এ পোষ্টে দোয়া কবুল রিলেটেড ,আলেমদের কিছু টিপস দেয়া হয়েছে
মাশা আল্লাহ্ ,ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ছে।
দ্বীনের পথে চেলার চেষ্টা।আসলে জেনারেল লাইন থেকে উঠে এসে দাঈ হওয়ার চেষ্টাও বেশ ভালো মাশা আল্লাহ্।
কোনক্রমে এক ইন্টারপড়ুয়া মেয়ে তাকে তার অগোচরেই পছন্দ করে বসে।
মেয়েটির সাথে ছেলেটির কখনো দেখা সাক্ষাৎ বা কথাবার্তা হয়নি ।কোন এক মাধ্যম মারফত তাকে জানতে পারে।
যথারীতি সে তার মাকে জানায় ,
মা তো রেগে অন্যরকম অবস্থা।
অথচ মাশা আল্লাহ্ ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে মাশা আল্লাহ,বাড়িও আছে ,আর্থিক আয়ের উৎসও আছে।কিন্তু ছেলে স্টুডেন্ট তাই।
এ ধরনের অসংখ্য উদাহরণ আছে বোধহয়(আল্লাহু আলাম)।
এমন পরিস্থিতিতে বাবা-মার বোঝা উচিত ।
কিন্তু যাদের ক্ষেত্রে এমন ঘটে তাদের অবস্থান কি হওয়া প্রয়োজন।
প্রধান কথা হলো,তাওয়াক্কুল।
আল্লাহ্ সুবহানাওয়াতায়ালার কাছে চাওয়া এবং দৃঢ় বিশ্বাস রেখেই চাওয়া।
দ্বিতীয়ত পিতা মাতার সাথে এমন অবস্থায়ও ভালো আচরণ করা।পারলে আগের চেয়ে ভালো আচরণ করা।
বাবা-মা যদি অধিক দ্বীনদার কারো সাথে নিকাহ করাতে চাই তাহলে তাকে নিকাহ করে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ ইনশা আল্লাহ।কারণ দ্বীনদারিতাই মূখ্য।
কিন্তু যদি তার চেয়ে বাহ্যত কম দ্বীনদার বা সাধারণ সো কল্ড মুসলিমকে দিতে চাই তখন কি করা যায়?
এর উত্তর হলো ,আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালার উপর তাওয়াক্কুল রেখে ,দোয়া করে যাওয়া।
দোয়া করার সময় আমরা ভুল করি যে ,দোয়া কবুল হবে কিনা বা ইত্যাদি ইত্যাদি সন্দেহ বা কম বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করা যা এক্কেবারে অনুচিত।
উচিত হলো,দৃঢ় বিশ্বাস রেখে করা।আর মা-বাবার জন্যও দোয়া করা।
যতই নির্যাতন করুক জাহেল কারো সাথে বা আক্বীদাগত ভ্রষ্ট কারো সাথে নিকাহ দেয়ার ততই ধৈর্য্য ধরুন।মনে রাখবেন আল্লাহ্ সুবহানাওয়াতায়ালা যাকে ভালোবাসেন তাকে পরীক্ষাও করেন।
এটা রহমত হিসেবে নিন ,ইবাদতের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন।
আচরণে সীমালঙ্ঘন করবেন না।
কোন আলেমকে দিয়ে প্রস্তাব পাঠান সম্ভব হলে যাকে মেয়ের অভিভাবক পছন্দ করে।
একমাত্র সেক্ষেত্রেই বাবা-মার আনুগত্য থেকে বেরিয়ে যান যদি তারা জোর করে বেনামাজি ,শিয়া ,মাজারপূজারি,সেক্যুলার,হারাম চাকুরিজীবি ,সুদি ব্যাংকে চাকুরিজীবি হয় । তাহলে তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে নিকাহ করে বাসায় বলুন নয়তো ধৈর্য্য ধরুন।
তবে যাকে নিকাহ করবেন তার ব্যাপারে আল্লাহ্ সুবহানাওয়াতায়ালার কাছে বেশি বেশি সাহায্য চান,ইস্তেখারা করুন।সৌন্দর্য্যের চেয়ে দ্বীনদারিতাকে বেশি গুরুত্ব দিন।
তবে তবুও বাবা-মার সাথে আচরণে সংযত হোন।
যথাসম্ভব রাজি করানোর চেষ্টা করুন।
উল্লেখ্য এ লেখা গুলো যারা রূপ দেখেই দিওয়ানা হয়ে নিকাহ করতে চায় তাদের জন্য নয় ইংশা আল্লাহ।শুধু তাদের জন্য যাদের দ্বীনদারিতার জন্য ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়ার মতো পরীক্ষায় নিপতিত হতে হয়।
আল্লাহ্ উনাদের উত্তম জাজা দিক।আমিন।
দুয়া কবুল রিলেটেডঃ
প্রশ্ন: দোয়া কবুল হওয়ার শর্তগুলো কি কি; যাতে দোয়াটি আল্লাহ্র কাছে কবুল হয়?
উত্তর
আলহামদু লিল্লাহ।.
