Thursday, April 29, 2021

রুকইয়াহ শারইয়্যার গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা

 

রুকইয়াহ শারইয়্যার গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা
---------------------
[ক]
- সেলফ রুকইয়ার প্রয়োজনীয়তা
সেলফ রুকইয়াহ অর্থাৎ নিজের জন্য রুকইয়াহ নিজেই করার প্রয়োজন অপরিসীম। যেকোন সমস্যা শুরুর আগেই যদি এর সমাধান জানা থাকে, তাহলে এটা বেশিদূর গড়ায় না। তাই আমি যদি জানি কোন সমস্যায় সেলফ রুকইয়ার নিয়ম কি, তাহলে আমার ছোটখাটো সমস্যা অনেক বড় হবে না।
আরেকটা বিষয় হল, রুকইয়ার পাশাপাশি প্রচলিত ডাক্তারের চিকিৎসা নিতেও কোন মানা নেই।
সেলফ-রুকইয়াহ অর্থাৎ নিজের জন্য নিজে রুকইয়াহ করাকে ফার্স্ট এইড বা প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে নিতে পারেন, যেমনটা সাধারণ রোগের ক্ষেত্রে আমরা করে থাকি। কোন সমস্যা হলে প্রথমে ফার্মাসি থেকে বা ঘরের ঔষধের বাক্স থেকে একটা ঔষধ নিয়ে খাই, এরপর প্রয়োজন হলে এলাকার ডাক্তার বা অন্য কারও পরামর্শ নিই, এরপরেও ভালো না হলে তখন বড় ডাক্তার দেখাই।
অনুরূপভাবে রুকইয়ার ক্ষেত্রেও প্রথমে রুকইয়াহ বই, ব্লগ অথবা ফেসবুক পেইজ থেকে নিয়মকানুন দেখে নিজেই রুকইয়াহ করুন। এরপর প্রয়োজন হলে আপনার চেয়ে ভালো জানে এমন কারও পরামর্শ নিন, তারপরেও যথেষ্ট না হলে তখন অভিজ্ঞ কাউকে দিয়ে রুকইয়াহ করান।
.
[খ]
- সার্বিকভাবে রুকইয়ার উপকারিতা
কেউ কেউ প্রশ্ন করতে পারে, কতশত দরকারি বিষয় আছে! ফিকহ, জিহাদ, আকাইদ, ইসলাহ–তাযকিয়া কত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। ইলমের খিদমত করেন, আল্লাহর রাস্তায় সময় দেন – এসব না করে কেন এই রুকইয়াহ নিয়ে কষ্ট করছেন? কেউ আবার বলেন, এসব কাজ ছোটখাটো মোল্লাদের হাতে ছেড়ে দেন, আহলে ইলমরা এসব কেন করবে?
তাদের জন্য সহজ কথা, আমরা খুব ভালোভাবেই জানি যাদু - বদনজর - জ্বিন ইত্যাদি সমস্যাগুলো মানুষের মাঝে যত ব্যপক, এর সমাধানের ব্যাপারে মানুষ ততটাই অজ্ঞ। এই সমস্যায় মানুষ যে পরিমাণে আক্রান্ত, বিষয়টা তাঁর চেয়ে বহুগুণ বেশি অবহেলিত।
আর শরঈ সমাধানের সাথে তো আমাদের দেশের ৯৯.৯৯% মানুষই পরিচিত নয়। বরং অধিকাংশ মানুষের ভ্রান্ত বিশ্বাস হচ্ছে “কুফরি যাদু কাটতে কুফরিই করা লাগবে” (নাউযুবিল্লাহ)। এজন্য তাঁরা কবিরাজ-বৈদ্যদের কাছে যায়, আর দুনিয়া এবং আখিরাতের শুধু ধ্বংসই অর্জন করে।
আমাদের চারপাশে অসংখ্য মানুষ এসব সমস্যায় আক্রান্ত, আমরা কেউ নিজেই ভিকটিম, কারো পরিবারস্থ লোক, আর কারো আত্মীয়স্বজন। বহু বৈদ্য – কবিরাজের কাছে ঘুরে ঘুরে বহু পরিশ্রম করে তারা প্রচুর টাকা পয়সা নষ্ট করে। এর পেছনে মেধা, শ্রম, সময় ব্যয় করে। অবশেষে কেউ সুস্থ জীবনের আশা ছেড়ে দেয়, আর কেউ স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়। আর কবিরাজের কাজগুলো কুফরি-শিরকি হওয়ার কারণে নষ্ট হয় আখিরাতেও পুঁজিও।
আমার - আপনার চারপাশে এমন মানুষের অভাব নেই। আমাদের দেশে হয়তো এমন একটা প্রাপ্তবয়স্ক লোকও পাওয়া যাবে না, যার নিজের পরিবার অথবা আত্মীয়স্বজনদের মাঝে কেউই এজাতীয় সমস্যায় ভুগছে না। এদের দুনিয়া এবং আখিরাতে ধ্বংস থেকে বাঁচানোর জন্যই রুকইয়াহ শারইয়াহ দরকার!
তবে আমি বলছি না, আপনি সব ছেড়ে রুকিয়ার জন্য নিবেদিত হয়ে যান, বরং আপনি যা করছেন সেটাই করেন। তবে সম্ভব হলে মাঝেমাঝে এবিষয়ে অল্প কিছুক্ষণ সময় দেন, কেউ সমস্যা আক্রান্ত হলে তাকে এবিষয়ে ধারণা দেন। এতে ব্যক্তি-সমাজ সবারই উপকার।
এর বিনিময়ে নিচের ফজিলতগুলো পাবেন ইনশাআল্লাহ!
.
১. দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার সুযোগ
একজন রাক্বি মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার চমৎকার সুযোগ পেয়ে থাকেন, যা রুকইয়ার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর জ্বিন যাদু ইত্যাদি সমস্যাগুলো নিয়ে যারা আসে, তাদের অনেকেই থাকে এমন, যারা দ্বীন পালনের ব্যাপারে উদাসীন, রুকইয়াহ করার সময় তাদেরকে দাওয়াত পৌঁছানোর সুযোগ পাওয়া যায়। আর এদের বিরাট একাংশ হয় এমন, যারা সুস্থতা লাভের লাভের আশায় কবিরাজ-বৈদ্যদের কাছে ঘুরে ঘুরে ইতিমধ্যে কুফরি বা শিরকি কাজ করে ফেলেছে। তাদেরকে আল্লাহর একত্ববাদের বার্তা পৌঁছানোর সুযোগ হয়।
অবশ্যই রাক্বিদের এই সুযোগ কাজে লাগানো উচিত। কেননা যুগে যুগে এটা নবীদের সুন্নাহ, মানুষ দুনিয়াবি প্রয়োজন নিয়ে আসলেও তাঁর আখিরাতের দীর্ঘস্থায়ী কল্যাণকে প্রাধান্য দেয়া। এক্ষেত্রে ইউসুফ ؑ এর ঘটনা লক্ষণীয়। দু’জন লোক তাঁর কাছে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে এসেছিল, তিনি তাদের সমস্যা এবং সময়ের প্রতি লক্ষ রেখে অল্প কথায় তাওহীদের দাওয়াত পৌছে দিয়েছেন, এরপর তাদের স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানিয়েছেন।
এছাড়া খাইবার যুদ্ধের ঘটনা খেয়াল করুন, আলী রা. কে নির্দেশ দিয়েছিলেন- তুমি তোমার পথ ধরে তাদের মাঝে পৌছে যাও, এরপর তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান কর। আর তাদের উপর আল্লাহর হকগুলোর ব্যাপারে সংবাদ দাও। কারণ, আল্লাহর কসম, তোমার মাধ্যমে যদি একটা মানুষকেও আল্লাহ হিদায়াত দেন, তবে তা তোমার জন্য লাল উট প্রাপ্তি থেকেও উত্তম হবে। (সহিহ মুসলিম ৪৪২৩)
.
২. কোরআনের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি।
যিনি রুকইয়াহ করেন, প্রতিদিন তাকে দীর্ঘক্ষণ কোরআন তিলাওয়াত করতে হয়। এতে কোরআনের সাথে সম্পর্ক দিনদিন বৃদ্ধি পায়।
এর সাথে কোরআন পাঠের বিবিধ ফযিলত তো আছেই। যেমনঃ কোরআন তিলাওয়াতের প্রতিটি হরফে সওয়াব! আপনি যদি প্রতিদিন এক ঘন্টাও রুকইয়াহ করেন, এই একঘণ্টায় আপনার ঝুলিতে অনেকগুলো সওয়াব জমে যাবে।
এছাড়া রাসুল ﷺ বলেছেন, “তোমরা কুরআন পাঠ কর। কারণ কিয়ামতের দিন কুরআন তার পাঠকের জন্য সুপারিশ কারী হবে।” (মুসলিম ১৩৩৭)
.
৩. মুসলিম ভাই-বোনদের বিপদে সহায়তা করা।
প্রথমে একটি হাদিস খেয়াল করি, জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এক সময় ঝাড়ফুঁক নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। পরে আমর ইবনু হাযমের বংশের লোকেরা এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের নিকট একটি রুকইয়াহ ছিল, যা দিয়ে আমরা বিচ্ছুর ছোবলে ঝাড়ফুঁক করতাম, এখন আপনি তো ঝাড়ফুঁক নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তারা সেটা রাসুল ﷺ এর নিকট উপস্থাপন করল। তখন তিনি বললেন, কোন সমস্যা দেখতে পাচ্ছি না তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের কোনও উপকার করতে সমর্থ হয়, তাহলে সে যেন তা করে। (সহিহ মুসলিম ৪০৭৮)
এই হাদিসে আমরা দেখলাম রুকইয়ার মাধ্যমে যে মানুষের উপকার করা যায়, এটা স্বয়ং রাসুলুল্লাহ ﷺ স্বীকৃতি দিয়েছেন।
আর একজন মুসলিম ভাইকে সাহায্য করার অনেক অনেক লাভ আছে। যেমন: আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় কোন মুমিনের কোন বিপদ-আপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার বিপদ দূর করবেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪৮৬৭)
হাদিসের গ্রন্থসমূহে বিপদগ্রস্ত ভাইবোনদের সহায়তা করার আরও অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে, রুকইয়াহ করে আপনি সেসব লুফে নিতে পারেন।
.
৪. কুফরের বিরুদ্ধে এবং তাওহিদের পক্ষে সংগ্রাম করা।
ইবনে তাইমিয়া রহ. এজন্য মুখলিস রাক্বিদের ব্যাপারে বলেছেন,
وجنب الذنوب التي بها يسلطون عليه فإنه مجاهد في سبيل الله وهذا من أعظم الجهاد فليحذر أن ينصر العدو عليه بذنوبه
“রাক্বির উচিত গুনাহ থেকে দূরে থাকা, যেন এই সুযোগে জ্বিন তাঁর ওপর প্রভাব বিস্তার না করতে পারে। সে তো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারির ন্যায়। আর রুকইয়াহ করাও জিহাদের একটি উত্তম পদ্ধতি। তাই তাঁর সতর্ক থাকা উচিত, যেন গুনাহ তাঁর শত্রুকে বিজয়ী হতে সহায়তা না করে।” (মাজমুউল ফাতওয়া ১৯/৫৩, রিসালাতুল জ্বিন ৬৫পৃ)
লক্ষণীয়ঃ ইবনে তাইমিয়া রহ. মূলত এই কথাটি মুবালাগা হিসেবে বলেছেন, উনার পূর্বাপর কথাগুলোয় গুরুত্বারপ করার জন্য। হাক্বিকী জিহাদের সাথে রুকইয়াহ চর্চার তুলনা যদিও হয় না, তবুও ইবনে তাইমিয়া রহ. এর কথাটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, হক্বের ব্যাপারে অনড় একজন রাক্বি সমাজ থেকে কুফর-শিরক দূর করার জন্য নিজের প্রাণ ঝুঁকিতে ফেলে মেহনত করেন, আর যখন কুফরি যাদু আক্রান্ত কারো চিকিৎসা করে অথবা শয়তান ভর করা ব্যক্তির ওপর রুকইয়াহ করে, তখন সে আল্লাহর কালামের সাহায্যে সরাসরি শয়তানি শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে।
.
৫. তাওয়াককুল।
রাসূলুল্লাহ ﷺ একটি হাদীসে বলেন, “আমার উম্মতের মধ্যে ৭০,০০০ হাজার লোক বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” রাসূলুল্লাহ ﷺ এই হাদীসের মধ্যে এসব ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন, আর বলেছেন “এরা শুধুমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করে।” আর এমন লোকদের উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেছেন, “যারা রুকইয়ার জন্য অনুরোধ করে না, শুভ-অশুভ লক্ষণ নির্ণয় করায় না, ছ্যাকা দিয়ে চিকিৎসা করে না বরং শুধু তাদের রবের উপরই ভরসা করে।” (বুখারি ৫৪২০, মুসলিম ৩২৩)
একজন রাক্বি এই হাদীসে উল্লিখিত ব্যক্তিদের মাঝে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্য দাবিদার। কারণ, সে নিজেই রুকইয়াহ করে, অন্যের কাছে গিয়ে রুকইয়াহ করানোর প্রয়োজন তাঁর নাই। আর সে যখন আল্লাহর অনুগ্রহে জটিল জটিল সমস্যা সামাল দেয়, শক্তিশালী শয়তানদের শায়েস্তা করে, ভয়ংকর সব যাদু নষ্ট করে – আর এতসব অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে স্রেফ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ওপর ভরসা রেখে লড়ে। একের পর এক নুসরত প্রত্যক্ষ করে মুখলিস রাক্বির ঈমান এক অনন্য স্তরে পৌঁছে যায়। বস্তুতঃ এটা এমন এক মেহনত, যেখানে আল্লাহ ওপর তাওয়াককুল ব্যতীত কোন দুনিয়াবি সাহায্য উপকারে আসে না।
মোটকথা, এভাবেই একজন রাক্বি তাওয়াককুলে পুর্ণতা লাভ করে। সুতরাং তাঁর জন্য খুবই যৌক্তিক, সে এই পুরস্কার আশা করতে পারে।
কী ভাবছেন এখন? আপনি রুকইয়াহ করবেন তো?

