Wednesday, May 5, 2021

বিয়ের চাঁদ 05

 

গল্পঃ-->বিয়ের চাঁদ
লেখাঃ-->তোফায়েল আহমদ
পর্বঃ-->০৫
- বিয়াই সাহেব! কেমন আছেন?
- আলহামদুলিল্লাহ । এতো সকালে ফোন! কি উদ্দ্যেশ্যে?
- ইয়ে মানে বউমার তো পরিক্ষা শেষ । এখন বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা যায় না?
- অবশ্যই । শুভ কাজে দেরি করতে নেই । তার আগে সুমাইয়ার অনুমতি লাগবে । আমি ওকে বিয়ের জন্য প্রস্তুত হতে বলছি ।
- আচ্ছা ঠিক আছে ।
সুমাইয়া বিছানায় শুয়ে শুয়ে আব্দুল্লার কথা চিন্তা করতেছে । আর ভাবতেছে ' সে একবারো ফোন দিয়ে কথা বললো না । ব্যাপারটা কি! ' ভাবনার সমাপ্তি না হতেই আম্মু চলে এলো ।
- মা সুমাইয়া, তোর তো পরিক্ষা শেষ । তুই না বর পক্ষকে কথা দিয়েছিলি পরিক্ষা শেষ হলে বিয়ে করবি?
- হ্যাঁ, তা তো বলেছি ।
- এখন তোর আব্বু চাচ্ছে আগামী সপ্তাহে তোর বিয়ে দিতে । তুই বিয়ের জন্য রাজি?
আম্মুর কথা শুনে সুমাইয়া হ্যাঁ না কিছুই বলছে না। চুপচাপ বসে আছে । আম্মুর বুঝতে বাকি রইলো না যে চুপ থাকা সম্মতির লক্ষণ । তার মানে সে বিয়ের জন্য রাজি ।
বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হলো । আগামী শনিবার তাদের বিয়ে । অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে কাঙ্খিত বিয়ের লগ্ন বয়ে এলো । আজ তাদের বিয়ে ।
বিয়ের আগে সাধারণত বর কনের গায়ে হলুদ পড়ানো হয় । সেই সুবাধে আব্দুল্লার খালারা তার গায়ে হলুদের জন্য মেঝেতে বসালো ।
- কি করতেছেন খালা?
- বোকা ছেলে, গায়ে হলুদে কি করতে হয় জানিস না বোধহয়?
তার মানে আব্দুল্লার বুঝতে বাকি রইলো না যে এখন তার গায়ে হলুদ পড়িয়ে দেয়া হবে । তাৎক্ষণিক সে উঠে দাঁড়ালো ।
- কি রে উঠলি ক্যান? বস.....
- না, গায়ে হলুদ দেয়া কোন রীতিতে আছে?
- এটা আদিকাল থেকে বাংলার সাংস্কৃতিতে লেগে আছে । বিয়ের পিরিতে বসতে হলে গায়ে হলুদ লাগাতে হবে । পাগলামি না করে বসে পড়।
- খালা, জানি না এটা কোন রীতিতে আছে তবে ইসলামে এটা জায়েজ না । এই যে এখন আমার গায়ে হলুদ লাগানো হবে । আমার গায়ে হলুদ লাগানোর জন্য কত আত্মীয় স্বজন আসবে । দুর্সম্পকীয় বোন আসবে । চাচীরা আসবে । তারা হলুদ হাতে নিয়ে আমার গায়ে লাগিয়ে দিবে । এটা কি ঠিক?
এই যে ধরুন, আপনার মেয়ে মানে আফরোজা । যদিও সে আমার খালাতো বোন তারপরেও তাকে দেখা কিন্তু আমার জন্য হারাম । সুতরাং গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে সেও কিন্তু আমার গায়েতে হলুদ পড়াবে । এতে পর্দার বিধান লঙ্ঘন হবে না?
বিশ্বাস করেন খালা মনি, যবে থেকে শুনেছি চাচীদের দেখাও হারাম তবে থেকে আমি চাচীদের সামনে না যাওয়ার চেষ্টা করি । ঈমাম সাহেব আলোচনায় বলেছিলেন, চাচা মারা গেলে চাচীকে বিয়ে করা জায়েজ । তাই চাচীদের সামনেও পর্দা করা ফরজ । এখন যদি আমার গায়ে হলুদের আয়োজন করেন তাহলে তারাও এসে আমার গাঁ স্পর্ষ করে হলুদ লাগিয়ে দিবে । সুতরাং আমি পারবো না গায়ে হলুদ পালন করতে ।
- তুই তো দেখছি বড়ই মোল্লার বেটা হয়ে গেছিস!
আচ্ছা থাক তাহলে গায়ে হলুদের দরকার নেই ।
তুই গোসল করে পাঞ্জাবী পড়ে রেডি হয়ে নে ।
