স্ত্রী হিসেবে নারীর প্রাপ্য ও অধিকার
মুফতি মাহমুদ হাসান
ইসলাম সব মানুষকে নিজ নিজ কর্তব্য আদায়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। এ উপলব্ধি অন্তরে জাগ্রত করার নির্দেশ দেয় যে আমার কারণে যেন কেউ কষ্ট না পায়, আমাকে কেউ কষ্ট দিলে আমি ক্ষমা করে দেব। তাইতো অন্যের ওপর নিজ অধিকার কামনার প্রতি ইসলাম তেমন জোর দেয়নি। এর বিপরীতে বর্তমান পৃথিবীটা হচ্ছে অধিকার আদায়ের যুগ। সবাই নিজ নিজ অধিকার আদায়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। অন্যের কাছ থেকে অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে চলছে দুর্বার আন্দোলন, মিছিল-মিটিং ও হরতাল-অবরোধ। তবে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সবাই কতটুকু মনোযোগী? শ্রমিক মালিক থেকে নিজ অধিকার আদায়ে ব্যস্ত, আবার মালিকপক্ষ চাচ্ছে তাদের পূর্ণ অধিকার। পুরুষ নিজ অধিকার আদায় করে নিতে বদ্ধপরিকর, নারী দাবি করছে আমার অধিকার দাও। কিন্তু কোনো আল্লাহর বান্দা এ চিন্তা করার সুযোগ পাচ্ছে না যে আমার ওপর যে দায়িত্বগুলো ছিল, সেগুলো আমি যথাযথ পালন করছি তো, না তাতে কোনো অবহেলা হচ্ছে?
মহান আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসুল (সা.) শিক্ষা দিয়েছেন যে সবাই নিজ নিজ দায়িত্বে সক্রিয় হলে তখন কারো অধিকার ভূলুণ্ঠিত হবে না, সবাই নিজ নিজ অধিকার সুরক্ষিত পাবে। মালিক যখন তার দায়িত্ব পালনে সচেতন হবে, তখন শ্রমিকের অধিকারও যথাযথ আদায় হবে। স্বামী কর্তব্যপরায়ণ হলে আর স্ত্রীর অধিকার বাধাগ্রস্ত হয় না; স্ত্রী নিজ দায়িত্বে যত্নবান হলে স্বামীর অধিকার ক্ষুণ্ন হবে না। সবাই নিজ নিজ অবস্থানে অধিকার বুঝে পাবে। অধিকার আদায়ে সংগ্রামের প্রয়োজন হবে না।
ইসলামে যেভাবে নারীর অধিকার সংরক্ষিত হয়েছে, ঠিক তেমনি স্থান পেয়েছে স্বামীর অধিকারও। তাই যেভাবে কোরআন-হাদিসে স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য ও অধিকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে, ঠিক তেমনি আলোকপাত হয়েছে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য ও অধিকার প্রসঙ্গেও। উপরোক্ত দৃষ্টিভঙ্গিই দাম্পত্য জীবনের প্রাণশক্তি। তাই স্বামী-স্ত্রীর প্রত্যেককে মাত্রাজ্ঞানের পরিচয় দিতে হবে। বুঝতে হবে অধিকারের পরিমাণ এবং দাম্পত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রে করতে হবে সেই বোধের চর্চা।
স্ত্রীর মর্যাদা
মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো। আর যদি তাকে তোমার অপছন্দও হয়, তবু তুমি যা অপছন্দ করছ আল্লাহ তাতে সীমাহীন কল্যাণ দিয়ে দেবেন।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুমিন পুরুষ মুমিন মহিলার ওপর রুষ্ট হবে না, কেননা যদি তার কোনো কাজ খারাপ মনে হয়, তাহলে তার এমন গুণও থাকবে, যার ওপর সে সন্তুষ্ট হতে পারবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৪৬৯) অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নারীদের প্রতি ভালো আচরণের উপদেশ দাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫১৮৪)
অন্য হাদিসে রয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক ভালো মানুষ তারাই, যারা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১১৬২)
ইসলামী শরিয়তে স্বামীর ওপর স্ত্রীর জন্য যে অধিকার সাব্যস্ত করেছে, তার সার কথা হলো : ১. পূর্ণ মোহরানা আদায় করে দেওয়া, ২. প্রয়োজনমাফিক অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের ভালো ব্যবস্থা করা; ৩. স্ত্রীর সঙ্গে সদাচরণ করা; ৪. মাঝেমধ্যে মাহরাম আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া, ৫. প্রয়োজনমাফিক দ্বিন শেখানোর ব্যবস্থা করা; ৬. ইসলামী শরিয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখা, ৭. প্রয়োজনমতো সহবাস ও জৈবিক চাহিদা পূরণ করা ইত্যাদি। (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯; আল-কাবায়ের, জাহাবি, পৃষ্ঠা ১৭৫)
পূর্ণ মোহরানা আদায় করে দেওয়া
