Saturday, May 15, 2021

কিছু কমন প্রশ্নোত্তর। প্রসঙ্গ - বিয়ে

 

কিছু কমন প্রশ্নোত্তর। প্রসঙ্গ - বিয়ে

 

 

১। প্রশ্নঃ

ওয়ালী বা অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া কি বিয়ে হবে?

উত্তরঃ

বিয়ের শুদ্ধতার জন্যে ওয়ালীর অনুমতি থাকা কী শর্ত? নাকি ওয়ালীর অনুমতি ছাড়া বিয়ে করলেও বিয়ে হয়ে যাবে? এর উত্তর জানার আগে, আমরা আগে ওয়ালীর পরিচয় জেনে নেই। ** ওয়ালী বলতে কাদের বোঝানো হয়? ওয়ালী বলতে বোঝানো হয় পিতা, দাদা, প্রাপ্তবয়স্ক ভাই (ছোট হোক বা বড়), চাচা, প্রশাসক বা গভর্নর (অথবা তার নিযুক্ত প্রতিনিধি)। ক্রমানুসারে ওয়ালীর দায়িত্বের ভার তাদের উপর বর্তাবে। সর্বপ্রথম পিতা হবেন ওয়ালী। তিনি জীবিত না থাকলে, অথবা পাগল/হারিয়ে গেলে/কাফের হয়ে গেলে তখন ওয়ালীর দায়িত্ব আসবে দাদার উপর। এভাবে ক্রমান্বয়ে ভাই, চাচা ও অন্যদের উপর জিম্মাদারি আসবে। শরীয়তের দৃষ্টিতে মহিলা ওয়ালী নয়। তিনি মা হন বা দাদী। আর প্রথম স্তরের ওয়ালী বিদ্যমান থাকাকালে দ্বিতীয় স্তরের আত্মীয় ওয়ালী হবে না। অর্থাৎ বাবা থাকাকালে দাদা, ভাই ইত্যাদি ওয়ালী হবে না। দাদা থাকলে অন্যরা হবে না। এভাবে ক্রমানুসারে... ** ওয়ালী ছাড়া কি বিয়ে বৈধ? ছেলেদের জন্যে ইসলাম ওয়ালীর অনুমতিকে শর্ত করে নি। এ ব্যাপারে প্রায় সব ইমাম ও আলেমগণ একমত। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে? "উলামায়ে কেরামের মধ্যে এই ব্যাপারটা বিয়ে বিস্তর মতভেদ রয়েছে। ইমাম ও গবেষকদের একাংশের মতে, ওয়ালীর অনুমতি ছাড়া যদি প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে বিয়ে করে, তাহলে তার বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে শর্ত হলো উক্ত মেয়েকে প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে এবং কুফু রক্ষা করে বিয়ে করতে হবে। যদি কুফু না মিলে, তাহলে বিয়ে হবে বটে। কিন্তু মেয়ের পিতা চাইলে উক্ত বিয়ে ভেংগে দিতে পারবেন। তবে পিতা যদি বিয়ে না ভেংগে বলবত রাখেন তাহলে বিয়ে ঠিক থাকবে। এ মতটি দিয়েছেন বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম জুহরী, ইমাম আবু হানীফা, ইমাম শাবী। ইমামদের অন্য অংশের মতে, বিয়েতে মেয়েদের জন্যে ওয়ালীর অনুমতি অত্যাবশ্যক। ওয়ালী অনুমতি না দিলে বা ওয়ালীর অজ্ঞাতসারে বিয়ে করলে মেয়ের বিয়ে সহীহ হবে না। এ মতের পক্ষে রয়েছেন, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমদ রহ. প্রমুখ। উভয়ের মতের সপক্ষে বিস্তর দলীলও রয়েছে। (দলীল উল্লেখ করলে লেখা দীর্ঘ হয়ে যাবে বিধায়, এখানে উল্লেখ করা হয় নি। যারা দলীল জানতে আগ্রহী, তারা আমার ওয়াল থেকে এই বিষয়ক লেখাটা প্রস্তুত হওয়ার পর পড়তে পারবেন ইনশাআল্লাহ) বাংলাদেশ পাকিস্তান ভারত ও যেসব অঞ্চলে হানাফী মাসলাক এর প্রচলন বেশি, সেসব জায়গায় প্রথম মত অনুযায়ী ফয়সালা দেয়া হয়। শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আলমুনাজ্জিদ ওলী ছাড়া মেয়েদের বিবাহের ক্ষেত্রে বলেছেন, المسألة اجتهادية ، واختلف فيها الأئمة ، فإنه إذا كان أهل بلد يعتمدون المذهب الحنفي كبلادكم وبلاد الهند وباكستان وغيرها ، فيصححون النكاح بلا ولي ، ويتناكحون على هذا ، فإنهم يقرّون على أنكحتهم ، ولا يطالبون بفسخها অর্থাৎ এটি একটি ইজতিহাদি মাসআলা, ইমামগণ এক্ষেত্রে ইখতিলাফ করেছেন। সুতরাং যে সব দেশের মানুষেরা হানাফী মাজহাবের উপর নির্ভর করে , ওলী ছাড়া বিবাহকে বৈধ মনে করে এবং এভাবে তাদের বিয়ে হয় যেমন, ভারত, পাকিস্থান ইত্যদি, তাহলে তাদের বিবাহের স্বীকৃতি দেয়া হবে । তারা এই বিয়ের উপর স্থির থাকবে। তাদেরকে ভেংগে ফেলতে বলা হবে না। উল্লেখ্য, শায়খ সালেহ আল মুনাজ্জিদ ওয়ালী ছাড়া বিয়ের পক্ষে নন, তবুও তিনি এ অঞ্চলের হানাফী মাসলাকের মত অনুযায়ী বিয়েকে শুদ্ধ বললেন। এছাড়া, মাজমুয়ায়ে ফাতাওয়া লিবিন বাজ এর ২০ খন্ড, ৪১১ পৃষ্ঠায় বিয়ে অধ্যায়ে এক প্রশ্নের জবাব শায়েখ বিন বাজ রহ. বলেন, "ওয়ালী ছাড়া কেও যদি কোন মেয়েকে বিয়ে দেয়। তাহলে উলামাদের দুই মতের প্রণিধানযোগ্য মত অনুযায়ী এই বিয়ে শুদ্ধ হবে না। ফাসেদ হয়ে যাবে। আর উলামাদের অন্য অংশের মতে বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাবে।" সৌদি আরবের এই বিখ্যাত শায়েখদের ফতওয়া অনুযায়ী, দুটি মতই শুদ্ধ। সুতরাং যে অঞ্চলে যে মতের প্রচলন, সেখানে সে মোতাবেক আমল করাই বাঞ্ছনীয়। ** ওয়ালী যদি ধার্মিক না হন! এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পিতা যদি দ্বীনদার না হন? তিনি যদি দ্বীনদার পাত্রের সাথে বিয়ে দিতে রাজী না হন? প্রথম মত অনুযায়ী বাবার অনুমতি ছাড়া মেয়ে বিয়ে করলে বিয়ে সংগঠিত হয়ে যাবে। সে হিসেবে বাবার ধার্মিক হওয়া না হওয়া কোন বিষয় নয়। কিন্তু দ্বিতীয় মত অনুযায়ী ওয়ালীর অনুমতি শর্ত। ফিকহের পরিভাষায় প্রশ্নটা হবে "ওয়ালীর ক্ষেত্রে কি আ'দালাত শর্ত?" অর্থাৎ ওয়ালীর জন্যে কি দ্বীনদার হওয়া শর্ত? যদি ওয়ালী দ্বীনদার না হন, ফাসেক হন তাহলে কি তিনি ওয়ালী হওয়ার যোগ্যতা হারাবেন? উল্লেখ্য, যারা ওয়ালীর অনুমতিকে শর্ত বলেন তাদের মধ্যে এই বিষয়টা নিয়েও দুটি মত রয়েছে। ১- ওয়ালী যদি নামাজ পরিপূর্ণভাবে ত্যাগকারী হন, তাহলে তিনি ওয়ালী হওয়ার যোগ্যতা হারাবেন। (প্রায় সবাই একমত) ২- ওয়ালী ফাসেক। মাঝেমাঝে নামাজ ছেড়ে দেয়। অন্যান্য ফরজ বিধানেও শিথিল। প্রকাশ্য না জায়েজ ও হারাম কাজে লিপ্ত। তাহলে কি তিনি ওয়ালী হতে পারবেন? একদল ফকীহ ও বিশ্লেষক বলেন, তিনি ওয়ালী হতে পারবেন না। আরেকদল বলেন, এমন ব্যক্তিও ওয়ালী হতে পারবে। বর্তমান যুগের আলেমগণ দ্বিতীয় মতটাকেই প্রাধান্য দেন। উল্লেখ্য, পূর্বে আলোচনা গিয়েছে যে, প্রথমজন ওয়ালী না হতে পারলে দ্বিতীয় জন ওয়ালী হবেন। এভাবে ক্রমানুসারে.. কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষিতে 'হাকেম' বা প্রশাসক মেয়ের ওয়ালী হবে না। সুতরাং বলা যায়, কোন মেয়ের পিতা যদি এমন হন, মোটেই নামাজই পড়েন না। তাহলে তার ওয়ালী হবেন তার দাদা। দাদাও যদি একইরকমের হন, তখন ভাই। এরপর চাচা মেয়ের ওয়ালী হবে। যদি এদের সবাই এমন হয় যে তারা কেউই একদমই নামাজ পড়ে না। তাহলে হানবলী/সালাফি মাসলাক অনুযায়ী এক্ষেত্রে ওয়ালীর পারমিশন জরুরী না। ফিকহী আলোচনা এখানেই শেষ হলো। এবার,  দেখুন! ইসলামে বিবাহে মেয়েদের জন্য ওলী থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণভাবে যৌবনের শুরুতে যুবক-যুবতী সহজেই বয়সের উন্মাদনায় বিভ্রান্ত হয় এবং নিজের চোখের ভাল লাগার উপর নির্ভর করেই সঙ্গী পছন্দ করে। বিবাহের ক্ষেত্রে চোখের পছন্দের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ জীবন ও আগত প্রজন্মের কল্যাণের কথাও চিন্তা করতে হবে। এজন্য ইসলামে বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর মতামতের সাথে অভিভাবকের মতামতেরও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সুতরাং ছেলেমেয়েদের জন্য উচিত হলো ওলীর অনুমতি ও দুয়া নিয়ে বিবাহ করা। এতে আল্লাহ চাহেন তো সংসারও সুখী হবে। পারিবারিক অশান্তি ও ফেতনার পথও বন্ধ হবে। ওয়ালীর মতামত এর তোয়াক্কা না করা হলে সমাজে বিচ্ছৃংখলা দেখা দিবে। ছেলে মেয়েরা বিয়ের নিয়তে প্রেম শুরু করবে। শুরুটা হবে নেক সুরতে শয়তানের ধোকার মাধ্যমে। তাছাড়া বাবা মা যখন দেখবে, মেয়ে ইসলামিক হওয়ার প্রধান সমস্যা হচ্ছে, মেয়ে বাবা মায়ের আবেগের মূল্য দিচ্ছে না। ফতোয়াকে ব্যবহার করে নিজে নিজে পছন্দসই পাত্র খুঁজে বিয়ে করে ফেলছে। তখন অন্যান্য অভিভাবক চাইবে না যে তার সন্তান ইসলামিক হয়ে যাক। এই নানাবিধ বাস্তবতাকেও অস্বীকার করা যায় না। সুতরাং, যাদের পিতামাতা দ্বীনদার নয়, তাদের প্রধান কর্তব্য বাবামার দ্বীনের পথে নিয়ে আসার ফিকর ও চেষ্টা করা। তাদের জন্যে দুয়া করা। সর্বাত্মক চেষ্টার পরেও যদি সম্ভব না হয়, তখন নিজের পছন্দ জানানো। "ধার্মিক ছাড়া যেন বিয়ের কথা না ভাবে।" আশা করি, বাবা মা তাদের পছন্দ রক্ষা করেই মেয়ের জন্যে দ্বীনদার পাত্র খুঁজবেন ইনশাআল্লাহ। কিন্তু এসবকে পাশ কাটিয়ে, শুরুতেই নিজে নিজে পাত্রের সন্ধানে ব্যস্ত হওয়া অথবা গায়রে মাহরামের সাথে বিয়ের নিয়তে ইনবক্সে আলাপচারিতাকে বৈধ বলার অবকাশ নেই। والله اعلم বিদায়াতুল মুজতাহিদ, ২/৮ আলমাবসুত লিস-সারখসী, ৬/৫৩; আলমাউসায়াতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যাহ, ৭/৯৪ও ৩১/৩২১; আলফিকহ ‘আলা মাজাহিবিল আরবা’ ৪/৪৫। কিতাবুল উম্ম লিশ-শাফেয়ী,৭/১৫৬উত্তর দিয়েছেন - শাইখ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।