মুখতাসার রুকইয়াহ শারইয়্যাহ | সারসংক্ষেপ রুকইয়াহ শারইয়্যাহ!

 

মুখতাসার রুকইয়াহ শারইয়্যাহ | সারসংক্ষেপ রুকইয়াহ শারইয়্যাহ!

[১] অবতরণিকা-

রুকইয়া শারইয়াহ বিষয়ে অনেক লম্বা চওড়া লেখা আছে, ইতোমধ্যে আমাদের রুকইয়াহ শারইয়াহ সিরিজও শেষ। আল্লাহর অনুগ্রহে “রুকইয়াহ” (আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ) নামে একটি বইও প্রকাশ হয়েছে। এসব যায়গায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আজ আমরা সংক্ষেপে রুকইয়াহ পরিচিতি এবং বিভিন্ন সমস্যার জন্য রুকইয়াহ করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানবো। বলতে পারেন এই লেখাটি অতীত ও ভবিষ্যতের পুরো রুকইয়াহ সিরিজের সারাংশ।

প্রবন্ধটির প্রথম সংস্করণ ১৭ই জুন ২০১৭তে প্রকাশ হয়েছিল। এরপর অনেক কিছু সংশোধন এবং সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। এটি পঞ্চম সংস্করণ। এখানে আরও কিছু যোগ করার পরামর্শ থাকলে জানাবেন, আর কোনো পুস্তক-পত্রিকা অথবা ফেসবুকের বাহিরে অন্য কোথাও প্রকাশ করতে চাইলে অনুগ্রহ করে অনুমতি নিবেন।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে হিফাজত করুন। আমীন!

[২] প্রাথমিক ধারণা-

রুকইয়া, রুকইয়াহ, রুকিয়া, রুকিয়াহ, রুকাইয়া সহ বিভিন্ন উচ্চারণ প্রচলিত রয়েছে, যার মূল হচ্ছে আরবি শব্দ (رقية) আর শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ রুকইয়াহ অথবা রুকইয়া।

রুকইয়াহ কী? - রুকইয়াহ অর্থ ঝাড়ফুঁক করা, মন্ত্র পড়া, তাবিজ-কবচ, মাদুলি ইত্যাদি। আর রুকইয়াহ শারইয়্যাহ (رقية شرعية) মানে শরিয়াত সম্মত রুকইয়াহ, কোরআনের আয়াত অথবা হাদিসে বর্ণিত দোয়া দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা। তবে স্বাভাবিকভাবে ‘রুকইয়া’ শব্দটি দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা বুঝায়। এই ঝাড়ফুঁক সরাসরি কারো ওপর হতে পারে, অথবা কোনো পানি বা খাদ্যের ওপর করে সেটা খাওয়া অথবা ব্যাবহার করা হতে পারে। এক্ষেত্রে রুকইয়ার পানি, অথবা রুকইয়ার গোসল ইত্যাদি পরিভাষা ব্যবহার হয়। আর সবগুলোই সালাফে সালেহিন থেকে বর্নিত আছে।

রুকইয়ার বিধানঃ রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “রুকইয়াতে যদি শিরক না থাকে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৫৪৪)

বিশুদ্ধ আক্বিদাঃ উলামায়ে কিরামের মতে রুকইয়া করার পূর্বে এই আক্বিদা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া উচিত ‘রুকইয়া বা ঝাড়ফুঁকের নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই, সব ক্ষমতা আল্লাহ তা’আলার, আল্লাহ চাইলে শিফা হবে, নইলে নয়।’

ফিক্বহী বিধানঃ ফক্বিহদের মতে রুকইয়াহ বৈধ হওয়ার জন্য ৪ শর্ত পূরণ হওয়া আবশ্যক, যথা-

১. এতে কোন শিরক বা কুফরির সংমিশ্রণ না থাকা।
২. ঝাড়ফুঁকের নিজের কোন সক্ষমতা আছে; এমন কোন বিশ্বাস না রাখা। বরং বিশ্বাস করা, আল্লাহর ইচ্ছাতেই এর প্রভাব হয়, আল্লাহর হুকুমেই এর দ্বারা আরোগ্য হয়।
৩. এখানে পাঠ করা জিনিসগুলো স্পষ্ট আরবি ভাষায় হওয়া।
৪. যদি অন্য ভাষায় হয়, তবে এমন হওয়া; যার অর্থ স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে।

রুকইয়া প্রকারভেদঃ বিভিন্ন ভাবে রুকইয়া করা হয়, যেমনঃ দোয়া বা আয়াত পড়ে ফুঁ দেয়া হয়, মাথায় বা আক্রান্ত স্থানে হাত রেখে দোয়া/আয়াত পড়া হয়। এছাড়া পানি, তেল, খাদ্য বা অন্য কিছুতে দোয়া অথবা আয়াত পড়ে ফুঁ দিয়ে খাওয়া এবং ব্যাবহার করা হয়।

পূর্বশর্তঃ রুকইয়া করে উপকার পেতে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন।

১. নিয়্যাত (কেন রুকইয়া করছেন, সেজন্য নির্দিষ্টভাবে নিয়াত করা)
২. ইয়াক্বিন (এব্যাপারে ইয়াকিন রাখা যে, আল্লাহর কালামে শিফা আছে)
৩. মেহনত (অনেক কষ্ট হলেও, সুস্থ হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরে রুকইয়া চালিয়ে যাওয়া)।

লক্ষণীয়ঃ রুকইয়ার ফায়দা ঠিকমতো পাওয়ার জন্য দৈনন্দিনের ফরজ অবশ্যই পালন করতে হবে, পাশাপাশি সুন্নাতের প্রতিও যত্নবান হতে হবে। যথাসম্ভব গুনাহ থেকে বাঁচতে হবে। (মেয়েদের জন্য পর্দার বিধানও ফরজ) ঘরে কোনো প্রাণীর ছবি / ভাস্কর্য রাখা যাবেনা। আর সুরক্ষার জন্য সকাল-সন্ধ্যার মাসনুন আমলগুলো অবশ্যই করতে হবে। আর ইতিমধ্যে শারীরিক ক্ষতি হয়ে গেলে, সেই ঘাটতি পোষানোর জন্য রুকইয়ার পাশাপাশি ডাক্তারের চিকিৎসাও চালিয়ে যেতে হবে।

[৩] বদনজর সমস্যা-

আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:

বদনজর আক্রান্ত হওয়ার অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে, এরমাঝে কয়েকটি হচ্ছে-

  1. পড়ালেখা বা কোন কিছুতে অনেক ভাল ছিল, হঠাৎ ধ্বস নামা।
  2. কোন কাজে মনোযোগ না থাকা। নামায, যিকর, পড়াশোনাতে মন না বসা।
  3. প্রায়শই শরীর দুর্বল থাকা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব লাগা।
  4. বুক ধড়পড় করা, দমবন্ধ অস্বস্তি লাগা। মেজাজ বিগড়ে থাকা।
  5. অতিরিক্ত চুল পড়া। পেটে প্রচুর গ্যাস হওয়া।
  6. একেরপর এক অসুখ লেগে থাকা, দীর্ঘ চিকিৎসাতেও ভালো না হওয়া।
  7. ব্যবসায়-লেনদেনে ঝামেলা লেগেই থাকা। সব কিছুতেই লস হওয়া।

বদনজরের জন্য রুকইয়াহ:

যদি বুঝা যায় অমুকের জন্য নজর লেগেছে, তাহলে তাকে অযু করতে বলুন, এবংওযুর পানি গুলো আক্রান্তের গায়ে ঢেলে দিন। এরপর চাইলে ভালো পানি দিয়ে গোসল করুন। এতটুকুতেই নজর ভালো হয়ে যাবে ইনশা-আল্লাহ।

আর বদনজরের সেলফ রুকইয়া হচ্ছে, বদনজরের রুকইয়া তিলাওয়াত করবেন, অথবা তিলাওয়াত শুনবেন (ডাউনলোড লিংক নিচে)। এর পাশাপাশি ১ম অথবা ২য় নিয়মে রুকইয়ার গোসল করবেন। আর এভাবে লাগাতার ৩ থেকে ৭ দিন করবেন। প্রয়োজনে কয়েকদিন বিরতি দিয়ে আবার শুরু করুন, প্রতিদিন কয়েকবার রুকইয়া শুনুন, আর একবার রুকইয়ার গোসল করুন। এভাবে সমস্যা ভালো হওয়া পর্যন্ত করতে থাকুন। সমস্যা ভালো হওয়ার পরেও কয়েকদিন রুকইয়াহ করা উচিত।

[৪] রুকইয়ার গোসল-

১ম নিয়ম: একটা বালতিতে পানি নিবেন। তারপর পানিতে দুইহাত ডুবিয়ে যেকোনো দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস, ফালাক্ব, নাস, শেষে আবার কোনো দরুদ শরিফ-সব ৭বার করে পড়বেন। পড়ার পর হাত উঠাবেন এবং এই পানি দিয়ে গোসল করবেন।

২য় নিয়ম: একটা বালতিতে পানি নিন। ওপরের দোয়া-কালামগুলো পড়ুন আর মাঝেমাঝে ফুঁ দিন। এরপর ওই পান ইদিয়ে গোসল করুন।

৩য় নিয়ম: (জাদুর সমস্যার জন্য বিশেষভাবে উপকারী বরই পাতার গোসল) ৭টা বরই পাতা বেটে পানিতে গুলিয়ে নিন, এবং সেখানে আয়াতুল কুরসি, সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস- ৩বার করে পড়ে ফুঁ দিন। এরপর এই পানি থেকে তিন ঢোক পান করুন, আর বাকিটা দিয়ে গোসল করুন।

(যদি টয়লেট আর গোসলখানা একসাথে থাকে, তাহলে অবশ্যই বালতি বাহিরে এনে এসব পড়বেন। প্রথমে এই পানি দিয়ে গোসল করে এরপর চাইলে অন্য পানি দিয়ে ইচ্ছামত গোসল করতে পারেন। যার সমস্যা সে পড়তে না পারলে অন্য কেউ তার জন্য পড়বে, এবং অসুস্থ ব্যক্তি শুধু গোসল করবে।)

[৫] জিনের স্পর্শ-

আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:

জিন দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে, এরমাঝে কয়েকটি হচ্ছে-

  1. রাতে ঠিকমত ঘুমাতে না পারা। ঘুমালেও বারবার জেগে ওঠা।
  2. প্রায়শই ঘুমের মাঝে বোবা ধরা।
  3. ভয়ংকর স্বপ্ন দেখা। উঁচু থেকে পড়ে যেতে, কোন প্রাণীকে আক্রমণ করতে দেখা।
  4. দীর্ঘ মাথাব্যথা, অথবা অন্য কোন অঙ্গে সবসময় ব্যাথা থাকা।
  5. নামাজ, তিলাওয়াত, যিকির আযকারে আগ্রহ উঠে যাওয়া।
  6. মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকা, একটুতেই রেগে যাওয়া।
  7. আযান বা কোরআন তিলাওয়াত সহ্য না হওয়া।

জ্বিনের আসরের জন্য রুকইয়াহ:

যিনি রুকইয়া করবেন তিনি প্রথমে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে নিজের শরীরে হাত বুলিয়ে নিবেন। এরপর রুকইয়া শুরু করবেন। রুগীর পাশে বসে জোর আওয়াজে রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়তে থাকুন। রুকইয়ার অনেক আয়াত আছে সেগুলো শেষে বলা হবে। তবে জ্বিনের রোগীর রুকইয়ার জন্য স্বাভাবিকভাবে-

১. সুরা ফাতিহা
২. আয়াতুল কুরসি
৩. বাকারার শেষ ২ আয়াত
৪. সুরা ইখলাস, ফালাক, সুরা নাস। সম্ভব হলে এর সাথে-
৫. সুরা মু’মিনুনের ১১৫-১১৮ নং আয়াত
৬. সুরা সফফাতের প্রথম ১০ আয়াত এবং
৭. সুরা জিনের ১-৯ আয়াত পড়া যেতে পারে।

জ্বিন ছেড়ে দেয়া পর্যন্ত এগুলো বারবার পড়তে থাকুন, পড়ার মাঝেমাঝে রুগীর ওপর ফুঁ দিতে পারেন, (বৈধ ক্ষেত্রে) মাঝেমাঝে রুগীর মাথায় হাত রেখে পড়ুন। আর পানিতে ফুঁ দেয়ার পর মুখে এবং হাতে-পায়ে ছিটিয়ে দিন। জিন কথা বলতে শুরু করলে মাঝেমাঝে তাকে চলে যাওয়ার ব্যাপারে নির্দেশ দিতে হবে, এরপর আবার অবিরত তিলাওয়াত চালু রাখতে হবে। জ্বিনের রুগীর ক্ষেত্রে সাধারণত কথাবার্তা বলে জ্বিন বিদায় করতে হয়। এক্ষেত্রে জ্বিনের কথায় ঘাবড়ানো যাবেনা, তার কথা সহজে বিশ্বাসও করা যাবে না। হুমকিধামকি দিলে তাকেই উল্টা ধমক দিতে হবে। মোট কথা, যিনি রুকইয়া করবেন তাঁকে উপস্থিতবুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে। একদিনে না গেলে পরপর কয়েকদিন কয়েকঘন্টা করে এভাবে রুকইয়া করে যেতে হবে। ইনশাআল্লাহ এক পর্যায়ে জ্বিন পালাতে বাধ্য হবে।

[৬] বাড়িতে জ্বিনের উৎপাত থাকলে-

বাড়িতে জ্বিনের কোনো সমস্যা থাকলে পরপর তিনদিন পূর্ন সুরা বাক্বারা তিলাওয়াত করুন, এরপর আযান দিন। তাহলে ইনশাআল্লাহ সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে। তিলাওয়াত না করে প্রতিদিন যদি সুরা বাক্বারা প্লে করা হয় তাহলেও ফায়দা পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। তবে সবচেয়ে ভালো ফল পেলে তিলাওয়াত করা উচিত। এরপর প্রতিমাসে অন্তত এক দুইদিন সুরা বাকারা পড়বেন। অধিক ফায়দার জন্য চাইলে সুরা বাকারা পড়া শেষে পানিতে ফুঁ দেয়ার পর পুরো বাড়িতে ছিটিয়ে দিতে পারেন।

আর ঘরে প্রবেশের সময়, বের হবার সময়, দরজা-জানালা বন্ধের সময় বিসমিল্লাহ বলবেন। সন্ধ্যা বেলায় জানালা বন্ধ রাখবেন। ঘরে কোন প্রাণী বা মানুষের ছবি অথবা মূর্তি ঝুলিয়ে রাখবেন না। ইনশাআল্লাহ খুব শীঘ্রই সমস্যা কেটে যাবে।

[৭] যাদুগ্রস্ত-

জাদু বা ব্ল্যাক ম্যাজিকে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:

অনেক সময় যাদু করতে জ্বিনের সাহায্য নেয়া হয়, তাই যাদুগ্রস্ত রোগীর মাঝে জিন আক্রান্তের কিছু লক্ষণও দেখা যেতে পারে। এছাড়াও যাদুগ্রস্ত রোগীর মাঝে কিছু বিশেষ লক্ষণ দেখা যেতে পারে। যেমন:

  1. হঠাৎ কারও প্রতি বা কোন কিছুর প্রতি তীব্র ভালবাসা অথবা ঘৃণা তৈরি হওয়া, যা আগে ছিল না।
  2. বিশেষ কোন কারন ছাড়াই জটিল-কঠিন রোগে ভোগা। যার চিকিৎসা করলেও সুস্থ না হওয়া।
  3. পরিবারের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি লেগেই থাকা। বিশেষতঃ স্বামীস্ত্রীর মাঝে।
  4. দৃষ্টিভঙ্গি বা ব্যক্তিত্বে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যাওয়া। যাতে নিজেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়, চারপাশের মানুষও কষ্ট পায়।
  5. অদ্ভুত আচরণ করা। যেমন, কোন কাজ একদমই করতে না চাওয়া। কিংবা দিন-রাতের নির্দিষ্ট কোন সময়ে ঘরের বাইরে যেতে না চাওয়া।
  6. মেরুদণ্ডের নিচের দিকে ব্যাথা করা।
  7. বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মেজাজ খারাপ, মাথা ব্যথা অথবা অসুস্থ থাকা।

যাদু আক্রান্ত হলে বুঝার উপায়:

ওপরের এক বা একাধিক লক্ষণের সাথে মিল পাওয়া যাবে। আর যাদু আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়লে, অথবা অডিও শুনলে অস্বাভাবিক অনুভূতি হবে। যেমন, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, বমি আসা, বুক ধড়ফড় করা, শরীর অবশ হয়ে আসা ইত্যাদি।

জাদুর সমস্যার জন্য রুকইয়া:

সমস্যার ধরণ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার রুকইয়াহ করতে পরামর্শ হয়। তবে প্রসিদ্ধ সেলফ রুকইয়া হচ্ছে- প্রথমে সমস্যার জন্য নিয়াত ঠিক করে, ইস্তিগফার দরুদ শরিফ পড়ে শুরু করুন। তারপর রুকইয়ার আয়াতগুলো পাঠ করে অথবা কোন রুকইয়া শুনে নিশ্চিত হয়ে নিন আসলেই সমস্যা আছে কি না! শাইখ সুদাইস অথবা লুহাইদানের রুকইয়া শুনতে পারেন (ডাউনলোড লিংক নিচে)। সবশেষে একটি পাত্রে পানি নিন, এরপর নিচের আয়াতগুলো ৩বার অথবা ৭বার করে পড়ুন, পড়ার মাঝেমাঝে পানিতে ফুঁ দিন-

ক. সুরা ফাতিহা এবং আয়াতুল কুরসি
খ. সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২, ইউনুস ৮১-৮২ সুরা ত্বহা ৬৯নং আয়াত

١. وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَۖ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُوْنَ - فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُونَ - فَغُلِبُوْا هُنَالِكَ وَانقَلَبُوْا صَاغِرِيْنَ - وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِيْنَ -قَالُوْا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِيْنَ - رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُوْنَ -

٢. فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُمْ بِهِ السِّحْرُۖ إِنَّ اللّٰهَ سَيُبْطِلُهُۖ إِنَّ اللّٰهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِيْنَ - وَيُحِقُّ اللّٰهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْكَرِهَ الْمُجْرِمُونَ -

٣. وَأَلْقِ مَافِي يَمِيْنِكَ تَلْقَفْ مَا صَنَعُوْاۖ إِنَّمَا صَنَعُوْا كَيْدُ سَاحِرٍۖ وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُ حَيْثُ أَتٰى -

গ. এরপর সুরা ইখলাস, ফালাক্ব, নাস- সব ৩বার করে।

সমস্যা অনুযায়ী সাতদিন অথবা এরচেয়ে বেশি সময় যাবত প্রতিদিন সকাল-বিকাল এই পানি খেতে হবে, এবং গোসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করতে হবে। আর জাদুর সমস্যার থেকে সুস্থতা লাভের নিয়াত করে প্রতিদিন রুকইয়ার আয়াতগুলো তিলাওয়াত করতে হবে, অথবা দেড়-দুইঘণ্টা রুকইয়ার অডিও শুনতে হবে। কোন ক্বারির সাধারণ রুকইয়া একবার, আর সুরা ইখলাস, ফালাক, নাসের রুকইয়াহ একাধিকবার (ডাউনলোড লিংক নিচে)। এর পাশাপাশি আল্লাহর কাছে সুস্থতার জন্য দোয়া করতে হবে।

এভাবে রুকইয়াহ করার পর সপ্তাহ শেষে আপনার অবস্থা পর্যালোচনা করুন, প্রয়োজনে চিকিৎসার মেয়ার বাড়িয়ে নিন। রুকইয়াহ চলাকালীন সমস্যা বেড়ে গেলেও বাদ দিবেন না, হাল ছাড়বেন না। সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া পর্যন্ত রুকইয়া অবিরত রাখুন।

দ্বিতীয়ত: শুরুতে বর্ণনা করা রুকইয়ার গোসলগুলোর মাঝে ৩য় পদ্ধতিটি জাদুর চিকিৎসায় খুব উপকারী। সমস্যা বেশি হলে প্রথমে কয়েকদিন উল্লেখিত নিয়মে বরই পাতার গোসল করে এরপর সেলফ রুকইয়াহ শুরু করা যেতে পারে। ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুতই জাদুর সমস্যা থেকে মুক্ত হয়ে যাবেন।

যাদুর কোন জিনিশ অথবা তাবিজ খুঁজে পেলে:

সন্দেহজনক কোন তাবিজ পেলে অথবা কি দিয়ে যাদু করেছে যদি পাওয়া যায়, তাহলে সেসব বের করে আলাদা আলাদা করে ফেলুন, কোন গিরা বা বাধন থাকলে কেটে ফেলুন, শক্ত কিছু দিয়ে বাধা থাকলে ভেঙ্গে ফেলুন। এরপর একটা পাত্রে পানি নিয়ে ওপরে বলা জাদুর রুকইয়ার আয়াতগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিন, এরপর তাবিজ অথবা যাদুর জিনিশগুলো ডুবিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ, তাহলে ইনশাআল্লাহ যাদু নষ্ট হয়ে যাবে। পরে সেগুলো পুড়িয়ে বা নষ্ট করে ফেলুন।

[৮] একাধিক সমস্যায় আক্রান্ত হলে:

একসাথে যাদু, জ্বিন কিংবা বদনজর সম্পর্কিত একাধিক সমস্যায় আক্রান্ত হলে প্রথমে কিছুদিন বদনজরের জন্য রুকইয়া করতে হবে, এরপর জ্বিনের জন্য এবং যাদুর জন্য রুকইয়া করতে হবে। এর মাঝেমাঝে শারীরিক রোগব্যাধির জন্য চিকিৎসা নেয়া বা ডাক্তারের ঔষধ সেবন করতেও কোন সমস্যা নেই। কিন্তু রুকইয়াহ করার কারণে ব্যাথা শুরু হলে এজন্য ঔষধ খাবেন না। বরং রুকইয়ার গোসল করলে অনেকটা স্বস্তি পাবেন ইনশাআল্লাহ।

[৯] ওয়াসওয়াসা রোগ-

আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ:

  1. অকারণে সর্বদা চিন্তিত থাকা। মাথায় বিক্ষিপ্ত চিন্তা ঘোরাঘুরি করার কারণে কোন কিছুতে মন দিতে না পারা।
  2. ওযু-গোসল অথবা নামাজের বিশুদ্ধতা নিয়ে অতিরিক্ত দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকা।
  3. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা। টয়লেট বা গোসলখানায় অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা। এক অঙ্গ বারবার ধোয়া, এরপরেও তৃপ্ত হতে না পারা।
  4. বারবার মনে হওয়া ওযু ভেঙ্গে যাচ্ছে, অথবা প্রসাবের ফোঁটা পড়ছে, অথবা বায়ু বের হয়ে যাচ্ছে। বিশেষতঃ নামাজের সময় এমন হওয়া।
  5. আল্লাহ তা’আলা, রাসুল ﷺ অথবা ইসলামের ব্যাপারে বারবার মাথায় অবমাননাকর চিন্তা আসা।
  6. বারবার নামাজের রাকাত ভুলে যাওয়া, কিরাত, রুকু-সাজদা ইত্যাদির ব্যাপারে সন্দেহে ভোগা।

সমস্যা বেশিদিন পুরনো হয়ে গেলে এসব থেকে আরও শারীরিক-মানসিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। আর জিন সংক্রান্ত কোন সমস্যা (জিনের বদনজর বা জিনের আসর) থাকলেও ওয়াসওয়াসার সমস্যা প্রকট হতে পারে।

