Wednesday, May 5, 2021

স্ত্রীকে যৌন উত্তেজনার সাথে স্পর্শ বা আলিঙ্গন করার সময় যদি লজ্জা স্থান থেকে পানি জাতীয় পদার্থ বের হয় তাহলে কি নামাজ-রোজা হবে?

 May be an image of text that says 'স্ত্রীকে যৌন উত্তেজনার সাথে স্পর্শ বা আলিঙ্গন করার সময় যদি লজ্জা স্থান থেকে পানি জাতীয় পদার্থ বের হয় তাহলে কি মাজ-রোজা হবে? আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল'

 প্রশ্ন: স্ত্রীকে যৌন উত্তেজনার সাথে স্পর্শ বা আলিঙ্গন করার সময় যদি লজ্জা স্থান থেকে পানি জাতীয় পদার্থ বের হয় তাহলে কি নামাজ-রোজা হবে?

উত্তর:
স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে যৌন উত্তেজনার সাথে স্পর্শ বা আলিঙ্গন করার সময় যদি লজ্জা স্থান থেকে মনি/বীর্য (যৌন উত্তেজনা বশত: সুখানুভূতি সহকারে সবেগে স্খলিত ধাতু) নির্গত হয় তাহলে গোসল ফরজ হবে।
আর গোসল ফরজ হলে গোসল করা ছাড়া সালাত পড়া বৈধ নয়। পড়লেও কবুল হবে না।
রোজা অবস্থায় এমন হলে (বীর্যপাত হলে) রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে আল্লাহর নিকট তওবা করত: পরবর্তীতে উক্ত রোজাটি কাজা করাই যথেষ্ট।
কিন্তু যৌন চিন্তা বা যৌন উত্তেজনা বশত: মযি/কামরস (হালকা আঠালো ও পিচ্ছিল পানি জাতীয় ধাতু) নির্গত হলে তাতে গোসল ফরজ হবে না এবং এতে রোজাও ভঙ্গ হবে না। তবে ওজু অবস্থায় নির্গত হলে ওজু ভঙ্গ হয়ে যাবে।
এটি নাপাক। সুতরাং ওযুর পূর্বে লজ্জা স্থান ধৌত করা আবশ্যক। আর কাপড়ে লাগলে এক অঞ্জলী পানি নিয়ে কাপড়ের যেখানে তা লেগেছে তার উপর ছিটিয়ে দিলেই পবিত্র হয়ে যাবে। অর্থাৎ মযি নাপক হলেও হালকা নাপাক। কাপড়ে লাগলে তা ধৌত করা আবশ্যক নয় বরং উক্ত স্থানে এক অঞ্জলী পানির ছিটা দিলে তা পবিত্র হয়ে যাবে-যেভাবে দুগ্ধপৌষ্য ছেলে সন্তানের পেশাব কাপড়ে লাগলে তার উপর এক অঞ্জলী পানির ছিটা দিলেই পবিত্র হয়ে যায়। (এ বিষয়ে আমাদের আলাদা পোস্ট রয়েছে)।

◈ এ মর্মে হাদিস:

عَنْ عَلِيٍّ، - رضى الله عنه - قَالَ كُنْتُ رَجُلاً مَذَّاءً فَجَعَلْتُ أَغْتَسِلُ حَتَّى تَشَقَّقَ ظَهْرِي فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم - أَوْ ذُكِرَ لَهُ - فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ لاَ تَفْعَلْ إِذَا رَأَيْتَ الْمَذْىَ فَاغْسِلْ ذَكَرَكَ وَتَوَضَّأْ وُضُوءَكَ لِلصَّلاَةِ فَإِذَا فَضَخْتَ الْمَاءَ فَاغْتَسِلْ ‏
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার খুব বেশি মযি নির্গত হতো। এজন্য আমি গোসল করতাম। এমনকি (অত্যধিক গোসলের কারণে) আমার পিঠ ফেটে যেত (ব্যথা অনুভূত হতো)। তাই আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিষয়টি অবহিত করলাম কিংবা কেউ তাঁকে বিষয়টি অবহিত করলো।
তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: “এরূপ করো না। তোমার (লজ্জাস্থানে) মযি দেখতে পেলে তা ধুয়ে নিবে এবং সালাতের ওযুর ন্যয় ওযু করবে।” [সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: পবিত্রতা অর্জন, অনুচ্ছেদ- ৮৩ বীর্যরস (মযী) সম্পর্কে, হা/২০৬-সহিহ]