বিবাহের পর কোনো ওজর ছাড়া মোহরানা আদায়ে কালবিলম্ব করা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। বর্তমানে আমাদের সমাজে অনেকেই মনে করে, মহর শুধু কাগজে লেখার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ, তা বাস্তবে আদায় করতে হয় না, শুধু বিবাহ ভেঙে গেলে তা পুরুষপক্ষ থেকে মহিলাপক্ষকে চাপ প্রয়োগ করে আদায় করে নিতে হয়—এ ধারণা ও কর্মপন্থা সম্পূর্ণ ভুল। বরং মোহরানা আদায়ের নিয়তবিহীন শুধু কাগজে লেখার জন্য মোহরানা নির্ধারণ করা মারাত্মক অন্যায়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা নারীদের সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মহর দিয়ে দাও।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৪)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে পুরুষ কোনো নারীকে বিয়ের সময় মোহরানা নির্ধারণ করে, তবে আল্লাহ তাআলা তার অন্তরের খবর জানেন যে তার তা আদায় করার নিয়ত নেই। ফলে সে আল্লাহর হকের মধ্যে ওই নারীকে ধোঁকা দিল এবং তার লজ্জাস্থানকে অন্যায়ভাবে ভোগ করল। এমন ব্যক্তি কেয়ামতের দিবসে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে ব্যভিচারী হিসেবে।’
(মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৮৯৩২)
স্ত্রীর ভরণ-পোষণের অধিকার
ইসলামী শরিয়ত মতে, বিবাহের পর থেকেই স্বামীর ওপর স্ত্রীর জন্য যেসব অধিকার সাব্যস্ত হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো স্ত্রীর ব্যয়ভার গ্রহণ করা। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সন্তানের পিতার ওপর সন্তানের মায়ের জন্য অন্ন-বস্ত্রের উত্তম পন্থায় ব্যবস্থা করা একান্ত দায়িত্ব।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৩৩)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা স্ত্রীদের জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী নিজেদের ঘরে বাসস্থানের ব্যবস্থা করো।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৬)
হাদিস শরিফে স্ত্রীদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) পুরুষদের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তুমি যখন খাবে, তাকেও খাওয়াবে এবং তুমি যখন পরবে, তাকেও পরাবে। চেহারায় কখনো প্রহার করবে না, অসদাচরণ করবে না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৪২, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৮৫০১)
ভরণ-পোষণের পরিমাণ : ভরণ-পোষণের ব্যাপারে শরিয়ত নিরেট পরিমাপ নির্ধারিত করে দেয়নি। বরং ইসলামী শরিয়তের ভাষায় স্ত্রীকে প্রয়োজন পরিমাণ ভরণ-পোষণ দেওয়া স্বামীর কর্তব্য। এর পরিমাণটি পরিবেশ-পরিস্থিতি, অবস্থা ও স্বামীর সামর্থ্যনির্ভর। (আল মুহিতুল বুরহানি : ৩/৫২৯-৫৩০, ফাতহুল কাদির : ৩/১৯৪)
মহানবী (সা.) বিদায় হজের ভাষণে দীর্ঘ বয়ানের একপর্যায়ে বলেছিলেন, ‘অতএব, তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করো, কেননা তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানত ও প্রতিশ্রুতির সঙ্গে গ্রহণ করেছ এবং তোমরা আল্লাহর হুকুমেই তাদের লজ্জাস্থানকে হালাল হিসেবে পেয়েছ...।’
(সহিহ মুসলিম : হাদিস ১২১৮)
স্ত্রীর মন প্রফুল্ল রাখার চেষ্টা করা
বৈধতার সীমারেখায় স্ত্রীকে যথাসম্ভব আনন্দে ও প্রফুল্ল রাখা হলো স্বামীর প্রতি শরিয়তের নির্দেশ। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কর্মপদ্ধতি দ্বারাও তা প্রমাণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মুসলমানের জন্য সব খেল-তামাশা নিষিদ্ধ, তবে তার ধনুক থেকে তীর চালনা, ঘোড়া চালনা, স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের রসিকতা, কেননা এগুলো ন্যায়সংগত।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৬৩৭)