ওয়াসওয়াসার প্রতিকার-

১. এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়া। প্রতি নামাজের আগে-পরে, অন্যান্য ইবাদতের সময়, কোন গুনাহের জন্য ওয়াসওয়াসা অনুভব করলে এটা পড়া -

أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ، مِنْ غَضَبِهٖ وَعِقَابِهِ، وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ، وَأَنْ يَّحْضُرُوْنِ

ঈমান নিয়ে সংশয় উদিত হলে পড়া (সুরা হাদীদ, আয়াত নং ৩)

هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ ۖ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْم

[এছাড়া "আমানতু বিল্লাহ বলা" এবং "সুরা ইখলাস পড়ার" কথাও বর্ণিত হয়েছে] এবং এরপর ওয়াসওয়াসা পাত্তা না দিয়ে অন্য কিছুতে ব্যস্ত হয়ে যাওয়া।

২. পুরুষ হলে জামাআতের সাথে নামাজ পড়া, মুত্তাকী পরহেজগারদের সাথে উঠাবসা করা।

৩. নামাজে ওয়াসওয়াসা হলে বামে হালকা করে ৩বার থুতু ফালানো। আর রাকাত ভুলে গেলে- মনে থাকা কম সংখ্যাটা ধরে, এরপর প্রতি রাকাতে আত্তাহিয়্যাতু পড়া, আর নামাজের শেষে সাহু সাজদা দেয়া।

৫. সকাল-সন্ধ্যায় ও ঘুমের আগের আমলগুলো গুরুত্বের সাথে করা। টয়লেটে প্রবেশের দোয়া পড়া।

৬. আয়াতুল হারক (আযাব এবং জাহান্নাম সংক্রান্ত আয়াত) বেশি বেশি তিলাওয়াত করা। এবং প্রতিদিন এসবের তিলাওয়াত শোনা। (ডাউনলোড লিংক নিচে)

৭. সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ইখলাস, ফালাক, নাস - ৩বার করে। এরপর শুধু সুরা নাস অনেক বার (৭বার/৩৩বার/আরও বেশি) পড়ে পানি আর অলিভ অয়েলে ফুঁ দেয়া। এরপর সুস্থতার নিয়াতে প্রতিদিন ২-৩ বেলা এই পানি পান করা। মাথায় এবং বুকে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা।

৮. বদনজর বা জিনের সমস্যা থাকলে সে অনুযায়ী রুকইয়াহ করা। যথাসম্ভবত ওয়াসওয়াসা পাত্তা না দেয়া; ইগনোর করা, এমনকি মুখে বিরক্তির ভাবও প্রকাশ না করা। আর আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকা।

[১০] সাধারণ অসুস্থতার জন্য রুকইয়াহ:

বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের রুকইয়ার জন্য রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কিরাম রা. এবং বিভিন্ন যুগের সালাফদের থেকে অনেক দু’আ-কালাম পাওয়া যায়, সুস্থতা লাভের নিয়াতে সেসব গুরুত্বের সাথে পড়া।

যেমন, কোরআন থেকে প্রসিদ্ধ কয়েকটি রুকইয়া হচ্ছে- সুরা ফাতিহা, ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস এবং ৬টি আয়াতে শিফা- (সূরা তাওবাহ/১৪, ইউনূস/৫৭, নাহল/৬৯, বানী ইসরাইল/৮২, শু’আরা/৮০, ফুসসিলাত/৪৪)

١. وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ
٢. وَشِفَاء لِّمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
٣. يخْرُجُ مِن بُطُونِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاء لِلنَّاسِ
٤. وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاء وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
٥. وَإِذَا مَرِضْتُ فَهُوَ يَشْفِينِ
٦. قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاء

এছাড়া রাসুল স. থেকে বর্ণিত রুকইয়ার উপযোগী অনেক দো’আ আছে, যেমন-

١.اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ، اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
٢. بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللَّهُ يَشْفِيكَ بِسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
٣. بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ
٤. اَسْأَلُ اللهَ الْعَظِيْم، رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيْم، اَنْ يَّشْفِيَكْ
٥. بِسْمِ اللَّه، بِسْمِ اللَّه، بِسْمِ اللَّه، أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللَّهِ وَقُدْرَتِهِ، مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ

এসব আয়াত এবং দোয়াগুলো ৩বার অথবা ৭বার পড়ুন, ব্যাথার যায়গায় অথবা রুগীর মাথায় হাত রেখে পড়ুন, অথবা এসব পড়ার পর রুগীর ওপর ফুঁ দিন। পানিতে ফুঁ দিয়ে পান করুন, গোসল করুন অথবা অলিভ অয়েলে ফুঁ দিয়ে মালিশ করুন। মধু-কালোজিরায় ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন পানিতে গুলিয়ে খান। এসবের পাশাপাশি শাইখ লুহাইদান অথবা সা’দ আল গামিদির রুকইয়াহ শোনা যেতে পারে। (ডাউনলোড লিংক নিচে)

[১১] শিশুদের জন্য রুকইয়ার নিয়ম:

শুরুতে মনে মনে নিয়াত করে নিন কোন সমস্যার জন্য রুকইয়াহ করবেন, এরপর শিশুর মাথায় হাত রেখে কয়েকবার এই দুয়াটি পড়ুন, আর মাঝেমাঝে দিন। চাইলে সাথে ওপরের দোয়াগুলোও পড়া যেতে পারে।

أُعِيْذُكُمْ بِكَلِمَاتِ اللّٰهِ التَّامَّةِ ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ

এরপর সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি এবং সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস - ৩ বার করে পড়া।

সমস্যার মাত্রা বেশি হলে উল্লেখিত পদ্ধতিতে রুকইয়া করা শেষে আরেকবার এগুলো পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে পান করান এবং গোসল করান। সমস্যা ভালো হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন রুকইয়াহ এবং এই কাজগুলো করতে থাকুন। এছাড়া কোন অঙ্গে বিশেষ রোগব্যাধি থাকলে এসব দোয়া-কালাম পড়ে অলিভ অয়েল বা কালোজিরার তেলে ফুঁ দিয়ে প্রতিদিন মালিশ করা।

ছোটদের পাশাপাশি বড়দের মাঝে কেউ নিজে নিজে রুকইয়াহ করতে অক্ষম হলে তার ওপরেও একই নিয়মে রুকইয়াহ করা যায়।

[১২] রুকইয়ার আয়াত:

কোরআন মাজিদের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা রুকইয়া করা হয়, তন্মধ্যে প্রসিদ্ধ কিছু আয়াত হচ্ছে-

  1. সুরা ফাতিহা
  2. সুরা বাকারা ১-৫
  3. সুরা বাকারাহ ১০২
  4. সুরা বাকারাহ ১৬৩-১৬৪
  5. সুরা বাকারাহ ২৫৫
  6. সুরা বাকারাহ ২৮৫-২৮৬
  7. সুরা আলে ইমরান ১৮-১৯
  8. সুরা আ'রাফ ৫৪-৫৬
  9. সুরা আ'রাফ ১১৭-১২২
  10. সুরা ইউনুস ৮১-৮২
  11. সুরা ত্বহা ৬৯
  12. সুরা মু'মিনুন ১১৫-১১৮
  13. সুরা সফফাত ১-১০
  14. সুরা আহকাফ ২৯-৩২
  15. সুরা আর-রাহমান ৩৩-৩৬
  16. সুরা হাশর ২১-২৪
  17. সুরা জিন ১-৯
  18. সুরা ইখলাস
  19. সুরা ফালাক
  20. সুরা নাস

এই আয়াতগুলো একসাথে পিডিএফ করা অবস্থায় নিচে লিংক দেয়া ওয়েবসাইটে পাবেন।

[১৩] যাদু, জিন, শয়তান ইত্যাদির ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়:

১. প্রতিটি কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা। যেমন, খাবার পূর্বে, ঘরে ঢুকতে - বের হতে, দরজা-জানালা বন্ধ করতে ইত্যাদি।

২. বিষ, যাদু এবং অন্যান্য ক্ষতি থেকে বাঁচতে সকাল-সন্ধ্যায় এই দোয়া তিনবার পড়াঃ

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

আ’উযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মা-তি, মিং-শাররি মা-খলাক্ব। (জামে তিরমিযী, ৩৫৫৯)

৩. সব ধরনের ক্ষতি এবং বিপদ-আপদ থেকে নিরাপদ থাকতে এই দোয়া সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার পড়াঃ

بِسْمِ اللهِ الَّذِيْ لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِه شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ العَلِيْمُ

বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা-ইয়াদ্বুররু মা‘আসমিহী, শাইউং ফিলআরদ্বী ওয়ালা- ফিসসামা-ই, ওয়াহুওয়াস সামি’উল ‘আলীম। (জামে তিরমিযী, ৩৩৩৫)

৪. প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস তিনবার করে পড়া। এবং এটা বিশেষ গুরুত্বের সাথে করা। (সুনানে আবি দাউদ)

৫. ঘুমের আগে আয়াতুল কুরসি এবং সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া। সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়ে হাতের তালুতে ফু দিয়ে পুরো শরীরে হাত বুলিয়ে নেয়া। (বুখারী)

৬. টয়লেটে ঢোকার পূর্বে দোয়া পড়া-

اللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ

আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা, মিনাল খুবসি ওয়াল খবা-ইছ। (মুসলিম, ৩৭৫)

৭. তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। প্রতিদিনের অন্যান্য মাসনুন আমল করতে থাকা। এবং আল্লাহর কাছে সবসময় দোয়া করতে থাকা।

___________

(সংক্ষেপে বিভিন্ন সমস্যার জন্য ইসলাম সম্মত ঝাড়ফুঁক)
- রচনায়: আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ
- প্রথম প্রকাশ: ১৭ – জুন – ২০১৭
- সর্বশেষ আপডেট: (৫.০) পঞ্চম সংস্করণ, ০৭ – আগস্ট – ২০১৯
- রুকইয়াহ অডিও ডাউনলোড: https://ruqyahbd.org/download
- রুকইয়াহ সাপোর্ট গ্রুপ: https://facebook.com/groups/ruqyahbd
- রুকইয়াহ বিষয়ক অন্যান্য তথ্যের জন্য: www.ruqyahbd.org

রুকইয়াহ শারইয়াহঃ পরিচিতি

 