আলহামদুলিল্লাহ।
দোয়া কবুল হওয়ার বেশকিছু শর্ত রয়েছে। যেমন:
১. আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে না ডাকা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনে আব্বাস(রাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেন: “যখন প্রার্থনা করবে তখন শুধু আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করবে এবং যখন সাহায্য চাইবে তখন শুধু আল্লাহ্র কাছে সাহায্য চাইবে।”[সুনানে তিরমিযি (২৫১৬), আলবানী‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]
এটাই হচ্ছে আল্লাহ্র বাণীর মর্মার্থ “আর নিশ্চয় মসজিদসমূহ আল্লাহ্রই জন্য। কাজেই তোমরা আল্লাহ্র সাথে অন্য কাউকে ডেকো না।”[সূরা জিন্, আয়াত: ১৮] দোয়ার শর্তগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। এ শর্ত পূরণ না হলে কোন দোয়া কবুল হবে না, কোন আমল গৃহীত হবে না। অনেক মানুষ রয়েছে যারা নিজেদের মাঝে ও আল্লাহ্র মাঝে মৃতব্যক্তিদেরকে মাধ্যম বানিয়ে তাদেরকে ডাকে। তাদের ধারণা যেহেতু তারা পাপী ও গুনাহগার, আল্লাহ্র কাছে তাদের কোন মর্যাদা নেই; তাই এসব নেককার লোকেরা তাদেরকে আল্লাহ্র নৈকট্য হাছিল করিয়ে দিবে এবং তাদের মাঝে ও আল্লাহ্র মাঝে মধ্যস্থতা করবে। এ বিশ্বাসের কারণে তারা এদের মধ্যস্থতা ধরে এবং আল্লাহ্র পরিবর্তে এ মৃতব্যক্তিদেরকে ডাকে। অথচ আল্লাহ্ বলেছেন: “আর আমার বান্দারা যখন আপনাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে(তখন আপনি বলে দিন) নিশ্চয় আমি নিকটবর্তী। দোয়াকারী যখন আমাকে ডাকে তখন আমি ডাকে সাড়া দিই।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬]
২. শরিয়ত অনুমোদিত কোন একটি মাধ্যম দিয়ে আল্লাহ্ তাআলার কাছে ওসিলা দেয়া।(*সংযুক্তিঃওলি আউলিয়া বা মাজার বা তাবীজ বা ভন্ড কিছু উসীলা করা যায়েজ।বিস্তারিত লেখা শেষে।)
৩. দোয়ার ফলাফল প্রাপ্তিতে তাড়াহুড়া না করা। তাড়াহুড়া করা দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে বড় বাধা। হাদিসে এসেছে, “তোমাদের কারো দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাড়াহুড়া করে বলে যে: ‘আমি দোয়া করেছি; কিন্তু, আমার দোয়া কবুল হয়নি”[সহিহ বুখারী (৬৩৪০) ও সহিহ মুসলিম(২৭৩৫)]
সহিহ মুসলিমে (২৭৩৬) আরও এসেছে- “বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা কোন পাপ নিয়ে কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া করে। বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা ফলাফল প্রাপ্তিতে তাড়াহুড়া না করে। জিজ্ঞেস করা হল: ইয়া রাসূলুল্লাহ! তাড়াহুড়া বলতে কী বুঝাচ্ছেন? তিনি বললেন: বলে যে, আমি দোয়া করেছি, আমি দোয়া করেছি; কিন্তু আমার দোয়া কবুল হতে দেখিনি। তখন সে ব্যক্তি উদ্যম হারিয়ে ফেলে এবং দোয়া ছেড়ে দেয়।”
৪. দোয়ার মধ্যে পাপের কিছু না থাকা। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া না হওয়া; যেমনটি ইতিপূর্বে উল্লেখিত হাদিসে এসেছে- “বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা কোন পাপ নিয়ে কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া করে।”
৫. আল্লাহ্র প্রতি ভাল ধারণা নিয়ে দোয়া করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমার বান্দা আমার প্রতি যেমন ধারণা করে আমি তেমন।”[সহিহ বুখারী (৭৪০৫) ও সহিহ মুসলিম(৪৬৭৫)] আবু হুরায়রা (রাঃ) এর হাদিসে এসেছে, “তোমরা দোয়া কবুল হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস (একীন) নিয়ে আল্লাহ্র কাছে দোয়া কর।”[সুনানে তিরমিযি, আলাবানী সহিহুল জামে গ্রন্থে (২৪৫) হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন]