২। প্রশ্নঃ

বিয়ের সুন্নত তরিকা একটু ডিটেলস জানতে চাই…

উত্তরঃ

বিবাহের কতিপয় সুন্নত সমূহঃ .(১) মাসনূন বিবাহ সাদা সিধে ও অনাড়ম্বর হবে, যা অপচয়, অপব্যয়, বেপর্দা ও বিজাতীয় সংস্কৃতি মুক্ত হবে এবং তাতে যৌতুকের শর্ত বা সামর্থের অধিক মহরানার শর্ত থাকবেনা। (তাবারানী আউসাত, হাদিস নং- ৩৬১২) . (২) সৎ ও খোদাভীরু পাত্র-পাত্রীর সন্ধান করে বিবাহের পূর্বে পয়গাম পাঠানো। কোন বাহানা বা সুযোগে পাত্রী দেখা সম্ভব হলে, দেখে নেয়া মুস্তাহাব। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটা করে পাত্রী দেখানোর যে প্রথা আমাদের সমাজে প্রচলিত তা সুন্নতের পরিপন্থী ও পরিত্যাজ্য। (বুখারী হাদিস নং-৫০৯০, ইমদাদুল ফাতাওয়া-৪: ২০০) . (৩) শাউয়াল মাসে এবং জুমুয়ার দিনে মসজিদে বিবাহ সম্পাদন করা। উল্লেখ্য, সকল মাসের যে কোন দিন বিবাহ করা যায়িজ আছে। (মুসলিম ১৪২৩/ বায়হাকী ১৪৬৯৯) . (৪) বিবাহের খবর ব্যাপকভাবে প্রচার করে বিবাহ করা এবং বিবাহের পরে আকদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকদের মাঝে খেজুর বন্টন করা। (বুখারী/৫১৪৭) . (৫) সামর্থানুযায়ী মোহর ধার্য করা। (আবু দাউদ/২১০৬) . (৬) বাসর রাতে স্ত্রীর কপালের উপরের চুল হাতে নিয়ে এই দোয়া পড়াঃ “আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকা খয়রাহা ওয়া খয়রা মা জাবালতুহা আলাইহি ওয়াওযুবিকা মিন শার্রিহা মিন শার্রিমা জাবালতাহা আলাইহি” (আবু দাউদ/২১৬০) . (৭) স্ত্রীর সঙ্গে প্রথমে অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি করবে, তার পর যখনই সহবাস এর ইচ্ছা হয়, তখন প্রথমে নিম্নোক্ত দু’আ পড়ে নিবেঃ “বিসমিল্লাহ্‌। আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়তান ও জান্নিবিশ শায়তানা মা রাযাকতানা।” (মুসলিম/১৪৩৪) . (উপরোক্ত দোয়া না পড়লে শয়তানের তাছীরে বাচ্চার উপর কু-প্রভাব পড়ে। অতঃপর সন্তান বড় হলে, তার মধ্যে ধীরে ধীরে তা প্রকাশ পেতে থাকে এবং বাচ্চা নাফরমান ও অবাধ্য হয়। সুতরাং পিতা মাতাকে খুবই শতর্ক থাকা জরুরী) . (৮) বাসর রাতের পর স্বীয় আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাংখী এবং গরীব মিসকীনদের তাউফীক অনুযায়ী ওলীমা খাওয়ানোর আয়োজন করা (মুসলিম/১৪২৭) . (৯) কোন পক্ষ যেওরের শর্ত করা নিষেধ এবং ছেলের পক্ষ থেকে যৌতুক চাওয়া হারাম (আহসানুল ফাতাওয়া ৫/১৩) . (১০) কনের ইযন এর জন্য স্বাক্ষীর কোন প্রয়োজন নাই। সুতরাং ছেলের পক্ষের লোক ইযন শুনতে যাওয়া অনর্থক এবং বেপর্দা। সুতরাং তা নিষেধ। মেয়ের কোন মাহরুম বিবাহের এবং উকীল হওয়ার অনুমতি নিবে। (মুসলিম/১৪২১) . (১১) শর্ত আরোপ করে বর যাত্রীর নামে বরের সাথে অধিক সংখ্যাক লোকজন নিয়ে যাওয়া এবং কনের বাড়ীতে মেহমান হয়ে কনের পিতার উপর বোঝা সৃষ্টি করা আজকের সমাজের একটি জঘন্য কু-প্রথা, যা সম্পূর্ন রুপে পরিত্যাগ করা আবশ্যক। (মুসনাদে আহমাদ/২০৭২২, বুখারী/২৬৯৭) . (১২) ওলীমায় অতিরিক্ত ব্যয় করা কিংবা খুব উচু মানের খানার ব্যবস্থা করা জরুরী নয়। বরং সামর্থানুযায়ী খরচ করাই সুন্নত আদায়ের জন্য যথেষ্ট। যে ওলীমায় শুধু ধনী ও দুনিয়াদার লোকদের দাওয়াত দেওয়া হয়, দ্বীনদার ও গরীব গরীব-মিসকিনদের দাওয়াত দেওয়া হয়না, সে ওলীমাকে হাদিসে নিকৃষ্টতম ওলীমা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং এ ধরনের ওলীমা আয়োজন থেকে বিরত থাকা উচিত (আবু দাউদ /৩৭৫৪) . আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুন্নত মোতাবেক বিবাহ করার তৌফিক দান করুন। আমীনউত্তর দিয়েছেন - মুহতারাম মুহাম্মদ তাফাজ্জল

৩) প্রশ্নঃ

কোনো মুসলমান মেয়ে হিন্দু ছেলেকে কি বিবাহ করতে পারবে?? কোরআন ও হাদিসের আলোকে জানতে চাইছি।

উত্তরঃ

না পারবে না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করেছেন। কোন কাফেরের সাথে মুসলিম নারীর বিয়ে হতে পারে না। আর এতে ইজমাও রয়েছে। যেমনটা ইমাম ইবনে আব্দুল বার উল্লেখ করেছেন। হিন্দু মুসলিম ছেলে হোক বা মেয়ে, বিয়ে করলেও বিয়ে হবে না। শরীয়তে এই বিয়ের বৈধতা নেই। এটা ব্যভিচার, জেনার অন্তর্ভুক্ত হবে। সুরা বাকারা ২২১ ও সুরা মুমতাহানাহ- ১১ উত্তর দিয়েছেন - শাইখ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ

৪। প্রশ্নঃ

আচ্চা মোবাইলে কি বিয়ে করা জায়েজ আছে?

উত্তরঃ

বিবাহ সহীহ হওয়ার জন্য শর্ত হল দু’জন প্রাপ্ত বয়স্ক বিবেকবান মুসলিম সাক্ষীর সামনে পাত্র/পাত্রি প্রস্তাব দিবে আর অপরপক্ষে পাত্র/পাত্রি তা কবুল করবে। আর সাক্ষিগণ উভয়ের কথা সুষ্পষ্টভাবে শুনবে। আর শরয়ী এ শর্তাবলী পরিপূর্ণভাবে টেলিফোনে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই টেলিফোন বা মোবাইলে বিবাহ করা জায়েজ নয়। টেলিফোন বা মোবাইলে বিবাহ করার পদ্ধতি হল-উভয় পক্ষ থেকে এক পক্ষ অপরপক্ষ যেখানে থাকে সেখানের কোন ব্যক্তিকে ওকীল বানাবে। তারপর সে ওকীল দু’জন সাক্ষীর সামনে বিবাহ করিয়ে দিবে। তাহলে বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া সরাসরি মোবাইলে বা টেলিফোনে প্রস্তাব ও কবুল করার দ্বারা বিবাহ সহীহ হবে না। {ফাতওয়ায় উসমানী-২/৩০৪,৩০৫, আদ দুররুল মুখতার-৩/৯, ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/২৬৮}উত্তর দিয়েছেন - শাইখ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।

৫। প্রশ্নঃ

মহিলা গর্ভবতী থাকা অবস্থায় বিয়ে করলে তা শুদ্ধ হবে কি?

উত্তরঃ

গর্ভবতী থাকা অবস্থায়ও বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যায়।صح نكاح حبلى من زنا عند الطرفين وعليه الفتوى لدخوليها تحت النص, وفيه أشعار بانه لو نكح الزانى فانه جائز بالاجماع (مجمع الانهر، كت النكاح، باب المحرمات-1/485، فتح القدير، فصل فى المحرمات-3/241، الفتاوى الهندية، كتاب النكاح، القسم السادس المحرمات التى يتعلق بها حق الغير-1/280)

৬। প্রশ্নঃ

প্রথমে পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করার পর, দ্বিতীয়বার পরিবারের সম্মতিতে আবার বিবাহ করা যাবে কি?

