خسر
“শপথ সময়ের। মানুষ নিশ্চয়ই ক্ষতিগ্রস্ত” [১০৩ : ১-২]
আল্লাহর ‘মানুষ নিশ্চয়ই ক্ষতিগ্রস্ত’ বলার আগে সময়ের নামে শপথ নেয়ার অনেক বড় একটি প্রজ্ঞা রয়েছে যা থেকে আমরা সময়ের ব্যাপারে সাবধান হতে পারি। আরবী عصر শব্দ দিয়ে শেষ বিকালকেও বোঝানো হয় যার মাধ্যমে সূর্যের আলো প্রায় শেষ হয়ে আসছে। আমাদের বুঝতে হবে, আমাদের সময় অতি অল্প। এই অল্প সময়ে অবশ্যই আমরা আনপ্রোডাক্টিভ খাতে খরচ করতে চাইবোনা। পারবোনা। খেলাধুলা ‘দেখে দেখে’ যদি ঘন্টার পর ঘন্টা শুধু সোফা কিংবা বিছানাতেই কাটিয়ে দিই, তবে এই অল্প সময়ের সীমাহীন অপব্যবহার করা হয়।
প্রজ্ঞাময় আল্লাহ এই একই সূরার আয়াতে উল্লেখ করেছেন কারা ক্ষতিগ্রস্ত নয়।
إلا الذين آمنوا وعملوا الصالحات وتواصوا بالحق وتواصوا بالصبر
“তারা ব্যতীত, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং একে অপরকে হক্ক এর দিকে ডাকে ও একে অপরকে সবরের দিকে ডাকে” [১০৩ : ৩]
অর্থাৎ যারা ক্ষতিগ্রস্ত নয়, তারা হল মুসলিম এবং তারা নিজেরা সৎকর্ম করে এবং অন্যকেও সত্য ও ধৈর্যের পথে আহ্বান করে।
একজন মুসলিম অবশ্যই তার প্রতিটা প্রোডাকটিভ মুহূর্ত কাটাবে সৎকর্ম করে ও মানুষকে সত্যের দিকে আহ্বান করে। জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ সেরে সে অবশ্যই এমন কিছুতে নিজেকে মশগুল করবে, যা তাকে আখিরাতে ফল দেবে। হতে পারে তা ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা করা, ইসলামি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেকচার শোনা, ইসলামি বিভিন্ন আলোচনায় অংশ নেয়া কিংবা পরিবারের সাথে ইসলাম নিয়ে কথা বলা। এছাড়াও অনলাইনে আর অফলাইনে রয়েছে হাজারো কমিউনিটি, যেখানে যুক্ত হয়ে নিয়মিতই ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ ও আলোচনার সুযোগ রয়েছে। ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে যে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে, যে এই সময়কে সৎ কর্ম আর সঠিক দাওয়াতের মাধ্যমে খাটাবে তার জন্য রয়েছে উত্তর প্রতিদান, সেই প্রতিজ্ঞা দাবিদার হতে একজন এগিয়ে যাবে বহু কদম।
শুধু তাই নয়, যেই অবসর সময়টাতে আমরা খেলা দর্শন করছি, সেই সময়টাতে নিজেই কেন নেমে পড়ছিনা খেলায়? অন্তত কিছু সময় শরীরকে সুস্থ রাখতে ব্যয় করা হবে। খেলা করা, খেলা দেখার চাইতে প্রোডাকটিভ নয় কি? আর এইভাবেই একজন মুসলিম তার অবশ্য পালনীয় ইবাদতের বাইরে অবসর সময়টা প্রোডাক্টিভভাবেই খরচ করবে। অহেতুক টিভি স্ক্রীনের সামনে জমিয়ে ফেলবেনা।
সময়ের অপব্যবহারের সাথে সাথে আল্লাহর চোখে আরো কিছু অপরাধ রয়েছে যার সাথে আমরা অনায়াসেই এইসব এন্টারটেইনমেন্ট গেম শো উপভোগ করতে গিয়ে জড়িয়ে যাচ্ছি। যেমন, আল্লাহ বলেছেন নারী-পুরষ উভয়েই যেন তাদের দৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখে সকল প্রকার নিষিদ্ধ বস্তু আর বিষয় থেকে। আল্লাহ বলেন,
قل للمؤمنين يغضوا من أبصارهم ويحفظوا فروجهم
“মু’মিন (বিশ্বাসী) পুরুষদের বলে দাও তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত করে রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানসমূহের হেফাজত করে” [২৪ : ৩০]
وقل للمؤمنات يغضضن من أبصارهن ويحفظن فروجهن
“মু’মিন (বিশ্বাসী) মহিলাদের বলে দাও তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানগুলোর হেফাজত করে” [২৪ : ৩১]