তাই যে ব্যক্তি আল্লাহ্র প্রতি ভাল ধারণা পোষণ করে আল্লাহ্ তার উপর প্রভুত কল্যাণ ঢেলে দেন, তাকে উত্তম অনুগ্রহে ভূষিত করেন, উত্তম অনুকম্পা ও দান তার উপর ছড়িয়ে দেন।
৬. দোয়াতে মনোযোগ থাকা। দোয়াকালে দোয়াকারীর মনোযোগ থাকবে এবং যাঁর কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে তাঁর মহত্ত্ব ও বড়ত্ব অন্তরে জাগ্রত রাখবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা জেনে রাখ, আল্লাহ্ কোন উদাসীন অন্তরের দোয়া কবুল করেন না।”[সুনানে তিরমিযি (৩৪৭৯), সহিহুল জামে(২৪৫) গ্রন্থে শাইখ আলবানী হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন]
৭. খাদ্য পবিত্র(হালাল) হওয়া। আল্লাহ্ তাআলা বলেন, “আল্লাহ্ তো কেবল মুত্তাকীদের থেকেই কবুল করেন”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ২৭] এ কারণে যে ব্যক্তির পানাহার ও পরিধেয় হারাম সে ব্যক্তির দোয়া কবুল হওয়াকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদূরপরাহত বিবেচনা করেছেন। হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, যিনি দীর্ঘ সফর করেছেন, মাথার চুল উস্কুখুস্ক হয়ে আছে; তিনি আসমানের দিকে হাত তুলে বলেন: ইয়া রব্ব, ইয়া রব্ব! কিন্তু, তার খাবার-খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পরিধেয় হারাম, সে হারাম খেয়ে পরিপুষ্ট হয়েছে তাহলে এমন ব্যক্তির দোয়া কিভাবে কবুল হবে?[সহিহ মুসলিম, (১০১৫)]
ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন, হারাম ভক্ষণ করা দোয়ার শক্তিকে নষ্ট করে দেয় ও দুর্বল করে দেয়।
৮. দোয়ার ক্ষেত্রে কোন সীমালঙ্ঘন না করা। কেননা আল্লাহ্ তাআলা দোয়ার মধ্যে সীমালঙ্ঘন করাটা অপছন্দ করেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেন, “তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবকে ডাক; নিশ্চয় তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।” [সূরা আরাফ, আয়াত: ৫৫] আরও বিস্তারিত জানতে দেখুন 41017 নং প্রশ্নোত্তর।
৯. ফরয আমল বাদ দিয়ে দোয়াতে মশগুল না হওয়া। যেমন, ফরয নামাযের ওয়াক্তে ফরয নামায বাদ দিয়ে দোয়া করা কিংবা দোয়া করতে গিয়ে মাতাপিতার অধিকার ক্ষুণ্ণ করা। খুব সম্ভব বিশিষ্ট ইবাদতগুজার জুরাইজ(রহঃ) এর কাহিনী থেকে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কারণ জুরাইজ(রহঃ) তার মায়ের ডাকে সাড়া না দিয়ে ইবাদতে মশগুল থেকেছেন। ফলে মা তাকে বদদোয়া করেন; এতে করে জুরাইজ(রহঃ) আল্লাহ্র পক্ষ থেকে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হন।
ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, আলেমগণ বলেছেন: এতে প্রমাণ রয়েছে যে, জুরাইজের জন্য সঠিক ছিল মায়ের ডাকে সাড়া দেয়া। কেননা তিনি নফল নামায আদায় করছিলেন। নফল নামায চালিয়ে যাওয়াটা হচ্ছে- নফল কাজ; ফরয নয়। আর মায়ের ডাকে সাড়া দেয়া ওয়াজিব এবং মায়ের অবাধ্য হওয়া হারাম....”[শারহু সহিহু মুসলিম(১৬/৮২)]
আরও অধিক জানতে মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিম আল-হামাদ রচিত ‘আল-দুআ’ নামক বইটি দেখুন।
সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব
প্রশ্ন: দোয়া করার আদবসমূহ কি কি? এর পদ্ধতি কি? এর ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ কি কি? দোয়া কিভাবে শুরু করতে হয় ও কিভাবে শেষ করতে হয়? আখেরাতের বিষয়াবলির আগে দুনিয়াবী বিষয়ে দোয়া করা যায় কি? দোয়া করার সময় হাত তোলার শুদ্ধতা কি; শুদ্ধ হলে এর পদ্ধতি কি?
উত্তর
আলহামদু লিল্লাহ।.