উত্তরঃ

যদি প্রথমবার বিয়ে শরয়ী মূলনীতি হিসেবে হয়ে থাকে, তাহলে আপনার জন্য পরিবারের সন্তুষ্ট করতে দ্বিতীয়বার বিবাহ করা জায়েজ আছে। কোন সমস্যা নেই। তবে এক্ষেত্রে মোহর নির্ধারণ বিষয়ে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। যথা-১প্রথম বিয়ের সময় নির্ধারিত মোহরের সমপরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা এবং স্বামী প্রথম মোহরই মূল মনে করে দ্বিতীয়বারেরটি শুধুই প্রথমবারের স্বীকারোক্তি হিসেবে মনে করা।যেমন প্রথম মোহর ছিল এক লাখ টাকা, আর দ্বিতীয়বারের মোহরও এক লাখ টাকা ধরা। আর দ্বিতীয়বার এক লাখ টাকা মোহর বলার সময় প্রথম মোহরের স্বীকারোক্তি হিসেবে ধরে নেয়া। অর্থাৎ শুধুই এক লাখ টাকা মোহর আদায়ের নিয়ত করে নিল।এ পদ্ধতি জায়েজ।২প্রথম মোহরের তুলনায় বেশি মোহর নির্ধারণ করা। সেই সাথে অতিরিক্ত নির্ধারিত মোহরকে প্রথম মোহরের সাথে অতিরিক্ত হিসেবে ধরার নিয়ত করা।যেমন প্রথম মোহর ছিল এক লাখ টাকা। আর দ্বিতীয়বার মোহর নির্ধারণ করা হয় এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা। স্বামী দ্বিতীয়বারের অতিরিক্ত পঞ্চাশ হাজারকে প্রথম মোহরের সাথে বাড়িয়ে মোহর দেয়ার নিয়ত করে নিল। অর্থাৎ একলাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা মোহর দেবার নিয়ত করে নিল।এটিও জায়েজ পদ্ধতি।৩প্রথম মোহরের মত বা কমবেশি মোহর নির্ধারন করা, সেই সাথে দ্বিতীয়বারের পূর্ণ মোহরকে প্রথমবারের মোহরের সাথে অতিরিক্ত হিসেবে ধরে নেয়া তথা মোহর বাড়িয়ে দেয়ার নিয়তে দ্বিতীয় মোহরকে শামিল করে নেয়া।যেমন প্রথম মোহর ছিল এক লাখ টাকা। আর দ্বিতীয়বারের মোহরও এক লাখ টাকা। স্বামী দ্বিতীয়বারের মোহর নির্ধারণের সময় প্রথম মোহরের সাথে দ্বিতীয়বারের মোহরকে বাড়িয়ে দেয়ার নিয়ত করে নিল। অথাৎ মোট দুই লাখ টাকা মোহর আদায়ের নিয়ত করে নিল।এটিও জায়েজ আছে।৪দ্বিতীয় মোহর প্রথম মোহরের চেয়ে কম নির্ধারণ করা। আর স্বামী দ্বিতীয় মোহর দেবার নিয়ত করে নিল।যেমন প্রথম মোহর ছিল এক লাখ টাকা। আর দ্বিতীয় বার মোহর নির্ধারণ করা হল আশি হাজার টাকা। আর স্বামী আশি হাজার টাকা দেবার নিয়ত করে নিল।এ পদ্ধতিতে স্বামীর জন্য মোহর কমিয়ে দেয়া জায়েজ হবে না। বরং প্রথম মোহর আদায় করা আবশ্যক। হ্যাঁ, স্ত্রী যদি কম নিতে রাজি হয়, তাহলে কম করে দেয়া জায়েজ আছে।فى الدر المختار-وَفِي الْكَافِي: جُدِّدَ النِّكَاحُ بِزِيَادَةِ أَلْفٍ لَزِمَهُ أَلْفَانِ عَلَى الظَّاهِرِوَفِي الْخَانِيَّةِ: وَلَوْ وَهَبَتْهُ مَهْرَهَا ثُمَّ أَقَرَّ بِكَذَا مِنْ الْمَهْرِ وَقَبِلَتْ صَحَّ، وَيُحْمَلُ عَلَى الزِّيَادَةِوَفِي الْبَزَّازِيَّةِ: الْأَشْبَهُ أَنَّهُ لَا يَصِحُّ بِلَا قَصْدِ الزِّيَادَةِ (لَا يُنَصَّفُ) لِاخْتِصَاصِ التَّنْصِيفِ بِالْمَفْرُوضِ فِي الْعَقْدِ بِالنَّصِّ، بَلْ تَجِبُ الْمُتْعَةُ فِي الْأَوَّلِ وَنِصْفُ الْأَصْلِ فِي الثَّانِي.(وَصَحَّ حَطُّهَا) لِكُلِّهِ أَوْ بَعْضِهِ (عَنْهُ) قَبْلَ أَوْ لَا، وَيَرْتَدُّ بِالرَّدِّ كَمَا فِي الْبَحْرِوقال ابن عابدين الشامى- حَاصِلُ عِبَارَةِ الْكَافِي: تَزَوَّجَهَا فِي السِّرِّ بِأَلْفٍ ثُمَّ فِي الْعَلَانِيَةِ بِأَلْفَيْنِ ظَاهِرُ الْمَنْصُوصِ فِي الْأَصْلِ أَنَّهُ يَلْزَمُ الْأَلْفَانِ وَيَكُونُ زِيَادَةً فِي الْمَهْرِ. وَعِنْدَ أَبِي يُوسُفَ الْمَهْرُ هُوَ الْأَوَّلُ لِأَنَّ الْعَقْدَ الثَّانِيَ لَغْوٌ. فَيَلْغُو مَا فِيهِ. وَعِنْدَ الْإِمَامِ أَنَّ الثَّانِيَ وَإِنْ لَغَا لَا يَلْغُو مَا فِيهِ مِنْ الزِّيَادَةِ، كَمَنْ قَالَ لِعَبْدِهِ الْأَكْبَرِ سِنًّا مِنْهُ هَذَا ابْنِي لَمَّا لَغَا عِنْدَهُمَا لَمْ يَعْتِقْ الْعَبْدُ. وَعِنْدَهُ إنْ لَغَا فِي حُكْمِ النَّسَبِ يُعْتَبَرُ فِي حَقِّ الْعِتْقِ كَذَا فِي الْمَبْسُوطِ. اهـ. وَذَكَرَ فِي الْفَتْحِ أَنَّ هَذَا إذَا لَمْ يَشْهَدَا عَلَى أَنَّ الثَّانِيَ هَزْلٌ وَإِلَّا فَلَا خِلَافَ فِي اعْتِبَارِ الْأَوَّلِ، فَلَوْ ادَّعَى الْهَزْلَ لَمْ يُقْبَلْ بِلَا بَيِّنَةٍ ثُمَّ ذَكَرَ أَنَّ بَعْضَهُمْ اعْتَبَرَ مَا فِي الْعَقْدِ الثَّانِي فَقَطْ بِنَاءً عَلَى أَنَّ الْمَقْصُودَ تَغْيِيرُ الْأَوَّلِ إلَى الثَّانِي، وَبَعْضُهُمْ أَوْجَبَ كِلَا الْمَهْرَيْنِ لِأَنَّ الْأَوَّلَ ثَبَتَ ثُبُوتًا لَا مَرَدَّ لَهُ وَالثَّانِي زِيَادَةٌ عَلَيْهِ فَيَجِبُ بِكَمَالِهِ. ثُمَّ ذَكَرَ أَنَّ قَاضِي خَانْ أَفْتَى بِأَنَّهُ لَا يَجِبُ بِالْعَقْدِ الثَّانِي شَيْءٌ مَا لَمْ يَقْصِدْ بِهِ الزِّيَادَةَ فِي الْمَهْرِ، ثُمَّ وَفَّقَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ إطْلَاقِ الْجُمْهُورِ اللُّزُومَ بِحَمْلِ كَلَامِهِ عَلَى أَنَّهُ لَا يَلْزَمُ عِنْدَ اللَّهِ تَعَالَى فِي نَفْسِ الْأَمْرِ إلَّا بِقَصْدِ الزِّيَادَةِ وَإِنْ لَزِمَ فِي حُكْمِ الْحَاكِمِ لِأَنَّهُ يُؤَاخِذُهُ بِظَاهِرِ لَفْظِهِ إلَّا أَنْ يَشْهَدَ عَلَى الْهَزْلِ، وَأَطَالَ الْكَلَامَ فَرَاجِعْهُ: (رد المحتار، كتاب النكاح، باب المهر، مطلب فى احكام المتعة-3/112-113

৭। প্রশ্নঃ

বর্তমান বাজারমূল্য হিসেবে সর্বনিম্ন মোহরের পরিমাণ কত?