রুকইয়াহ শারইয়াহঃ পরিচিতি
------------------
সবচেয়ে বড় এবং প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, রুকইয়াহ কি?
১) শাব্দিক অর্থে রুকইয়াহ মানে হল, ঝাড়ফুঁক, মন্ত্র, তাবিজ কবচ ইত্যাদি।
২) তবে ব্যবহারিক অর্থে রুকইয়াহ বলতে সাধারণত ঝাড়ফুঁকই বুঝায়।
৩ ) রুকইয়ার পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে, কোরআনের আয়াত, আল্লাহর নামের যিকর, হাদিসে রাসূল ﷺ অথবা সালাফে সালেহীন থেকে বর্ণিত দোয়া পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কোন বিপদ থেকে মুক্তি চাওয়া কিংবা রোগ থেকে আরোগ্য কামনা করা।
আর এটাই রুকইয়াহ শারইয়াহ'র উত্তম সংজ্ঞা।
আচ্ছা! এবার যদি জিজ্ঞেস করা হয়- এই রুকইয়াহ জিনিসটা আসলে কি?
রুকইয়াহ হল একটি চিকিৎসা পদ্ধতি, আধুনিক ভাষায় পরিচয় করিয়ে দিতে চাইলে এটাকে spiritual healing বলা যায়। অর্থাৎ আধ্যাত্মিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা।
রুকইয়াহ শারইয়াহ কী নয়?
এটা মনের আশা পূরণ কিংবা অসাধ্য সাধনের কোন তদবির না, স্বামীকে বশ করার কোন মন্ত্র না, এটা নামাজ-রোজা কিংবা হজ্ব-যাকাতের মতন বিশেষ কোন ইবাদাত না। এটা একটা চিকিৎসা পদ্ধতি।
এ ব্যাপারে ইসলাম কি বলে?
এই চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে শরিয়তের নির্ধারিত গণ্ডি অতিক্রম না করলেই এটা জায়েজ। এব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “রুকইয়াতে যদি শিরক না থাকে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৫৫৪৪)
এক্ষেত্রে আলেমদের মত হচ্ছে, এটা তো অবশ্যই শিরক এবং কুফর থেকে মুক্ত হতে হবে, এমনকি এসবের সন্দেহও থাকা যাবে না। এজন্য ওলামায়ে কিরাম কয়েকটি শর্তের ব্যাপারে একমত হয়েছেন, সেসব হচ্ছে:
১. কোন শিরক-কুফর অথবা হারাম বাক্য থাকা যাবে না।
২. যা দ্বারা রুকইয়াহ করা হবে সেটা স্পষ্ট বাক্যে হতে হবে, যার অর্থ ভালোভাবে বোঝা যায়।
৩. দুর্বোধ্য কোন সংকেত বা ভাষায় হওয়া যাবে না, যার অর্থ স্বাভাবিকভাবে মানুষ বুঝে না।
(উদাহরণস্বরূপ আপনি বাংলাদেশে ল্যাটিন ভাষার রুকইয়াহ করতে পারবেন না, কারণ এখানকার মানুষ সেটা বুঝবে না। এজন্যই সালাফের মাঝে কেউ কেউ ঝাড়ফুঁক আরবিতে হওয়াকেও শর্ত বলেছেন। তবে মূলতঃ স্বাভাবিকভাবে বোধগম্য ভাষায় হলে, আরবি হওয়া আবশ্যক না।)
আর হ্যাঁ! রুকইয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই আক্বিদা রাখতে হবে, রাক্বির কোন সাধ্য নেই কাউকে সুস্থ করার কিংবা বিপদ দূর করার। সুস্থতা এবং বিপদমুক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে, এখানে রুকইয়াহ কেবল দোয়ার অনুরূপ ভূমিকা পালন করছে। অর্থাৎ রুকইয়াহ আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার একটি পদ্ধতি মাত্র।
নোটঃ যিনি রুকইয়াহ করেন, তাকে রাক্বী বলা হয়।
এবারের প্রশ্ন হচ্ছে, কে রুকইয়াহ করতে পারে?
উত্তর হল- নিজের জন্য বা পরিবারের জন্য যে কেউ রুকইয়াহ করতে পারে! এজন্য বিরাট বুজুর্গ হওয়া শর্ত না। আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে এমন যে কোন ব্যক্তি, যদি দেখে-দেখে কিংবা মুখস্থ দোয়া অথবা কোরআনের আয়াত পড়তে পারে, তাহলে সেই সেলফ রুকইয়াহ করতে পারবে।
তবে হ্যাঁ, আপনি যদি দীর্ঘমেয়াদে অথবা জনগণের জন্য ব্যাপকভাবে রুকইয়াহ করতে চান, তাহলে অবশ্যই এ বিষয়ে আপনাকে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখতে হবে। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "কেউ যদি চিকিৎসার জ্ঞান না রেখেই চিকিৎসা করে, তবে (কিছু ঘটলে) সেই দায়ী হবে।" (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস নং ৪৫৮৬)
নোটঃ নিজে নিজে রুকইয়াহ করাকে সেলফ রুকইয়াহ বলা হয়।
শেষ প্রশ্ন, আমি কিভাবে রুকইয়াহ বিষয়ে জানতে পারি? অথবা আমি কিভাবে রুকইয়াহ করা শিখতে পারি?
এ বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমদের প্রবন্ধ অথবা বই থেকে জানতে পারেন। অথবা তাদের দরস, বায়ান কিংবা লেকচার থেকে জানতে পারেন।
আমার কাছে সহজ কোন রাস্তা যদি জানতে চান, তাহলে বলবো "মুখতাসার রুকইয়াহ শারইয়াহ" নোটটা পড়ে ফেলেন, একসাথে সাতসমুদ্রের পানি পেয়ে যাবেন। এরপর চাইলে এই বিষয়ে আমার অন্যান্য লেখাগুলো পড়তে পারেন, পড়তে পড়তে আরও রাস্তা খুলে যাবে ইনশাআল্লাহ। আর জ্বিন সিরিজে কিছু বইয়ের লিস্ট দিয়েছিলাম, আরবিতে দক্ষতা থাকলে সেগুলোও দেখতে পারেন।
আমার প্রায় সবগুলো লেখার লিস্ট "রুকইয়াহ ইনডেক্স"-এ গেলে পাবেন। কমেন্টে ইনডেক্সের লিংক দিয়ে দেয়া হল। আর ইনশাআল্লাহ খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে একটি বই আসছে, সেখানে আরও ভালোভাবে অনেক কিছু একসাথে পেয়ে যাবেন।
সে পর্যন্ত আমার জন্য দোয়া করবেন।
জাযাকুমুল্লাহু খাইর!
রুকইয়াহ শারইয়াহ আপনাদের জন্য বরকতময় হোক!

রুকইয়াহ শারইয়্যাহ ইনডেক্স - Ruqyah Shariyah Index

 

সর্বশেষ আপডেট: 16 Nov, 2020
[লক্ষণীয়ঃ কোনো লেখা ফেসবুকের বাহিরে প্রকাশ করতে অথবা প্রিন্ট করতে চাইলে অনুমতি নেয়া আবশ্যক। ফেসবুকে কপি করলে লেখকের নাম উল্লেখ করুন। একাধিক লেখা একত্র করা অথবা পিডিএফ বানানো থেকে বিরত থাকুন।]
এখানকার প্রায় সব প্রয়োজনীয় লেখা "রুকইয়াহ" বইয়ে একত্রে পাবেন। প্রাপ্তিস্থান: [এখানে দেখুন] 
সাহায্য এবং পরামর্শের জন্য
রুকইয়াহ সাপোর্ট গ্রুপ - Ruqyah Support BD গ্রুপে যোগ দিন।

অধ্যায়-১: রুকইয়াহ বিষয়ে..

  1. রুকইয়াহ শারইয়াহ; প্রাথমিক পরিচিতি
  2. সারসংক্ষেপ রুকইয়াহ শারইয়্যাহ
  3. রুকইয়াহ শারইয়্যার গুরুত্ব এবং ফযিলত!
  4. তিন স্তরের রুকইয়াহ | চার প্রকারের রুকইয়াহ
  5. প্রসিদ্ধ এবং প্রয়োজনীয় রুকইয়ার আয়াতের লিস্ট
  6. যেকোন সমস্যায় অনুসরনযোগ্য প্রাথমিক পরামর্শ
  7. শিশুদের জন্য যেভাবে রুকইয়াহ করবেন
  8. রুকইয়ার করার পর সাইড ইফেক্ট সামলানো

অধ্যায়-২: বদনজর বিষয়ক

  1. পর্ব -১ (বদনজর বিষয়ে ইসলামী আক্বিদা)
  2. পর্ব -২ (সালাফের মুল্যায়ন, নজর লাগার লক্ষণ)
  3. পর্ব -৩ (বদনজর থেকে বাঁচার উপায়, কিছু ঘটনা)
  4. পর্ব-৪ (বদনজরের চিকিৎসা, বিধিবিধান)
  5. জিনের নজর: সমস্যার লক্ষণ ও চিকিৎসা
  6. কোরবানির গরু এবং বদনজর

অধ্যায়-৩: জিনের আসর বিষয়ক

  1. পর্ব-১ (জ্বিনের আসর বিষয়ে ইসলামী আক্বিদা)
  2. পর্ব-২ (কেন জিন ক্ষতি করে, সালাফে সালেহীনের কিছু ঘটনা)
  3. পর্ব-৩ (আসরের প্রকারভেদ, কখন আক্রান্ত হয়)
  4. পর্ব-৪ (আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ, বাঁচার কিছু টিপস)
  5. পর্ব-৫ (বাড়ি থেকে জ্বিন তাড়ানো, রাক্বীর গুণাবলী, বই)
  6. পর্ব-৬ (জ্বিন আসরের চিকিৎসা)
  7. পর্ব-৭ (রাক্বির জরুরী জ্ঞাতব্য বিষয়, যাদুর সাধারণ চিকিৎসা)
  8. পর্ব-৮ (কিছু প্রায়োগিক বাস্তব ঘটনা)
  9. রাতে জিনের মন্দ সমস্যা...
  10. আসক্ত জিন সংক্রান্ত সমস্যা

অধ্যায়-৪: কালো যাদু বিষয়ক

  1. পর্ব-১ (যাদু বিষয়ে ইসলামী আক্বিদা)
  2. পর্ব-২ (সালাফের মন্তব্য, কিভাবে যাদু করে, সতর্কতা)
  3. পর্ব-৩ (পূর্ব কথা, রুকইয়ার আয়াত, পিডিএফ)
  4. পর্ব-৪ (বিয়ে ভাঙার বা আটকে রাখার যাদু)
  5. পর্ব-৫ (সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটানোর যাদু)
  6. পর্ব-৬ (আসক্ত, অনুগত বা বশ করার যাদু)
  7. পর্ব-৭ (শারীরিকভাবে অসুস্থ বানানোর যাদু)
  8. পর্ব-৮ (পাগল করা এবং পড়ালেখা নষ্টের যাদু)
  9. পর্ব-৯ (দুই প্রকার সেক্সুয়াল ডিজিজের জন্য যাদু)
  10. পর্ব-১০ (গর্ভের সন্তান নষ্ট করার যাদু)
  11. পর্ব-১১ (যাদুর চিকিৎসা প্রসঙ্গে কিছু ঘটনা)
  12. পর্ব-১২ (যাদু এবং অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়)
  13. সিহরের কমন রুকইয়াহ
  14. বরই পাতার গোসল
  15. কেউ আমাকে যাদু করলে কিভাবে বুঝব?

অধ্যায়-৫: ওয়াসওয়াসা রোগ

  1. ওয়াসওয়াসা রোগে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ
  2. ওয়াসওয়াসা রোগের জন্য রুকইয়াহ
  3. ওয়াসওয়াসা সমস্যার জন্য সংক্ষিপ্ত পরামর্শ
  4. পাপের প্রতি আসক্তি থেকে বাঁচার উপায় [ext]
  5. ওয়াসওয়াসা রোগ থেকে মুক্তির উপায় [video]
  6. অনাহূত ভাবনা ও তার প্রতিকার [ext]
  7. পর্ণ অথবা মাস্টারবেশন আসক্তদের জন্য পরামর্শ

অধ্যায়-৬: অন্যান্য অসুস্থতা

  1. শারীরিক এবং মানসিক অসুস্থতার জন্য রুকইয়াহ
  2. যেকোন ধরণের ব্যাথার জন্য রুকইয়াহ
  3. ঠাণ্ডার (শ্বাসকষ্ট, এলার্জি বিবিধ) জন্য রুকইয়াহ
  4. নিদ্রাহীনতা এবং ঘুম সংক্রান্ত সমস্যা
  5. অলসতা, ক্লান্তি, দুর্বলতা ইত্যাদির সমাধান
  6. হাড়ক্ষয় রোগের জন্য রুকইয়াহ
  7. চোখের সমস্যার জন্য রুকইয়াহ
  8. তোতলামির সমস্যা এবং করণীয়
  9. বাচ্চাদের কথা শিখতে দেরি হলে করণীয়
  10. পড়াশোনায় মনোযোগহীনতা
  11. মনভুলা রোগের জন্য রুকইয়াহ
  12. ডেংগু, চিকুনগুনিয়া এবং এমন সমস্যা

অধ্যায়-৭: সাপ্লিমেন্টারী

  1. সুন্নাহসম্মত যত রুকইয়াহ | রুকইয়াহ সাপ্লিমেন্টারী
  2. রুকইয়াহ এবং কার্স (অভিশাপ)
  3. কবিরাজদের প্রতি অভিশাপ!
  4. রুকইয়াহ এবং দোয়া
  5. রুকইয়াহ অডিও
  6. রুকইয়ার গোসল
  7. শীতকালে রুকইয়াহর গোসল
  8. পানিপড়া এবং রুকইয়াহ - প্রথম পর্ব | দ্বিতীয় পর্ব
  9. রুকইয়াহ যিনা!
  10. বাথ সল্ট এবং রুকইয়ার গোসল