আলহামদুলিল্লাহ।
এক:
নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর কাছে চাওয়াটা ও সবকিছু তাঁর থেকে প্রত্যাশা করাটা পছন্দ করেন। যে ব্যক্তি তাঁর কাছে চায় না তিনি তার ওপর রাগ করেন। তিনি তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর কাছে চাওয়া বা প্রার্থনা করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন: “আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব”[সূরা গাফির, আয়াত: ৬০]
ইসলামে রয়েছে দোয়ার মহান মর্যাদা। এমনকি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন কথাও বলেছেন: “দোয়া-ই ইবাদত”[সুনানে তিরমিযি (৩৩৭২), সুনানে আবু দাউদ (১৪৭৯), সুনানে ইবনে মাজাহ (৩৮২৮), আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে (২৫৯০) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]
আল্লাহই ভাল জানেন।
দুই:
দোয়ার আদবসমূহ:
১। দোয়াকারীকে আল্লাহর রুবুবিয়্যত, উলুহিয়্যত ও আসমা-সিফাতের প্রতি একত্ববাদী হতে হবে। আল্লাহ তাআলা কর্তৃক দোয়া কবুল করার শর্ত হচ্ছে- বান্দা কর্তৃক আল্লাহর আহ্বানে সাড়া দিয়ে নেক কাজ করা ও গুনাহ পরিত্যাগ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করে, (তখন বলে দিন যে) নিশ্চয় আমি অতি নিকটে। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৮৬]
২। একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া করা। আল্লাহ তাআলা বলেন: আর “তাদেরকে কেবল এ নির্দেশই প্রদান করা হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহ্র ইবাদত করে তাঁরই জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে।”[সূরা বাইয়্যেনা, আয়াত: ০৫] দোয়া হচ্ছে- ইবাদত; যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন। তাই ইখলাস দোয়া কবুলের শর্ত।
৩। আল্লাহ্র সুন্দর নাম ও গুণাবলী দিয়ে তাঁকে ডাকা। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “আর আল্লাহ্র জন্যই রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাক; আর যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন কর।”[সূরা আরাফ, আয়াত: ১৮০]
৪। দোয়া করার পূর্বে আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করা। সুনানে তিরমিযিতে (৩৪৭৬) ফাযালা বিন উবায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে নামায আদায় করল, এরপর দু’আ করল: ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মাফ করে দাও, তুমি আমাকে রহম কর’। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: হে নামাযী! তুমি বেশ তাড়াহুড়া করে ফেললে। তুমি নামায আদায় করে যখন বসবে তখন আগে আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করবে, আমার ওপর দরুদ পড়বে। এরপর আল্লাহর কাছে দু’আ করবে।” অপর এক রেওয়ায়েতে এসেছে (৩৪৭৭) “যখন তোমাদের কেউ নামায শেষ করবে তখন আল্লাহর প্রশংসা ও স্তুতি শুরু করবে। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পড়বে। অতঃপর যা ইচ্ছা দোয়া করবে” বর্ণনাকারী বলেন: এরপর অপর এক লোক নামায আদায় করল। সে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পড়ল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “ওহে নামাযী! দোয়া কর, আল্লাহ তোমার দোয়া কবুল করবেন”[আলবানী সহিহুত তিরমিযি গ্রন্থে (২৭৬৫), (২৭৬৭) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]
৫। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পড়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ না পড়া পর্যন্ত যে কোন দোয়া আটকে থাকে”[আল-মুজাম আল-আওসাত (১/২২০), আলবানী ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে (৪৩৯৯) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]
৬। কিবলামুখী হয়ে দোয়া করা। সহিহ মুসলিমে (১৭৬৩) উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: বদর যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুশরিকদের দিকে তাকালেন; তাদের সংখ্যা ছিল এক হাজার। আর তাঁর সাথীবর্গের সংখ্যা ছিল তিনশত উনিশ। তখন তিনি কিবলামুখী হয়ে হাত প্রসারিত করলেন, তারপর তাঁর রবকে ডাকতে শুরু করলেন: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে যে ওয়াদা দিয়েছেন সেটা বাস্তবায়ন করে দিন। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেটা দান করুন। হে আল্লাহ! আপনি যদি মুসলমানদের এ দলটিকে ধ্বংস করে দেন তাহলে পৃথিবীতে আপনার ইবাদত হবে না’। এভাবে দুই হাত প্রসারিত করে কিবলামুখী হয়ে তাঁর রবকে ডাকতে থাকলেন; এমনকি এক পর্যায়ে তাঁর কাঁধ থেকে চাদরটি পড়ে গেল...।
ইমাম নববী (রহঃ) ‘শারহু মুসলিম’ গ্রন্থে বলেন: এ হাদিসে দোয়াকালে কিবলামুখী হওয়া ও দুই হাত তুলে দোয়া করা মুস্তাহাব হওয়ার পক্ষে প্রমাণ রয়েছে।
৭। দুই হাত তোলা। সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে (১৪৮৮) সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় আপনাদের সুমহান রব হচ্ছেন লজ্জাশীল ও মহান দাতা। বান্দা যখন তাঁর কাছে দু’হাত তোলে তখন তিনি সে হাতদ্বয় শূন্য ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।”[সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে (১৩২০) আলবানী হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]
হাতের তালু থাকবে আকাশের দিকে; যেভাবে একজন নতজানু দরিদ্র সাহায্যপ্রার্থী কিছু পাওয়ার আশায় হাত পাতে। সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে (১৪৮৬) মালেক বিন ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যখন তোমরা আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাইবে তখন হাতের তালু দিয়ে চাইবে; হাতের পিঠ দিয়ে নয়”[আলবানী সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে (১৩১৮) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]
হাত তোলার সময় দুই হাত কি মিলিয়ে রাখবে; না কি দুই হাতের মাঝে ফাঁক রাখবে?