উত্তরঃ

সর্বনিম্ন মোহর হচ্ছে বর্তমান বাজারমূল্য হিসেবে ৩০ গ্রাম ৬১৮ মিলিগ্রাম রূপা।আর তোলা হিসেবে ৩ তোলা, ৬১৮ মিলিগ্রাম রূপা। [ফাতাওয়া কাসিমীয়া-১৩/৬৫১] আর মোহরে ফাতেমী ১৩১তোলা ৩মাশা রূপা বা তার সমমূল্য।গ্রাম হিসেবে দেড় কিলো, ৩০গ্রাম, ৯৯০মিলিগ্রাম রূপা। [ফাতাওয়া কাসিমীয়া-১৩/৬৫৩]

৮। প্রশ্নঃ

মোহরানা পরিশোধ ছাড়া স্ত্রীর সাথে রাত্রিযাপনের হুকুম কী?

উত্তরঃ

দেনমোহর বিয়ের আকদের পর প্রদান করাতে কোন সমস্যা নেই। তবে সহবাসের পূর্বে প্রদান করাই উত্তম। তবে যদি স্ত্রী দেনমোহর প্রদান করা ছাড়াই সহবাসের অনুমতি প্রদান করে তাহলে কোন সমস্যা নেই। বাকি স্ত্রী দেনমোহর প্রদান করা ছাড়া প্রথম সহবাসের পূর্বে বাঁধা প্রদান করতে পারবে। কিন্তু একবার সহবাস হয়ে গেলে আর বাঁধা দিতে পারবে না। কিন্তু স্বামীর জিম্মায় দেনমোহর আদায় না করলে তা ঋণ হিসেবে বাকি থেকে যাবে।স্ত্রী যদি উক্ত দেনমোহর মাফ না করে, আর স্বামীও তা পরিশোধ না করে, তাহলে কিয়ামতের ময়দানে স্বামীর অপরাধী সাব্যস্ত হবে। তাই দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করে দেয়া জরুরী।وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ۚ فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا [٤:٤]আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর। [সূরা নিসা-৪]فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:٢٤]অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা গ্রহণ করবে,তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ। [সূরা নিসা-২৪]وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ إِذَا آتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ [٥:٥]তোমাদের জন্যে হালাল সতী-সাধ্বী মুসলমান নারী এবং তাদের সতী-সাধ্বী নারী, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের পূর্বে, যখন তোমরা তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর। [সূরা মায়িদা-৫]وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ أَن تَنكِحُوهُنَّ إِذَا آتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ [٦٠:١٠]তোমরা, এই নারীদেরকে প্রাপ্য মোহরানা দিয়ে বিবাহ করলে তোমাদের অপরাধ হবে না। [সূরা মুমতাহিনা-১০]

৯। প্রশ্ন:

আমাদের এলাকার শরীফ সাহেব তার বন্ধুকে কথা দিয়েছিলেন যে নিজের বড় মেয়েকে বন্ধুর ভাতিজার সাথে বিয়ে দিবেন। দুই পরিবার মিলে যখন বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করার উদ্যোগ নেয় তখন হঠাৎ মেয়ে এ বিয়েতে অসম্মতি জানায়। মেয়ের বয়স ২১ বছর। এখন শরীফ সাহেব চাচ্ছেন, মেয়ের অমতেই বিয়ে পড়িয়ে দিবেন। এভাবে বিয়ে দেওয়া বৈধ হবে কি?

উত্তর:

প্রাপ্ত বয়স্কা মেয়ের সম্মতি ব্যতীত তাকে বিয়ে দেওয়া জায়েয নেই। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে মেয়ের অনুমতি ছাড়া তাকে সেখানে বিয়ে দেওয়া বৈধ হবে না। অবশ্য পিতা যদি এ অবস্থায় বিয়ে পড়িয়েই দেন তাহলে এ বিয়ে সহীহ হওয়া মেয়ের সম্মতির উপর নির্ভর করবে। সে যদি এ বিয়েকে মেনে নেয় তাহলে তা সহীহ হবে। অন্যথায় তা বাতিল গণ্য হবে।প্রকাশ থাকে যে, পিতামাতার পছন্দের ব্যাপারে মেয়ে বা ছেলের অমত থাকলে তা শুরুতেই বলা উচিত। আলোচনা অগ্রসর হয়ে যাওয়ার পর ছেলে বা মেয়ের অসম্মতি প্রকাশ করা ঠিক নয়। তাই আলোচনা একেবারে অগ্রসর হয়ে গেলে অভিভাবকের সিদ্ধান্তকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে।এছাড়া এমনিতেও মা বাবার সিদ্ধান্ত যেমনিভাবে মমতাপূর্ণ হয় তেমনি তা অভিজ্ঞতার কারণে মূল্যবানও হয়ে থাকে। তাই তাদের সিদ্ধান্ত ও পছন্দের মূল্যায়ন করা উচিত। অমত করলেও তা ভেবে চিন্তে করা উচিত।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪১৯; আলবাহরুর রায়েক ৩/১১০; ফাতহুল কাদীর ৩/১৬১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২৮৭; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৮

১০। প্রশ্নঃ

আল্লাহ ও নবীকে সাক্ষ্যি রেখে বিবাহ করলে তা শুদ্ধ হয়ে যায় কি?