অথচ এই সব খেলাধুলায় আমরা কিছুক্ষণ পরপরই গ্যালারিতে উপস্থিত নানা রঙে রঞ্জিত আর নানা ঢঙে সজ্জিত রমনী কিংবা পুরুষদের দেখি যারা হয়তো হাজারে একজন দুইজন পর্দা করে থাকেন। তারচাইতেও মারাত্মক হল এই খেলার ফাঁকেই সেই সব চিয়ারলীডারদের দেখা, যাদের বস্ত্রসীমা অত্যন্ত সীমিত। তাই খেলা দেখার নাম করে আমাদের ইচ্ছার বিপরীতেই কিংবা মনের অজান্তেই আমরা নিষিদ্ধ দর্শনের অপরাধে অপরাধী হচ্ছি, যার ফলাফল সম্পর্কে আমরা হয়তো খুব অল্পই অবগত।
একই কথা এইসব খেলার ফাঁকে প্রচারিত বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এমন বিজ্ঞাপন হাতে গোনা, যেই বিজ্ঞাপনে বেপর্দা অবস্থায় নর-নারীর প্রদর্শন হয়না। অথচ আমরা কোনরকম ভ্রূক্ষেপ ব্যতিত এইসব বিজ্ঞাপন দেখছি, যা আমাদের প্রতি মুহূর্তেই কাঁধের ফিরিশতাদের লিখে রাখার প্রয়াস যোগাচ্ছে। আমরা যারা এইসব বিষয়কে ছোটখাট বলে জ্ঞান করছি, বা তেমন কিছু না, বা তেমন কিছু হবেনা ভাবছি, তাদের আল্লাহ একটা ভালো সতর্ক বাণী দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,
ومن يعمل مثقال ذرة شرّا يره
“এবং যে-ই অণু পরিমাণ অসৎ কাজ করবে, তা সে দেখবে (হাশরের ময়দানে)” [৯৯:৮]
এছাড়াও এইসব খেলাধুলা যে অন্ধ জাতিয়তাবাদের পালে হাওয়া দিচ্ছে, সেই জাতিয়তাবাদকেও ইসলামে হারাম করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مَنْ قُتِلَ تَحْتَ رَايَةٍ عُمِّيَّةٍ يَدْعُو عَصَبِيَّةً أَوْ يَنْصُرُ عَصَبِيَّةً فَقِتْلَةٌ جَاهِلِيَّةٌ
“যে-ই কোন অন্ধ পতাকাতলে নিহত হল, নিজের জাতির প্রতি স্লোগান দিল (অন্ধভাবে) অথবা নিজের জাতিকে সাহায্য করলো (অন্ধভাবে), সে জাহিলিয়াতের (অজ্ঞতার) মৃত্যুবরণ করলো।” [সহীহ মুসলিম : কিতাবুল ইমারাহ, হাদীস নাম্বার ১৮৫০]
অন্যত্র তিনি বলেন,
مَنْ قَاتَلَ تَحْتَ رَايَةٍ عُمِّيَّةٍ يُقَاتِلُ عَصَبِيَّةً وَيَغْضَبُ لِعَصَبِيَّةٍ فَقِتْلَتُهُ جَاهِلِيَّةٌ
“যে-ই অন্ধ পতাকাতলে যুদ্ধ করে, যুদ্ধ করে জাতিয়তাবাদের আর রাগান্বিত হয় জাতিয়তাবাদের জন্য, সে জাহিলিয়াতের মৃত্যুবরণ করলো।” [সুনান আন নাসা’ই : হাদীস নাম্বার ৪১১৫, হাদীসের গ্রেড : সহীহ (দারুসসালাম)]
লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, যে ব্যক্তি শুধুমাত্র তার জাতিকে অন্ধভাবে সমর্থন করে রাগান্বিত হয়, তার অবস্থানকেও সমালোচিত করা হয়েছে ইসলামে। কারণ ইসলাম হল সার্বজনীন। কোন নির্দিষ্ট গোত্রের মাঝে ভালোবাসা, প্রীতি আর সহমর্মিতা সীমাবদ্ধ রাখার শিক্ষা ইসলাম দেয়না। বরং আসমানের নিচে যেখানেই মানুষ আছে, তারাই আমাদের সহনিবাসী। তাদের সকলের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা থাকতেই হবে। শুধুমাত্র সীমান্ত দিয়ে আলাদা করে কোন নির্দিষ্ট ভৌগলিক পরিমন্ডলে ভালোবাসা, সহমর্মিতা আর আবেগ বিনিয়োগের উৎসাহ ইসলাম কখনই দেয়না। অথচ খেলাধুলার এন্টারটেইনমেন্টের এই বিবর্তন আমাদের মনে ধীরে ধীরে এই নোংরা জাতিয়তাবাদের বীজ বপন করে দিচ্ছে, যার ব্যাপারে খুব অল্পই সতর্ক আমরা।
[৬]
আমরা যারা নিজেদের মুসলিম দাবি করি, তাদের কিছু অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য আল্লাহ নির্ধারিত করে দিয়েছেন। যে দায়িত্ব পালনে রয়েছে জব এপ্রেইসাল অর্থাৎ পুরষ্কার। আর দায়িত্বে অবহেলায় রয়েছে জব পানিশমেন্ট অর্থাৎ শাস্তি। যে শাস্তি এড়ানো কঠিন।
