হতাশা এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা।
হতাশা কী?
হতাশাকে ইংরেজিতে বলে Frustration. সহজ কথায়, খুব করে চাওয়া কোনো কিছু না পেলে মানুষের মধ্যে যে অবসাদের ভাব সৃষ্টি হয়, তাকেই হতাশা বলে।
মানুষ যা চায় সব চাওয়াই যে পূর্ণতা পাবে এমনটা ভাবা চরম বোকামী। আমাদের চাওয়া এবং পাওয়ার মধ্যে অনেক বাধা এসে থাকে। এই চাওয়া বা প্রেষণা চরিতার্থ না হলে মনের মধ্যে যে উদ্যমহীনতা দেখা দেয়; আবেগ, অনুভূতি ও কর্মস্পৃহার মধ্যে যে শৈথিল্য ভাব চলে আসে, তাকেই বলে হতাশা। মূলত, এটিই হলো হতাশার সুসংজ্ঞায়িত সংজ্ঞা।
ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে কর্মজীবন পর্যন্ত আমাদের আকাঙ্ক্ষা আর প্রাপ্তির পারদ সমান তালে উঠতে থাকলে, আমরা পুলকিত হই। আনন্দের শিহরণ বয়ে যায় শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। কিন্তু, আকাঙ্ক্ষার পারদের সাথে যদি প্রাপ্তির পারদ তাল মিলাতে না পেরে পিছিয়ে যায়, তখন আমরা ভেঙ্গে পড়ি। এখান থেকেই শুরু হয় হতাশার নবসূচনা।
হতাশার কুফল:
হতাশাগ্রস্থ একজন ব্যক্তির জীবন দূর্বিসহ হয়ে উঠে। তার মাঝে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়।
১.হতাশার ফলে মানুষ মনের মধ্যে এক বেদনাদায়ক চাপ অনুভব করে।
২.কোনো কাজে মনোযোগী হতে পারে না।
৩.কাজের উদ্যম ও স্পৃহা হারিয়ে ফেলে।
৪.সবাইকে অসহ্য লাগতে শুরু করে।
৫.সমাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
৬.একাকিত্ব অনুভব করতে থাকে।
৪.অপরাধবোধে ভুগতে থাকে।
৫.খাবারে অরুচি দেখা দেয়।
৬.ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
৭.কারো কোনো কথায় বা কাজে আনন্দ খুঁজে পায় না।
৮.স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৯.আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
পাঠক বন্ধুরা, আজ এ পর্যন্তই।
হতাশাগ্রস্থ হওয়ার কারণঃ
সাধারণত হতাশার সংজ্ঞা থেকেই হতাশাগ্রস্থ হওয়ার কারণ সম্পর্কে আমরা কিছুটা আঁচ করতে পারি। তবুও বিষয়টি ক্লিয়ার করার জন্য কিছু পয়েন্ট তুলে ধরছিঃ
১.ব্যাসিক্যালি নেতিবাচকতা হতাশাগ্রস্থ হওয়ার অন্যতম কারণ। কেউ দীর্ঘদিন ধরে নেতিবাচক অবস্থার মধ্য দিয়ে গেলে খুব সহজেই তার হতাশ হওয়ার পসিবিলিটি বেড়ে যায়।
এছাড়াও কিছু মানুষের ব্যক্তিত্বই নেতিবাচক হয়ে থাকে। এ ধরণের মানুষ হার হামেশাই হতাশাগ্রস্থদের শীর্ষ তালিকায় স্থান করে নেয়।
২.সমস্যা দেখলেই যারা ভয় পায়, সমস্যার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এর সমাধান করায় সাহস না পেয়ে সে সকল মানুষ হতাশ হয়ে পড়ে।
৩.নিঃসঙ্গতার কারণেও অনেকে হতাশায় ভোগে।