উত্তরঃ

ইসলামী শরীয়তে বিবাহ শুদ্ধ হবার জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে। যথা-১বর ও কনেকে কিংবা তাদের প্রতিনিধিকে ইজাব তথা প্রস্তাবনা ও কবুল বলতে হয়।২উক্ত ইজাব ও কবুলটি বলতে হয় দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক মসলিম পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলার সামনে।৩ইজাব ও কবুলটি উভয় সাক্ষ্যি স্বকর্ণে শুনতে হবে।উক্ত তিনটির কোন একটি শর্ত না পাওয়া গেলে ইসলামী শরীয়তে বিবাহ শুদ্ধ হয় না।সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত সূরতে আপনার কাজিন ও হাফেজ ছেলেটির মধ্যকার বিবাহ শুদ্ধ হয়নি।আল্লাহ ও রাসূল সাঃ কে সাক্ষ্যি রেখে বিবাহ করার দ্বারা কোন বিবাহ শুদ্ধ হয় না। আর নবীকে সাক্ষ্যি রেখে বিবাহ করা একটি কুফরী কাজ। কারণ তখন নবীকে হাজির নাজির বিশ্বাস করতে হয়। নতুবা কিভাবে নবীকে সাক্ষ্যি রাখবে? কারণ সাক্ষী হবার জন্য উপস্থিত থাকা ও উক্ত কথাটি শুনা জরুরী। আর রাসূল সাঃ সবার কথা যেমন শুনতে পান না, তেমনি সকল স্থানে উপস্থিতও নয়।তাই এ উদ্ভট শব্দে কোন বিবাহতো শুদ্ধই হয় না। বরং এর দ্বারা মারাত্মক ধরণের গোনাহ সংঘটিত হয়। যা থেকে তওবা করা আবশ্যক। فى الدر المختار- ( و ) شرط ( حضور ) شاهدين ( حرين ) أو حر وحرتين ( مكلفين سامعين قولهما معا ) (الدر المختار ، كتاب النكاح،-3/9)অনুবাদ-বিবাহ সহীহ হওয়ার শর্ত হল শরীয়তের মুকাল্লাফ [যাদের উপর শরীয়তের বিধান আরোপিত হয়] এমন দুইজন আযাদ পুরুষ সাক্ষি বা একজন আযাদ পুরুষ ও দুইজন মহিলা সাক্ষি হতে হবে, যারা প্রস্তাবনা ও কবুল বলার উভয় বক্তব্য স্বকর্ণে উপস্থিত থেকে শুনতে পায়। {আদ দুররুল মুখতার-৩/৯, ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/২৬৮}
১১। প্রশ্নঃ আমার নাম সাইফুল। গত একবছর পূর্বে আমি একটি মেয়েকে পছন্দ করে তার পরিবারের কিছু লোকের উপস্থিতিতে বিবাহ করি। কিন্তু আমার পরিবারের কেহ জানতনা। আমরা স্বামী স্ত্রী দেখা করেছি এবং এক সাথে থেকেছি। এখন আমার মা বাবা জানতে পেরেছেন যে, আমি পালিয়ে বা তাদের না জানিয়ে বিবাহ করেছি। তাই তারা এই বিবাহ মেনে নিতে পারছেন না। তারা আমাকে স্রেফ বলে দিয়েছেন যে, আমি আমার স্ত্রী কে রাখতে পারবনা আর রাখলে তাদের কে ছেরে দিতে হবে। এর পিছনে কিছু কারন হচ্ছে, আমার বাবা একজন ইসলামিক মাইন্ডের লোক এবং সমাজে তার ভাল সুনাম রয়েছে। তিনি চাননা তার এই সুনাম নষ্ট হোক। তাই এমনটি করছেন। তাদের মানসিক অবস্থা দেখে আমিও তাদের পক্ষেই চলে গেছি। আমি আমার স্ত্রী র সাথে কথা বলিনা। আমার পরিবার চাচ্ছে আমার স্ত্রী কে অনেকটা চাপ দিয়ে আমাকে ডিভোর্স দিতে । কিন্তু আমার পরিবার মোহরানা টাকা দিতে রাজি নয়। এর পরিবর্তে কিছু খরচ বাবাদ অতি নগণ্য একটি পরিমাণ টাকা দিতে চাচ্ছে। আমি আমার পরিবারের পক্ষে থাকলেও খানিক ভাল আবার খানিক মন্দ থাকি। আমি আসলে বুঝতে পারছি না। আমি কাকে ছেড়ে থাকব? আমার মা বাবাকে নাকি আমার স্ত্রী কে? আমাকে কুরআন ও সহিহ হাদিস দ্বারা সমাধান দিবেন। আরও কোন কিছু জানার থাকলে আমাকে রিপ্লে করলে আমি জানিয়েদিব।আল্লাহ্ হাফেজ।উত্তরوعليكم السلام ورحمة الله وبركاتهبسم الله الرحمن الرحيمবিয়ে শাদী বাচ্চাদের কোন ঘরবাড়ি বানানোর খেলা নয় যে, ইচ্ছে হলেই যতেœর সাথে বানানো হবে, আবার ইচ্ছে হলেই ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে ফেলা হবে।বিয়ে শুধুই জৈবিক চাহিদা পূরণ নয় এটি একটি ইবাদতও বটে। বিয়ে সম্পর্কে যেমন আল্লাহ তাআলা কর্তৃক রয়েছে নির্দেশনা, তেমনি রাসূল সাঃ থেকে রয়েছে এর কার্যকরী পদ্ধতির বর্ণনা। ইচ্ছেমত যেভাবে ইচ্ছে, যাকে ইচ্ছে বিয়ে করার মানসিকতা বিয়ের মত পবিত্র সম্পর্কটিকেই কলুষিত করার নামান্তর।শুধু শারিরিক চাহিদা পূরণের হীন লালসায় যারা বিয়ে করে থাকেন, তাদের কাছে বিয়ে একটি আনন্দ উপভোগের বস্তু হলেও ইসলামী শরীয়তে বিয়ের রয়েছে আলাদা মর্যাদা। এর মাধ্যমে ছেলে ও মেয়ের চরিত্র ও ও সম্মান যেমন নিরাপদ হয়। তেমনি পরিবার পরিবারে সৃষ্টি হয় আত্মীয়তার মধুর সম্পর্ক। আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির ধারাবাহিকতায় একটি অনন্য শালিন ও সুন্দর নজির উপস্থাপিত হয়। মানুষ যে অন্য সকল প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠ তাও প্রতিভাত হয়ে উঠে বিয়ের অনুপম বন্ধনের দ্বারা। কারণ মানুষ ছাড়া আর কোন প্রাণীর মাঝে বৈবাহিক সম্পর্ক নেই। কিন্তু সবার মাঝেই জৈবিক চাহিদা পূরণের মানসিকতা আছে। বেহায়াপনা, উলঙ্গপনা আর নোংরামী থেকে মুক্ত থাকতে ইসলামী শরীয়তে জৈবিক চাহিদা পুরণের জন্য বিয়েকে করেছে অলঙ্ঘণীয় বিধি। সেই সাথে মোহর, বাসস্থান, খোরপোষ ইত্যাদি আবশ্যক করে দিয়ে বিয়েকে করেছে একটি অর্থবহ সম্পর্কের মাধ্যম।কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল, সুন্দর ও শালীন এ মধুর সম্পর্ককে দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে কতিপয় ভাইয়েরা খেল-তামাশার বস্তু বানিয়ে নিয়েছে। বিয়ে করতে যেমন কোন বাইন্ডিং নেই, তেমনি তালাক দেয়ার জন্যও কোন চিন্তা-ফিকির বা ধর্মীয় বিষয়ের লেহাজ নেই। এ যেন ছেলে খেলা। ইচ্ছে হলেই গড়ে দিল। ইচ্ছে হলেই ভেঙ্গে দিল।এরকম ছেলেমানুষী করা থেকে সকলকেই বেঁচে থাকতে হবে। বিয়ে করার সময় যেমন ইসলামী শরীয়তকে সামনে রেখে চিন্তা ফিকির করে, পরিবারের সাথে আলাপ করে, মুরুব্বীদের সাথে পরামর্শ করে করা উচিত। তেমনি তালাক দেয়ার ক্ষেত্রেও দ্বীনকে সামনে রেখে চিন্তা ফিকির করে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। মনে চাইতেই হুট করে বিয়ে করে ফেলা যেমন বোকামী, তেমনি হুট করে তালাক দিয়ে ফেলাটাও আহমকী।পিতা-মাতার রক্ত-ঘামের উপর প্রতিষ্ঠিত আপনার শরীর। তাদের কুরবানীতেই আজ যৌবনদীপ্ত হয়েছে আপনার শরীর। আপনার শরীরের এ শক্তি, যৌবনের এ উন্মাদনা শরীরে সিঞ্চিত করতে আপনার পিতা-মাতাকে কত কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে বলাই বাহুল্য। মায়ের অসংখ্য নির্ঘুম রাত, মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়েও আপনাকে বাঁচানোর আকুতি, পিতার রক্ত পানি করা উপার্জন ধীরে ধীরে আপনাকে যৌবনময় করেছে। আপনাকে দুর্বল থেকে সবলে পরিণত করেছে। কিন্তু বিয়ের মত এত বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় সেই পিতা-মাতার মতামতকে ভুলে গেলেন ? পিতা-মাতার অমতে বিয়ে করাটা যেমন অমানবিক ও দোষণীয় কাজ।তার চেয়েও কম দোষণীয় নয়, যে মেয়ে তার পিতা-মাতা, ঘর-বাড়ি সব কিছু ছেড়ে কেবলি আপনার জন্য আপনার কাছে ছুটে এসেছে তাকে নিষ্ঠুরের মত তাড়িয়ে দেয়া।পিতা-মাতার অনুমতি ছাড়া, তাদের অসন্তুষ্টিতে বিয়ে করাটা যেমন ঠিক হয়নি। আর বর্তমানে বিয়ে করা মেয়েকে তালাক দিয়ে দেয়াও হবে অমানবিক ও জুলুম।তাই আপনি আপনি আপনার পিতা-মাতাকে বুঝানোর চেষ্টা করুন। “আপনার পিতা মাতা বিয়েটা মেনে নিচ্ছে না” শুধু এই কারণে তালাক দেয়া জায়েজ হবে না।أَمَّا بِاعْتِبَارِ أَصْلِ الْجَوَازِ فَلَا يَلْزَمُهُ طَلَاقُ زَوْجَةٍ أَمَرَاهُ بِفِرَاقِهَا، وَإِنْ تَأَذَّيًا بِبَقَائِهَا إِيذَاءً شَدِيدًا؛ لِأَنَّهُ قَدْ يَحْصُلُ لَهُ ضَرَرٌ بِهَا، فَلَا يُكَلَّفَهُ لِأَجْلِهِمَا؛ إِذْ مِنْ شَأْنِ شَفَقَتِهِمَا أَنَّهُمَا لَوْ تَحَقَّقَا ذَلِكَ لَمْ يَأْمُرَاهُ بِهِ فَإِلْزَامُهُمَا لَهُ مَعَ ذَلِكَ حُمْقٌ مِنْهُمَا، وَلَا يُلْتَفَتُ إِلَيْهِ، (مرقاة المفاتيح، باب الكبائر، الفصل الثالث-1/132)وَأَمَّا الطَّلَاقُ فَإِنَّ الْأَصْلَ فِيهِ الْحَظْرُ، بِمَعْنَى أَنَّهُ مَحْظُورٌ إلَّا لِعَارِضٍ يُبِيحُهُ، وَهُوَ مَعْنَى قَوْلِهِمْ الْأَصْلُ فِيهِ الْحَظْرُ وَالْإِبَاحَةُ لِلْحَاجَةِ إلَى الْخَلَاصِ، فَإِذَا كَانَ بِلَا سَبَبٍ أَصْلًا لَمْ يَكُنْ فِيهِ حَاجَةٌ إلَى الْخَلَاصِ بَلْ يَكُونُ حُمْقًا وَسَفَاهَةَ رَأْيٍ وَمُجَرَّدَ كُفْرَانِ النِّعْمَةِ وَإِخْلَاصِ الْإِيذَاءِ بِهَا وَبِأَهْلِهَا وَأَوْلَادِهَا، (رد المحتار، كتاب الطلاق-4/428، منحة الخالق على البحر الرائق-3/413)বিঃদ্রঃআমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য দলীল শুধু কুরআন ও সহীহ হাদীস নয়। আমাদের গ্রহণযোগ্য দলীল হল চারটি। যথা-১-কুরআন। ২-সুন্নাত। ৩-ইজমায়ে উম্মত। ৪-কিয়াসে শরয়ী।ইসলামী শরীয়তের বিধান উক্ত চারটি বিষয় দ্বারাই প্রমাণিত। শুধু কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা নয়। কুরআন ও সহীহ হাদীসের দলীল চাওয়া মানে হল, পরোক্ষভাবে বাকি দুই দলীল তথা ইজমা ও কিয়াসকে দলীল হতে অস্বিকৃতি জানানো। সেই সাথে হাদীসের অসংখ্য প্রকারের মাঝে শুধু এক প্রকার হাদীসকে দলীলযোগ্য বলে অসংখ্য হাদীসকে অস্বিকার করার নামান্তর। কারণ হাদীস শুধু সহীহ নয়। হাসান লিজাতিহী হয়, হাসান লিগাইরিহী হয়, মুরসাল হয় ইত্যাদি ও হাদীস।তাই “কুরআন ও সহীহ হাদীসের দলীল চাই” টাইপের বক্তব্য পরিহার করা উচিত।