মুসলিম পরিবারের প্রধান যারা রয়েছেন, তারা তাদের স্ত্রী সন্তানদের ওপর দায়িত্বশীল। তার অনুগতদের ইসলাম চর্চার দিকে লক্ষ্য রাখা এবং নিরীক্ষা করা তার উপর একটি অবশ্য পালনীয় বা ফরজ দায়িত্ব। তিনি যদি এই দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে বেখেয়াল থাকেন, তাহলে তা অবশ্যই তার জন্য ভালো ফল বয়ে আনবেনা, হোক তা জাগতিক জীবনে কিংবা মৃত্যুপরবর্তী আখিরাতের জীবনে।
আমাদের পরিবারের সদস্যদের এমন এন্টারটেইনমেন্টের নাম করে আমরা যদি অশ্লীলতা, নগ্নতা, জাতিয়তাবাদ, সময়ের অপচয় ইত্যাদি ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক বিষয়ের দিকে ঠেলে দিই, তাহলে আমরাই শেষ বিচারের দিন আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে অসমর্থ হব। দোষ এসে পড়বে আমাদের ঘাড়েই। রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই ধরণের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সতর্ক করে দিয়েছেন। তিনি সেই সব দায়িত্বপ্রাপ্তদের ‘দাইয়্যুস’ [دَّيُّوثُ] বলে নামকরণ করেছেন, যারা এই দায়িত্বপালনে ব্যর্থ। তিনি বলেন,
ثَلاَثَةٌ لاَ يَنْظُرُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْعَاقُّ لِوَالِدَيْهِ وَالْمَرْأَةُ الْمُتَرَجِّلَةُ وَالدَّيُّوثُ
“তিনজন আছেন যাদের দিকে আল্লাহ আযযা ওয়া জাল কিয়ামাতের দিন নজর দেবেন না। যে পিতামাতার অবাধ্য, ও যে নারী বেশভূষায় পুরুষের অনুকরণ করে, এবং দাইয়্যুস ব্যক্তি।” [সূনান আন নাসা’ই : হাদীস নাম্বার ২৫৬২, হাদিসের গ্রেড : হাসান (দারুসসালাম), সহীহ (মুহাদ্দীস ইমাম নাসিরুদ্দীন আল আলবানী)]
সৌদি আরবের স্থায়ী ফাতওয়া কমিটির প্যানেল অফ স্কলাররা ‘দাইয়্যুস’ শব্দের ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে,
“দাইয়্যুস শব্দটি এমন ব্যক্তিকে নির্দেশ করে, যে তার অধিকারভুক্ত কোন নারীকেই, হোক তা তার স্ত্রী, কন্যা, বোন এবং অন্যদের জিনা করা থেকে বিরত রাখেনা, তা সরাসরি জিনাই হোক, আর এমন সব কাজ হোক যা জিনার দিকে নিয়ে যায়… আর অন্যান্য কাজ যা ফিতনা আর অপরাধ সৃষ্টি করতে পারে।”
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি তার অধিকারভুক্তদের ব্যাভিচার থেকে শুরু করে অন্যান্য ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ করতে কোন প্রকার বাধা প্রদান করেনা, অথবা ক্ষেত্রবিশেষে এইসব অপরাধ করতে সুযোগ করে দেয়, সে ব্যক্তিই দাইয়্যুস।
ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বালের (রাহিমাহুল্লাহ) বর্ণনাকৃত অপর একটি মজবুত সনদের হাদীসে ‘আল্লাহ নজর দেবেন না’ এর সাথে এসেছে ‘দাইয়্যুস ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা’ ।
তাই মুসলিম পরিবারের কর্তাব্যক্তি হিসেবে আমরা যারা দায়িত্ব পালন করছি, আমাদের এই বিষয়ে হেলাফেলা করা একেবারেই অজ্ঞতা আর ভয়ংকর। আমাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে আমরা হাজার সৎ আমল ও কর্ম করার ফলেও জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারি। তাই এন্টারটেইনমেন্টের নামে আমাদের টিভি রুমে যা চলছে বা চলার অনুমতি আমরা প্রদান করছি, তা কতটুকু আমাদের নিজেদের আখিরাতের জন্য ফলপ্রসু হচ্ছে, তা নতুন করে ভেবে দেখা প্রয়োজন।
আল্লাহ আমাদের সকলকে সিরাতুল মুস্তাকিমের ওপর অটল রাখুন।
BY
Nazmus Sakib
No comments:
Post a Comment