আয়েশা (রা.) সূত্রে এক সফরে (একটি জনমানবহীন নির্জন উপত্যকায়) নবী (সা.)-এর সঙ্গে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করে তাঁর আগে চলে গেলাম। পরবর্তী সময় আমি স্বাস্থ্যবান হয়ে যাওয়ার পর তাঁর সঙ্গে আবারও দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম, এবার তিনি আমাকে পেছনে ফেলে দিয়ে বিজয়ী হলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এ বিজয় সেই বিজয়ের বদলা। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫৭৮)
আয়েশা (রা.) বলেন, একদা মসজিদের কাছে হাবশি ছেলেরা যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে খেলা করছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে ছিলেন, আর আমি হাবশিদের খেলা দেখছিলাম। যতক্ষণ না আমার খেলা দেখার শখ পূর্ণ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ততক্ষণ কষ্ট করে আমার জন্য পূর্ণ সময় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তোমরা ভেবে দেখো! একজন অল্পবয়সী খেলাপাগল মেয়ে কতক্ষণে তার শখ পূরণ হবে? (বুখারি, হাদিস : ৫২৩৬)
স্বামী প্রয়োজনীয় খরচ না দিলে করণীয়
স্বামী যদি বিহিত কারণ ছাড়া স্ত্রী-সন্তানের তথা সাংসারিক জরুরি খরচ না করে, তাহলে স্ত্রী স্বামীর অনুমতি ছাড়াও স্বামীর সম্পদ থেকে প্রয়োজনমতো অপচয় না করে খরচ করতে পারবে। হাদিস শরিফে এসেছে, সাহাবিয়া হিনদ বিনতে উতবা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! (আমার স্বামী) আবু সুফিয়ান সংসারের খরচে সংকীর্ণতাকারী, সে আমার ও আমার সন্তানের প্রয়োজন পরিমাণ খরচ দেয় না, তাহলে আমি কি তার অগোচরে তার থেকে কিছু নিতে পারি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হ্যাঁ, তুমি তোমার ও তোমার সন্তানের প্রয়োজন পরিমাণ তার অগোচরে তার থেকে নিতে পারবে। (বুখারি : হাদিস : ৫২৬৪, বাদায়েউস সানায়ে : ২/২৭)
তবে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মালিকানা ভিন্ন হওয়ায় অনুমতি ব্যতীত একে অপরের সম্পদ ব্যয় করা অবৈধ। স্বামী যদি নিয়মমাফিক ভরণ-পোষণ ও স্বাভাবিক হাতখরচের জরুরত পূরণ করে থাকে, তাহলে তার কাছ থেকে তার অগোচরে টাকা-পয়সা নিয়ে নেওয়া এবং তাকে না জানিয়ে বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা বৈধ হবে না।
(আল বাহরুর রায়েক : ৪/১৭৭)
স্ত্রীর বাসস্থান
কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা স্ত্রীদের জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী নিজেদের ঘরে বাসস্থানের ব্যবস্থা করো।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৬)
স্ত্রী যদি উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে হয়, তাহলে সে যদি স্বামীর যৌথ পরিবার থেকে ভিন্ন ঘরের দাবি করে, তাহলে স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে ভিন্ন ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। স্বামীর মা-বাবার সঙ্গে যৌথভাবে থাকতে স্ত্রী বাধ্য নয়। আর মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হলে তাকে স্বামীর পরিবারের সঙ্গে একঘরে রাখা গেলেও তার পৃথক কক্ষ, টয়লেট, গোসলখানা, রান্নাঘরসহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিস ভিন্ন করারও দাবি করতে পারবে। এ ক্ষেত্রেও স্বামীর পরিবারের সঙ্গে যৌথভাবে থাকতে স্ত্রীকে বাধ্য করা যাবে না। আর নিম্নবিত্ত পরিবারের হলে টয়লেট, গোসলখানা রান্নাঘর ইত্যাদি ভিন্ন দিতে বাধ্য না হলেও তার জন্য একটি পৃথক কক্ষের ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে, যার হস্তক্ষেপ স্ত্রী ছাড়া অন্য কেউ করতে পারবে না। ওই কক্ষে স্বামীর মা-বাবা, ভাই-বোন বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে পারবে না। স্ত্রীর এ রকম কক্ষ দাবি করার অধিকার আছে। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/২৩, রদ্দুল মুহতার : ৩/৬০১)
নিয়মিত হাতখরচ দেওয়া