আব্দুল্লাহ রেডি । গায়ে একটা পাঞ্জাবী, মাথায় পাগরী । বেশ দারুণ লাগছে । তারা ঠিক বিকেলেই রওয়ানা হবে ।
ওদিকে সুমাইয়াদের বাড়িতে চলছে বিয়ের আয়োজন । গ্রামবাসীদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা । সুমাইয়ার বাবা একটা গরু জবাই করে আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত করে খাওয়াচ্ছে । বিয়ের বাড়িতে সাধারণত যারাই দাওয়াত খেতে আসে তারাই কিন্তু গিফট বক্স সাথে করে নিয়ে আসে । সবাই দামী দামী গিফট বক্স নিয়ে এসে সুমাইয়ার কাছে দিয়ে যাচ্ছে । অনেক অনেক উপহার পেয়েছে সে । তার একটা গরীব মামা ছিলো । এতোই গরীব যে নুন আনতে পানতা ফুরায় অবস্থা । সুমাইয়ার প্রিয় একজন মামা । বিয়ে বাড়িতে সবাইকে দেখা যাচ্ছে কিন্তু তার মামার কোনো খোঁজ খবর মিলছে না । সুমাইয়া তড়িৎ গতিতে মামাকে ফোন করলো ।
- কি ব্যাপার মামা! এখনো আসছো না যে! তোমার আদরের ভাগনীর বিয়েতে আসবে না নাকি?
- মা রে, এক জায়গায় জরুরী প্রয়োজনে যেতে হবে । আজ না গেলে হয় না? দরকার পড়লে বিয়ের পর প্রতিদিনই যাবো ।
- না তোমাকে আজকেই আসতে হবে । কোনো কথা চলবে না । মামীকে নিয়ে চলদি চলে আসো।
মামা বিয়ে বাড়িতে না আসার কারণ হলো -
সবাই কোনো না কোনো দামী গিফট উপহার দিচ্ছে । কিন্তু তার পক্ষে দামী গিফট তো দূরের কথা সামান্য একটা গিফট কেনায় মুশকিল হয়ে দাড়িয়েছে । খালি হাতে বিয়ের বাড়িতে যাওয়া শোভা পায় না । তার উপর আবার নিজের ভাগনীর বিয়ে । কিছু না নিয়ে গেলে তো প্রেষ্টিজ শেষ । এসব চিন্তা ভাবনা করেই মামা সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিয়ে বাড়িতে যাবে না । কিন্তু ভাগনীর ফোন পাওয়ার পর তাকে যেতেই হবে । কিন্তু বিয়ে বাড়িতে কি নিয়ে যাবে?
মামা বড় একটা কার্টুন আনলো । কার্টুনের ভিতরে কিছুই নেই । মামা একটা চিঠি লিখে ভিতরে রেখে দিয়ে কার্টুনটাকে গিফট পেপার দিয়ে মোড়ালো । কার্টুনটা হাতে নিয়ে রওয়ানা হলো বিয়ে বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে । মামার হাতের গিফট বক্সটা সুমাইয়াকে দিলো ।
- ওয়াও! মামা এত্তো বড় উপহার! কি আছে এর ভিতরে?
- আমার একমাত্র ভাগনী, দামী গিফট ছাড়া আর কি হতে পারে! পরে খুলে দেখিস । (অথচ বক্সের ভিতরে কোনো গিফট নেই শুধুমাত্র একটা চিঠি। কিন্তু কি লেখা আছে ঐ চিঠির ভিতরে? )
ঠিক বিকেলে আব্দুল্লারা রওয়ানা হলো । মাইক্রবাসের ভিতরে আনন্দ ফূর্তির এক পর্যায়ে ডিজে গান বাজাতে শুরু করলো । গান দেয়া মাত্রই আব্দুল্লাহ কানে হাত দিয়ে চেপে ধরলো ।
- উফ্! গানটা বন্ধ কর। অসহ্য লাগতেছে ।
কিন্তু কে বা কার কথা শুনে । বিয়ের আনন্দে গান থাকবে না তা হয় নাকি!
গান যখন বন্ধ করলো না তখন আব্দুল্লাহ রাগের ভঙ্গিতে বললো -
- গান বন্ধ করবে নাকি আমি গাড়ি থেকে নেমে যাবো?
যাক, আব্দুল্লার রাগের ভঙ্গি কাজে লাগলো । গান অফ । ভাই ব্রাদাররা আব্দুল্লাহকে বললো -
- তোর সমস্যা কি রে! গান বাজালে প্রোবলেম কোথায়? বিয়ের বাড়ির মজাই তো হলো গান বাজনা করা । এভাবে যদি গান বাজাতে নিষেধ করিস তাহলে আমরা কেউ তোর বিয়েতে যাচ্ছি না । তুই একাই যা ।