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) তাঁর ‘আল-শারহুল মুমতি’ গ্রন্থে (৪/২৫) উল্লেখ করেছেন যে, হাত দুইটি মিলিয়ে রাখবে। তাঁর ভাষায়: “দুই হাতের মাঝখানে ফাঁক রাখা ও এক হাত থেকে অন্য হাত দূরে রাখা সম্পর্কে আমি কোন দলিল পাইনি; না হাদিসে; আর না আলেমগণের বাণীতে।” [সমাপ্ত]
৮। আল্লাহর প্রতি এ একীন রাখা যে, আল্লাহ দোয়া কবুল করবেন এবং মনোযোগ দিয়ে দোয়া করা। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “তোমরা দোয়া কবুল হওয়ার একীন নিয়ে দোয়া কর। জেনে রাখ, আল্লাহ তাআলা অবহেলাকারী ও অমনোযোগী অন্তরের দোয়া কবুল করেন না।”[সুনানে তিরমিযি (৩৪৭৯), শাইখ আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে (২৭৬৬) হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন]
৯। বারবার চাওয়া। বান্দা আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণকর যা ইচ্ছা তা চাইবে, কাকুতি-মিনতি করবে, তবে দোয়ার ফলাফল প্রাপ্তিতে তাড়াহুড়া করবে না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা কোন পাপ নিয়ে কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া করে। বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা ফলাফল প্রাপ্তিতে তাড়াহুড়া না করে। জিজ্ঞেস করা হল: ইয়া রাসূলুল্লাহ! তাড়াহুড়া বলতে কী বুঝাচ্ছেন? তিনি বললেন: বলে যে, আমি দোয়া করেছি, আমি দোয়া করেছি; কিন্তু আমার দোয়া কবুল হতে দেখিনি। তখন সে ব্যক্তি উদ্যম হারিয়ে ফেলে এবং দোয়া ছেড়ে দেয়।[সহিহ বুখারী (৬৩৪০) ও সহহি মুসলিম (২৭৩৫)]
১০। দৃঢ়তার সাথে দোয়া করা। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ যেন অবশ্যই এভাবে না বলে যে, হে আল্লাহ! আপনি যদি চান আমাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আপনি যদি চান আমাকে দয়া করুন। কেননা নিশ্চয় আল্লাহর ওপর জবরদস্তি করার কেউ নেই।[সহিহ বুখারী (৬৩৩৯) ও সহিহ মুসলিম(২৬৭৯)]
১১। অনুনয়-বিনয়, আশা ও ভয় প্রকাশ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবকে ডাক”[সূরা আরাফ, আয়াত: ৫৫] তিনি আরও বলেন: “তারা সৎকাজে প্রতিযোগিতা করত, আর তারা আমাদেরকে ডাকত আগ্রহ ও ভীতির সাথে এবং তারা ছিল আমাদের নিকট ভীত-অবনত।”[সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৯০] তিনি আরও বলেন: “আর আপনি আপনার রবকে নিজ মনে স্মরণ করুন সবিনয়ে, ভীতচিত্তে ও অনুচ্চস্বরে, সকালে ও সন্ধ্যায়।”[সূরা আরাফ, আয়াত: ২০৫]
১২। তিনবার করে দোয়া করা। সহিহ বুখারী (২৪০) ও সহিহ মুসলিমে (১৭৯৪) আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি বলেন: “একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বায়তুল্লাহ্র কাছে নামায আদায় করছিলেন। সেখানে আবূ জেহেল ও তার সঙ্গীরা বসা ছিল। গতদিন উট জবাই করা হয়েছিল। এমন সময় আবু জেহেল বলে উঠল, ‘তোমাদের মধ্যে কে অমুক গোত্রের উটনীর নাড়ীভুঁড়ি এনে মুহাম্মদ যখন সিজদা করবে তখন তার পিঠের উপর রাখতে পারবে?’ তখন কওমের সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোকটি দ্রুত গিয়ে উটনীর নাড়ীভুঁড়ি নিয়ে এল এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদায় গেলেন তখন এগুলো তাঁর দুই কাঁধের মাঝখানে রেখে দিল। বর্ণনাকারী বলেন: তারা নিজেরা হাসতে থাকল; হাসতে হাসতে একে অন্যের ওপর হেলে পড়ল। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। হায়! আমার যদি প্রতিরোধ করার ক্ষমতা থাকত তাহলে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পিঠ থেকে এগুলো ফেলে দিতাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় পড়ে থাকলেন; মাথা উঠালেন না। এক পর্যায়ে এক লোক গিয়ে ফাতিমা (রাঃ) কে খবর দিল। খবর শুনে তিনি ছুটে এলেন। সে সময় ফাতেমা (রাঃ) ছিলেন ছোট বালিকা। তিনি এসে উটের নাড়ীভুঁড়ি তাঁর পিঠ থেকে ফেলে দিলেন। এরপর লোকদের দিকে মুখ করে তাদেরকে গালমন্দ করলেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁর নামায শেষ করলেন তখন তিনি কণ্ঠস্বর উঁচু করলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে বদ দোয়া করলেন। - তিনি যখন দোয়া করতেন তখন তিনবার করতেন এবং যখন প্রার্থনা করতেন তখন তিনবার করতেন- এরপর বললেন: ইয়া আল্লাহ্! আপনি কুরাইশকে ধ্বংস করুন। এভাবে তিনবার বললেন। তারা যখন তাঁর কণ্ঠস্বর শুনতে পেল তাদের হাসি মিলিয়ে গেল এবং তারা তাঁর বদ দোয়াকে ভয় পেল। এরপর তিনি বললেনঃ ইয়া আল্লাহ্! আবূ জেহেল ইবনে হিশাম, ‘উতবা ইবনে রাবী’আ, শায়বা ইবনে রবী’আ, ওয়ালীদ ইবনে ‘উকবা, উমাইয়্যা ইবনে খালাফ ও ‘উকবা ইবনে আবু মু’আইতকে ধ্বংস করুন। (রাবী বলেন, তিনি সপ্তম ব্যক্তির নামও বলেছিলেন কিন্তু আমি স্মরণ রাখতে পারিনি।) সেই সত্তার কসম! যিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদের নাম উচ্চারণ করেছিলেন, আমি বদর যুদ্ধের দিন তাদেরকে নিহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছি। পরবর্তীতে তাদেরকে টেনেহিঁচড়ে বদরের কূপের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়।”
১৩। ভাল খাবার ও ভাল পোশাক গ্রহণ করা (ভাল হতে হলে হালাল হওয়া জরুরী)। সহিহ মুসলিমে (১০১৫) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “হে লোকসকল! নিশ্চয় আল্লাহ ভাল। তিনি ভাল নয় এমন কিছু গ্রহণ করেন না। তিনি রাসূলদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন একই নির্দেশ মুমিনদের প্রতিও জারী করেছেন। তিনি বলেন: “হে রাসূলগণ! আপনারা ভাল খাবার গ্রহণ করুন এবং নেক আমল করুন। নিশ্চয় আপনারা যা কিছু আমল করেন সে সম্পর্কে আমি সম্যক অবগত”[সূরা মুমিনূন, আয়াত: ৫১] তিনি আরও বলেন: “হে ঈমানদারেরা! তোমাদেরকে যেসব ভাল রিজিক দিয়েছি সেগুলো থেকে খাও।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৭২] এরপর তিনি উল্লেখ করেন যে, জনৈক ব্যক্তি লম্বা সফর করে উস্কখুস্ক চুল নিয়ে ধুলিমলিন অবস্থায় দুই হাত আকাশের দিকে তুলে দোয়া করে: ইয়া রব্ব, ইয়া রব্ব! অথচ তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, সে পরিপুষ্ট হয়েছে হারাম খেয়ে তাহলে তার দোয়া কিভাবে কবুল হবে?” ইবনে রজব (রহঃ) বলেন: “হালাল খাওয়া, হালাল পান করা, হালাল পরিধান করা ও হালাল খেয়ে পরিপুষ্ট হওয়া দোয়া কবুল হওয়ার আবশ্যকীয় শর্ত।”[সমাপ্ত]
১৪। গোপনে দোয়া করা, শব্দ না করা। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবকে ডাক”[সূরা আরাফ, আয়াত: ৫৫] আল্লাহ তাআলা যাকারিয়া (আলাইহি সালাম) এর প্রশংসা করে বলেন: “যখন তিনি তার রবকে ডেকেছিলেন নিভৃতে”[সূরা মারিয়াম, আয়াত: ০৩]
ইতিপূর্বেও দোয়া সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হয়েছে। দোয়াকারীর দোয়া কবুল হওয়ার কারণসমূহ, দোয়ার আদবসমূহ, যেসব সময় ও স্থান ফযিলতপূর্ণ ও দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনাপূর্ণ, দোয়াকারীর অবস্থা, দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাসমূহ ও দোয়া কবুলের প্রকারসমূহ ইত্যাদি 5113 নং প্রশ্নোত্তরে উল্লেখ করা হয়েছে।
সূত্র: ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব
প্রশ্নোত্তরের সূত্রঃ
০১.ইসলামকিউএ
*
আরবী ভাষায় ‘ওসীলা’ শব্দের নৈকট্য। মহান আল্লাহ বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ وَجَاهِدُوا فِي سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