এখানে আরেকটি কথাও স্মর্তব্য যে ভরণ-পোষণের অর্থ শুধু এটিই নয় যে শুধু তাকে তিনবেলা খানা আর কাপড়-চোপড় ও থাকার ঘর দিলাম। বরং তাকে মাঝেমধ্যে প্রয়োজন পরিমাণে সামান্য হাতখরচও দেওয়া জরুরি। কেননা অনেক সময় দেখা যায়, এমন কিছু প্রয়োজন যা কারো কাছে চাইতে ইতস্তত বোধ হয়, তখন হাতখরচের টাকা দিয়ে পূরণ করতে পারবে। তাই স্বামীর এ ব্যাপারেও সচেতন হওয়া উচিত। তবে খরচের ক্ষেত্রে অপচয় থেকে বেঁচে থাকা সবার জন্য জরুরি। (বীবী কে হুকুক পৃ: ৪৯-৫০)
সদাচরণ করা
মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো। আর যদি তাকে তোমার অপছন্দও হয়, তবু তুমি যা অপছন্দ করছ, আল্লাহ তাতে সীমাহীন কল্যাণ দিয়ে দেবেন।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুমিন পুরুষ মুমিন নারীর ওপর রুষ্ট হবে না, কেননা যদি তার কোনো কাজ খারাপ মনে হয়, তাহলে তার এমন গুণও থাকবে, যার ওপর সে সন্তুষ্ট হতে পারবে।’ (সহিহ মুসলিম হাদিস : ১৪৬৯) অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নারীদের প্রতি ভালো আচরণের উপদেশ দাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫১৮৪)
অন্য হাদিসে রয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক ভালো মানুষ তারাই, যারা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১১৬২)
শরিয়তে নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত রাখা
রাসুলুল্লাহ (সা.) স্ত্রীদের সঙ্গে অত্যন্ত নম্র ও ভদ্র ব্যবহার করতেন, তবে তাদের থেকে কোনো অন্যায় কথা বা কাজ প্রকাশ পেলে সঙ্গে সঙ্গে তা শুধরে দিতেন, এ ক্ষেত্রে কখনো শিথিলতা করতেন না এবং স্ত্রীদের ভালোবাসা তাঁর এ কাজে বাধা হতো না; বরং ভালোবাসার সঙ্গে সংশোধন করতেন।
হাদিস শরিফে এসেছে, ‘স্মরণ রেখো, তোমরা সবাই দায়িত্বপ্রাপ্ত, তোমরা সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে, রাষ্ট্রপ্রধান তাঁর প্রজাদের হকের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবেন, পুরুষ তার পরিবার-পরিজনের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৮৯৩)
প্রয়োজনমাফিক শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা করা
স্ত্রীর দ্বিন-দুনিয়ার প্রয়োজনমাফিক শিক্ষা-দীক্ষার ব্যবস্থা করাও স্বামীর ওপর স্ত্রীর অধিকার। এ ক্ষেত্রে কোরআনে নির্দেশ হলো, ‘তোমরা তোমাদের নিজেকে ও পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৬)
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তোমরা পরিবার-পরিজনকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও দীক্ষা দাও। (তাফসিরে তাবারি : ২৩/৪৯১)
নেক আমলের প্রতি উৎসাহ দেওয়া
হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে নিজে রাত্রি জাগরণ করে ইবাদত করতেন এবং স্বীয় পরিবারকেও জাগিয়ে দিতেন। (বুখারি, হাদিস : ২০২৪)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘ওই পুরুষকে আল্লাহ তাআলা রহম করুন, যে রাতে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে এবং তার স্ত্রীকেও উঠিয়ে নামাজ পড়ায়, যদি সে উঠতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন তার চোখে কোমলতার সঙ্গে পানি ছিটিয়ে দেয়। ওই নারীকে আল্লাহ তাআলা রহম করুন, যে রাতে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে এবং তার স্বামীকেও উঠিয়ে নামাজ পড়ায়, যদি সে উঠতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন তার চোখে কোমলতার সঙ্গে পানি ছিটিয়ে দেয়।’
(আবু দাউদ, হাদিস : ১৩০৮)
শুধু আইনের বাঁধনে জীবন চলে না
তবে শেষ কথা হলো, ইসলামে নৈতিকতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম তার অনুসারীদের আইনের ঊর্ধ্বে উঠে নৈতিকতার ওপর চলতেই উদ্বুদ্ধ করে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক শুধু আইনের সম্পর্ক নয়; বরং তাদের সম্পর্ক হৃদয় ও আত্মার সম্পর্ক। শুধু আইনের বিশুদ্ধ উত্তাপের ওপর নির্ভর করে টিকে থাকতে পারে না কোনো সুস্থ সমাজ। কল্যাণ তখনই আসবে, স্বামী-স্ত্রী উভয়েই যখন আইনের গণ্ডি পেরিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবিদের সুন্নতের ওপর চলতে সচেষ্ট হবে।
► শারীরিক সুসম্পর্ক বজায় রাখা
► সাধ্যমতো সময় দেওয়া
No comments:
Post a Comment