- আরে রাগ করতেছিস ক্যান? আমার কথা তো একবার শোন ।
গান বাজনা করা কি জানিস? শতভাগ হারাম । আল্লাহর রাসূস সা‌. যখনো কোনো বাদ্য যন্ত্রের আওয়াজ শুনতো তখনেই তিনি কানে হাত দিয়ে চেপে ধরতো । এটা স্পষ্ট গর্হিত কাজ । সুতরাং কোনো মুসলমানের জন্য গান বাজনা করা বৈধ হবে না ।
তোরা বিয়ে বাড়ির আনন্দে গান বাজাচ্ছিস তাই না? আরে ভাই দুনিয়াটা আনন্দের জায়গা নয় । দুনিয়াটা আমল করার জায়গা । এখানে নেক আমল করবি আর জান্নাতে বসে আনন্দ করবি । তখন না হয় আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করবি যে,
" আল্লাহ, দুনিয়াতে তো আরাম আয়েশ সবকিছুই ভুলে আপনার ইবাদাত করছি । গান বাজনা করি নি । কিন্তু এখন একটু গান বাজনা করার সুযোগ দাও । দেখতে চাই গান বাজনায় ফায়দাটা কি "
মানুষ দুনিয়ার বেড়া জালে বন্ধি । যার ফলে জান্নাতের নাজ-নেয়ামতকে অনুভব করতে পারে না । যদি অনুভব করতো তাহলে জান্নাত পাওয়ার জন্য দুনিয়ায় নেক কাজে পাল্লা দিতো।
আব্দুল্লার নসিহা মূলক কথাবার্তা শুনে সবাই কিছুটা বুঝতে পেলো । গান বাজনা টোটালি অফ করলো । ঘড়ির কাটা দেখতে দেখতেই তারা সুমাইয়াদের বাড়িতে পৌছে গেলো । গাড়ি থেকে নেমেই আব্দুল্লাহ অবাক পানে বাড়ির চারদিক তাকিয়ে রইলো । বিয়ের বাড়ি বলে কোনো চিহ্নই নেই । নেই রং-বেরঙ্গের লাইটিং শো । কেবল মাত্র খাওয়া দাওয়ার জন্য ডেকরেটরের চেয়ার টেবিল ছাড়া । কনে পক্ষের লোকজন এসে আব্দুল্লাহদের ভিতরে নিয়ে গেলো ।
কনে সুমাইয়াকে দেখে আব্দুল্লাহ পুরাই অবাক । যেখানে তার বধু হয়ে সাজগোজ করার কথা সেখানে সে বোরকা, হিজাব, নেকাব পড়ে বিয়ের আসরে বসে আছে । কি এক আশ্চার্য ব্যাপার তাই না? শুধুই কি তাই, সে হাতে পায়ে মোজাও পড়ে আছে । অর্থ্যাৎ তার চেহারার কোনো অংশ দেখার মতো কৌশল নেই ।
সুমাইয়ার এই ধার্মিকতা দেখে আব্দুল্লাহ মুখরিত। কিন্তু যারা আব্দুল্লাহর সাথে এসেছে তারা কনেকে দেখার জন্য মুখের উপর থেকে নেকাবটা সড়াতে বলছে । সুমাইয়া মোটেও সড়াবে না ।
ঈমাম সাহেব আর কাজি চলে এলো । বিয়ের দেন মোহর যা ধার্য্য ছিলো আব্দুল্লা তা নগদে পরিশোধ করলো । আর দেন মোহর পরিশোধ করা একান্ত জরুরী । শরীয়তে যেটাকে তাগিদ করে বলা হয়েছে দিতেই হবে ।
মেয়ের বাবা আব্দুল্লাহকে খুশি মনে একটা মোটর সাইকেল দিতে চেয়েছিলো । কিন্তু আব্দুল্লাহ তা নিতে রাজী হয় নি । কারণ এটা নেয়া যৌতুকের শামিল । যা শরীয়ত, সমাজ কোনোটিই সমর্থন করে না । সুতরাং সে শশুরের দেয়া মোটর বাইক নিতে রাজি নয় ।
যাক, বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ হলো । এখন থেকে সুমাইয়া আর আব্দুল্লাহ স্বামী স্ত্রী । নতুন বধুকে ঘরে তুলতে উদ্বাহু । রাতেই সুমাইয়াকে দেখার জন্য আব্দুল্লার রুমে ভিড় জমলো । ভাই ব্রাদার, চাচা, মামা, সবাই আসলো । কিন্তু আব্দুল্লার তাদের উপেক্ষা করে ঘরের ভিতর থেকে লক করে বসে রইলো । সবাই ডাকাডাকি করতেছে কিন্তু ঘরের ভিতর থেকে আব্দুল্লার কোনো রেসপন্স নেই । সাড়া শব্দ না পেয়ে সবাই যার যার ঘরে চলে গেলো । ক্ষাণিক পর বাসর রাতের লগ্ন শুরু হবে ।
.
‌.
.
চলবে........ .....................

No comments:

Post a Comment