‘‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাঁর ওসীলা (নৈকট্য) সন্ধান কর এবং তাঁর পথে সংগ্রাম কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’’[1]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনু জারীর তাবারী (৩১০ হি) বলেন:
وابتغوا إليه الوسيلة يقول واطلبوا القربة إليه ومعناه بما يرضيه والوسيلة هي الفعلية من قول القائل توسلت إلى فلان بكذا بمعنى تقربت إليه
‘‘তাঁর দিকে ওসীলা সন্ধান কর। এর অর্থ: তাঁর দিকে নৈকট্য সন্ধান কর, অর্থাৎ যে কর্ম করলে তিনি সন্তুষ্ট হন তা কর। ওসীলা শব্দটি ‘তাওয়াস্সালতু’ কথা থেকে ‘ফায়ীলাহ’ ওযনে গৃহীত ইসম। বলা হয় ‘তাওয়াস্সালতু ইলা ফুলান বি-কাযা, অর্থাৎ আমি অমুক কাজ করে অমুকের নিকটবর্তী হয়েছি।’’[2]
কুরআন-হাদীস নির্দেশিত সকল নেক আমলই আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের ওসীলা বা উপকরণ। নেককার মানুষের সাহচর্যে গমনও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের কর্ম। তবে ‘ওসীলা’ বলতে মধ্যস্থ মনে করা শিরকের রাজপথ। এ বিষয়ক শিরক সম্পর্কে ‘কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা’ গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।[3] এখানে দুআর মধ্যে কারো ওসীলা প্রদান প্রসঙ্গে ইমাম আবূ হানীফার মত আলোচনা করব।
মহান আল্লাহর পবিত্র নামের ওসীলা দিয়ে, নিজের নেক আমলের ওসীলা দিয়ে বা কোনো ব্যক্তির দুআর ওসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ করার নির্দেশনা হাদীস শরীফে বিদ্যমান। যেমন: হে আল্লাহ, আপনার রহমান-রহীম নামের ওসীলায় বা আমার দরুদ পাঠের ওসীলায় আপনি আমার দুআ কবুল করুন। হে আল্লাহ, অমুক ব্যক্তি আমার জন্য দুআ করেছেন, আপনি তার দুআর ওসীলায় আমার দুআ কবুল করুন।
তবে কোনো ব্যক্তির ওসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দুআ চাওয়া, অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ, অমুক ওলী বা বুজুর্গ ব্যক্তির ওসীলায় আমার দুআ কবুল করুন’- এভাবে দুআ করা যাবে কিনা সে বিষয়ে আলিমগণ মতভেদ করেছেন। কারণ এরূপ দুআর নির্দেশনা কুরআন বা হাদীসে নেই। ইমাম আবূ হানীফা এরূপ ওসীলা প্রদান নিষেধ করেছেন। ইমাম আবূ ইউসূফ বলেন, আবূ হানীফা বলেছেন:
لا ينبغي لأحد أن يدعو الله إلا به والدعاء المأذون فيه المأمور به ما استفيد من قوله تعالى (ولله الأسماء الحسنى فادعوه بها) ... وكره قوله بحق رسلك وأنبيائك وأوليائك
‘‘আল্লাহকে তাঁর নিজের (ওসীলা) দ্বারা ছাড়া অন্য কারো (ওসীলা) দ্বারা ডাকা বা দুআ করা কারো জন্য বৈধ নয়। দুআর অনুমোদিত ও নির্দেশিত পদ্ধতি মহান আল্লাহর নিম্নের বাণী থেকে জানা যায়: ‘‘এবং আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ বিদ্যমান; কাজেই তোমরা তাঁকে সে সকল নামের (ওসীলা) দ্বারা ডাক। ... আপনার রাসূলগণের, আপনার নবীগণের, আপনার ওলীগণের হক্কে (ওসীলায়) বলা তিনি মাকরূহ বলেছেন।’’[4]
আল্লামা আব্দুল্লাহ ইবন মাহমূদ মাউসিলী হানাফী (৬৮৩ হি) বলেন:
قال: (ويكره أن يدعو الله إلا به) فلا يقول أسألك بفلان أو بملائكتك أو بأنبيائك ونحو ذلك لأنه لا حق للمخلوق على الخالق
‘‘তিনি বলেন: ‘মহান আল্লাহকে তাঁর নিজের (ওসীলা) দ্বারা ছাড়া অন্য কারো (ওসীলা) দ্বারা ডাকা বা দুআ করা মাকরূহ।’ কাজেই একথা বলা যাবে না যে, ‘অমুকের ওসীলা দিয়ে আপনার নিকট প্রার্থনা করছি’, অথবা ‘আপনার ফিরিশতাগণ ও নবীগণের ওসীলা দিয়ে আপনার নিকট প্রার্থনা করছি’। এ জাতীয় কোনো দুআ করবে না; কারণ স্রষ্টার উপর কোনো সৃষ্টির কোনো অধিকার বা দাবি নেই।’’[5]