◈ অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:

عَنْ سَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ، قَالَ كُنْتُ أَلْقَى مِنَ الْمَذْىِ شِدَّةً وَعَنَاءً فَكُنْتُ أُكْثِرُ مِنْهُ الْغُسْلَ فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَسَأَلْتُهُ عَنْهُ فَقَالَ ‏"‏ إِنَّمَا يُجْزِئُكَ مِنْ ذَلِكَ الْوُضُوءُ ‏"‏ ‏.‏ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ بِمَا يُصِيبُ ثَوْبِي مِنْهُ قَالَ ‏"‏ يَكْفِيكَ أَنْ تَأْخُذَ كَفًّا مِنْ مَاءٍ فَتَنْضَحَ بِهِ ثَوْبَكَ حَيْثُ تَرَى أَنَّهُ أَصَابَ مِنْهُ
সাহল ইবনু হুনাইফ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বীর্যরস বের হওয়ার কারণে আমি কঠিন অবস্থার মধ্যে ছিলাম। কেননা এ কারণে আমাকে প্রায়ই গোসল করতে হত। আমি ব্যাপারটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বর্ণনা করলাম এবং তার বিধান জানতে চাইলাম।
তিনি বললেনঃ “এটা বের হলে তোমার জন্য ওযুই যথেষ্ট।”
আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল, তা যদি আমার কাপড়ে লেগে যায়, তবে কী করব?
তিনি বললেনঃ “এক আঁজলা পানি তোমার কাপড়ের যে অংশে বীর্যরস দেখতে পাও সেখানে ছিটিয়ে দিবে। এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট।” (আবু দাউদ, তিরমিযী। তিরমিযী বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহীহ। শায়খ আলবানিও এটিকে হাসান বলেছেন-সূত্র: সহিহ আবু দাউদ)
উল্লেখ্য যে, কাপড়ে মযি (বীর্যরস) লেগে গেলে এর হুকুম সম্পর্কে আলিমগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
- ইমাম শাফিঈ ও ইসহাকের মতে কাপড় ধুতে হবে।
- কেউ কেউ বলেন, মযী লাগার জায়গায় পানি ঢেলে দেওয়াই যথেষ্ট।
- ইমাম আহমাদ বলেন, আমার মতে পানি ছিটিয়ে দেওয়াই যথেষ্ট।
উ্ক্ত হাদিসের আলোকে ৩য় মতটি অধিক বিশুদ্ধ বলে প্রতিয়মান হয়।

➧ বিশেষ দ্রষ্টব্য:

রোজা অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করলে-বীর্যপাত হোক না হোক-তাতে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। রমাযানের দিনের বেলা স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হওয়া কবিরা গুনাহ। কেউ এমনটি করলে তার জন্য আল্লাহর নিকট লজ্জিত অন্তরে তওবা করার পাশাপাশি কাফফারা দেয়া ওয়াজিব। তা হল:
● একটি রোজার বিনিময়ে একটি দাস মুক্ত করা।
● তা সম্ভব না হলে একটানা (বিরতি হীনভাবে) ৬০টি রোজা রাখা।
● তাও সম্ভব না হলে ৬০জন মিসকিনকে একবেলা খাবার খাওয়ানো বা প্রতিটি রোজার বিনিময়ে অর্ধ সা তথা সোয়া বা দেড় কিলোগ্রাম চাল দেয়া। (টাকা দেয়া ঠিক নয়)। [এ প্রসঙ্গে হাদিসটি বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে]

আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
(লিসান্স, মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সউদি আরব

 

 

 

No comments:

Post a Comment