অধ্যায়-৮: ভুল ধারণা - প্রশ্নোত্তর

  1. রুকইয়াহ এবং রেফারেন্স
  2. রুকইয়াহ করলে কি জান্নাতে যাওয়া যাবে না?
  3. রুকইয়া সংক্রান্ত কিছু হাদিস, সংশয় ও পর্যালোচনা
  4. রুকইয়ার অডিও শোনা কি বিদ’আত?
  5. রুকইয়া করতে বুজুর্গ হওয়া লাগে?
  6. রুকইয়া শুনলে ঘুম আসছে বা সমস্যা হচ্ছে?
  7. মেয়েরাও কি রুকইয়া করতে পারে?
  8. অমুসলিমদের জন্য রুকইয়া করা যায় না?
  9. কুফরি কাটাতে কুফরি করা লাগবে?
  10. যাদুর জিনিশ ধ্বংস না করে সুস্থ হওয়া যায়না?
  11. ঝাড়ফুঁক জায়েজ তাই তাবিজও জায়েজ?
  12. শিরকি ঝাড়ফুঁক থেকে কেন বা কিভাবে উপকার হয়?
  13. ফেরেশতা হাজির করার আমল নাকি শয়তান পুঁজা?
  14. জিনদের সাহায্য নেয়া যাবে কি?
  15. সমস্যা সবারই হতে পারে
  16. রুকইয়াহ এবং ঔষধ সেবন করা
  17. রুকইয়াহ শোনার চেয়ে পড়া ভালো
  18. ওমরাহ করলে জিন-যাদুর সমস্যা চলে যায়?
  19. সেলিব্রেটিদের নজর লাগেনা কেন?
  20. ইউটিউব থেকে ইচ্ছামত রুকইয়াহ শোনা
  21. একজনের জন্য অন্যজন রুকইয়াহ করা
  22. কয়েকজনের জন্য একসাথে রুকইয়াহ করা
  23. আয়াত কাস্টমাইজেশনের ধোকায় পড়া | পর্ব ২
  24. ফোনে বা অনলাইনে রুকইয়াহ করা
  25. মারধোর প্রসঙ্গ এবং গাইরে মাহরামকে স্পর্শ করা
  26. ফেসবুকে অবিরত রুকইয়ার ঘটনা শেয়ার করা

অধ্যায়-৯: পরিশিষ্ট

  1. ৭দিনের ডিটক্স রুকইয়াহ প্রোগ্রাম | (detox app)
  2. সর্বজনীন পূর্ণ রুকইয়াহ প্রোগ্রাম
  3. কিছু হারিয়ে গেলে অথবা বিপদের পড়লে
  4. মাসিক চলাকালীন সময়ে রুকইয়ার নিয়ম
  5. বাচ্চাদের রুকইয়ার সময় লক্ষণীয়
  6. রুকইয়াহ শিরকিয়্যাহ
  7. যেসব মুত্তাকী ব্যক্তি বাতিল কবিরাজি করেন
  8. সুস্থ হতে আমার এত দেরি লাগছে কেন?
  9. ঘুমের মাঝে ভয় পেলে করণীয়
  10. জিনদের অধিকার এবং ধর্মকর্ম
  11. রোজার দিনে রুকইয়ার ব্যাপারে ১০ টিপস
  12. কোরআন আমাদের জন্য শিফা এবং রহমত

অধ্যায়-১০: উম্মে আব্দুল্লাহর লেখা

  1. বিভিন্ন পরিস্থিতির জন্য‌ কমন সাজেশন
  2. রুকইয়াহ নিয়ে যত কথা - এক | দুই | তিন
  3. ইয়াক্বিনের সাথে দোয়া এবং রুকইয়াহ
  4. রুকইয়াহ দ্বারা সমস্যার সমাধান বিষয়ে
  5. বদনজর লাগা প্রসঙ্গে| বদনজর এবং কুসংস্কার
  6. কে আমাকে যাদু করেছে?
  7. ওয়াসওয়াসাকে জয় করুন...
  8. হরেকরকম ভয়...
  9. বিয়ে নিয়ে যত কথা
  10. প্রেম-ভালোবাসা প্রসঙ্গ এবং রুকইয়াহ
  11. পিরিয়ড বিষয়ক সমস্যা | সাদাস্রাব সমস্যা
  12. বাচ্চা না হওয়া প্রসঙ্গে
  13. গর্ভকালীন সমস্যা ও রুকইয়াহ
  14. সমস্যা যখন চুল পড়া!
  15. বাচ্চাদের শীতকালীন যত্ন এবং রুকইয়াহ
  16. রুকইয়াহ ও রমাযান
  17. ধার্মিক কবিরাজ ও জ্বীনের সাহায্য গ্রহণ করা
  18. রুকইয়াহ এবং কিছু অপ্রিয় সত্য

অন্যান্য: অডিও-ভিডিও, অ্যাপ

  1. অল্প কথায় রুকইয়ার A-Z (lecture)
  2. মাসনুন আমল (app) | web version
  3. রুকইয়াহ সাপোর্ট বিডি ওয়েবসাইট- www.ruqyahbd.org
  4. ইউটিউব চ্যানেল- youtube.com/ruqyahbd
  5. প্লেস্টোর অ্যাপ- ruqyahbd.org/playstore
______
রুকইয়াহ ইনডেক্সের শর্ট লিংক - ruqyahbd.org/index
অনুমোদন সীমাঃ Creative Commons BY-NC-ND 4.0. মোতাবেক (লেখকের নাম সঠিকভাবে উল্লেখ করে, তথ্যের কোনরূপ বিকৃতি ছাড়া, ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যবিহীন ব্যবহার এবং প্রচারের অনুমতি দেয়া হল।)

বৈবাহিক ধর্ষণ

 

বৈবাহিক ধর্ষণ

মানবজীবনের প্রতিটা সমস্যার সমাধান ইসলামে রয়েছে বলে আমরা দাবি করি। আমরা দাবি করি, ইসলাম ১৪০০ বছর আগে থেকে শুরু করে পৃথিবী ধ্বংস হওয়া অব্দি যত সমস্যা মানুষের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এসেছে ও আসবে, সকল সমস্যার টোটাল সর্বাঙ্গসুন্দর সমাধান ইসলাম দেয় এবং সমাধান বের করবার ক্লু/ মূলনীতি বলে দেয়। অধুনা একটা সমস্যা আমাদের নীতিনির্ধারকদের চোখে পড়েছে। কেন পড়েছে সেটা পরে বলছি। সমস্যাটা হল, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে ধর্ষণ। আদর করে নাম দেয়া হয়েছে ‘ম্যারাইটাল রেপ' বা ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’। স্বামী কর্তৃক জোরপূর্বক স্ত্রীসঙ্গম। মিডিয়াতে ব্যাপক তোড়জোড় সহকারে আলোচনা হচ্ছে এটা নিয়ে, নারীবাদীরাও ব্যস্তসমস্ত।

‘বৈবাহিক ধর্ষণ’… এটা কেবল দুটো শব্দ নয়। ২ শব্দের ভিতর ২টা দর্শন— বিবাহের দর্শন, ধর্ষণের দর্শন। যেমন ‘পিল’ শুধুমাত্র একটা ওষুধ না, একটা জীবনদর্শন, একটা লাইফস্টাইল। যেহেতু ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ শব্দটাও একটা পশ্চিমা ধারণা, শব্দটার অন্তর্নিহিত দর্শনও আমাদের পশ্চিমা প্রেক্ষাপটেই বুঝতে হবে। এবং আমাদের প্রেক্ষাপটে সেই দর্শনের উপযোগিতা আলোচনায় আনতে হবে। কোন নৈতিক গ্রাউন্ডে (consent-based model) ধর্ষণ একটা অপরাধ, কিন্তু ব্যভিচার অপরাধ না— সেটা আমরা অলরেডি দেখেছি। এবার আমরা একটু দেখব, পশ্চিমা আধুনিকতায় ‘বিবাহ’ কী (Western philosophy of marriage)?

পাশ্চাত্য বিবাহ-দর্শন:

২য় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে পশ্চিমা সমাজব্যবস্থায় দ্রুত পরিবর্তন আসতে শুরু করে। অর্থনীতি ও সমাজনীতি খুব দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের সংঘাত ও প্রতিযোগিতা এই পরিবর্তনের কারণ। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার জন্য সমাজব্যবস্থাকে উপযোগী করে নেবার জন্য মানুষের ধ্যানধারণা, পরিবার কাঠামো সবকিছু বদলে দেয়া হয়। ফলে পরিবর্তন আসে ‘বিবাহ’-এর ধারণায়ও। যেমন ধরুন, অর্থনৈতিক লম্ফঝম্পের উদ্দেশ্যে নারীদের ব্যাপকভাবে জবমার্কেটে আনা ও রাখা প্রয়োজন। ৬০-এর দশকে শুরু হল নারীবাদের ২য় ওয়েভ, একই সময় দেয়া হল ‘জেন্ডার-রোল থিওরি’। বাধা মনে হল পরিবার ও সন্তান, ৬০ এর দশকেই এলো ‘পিল’। মিডিয়া তার কাজ শুরু করল। সন্তান ধারণ ও লালন আর রইল না ‘বিবাহের উদ্দেশ্য’। জনপ্রিয় হতে লাগল ‘লিভ-টুগেদার’ কালচার। পশ্চিমা সমাজে বিবাহের আধুনিক ধারণাটা কেমন দেখা যাক—

 

 

 

উপরের চার্ট থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, ঐতিহ্যবাহী ‘বিবাহ’প্রথার যে যে উদ্দেশ্যগুলো ছিল, তা বিজ্ঞান-প্রযুক্তির কল্যাণে এবং পুঁজিবাদের বিকাশের দরুন বিবাহ ছাড়াই পূরণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সুতরাং প্র্যাক্টিক্যালি যৌন, আর্থিক, প্রজন্মগত, স্বাস্থ্যগত— কোনো কারণেই আধুনিক সভ্যতার ‘বিয়ে’র দরকার নেই। তাহলে তারা কেন বিয়ে করে?

এটাই পশ্চিমা সভ্যতার আধুনিক বিবাহ-দর্শন। আর তা হল: বিয়ে কেবলই একটা চুক্তি, যেখানে সমান দুজন মানুষ (primarily a personal contract between two equals) মনে করে, তারা একে অপরের সাথে বাকি জীবন কাটাতে সম্মতি দেয়। তারা বিশ্বাস করে এতে তাদের প্রেম-খুশি-স্থিরতা বাড়বে। এবং এই সংজ্ঞা থেকেই সমকামীরাও বিয়ে করে, কেননা বিয়ের এই সংজ্ঞায় তারাও শামিল। যেহেতু সন্তান জন্মদান এই সংজ্ঞায় নেই। প্রবেশন (penetration) তো এখন সেক্সের সংজ্ঞায়ই নেই। সুতরাং ভ্যাজাইনাল সেক্সও বিয়ের এই সংজ্ঞায় নেই। পশ্চিমা বিবাহ-দর্শনে বিশ্বাসীরা ঠিক এই চিন্তাকাঠামো থেকেই প্রাচ্যের ঐতিহ্যবাহী বিবাহ-প্রথা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

CBS News তাদের 60 Minutes and Vanity Fair প্রোগ্রামের মাধ্যমে এক জরিপ করে, বিয়ের উদ্দেশ্য কী— এর উপর— 
৫৪% বলেছে: এর উদ্দেশ্য প্রতিশ্রুতিশীলতা (mark of commitment)
২৩% বলেছে: এর উদ্দেশ্য সন্তানের জন্য সুন্দর পরিবেশ দেয়া(provide for raising children)
২০% বলেছে: বিয়ের আদৌ কোনো উদ্দেশ্য আছে বলে মনে হয় না, নিরর্থক।
সেক্স, সন্তান আনা, মিথোজীবিতা— এসব বিয়ের উদ্দেশ্যের মধ্যেই পড়ে না।

সুতরাং, এই বাস্তবতায় সমান দুজন, যাদের কারও উপর কারও কোনো দাবি নেই, অধিকার থাকবে না। স্রেফ পরস্পরকে মানসিক সুখ দেয়া, কমিটমেন্ট, ভালোবাসা যে চুক্তির উদ্দেশ্য; সেখানে যদি বিন্দুমাত্রও একপক্ষের অসম্মতি থাকে, সে চুক্তি আর প্রাসঙ্গিক থাকে না। এটাই ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’-এর ক্যানভাস। ঐ বিশেষ বিবাহ-দর্শনে ঐ বিশেষ অসম্মতির আচরণ(যা চুক্তির আওতাধীন না) তখন অপরাধ হিসেবে পরিগণিত।

পশ্চিমা বিবাহ-দর্শন আরও স্পষ্ট হবে যদি তাদের ডিভোর্স-দর্শনটা একটু টেনে আনা যায়। ১৯৬৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে প্রথম পাশ হয় no-fault divorce আইন। যদি উভয়ের যে কারও বিবাহ কন্টিনিউ করতে ইচ্ছে না করে, সে নো-ফল্ট ডিভোর্স দিতে পারে, যেখানে সঙ্গী/সঙ্গিনীর কোনো দোষ উল্লেখের প্রয়োজন নেই। অধিকাংশ পশ্চিমা দেশেই এই আইন রয়েছে। ১৯৭৫ সালে অস্ট্রেলিয়াও এই আইন করে। তাদের বিবাহ-দর্শনে কোনো দায়বদ্ধতা, কোনো স্বার্থত্যাগ, সন্তানের দিকে চেয়ে কোনো কম্প্রোমাইজের কোনো বিষয় নেই। পাশ্চাত্য ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী দর্শনের অনিবার্য ফল এসব আইন।

ইসলামের নিকাহ:

বিপরীতে ইসলামের বিবাহ-দর্শন ভিন্ন। ইসলামে বিয়েকে বলা হয় নিকাহ (نكاح), বা তাযবীজ (تزويج) । যার আভিধানিক অর্থ হল: মিলন (union), জোড়া সৃষ্টি করা(pairing)। বিপরীতে ইসলামের বিবাহ-দর্শন ভিন্ন। ইসলামে বিয়েকে বলা হয় নিকাহ (نكاح), বা তাযবীজ (تزويج) । যার আভিধানিক অর্থ হল: মিলন (union), জোড়া সৃষ্টি করা(pairing)। নিকাহের প্রধানতম উদ্দেশ্যই যৌনমিলন। যৌনতা মানুষের একটি মৌলিক প্রয়োজন। এটি পূরণও হতেই হবে, আবার একই সাথে একে নিয়ন্ত্রণও করতে হবে। এই চাহিদা পূরণ ও একইসাথে নিয়ন্ত্রণের বিধিবদ্ধতা হচ্ছে নিকাহ, যার উদ্দেশ্যই দুই লিঙ্গের union-কে বৈধ করা। যার এই ক্ষমতা নেই, তার জন্য নিকাহ হারাম, যেমন: পুরুষত্বহীন পুরুষ [1]। সুতরাং যৌনমিলন হচ্ছে নিকাহের প্রধানতম উদ্দেশ্য। এটা পশ্চিমা marriage-এর সাথে নিকাহ-এর প্রধানতম পার্থক্য। যৌনমিলন সম্ভব না হলে, নিকাহ (union) নিরর্থক। একজন স্বাধীনা নারীর যৌনাঙ্গ একজন পুরুষের জন্য বৈধ হবার আইনী ভিত্তি— নিকাহ। পশ্চিমা সভ্যতায় এই ভিত্তি হল সম্মতি, আর আমাদের হল নিকাহ।

সুতরাং, নিকাহ-কেন্দ্রিক অন্যান্য বিধানাবলীও এই যৌনমিলনকে কেন্দ্র করে গঠিত। যেমন, যদি ‘মাহর’ বা compulsory marital dower নিয়ে আলোচনা করি তাহলে এই উদ্দেশ্য আরও স্পষ্ট হয়। ইসলামে নিকাহের সাথে মাহর বা মোহরানা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

‘মাহর’ নগদ অর্থ হতে পারে, গহনা হতে পারে, কোনো বস্তু হতে পারে এবং কোনো মূল্যবান শিক্ষাও হতে পারে (কুরআনের সূরা) [2]। just give anything precious to the precious person of your life. হাদিস থেকে আমরা জানি নগদ দিরহাম, সোনার টুকরো, কুরআনের সূরা (তার আর কিছুই নেই) শিখিয়ে দেওয়াকেও বিয়ের মাহর (মোহরানা) হিসেবে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গ্রহণ করেছেন।

১. 
হাদিসে এসেছে: হাদিসে এসেছে: ‘…স্বামী তার সাথে সহবাস করলে তাতে সে মাহরের অধিকারী হবে  [আবু দাউদ ২০৮৩, তিরমিযী ১১০২. ইবনু মাজাহ ১৮৭৯, ১৮৮০] যদি বিয়ের সময় মাহরের পরিমাণ নির্ধারণ না-ও করে, বিয়ে consummate করার সাথে সাথে স্ত্রী মাহর প্রাপ্য হবে। এই consummate অর্থ ‘স্বামী-স্ত্রী একান্ত হওয়া’ (private secclusion) । উমার রা. বলেন: ‘পর্দা টেনে দিলে বা দরজা বন্ধ করলেই পূর্ণ মাহর ওয়াজিব হবে’। এটাই মালিকী ছাড়া বাকিদের অভিমত। [3]
২. 
উকবা ইবন আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। উকবা ইবন আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, শর্ত (চুক্তি)-সমূহের মধ্যে সর্বাধিক প্রতিপালনীয় গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে, তোমরা যা দ্বারা (মহিলার) লজ্জাস্থান হালাল করবে, (অর্থাৎ মোহর আদায় করা)। [সুনানে আন-নাসায়ী নিকাহ্‌ ৩২৮১] মাহর নির্ধারণ না করলেও সহবাসের পর স্ত্রী মাহর প্রাপ্য এবং ওয়াজিব, যদি না স্ত্রী দাবি ত্যাগ করে। মাহর পরিশোধ না করে স্বামী মারা গেলে তার সম্পত্তি থেকে অন্যদের দেনা শোধের আগে শোধ করতে হবে স্ত্রীর মাহর।
৩. 
ইবনু যুহরী (র) থেকে বর্ণিতঃ আবদুল মালিক ইবনু মারওয়ান জবরদস্তিভাবে যিনা করা হয়েছে এমন স্ত্রীলোকের ফয়সালা এই দিয়েছেন: ধর্ষণ যে করেছে, সে ঐ স্ত্রীলোকটিকে মোহর দান করবে। ইমাম মালিক (র) বলেন আমাদের নিকট এই ফয়সালা যে, যদি কেউ কোন স্ত্রীলোকের উপর জবরদস্তি করে, চাই সে কুমারী হোক অথবা অকুমারী, যদি সে স্বাধীনা হয়, তবে তাকে মাহরে মিসাল দেয়া আবশ্যক। [মুয়াত্তা ইমাম মালিক ১৪১০] (ইখতিলাফ আছে, স্রেফ ধারণাটা বুঝার জন্য, মাসয়ালা বলা উদ্দেশ্য না)
৪. 
সা’ঈদ বিন মুসাইয়িআব (রহ) থেকে বর্ণিত যে, ‘উমার বিন খাত্তাব (রাঃ) বলেছেন- সা’ঈদ বিন মুসাইয়িআব (রহ) থেকে বর্ণিত যে, ‘উমার বিন খাত্তাব (রাঃ) বলেছেন- যে ব্যক্তি কোন মহিলাকে বিবাহ করে, অতঃপর তার সাথে মিলন করতে গিয়ে দেখে যে, ঐ নারী শ্বেত কুষ্ঠরোগী বা পাগলী বা কুষ্ঠ রোগগ্রস্তা তাহলে ঐ স্বামীর উপর স্পর্শ করা (মিলন) হেতু মোহর আদায় যোগ্য হবে। তবে ঐ ব্যাপারে যদি কেউ ধোঁকা দিয়ে থাকে তাহলে তাকেই মোহরের জন্য দায়ী করা হবে। হাদিসটি সা’ঈদ বিন মানসুর, মালিক, ইবনু আবী শাইবাহ বর্ণনা করেছেন। হাদিসটির রাবীগণ নির্ভরযোগ্য।
৫. 
যদি স্বামী সহবাস না করেই বা পরিপূর্ণ একান্ত না হয়েই তালাক দেয়, তাহলেও স্ত্রী অর্ধেক মাহর পাবে[4]
৬. 
আলিমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, মাহর পরিশোধের আগ পর্যন্ত স্ত্রী চাইলে সহবাসের অনুমতি না-ও দিতে পারে [5]। কিন্তু একবার অনুমতি দিয়ে ফেললে, আর অনুমতি স্থগিত করতে পারবে না। শুধু ইমাম আবু হানিফা রহ. বলেন, প্রত্যাখ্যান করতে পারবে। সাহেবাইনের মতে পারবে না। 
৭. 
অধিকাংশ আলিমগণের মতে (হানবালি ছাড়া বাকিদের মতে), মাহর নেবার পর যদি স্ত্রী সহবাসে অসম্মতি জানায় (শারঈ কারণ ছাড়া), তাহলে স্বামী মাহর ফেরত চাইতে পারবে। (Maqsad al-nabih, M ajma ' al-'anhur and al-Fiqh 'ala al-madhahib al-'arba'ah) এবং স্ত্রী ভরণপোষণ পাবার অধিকার হারাবে।
৮. 
যদি বাতিল বিবাহ (যা বিবাহ হয়নি, যেমন ৫ম স্ত্রী) করে এবং সহবাস করে, তবে বিয়েটা বৈধ না হলেও সহবাসের কারণে মাহর ওয়াজিব হবে।

মাহরের আলোচনাটুকু এজন্য করা হল, নিকাহ ও মাহর উভয়ের ওতপ্রোত হওয়াটা বুঝানোর জন্য। এবং মাহর নির্ধারণ ছাড়া নিকাহ অনুষ্ঠিত হয়ে যাবে ঠিকই, কিন্তু ‘একান্ত হওয়া বা সহবাস করা’র সাথে সাথে পূর্ণ মাহর ওয়াজিব হয়ে যাবে। আগেই ধার্য করে না নিলেও সহবাসের সাথে সাথে ‘মাহরে মিসিল’ (তার বংশের অন্যান্য মেয়েদের সমপরিমাণ মাহর)-এর হকদার স্ত্রী হয়ে যাবে, যা পুরুষের উপর ওয়াজিব। অর্থাৎ মাহরের সাথে একান্ত হবার সম্পর্ক রয়েছে। তবে একান্ত না হলেও মাহর দিতে হয়, যেমন:

- মিলিত হবার আগেই স্বামী মারা গেলে পূর্ণ দিতে হয়। [security money-র মতো]
- মিলিত বা একান্ত হবার আগেই তালাক দিলে অর্ধেক দিতে হয় [সম্মানী হিসেবে]

মাহরের দ্বারা স্ত্রীর যৌনসম্মতি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। মাহরের প্রতীকী বিনিময়ে স্ত্রীর শরীরের উপর স্বামীর আইনী অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়। এ থেকে অনেকে বলে থাকে, তাহলে পতিতার ভাড়াও তো একই জিনিস, তাহলে স্ত্রীও স্থায়ী পতিতা? পতিতার ভাড়া কেবলই তার ভাড়া। আর স্ত্রীর মাহর তার সম্মানী; কেননা স্ত্রী শুধু সেক্স দেয় না, একজন স্ত্রী তার স্বামীকে যা দেয়, তা অমূল্য। স্বামীর অর্ধেক দীন পূর্ণ করে দেয়, গুনাহকে কঠিন করে দেয়, ধীর-স্থিরতা দেয়, প্রশান্তি-ভালোবাসা দেয়, পিতৃত্ব-সুখ প্রদান করে, ঘরে শান্তি-আরামের ব্যবস্থা করে, কঠিন সময়ে পাশে দাঁড়ায়, একাকীত্ব কাটায়, অসুখে সেবা করে, জীবনসাথী হিসেবে সুখ-দুঃখের ভাগী হয়। শিক্ষককে আপনি যত টাকাই দেন, সেটা তাঁর দেয়া ‘শিক্ষার’ মূল্য হয় না, সেটা সম্মানী হয়, Token of respect হয়। মাহর-ও তেমনি স্ত্রীর Token of respect, যা শুধু স্ত্রীরই নিজের, সে যেভাবে ইচ্ছে বৈধপথে খরচ করবে।

এজন্য পরিভাষার গুরুত্ব এতো ব্যাপক। পশ্চিমা marriage বা বিবাহে ধর্ষণ হতে পারে, আমাদের ‘নিকাহ’-তে ধর্ষণ বলে কিছু নেই। আমরা মুসলিমরা‘marriage’ বা বিয়ে করি না, আমরা নিকাহ করি। ইসলামের বিবাহ-দর্শনে (নিকাহ) ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’-এর কোনো স্থান নেই। এটা কোনো খেয়ালখুশি না যে, যা মনে চাইল তা-ই করলাম। একে বলে ‘আকদ’ (عَقْد), যার অর্থ চুক্তি, মতৈক্য, বন্ধন ইত্যাদি। যেকোনো চুক্তির ফলে উভয় পক্ষের পরস্পর দায়বদ্ধতা থাকে, পরস্পরের উপর অধিকার থাকে, কর্তব্য থাকে, চুক্তি পূরণের প্রতিশ্রুতি থাকে, চুক্তি রক্ষার চেষ্টা থাকে। যখন খুশি বিনা উস্কানিতে চুক্তি বাতিল করে দেয়া গেলে, তা কোনো চুক্তিই নয়। বিবাহ নারী-পুরুষের মাঝে এমন বন্ধন তৈরি করে যা শুধু বস্তুবাদী বা শুধু ভাবের দৃষ্টিতে নয়, বরং সামগ্রিক দৃষ্টিতে দেখার দাবি রাখে।

এই বন্ধন শরীয়াহ রক্ষা করে—
· হালাল কাজের ভিতর সর্বনিকৃষ্ট কাজ হল তালাক[6]। (নিরুৎসাহ প্রদান)
· কোনো নারী যদি বিনা কারণে স্বামীর কাছে তালাক চায়, জান্নাতের সুগন্ধও তার জন্য হারাম[7]। [আবু দাউদ, আলবানী সহীহ]
· তোমরা আল্লাহর বান্দীদের ব্যাপারে কঠোর হয়ো না। তার একটা জিনিস অপছন্দ হলেও আরেকটা জিনিস পছন্দ হবে।[8]  (নারীদের ব্যাপারে সবর করা। একটা জিনিস খারাপ লাগলেই পশ্চিমের মত ডিভোর্সের চিন্তা না করা।)
সমাজ রক্ষা করে। রাষ্ট্র রক্ষার চেষ্টা করে।
 

