ছোট্ট ছেলে আনাস, মা বাবার চোখের মনি, এবার সে কেজিতে উঠেছে।
.
রমাদান মাস, সবাই সিয়াম রাখে, রাতে উঠে একসাথে সেহেরী খায়। আনাসের খুব মন চায় সেও সবার সাথে সেহেরী খাবে, সিয়াম রাখবে।
.
কিন্তু সে যে ঘুম থেকেই উঠতে পারে না। ঘুম নষ্ট হলে শরীর খারাপ লাগবে ভেবে মা ও তাকে ডাকেন না।
“তুমি তো খুব ছোট, বাবা। বড় হলে সিয়াম রাখবে।”
.
ইশ কবে যে সে বড় হবে, মনে মনে ভাবে আনাস।
.
পাঁচ বছর পর…
.
এখন আনাসের বয়স দশ। এবারের রমাদানে সে অবশ্যই সিয়াম রাখবে। মনে মনে দারুণ এক্সাইটেড সে।
.
মনের কথা মাকে জানাতেই এক বাক্যে নাকচ করে দিলেন মা।
.
না বাবা! এবার না, এবার তো রমাদানেই তোমার পরীক্ষা। এর মধ্যে সিয়াম রাখলে পরীক্ষায় খারাপ করবে।
.
মায়ের কথা শুনে চোখ ফেটে পানি আসে আনাসের। কত্ত আশা করেছিল সে।
.
আরো দশ বছর পর……..
রাত ৩:১৫
.
আনাস, বাবা! ওঠো। সেহেরীর সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে।
মা, যাও তো, ঘুমাতে দাও প্লিজ।
(ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে আনাস)
সেহেরী খাবে না? সিয়াম রাখবে কিভাবে?
রাখবো না! সিয়াম রাখলে পিপাসা পায়।
.
মাকে হতবাক করে রেখে পাশ ফিরে কানে বালিশ চাপা দেয় আনাস। আর কোন কথা বাড়াতে রাজি না সে।
.
………….
.
পাঁঁচ বছর বয়সে আনাসের সিয়াম ফরজ হয়নি, কিন্তু তার হৃদয়ে দ্বীনের প্রতি, ইবাদতের প্রতি ভালোবাসা বুনে দেওয়ার উপযুক্ত সময় ছিল বয়সটা। তার বাবা মা তাকে রমাদানের গুরুত্ব বুঝিয়ে বলতে পারতেন। কখনো সখনো সেহেরিতে ডেকে একসাথে সেহেরি করতে বলতে পারতেন। তাকে সিয়াম রাখতে উৎসাহিত করতে পারতেন। হয়ত আনাস দুপুরের দিকেই সিয়াম ভেঙে ফেলতো ক্ষুধার জ্বালায়, কিন্তু একটু একটু করে তার অভ্যাস হত সিয়াম রাখার। সে রমাদানের মাহাত্ম্য বুঝতো।
.
দশবছর বয়সে আনাসকে সিয়াম রাখতে দেওয়া হলো না পরীক্ষার অযুহাতে। আনাস শিখলো তার রব্বের ইবাদত করার চেয়ে স্কুলের পরীক্ষায় ভালো করা বেশি জরুরি।
.
বিশ বছর বয়সের আনাসকে নতুন ভাবে গড়ে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। সে এখন সেভাবেই আচরণ করবে যা সে এতদিন শিখে এসেছে, যাতে সে অভ্যস্ত। তার সিয়াম রাখতে ভালো লাগবে না কারণ সে এর মর্যাদাই জানেনা। ছোট থেকে মানা করে করে তাকে এর প্রতি অনাগ্রহী করে তোলা হয়েছে। সাবালক হওয়ার পরে যখন তার উপর সিয়াম ফরজ হয়েছে, তখনো তাকে এর গুরুত্ব বোঝানো হয়নি।
.
আমাদের সাহাবারা (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’লা আনহা) তাদের ছোট সন্তানদের সিয়াম রাখতে উৎসাহিত করতেন। ক্ষুধার জ্বালা ভুলিয়ে রাখতে তাদেরকে কাঠের খেলনা দিয়ে ব্যস্ত করে রাখতেন।
.
সন্তানের প্রতি আমাদের ভালোবাসা যদি তার আখিরাত নষ্ট করে দেয় তবে সে ভালোবাসার কোন মূল্য নেই। ছোট শিশু যেন নরম এক তাল কাদা মাটি। তাকে সঠিক আকারে গড়ে নেওয়া যত সহজ, ঠিক ততটাই কঠিন বয়ঃপ্রাপ্ত সন্তানের হৃদয়ে কোন ছাপ ফেলা। তাই দেরি না করে সন্তানের ছোট্টবেলাতেই দ্বীনের প্রতি ভালোবাসার বীজ বুনে দিন।
|| সংগ্রহঃ- নূরুন আলা নূর - পরিমার্জিত ||
No comments:
Post a Comment