৪.ইন্ট্রোভার্ট টাইপের মানুষেরাও হতাশায় ভোগে। এরা খুব চাপা স্বভাবের হয়ে থাকে। ফলে নিজের দুঃখ-কষ্ট, ভালোলাগা-খারাপলাগা কারো সাথে সহজেই শেয়ার করতে পারে না। নিজের সাথে যুদ্ধ করতে করতে একসময় এই মানুষগুলো হতাশ হয়ে যায়। আত্ম হননের মতো জঘন্য চিন্তাও এদের মাঝে প্রবলভাবে জেঁকে বসে।
৫.বেকারত্বের কারণে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়ে।
৬.অর্থনৈতিক মন্দাও মানুষের হতাশাগ্রস্থের কারণ।
৭.সম্পর্কের টানাপোড়নে বা প্রিয়জনের সাথে সর্বদাই কলহ লেগে থাকলেও হতাশা কাজ করে।
৮.কোনো কাজে পারিবারিক সাপোর্ট না পেলে, পরিবারের সদস্যদের অবহেলা ও তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় না থাকলে মানুষ খুব সহজে হতাশ হয়ে পড়ে।
৯.দীর্ঘদিন অসুস্থতার দরুণও হতাশা পেয়ে বসে।
১০.লেখাপড়া বা কর্মক্ষেত্রে অকার্যকারিতা মানুষকে হতাশ করে।
১১.এক্সপেক্টেশন অনুযায়ী কিছু না পেলে মানুষ হতাশার ঘোর অমানিশায় ডুবে যায়।
এছাড়াও আরও অগণিত কারণ রয়েছে হতাশাগ্রস্থ হওয়ার।
হতাশা দূর করার কিছু কার্যকরী উপায়ঃ
১. আল্লাহর রহমতের ব্যাপকতায় বিশ্বাস।
এ প্রসঙ্গে কুরআনের একটি আয়াত খুবই ফলপ্রসূ। আপনাকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ্ বলেছেন,
"তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে হতাশ হয়ো না। আল্লাহর রহমত থেকেতো কাফেররাই হতাশ হয়ে থাকে।" [১২:৮৭]
২.তাকদীরে বিশ্বাস হতাশা দূরীভূত করে থাকে। তাকদীরে বিশ্বাসের অর্থ হলো, আল্লাহ্ তা'য়ালা ভূত ভবিষ্যৎ এর সব বিষয় নির্ধারণ করে রেখেছেন। আর যা কিছু হয় সব মানুষের কল্যাণের জন্যই হয়ে থাকে। এটি যে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে নিবে, সে আর হতাশ হবে না।
৩.নেতিবাচক চিন্তা, কথা ও কাজ পরিহার করতে হবে। নেতিবাচক সব কিছুকে ইতিবাচকে কনভার্ট করুন।
৪.মানুষের প্রতি নূন্যতম এক্সপেক্টেশনও রাখা যাবে না। যার এক্সপেক্টেশন যত কম হবে, সে মানসিকভাবে ততই ভাল থাকবে।
৫.মন, মস্তিষ্ক আল্লাহর কাছে সঁপে দিতে হবে। আপনার মন এবং মস্তিষ্ক কাউকে নিয়ন্ত্রণ করতে দিবেন না। তাহলে অন্য কারো কথায় বা আচরণে আপনার হতাশাগ্রস্হ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
৬.নিজের কমিউনিকেশন স্কিল বাড়াতে হবে। নিজেকে এক ঘরের কোণে বন্দী না রেখে মানুষের সাথে মিশতে শুরু করুন। হতাশা ভাব আস্তে আস্তে কেটে যাবে।
৭.সর্বদা আল্লাহর উপর ভরশা রাখুন। আপনাকে সবচেয়ে ভালবাসেন যিনি, দিন শেষে সব কথা তাঁরই সাথে শেয়ার করুন। আমি বলছি বিশ্বাস করুন, আপনি ঠকবেন না। অনাবিল শান্তি বিরাজ করবে আপনার মনে।
তো আর দেরী কেন পাঠক বন্ধু? নিজেকে হতাশাগ্রস্থ মনে হলে একটিবার উপরের পদ্ধতি এপ্লাই করেই দেখুন না! ইন শা আল্লাহ্, নিজের পরিবর্তন লক্ষ করবেন। আপনার জন্য শুভ কামনা।
Writer: Mahazabin Sharmin Priya
No comments:
Post a Comment