পশ্চিমা ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ ও ইসলামী পরিবারনীতি

কী কী কারণে ম্যারিটাল রেপ হচ্ছে, এর পেছনে স্বামীর কী সাইকোলজি কাজ করছে, আর সেই কারণগুলো ইসলামী পরিবারনীতি কীভাবে হ্যান্ডেল করে দেখা যাক। 

 

 

 

প্রকৃত অর্থে ‘ম্যারিটাল রেপ’ যেটাকে বলা হচ্ছে, যা এই ৫টি কারণে হচ্ছে, বা এই ৫টা সাইকোলজি থেকে স্বামীরা করছে। ইসলামী পরিবারনীতিতে তার কোন স্থান নেই। ইসলাম সেটাকে অবশ্যই নিরুৎসাহিত করে। আরবি নামের যেকোন লোকের অকাজ-কুকাজই ইসলামের পরিচয় না, ইসলামের পরিচয় ইসলামের শিক্ষা। যে ইসলামের শিক্ষা মানে না, তার কাজে ইসলামের কী দায়, সে তো ইসলামের শিক্ষাকে মানেইনি। বরং পরিপূর্ণ ইসলামী দাম্পত্য শিক্ষা না থাকাই নারীর এই কষ্টের জন্য দায়ী। ইসলাম সবাইকে একটা লিমিট দিয়ে দেয়, এর বাইরে গেলে বাড়াবাড়ি, এবং বাড়াবাড়ির হিসেব আল্লাহর কাছে দিতে হবে, আল্লাহ বাড়াবাড়ি করনেওয়ায়ালাদের পছন্দ করেন না। এখন আপনারা তো সেই সীমাটাই জানতে দিচ্ছেন না, আবার সীমা লংঘন করলে ইসলামের দোষ দিচ্ছেন, মানে কী? স্ত্রী যদি মনে করে স্বামী তার উপর জুলুম করছে, তবে অবস্থা সাপেক্ষে ইসলামী আদালতের দ্বারস্থ হবার অধিকারও তাকে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তা অবশ্যই রেপ হিসেবে নয়, জুলুম হিসেবে। স্বামী কর্তৃক শুধু যৌনমিলন আমাদের ‘নিকাহ’-এর ধারণায় অপরাধ না। তবে সেটার আগে যে জুলুম করা হয়, সেজন্য ইসলামী আদালত স্ত্রীর পক্ষে ব্যবস্থা নিতে পারে। 

 কিন্তু ইসলামের শিক্ষাই এমন যে, তা এসব সাইকোলজিকেই এড্রেস করে। স্বামীর সাইকোলজিই জুলুমী হতে দেয় না। ইসলাম হল ব্যালান্স, ভারসাম্য। চোরও ঠেকাব, জিনিসও লুকাব। সোনাদানা বাইরে রেখে চোরের দোষ দেবার ন্যাকামো ইসলামে নেই। বরং ইসলাম এমন সংযম, পরস্পরের জন্য উৎসর্গ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের শিক্ষা দেয়, যে সফটওয়্যার শুরুতেই ইন্সটল করে দিতে পারলে, আপনাদের তথাকথিত ‘ম্যারাইটাল রেপ’ হবার কোন সুযোগই নেই।

 


 

 

ইসলাম এমন ফরম্যাট, সেখানে দুজনই দু’জনের জন্য স্যাক্রিফাইস করা শেখে। দু’জনই যেখানে দু’জনের জন্য ছাড় দেবার মানসিকতা রাখে, সেখানে সংঘর্ষের সুযোগ কোথায়?

ধর্ষণ vs বৈবাহিক ধর্ষণ: ভিতরের কাহিনী

ধর্ষণের সংজ্ঞা এখন ব্যাপক, যা শুধু পেনিট্রেশনের ভিতর সীমাবদ্ধ নেই। সেদিকে আলাপ নেব না। প্র্যাকটিক্যালি ধর্ষিতার মেডিকেল পরীক্ষা বাস্তবতা যা বুঝা যায়, ধর্ষণ- অনেকগুলো অপরাধের সমষ্টি। অসম্মতিতে সহবাসই শুধু নয়; অসম্মতির দরুণ শারীরিক প্রহার, চড়-থাপ্পড়-জখম, বাধা দেবার চেষ্টার (ক্রস লেগ) বিপরীতে প্রচণ্ড আঘাত করা, যোনিপথ জখম- এই অপরাধ কয়টির সম্মিলিত রূপ হল ধর্ষণ। নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাসটা অসম্মতিতে করার অনুমতি থাকলেও বাকি কয়টা বড় ধরনের অপরাধ।

আর স্বাভাবিক তো এটাই যে, নিজ স্বামীর প্রতি স্ত্রীর বাধা থাকবে দুর্বল, সাময়িক; ফলে সহবাসে অসম্মতি থাকতে পারে, তবে প্রতিরক্ষা থাকবে না। ফলে ধর্ষণের পাশবিকতা বা ভায়োলেন্স এখানে অনুপস্থিত। মনে অসম্মতি থাকলেও দৈহিক প্রতিরোধ প্রত্যাহার করে নেবে। ফলে স্ত্রীর ক্ষেত্রে ‘ধর্ষণ’ শব্দটাই অযথার্থ। মানে অসম্মতিতে সহবাস আর ধর্ষণ কখনোই এক জিনিস না। পশ্চিমা নারীবাদী লিবারেল নৈতিকতার কাগুজে সংজ্ঞায় তা পড়তে পারে, কিন্তু বাস্তবতা বিবর্জিত এসব ‘এসিরুম ডেফিনেশন’-এর সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। এবং এসব কাগুজে ধারণা মানতেও আমরা বাধ্য না।

তবে যেটা হতে পারে, স্বামী জালেম হতে পারে। জুলুমের অংশ হিসেবে জোরপূর্বক সহবাস হতে পারে। ইসলাম সেটাকে জুলুম হিসেবেই দেখবে, আলাদা করে ধর্ষণ হিসেবে নয়। আসল ঘটনাটা কী হয়েছে এবার আসি। বাইরে অপরিচিত মানুষ ধর্ষণ করে যাচ্ছে, ঠেকানোর বালাই নেই। স্বামীর ধর্ষণ নিয়ে কেন মাথাব্যথা। সারা পৃথিবীতে ধর্ষণের হার বাড়ছে। পুঁজিবাদ নিজ মুনাফা ও কম পারিশ্রমিকের লোভে নারীকে ঘরের বাইরে এনেছে, শ্রম নেবার জন্য বিয়ের বয়স পিছিয়েছে। সিনেমা ব্যবসা, পর্নব্যবসা দিয়ে মাঝের বয়সটা কাভার দেয়ার চেষ্টা করেছে। অনিবার্যভাবে শুরু হয়েছে ধর্ষণের মহামারি। পতিতাব্যবসা ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত করেও ঠেকানো যাচ্ছে না, উল্টে পতিতারা পর্যন্ত ধর্ষিতা হচ্ছে। #MeToo আন্দোলনে উঠে আসছে শিক্ষাক্ষেত্রে ও কর্মক্ষেত্রে নারীর অসহায়ত্ব। সচেতন বোদ্ধারা বিষয়টা নিয়ে ভাবছে, বাইরে নারী নিরাপদ নয়। এখন এটা কাভার দেয়ার জন্য পরের তুরুপের তাস হল, নারী তো ঘরেও নিরাপদ নয়। তোমরা নারীকে ঘরে নিতে চাচ্ছ, তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে চাচ্ছো, ঘরে স্বামীর কাছেও তো নারী নিরাপদ নয়।

আমরা আগেই দেখলাম, খোদ নারীবাদীরা ‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে’ সম্মতি নিয়ে সঙ্গমকে ধর্ষণ বলছে না। তাহলে ‘বিয়ে করে’ (আমাদের ‘নিকাহ’ মানে সঙ্গমের সম্মতি) সঙ্গমকে ধর্ষণ বলা হচ্ছে কেন? তাহলে কি স্বামীকে প্রতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মতি নিতে হবে। হয়ত অদূর ভবিষ্যতে আইন থেকে বাঁচতে স্বামীকে প্রতিবার লিখিত সম্মতিপত্রও নিতে হতে পারে। অবশ্যই স্বামীকে স্ত্রীর সমস্যা মানসিকতা বুঝতে হবে, কিন্তু স্থায়ী অনুমতিপ্রাপ্ত স্বামী স্ত্রীকে জোর করাও ধর্ষণ, আবার অপরিচিত লোক জোর করে লুটে নেয়াও ধর্ষণ? এসব রূপকথায় আমাদের সায় নেই।

তাত্ত্বিক কথাবার্তা:

মধ্যবিত্ত শিল্পপতি অংশটার উৎপত্তি সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতকের বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন থেকে (এনলাইটেনমেন্ট)। ব্যক্তির সংজ্ঞা, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ, স্বাধীনতা, সমতা, উদারনৈতিকতা— ইত্যাদি মতবাদ যখন অর্থনৈতিক সেক্টরে প্রয়োগ করা হল— জন্ম নিল পুঁজিবাদ বা ধনতন্ত্র। যার বিকাশে বিকশিত হল এই মধ্যবিত্ত শিল্পপতিরা, উপনিবেশ ও শিল্পবিপ্লবের মওকায়। এরাই ঘটালো পুরনো সামন্ততন্ত্রের পতন, জমিদারেরা ছিল এদের বিকাশে বাধা। কারণ এই বণিকেরা ছিল উৎপাদক প্রজা আর শোষক জমিদারের মাঝখানে, যাদেরকে জমিদারেরা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করত, ব্যবসায় বিধিনিষেধ-খাজনাপাতি আরোপ করে[1]

পত্তন করল গণতন্ত্রের, যাতে নিজেদের ব্যবসার অনুকূলে শাসনযন্ত্রকে ব্যবহার করা যায়। সেই সাথে নিজেরাও সরাসরি মন্ত্রী ইত্যাদি হবার দ্বারা শাসনে হস্তক্ষেপ করা যায়। খুব স্বাভাবিকভাবেই এনলাইটেনমেন্ট থেকে আসা মূল্যবোধগুলো এই শ্রেণীটার পক্ষে কাজ করে। কীভাবে করে—

ক. আগের ধর্মভিত্তিক নৈতিকতা ভোগকে নিরুৎসাহিত করে। সুতরাং ‘ব্যক্তি’ নতুন সংজ্ঞা দাও: সে নিজের নীতি নিজে ঠিক করে সে human. (humanism, liberal ethics)
খ. পরিবারের জন্য, সমাজের জন্য মানুষ ত্যাগ করে, sacrifice করে, যা ভোগকে কমায়। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য আদর্শের দ্বারা তৈরি হবে স্বার্থপর মানুষ, যার ফোকাস হবে শুধু নিজের ভোগ।
গ. স্বাধীন মানুষ নিজের ইচ্ছার দাসত্ব করবে। ফলে স্বাধীনতা ভোক্তা বৃদ্ধি করবে। পরাধীন ব্যক্তির ভোগ সীমিত।
ঘ. সমতা ও এ থেকে উৎসারিত অন্যান্য আইন প্রত্যেকের ভোগের অধিকার নিশ্চিত করবে।

এভাবে এনলাইটেনমেন্টের পুরো কাঠামোটাই পুঁজিবাদের পক্ষে কাজ করবে। ভোগ বাড়লে ক্রেতা বাড়বে, ক্রেতা বাড়লে পণ্য বেশি বিক্রি হবে, বেশি বিক্রি মানে বেশি মুনাফা— পুঁজিবাদ। যা যা এই ভোগকে নিরুৎসাহিত করে: ধর্ম, পরিবার, গোষ্ঠী, সমাজ— সবকিছুকে ভেঙে অকার্যকর করে দিতে পারলে লাভেই লাভ। আর রাষ্ট্র হবে সর্বশক্তিমান, যা সযত্নে রক্ষা করবে পুঁজিপতিদের অবাধ ব্যবসার স্বার্থ। এরই অংশ হিসেবে ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ কনেসেপ্টের আমদানি। পশ্চিমের ভেঙে পড়া পরিবার, ভেঙে পড়া সমাজ ও ব্যর্থ রাষ্ট্র- এসব বড় বড় মাছকে ঢাকার জন্য ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ আরেক পদের শাক।

না বুঝলে তেজপত্র ইত্যাদি।