১১) প্রশ্নঃ

মেয়েদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স?

উত্তরঃ

ইসলামের মেয়েদের বিবাহের কোন বয়সসীমা নির্দিষ্ট করে দেয়নি। নাবালেগের বিবাহও শুদ্ধ হয়ে যায়। {আলবাহরুর রায়েক-৩/২০৬)তবে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর বিবাহ করা উচিত মর্মে কুরআনে কারীমের আয়াত দ্বারা ইংগিত পাওয়া যায়।وَابْتَلُوا الْيَتَامَى حَتَّى إِذَا بَلَغُوا النِّكَاحَ فَإِنْ آنَسْتُمْ مِنْهُمْ رُشْدًا فَادْفَعُوا إِلَيْهِمْ أَمْوَالَهُمْআর এতীমদের প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখবে, যে পর্যন্ত না তারা বিয়ের বয়সে পৌঁছে। যদি তাদের মধ্যে বুদ্ধি-বিবেচনার উন্মেষ আঁচ করতে পার, তবে তাদের সম্পদ তাদের হাতে অর্পন করতে পার। {সূরা নিসা-৬}এমন সময় বিবাহ করা উচিত, যখন বিয়ে করার দ্বারা মেয়েদের সতিত্ব ও সম্মান হিফাযত করা বিষয়ে কোন শংকা বাকি না থাকে।

১২। প্রশ্নঃ

বিয়ের আগে নারী-পুরুষের প্রেম সম্পর্কে ইসলাম কি বলে ?

উত্তরঃ

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। বিবাহ পূর্ব প্রেম হারাম। আল্লাহ বলেন - • "তোমাদের জন্যে হালাল সতী-সাধ্বী মুসলমান নারী এবং তাদের সতী-সাধ্বী নারী, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের পূর্বে, যখন তোমরা তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর তাদেরকে স্ত্রী করার জন্যে, কামবাসনা চরিতার্থ করার জন্যে কিংবা গুপ্ত প্রেমে লিপ্ত হওয়ার জন্যে নয়।" (সূরা মায়িদা : ৫) সুতরাং তারা স্বাধীনভাবে লালসা পূরণ কিংবা গোপনে লুকিয়ে প্রেমলীলা করবে না । পর্দার আয়াতে আল্লাহ বলেন - • মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। (সূরা নুর 30) এখানে পুরুষদের চোখ নীচু রাখতে এবং লজ্জা স্থান হিফাজত করতে বলা হয়েছে। • "ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।" (সূরা নুর 31) এখানে নারীদেরও একই কথা বলা হয়েছে, পর্দা করার কথা বলা হয়েছে আর নারীরা কাদের সাথে সাক্ষাত করতে পারবে তাদের একটা তালিকা দেওয়া হয়েছে • হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। (সূরা আহযাব 32) • হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব 33:59) এখানে পর্দাকরার নির্দেশ আরো পরিস্কার ভাষায় বলা হয়েছে। নবীপত্নীদের উল্লেখ করা হলেও তা সকল মুসলিম নারীর উপর প্রযোজ্য । যেখানে দৃষ্টি নীচু ও সংযত রাখা,কোমল ভাবে কথা না বলা, লজ্জা স্থান হিফাজত করার কথা এবং পর্দা করার কথা বলা হয়েছে আর সূরা মায়িদাতে গোপন প্রেমলীলাকে নিষেধ করা হয়েছে সেখানে বিবাহ পূর্ব প্রেম বৈধ হতে পারে কি করে? এটা হারাম। ব্যভিচারের ব্যপারে আল্লাহ আরো বলেন । • আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। (সূরা বনী ইসরাইল 32) জিনার নিকট যাওয়াই নিষেধ অর্থাৎ যে সকল জিনিস জিনার নিকটবর্তী করে দেয় তার কাছে যাওয়াই নিষেধ। বিবাহ পূর্ব প্রেম নর-নারীকে জিনার নিকটবর্তী করে দেয় আর জিনা মারাত্মক একটি কবিরা গুণাহ।আল্লাহ বলেন - • এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের এবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কেয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুন হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে। (সূরা ফুরকান 68- 69) বিবাহপূর্ব প্রেম অনেক সময় বান্দাহকে শিরকের নিকটবর্তী করে দেয়। কারণ অনেক সময় তারা একে অপরকে এতটাই ভালবাসা শুরু করে দেয় যে প্রকার ভালবাসা পাওয়ার দাবীদার একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহ বলেন - • আর কোন লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী। আর কতইনা উত্তম হ’ত যদি এ জালেমরা পার্থিব কোন কোন আযাব প্রত্যক্ষ করেই উপলব্ধি করে নিত যে, যাবতীয় ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহর আযাবই সবচেয়ে কঠিনতর। ( সূরা বাকারা 165) ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে প্রেম তৈরি হবে তখনই যখন তারা দুজনই হিজাব ভঙ্গ করলে । কোন একজন যদি হিজাব কোনমতেই ভঙ্গ না করে তবে কোন মতেই প্রেম দাঁড়াবে না । যেসব ছেলে মেয়ের অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে তারা হিজাব কোনমতেই ভঙ্গ করে না । মনে মনে কাউকে ভাল লাগলেও তারা হিজাব ভঙ্গ করে পথচ্যুত হয় না । হিজাব মানে শুধু পোশাক নয় । পোষাক থকে আচার- আচরণ পর্যন্ত সব কিছুই এর অন্তর্ভূক্ত । তারা বিয়ের প্রস্তাব দেয় তা না হলে সবর করে । মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের মুসলিম ভাই ও বোনদের এই হারাম কাজ থেকে হিফাজত করুন। আশা করি উত্তরটি পেয়েছেন ।