বস্ত্তত তাওহীদের মর্যাদা সমুন্নত করতেই ইমাম আযম এ ধরনের ওসীলা প্রদান নিষেধ করেছেন। কারো স্মৃতিবিজড়িত স্থান বা কবরের পাশে দুআ-ইবাদত করা এবং বরকতের জন্য কোনো গাছের নিকট দুআ করা, গাছে সুতা, কাপড় বা অস্ত্র ঝুলিয়ে রাখার মতই এরূপ ওসীলা মনের অজান্তে মুমিনকে শিরকের পথে ধাবিত করে। কবর বা গাছের পাশে ইবাদত বা প্রার্থনাকারী মূলত মহান আল্লাহকেই ডাকছেন; কিন্তু উক্ত নবী বা ওলীর কবর বা স্মৃতির ওসীলায় বা বরকতময় গাছটির ওসীলায় আল্লাহর কবুলিয়াত আশা করছেন। দরগা বা গাছে সুতা, পোশাক বা অস্ত্র রাখার মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি মূলত মহান আল্লাহর নিকট থেকেই বরকত আশা করছেন। তিনি উক্ত গাছ বা দরগাকে মহান আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভের মাধ্যম বা ওসীলা বলে গণ্য করছেন। অনুরূপভাবে কোনো ব্যক্তির ওসীলা দিয়ে প্রার্থনাকারীও মূলত আল্লাহকেই ডাকছেন। তবে তিনি মনে করছেন যে, উক্ত ব্যক্তির নাম মহান আল্লাহর রহমত ও কবুলিয়াত পাওয়ার মাধ্যম বা উপকরণ। তার মনে ক্রমান্বয়ে ধারণা বদ্ধমূল হচ্ছে যে, এ সকল মাধ্যম, উপকরণ বা ওসীলা ছাড়া সরাসরি মহান আল্লাহর রহমত-বরকত লাভ অসম্ভব বা দুষ্কর। এভাবে বান্দার মন মহান আল্লাহর পরিবর্তে উক্ত ওসীলা বা মাধ্যমকে কেন্দ্র করে অধিক আবর্তিত হতে থাকে। কখনো তিনি তাদেরকে আল্লাহর ভান্ডারের মালিক, অংশীদার বা বণ্টনকারী মনে করেন। কখনো তাদের সন্তুষ্টি ছাড়া আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ সম্ভব নয় বলে মনে করেন। এভাবে মূলত তিনি জেনে বা মনের অজান্তে উক্ত ব্যক্তি বা বস্ত্তকে মহান আল্লাহর রহমত, বরকত ও কবুলিয়্যাতের অংশীদার বানিয়ে নেন।
দু ব্যক্তির কথা চিন্তা করুন! এক ব্যক্তি মনের গভীরতম আস্থায় বিশ্বাস করেন যে, মহান আল্লাহ বান্দার নিকটতম, তিনি তার সকল কথা জানছেন ও শুনছেন, তার ভালমন্দ তিনিই সবচেয়ে বেশি জানেন এবং তার রহমত, বরকত বা কবুলিয়্যাতের সিদ্ধান্ত তিনিই গ্রহণ করেন। তাঁর ইচ্ছার বাইরে কেউ কোনো কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পারে না। শয়নে, জাগরণে, স্বপ্নে, বিচরণে আনন্দে ও বেদনায় সর্বদা একমাত্র মহান আল্লাহকেই স্মরণ করেন এবং তাঁরই সাথে কথা বলেন। আনন্দে তাঁরই প্রতি কৃতজ্ঞতায় তাঁর হৃদয় পূর্ণ হয় এবং তাঁকেই শুকরিয়া জানান। বেদনা ও কষ্টে তাঁকেই ডাকেন এবং তাঁরই কাছে মনের আবেগ-আহাজারি পেশ করেন। দীন, আমল ও ইলম শিখতে তিনি আলিম, পীর ও বুজুর্গদের কাছে যান। তবে প্রার্থনা, দুআ, চাওয়া-পাওয়া ও তাওয়াক্কুল নির্ভরতার জন্য তিনি আল্লাহ ছাড়া আর কারো কথাই চিন্তা করেন না।
অন্য ব্যক্তিও বিশ্বাসে কর্মে উপরের মানুষটির কাছাকাছি। তবে তিনি কোনো ব্যক্তি বা বস্ত্তকে মহান আল্লাহর রহমত, বরকত বা কবুলিয়ত লাভের জন্য ওসীলা, মাধ্যম বা উপকরণ হিসেবে বিশ্বাস করেন। আনন্দে ও প্রাপ্তিতে তার হৃদয় মূলত উক্ত ‘মাধ্যম’-এর প্রতি কৃতজ্ঞতায় সিক্ত হয়- অমুকের ওসীলাতেই আমি এটা পেয়েছি। বিপদে-কষ্টে উক্ত ওসীলার প্রতিই তার হৃদয় ধাবিত হয়। তাকে খুশি করে আল্লাহর রহমত অর্জনের জন্য তিনি সচেষ্ট হন। নিঃসন্দেহে দ্বিতীয় ব্যক্তির তাওয়াক্কুল, নির্ভরতা, আশা, ভয় ইত্যাদি ইবাদত ক্রমান্বয়ে উক্ত ওসীলা বা মাধ্যমকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হতে থাকবে। আর শিরকের এ দরজা বন্ধ করতেই ইমাম আযম কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে বা ওসীলায় মহান আল্লাহর কাছে দুআ করতে নিষেধ করেছেন।
[1] সূরা (৫) মায়িদা: ৩৫ আয়াত।
[2] তাবারী, তাফসীর (জামিউল বায়ান) ৬/২২৬।
[3] খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর, কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা, পৃ ৪৬৭-৪৮৪।
[4] হাসকাফী, আদ-দুর্রুল মুখতার (বৈরুত, দারুল ফিকর, ১৩৮৬ হি) ৬/৩৯৬-৩৯৮।
[5] আব্দুল্লাহ ইবন মাহমূদ মাউসিলী, আল-ইখতিয়ার লিতা’লীলিল মুখতার ৪/১৭৫।
No comments:
Post a Comment