১৩। প্রশ্নঃ

আমার একজনকে ভালো লাগে, আমি তাকে ভুলে থাকতে চাই কিন্তু মাঝে মাঝে তার কথা মনে পড়ে। তার কথা আমি কাউকে বলি নি। আমি আমার বাবা-মাকে দুঃখ দিতে চাই না। এই অবস্থায় আমার করণীয় কি?

উত্তর :

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। আপনার যদি কোন ছেলেকে ভালো লেগে যায়, তাহলে দুইটা কাজ করা যায়ঃ
  1. ছেলেকে বিয়ে করে ফেলা।
  2. তাকে বিয়ে করা সম্ভব না হলে, ধৈর্য্যধারণ করা।
ইসলামের বিধান হলো, ছেলেমেয়ে বালেগ হলে যত দ্রুত সম্ভব তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করা। এটাই রাসূলুল্লাহ (সা) এর নির্দেশ। জলদি বিয়ে করার মাধ্যমে নানা রকম ফিতনা থেকে দূরে থাকা অনেক সহজ হয়ে যায়। আর বিয়েকে বলা হয় দ্বীন ইসলামের অর্ধেক, তাহলে চিন্তা করুন, একে কতো বেশি মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। সুবহান আল্লাহ! আজকাল তো বাবা-মা ২৫-২৬ বছর বয়স না হলে বিয়ের কথা চিন্তাতেই আনেন না, ফলে ছেলেমেয়েরা নানা রকম ফিতনায় জড়িয়ে পড়ে, আর আমাদের সমাজে সেটা হওয়া খুবই স্বাভাবিক! তাই যতো জলদি সম্ভব বিয়ের জন্য চেষ্টা করতে হবে। লজ্জা কাটিয়ে উঠে বাবা-মা কে বিয়ের ব্যাপারে বলতে হবে, তারা রাজি না হলে, রাজি করানোর জন্য চেষ্টা করতে হবে। ইনশা আল্লাহ তখন আল্লাহ তাদের মনকে গলিয়ে দেবেন। এবারে, আরেকটা জরুরি বিষয়। যাকে ভালো লেগে গেছে, তাকেই কি বিয়ে করা উচিত? ইসলামে বলা হয়েছে, "নারীদেকে সাধারণত চারটি কারণে বিয়ে করা হয়ে থাকেঃ
  1. তাকওয়া (আল্লাহ ভীরুতা)
  2. সৌন্দর্য
  3. বংশমর্যাদা বা স্ট্যাটাস
  4. প্রাচুর্য
যদি কেউ তো দ্বীন দেখে বিয়ে করলো, সে লাভবান হলো।" [ বুখারী, মুসলিম ] সুতরাং বিয়ের ক্ষেত্রে, একজন পাত্র বা পাত্রীর মাঝে কতোটা তাকওয়া আছে- সেটাই সবচেয়ে জরুরি ব্যাপার। দেখা গেলো, আপনি আপনার পছন্দের একজনকে বিয়ে করলেন, অথচ সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজটা পর্যন্ত ঠিক মত পড়ে না! তাহলে এমন ছেলে যখন একদিন আপনার সন্তানের বাবা হবে, তাকে দেখে সন্তানেরা কি শিখবে? এটা মনে রাখা দরকার, আমরা বিয়ে করে শুধু স্বামী/স্ত্রী বাছাই করি না, বরং আমাদের সন্তানদের জন্য বাবা/মা নির্ধারণ করি। তাই সে কতোটা আল্লাহভীরু সেটাই দেখবার বিষয়। # আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন,‘যদি এমন কেউ তোমাদের বিয়ের প্রস্তাব দেয় যার ধার্মিকতা ও চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট তবে তোমরা তার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেবে। যদি তা না করো তবে পৃথিবীতে ব্যাপক অরাজতা সৃষ্টি হবে।’[তিরমিযী: ১০৮৪] আজকাল বাবা-মা বিয়ের সময় অনেক কিছু দেখতে যান, এতোকিছু দেখতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত বিয়েটাই হয় না! তাই বিয়ের সময় যতোটা সম্ভব সমঝোতা করার চেষ্টা করতে হবে। আর বাবা-মাকেও এই হাদীসের ওপর আমল করার চেষ্টা করতে হবে। আচ্ছা, এই গেলো বিয়ের কথা। যদি ছেলের দ্বীন ও চরিত্র ভালো হয়, এবং আপনি তাকে বিয়ে করতে চান, তাহলে ইসলাম আপনাকে সে অনুমতি দিয়েছে। তবে ছেলে যদি ভালো ঈমানদার ও সচ্চরিত্রের না হয়, তবে তাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করুন। মনের মধ্যে তার কথা আসলে, "আসতাগফিরুল্লাহ" বলে অন্য কোন ভালো কাজে মনোনিবেশ করুন এবং আল্লাহর কাছে আশ্রয় চান। তার কথা কখনোই ইচ্ছাকৃত ভাববেন না, কিংবা তাকে নিয়ে কল্পনার রাজ্যে ডুবে যাওয়া উচিত হবে না। আল্লাহ আমাদের গুনাহ ও ভুল-ত্রুটি মাফ করুক, আমীন! আমার দেখা বিভিন্ন ঘটনায় এমন হয়েছে যে, অনেকে জাহেলিয়াতে থাকা অবস্থায় প্রেম করতো। পরে ইসলামের বুঝ পাওয়ার পরে, ভালো দ্বীনদার পাত্রকে বিয়ে করেছে। কিন্তু এরপরে তাদের আর কখনো পুরনো প্রেমিকের কথা স্মরণে আসে নাই। সুতরাং এইসব শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে দূরে থাকার একটি উত্তম উপায়ও হলো বিয়ে করে ফেলা। আর আল্লাহ তা'আলাই ভালো জানেন।

 

No comments:

Post a Comment